হ্যাকার,পর্বঃ ০৪

0
660

#হ্যাকার,পর্বঃ ০৪
লেখকঃ আবির খান।

মায়াঃ প্লিজ আবির আমাকে ছেড়ে দেও। আমার ভুল হয়েছে। প্লিজ…

আবির আস্তে আস্তে মায়ার আরও কাছে গিয়ে ওর থুতনিটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আর ওর মুক্তার মতো ঝলমলে চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া ভীষণ ভয় পাচ্ছে। ও বুঝতে পারছে না আবির আসলে কি করতে চাচ্ছে। মায়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

মায়াঃ তুমি কি করতে চাচ্ছো আবির?

আবির এবার মায়ার থুতনি ছেড়ে ওর কপালের উপর পড়ে থাকা দুষ্ট চুলগুলোকে আস্তে আস্তে করে ওর কানের পিছনে গুজে দিয়ে সেই রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

আবিরঃ আমি কি করলে তুমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবে বলো?
মায়াঃ আমার লাইফ থেকে চলে যাও। আমার ভালো লাগছে না তোমাকে।

আবির এবার জোরে হাসি দিয়ে বলে,

আবিরঃ সবে মাত্র দুদিন হলো আসলাম, এরমধ্যেই আমাকে ভালো লাগছে না তোমার? আমি যে এসেছি তোমার পুরো লাইফটা….

আবির থেমে যায়। মায়ার চোখগুলো ভয়ে বড়ো হয়ে যায়। ও অস্থির কণ্ঠে আবিরকে আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,

মায়াঃ কি…আমার পুরো লাইফটা কি? শেষ করে দিতে চাও তাই তো? কেন? কি করেছি আমি?

মায়া খেয়াল করে আস্তে আস্তে আবিরের মুখের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। কেমন জানি কঠিন হয়ে উঠছে। মায়া আবিরকে ছেড়ে পিছু হতে থাকে। আবির মায়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

আবিরঃ গাছটাই যদি ভালো না হয়, তাহলে গাছের ফল কিভাবে ভালো হবে? সে ফল দেখতে বাইরে থেকে যতই সুস্বাদু হোক না কেন, ফলের ভিতরটা পঁচাই হয়। এরপর যদি সেকেন্ড টাইম ক্লাসের মধ্যে কোন প্রকার উলটা পালটা করতে দেখেছি তাহলে তোমার খবর আছে। আর এইসব গার্লস গ্রুপ যেন আর না দেখি ক্লাসে বা ভার্সিটিতে। তাহলে মায়া তুমি আবিরকে চিনো না। আবির যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা আবির নিজেও জানে না। কারণ আবির বুদ্ধি আর মাথা খাটিয়ে কাজ করে। সো বুঝতেই পারছো।

কথাগুলো শেষ করে মায়ার হাতটা জোরে ছেড়ে দিয়ে আবির চলে আসে। এত জোরে চেপে ধরায় মায়ার হাতটা লাল হয়ে আছে। ব্যথায় টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে মায়ার গাল বেয়ে। আবিরের কথাগুলো শুনে ভয়ে আস্তে আস্তে মাটিতে বসে পড়ে ও। ওর মনে হচ্ছে ও এখনি অজ্ঞান হয়ে যাবে৷ এরপর কোন মতে সবার আড়ালে মায়া ওর বাসায় চলে যায়। এদিকে আবিরও ভার্সিটির বাইরে এসে ওর লাল কালারের আর ওয়ান ফাইভ বাইকটা নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। সেদিনটা ওভাবেই শেষ হয়।

রাত ১২ টা নাগাত বাজে। শুভ সারাদিন ধরে বাসায় বন্দি হয়ে আছে। ল্যাপটপ, পিসি সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেও কোন ভাবে কিছুই বের করতে পারে নি। হঠাৎই ওর ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। শুভ কেঁপে ওঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে রিসিভ করবে কি করবে না। শেষমেশ অনেক সাহস করে শুভ ফোনটা রিসিভ করে।

শুভঃ হ্যা…হ্যালো…
— একা রুমে বসে আছিস কেন? কি ভাবছিস? আমাকে হ্যাক করে ধরবি?

ফোনের ও পাশ থেকে যে কণ্ঠটা আসছে সেটা ভয়েস মডিফিকেশন অ্যাপ দ্বারা পরিবর্তন করা ভয়েস। শুভ সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ও ভয়ে ভয়ে বলে,

শুভঃ আপনি কিভাবে জানেন আমি রুমে একা বসে আছি?
— হাহা। আমি সবই জানি আর সবই দেখছি।

শুভ তাকিয়ে দেখে ওর ল্যাপটপ এর ওয়েবক্যামের পাশে যে সিকিউরিটি লাইটটা আছে সেটা জ্বলে আছে। শুভর আর বুঝতে বাকি নাই ওর ল্যাপটপ হ্যাকড। ও দ্রুত উঠে যেই ল্যাপটপ অফ করতে যাবে ওমনি ফোনের অন্যপাশ থেকে,

— উহুম, না না। ভুলেও এই ভুল করিস না। ল্যাপটপ বন্ধ হওয়া মাত্রই তোর ভিডিও কোথায় কোথায় যে চলে যাবে তার কোন ধারণাই নেই শুভ।

শুভ থমকে যায়। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ও এভাবে ফেসে যাবে। ও অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

শুভঃ ভাই আপনি কি চান আমার কাছে? একবার বলেন। টাকা চান? কত টাকা লাগবে বলেন? আমি দিব।

ও পাশ থেকে অট্টহাসি ভেসে আসছে। হাসতে হাসতে সে বলে,

— টাকা! এত টাকা তুই কই পেলি? তোর তো বাবা-মা কেউ নেই। তোর এই টাকার সোর্স কি? বল? আচ্ছা আমিই বলতাছি। উত্তরটা হলো, হ্যাকিং। তুই অন্যের ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিস দিনের পর দিন। বুঝলাম তুই অনেক বড়ো হ্যাকার। তুই করবি দেশের সেবা। কিন্তু তুই করছিস ইলিগ্যাল কাজ। কি ভেবেছিস? বাপেরও বাপ হবে না? আমি তোর বাপেরও বাপ। সারাদিন তো অনেক চেষ্টা করলি। পেরেছিস কিছু করতে? পারিস নি। তুই এ পর্যন্ত যত টাকা হ্যাক করে মেরেছিস সব কিছুর হিসাব আমার কাছে আছে। তোর সুইচ ব্যাংকে যত টাকা ছিল অলরেডি সব আমি পাঠিয়ে দিয়েছি, যাদের টাকা মেরেছিস তাদের কাছে। এখন কি হবে তোর বল?

শুভ ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওর সব শেষ। ও কল্পনাও করেনি যে এভাবে ধরা খাবে ও। ওর জীবনটা শেষ। আর কোন কিছুই বাকি নেই ওর জীবনে। হঠাৎই শুভর রুমে থাকা সাউন্ড বক্স থেকে সেই বড়ো হ্যাকারের কণ্ঠ ভেসে আসে। সাথে ওর ল্যাপটপ এ ভিডিও কল চালু হয়ে যায়। যেখানে একটা লোক হ্যাকার মাস্ক পরে বসে আছে। শুভ দ্রুত তার সামনে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে আকুতি মিনতি করে বলে,

শুভঃ ভাই আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর কোন দিন এসব করবো না। আমার থাকা খাওয়ার কোন টাকাই ছিল না। বাবা মা মারা যাবার পর থেকে আমার অবস্থা ধীরে ধীরে খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমার বন্ধুদের থেকে আমি পিছনে চলে যাবো বলে আমি আমার মেধাকে এই খারাপ কাজে লাগিয়েছি। তবে বিশ্বাস করেন আমি যাদের টাকা নিয়েছি তারা খুবই ধনী ছিল। কোন মধ্যবিত্ত মানুষের টাকা আমি নেই নি। বিশ্বাস করেন৷
— এরজন্যই এখনো তুই আমার সাথে কথা বলতে পারছিস। নাহলে এতক্ষণে জেলে থাকতি।
শুভঃ ভাই আপনার পায়ে ধরি, দয়া করে আমাকে মাফ করে দিন৷ আমি একটা মেয়েকে খুব ভালবাসি। আমার বন্ধু, নেহাল, রনিকেও খুব ভালবাসি। এরাই আমার সব। প্লিজ ওদের থেকে আমাকে আলাদা করবেন না। দোহাই লাগে।
— তোকে এক শর্তে মাফ করতে পারি। যদি কোন চালাকি করেছিস, মুহূর্তেই সব ফাস হয়ে যাবে।
শুভঃ ভাই আপনি যা বলবেন আমি তাই ই মানবো।
— তোদের ক্লাসে যে নতুন একটা ছেলে আসছে না, কি জানি নাম…
শুভঃ আবির আবির…
— হ্যাঁ, ওর সাথে ভালো বন্ধুত্ব করবি। আর ওকে তোর সব অপকর্মের কথা বলবি। যদি ও তোকে মাফ করে দেয় তাহলে তুই বেঁচে যাবি। আর যদি না করে তাহলে….

শুভর রুম মুহূর্তেই নিঃশব্দ হয়ে যায়। হ্যাকারটা চলে গিয়েছে। শুভ নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। ওর মাথা কাজ করছে না। ওর মাথায় শুধু এখন একটা জিনিসই ঘুরছে তা হলো, ওর পুরো জীবনটা এখন আবিরের হাতে। আবিরের সাথে এর সম্পর্ক মোটেও ভালো না। আবির ওর এই ভয়াবহ অপকর্ম শুনে যদি ওর বন্ধু আর মায়াকে সব বলে দেয়? কিংবা যদি কোন পুলিশকে বলে দেয়? তখন কি হবে? শুভর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ওর মন চাচ্ছে ও এখনিই নিজের জীবনটা দিয়ে দিবে৷

অন্যদিকে,

— ডার্ক মিশন কতদূর? (চিফ)
— স্যার চলছে আমার প্ল্যান মতো। (ডার্ক)
— কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? এতটা উদারতা ভালো কি?
— স্যার কারো জন্য কাউকে দরকার হয়। কেউই একা থাকতে পারে না কখনো। তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
— কিন্তু….
— কোন কিন্তু না স্যার। আমি এতটাও নির্দয় হতে পারছিনা। কারণ ত আপনি জানেনই।
— ঠিক আছে তোমার যা ভালো লাগে করো। তবে আসল মিশনের কাজ কবে থেকে শুরু হবে? আর ইনফরমেশন সব বের করেছো?
— ইনশাআল্লাহ কাল থেকেই। জি স্যার। ওর প্রত্যেকটি অপকর্মের ইনফরমেশন প্রমাণসহ আমার কাছে আছে। আমি সর্বদা সবদিকেই খেয়াল রাখছি।
— ওকে গুড লাক। সত্যিই তোমাকে নিয়ে আমার অনেক গর্ব। আমার বিশ্বাস, পুরো বিশ্বে বর্তমানে তোমার চেয়ে বড়ো হ্যাকার আর কেউ নেই ডার্ক। এগিয়ে যাও আর দেশের জন্য এভাবে কাজ করতে থাকো। আমরা আছি তোমার পাশে।
— ধন্যবাদ স্যার।

ফোনটা কেটে যায়৷ ইয়েস, ডার্কই হলো সেই হ্যাকার যে কয়েক দিন আগে ইউএস এর সবচেয়ে বড়ো সিকিউরিটি সিস্টেমকে ব্রেক করে তাদের অনেক গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল। ডার্ক একটা গোপন সংস্থার সাথে জড়িত। যারা কখনো আলোতে আসে না। যারা শুধু অন্ধকারে দেশের সু-ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ডার্ক তার নতুন মিশনে প্রথম টার্গেট শুভকে অলরেডি অ্যাটাক করে ফেলেছে। এখন শুধু দ্বিতীয় টার্গেটকে অ্যাটাক করা বাকি। কিন্তু ডার্কের সাথে আবিরের সম্পর্ক কি? সেটাই এখন দেখার পালা।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here