হয়তো_তোমারি_জন্য?,Part_05
Writer_Ayana_ara (ছদ্মনাম)
আয়াশ নিষ্পলক দৃষ্টিতে গ্যালারিতে থাকা এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। লাল শাড়ি,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,চোখে কাজল। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। এর মাঝেই আগমণ ঘটে আশিফের। আশিফ আয়াশের আয়াশের পাশে বসে বলে,”কিরে কি করছিস তুই?”
আয়াশ দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে বলে,”কি হয়েছে?হঠাৎ আমার রুমে কেনো?”
আশিফ সন্দিহান দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”না কিছু না,কাল আমাদের যেতে হবে জানিস তো?”
“হ্যা জানি”
_______
পরেরদিন ইনশিরারা আবারো একটা সফরে বেরিয়ে পরে। আজ ওদের এইখানে শেষদিন। সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হবে তারা। সবার মন খারাপ সবাই আজকে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু কি হবে?এইটা তো শিক্ষাসফর কোনো ফ্যামিলি ট্যুর না।
আজ ওরা আর দুটো জায়গায় ঘুরে নি। একটি জায়গায় ঘুরেছে।
সন্ধ্যার হওয়ার আগেই তারা হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে নেয়। তারপর একে একে বাসে উঠে পরে। ওদের বসার পরেই বাস ছেড়ে দেয়
১৩.
বাস চলছে তার নিজ গতীতে। বাহিরের চাঁদের আলো ইনশিরার মুখে পড়ছে। ও চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে রয়েছে। কি জানি ভেবে চোখ খুলে বাহিরে তাকাতেই চমকে উঠে। সেই পরিচিত গাড়ি!মানুষটাও কি পরিচিত ভেবে ভালো করে দেখার চেষ্টা করে। গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষটাকে না দেখতে পারলেও!গাড়ি চালানো অর্থাৎ ড্রাইভারকে দেখতে পেরেছে। এইটা তো আয়াশ ভাইয়ার ড্রাইভার!তারমানে কি উনি আমাদের সাথে সাথেই ঢাকা ব্যাক করছেন? ভেবেই শুকনো ঢোক গিললো। মনে মনে ভেবে নিলো কালই আয়াশকে জিজ্ঞেস করবে ও কখনো কিভাবে চট্টগ্রাম চলে এলো?সবাই জানলেও ও জানে না কেনো?
আয়াশদের গাড়ি অতিক্রম করে ইনশিরাদের বাস আগে চলে আসে। ইনশিরা আবার সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
প্রায় চার ঘন্টা ত্রিশ মিনিট জার্নির পর ঢাকা এসে পৌছালো ইনশিরাদের বাস। বাস স্টেশনে যার যার ফ্যামিলি মেম্বার এসেছে নিতে। ইনশিরাকেও নিতে এসেছে।
ও বাসায় এসে পরলে ওর আম্মু এসে বলে,”এসে পরেছিস?রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার দিচ্ছি তারপর ঘুমাতে যা।”
ইনশিরা জবাবে কিছু না বলে চলে গেলো। বড্ড হয়রান সে। দীর্ঘ চার ঘন্টা জার্নির পর হয়রান হওয়াই স্বাভাবিক।
ইনশিরা রুমে এসে কাঁধের ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মাথা ধরেছে তাই একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিচে গেলো।
ইনশিরার মা খাবার বাড়ছিলেন। মেয়ের প্রিয় খাবার বানিয়েছিলেন সেটাই দিচ্ছেন প্লেটে তুলে। ইনশিরা চেয়ারে বসে পড়লো। অনেক খিদেও লেগেছিলো তার তাই দেওয়ার সাথে সাথে মুখে পুড়ে নিলো ভাত।
খাওয়া শেষে তার আম্মুর উদ্দেশ্যে বলল,”মাথা টিপে দিবে?মাথা ধরেছে অনেক।”
উনি মুচকি হেসে বললেন,”হুম চল।”
রুমে এসে নিজের মার পায়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো ইনশিরা। ইনশিরার আম্মু ইনশিরার বিলি কেটে দিচ্ছেন আর ইনশিরা ঘুমাচ্ছে আরাম করে। ইনশিরা গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতেই উনি ধীর পায়ে উঠে রুম ত্যাগ করলেন।
???
সকালে বেশ দেরীতেই উঠলো ঘুম থেকে। আজ আর ভার্সিটি যাবে না ও। আজ এমনিতেও বন্ধ। ইনশিরা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। দেখে বড় ফুপি এসেছে। ওদের বাসা ওর বড় ফুপির বাসার অনেকটাই কাছে তাই উনি যখন ইচ্ছে হয় চলে আসেন।
ইনশিরা যেতেই উনি হাসি মুখে বলেন,”কেমন কাটলো শিক্ষাসফর?”
ইনশিরাও হেসে বলল,”হ্যা ভালোই কেটেছে।”
কিছুক্ষন কথা বলে ব্রেকফাস্ট করে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে মুন ফোন দিয়েছে। মুনের ফোন উঠিয়ে হ্যালো বলতেই মুন বলল,”বড়দের সালাম দিতে হয় জানিস না?”
ইনশিরা হেসে বলে,”আগে বলো হঠাৎ ফোন দিলে যে?আমাদের মনে পড়লো কেনো তোমার হঠাৎ করে?কোনো সুসংবাদ নাকি?”
মুন লজ্জামাখা গলায় বলল,”তুই বেহায়া জানতাম এতোটা বেহায়া জানতাম না যাই হোক ওইসব কিছুই না খালি এই বলতে ফোন দিয়েছি শিক্ষাসফর কেমন কাটলো তোর?”
“এইতো ভালোই কেটেছে!”
“ছবি টবি তুলেছিস নাকি খালি ঘুরেই এসেছিস।”
” তুমি নেই তো তাই কে তুলে দিবে ছবি??”
“সত্যি করে বল না ছবি তুলিস নি?”
“হ্যা তুলেছি আর এইসব ছাড় জানো আমি কাকে দেখেছি?”
মুন ভ্রুকুচকে বলে,”এমনকাকে দেখেছিস যে বলছিস!”
“তোমার ভাইকে দেখেছি মানে আয়াশ ভাইকে দেখেছি। উনি ওইখানে কেনো গিয়েছিলো জানো?”
মুন কিছু চিন্তা করে বলল,”হ্যা। আয়াশের নতুন ফিল্ম রিলিজ হবে তাই গিয়েছিলো কেনো তুই জানিস না?”
“নাহ জানি না বলেই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।”
“ওহ। তুই যেদিন গিয়েছিলি ওরাও ওইদিনই গিয়েছে কাল মেইবি চলে এসেছিলো।”
“হ্যা আসার সময়ও দেখেছিলাম।”
“তোকে দেখেনি?বা তুই কিছু বলিস নি ওকে দেখে?”
“আরে মাথা খারাপ নাকি?পরে অপমান টপমান করলে? আমার সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না তাহলে।”
মুন হেসে বিরবির করে বলে,”এর সাথে সারাজীবণ থাকতে হবে।”
ইনশিরা শুনতে না পেয়ে বলে,”কি বললা?শুনতে পেলাম না তো।”
মুন কথা ঘুরিয়ে বলে,”না না কিছু না। আচ্ছা ঠিকাছে রাখি। ভালো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।”
বলে রেখে দিলো। ইনশিরা বোকা বনে গেলো। কিছুই বুঝতে পারলো না। ফোন রেখে পড়তে বসলো। হঠাৎই ওর এক বই থেকে একটা ছবি গড়িয়ে নিচে পড়লো হাতে নিয়ে দেখলো ও আর আয়াশ। দুইজনের মুখেই হাসি লেগে আছে। ইনশিরার হাতে একটা পুতুল যা আয়াশ নিতে চাচ্ছে।
ইনশিরা ছবিটা দেখে হেসে আবার যত্ন করে রেখে দেয়। কতবছর আগের ছবি এটা। আগে আয়াশ ওর সাথে কতো খেলতো এখন তো আর সহ্যই করতে পারে না ভেবে মন খারাপ হলো ইনশিরার। কিছুক্ষন পরে টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় গেলো। অদ্ভুত বিষয় আজ ওর আয়াশের সাথে দেখামিলে নি। হঠাৎই ইনশিরার আয়াশের জন্য চিন্তা হতে লাগলো। ও আর এক মিনিটও বেলকনিতে না দাঁড়িয়ে দেখে নিজের মাকে বলে আয়াশদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো।
আয়াশদের বাড়ির কলিংবেল চাপতেই বড় ফুপি দরজা খুলে দিলেন। ইনশিরাকে এই সময় দেখে তিনি বেশ অবাক হয়েছেন যা ইনশিরা ভালোই বুঝতে পেরেছে। ইনশিরার ফুপি বলেন,”ইনশু তুই এইখানে?”
ইনশিরা জোরপূর্বক হেসে বলে,”কেনো আসতে পারি না?”
“না তা কেনো পারবি না। সাধারণত তুই এই সময় আমাদের বাসায় আসিস না তাই জিজ্ঞেস করলাম এইখানে কেনো হঠাৎ করে?”
“আজ দুপুরে লাঞ্চ তোমাদের বাসায় করবো তাই এসেছিলাম।” (হেসে বলল কথাটা)
ইনশিরার বড় ফুপি খুশি হয়ে বলেন,”ভালোই হয়েছে তোর মাকেও ফোন করে বলিস চলে আসতে।”
“আচ্ছা কিন্তু এখন ভিতরে ঢুকতে দিবা নাকি?”
“হুম আয় আয়।”
ইনশিরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলো। আয়াশের রুমে যাওয়ার জন্য মনটা কেনো জানি ছটফট করছে।
ইনশিরার বড় ফুপি রান্না ঘরে যেতেই। ইনশিরা সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করে গুটিগুটি পায়ে আয়াশের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
আয়াশের রুমের কাছে আসতেই দেখতে পেলো দরজা ভিরে দেওয়া। সেই সুযোগে আস্তে করে আয়াশের রুমে উঁকি দিলো। দেখলো আয়াশ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। ইনশিরা আস্তে করে ভিতরে ঢুকতেই কেউ কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
“এই মেয়ে রুমে ঢুকছিস কার পারমিশনে?”
ইনশিরা থমকে দাড়ালো। ভিতু চোখে তাকিয়ে দেখলো। আয়াশ তাকিয়ে আছে ওর দিকে ভ্রুকুচকে। ও ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলল। আয়াশ ফের বলে উঠলো,”কি হয়েছে বলছিস না কেনো?কার পারমিশনে রুমে ঢুকেছিস?আর এইখানেই বা কি করছিস তুই?”
ইনশিরা মাথা নিচু করে বলল,”আসতে পারি না আমি?ইচ্ছা হয়েছে এসেছি!”
“কার পারমিশনে হুম?আর কোনোদিন আসবি না।”
ইনশিরা বলল,”আসবো আসবো তুমি যতবার না করবা ততবারই আসবো।”
“তবে রে।”
বলে উঠে আসতে নিলে ইনশিরা দিলো ভোঁ দৌড়…..
চলবে