হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ৪ এবং শেষ_পর্ব )

0
5495

হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ৪ এবং শেষ_পর্ব )
.
লিখাঃ Sifat Arnab Rehan.
.

ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম যারা বাড়িতে প্রবেশ করেছে তাদের দিকে!
মায়া রুম থেকে বেড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠে আবেগপ্রবণ কন্ঠে শুধু বলল,
___পুলিশ!
.
আমি নিথর নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷ পুলিশ এসে খপ করে আমার হাতটা ধরে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দিলো!
মায়ার বাবা হুংকার মেরে আমাকে বলল,
___আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করার মজা তুই টের পাবি আজ!
.
মায়া চেঁচিয়ে উঠে বলল,
___বাবা, আমি নিজ ইচ্ছাতেই পালিয়ে আসছি, ওনার কোনো দোষ নেই!
.
বাপ বেটির বাকযুদ্ধ দেখে বাংলা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল ৷ তাদের তর্কযুদ্ধ উপভোগ করছিলাম ৷ হঠাৎ মনে হলো আমারও কিছু বলতে হবে ৷ মিনমিন করে কাঁপা গলায় পুলিশদের উদ্দেশ্য বললাম,
___পুলিশ ভাই, এটা সত্য যে আমি কিডন্যাপ করে এনেছি তাকে, তবে ভুল করে আসল জনের জায়গায় নকল জনকে তুলে এনেছি ৷ ওদিকে আমার সর্বনাশ যা হবার সেটা হয়েই গেছে! গার্লফ্রেন্ড এখন অন্যের ঘরে! আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান, এ জীবন রেখে কি করবো? আপনারা গ্রেফতার না করলে আমি নিজেই ফাঁস খাবো!
.
দাঁড়িওয়ালা পুলিশ চাচা চোখ গরম করে দাঁত কটমটিয়ে ক্ষ্যাপা স্বরে আমাকে বলল,
___তুই চুপ!
.
মায়ার বাবা আমাকে বলে উঠল,
___বাঁদরের বাচ্চা বলে কি? আমার মেয়েকে তুলে আনলো বিয়ের আসর থেকে, আর এখন সে বলছে ওর গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে গেছে ৷ আরে ফকিন্নির বাচ্চা, তুই আমার মেয়েকে তুলে আনলে ওর বিয়ে হয় কেমনে? আবার বলে নকল জনকে তুলে আনছে! বেক্কেল কোথাকার! পুলিশ ভাই ওর চাপার নিচে দুটা লাগান তো!
.
মায়ার বাপের কথা কিছুই বুঝলাম না ৷ উনি কি বলতে চাইলেন? মায়াকে জিজ্ঞেসা করলাম,
___তোমার আব্বা কি বলছে? একটু খুলে বলো তো!
.
মায়া সহজভঙ্গিতেই জবাব দিলো,
___কাল আমারই বিয়ে হতে যাচ্ছিল!
.
এটা শুনে নিজেকে পাগলা গারদের পাগল বলে মনে হলো ৷ সে যা বলছে আমি কি সেটাই শুনেছি? নাকি উল্টা শুনলাম! চোখ কপালে তুলে মায়াকে চেঁচানো স্বরে বললাম,
___তোমার মাথা ঠিক আছে? কি বলছো? উল্টাপাল্টা কিছু বলার চেষ্টা করোনা!
.
পিচ্চি সাইজের এক পুলিন আমার কান সাড়া থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে বলল,
___ঐ খাটাস, আওয়াজ ছোট হয়না তোর?
.
মায়া পুলিশকে ধমক দিয়ে বলল,
___খবরদার! ওনার গায়ে হাত তুলবেন না, ওনাকে যা বলার আমি বলছি!
.
মায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে বলল,
___সত্যটা জানতে হলে অনেক ধৈর্য্য ধরতে হবে আপনাকে ৷ পারবেন ধৈর্য ধরতে?
.
আমার জবাব,
___বলো তুমি!
.
মায়া পুলিশকে বলল আমার হ্যান্ডকাপ খুলে দিতে ৷ খুলে দেওয়া হলো! মায়া আমার হাত ধরে বারান্দায় রাখা চেয়ারে নিয়ে গেল ৷ দুটা চেয়ারে দুজনে বসে পড়লাম!
মায়া শান্ত গলাতে বলতে লাগল,
___হ্যাঁ, এটা সত্য যে কাল আমার বিয়ে হতে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু আপনি তো তুলে আনলেন আমাকে ৷ বিয়ের আসর থেকে তুলে আনলে কি বিয়ে হয় আর?
.
মায়ার কথা শুনে মাথা ঘুরছিল চরকির মত করে! তাকে বললাম,
___তাহলে নাতাশা আমাকে মিথ্যা বলল?
___অবশ্যই মিথ্যা ছিল ৷ আর আপনি যাকে নাতাশা হিসেবে চিনেন সে নাতাশা নয় ৷ নাতাশা আমিই!
.
এটা শুনে বড়সর শক খেলাম ৷ মনে হলো পিছন থেকে আঁটিওয়ালা বাঁশ দিয়ে পিটানি দিয়েছে কেউ! হা করে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম! তাকে বললাম,
___তুমিই যদি নাতাশা হও তবে আমার সাথে দেখা করার সময় কে আসতো? আর প্রেম শুরুর আগে কার পিছু নিয়েছিলাম?
___ওটা আমার বড় বোন ৷ বিবাহিতা সে! আপনি পাগল হয়েছিলেন তাকে দেখে সেটা আপনার বোকামী ছিল ৷ আপু তো কিছুতে প্রেম করতে চাইতোনা, প্রেম করার প্রশ্নও ওঠেনা ৷ বিবাহিতা মেয়ে কেন প্রেম করবে? আর আপনি আপুকে যেখানে পেতেন সেখানেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বিরক্ত করতেন!
___কিন্তু তোমার বোন তো রাজিও হয়েছিল!
___আপনাকে শায়েস্তা করতে রাজি হয়েছিল!
___শায়েস্তা করলো কই? করলেও সেটা ৩ বছর পর কেন?
___ততোদিনে আপনি আমার মন জয় করে নিয়েছিলেন ৷ তাই আপুর বদলে আমি আপনার সাথে ফোনে টানা তিনটা বছর ধরে কথা বলে গেছি!
___কিসব বলছো? মাথা কিন্তু উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে!
___আপু বিয়ে বাড়িতে আপনাকে যে নাম্বারটা দিয়েছিল ওটা আমার নাম্বার ছিল ৷ ফোনে শুধু আমরা দুজনই কথা বলতাম ৷ আপু কথা বলেনি আপনার সাথে!
___কিহ? আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি! কিন্তু আমার সাথে দেখা কেন করতো তোমার বোন?
___তার আগে বলেন প্রেম চলাকালিন ৩টা বছরে আপনারা কতবার সরাসরি দেখা করেছেন?
___৭-৮ বার!
___একবারও কি ভাবেননি যে ৩ বছরের প্রেম অথচ এত কম সাক্ষাৎ কেন?
___নাতাশাকে রাজিই করাতে পারিনি!
___নাতাশা নয়, আমিই রাজি হয়নি! আমি চাইনি এত দেখা করতে ৷ আর যে কয়বার রাজি হয়েছিলাম সেই কয়বার আপুকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম!
.
মায়ার কথায় মাথাতে হাতুড়ির পিটুনি খেলাম ৷ রাগও হল! রাগস্বরে বললাম
___এমনটা করতে তোমার বাঁধলোনা? সে তোমার আপু হয়, তাকে কোন হিসেবে পাঠালে?
___ইচ্ছা হয়েছিল তাই ৷ আর আপু আপনাকে পরীক্ষা করেছিল যে আপনি কতটা ভাল মনের মানুষ! যদিও এর জন্য আপুর লাইফে ইফেক্ট পড়েছিল!
___কিসের?
___আপু আপনাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে! তারপর অন্যরকম ভাললাগা শুরু হয় তার মনে!
দুলাভাই বিদেশ থাকতো, আপু একাকীত্বের জন্য এমন হয়েছিল!
___কিহ?
___সত্য!
___আমার সাথে এমন নাটক করা মোটেও ঠিক হয়নি তোমার! যখন বেকার হলাম, এবং তোমার বিয়ের কথা চলছিল ৷ তখনই তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলাম সেটা তোমার বড় বোনকে নিয়েই; কিন্তু আমাদের প্রস্তাব কেন প্রত্যাখান করা হলো?
বেকার বলেই কি?
___আমরা ভাল করে জানতাম আপনি আপুকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠায়ছিলেন ৷ তখন আপুর তো ডিভোর্স হয়েছিল, তার জন্যও পাত্র দেখা হচ্ছিল ৷ সেই সাথে আমারও ৷ আপনি আপুকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে আপুই আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবে না বলে বাবা, মায়ের নিকট বিষয়টা বলে ৷ এবং প্রস্তাবটাকে না করে দেয় ৷ কারণ আপু ভাল করে জানতো আমি আপনার সাথে প্রেম করছি!
___এতবড় প্রতারণা, কেমনে পারলে?
___আমি আপনাকে ভুল করে ভালবেসে অন্যায় করে ফেলেছিলাম ৷ আপুর দূর্ঘটনার দিন আপনি রক্ত দিতে এলেন ৷ আপুর কেবিনে আমি বোরখা পড়া অবস্থায় ছিলাম ৷ আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভাললেগে যায় ৷ এরপর যখন আপনি আপুর পিছু নিলেন তখন কষ্ট পেয়েছিলাম খুব ৷ চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম যেভাবে হোক আপনাকে আপন করে নেবই ৷ আপুকে বিষয়টা খুলে বলি এবং সে হেল্প করার জন্য রাজি হয় ৷ এজন্যই তো যখন আপনি আপুর জন্য পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলেন তখন আপু আপনাকে আমার কন্টাক্ট নাম্বারটা দেয় এবং ফোনে কথা চলতে থাকে আমাদের!

___সবই বুঝলাম ৷ তুমি আমাকে এত ভালবাসতে তবে লুকিয়ে থেকে কেন? মাদ্রাসার ছাত্রী বলে কি প্রেম করা যায়না?
___আমি মাদ্রাসার ছাত্রী না!
___তাহলে?
___মিথ্যা বলেছিলাম!
___কেন?
___বলতে পারবনা সেটা!
___বলতে হবে ৷ আমার জীবন মরনের প্রশ্ন!
.
মায়ার চোখ দুটো ছলছল করছিল ৷ আমার ভেতরে দূঃখের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিল ৷ মায়ার প্রতি নাকি নাতাশার প্রতি কার প্রতি যে রাগ হচ্ছে বুঝতে পারলাম না ৷ মায়া চোখের জল ফেলে বলল,
___আমি আপনার প্রেমে অন্ধ হয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম যে দুরারোগ্যে রোগে ভুগছি আমি ৷ আমার এসব প্রেম ভালবাসা মানায় না! যখন বাস্তবতায় ফিরলাম তখন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম ৷ আপুকে আপনার নিকট শেষবারের মত পাঠালাম যাতে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আসে!
.
মায়ার কথা শুনে আহত হলাম ৷ শান্ত গলায় তাকে বললাম,
___কি দুরারোগ্য রোগ তোমার?
___মৃগি রোগ! এখন একটু নিয়ন্ত্রণে আছে! এই রোগের জন্য নিজেকে সবসময় লুকিয়ে রাখতাম ৷ ভয় হতো কখন যে সমস্যাটা শুরু হবে আর মানুষের হাসির পাত্র হবো!
___কিন্তু তোমার বিয়ে ঠিক হলো যে?
___আমার মতই একজনের সাথে ঠিক হয়েছে! নিজেই ভেবে-চিন্তে রাজি হয়েছি! আমি চাইনি নিজে রোগী হয়ে ভাল মানুষকে আপন করে নিতে!
___সত্যিই কষ্ট পেলাম ৷ আমাকে এভাবে কাঁদানোর মানে হয়না ৷ তুমি এমন শুরুতে এটা বললে কি হতো? তিনটা বছর ধরে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে শেষমেষ সেই স্বপ্নগুলো ভঙ্গ কেন করলে এভাবে? আমার কি অপরাধ ছিল? তুমি তো তোমার আপুকে দিয়ে বিয়ের রাতেও অসহ্যকর যন্ত্রণা দিয়েছো! সে কেন রাতে তোমার ফোন থেকে আমাকে কল দিয়ে ওরকম নাটক করলো?
___আপু মজা করেছে ৷ সে ভাল করে জানতো আমি আপনার কাছেই আছি ৷ তাই মজা করেছিল মাত্র!
___এখন আমি কি করব?
___যার প্রতি ভালবাসা জমে আছে তাকে ভুলে যাও! পুলিশ তোমাকে কিছু করতে পারবেনা ৷ আমি তাদের চলে যেতে বলছি, ওয়েট!
.
মায়া অজস্র চোখের জল শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে পুলিশের কাছে গেল ৷ এবং তাদের কি যেন বলল? মায়ার কথায় পুলিশ চলে গেল! মায়া তার বাবাকেও কি যেন বললে তিনিও চলে গেলেন!
.
আমি মায়ার কাছে গেলাম! সে আমার হাতটা ধরে চোখের জল ফেলে কাঁপা গলায় বলল,
___কাল রাত আর আজকের দিনটা কখনো ভুলবনা ৷ আপনাকে নিয়ে আমিও অনেক স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু জানেনই তো সব স্বপ্ন পূরণ হয়না ৷ আমার স্বপ্নও পূরণ হবার নয়!
.
এটা বলেই সে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকল! এরপর চোখ গোলগোল করে মাটিতে কেঁপে কেঁপে লুটিয়ে পড়লো ৷ তারপর গড়াগড়ি করল মাটিতে ৷ বাকা হয়ে গড়াগড়ি করল ৷ মায়ার এমন অবস্থা দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম ৷ শুরুতে এর কারণ বুঝলাম না ৷ পরে মনে হলো সে তো মৃগি রোগী তখন তার এমন অবস্থা দেখে গা কাঁপতে লাগল আমার ৷ বুকের ভেতরে চাপা এক কষ্ট অনুভূত হলো ৷ নিমিষে চোখের কোণ বেয়ে পানি ঝরতে লাগল ৷ মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেও তার কাঁপন থামাতে পারলাম না! শেষপর্যন্ত তার নাকে হাতের তালু শুকতে দিলে কাঁপন বন্ধ হলো!
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেই মায়া হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল ৷ তার কান্না দেখে এই আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না ৷ মায়াকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে লাগলাম ৷ মনে হলো আমার হ্নদয়ে ভালবাসার রুপান্তর ঘটেছে ৷ ভালবাসতাম নাতাশা নামের একজনকে, আর আজ তার জায়গায় অন্যজনের ছবি হ্নদয়টাতে দখল করে নিয়েছে!
বেশ কিছু সময় অশ্রুভেজা নয়নে মায়া আমার বুকে মিশে রইলো ৷ এরপর সে চোখের পানি হাতের তালু দিয়ে মুছে কান্নামাখা কন্ঠে বলৱ,
___আমাকে যেতে হবে ৷ আব্বুকে কথা দিয়েছি আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলেই বাড়ি ফিরে যাব ৷ আব্বু রাস্তায় আমার জন্য অপেক্ষা করছে!
.
মায়ার কথাকে ভ্রুপেক্ষ করলাম না ৷ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছি বুকে, যা কিছু ঘটে যাক, তাকে আমি ছাড়বনা ৷ “প্রেমিকার পরশে মোহবিষ্ট হয়ে গেলে সেই মোহ থেকে উদ্ধার হওয়া ততোটাই কঠিন যতটা কঠিন প্রিয়জনকে ভুলে থাকা!”

মায়া জোর করছিল নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিতে ৷ কিন্তু আমি তো তাকে ছাড়বোনা!

তখন তাসমিয়া এসে হাজির! সাথে তার স্বামীও আছে!
আমাকে এভাবে দেখে তাসমিয়া খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল,
___দিনের বেলায় বাড়ির উঠোনে প্রেমিকাকে নিয়ে রোমান্স? লজ্জা করেনা? .
তাকে কোনো জবাব দিলাম না ৷ মায়া এখনো জোর খাটিয়ে যাচ্ছে!
তাসমিয়া ফের বলল,
___আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছি ৷ এতদিন ভুলের মধ্যে ছিলাম ৷ ভুল বুঝতে পেরে আমার স্বামীকেই আপন করে নিয়েছি! তোর অবস্থাটা দেখতে এখানে চলে এসেছি! এবং তোকে হাসিমাখা মুখেই দেখলাম ৷ তোর গার্লফ্রেন্ডটা অবশ্যই আমার থেকে রুপবতী, এজন্যই তো বলি আমি কেন তোর পাত্তা পাইনা ৷ হা হা হা হা!
.
এটা বলেই তাসমিয়া নানি নানি বলে ডাকতে লাগল ৷ তাসমিয়া তার স্বামীকে নিয়ে নানির ঘরে ঢুকে গেল!
.
মায়াকে ছেড়ে দিলাম ৷ সে উঠে পড়লো ৷ একরাশ বিষন্নতা মুখে নিয়ে ধীর পায়ে চলতে লাগল ৷ আমিও তার পিছু নিলাম!
মায়া তার বাবার কাছে গিয়ে পৌঁছল ৷ আমিও তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ এরপর মায়ার হাতটা ধরে তার বাপের চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললাম,
___আমার কারণেই মায়ার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে, আমি তাকে আপন করে নিতে চাই!
.
মায়ার আব্বু জবাব দিলো,
___আমার বড় মেয়েকেও বিয়ে করতে প্রস্তাব পাঠালে, আবার মায়াকেও? সত্য করে বলো তো ভালবাসতে কাকে?
___প্রথমে নাতাশাকে ৷ এবার মায়াকে!
.
মায়ার আব্বা বাকা চোখে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলল,
___তোমার বিষয়টা ভেবে দেখব ৷ তুমি আমার মেয়ের জন্য বেঁচে গেলে ৷ নয়তো চৌদ্ধ-শিকে ঢুকতে হতো! গেলাম আমরা!
.

.

আজ তানহার বিয়ে! একটু পরই বরপক্ষ চলে আসবে! তানহার মা তানহার রুমে ঢুকে দেখে তানহা নেই! গেল কই মেয়েটা? সারা বাড়ি খুঁজেও তাকে পাওয়া গেলনা ৷ লোক-লজ্জার ভয়ে কিছু বলাও যাচ্ছিলনা ৷ বরপক্ষ এলে তাদের অাপ্যায়ন করা হলো ৷ কিন্তু বিয়ে পড়ানোর সময় মেয়ের খোঁজ নিতে গেলে তাদের সত্যটা বলতেই হলো! সত্যটা বলা হলে অকথ্য গালি ও কটু কথা শুনতে হলো!
বরপক্ষের কথা, নিজেদের আত্মীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীর কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাফালা হয়ে গেল! সবাই বিদায় হল ৷ পরদিন সকালে জানা গেল আমার মেয়ে তানহা তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে!

বুঝতে পারলাম এটা সেই দিনের প্রতিশোধ!
.
তানহার মা তার মেয়ে পালিয়েছে শুনে সে কি কান্নার কান্না! কাঁদতে কাঁদতে সে আমাকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
___এটা তোমার জন্য হয়েছে ৷ তোমার অকর্মের ফসল!
.
তাকে জবাব দিলাম,
___মায়া, আর বলোনা ৷ আর সহ্য করতে পারছিনা ৷ তুমি অন্তত আর কষ্ট দিওনা ৷ মেয়েটা কার হাতে পড়লো সেটা অন্তত জানতে পারলে কিছুটা কষ্ট লাঘব হতো!
.
বেলা ১২টার দিকে ফোন এলো! ফোন এলে জানতে পারলাম তানহাকে তাসমিয়ার ছেলে তামিম তুলে নিয়ে গেছে!
.
এই খবর শুনে মায়া খুশিই হলো ৷ কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না ৷ মায়া আমার মন মরা মুখটার দিকে চেয়ে বলল,
___একবার ভেবে দেখো, তুমি আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এটার জন্য আমার আব্বার কেমন লেগেছিল? তবুও তিনি আমাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিল! আজকে নিজের মেয়েকে কেউ একজন তুলে নিয়ে গেছে জন্য তুমি মেনে নিতে পারছোনা! এবার বলো তো পিতা হিসেবে কে বেশি ধৈর্য্যশীল ও ক্ষমাশীল?
.
মায়াকে জবাব দিলাম,
___এখন কি করতে হবে বলো?
___ওদের মেনে নাও!
___ঠিক আছে, তোমার কথায় মেনে নিলাম!
.

প্রিয়তমা স্ত্রীর আবদারটা এবারও ফেলতে পারলাম না ৷ ভালবাসার মানুষটির আবদার আসলে ফেরানোও যায়না!,
.
The End (সমাপ্ত, গল্প শেষ)

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here