হয়তো তোমারি জন্য,Part_01
Writer_Ayana_Ara (ছদ্মনাম)
১.
ভরা বিয়ের বাড়ির মধ্যে আয়ানা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে ফিল্ম স্টার আয়াশ!এদিকে আয়ানা ঘেমে একাকার। আয়ানা নিজেকে সামলে আয়াশের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,”আয়াশ ভাইয়া ছাড়ো প্লিজ। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।”
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”নাহ ছাড়বো না আগে তুই বল রিয়ানের সাথে এতো কি তোর?”
আয়ানা ভ্রুকুচকে তাকায়। ও বুঝতে পারছে না আয়াশ কি বলছে। তবুও বলল,”মানে কি বলছো তুমি আয়াশ ভাইয়া?রিয়ান ভাইয়ার সাথে আবার কি?”
আয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”আমার বাংলা কথা বুঝিস না?রিয়ানের সাথে এতো ঢলাঢলি করিস কেনো!”
আয়াশের পুরো কথার মানে বুঝতে পেরে আয়ানা আয়াশের হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে বলে,”উলটা পালটা কথা বলা বন্ধ করবা?সে আমার চাচাতো ভাই তার সাথে কথা বলতেই পারি।”
বলে এক মিনিটও দাঁড়িয়ে না থেকে চলে আসলো ওইখান থেকে। আয়ানার রাগে গা রিরি করছে। এতোটা রাগ ওর আগে কখনো হয়নি।
আয়ানাকে মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখলে মুন এসে আয়ানার গাল টেনে দিয়ে বলে,”কি হয়েছে তোর রেগে আছিস কেনো?”
আয়ানা বলে,”নাহ এমনি আপু!তুমি পার্লারে যাবা না?”
মুন হেসে বলে,”তোকে না নিয়ে যাই কিভাবে?তুইও রেডি হয়ে আয় আমরা একসাথে যাই সাজতে।”
আয়ানাও হেসে সম্মত্তি জানায়। রেডি হয়ে মুনের সাথে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে।
আজ মুনের বিয়ে। মুন হলো আয়ানার ফুপাতো বোন। মুনের বিয়ে উপলক্ষে তারা গ্রামে এসেছে। আয়াশ হলো মুনের ভাই। আয়াশ পেশায় একজন ফিল্ম স্টার। কোনো এক কারণে আয়াশ আয়ানাকে সহ্যই করতে পারে না আয়ানা বুঝে না আয়াশের সাথে তার কিসের শত্রুতা!
পার্লার থেকে আসতেই মুনকে কেউ ঝাপ্টে ধরে। মুন নিজেকে সামলে দেখে ছায়া। মুন হেসে বলে,”আরে ছায়া কেমন আছো?”
ছায়াও হেসে বলে,”ভালো আছি মুন আপু, তুমি কেমন আছো?” [ছায়া মুনের ফুপাতো বোন।]
মুনও ফের হেসে বলে,”আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো আছি। এখন আসার সময় হলো? একটু আগে আসলে আমাদের সাথে যেতে পারতে পার্লারে।”
ছায়া প্রতুত্তরে কিছু না বলে স্মিত হাসে। আয়ানা নিরব দর্শকের দায়িত্ব পালন করছিলো। কেনো জানি ওর ছায়াকে সহ্য হয়। ওর ন্যাকা কথায় কথায় গা ঘেঁষে দাঁড়ানো স্বভাবের জন্য। ছায়া এইবার মুনের কাছ থেকে সরে আয়ানার কাছে এসে বলে,”কেমন আছো আয়ানা?”
আয়ানা জোরপূর্বক হেসে বলে,”আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো আপু!তুমি কেমন আছো?”
ছায়া বলে,”হুম ভালো।”
ছায়ার চোখ এইবার অন্যজনকে খুজতে লাগে আয়ানা লক্ষ্য করে বলে,”কাউকে খুজছো বুঝি আপু?”
ছায়া আয়ানার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বলে,”হ্যা!তোমার আয়াশ ভাই কোথায়?”
আয়ানা বলে,”আয়াশ ভাইকে দুপুরে দেখেছিলাম পরে আর দেখি নি কিন্তু কেনো?কি বলবা তাকে?”
শেষের কথাগুলো বলে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ছায়ার দিকে। ছায়া জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বলে,”না এমনি। আসার পর থেকে তো শুধু আয়াশের সাথেই দেখা হয়নি তো তাই।”
আয়ানার বিশ্বাস না হলেও বলল,”ওহ আচ্ছা একটু পরেই চলে আসবে হয়তো।”
ছায়া কিছু না বলে দ্রুত জায়গা প্রস্থান করলো যেনো গেলেই বাঁচে। আয়ানা ডালা সাজাতে মনোযোগ দিলো এমনেতেও অনেক সময় ব্যয় হয়েছে একটু পরেই মুনকে নিচে নিয়ে যাবে।
২.
মুনকে নিচে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো স্টেজে। একে একে মুনকে সবাই হলুদ ছোঁয়াচ্ছে কিন্তু আয়ানা ভাবছে আয়াশ কোথায়?বোনের বিয়ে আর সেই নেই কি সাংঘাতিক ছেলেরে বাবা!
আয়ানার ভাবনার মাঝেই আগমণ ঘটলো আয়াশের। আয়াশ আয়ানাকে চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখে আয়ানার সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”এইযে কই চলে গেলি?”
আয়ানা ধ্যান থেকে ফিরতেই আয়াশকে দেখে চমকে যায়। পরেক্ষনেই সামলে বলে উঠে,”না ভাইয়া মানে এতক্ষন কোথায় ছিলা?”
আয়াশ কিছুটা রাগি গলায় বলল,”তোকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি।”
আয়ানা চুপ হয়ে গেলো যদিও কথাটা ওর খারাপ লেগেছে। ইলমা আয়ানার পাশে বসে বলে,”বুঝি না এই আয়াশটা তোর সাথে এমন করে কেন কতো কিউট একটা মেয়ে তুই!”
ইলমার কথায় আয়ানা হেসে বলে,”তুমিও অনেক কিউট ইলমা আপু।”
????
হলুদ আয়োজন শেষে সব ভাইবোনেরা এক জোট হয়ে বসেছে গল্প করতে। গল্প শেষে ইলমা আপু বলল,”এই এই চলো না আমরা সবাই কিছু খেলি!”
আয়ানা খুশিতে লাফিয়ে বলে,”ইয়েএ চলো খেলি।”
আয়াশ মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ভাব টেনে বলল,”তোরা এখন এইসব পিচ্চিদের গেইম খেলবি?”
ছায়াও তাল মিলিয়ে বলে,”হ্যা এইসব বাচ্চাদের খেলা। আমরা বরং গল্পই করি।
কিন্তু আয়ানা নাছড়বান্দা একবার যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে। আয়ানার জন্য সবাই খেলতে রাজী হয়ে যায়। সবাই ঠিক করে ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবে। আয়াশ এইসব পিচ্চিদের খেলায় রাজী ছিলো না সবার জোরাজুরিতে সেও রাজী হয়ে গেলো।
৩.
“আয়াশ তুই একটা গান গাবি ওইরকম নর্মাল বাংলা গান না রোমেন্টিক গান গেতে হবে তাও আবার তোর প্রেয়সীকে মিন করে।”
দাঁত কেলিয়ে কথাটা বলল রুবায়েত ভাইয়া। হ্যা বোতল ঘুরিয়ে আয়াশ ভাইয়ার দিকেই পড়েছিলো তারপর আয়াশ ভাইয়াকে ডেয়ার দিয়েছে গান গাইতেই হবে। আয়াশ ভাইয়া ও হার মেনে গান গাওয়া শুরু করে দেয়।
“হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য, আশার হাত বাড়াই ৷
যদি কখনো একান্তে, চেয়েছি তোমায় জানতে,
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে, ছুটে ছুটে গেছি তাই ৷
আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত ,
আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত।
যদি বা ঘটে অনর্থ, তবুও তোমায় চাই ৷
হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য,
জানি তুমি অনন্য, আশার হাত বাড়াই ৷
আমি যে দুরন্ত, দুচোখে অনন্ত,
ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই স্বপ্ন ছড়াই ৷
তুমিতো বলোনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ
তুমিতো বলোনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব, সব ছেড়ে চলো যাই ৷
হয়তো তোমারি জন্য”
শেষের লাইনটা আমার দিকে তাকিয়ে গাইলো। যা দেখে আমার মনে কিছুটা খটকা লাগলো। গান গাওয়া শেষে রুবায়েত ভাইয়া আয়াশ ভাইয়াকে বলল,”কিরে মিয়া গান দেখি ভালোই গাও!প্রেমে ট্রেমে পড়লে নাকি সত্যিকারে?”
বলে অট্টহাসি দিলো। আয়াশ ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,”হয়তো পড়তেও পারি কারো প্রেমে!”
আয়াশ ভাইয়ের কথায় সবাই ঠাট্টায় নিলেও আমি বেশ সিরিয়াসলি নিলাম। জমপেশ আড্ডা শেষে আমরা যে যার রুমে চলে এলাম। আমি নিজের রুমে এসে আয়াশ ভাইয়ার গানের মানে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যদিও ব্যর্থ আমি। সারাদিনে অনেক কাজ করার ফলে মাথা ধরে গিয়েছিলো তাই সোজা কুষুম গরম পানি দিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলাম।
৪.
সকালে আঁধার মুছে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। হিম শীতল বাতাস বইছে। সাধারণ দিনের থেকে আজ খুব দ্রুত খুব ছুটে গিয়েছে আমার। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলাম। সবাই ব্রেকফাস্ট করছে এক মাত্র আয়াশ ভাইয়া বাদে। হয়তো কাল বেশি রাত জেগে থাকার জন্য পরে পরে ঘুমাচ্ছে এখন তাতে আমার কি?আমি ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।
একটু পরে মুন আপুকে সাজাতে মানুষ আসবে। বেশ কিছুক্ষন পর পার্লারের দুইজন মহিলা আসলো মুন আপুকে সাজাতে।ভাবতেই কতো অবাক লাগছে যার সাথে ছোট বেলা থেকে কত খেলতাম আজ তার বিয়ে!
মুন আপুকে সাজিয়ে চলে যেতেই। একে একে সবাই রেডি হতে থাকে। সবাই রেডি হতেই বাহিরে যাই আমরা।
আমাদের দাদু বাড়ির উঠোনটা বেশ বড় তাই ওইখানেই প্যান্ডেল টাঙিয়েছে।
চলবে