হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ১)

0
3659

বিয়ের আসর থেকে এক্স- গার্লফ্রেন্ড নাতাশাকে তুলে এনেছি! দীর্ঘ ৩ বছর ধরে সম্পর্ক ছিল নাতাশার সাথে ৷ কিন্তু সে পালিয়ে বিয়ে করবেনা বলে সম্পর্কচ্ছেদ করে আমার জীবন থেকে চলে যায় ৷ টানা ৬ মাস জব করার পর হঠাৎ করে আমার চাকরিটা চলে যায় ৷ চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছিলাম ৷ হন্য হয়ে নতুন চাকরি খুঁজছিলাম! ঐসময়ই নাতাশার বিয়ে ঠিক করে তার বাবা মা ৷ নাতাশা বলেছিল অামি যেন তার বাবা, মায়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই ৷ কিন্তু আমি ভাল করে জানতাম বেকার ছেলের সাথে তারা মেয়েকে বিয়ে দিবেন না ৷ প্রস্তাব পাঠানো হলে নাতাশার পরিবার সোজা আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন ৷ নাতাশাকে বলেছিলাম আমরা পালাবো ৷ কিন্তু সে কিছুতেই পালাতে চাইছিলনা ৷ শেষপর্যন্ত সে সম্পর্কটা ভেঙ্গেই দিল!
.

আজ নাতাশাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনে নানা বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছি ৷ ভাড়া করা গাড়িতে তাকে অজ্ঞান করে রেখেছি ৷ নাতাশার পুরো শরীর বোরখা দিয়ে ঢাকা, মুখটাও ঢাকা নেকাপ দিয়ে! বিয়ের রাত্রে যখন আমি তার রুমে বোরখা পড়ে ঢুকি, তখন রুমে শুধু তাকেই বোরখা পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলাম ৷ অন্য কেউ তার পাশে ছিলনা ৷ তার চোখ দেখে বুঝেছিলাম এটাই নাতাশা ৷ বিয়ের দিন মূলত পাত্রী বেনারসি শাড়ি পড়ে থাকে কিন্তু নাতাশার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো! তার বিয়ে ঠিক হয় বিশিষ্ট মুফতি-হাফেজের সাথে ৷ যে কারণে কড়া পর্দার মধ্যে থাকতে হয়েছিল তাকে ৷ নাতাশার স্বপ্ন ছিল মুফতির সাথে বিয়ে বসার ৷ এজন্য আমাকে হুজুর টাইপের মানুষ হতে বলতো ৷ মুফতি না হয়েও মুফতির ভং ধরা আরকি ৷ কিন্তু আমি যা না সেটা হতে যাব কেন? মুফতির সাথে ওর বিয়ে ঠিক হওয়ায় হয়তো এত সহজে আমাকে ভুলে গেল! এবং সেই মুফতিকেই বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেল ৷ কিন্তু আমি তো নাতাশাকে অন্য কারো হতে দিতে পারিনা ৷ নাতাশা শুধু আমার ৷ ৩ টা বছর ধরে সম্পর্ক চালিয়ে গেছি ৷ তার জন্য কত শত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি ৷ ফোনে কত হাজার মিনিট ধরে মনের না বলা কথা বলে মনের তৃষ্ণা মিটিয়েছি ৷ সেই মানুষটাকে অন্য কারো হতে দেব এটা তো হতে পারেনা!
তবে এখন কেন যেন মনে হয় নাতাশা আমাকে মন থেকে ভালবাসতো না! ভালবাসলে ৩ বছর সম্পর্ক করে এভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে অন্য কারো বউ হবার জন্য উঠে পড়ে লাগতোনা!
আজকে নাতাশাকে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ৷ যদি উত্তর পাই সে আমাকে মন থেকে ভালবাসেনি তবে ওকে মুক্ত করে দেব ৷ আর যদি সত্যিই ভালবেসে থাকে তবে ওকে আমার করে নেবো!
যে মানুষটি আমার জীবনে দীপ্তময় সূর্যের আলো হয়ে এসেছিল অন্ধকারকে ঘুচিয়ে দিতে; সেই মনের মানুষটিকে ছাড়া টিকে থাকতে পারব এটা ভাবতেই পারিনা!
নাতাশার সাথে সম্পর্ক করার কারণে খালাত বোন তাসমিয়া আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল, তাসমিয়ার ভাষ্য ছিল কেন আমি তাকে আপন করে নিইনা? এই কষ্টে সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! তাসমিয়াকে ভালভাবে বুঝানোর পর সে উপলদ্ধি করতে পেরেছিল আমারও নিজস্ব পছন্দ ভাললাগা থাকতে পারে ৷ তাসমিয়া শেষপর্যন্ত তার বাবা, মায়ের পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে নেয় ৷ এরপরও সে মাঝেমধ্যে ফোন দিয়ে জেনে নেয় আমি কেমন আছি? কি করি? খালাতো বোনটাকে আপন করে নিতে পারিনি নাতাশাকে মন থেকে ভালবাসি জন্য! অথচ বাবা, মা ও খালা, খালু পাগল হয়ে গিয়েছিল যেন তাসমিয়াকে বিয়ে করি আমি!
.
নাতাশাকে এত বেশি সময় দিতাম যে বন্ধুদের সাথে কথা বলারও সময় পেতাম না ৷ বাবা, মায়ের সাথে সময় কাটাতে পারতাম না ঠিক ভাবে ৷ সেই নাতাশা অন্য কারো হবে মেনে নিই কেমনে?
.

নানা বাড়িতে পৌঁছে নাতাশাকে একটা রুমে রাখলাম ৷ সে ঘুমাচ্ছে দেখে জাগালাম না! বোরখার নেকাপটাও খুললাম না ৷ শুধু চোখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ এত চমৎকার তার মায়াবী চোখ যে একবার তাকালে আর পলক ফেলতে মন চাইনা!
নাতাশার পাশেই বসে রইলাম ৷ তার হাতটা ধরে! আমার নানি এসে আমাকে দেখে খুশির আতিসায্যে বলে উঠল,
___এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো?
___হুম,নানি; তোমাকে খুব ভালবাসি কিন্তু আসল জনের জন্য তোমাকে ছেড়ে দূরে থাকতে হয়!
___আমি তো বুড়ি হয়ে গেছি, আর তো ভাললাগবেনা!
.
__কি যে বলোনা তুমি!
.
নানি নাতাশার দিকে লক্ষ্য করে চমকে উঠলো ৷ হা করে তাকিয়ে থেকে আমাকে বলল,
___ঐ, শুয়ে আছে এই মেয়েটা কে? বিয়ে করছিস?
.
আমি মুচকি হেসে নানিকে বললাম,
___তোমার নাত-বউ হবে সে ৷ বিয়ে এখনো করিনি! কালকে বা পরশু করব ৷ নানা আসলে সব বলে বিয়েটা করে ফেলব!
___কি বলিস? তোর বাপ মা কে জানাবি না?
___তারা এ বিয়ে মানবেনা ৷ তাই গোপনে আপাতত বিয়েটা করব!
___তোর নানা তো বাসায় নেই!
___কই গেছে?
___কি যেন দরকারে শহরে গেছে? ৩ দিন পর আসবে সে!
___ওহ নো! এখন তবে তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে!
___মেয়েটার নাম কিরে?
___নাতাশা!
___এটা কেমন নাম?
___তুমি বুঝবা না ৷ এটা একজন সুপারস্টারের নাম! জোশ একটা নাম নানি!
___হুম, প্রেমিকার গায়ের দূর্গন্ধও সুগন্ধ মনে হয়, তোর এসব বলতে হবেনা; আমি বুঝি! বিয়ের পর প্রেমিকাকে আর আগের মত ভাললাগবেনা!
___আগে বিয়েটা হতে দাও ৷ তারপর তোমাকে দেখাব বিয়ের পরও প্রেমিকাকে আগের মত ভাললাগে নাকি লাগেনা!
___ঐ তোর প্রেমিকার মুখটা দেখাবি না?
___ঘুমাচ্ছে সে, ঘুমাক!
___নাহ, আমি এখনই দেখব ৷ দেখি আমার হবু নাত-বউকে কেমন লাগে?
___বলছি তো এখন না, ঘুম ভাঙ্গলে দুজনই দেখব!
___তুই দেখিসনি এখনো?
___বিয়ের আসর থেকে তুলে আনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার মুখটা দেখা হয়নি!
___কিহ? বিয়ের আসর থেকে তুলে আনছিস মানে?
___নানি সে তো আমাকে ফাঁকি দিয়ে অন্য কারো হতে যাচ্ছিল ৷ তাই এই কাজটা করতেই হলো!
___তাহলে তো মেয়েটা তোকে মন থেকে ভালবাসেনি!
___আমারও সেটাই মনে হয় ৷ কিন্তু তার কথা বাবা, মাকে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবেনা সে!
___সে তো ঠিকই বলছে ৷ পালিয়ে বিয়ে করা ঠিকও না! এতে বাবা, মা সীমাহীন কষ্ট পায়! তুই সেটা বুঝবি না!
___নানি এসব চিন্তা প্রেম শুরু করার আগে করা উচিত ৷ প্রেম হবার পর কেন? যখন প্রেম শুরু করলো তখন তো বাবা, মা ছিলনা ৷ এখন কেন বাবা, মা আসে?
___তা ঠিক! কিন্তু বাবা, মাকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায়না!
___এটা আমি জানি ৷ কিন্তু ওকে বিয়ে না করলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে নানি!
___আচ্ছা, ঠিক আছে এবার শান্ত হ! ফ্রেশ হয়ে আস!
.
তখনই আমার ফোনে কল আসে, অচেনা নাম্বার থেকে! তখন রাত ১০টার মত বাজবে ৷ ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে একজন মেয়ে কন্ঠের কথা ভেসে আসলো, সে বলছিল,
___আমি বাসর ঘর থেকে বলছি ৷ নাহ, এখনো বর ঘরে ঢোকেনি ৷ তাই ভয় পেওনা!
.
আমি হকচকিয়ে উঠলাম মেয়েটার কথা শুনে ৷ আশ্চর্য হলাম এজন্য যে কে এই কথাগুলো বলছে? আমাকেই কেন বলছে এসব?
কৌতূহলচিত্তে তীক্ষ্ণ কন্ঠে মেয়েটাকে বললাম,
___কে আপনি? কাকে বলছেন এসব?
___আমাকে চিনোনা? কন্ঠ শুনেও না? বাহ বাহ!
___এত ভনিতা না করে সরাসরি বলুন আপনি কে?
___স্টুপিড! আমি তোর সেই এক্স!
.
এটা শোনামাত্র ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল ৷ আমার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকল ৷ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম! হঠাৎ শক্তি হারিয়ে মাথা ঘুরে বিছানার উপর বসে পড়লাম ৷ মাথা ভনভন করে ঘুরছিল ৷ আর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে মাথায় পিটাচ্ছিস অনবরত ৷ চোখে ঝাঁপসা দেখা শুরু করছিলাম ৷ প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল নিজের উপর! রাগে, দূঃখে হাতের চামড়া ছিঁড়তে মন চাচ্ছিল ৷ কান্না করতে মন চাচ্ছিল কিন্তু কেন যেন কান্না আসলোনা ৷ চোখের কোণে পানি পর্যন্ত এলোনা! হঠাৎ মনে হলো যেই মেয়েটাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনছি তবে সে কে?
ধৈর্য্য ধারণ করা সম্ভব হচ্ছিলনা ৷ কৌতূহল আমার মস্তিষ্কে পোকার মত করে কুটকুট করে কামড়াচ্ছিল!
নানিকে বললাম এক জগ পানি আনতে ৷ পানি আনলো সে! মেয়েটার নেকাপ না খুলে তার চেহারার উপরেই পানির ছিঁটা দিলাম! মেয়েটা জেগে উঠলো! জেগে উঠে কয়েক সেকেন্ড থম মেরে রইলো ৷ তারপর চিৎকার দিল খুব জোরে ৷ এরপর গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলো! আমি শান্ত গলাতে মেয়েটাকে বললাম,
___প্লিজ, কান্না থামাও! তুমি তোমার নেকাপটা শুধু খোলো, প্লিজ!
.
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে মুখ থেকে নেকাপটা সরালো! তার চেহারা দেখা মাত্র মনে হলো আমার সামনে আকাশের চাঁদ এসে বসে আছে ৷ ডায়মন্ডের মত চকচক করছিল সে! বাগানে ফোটা সদ্য সুরভীত গোলাপ ফুলের মত সৌন্দর্যময়ী একজন পবিত্র নারী আমার চোখের সামনে তার নয়নের অশ্রু বিয়োগ করছে! কোনো মেয়ে কাঁদলে যে এত সুন্দর লাগে এর আগে জানতাম না!
তাকে নরম গলাতেই বললাম,
___তুমি কে? কার কি হও?
.
মেয়েটা কান্না থামিয়ে তেড়ে আমার দিকে এসে ক্ষ্যাপা স্বরে বলল,
___…….
.
চলবে….

.

#হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ১)
.
লিখাঃ Sifat Arnab Rehan.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here