হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ২) . লিখাঃ Sifat Arnab Rehan.

0
711

#হ্নদয়ের_ক্যানভাসে_তুমি (পর্বঃ ২)
.
লিখাঃ Sifat Arnab Rehan.

___তুমি কে? কার কি হও?
.
মেয়েটা কান্না থামিয়ে আমার দিকে তেড়ে এসে ক্ষ্যাপা স্বরে বলল,
___সেটা আপনাকে বলব কেন? এখানে এভাবে তুলে এনেছেন কেন সেটা বলুন? তাড়াতাড়ি বলুন!
___সব বলব, তার পূর্বে বলো কে তুমি? কার কি হও?
___বলব না ৷ আমার জন্য তাড়াতাড়ি করে পরোটা ভাজি করে আনেন ! ক্ষুধা লেগেছে!
___বিয়ে বাড়িতে কিছু খাওনি?
___এতো তো কৈফিয়ত দিতে পারবনা, যা বলছি তাই করুন ৷ আর আমাকে তুমি করে নয়, আপনি করে বলবেন! ঠিক আছে?
___ওকে, এবার বলুন আপনি কে?
.
মেয়েটা চোখ রাঙিয়ে আমার দিকে তার হাতের তালু দেখিয়ে তীব্র রাগের ধ্বনিতে বলল,
___এটা কি চিনেন? বলছি ক্ষুধা লেগেছে, আর উনি আসছে আজাইরা প্যাচাল পারতে!
.
নানিকে বললাম তাড়াতাড়ি করে পরোটা ভেজে আনতে ৷ মেয়েটার যে পরিমাণ রাগ ঐ রাগ দেখেই বলা যায় তার ভবিষ্যৎ স্বামী যে হবে তার কপালে খারাপি আছে! নানি ১২ মিনিটের মধ্যে ৭ টা পরোটা ভেজে প্লেটে করে সেগুলো মেয়েটার সামনে এনে হাজির করলো ৷ মেয়েটা খুশি মনে পরোটাগুলো খাচ্ছিল ৷ ফ্যানের বাতাসে তার মাথার উপর সাইটের চুলগুলো উড়তে দেখে আর তার খাওয়ার স্টাইল দেখে অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছিল ৷ এদিকে আমার পেটেও ক্ষিধে, তার খাওয়া দেখে আরো বেড়ে গেল! জিবেতে আমার জল আসা দেখে মেয়েটা জিজ্ঞাসিত কন্ঠে বলল,
__কি খাবেন? দেব? দিই একটা?
.
একটু ভাব দেখিয়ে বললাম,
___নাহ আপনিই খান, আমার ক্ষুধা নাই!
.
মেয়েটা উচ্চ আওয়াজে বলল,
___তাহলে খাওয়ার দিকে শকুনের মত করে নজর দিচ্ছেন কেন? ওদিক ফিরে তাকান ৷ আর হ্যাঁ, সুন্দরী মেয়েদের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকালে সৌন্দর্যের মাধুর্যতা নষ্ট হয়ে যায় ৷ ভুলেও আমার দিকে এভাবে আর তাকাবেন না ৷ আমি আপনার প্রেমিকা বা বউ নই যে প্রেমময়ী দৃষ্টিতে বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে দেখবেন ৷ এই মায়াবী চেহারার দিকে তাকালে আমার তো সর্বনাশ হবেই সাথে আপনারও হবে ৷ পরে দেখা যাবে আপনি রাতে ঘুমাতে পারছেন না, ঘুমাতে গেলে শুধু আমার চেহারা আপনার চোখের সামনে ভাসছে! আর এসব বলে আমার মন জয় করার চেষ্টা করবেন ৷ কিন্তু আমি তো কারো প্রেমে পড়বোনা ৷ প্রেম করা হারাম ৷ বুঝছেন? আর যখন আপনাকে আমি পাত্তা দিবনা তখন ফাঁস নিতে যাবেন, নাহয় আমার যেদিন বিয়ে হবে সেদিন বিয়ের আসর থেকে এভাবে তুলে আনবেন; যা হবে ভয়াবহ রকমের খারাপ কাজ! তাই কিছুতে চাইনা আপনি আমার প্রেমে পড়ুন ৷ আর দুজনেরই সর্বনাশ ডাকুন! এজন্য আবারো বলছি ওরকম ভাবে তাকাবেন না ৷ যতই আপনি আপুর প্রেমে দিওয়ানা হউন না কেন, সব পুরুষই সুন্দরী মেয়েদের দেখে ঘায়েল হয়ে যায়! তাই, নো তাকাতাকি! নেকাপ খুলে রেখেছি বলে সেটার সুযোগ নিয়েন না! যদিও আপনি বলেই নেকাপটা খুলে রেখেছি!
.
.
একনাগারে মেয়েটা কথাগুলো বলে ফেলল, পরোটা খাওয়ার ফাঁকে ৷ আমি ভ্রু-কুঁচকিয়ে মেয়েটার কথা শুনছিলাম ৷ হঠাৎ কৌতূহল এসে বাসা বাঁধলো মনে ৷ তাকে বললাম,
___আমার জন্য? আমি কি আপনার পরিচিত কেউ?
___অপরিচিত হলে এতক্ষণে আপনার রক্ষা থাকতো? হাত ভেঙ্গে ঠ্যাংগে ধরিয়ে.. থুক্কু পা ভেঙ্গে ঠ্যাংয়ে ধরিয়ে দিতাম না?
___আমি কেমনে পরিচিত?
___খাওয়া শেষ হোক বলছি!
____ওকে!
.
মেয়েটা ৬টা পরোটা খেলো, মাত্র একটা রাখলো ৷ ওটা নানিকে দিয়ে দিল ৷ নানি মুচকি হেসে পরোটাটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!
আমার যে পরোটা খাওয়ার খুব ইচ্ছা করছিল সেটা তাকে বললাম না, বললেই নতুন করে কথা শুনতে হবে!
.
মেয়েটা আমাকে ফের নরম আওয়াজেই বলল,
___আপনি আমার দুলাভাই হতেন ৷ কিন্তু আপনার ভাগ্য খারাপ ৷ আপু আপনাকে বুড়ি-আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেছে!
.
এটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম ৷ সে নাতাশার বোন এটা জেনে খুব আনন্দ লাগছিল মনে ৷ উল্লসিত কন্ঠে তাকে বললাম,
___তার মানে তুমি নাতাশার বোন মায়া? কিন্তু তোমাকে তো কোনোদিন দেখতে পেলাম না ৷ শুধু নামটাই জানতাম!
.
মায়া ফিক করে হেসে মুখ চেপে বলল,
___আপু ভয় পেত যদি আপনি আমাকে দেখে প্রেমে পড়ে যান ৷ তাই দেখায়নি! তারচেয়ে বড় কথা, আমি মহিলা মাদ্রাসায় আবাসিকে থেকে কখনো ছবি তোলার যেমন সুযোগ পাইনি, তেমনি কাউকে এই চেহারা দেখানোর সুযোগও হয়নি!
আপনার সাথেও সাক্ষাৎ করিনি!
.
___তারমানে বিয়ের রাত্রে আমি ভুল করে তোমার রুমে ঢুকে পড়েছিলাম?
___না আপুর রুমই ছিল ওটা ৷ আপনি রুমে ঢোকার আগে আপু ওয়াশরুমে গিয়েছিল ৷ তারপরই তো আপনি বদকাজটা করলেন! এক মিনিট, আপনি এমন কেন? আপনি তো খুব খারাপ লোক, আমাকে ফের তুমি করে বলছেন কেন?
___তুমি আমার চেয়ে কমচে কম ৫ বছরের ছোট হবে, তোমাকে তুমি করে বলবনা তো কি বলব? শোনো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে ৷ চিন্তা করোনা ৷ আমি মানুষটা খারাপ হতে পারি, কোনো মেয়ের অনিষ্ট করবোনা!
___হয়েছে, কথা রাখুন ৷ এখন আমি ঘুমাব! রুম থেকে বেরিয়ে যান!
.
তখনই নাতাশার ফোনে দিলাম কল ৷ সে রিসিভিও করলো ৷ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
___বাহ, ছেলেটা বোধহয় প্রেমিকাকে হারানোর শোকে ঘুমাতে পারছেনা ৷ তাই কথা বলে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে এক্স-কে ফোন দিচ্ছে! শোনো আমার স্বামী একটু পরই রুমে ঢুকবে, ফোন রাখো!
.
আমি তোড়জোর কন্ঠে বললাম,
___আরে কথা আছে! তোমার বোন বাসা থেকে উধাও তোমরা জানোনা?
.
নাতাশা কিছুক্ষণ চুপ রইলো, তারপর চাপা কন্ঠে বলল,
___কি বলছো? বিয়ের ঝামেলার জন্য মায়ার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি ৷ সে উধাও তুমি কেমনে জানলে?
___তোমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনতে গেলে তোমার বদলে মায়াকে তুলে আনছি!
.
মায়া চেতে গিয়ে বলল,
___কিহ? এত স্পর্ধা হলো কেমনে তোমার? এক্ষণই আমার বোনকে বাড়িতে পৌঁছে দাও, নইলে তোমার খবর করে ছাড়ব!
___তাকে ছাড়ব একটা শর্তে!
___কিসের শর্ত?
___তোমাকে বাসর ঘর থেকে পালিয়ে আমার কাছে আসতে হবে!
.
নাতাশা খিলখিল করে হেসে বলল,
___এটা কি ছেলের হাতের মুয়া? যে চাইলেই পাওয়া যায়?
.
ওদিকে মায়া আমার এমন কথা শুনে ফোনটা হাতে থেকে কেড়ে নিলো ৷ এরপর বলল,
___আপু, তুই রাজি হয়ে যা ৷ অন্যথায় ও আমাকে রেপ করবে, প্লিজ আপু প্লিজ; তুই আমাকে রক্ষা কর!
.
এটা বলেই মায়া আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলো ৷ এরপর আমাকে বলল, “কি দুলাভাই কেমন দিলাম? ভাল হয়েছে না?”
.
আমি তব্দা খেয়ে গেলাম মায়ার কথা শুনে! সে কেন তার বোনকে এমনটা বলতে গেল? নিশ্চয় এরমধ্যে রহস্য রয়েছে?
.
মায়াকে কোনো জবাব না দিয়ে নাতাশাকে বললাম,
___কি শুনছো তোমার বোনের কথা? হুহ, যদি সত্যি সত্যি আমার কাছে ফিরে না আসো তবে তুমি তোমার সুন্দরী, রুপসী, পর্দানীশি বোনটাকে হারাবে! তাই যা করার দ্রুত করো!
.
নাতাশা কাঁপা গলাতে বলল,
___ওর গায়ে এতটুকু ছোঁয়াও দিবানা ৷ তুমি যে একটা লম্পট সেটা আগেই বুঝেছিলাম! আর মোটেও আমি তোমার কাছে যাবেনা ৷ আরেকটা কথা শোনো, আমি কখনো তোমাকে মন থেকে ভালবাসিনি! একটু পর রায়হান রুমে আসবে রুমে, ফোন কাটো!
___রায়হান কোন শালা?
___আমার বর!
____তুই মর! যদি ২ ঘন্টার মধ্যে রহমতপুর না আসিস তবে তোর বোনের খবর করে দিব!
___তুই যা করার কর!
___তবে রে, তুই তুকারি করছিস কেন?
___তুই করছিস কেন?
___চুপ!
___তুই চুপ! খাটাশ একটা ৷ ফোন রাখলাম
রায়হান ঢুকে পড়ছে!
.
বুঝতে পারলাম আমার সমস্ত আশা ভরসা শেষ ৷ ভাগ্য আসলে আমার সাথে নির্মম আচরণ করছে ৷ বিয়ের আসর থেকে ওকে তুলে আনতে পারলে হয়তো তাকে ফিরে পাওয়া যেত ৷ কিন্তু তাকে তুলে এনেও বা কি হতো? সে তো মন থেকে ভালইবাসেনি, নিজের মুখেই সে বলল! এটা শোনা মাত্র সব শেষ হয়ে গেল! খুব কষ্ট হচ্ছিল ৷ এত বছর ধরে যাকে মনপ্রাণ উজার করে ভালবেসে এসেছি সে আজ অন্যের শয্যাসঙ্গি হবে! চোখের কোণ বেয়ে আমার অজান্তে বেদনার অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগল ৷ চোখের পানি ঝরাতে খুব ভাললাগছিল ৷ বেদনা, দূঃখ-কষ্টগুলো কমানোর একমাত্র উপায় তো কান্না ৷ মানুষ যদি কাঁদতে না পারতো তবে দূঃখ-কষ্টের অনলে পুড়ে ছাই হয়ে মারা যেত! নাতাশার দেওয়া পাহাড় সমান কষ্টে আমি পুড়ে মরছি, শুধু ছাই হওয়া বাকি ৷ সেটা হতে পারলে হয়তো বেঁচে যেতাম ৷ ভাঙ্গা মন নিয়ে পথ চলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা, আগ্রহ আর নাই ৷ তিঁরে বিদ্ধ হওয়া হ্নদয় নিয়ে দ্বিতীয় প্রেমের ফাঁদে কিংবা বিয়ের বন্ধনে জড়ানোর সাহসটুকু আর হবেনা ৷ আমি পরাজিত! জীবনের কাছে নয়, ভালবাসার কাছে হেরে গেছি! জীবনে আমি কখনো পরাজয়ের স্বাদ বরণ না করতে পারলেও ছলনাময়ী এক নারীর প্রতরণায় নির্মমভাবে পরাজিত হয়েছি ৷ মনে হচ্ছিল মেরুদন্ডহীন আমি ৷ পঙ্গু ও জড় পদার্থের মত হয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে! কি করব বুঝে উঠে পারছিনা ৷ চোখের পানি ঝরেই চলছে ৷ মুছে ফেলতে চাইলাম না, ঝরছে ঝরুক! যখন পাথর হয়ে যাব তখন চোখের পানি এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে! হয়তো তখন দূঃখগুলোও চোখের পানির সাথে ঝরে নিঃশেষ হয়ে যাবে!
ভাবছিলাম নাতাশাকে নিয়ে ৷ যদি এমনটা হতো, সে বিয়ের শাড়ি পড়ে বাসর ঘর ছেড়ে আমার জন্য ছুটে আসছে? তবে কতই না ভাল হতো! কিন্তু এটা আর কখনো সম্ভব হবেনা!
.
আবারো ফোনটা বেজে উঠলো ৷ রিসিভ করলাম ৷ চোখের পানি মুছে কান্নামাখা স্বরে বললাম,
___তুমি ফের কেন ফোন দিছো?
.
নাতাশা নিচু গলায় বলল,
___সে এখনো রুমে আসেইনি, তাই তোমাকে বিরক্ত করছি ৷ বিরক্ত করতে পেরে দারুণ লাগছে!
.
রাগ হলো খুব ৷ রাগস্বরে বললাম,
___ফোন রাখ বেহায়া মেয়ে ৷ তুই আমাকে আর ফোন দিবিনা!
.
বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে সুইচঅফ করে ফেললাম ৷ এবার আর চাপা কান্না করে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না ৷ গলা ছেড়ে কান্না করতেই হলো!
.
আবার ফোন বেজে উঠলো ৷এবার নাতাশা ফোন দেয়নি, ফোন দিয়েছে আমার খালাতো বোন তাসমিয়া ৷ ফোনটা রিসিভ করেই হাসির শব্দ ভেসে আসলো আমার কানে! তাসমিয়া খিলখিল করে হেসে বলল,
___কিরে লুচ্চা কেমন লাগে? ভাল তাইনা? আমারও এমন লাগতো যখন তুই আমার প্রস্তাব পেয়ে বারবার এড়িয়ে চলতিস ৷ আমি খুব ভাল করে জানি এবং বিশ্বাসও ছিল, আমি ছাড়া তুই অন্য কারো হতে পারিসনা ৷ আজ ঠিকই তোর প্রাণপ্রিয় কলিজার বিদায় হলো ৷ খুব খুশি হয়েছি আমি ৷ চিন্তা করিস না ৷ আর ঐ বান্ধী-দাসীর জন্য মোটেও কাঁদবিনা ৷ আমি তোর কাছে কালই সারাজীবনের জন্য চলে আসছি ৷ আরেকটা কথা আমি আমার স্বামীকে এখনো স্বামীর মর্যাদা দিইনি, শুধু তোকে আপন করে পাবার জন্য! তাই এবার আর ভুল করবনা ৷ তুই যদি এবার আমাকে এড়িয়ে চলিস, কসম করে বলছি হয় আমি মরব নাহয় তোকে মারব! আমি আসছি!
.
তাসমিয়ার কথা শুনে রাগে গা জ্বলছিল ৷ হাত পা কাঁপছিল ৷ নাতাশাকে হারানোর শোকে কান্না করছিলাম সেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল! কিন্তু যখন ফোনের স্কিনে চোখ পড়লো এবং নাতাশার পিকচারটা দেখলাম তখন আবারো কান্নার উদয় হলো ৷ চোখের কোণ বেয়ে আবারো অশ্রু ঝরতে লাগল ৷ মুখ চেপে কান্না করছিলাম ! এমন কান্না দেখে মায়া আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেলল! তারপর গম্ভির গলায় বলল,
___….
.
চলবে…..
.
১ নং পর্ব লিংক কমেন্ট বক্সেঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here