হয়তো_তোমারি_জন্য?,পর্ব_০৭
আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
ভয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে ইনশিরা। নিজেকে কেমন অসহায় অসহায় মনে হচ্ছে তার। কেনো যে আজই ব্যাডমিনটন খেলতে গেলো!!ভেবেই আফসোস হচ্ছে তার। কারণ ককটা আর কারো না আয়াশের কাছে যেয়েই পড়েছিলো। আয়াশ এতোক্ষন ফোনে কথা বলছিলো। মুখে ছিলো ব্ল্যাক মাস্ক। সবাই আড়চোখে একবার ওকে দেখে নিজেদের মতো চলে যাচ্ছে। সামনেই তিনজন গার্ড স্ট্রেট ভাবে দাঁড়ানো। একজন গার্ডের হাতে কক। আয়াশ ফোন কল রেখে গম্ভির হয়ে ইনশিরার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর বয়স কতো রে?”
ইনশিরা ঠোঁট কামড়ে বলে,”কেনো বলো তো?”
আয়াশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাস্ক খুলে বলে,”সিরিয়াসলি ইনশু?তোর বয়স নিশ্চয়ই ২০/২১ হবে!আর তুই কিনা পিচ্চিদের গেইম খেলছিস?তোর কি একটুও লজ্জা নেই?”
ইনশিরা আড়চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার কি তাতে?আমি খেলি না খেলি?আর তুমি না কাজে ছিলে তাহলে এইখানে কেনো?””
“আমার কাজ শেষ তাই চলে এসেছি আর এখন বাসায় যা তুই!সামনে না তোর পরীক্ষা?পরীক্ষার মাঝে বাহিরে এতো টইটই করিস কেনো?”
কথাগুলো ধমকে বলল আয়াশ। ইনশিরা হালকা কেঁপে উঠলো নিজেকে সামলে বলল,”হুম পরে যাবো আগে ককটা দেও।”
বলে গার্ড থেকে নিতে গেলে আয়াশ গার্ড ইশারা করতেই ককটা দূরে ছুড়ে মারে একজন গার্ড। ইনশিরার মুখ হা হয়ে যায়।হা হয়ে থেকেই বলে,”কি করলে ওইটা?আমার কক নাকি ওইটা ফেললে কেনো?”
“পড়াশোনা কর যেয়ে। এইরকম কক আরো কেনা যাবে এখন এই কক দিয়ে দিলে পড়াশোনার তেরোটা বাজাবি তার চেয়ে ভালো ককটা নাই থাকুক।”
“এইটা তো আমার ছিলো না!”
“জানি!যাদের ছিলো তাদের কক দেওয়া হবে তুই যা এখন পড়তে।”
ইনশিরা হতাশ ভরা মুখ নিয়ে চলে গেলো আয়াশকে বকতে বকতে। রাগ লাগছে তার আজ!কেউ তার উপর হুকুম চালাচ্ছে ভেবে। ইনশিরা রুমে এসে ধপ করে পড়ার টেবিলে বসে বই নিয়ে একনাগারে পড়তে থাকে।
পড়া শেষ করে নিচে যেয়ে ডিনার করে নেয়।
১৫.
ক্লাস রুমে ইনশিরারা বসে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ, কারণ পরশু থেকে তাদের টেস্ট শুরু। সবাই ভাবছে কিভাবে পাশ করা যায়। নীরাবতা ভেঙে রামিযাহ্ বলে,”দোস্ত সেই আইডিয়া পাইছি শুন তোরা খাতাটা উঠিয়ে এমন ভাব ধরবি যেনো কিছু পড়ে গেছে খুজতেছোছ।”
ইনশিরা ভ্রুকুচকে বলে,”তোর গবর মাথায় এইরকম আইডিয়া কোথা থেকে আসে রে ভাই?”
আওসাফ বলে,”আচ্ছা শুন!আমি বলি,তোরা চিটিং না করে পরিশ্রম কর আমার মতো।”
রামিযাহ্ বলে,”যাহ তো!তোর মতো এত সাধু হইতে পারমু না। পাশ করলে পাশ নাহলে ফেইল।”
জোয়াইরিয়া বলে উঠলো,”আচ্ছা শুন সাবা আমি দেখে দেখে লেখবো তোরা যেমনে পারস লিখ।”
অবশেষে ঠিক হলো কেউই দেখে দেখে লিখবো না। ক্লাস শেষে বাহিরে গেলাম আমরা। মাথা হাজারো চিন্তা ভর করেছে। যদিও সব শেষ পড়া কিন্তু তাও মনে ভয় কাজ করছে মনে হয় কিছুই পারি না এখনো কিছুই শেষ হয়নি।
বাসায় এসে মুখ ভার করে রুমে চলে এলো ইনশিরা। ইনশিরার মা ভ্রুকুচকে মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলে উঠলেন,”কি হলো ওর?কখনো এইরকম মুখ ভার করে বাসায় ঢুকে না। মনে হয় কিছু হয়েছে। পরে জিজ্ঞেস করবো নি।”
বলে রান্নাঘরে চলে গেলো আবার। ইনশিরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আজ গ্রুপ স্টাডি করবে ওরা ইনশিরাদের বাসায়। ইনশিরা সব গোছগাছ করে রেখে দেয়। নিচে যেয়ে নিজের মার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”আজকে সবাই বাসায় আসবে পরশু দিন থেকে টেস্ট শুরু তাই।”
ইনশিরার মা এইবার ইনশিরার চিন্তার কারণ বুঝতে পারলেন। সে ইনশিরাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,”তহআক চিন্তা করা লাগবে না ভালোই করবি নে।”
ইনশিরা প্রতুত্তরে কিছু বলল না। বিকালে ঠিক সময় মতো সবাই হাজির হলো ওর বাসায়। ওরা সবাই পড়ার জন্য ইনশিরার রুমে গেলো।
রামিযাহ্ ফোন টিপতে টিপতে বলে,”তোরা পড় পরীক্ষার জন্য পরে আমারে বলে দিস।”
জোয়াইরিয়া বলল,”মামার বাড়ির আবদার পাইছো?নিজে পড়ো আমরা কেউ বলতে পারবো না তোমাকে।”
“তুই না বল ইনশিরা অনেক জোস ও বলবে।”
ইনশিরা ঠাট্টার সুরে বলল,”হেহ আমারই ঠিক নাই পাশ করবো নাকি না আবার তোরে..অসম্ভব।
“যাহ!তোদের বলা লাগবে না আমি এমনেই পারি সব।”
সবাই হো হো করে হেসে দিলো ওর কথায়। সবাই একসাথেই বলে উঠলো,”হেহ!দেখবো নি।”
তখন ইনশিরার মা এসে বলেন,”কি হচ্ছে এইখানে?পড়া বাদে তো গল্পই বেশি হচ্ছে মনে হয়।”
উনাকে দেখে সবাই পড়ার ভান করলো ইনশিরার মা আলতো হেসে বললেন,”থাক অভিনয় করা লাগবে না। আমি নাস্তা এনেছি খেয়ে নাও তোমরা। আর ভালো করে পড়ো পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। পরীক্ষার জন্য শুভ কামনা।”
উনি নাস্তা দিয়ে যেতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো খাবার জন্য। এই বলল আমি খাবো আরেকজন বলল আমি খাবো। সবাই নাস্তা শেষ করতেই রামিযাহ্ বলল,”ভাই পেট ভরে গেছে আজ না পড়লে চলে না?”
আওসাফ অসন্তুষ্ট হয়ে বলল,”নাহ!তোর যদি সমস্যা হয় তুই যা। আমরা পড়বো।”
“ভাই তোরা এমন করতেছোস মনে হয় পরীক্ষায় পাশ করে মহা ভারত উদ্ধার করবি!পরীক্ষায় পাশ করলে বা ফেইল করলে কিই বা হবে শেষে তো বিয়ে করে সংসারই করতে হবে।”
জোয়াইরিয়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,”তোর সংসার করার ইচ্ছা থাকলে আমাদের কি?তোর ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন না থাকলে কি আমাদের কি কোনো স্বপ্ন থাকবে না?এই ভাবনা ভুলে গিয়ে ভালো হয়ে যাও মাসুদ সময় আছে এখনো।”
রামিযাহ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”এইসব পড়াশোনা তোরা কর আমার দ্বারা এইসব সম্ভব না।”
বলে ফোন টিপতে লাগলো। ইনশিরাও আর ওকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের মতো পড়তে লাগলো। পড়া শেষ হতেই সবাই এক বড় শ্বাস ফেলে বলল,”ফাইনালি পড়া শেষ।”
ইনশিরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা ছুঁই ছুঁই। ইনশিরা ওদের উদ্দেশ্যে বলল,”দেরী হয়ে গিয়েছে তো!বাসায় যাবি না?দেরী গেলে তো আবার আন্টি চিন্তা করবে।”
ইনশিরার কথায় সবাই সায় মিলিয়ে বলল,”হ্যা একটু পরেই বের হবো। টানা দুই ঘন্টা পরে হাত ব্যথা করছে অনেক।”
হঠাৎই রামিযাহ্ লাফ দিয়ে উঠে বলে উঠলো,”আচ্ছা ইনশু তোর সেলেব্রিটি ভাইকে ফোন দিয়ে এইখানে ডাক না সেলফি তুলে ইনস্টায় আপ দিবো।”
ইনশিরা বিরক্তি নিয়ে বলল,”উনার কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই তোর সাথে সেলফি তুলতে ওদিক থেকে এদিক আসবে?”
“দেখ ভাই! বলেছিলাম সেটিং করিয়ে দিতে সেটা তো করালি না এইবার ডাক নাহলে কোনোদিনও কথা বলবো না তোর সাথে।”
ইনশিরা রেগে গিয়ে বলল,”আমি চাইলেই কি উনাকে ডাকবো আজব?আর তুই কি?মানুষ নাকি?আমার সন্দেহ হচ্ছে এখন। তোরে যে এখন কি করতে মন চাচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না।”
অবশেষে ইনশিরা প্রায় এক/দুই বছর পর আয়াশের নাম্বারে ডায়েল করলো। ডায়েল করার সময় হাত কাঁপছিলো তার। এই লোক কি ভাববে না ভাববে ভেবে?সবাই ইনশিরার ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো কৌতুহল নিয়ে। ইনশিরা নাম্বার ডায়েল করে লাউড স্পিকারে দিলো। ইনশিরা মিনমিনিয়ে বলে উঠলো,”হ্যালো”
অপর পাশ থেকে শোনা গেলো……
চলবে