#হ্যাকার,পর্বঃ ০১
লেখকঃ আবির খান।
ব্রেকিং নিউজঃ
“ইউএস এর সবচেয়ে বড়ো সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেমকে হ্যাক করে অনেক গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের একজন হ্যাকার। তবে ইউএস সরকার এখনো হ্যাকারকে ট্রাক করতে পারে নি এবং তারা এও জানিয়েছেন যে, হ্যাকারটি তাদের সিস্টেমে প্রবেশ করেছে অনেক আগেই। কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে নি। শেষে হ্যাকার নিজেই তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, যে তাদের সিস্টেম এখন হ্যাকড। হ্যাকারকে ধরার জন্য বর্তমানে অনেক সাইবার স্পেশালিষ্ট কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা।”
খবরটি টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া মাত্রই পুরো পৃথিবীতে হট্টগোল লেগে যায়। বড়ো বড়ো দেশগুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটা দেশে এরকম হাই ক্লাস হ্যাকার কিভাবে থাকতে পারে, যে কিনা ইউএস এর মতো দেশের সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেমকেই হ্যাক করে বসে আছে। কিভাবে সম্ভব! পুরো দুনিয়াতে হৈচৈ পড়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের উপর প্রতিনিয়ত ইউএস থেকে চাপ আসতে থাকে। শেষমেশ তারা আর না পেরে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, “হয়তো বাইরের কোন দেশ থেকে হ্যাকারটি এসে এই কাজ করেছে। আমরা দ্রুত তাকে ধরতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।” খবরটা প্রকাশ পেলে নতুন একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইউএস সহ বড়ো বড়ো দেশ গুলোর নজর এখনো বাংলাদেশের উপরেই থাকে। তাদের সবার একটাই প্রশ্ন, কে এই হ্যাকার? যে এত বড়ো একটা কাজ করে ফেললো। এবং তাকে ধরতেও পারছে না ইউএস সরকার। কে সে?
নেহাল, রনি আর শুভ তিনজন একসাথে বসে ফোনে এসব খবরই দেখছিল। দেখা শেষ হলে ওরা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
নেহালঃ দোস্ত আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আমাদের দেশে এরকম একটা হ্যাকার আছে।
রনিঃ যদি থাকেও, শালার মাথায় কি বুদ্ধি ভাব একবার।
শুভঃ হাহা, ধুর এই হ্যাকার আমাদের দেশেরই না সিউর আমি। নিশ্চিত বেটায় বাইরের দেশ থেকে আইসা এই আকামটা করছে।
নেহাল রনির কাঁধে হাত রেখে ভর দিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে বলে,
নেহালঃ জানিস রনি, আমারতো মনে হয় এই হাকারটা আমাদের শুভই। দেখস না সারাদিন ফোন আর ল্যাপটপ নিয়ে এদিক ওদিক বইসা থাকে।
রনিঃ আসলেই তো মামা, কিরে এই কাম তোর নাকি? সত্যি সত্যি বল দোস্ত…
শুভ হাসতে হাসতে বলে,
শুভঃ আমি হ্যাক জানলে সবার আগে তোদের আইডি হ্যাক করে তোদের জিএফদের দেখাতাম তোরা কত ভালো বিএফ। হাহা।
শুভর কথা শুনে নেহাল আর রনি একটু ভয় পায়। তবে মুহূর্তেই হাসতে হাসতে বলে উঠে,
নেহালঃ শালা আমরা তো মজা নিতে ছিলাম তুই দেখি সিরিয়াস হইয়া গেলি। চল চল ক্লাসে যাই। ক্লাস শুরু হবে।
শুভঃ হাহা। চল।
ওরা তিনজন ক্লাসে চলে আসে। নেহাল, রনি আর শুভ খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড। ওরা বলতে গেলে ছোট কাল থেকেই একসাথে বড়ো হয়েছে। গলায় গলায় ওদের বন্ধুত্ব যাকে বলে। ওরা দেশের নামকরা একটা ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। বর্তমান হাইপে থাকা নতুন এই হ্যাকারকে নিয়ে ওরা এতক্ষণ মজা করছিলো। মজা করতে করতে নেহাল বলে উঠে শুভই নাকি সেই হ্যাকার! আসলেই কি তাই?
ক্লাসে শুভ, নেহাল, রনি আর ওদের জিএফদের সাথে নিয়ে একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। একটু পরই স্যার আসবে তাই সবাই অপেক্ষা করছিলো। শুভদের ক্লাসে একটা গার্লস গ্রুপ ছিল। তাদের মধ্যে আবার একজন লিডারও আছে। যার নাম হলো মায়া। পুরো ইউনিভার্সিটির মতে, মায়ার চেয়ে বেশি সুন্দরী মেয়ে আর একটা নেই এই ইউনিভার্সিটিতে। প্রচুর ছেলে পাগল মায়ার জন্য। রীতিমতো ওর জন্য জান দিতেও প্রস্তুত এমন ছেলেও আছে। কিন্তু মায়া কাউকে পাত্তা দেয় না। সবার সাথে ফান করে, র্যাগ দেয়, মজা নেয় ওর গার্লস গ্রুপকে সাথে নিয়ে। ওটাই ওর কাজ। তাই ওকে অনেকেই ভয় পায় আবার। এছাড়া মায়ার বাবা অনেক বড়ো একজন শিল্পপতি। টাকার কোন অভাব নেই মায়ার। তাই দশ বিশটা মেয়ে মায়ার পিছনে শুধু ঘুরঘুর করে ওর টাকা উড়ানোর জন্য। এতে মায়ার কোন কষ্ট নেই। বরং ওর মজাই লাগে।
শুভদের গ্রুপে ওরা মায়াকে নিয়েই কথা বলছে। নেহালের গার্লফ্রেন্ড ঈশা বলে উঠে,
ঈশাঃ নেহাল, মায়ার যন্ত্রণায় ক্লাসও করতে পারছি না আমরা। ওর গ্রুপের জন্য সবসময় আমাদেরকে পিছনে বসতে হচ্ছে। আর অনেক বেশি বেশি করে আমাদের সাথে। তুমি এবার ওকে প্লিজ কিছু বলো। আর ভালো লাগছে না এসব।
নিলাঃ আসলেই রনি, ঈশা কিন্তু সত্যিই বলেছে। আমরাও এখানে টাকা দিয়ে পড়ি। ওর বাবার টাকা বেশি দেখে, কি ও আমাদের সাথে এমন করবে? কিছু একটা করো প্লিজ।
রনি আর নেহাল একে অপরের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। মাঝ দিয়ে শুভ হাসি দিয়ে বলে উঠে,
শুভঃ তোমরা কেমন গার্লফ্রেন্ড বলো তো? নিজেদের বয়ফ্রেন্ডকে ওদের কাছে যেতে বলো? যদি ওরা উলটা পালটা কিছু বানিয়ে বসে তখন তো নেহাল আর রনি ফেসে যাবে।
ঈশা আর নিলা শুভর কথা শুনে ভরকে যায়। দুজন দুজনের বয়ফ্রেন্ডকে ধরে বলে উঠে,
~ থাক থাক যেও না৷ শুভ ঠিকই বলেছে। কি আর করার মেনেই নি এসব৷
নেহাল আর রনি মনে মনে শুভকে অসংখ্য বার ধন্যবাদ জানাচ্ছিলো। বড়ো বাঁচা বাঁচিয়েছে ওদের। কারণ এর আগে এরকম একটা ছেলে ওদেরকে কিছু বলতে গিয়েছিল। কিন্তু মায়া আর ওর গ্রুপের মেয়েরা মিলে ছেলেটাকে এমন পঁচানো পঁচিয়েছে যে ছেলেটা লজ্জায় টানা এক সপ্তাহ ভার্সিটিই আসে নি। শুভ সেটা ভালো ভাবেই জানে। তাই ওদেরকে যেতে দেয় নি। নেহাল শুভকে ধরে বলে উঠে,
নেহালঃ দোস্ত তুই আর কতদিন সিঙ্গেল থাকবি? এবার একটা রিলেশন কর। দেখ মৌ কিন্তু সবসময় তোর দিকে তাকিয়ে থাকে। তুই কেন ওকে পাত্তা দিস না বলতো?
শুভ কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
শুভঃ দোস্ত আমার এসব ভালো লাগে না। আমি এমনিই ভালো আছি।
রনি পাশ দিয়ে বলে উঠে,
রনিঃ আমার কি মনে হয় জানিস, শুভ কাউকে পছন্দ করে। কিন্তু এখন বলতে চাচ্ছে না। শালা ভয় কিসের বলে ফেল। আমরা আছি না৷
শুভ কিছু বলে না৷ কিন্তু আড় চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ শুভ আসলেই কাউকে পছন্দ করে। আর সেটা আর কেউ নয়, মায়া। কিন্তু মায়াকে ওর মনের কথা ও কোন দিন বলতে পারবে কিনা তা ও জানে না। এরপর ওদের আড্ডা চলতে চলতে বেল পড়ে যায়। সবাই সবার সিটে বসে যায়। একটু পর প্রফেসর চলে আসেন। সবাই তাকে সালাম দিলে সেও সালামের উত্তর দিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবেন ওমনি মেইন গেইটের ওখান থেকে,
— ম্যা আই কামিন স্যার?
সবাই একসাথে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখে, বেশ ফরসা গায়ের রঙ, উঁচা লম্বা সুঠাম দেহ, সিল্কি আঁচড়ানো চুল, গালে হালকা চাপ দাঁড়ি আর চোখে পাওয়ারলেস চশমা পরা একটা ছেলে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কে এই ছেলে? কারণ তাকে এর আগে এই ক্লাসে তো দূর ভার্সিটিতেও কেউ দেখেনি। তাহলে সে এখানে কেন? স্যার ছেলেটাকে আসো আসো বলে ভিতরে আসার অনুমতি দিল। তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
স্যারঃ তোমার নাম কি আবির?
আবিরঃ জি স্যার।
স্যারঃ ওহ!
এবার স্যার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
স্যারঃ স্টুডেন্টস, ও আজ থেকে তোমাদের ক্লাসমেইট। বিশেষ অনুমতিতে ও অন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার হয়ে আমাদের এই ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। আমি আশা করছি তোমরা ওর সাথে বন্ধুত্ব করে ওকে হেল্প করবে। ঠিক আছে?
— জি স্যার(সবাই)
স্যারঃ তাহলে আবির, তুমি গিয়ে এবার সিটে বসে পড়ো।
আবিরঃ ধন্যবাদ স্যার।
স্যারকে ধন্যবাদ দিয়ে আবির সোজা গিয়ে মায়ার পাশে বসে পড়ে। যেখানে ক্লাসের একটা ছেলে সাহস পায় না ওর সাথে কথা বলার সেখানে আবির ডিরেক্ট মায়ার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। পুরো ক্লাস থ হয়ে আছে। মায়া আর মায়ার ফ্রেন্ডরা…..
চলবে…?