হোম টিউটর #পর্বঃ পাঁচ এবং শেষ

0
1210

#গল্পের নামঃ হোম টিউটর
#পর্বঃ পাঁচ এবং শেষ
#লেখকঃ শাফি ইসলাম

একদিন হঠাৎ করে,,,,

তমার সাথে মাসুদের দেখা হয়ে যায়। প্রথমে মাসুদকে দেখে তমার ভিষণ রাগ এবং ঘৃণা হচ্ছিলো। তবুও তমা মাসুদের মুখোমুখি হয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো।

“তমা জানতে চাইলো কেন এমন করলেন রেখার সাথে”? “রেখার কি অপরাধ ছিল? রেখার মত একটা নিষ্পাপ মেয়ের সাথে আপনি কেন এমন জঘন্য কাজ করলেন? মাসুদ কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।
চুপ করে শুধু শুনছে”।

“তমা বললো আপনি ওকে বিয়ে করবেন না কেন?” মাসুদ এবার বললো আমার বাসা থেকে আমাকে বিয়ে দেবে না”। তমাঃ তাহলে প্রেম করলেন কেন?
আর কেনই বা রেখার সাথে এমন আচার-আচরণ করলেন। এখন রেখার কি হবে?

একপর্যায়ে মাসুদের সাথে তমার তর্কবিতর্ক শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তমা সিদ্ধান্ত নেয় সে আইনের ব্যবস্থা নেবে। যেই কথা সেই কাজ। তমা মাসুদের নামে থানায় জিডি করেন।

“কিন্তু আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত নিয়ম আছেন। যাদের টাকা আছে তারা চাইলে সব করতে পারেন। ঠিক এভাবেই মাসুদ অপরাধের খাতা থেকে নিজের নাম মুছে ফেলেন। কারন মাসুদের বাবা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি”।
এসব খবর শুনে রেখা আরও হতাশ হয়ে পড়েন। কি সিদ্ধান্ত নেবেন বুঝে উঠতে পারছিল না। এদিকে তমা রেখাকে শুধু মানুষিক ভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেখা জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললো। রেখার জীবনের ইতি ঘটে গেছে। রেখা এখন অতীত। বেচে থাকার জীবনের খাতা থেকে রেখা নিজের নাম মুছে ফেলেছেন। আজ এই পৃথিবীতে রেখা নেই। এই ঘটনায় তমা অনেকটা ভেংগে পড়েছে। কারন তমা যে প্রত্যক্ষদোষি। সে যে প্রথম থেকে সবকিছুই জানতো। কিন্তু কিচ্ছু করতে পারেনি তমা।

এইজন্য নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছেন তমা। মনে করারি কথা। কারন তার চোখের সামনেই যে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে।

অনেক সময় পর তমা বর্তমানে ফিরে আসলো। “সে এখন ভাবছে কি জন্য রেখা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন”।

তমা এবার মনে করেন প্রত্যেকটা মানুষের একটা আত্মসম্মান আছে। আর সেই আত্মসম্মান রক্ষার্থে রেখাও জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল।

তাই শেষ পর্যন্ত তমাও সিদ্ধান্ত নিলেন সেও আত্মহত্যা করবে। তমা ভাবে এভাবে বেচে থাকার কোন মানে হয় না।
রাতেই পরিকল্পনা করে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে তমা।

পরের দিন,,,

সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু তমা দরজা খোলে না।
এর মাঝে তমার মা বেশ কয়েকবার ডাকলেও তমা কোন সারা শব্দ করেনি। তমার মাও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
এর মাঝে সকাল বেলা রাহাত বাসায় আসে তমার সাথে শেষ বারের মত দেখা করার জন্য। কিন্তু তমার মা রাহাতকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি।

এই ছেলেকে দেখে তমার মা আরও রেগে জান। “মনে মনে বলতে থাকেন আজকে দরজা খুলুক মেয়েটা”। ওর একদিন কি আমার একদিন কি। “মেয়েটা আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারলো? ওকে এত প্রশ্রয় দেওয়া আমার একদম উচিত হয়নি”।

কিন্তু তমার মা কি আর জানে তার মেয়ে দুনিয়া থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু এদিক বিকাল যখন হলো তখন আর তমার মা সহ্য করতে পারলো না। অনেক ডাকাডাকি করার পরেও যখন দরজা খুলতে ছিল না তমা, শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে দেখে তমার লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।

এই দৃশ্য দেখে তমার মা অজ্ঞান হয়ে যায়।

এরপর পারা প্রতিবেশীরা মিলে সহযোগিতা করে কিছু সময় পর তমার মায়ের জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হন। পরে তারা টেবিলের উপর রাখা একটা কাগজ হাতে তুলে দেন তমার মায়ের।

যেখানে লেখা ছিলো,,
“আম্মু আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম”। “তুমি এইসব ভালোবাসা পছন্দ কর না বলে ভয়ে কখনো বলা হয়নি তোমাকে”। ভেবেছিলাম পরিক্ষার পরেই আমাদের বিষয় টা তোমাকে জানাবো। কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে যে বলার কোন সুযোগি পেলাম না।

“আর যার সাথে বিয়ে দিতে নিচ্ছিলা সে একটা দুশ্চরিত্রা লোক। তিনি ছিলেন নোংরা মন মানুষিকতার একজন মানুষ।
তুমি যেদিন বাসায় ছিলা না সেদিন সুযোগ পেয়ে সে আমার সাথে জোরপূর্বক শারিরীক সম্পর্ক করেছিল”।

“তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, যাকে ভালোবেসে পেলাম না, তার পরিবর্তে একজন দুশ্চরিত্রা লোককে বিয়ে করা কখনই আমার পক্ষে সম্ভব না। এইজন্য সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম। ক্ষমা করে দিও মা আমাকে।

নোটঃ একবিংশ শতাব্দী পেরিয়ে এসেও এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে সমাজে। যে খবর গুলো হয়তো আমাদের সামনে আসে না। তাই অপরিচিত কারর কাছে মেয়েকে বাসায় রেখে বাইরে যাবেন না। সে যেই হোক।

আর ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলছি মৃত্যু কখনও কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাই কখনো সিদ্ধান্তহীনতায় না ভুগে বাবা মা কিংবা অন্য কারর সাথে শেয়ার করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here