হোম টিউটর,পর্বঃ তিন

0
1171

#গল্পের নামঃ হোম টিউটর,পর্বঃ তিন
লেখায়ঃ শাফি ইসলাম

বলতে গেলে রিতা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

“রিতা বললো পরিক্ষাতো শেষ”। চল আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি। অনেক দিন পরিক্ষার চাপে মন মানুষিকতা কেমন যেন হয়ে গেছে। সবকিছু কেমন যেন একঘেয়েমি লাগছে।

“রিতার কথা শুনে” তমা কিছু সময় নিশ্চুপ থাকে এবং ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টি ভাবতে থাকে। এদিকে রিতা বার বার হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। কিছু সময় পর তমা আবার রিতার কথায় সারা দিল। রিতা বললো কি ভাবছিস এত। চল ঘুরে আসি অনেক ভালো লাগবে।

তমা আর কিছু না ভেবে রিতার কথায় রাজি হয়ে গেল।
তমাঃ শেষে রিতাকে বললাম বাসায় কিভাবে আম্মুকে ম্যানেজ করবো। “রিতা বললো এটা আমার উপর ছেড়ে দে তুই”। আন্টিকে আমি ম্যানেজ করবো। আচ্ছা ঠিক আছে (তমা)

“এই বলে রিতা ফোনটা রেখে দিল”। কিছু সময় পর তমা ভাবলো কোথায় যাব ঘুরতে এটাইতো জিজ্ঞাসা করা হলো না। তাই রিতাকে আবার ফোন দিলাম। রিতা ফোন ধরে বললো কি হয়েছে ফোন দিলি যে আবার। আরে জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছি যে আমরা কোথায় ঘুরতে যাব।

রিতা বললো এটাতো এখনো ঠিক করা হয়নি। আচ্ছা তমা শোন। তুই কালকে আমাদের বাসায় আয়। আমি আরও কয়েকজনকে আসতে বলেছি, ওরাও আসবে। “তমা বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি চলে আসবো”।

পরের দিন,,,
আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছিলাম এমন সময় আম্মু বললো কি ব্যাপার কই যাচ্ছিস মা (তমা)। আমি নরম গলায় বললাম রিতাদের বাসায় যাচ্ছি। আচ্ছা যা কিন্তু তারাতাড়ি ফিরে আসিস। আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু।

এটা বলে বাসা থেকে বের হলাম। একটা রিকশা নিয়ে রিতাদের বাসার উদ্দেশ্যে রউনা দিলাম। শুনেছি রিতার নাকি একটা ছোট ভাই আছে। তাই ওর জন্য কিছু চকলেট কিনে নিলাম।

রিতাদের বাসার সামনে চলে আসছি। ডোর বেল বাজানোর একটু পরেই রিতা এসে দরজা খুলে দিল। এর আগেও বেশ কয়েকবার রিতাদের বাসায় আসা হয়েছে আমার কিন্তু কখনো রিতার ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। কিন্তু এবার দেখা হয়েছে।

ভিতরে ঢুকতেই রিতার ছোট ভাই এসে বললো আপু এটা কে। “এটা আমার বান্ধবী তোমার আরেকটা আপু”। আপুকে সালাম দাও। রিতার কথা শুনে রাকিব সুন্দর করে সালাম দিল। আমিও সালামের উত্তর নিয়ে ব্যাগ থেকে চকলেট গুলো বের করে রাকিবের হাতে দিলাম। ছোট্ট রাকিব চকলেট পেয়ে অনেক খুশি হয়ে গিয়েছে।

চকলেট পেয়ে রাকিব দৌড়ে পালালো। এরপর আমি আর রিতা ওর রুমে যাই। গিয়ে দেখি আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের বাকি সবাই এসে বসে আছে। আর মুরি বানানো খাচ্ছে।

আমিও ওদের সাথে জয়েন করলাম। এরপর বললাম তা কোথায় ঘুরতে যাবি কিছু ভেবেছিস তোরা। একেকজন একেক জায়গার নাম বলছে। কেউ বলছে কক্সবাজার, কেউ বলছে সিলেট, কেউ বলছে বান্দরবান। সবার মতামত শুনে রিতা বললো আচ্ছা তমা এবার তুই বল তুই কোথায় যেতে চাস।

আমি বললাম তোরা যেখানে যাবি আমি সেখানেই যাব। যদি আমার আম্মু যেতে দেয়। ওইটা নিয়ে তুই ভাবিস না। আন্টির বিষয়টি আমি দেখবো। রিতা বললো সমুদ্র তো অনেক দেখেছি, এবার আমরা পাহাড় পর্বত দেখবো। তাই আমরা বান্দরবান যাব।

কেউ কোন অমত প্রকাশ করলো না। সবাই বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমারা তাহলে বান্দরবান যাচ্ছি। এরমধ্যে খুশি বলে উঠলো আমরা যে এতদূর যাব। ওইখানে গেলে তো তিন থেকে চার দিন থাকতে হবে। বাসা থেকে কি এটা মানবে। আর আমাদের কি একা একা এতদূর কয়দিনের জন্য যেতে দিবে।

এবার রিতা পরিকল্পনা করলো কিভাবে সবার বাড়িতে ম্যানেজ করা যায়। ভাবতে ভাবতে রিতা বললো সবাই বাসায় বলবি কলেজ থেকে এটা আয়োজন করেছে। আমাদের সাথে আমাদের টিচারও যাবে। এটা বললে যেতে দেবে।

সবাই তাই করলো। সবার পরিবার রাজি হয়ে গেল। শুধু তমার আম্মু বাদে। একদিন সবাই পরিকল্পনা করে তমার বাড়িতে গেল সবাই। গিয়ে আন্টির হাতে পায়ে ধরে রাজি করালো। এবার আর কোন বাধা রইলো না। রিতা বললো এবার তাহলে একটা ডেট ফিক্সড কর।

তমা বললো সব পরিকল্পনা যেহেতু শেষ তাই যত তারাতাড়ি সম্ভব আমাদের চলে যাওয়া উচিত। তাই বেশি দেরি না করে ওরা অক্টোবরের দুই তারিখ ডেট ফিক্সড করলো। সবাই তাহলে দুই তারিখ রাতে কমলাপুর স্টেশন আসবে। আমরা মহানগর এক্সপ্রেসে রউনা দেব। চট্টগ্রাম যেতে যেতে ভোর হয়ে যাবে।

যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। আমরা এখন ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি। নয়টা বিশ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে দিল। সারারাত কেউ জেগে কেউ বা ঘুমিয়ে চট্টগ্রাম পৌছালাম। আমরা রাস্তাঘাট কিছু চিনতে ছিলাম না। খুশি বললো গুগোল ম্যাপে যা। ওইখান থেকে লোকেশন পেয়ে যাব।

খুশির কথামতো আমি গুগোল ম্যাপে ঢুকলাম। তারপর চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রউনা দিলাম। বান্দরবান পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে গেল। যেতে যেতে ঠিক করলাম আমরা সবার আগে বগালেক যাব। ওইখানে একরাত থাকবো। রিতা আগেই বান্দরবানের সব স্পট গুলো ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে নিয়েছে।

চান্দের গাড়িতে ওরা বগালেক পৌছালো। সবাই মিলে দুইটা রুম বুকিং করলো। তারপর ফ্রেস হয়ে ওরা সবাই বগালেকের প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হলো। লেকের দৃশ্য সবার মন জয় করে নিল। এদিকে তমাও বেশ হাসিখুশি ছিল। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই না জানলেও রিতা পুরোটাই জানতো তমার ব্যাপারে।

তাই রিতা কাছে এসে তমাকে বললো টেনশন করিস না। ঘুরতে আসছি। সময়টা ইনজয় কর। তমা বললো ধন্যবাদ তোকে এত সুন্দর জায়গায় আমাকে আনার জন্য।

রাতে জার্নি করে এসে সারাদিন ঘুরে সবাই অনেক ক্লান্ত। তাই রিতা সবাইকে বললো রাতের খবার শেষ করে সবাই তারাতাড়ি ঘুমাবি। কাল আমরা এখান থেকে একটা গাইড ম্যানকে নিয়ে ট্র‍্যাকিং করতে কর‍তে কেওক্রাডং যাব। ওইখানে গেলে তোদের আরও বেশি ভালো লাগবে।

অপেক্ষা করুন পরের পর্বের জন্য,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here