হয়তো_তোমারি_জন্য,পর্ব_০৮ (অন্তিম পর্ব)
আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
অপরপাশকে কেউ বলল,”ইনশু?”
ইনশিরা চমকে উঠলো!তারমানে আয়াশের কাছে ওর নাম্বার এখনো আছে?ভাবতেই ইনশিরার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। যা সবার চোখে এড়িয়ে গেলো। ইনশিরা বলল,”হ্যালো!ভাইয়া তুমি কি বাসায় আছো?”
আয়াশ ভ্রুকুচকে বলে,”আমার থাকা আর না থাকা দিয়ে তোর কি?আর ফোন কেনো দিয়েছিস সেটা বল। তোর মতলব ভালো ঠেকছে না!”
ইনশিরা জোরপূর্বক হেসে বলে,”তেমন কিছুই না আমার ফ্রেন্ড তোমার সাথে দেখা করতে চায় তাই ফোন দিয়েছিলাম। তুমি বিজি থাকলে রাখি তাহলে!”
“আমি এখন বাসায় নেই স্টুডিওতে এসেছি।”
বলে রেখে দিলো। ইনশিরা ফোন রেখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,”শুনেছিস?এখন বিদায় হো তোরা!”
ওদের সবাইকে বিদায় দিয়ে ইনশিরা আবার রুমে এসে পড়লো।
___________
“কে ছিলো?”
ফোন রাখতেই নিনিকা কথাটা বলে উঠলো আয়াশ শান্ত স্বরে বলল,”কেউ না!”
নিনিকা বিশ্বাস করলো না তবুও বলল,”ওহ আচ্ছা।”
বলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।
????
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে যথাযথ সময়ে তারা বেরিয়ে পরে। ইনশিরার আগামীকাল পরীক্ষা দেখে তাড়াতাড়ি চলে আসবে ইনশিরারা। সাথে ইলমাও যাচ্ছে ওদের সাথে!
ওরা ইনশিরাদের ছোট চাচীর বাসায় পৌছেছে অনেকক্ষন হয়েছে। ইনশিরা ইলমা গল্প করছে সাথে ওদের চাচাতো বোন। অনেকক্ষন গল্প করার পর ওদের চাচি এসে বলেন,” মিহি,ইনশিরা,ইলমা? খাবা না তোমরা?খাবার বেড়ে রেখেছি। এসে খেয়ে নাও পরে নাহলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
ওরা সবাই খেয়ে নেয়। মিহি,ইনশিরা,ইলমা ঠিক করে বিকালে তারা বাহিরে যাবে। যেই বলা সেই কাজ আসরের আজান দিতেই তারা বাহিরে বের হয় হাঁটতে। কতশত গল্প করতে করতে এগোচ্ছিলো ইনশিরার চোখ পরে একটা পার্কে। ও ওদের দুইজনকে বলল,”চলো না পার্কে যাই।”
“আমাকে ছবি তুলি দিবি তোরা কিন্তু!” (ইলমা)
“আচ্ছা আগে চলো তারপর নাহয় তুলে দিবো ছবি।”
বলে ইনশিরা হাঁটা ধরলো। কিছুক্ষন ওইখানে থেকে ওরা সোজা বাসায় এসে পড়লো।
১৬.
সন্ধ্যায় যথা সময়ে ইনশিরারা বাসায় এসে পড়লো। ইনশিরা ফ্রেশ হয়েই বইয়ে মুখ গুজে রইলো সারাদিন টইটই করে ঘুরেছে এখন পড়তে হচ্ছে ভেবেই ইনশিরার কান্না পাচ্ছে। নিজেকে সামলে পড়তে থাকলো।
সকালে_
পরীক্ষার হলে বসে বসে ঝিমুচ্ছে ইনশিরা সারারাত ঘুম না হওয়ার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে ওকে। কোনোরকম পরীক্ষা দিয়ে বেরহলো। কিছুই ভালো লাগছে না ওর!
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অনেক বড় কিছু জানতে পারলো!ওর মা-বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে। ইনশিরার মাথায় যেনো বাজ পড়লো!এতো তাড়াতাড়ি কেনো তারা ওকে বিয়ে দিবে ভেবেই পাচ্ছে না!
ইনশিরা নিজের মাকে এই কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,”দেখ আমরা তোর ভালো চাই খারাপ চাই না আমাদের সিদ্ধান্তে রাজী হয়ে যা!”
ওইদিনের পর থেকে ইনশিরা মনমরা হয়ে থাকতো। কেমন যেনো একা একা লাগতো নিজেকে। যদি পালাতে পারতো! কিন্তু পালিয়েই বা কি করবে?ওর আয়াশের জন্য কেনো জানি অনেক কষ্ট হচ্ছে। দেখতে দেখতে ইনশিরার বিয়ের দিনও চলে এলো। সব কিছু যেনো এক ঘোরের মধ্যে কেটেছে।না ও ওর হবু বরের ছবি দেখেছে আর না দেখা করেছে আর না বাড়ির বাহিরে বেরিয়েছে। সবাই জোরাজুরি সত্তেও ও ওর হবু বরের ছবি দেখে নি।
আজ ওর হলুদ!তবুও যেনো কিছুই ভালো লাগছে না ইনশিরার। কোথাও মন টিকছে না। পার্লারের মহিলারা ওকে সাজিয়ে চলে গিয়েছে।ওকে ছাদে নিয়ে যেয়ে বসানো হয় আর ও কাঠ পুতুলের ন্যায় বসে আছে। ওকে সবাই হলুদ ছোয়াচ্ছে। হলুদ আয়োজন শেষ হতেই সবাই একে একে চলে যেতে থাকে। ইনশিরা নিজের রুমে এসে ঠেস মেরে শুয়ে পরে। ফোন হাতে নিয়ে এক ধ্যানে আয়াশের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে!ওর জন্যই কেনো ওর কষ্ট হচ্ছে?আয়াশের জন্য কি ওর কোনো অজানা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে যা ও জানে না এখনো!
১৭.
বধু বেশে বসে আছে ইনশিরা!নিজেই অবাক হলো নিজের উপর!হঠাৎই দরজা খট করে খুলে যেতেই চমকে উঠে। ঘোমটা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখতেই যেনো ওর মাথায় বজ্রপাত হয়!এ কাকে দেখছে ও?আয়াশ!তাও আবার এইখানে কেনো?ইনশিরা আস্তে করে বলে উঠলো,”আয়াশ ভাই তুমি?”
আয়াশ ভ্রুকুচকে বলল,”কাকে আশা করছিলি তুই?”
ইনশিরা থমথমে মুখে জবাব দিলো। “কাউকেই আশা করি নি মানে তুমি এইখানে কেনো?”
আয়াশ হেসে বলে,”বরকেই চিনিস না কিসের বউ তুই?”
ইনশিরা মিনেট খানেকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়!বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আয়াশ ওর স্বামী!আয়াশ ইনশিরার পাশে বসে বলে,”ভাবছিস আমাকে বিয়ে কিভাবে করলি তুই?আমি বলছি তোর আব্বু তোর সাথে আমার বিয়েই ঠিক করেছিলো কিন্তু তুই খাওয়া দাওয়া সারাদিন মনমরা হয়ে থাকতি এমন কি আমার ছবি পর্যন্তও দেখিস নি। আর কবুল বলার সময় যখন নাম নিয়েছিলো আমার তখন তুই অন্য ধ্যানে ছিলি আর অন্য ধ্যানে থাকলে আমরা কোনোকিছুই শুনতে বা বুঝতে পারি না!”
ইনশিরার অবাক হয়ে বলল,”তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করেছো?তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো না তাহলে?”
আয়াশ মৃদু হেসে বলে,”আরে পাগলী! আমি তোকে ভালো না বাসলে বিয়ে করবো কেনো?সত্যিই তুই অনেক বোকা”
৩ বছর পর_
“হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য, আশার হাত বাড়াই ৷
যদি কখনো একান্তে, চেয়েছি তোমায় জানতে,
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে, ছুটে ছুটে গেছি তাই ৷
আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত ,
আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত।
যদি বা ঘটে অনর্থ, তবুও তোমায় চাই ৷
হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য,
জানি তুমি অনন্য, আশার হাত বাড়াই ৷
আমি যে দুরন্ত, দুচোখে অনন্ত,
ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই স্বপ্ন ছড়াই ৷
তুমিতো বলোনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ
তুমিতো বলোনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব, সব ছেড়ে চলো যাই ৷
“হয়তো তোমারি জন্য”
লাইন গুলো মনে করতেই আয়াশের চোখে পানি চলে এলো! ও ভাবতেই পারছে না ইনশিরা আর নেই! হ্যা ওইদিনের পর তিন তিনটে বছর কেটে গেছে। সাথে বেড়েছে আয়াশ ইনশিরার ভালোবাসা!কিন্তু এই ভালোবাসা বেশিদিন থাকে নি। ওদের বিয়ের দুইবছর পর ইনশিরার ক্যান্সার ধরা পরে। বাঁচার সম্ভবতা খুব কম ছিলো!আয়াশ এই কয়দিন অনেক কেয়ার করেছে ইনশিরা খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত! কিন্তু কে জানতো মধ্য রাতেই যে ইনশিরা আকাশের তারা হয়ে যাবে।
ছেলেদের কাঁদতে নেই কিন্তু ওইদিন আয়াশ কেঁদেছিলো নিজের প্রিয় মানুষটির জন্য। কিন্তু এখন কেঁদে কি লাভ যখন সে আকাশের তারা হয়ে গেছে। আয়াশ রাতের বেলা ইনশিরার হাস্যজ্বল ছবি নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। হঠাৎই ওর ইনশিরার বলাকথা গুলো মনে পরে যায়,”আয়াশ ভাইয়া আমি একসময় আকাশের তারা হয়ে যাবো!তখন কি করে থাকবা?কাকে রাত দিন বকবা?কষ্ট লাগবে না তোমার?”
আয়াশ ইনশিরাকে ধমকে বলতো,”চুপ কর!কিছু হবে না তোর!এমন কথা আরেকবার বললে মুখ সেলাই করে দিবো!”
ইনশিরা তখন মৃদু হাসতো। এইসব তো সত্য নয়,এইগুলো শুধুই মিথ্যা সান্ত্বনা!
ইনশিরার কথা মনে পড়তেই মাঝে মাঝে আয়াশের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে। কথায় আছে না,”কাছে থাকতে মর্ম বুঝে না,হারিয়ে গেলে ফিরে পায় না!” আয়াশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ইনশিরার বেঁচে থাকার সময় খালি বকতো!কিন্তু একজন সেই মেয়েটাই যে আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে!বেশিরভাগ রাতই এখন আয়াশের নির্ঘুম কাটে ইনশিরার শোকে!
সমাপ্ত
What the hell????allah kolponao kori nai je arokom kisu hobe