#শেষটা_সুন্দর
পার্ট ৮
আমার কান্নারত মুখ দেখে শিশির রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন,,কোনোদিন তো উনি বাড়ি ফিরে আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখেন নি তাহলে আজ হঠাৎ কেনো আমি
শিশিরঃ রোদ তুমি এভাবে কাঁদতিস কেনো,,,এই রোদ___রোদ কিছু হয়েছে বলো আমাকে___রোদ তুমি ঠিক আছো___হেই মেয়ে_____আরে আমাকে না বললে আমি কি করে বুঝবো___কেউ,কেউ কিছু বলেছে তোমাকে__কিছু কিছু করেছে তোমার সাথে___আরে____আরে রোদ তুমি চুপ করো না,,,হেই____আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি রোদ,,,কি মুশকিল____দেখি দেখি তাকাও আমার দিকে___কি কি হয়েছে বলো___কষ্ট কষ্ট হচ্ছে,,,কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে_____ব্যাথা ব্যাথা হচ্ছে,,পেটে পেটে ব্যাথা হচ্ছে____দেখি পালস টা দেখি___কি হয়েছে আরে আমাকে না বললে আমি বুঝবো কি করে______সালেহা খালা___খালা____সালেহা খালা কোথায় তুমি____খালা রোদের কি হয়েছে____খালা_____রোদ চুপ করো প্লিজ তোমাকে এরকম করে কাঁদতে দেখে কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে_____দেখি দেখি তুমি আসো তো আমার সাথে রুমে আসো___আরে,,,আসো
শিশির আমাকে নিয়ে গিয়ে আমার বিছানায় বসিয়ে দিলেন,,কিন্তু আমার কান্না কিছুতেই কমছিলো না,,আমি তখনো শিশিরের শার্টের কলার ধরে শিশিরকে নিজের সাথে জড়িয়ে কাঁদতিছি,,ভীষণ কাঁদছি,,শিশির পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছিলো কেনো আমি এরকম করে কাঁদছি,,সব সব সার্ভেন্টকে জড়ো করে আমার কি হয়েছিলো সেটা শুনতে চাইছিলো,,সালেহা খালা বললো আহির ভাইয়া এসে আমাকে কিসব বলার পর নাকি আমি এভাবে কেঁদে যাচ্ছি,,উনি সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন,,আমি তবুও ওনাকে ছাড়ছি না
শিশিরঃ আহি আহির কি কি বলেছে তোমাকে,,বলো আমাকে আহির কি বলেছিলো তোমাকে___তুমি তুমি আহিরের সাথে কোথায় গিয়েছিলে বলো আমাকে___রোদদদদদ চুপ না,,তুমি না,,তুমি না আমার সোনা রোদ,,কতো ভালো,,এরকম করে কেউ কাঁদে নাকি পাগলি___দেখি তাকাও আমার দিকে তাকাও___কি কি হয়েছে বলো আমাকে,,,মুনতাসীর(ঝারি দিয়ে)
ওনার ঝারি খেয়ে আমি চুপ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণ,,চুপ থেকে আবার ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলাম
শিশিরঃ কি মুশকিল,,,আবার কাঁদতিছে দেখো,,আরে রোদ এরকম করে কাঁদলে মাথা ব্যাথা করবে সোনা পাখি আমার,,চুপ করো না একটু____কি হয়েছে আমাকে না বললে আমি কি করে কোনো কিছুর সমাধান করবো বলো তো,,মুনতাসীর,,ও মুনতাসীর দেখি তাকাও আমার দিকে,,আমার কষ্ট হচ্ছে একটু বুঝো
ওনার কষ্ট হচ্ছে শুনে আমি তখনি চুপ হয়ে গেলাম,,না আমি শিশির কে আর কখনো কষ্ট পেতে দেবো না,,জীবনে শিশির অনেক কষ্ট সহ্য করেছে না আমি আর কেঁদে ওনাকে কষ্ট দেবো না,,আমার চোখের জল যদি ওনাকে কষ্ট দেয় তাহলে আমি আর কাঁদবো না কখনো না,,আমি ওনার বুক থেকে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে একটা ফিক করে হাসি দিলাম?,,শিশির আমার এ কাজে পুরো হতবাক হয়ে গেলো,,একটু আগে যেই মেয়ে আমি বাড়ি কাঁপিয়ে কাঁদছিলাম সে কি না এখন?♀️?♀️
রোদেলাঃ কোথায় আমি কাঁদছি এই দেখুন আমি তো হাসছি হে হে?
শিশিরঃ তোমার শরীর ঠিক আছে তো রোদ
রোদেলাঃ একদম,,এই দেখুন আমার শরীর একদম ঠিক
শিশিরঃ দেখি তোমার পালস টা
রোদেলাঃ নিন দেখুন,,ধরুন
শিশির আমার হাত নিয়ে পালস চেক করলো,,বিপি মেশিন দিয়ে বিপি চেক করে,,স্টেথোস্কোপ টা দিয়ে আমার হার্টে কিসব জানি খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখলো
রোদেলাঃ দেখলেন তো আমার সব কিছু একদম ঠিক আছে
শিশিরঃ তাহলে এতোক্ষণ এভাবে কাঁদছিলে কেনো তুমি
রোদেলাঃ আসলে কি বলুন তো আমার না মনে অনেককককক দুঃখ ছিলো,,তাই আমি কান্না করে করে আমার সব দুঃখ গুলো বের করে দিলাম
শিশিরঃ মাথা টা কি পুরোই গেছে তোমার রোদ!!
রোদেলাঃ হে হে,,ঔ একটু একটু
শিশিরঃ আর কখনো আমার সামনে এভাবে কাঁদবা না,,কাঁদতে ইচ্ছে হলো রুমের দরজা লাগিয়ে একা একা কাঁদবা কিন্তু আমার সামনে না,,
রোদেলাঃ কেনো আপনার সামনে কাঁদলে কি হবে,,আমার কান্না দেখলে কি কষ্ট হয় আপনার??
শিশিরঃ তুমি বুঝবা না
রোদেলাঃ কেনো বুঝবো না,,না বুঝলে আপনি বুঝিয়ে দিন,,আমি কে যে আপনি আমার জন্য কাঁদবেন
শিশিরঃ কেউ না,,আমি জাস্ট পরিস্থিতির চাপে পড়ে তোমাকে বিয়ে করেছি,,নয়তো আমার মনে মেয়েদের জন্য কোনো জায়গা নেই,,কোনো না
রোদেলাঃ হুম সে জন্য তো আগে আপনার মেয়ে ছাড়া চলতো না?
শিশিরঃ জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট?আমি আগে মেয়ে দের নিয়ে কি করতাম না করতাম ওসব জেনেই কিন্তু তুমি আমার কাছে এসেছিলো সো এখন এসব বলে আমাকে কথা শুনিয়ে কোনো লাভ নেই___আর কাল না খুব আমাকে বলছিলে আমি কুকুর,,কুকুরের লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না আমার স্বভাব চরিত্র ও ঠিক তেমন,,তাহলে আজ কেনো আমাকে জড়িয়ে এভাবে কাঁদলে তুমি,,কি প্রয়োজনে_____শুনো মুনতাসীর আমি একটা খারাপ ছেলে তাই তুমি যতোটা পারবা আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবা,,নয়তো
রোদেলাঃ নয়তো কি হ্যা নয়তো কি
শিশিরঃ কিছু না,,ইডিয়ট
রোদেলাঃ আমি ইডিয়ট??আর আপনি কি হ্যা আপনি কি,,আপনি আপনি তো একটা হনুমান আপনি আপনি একটা সাদা বিলাই,,হুম ডক্টর শিশির বলে না ডেকে না আজ থেকে আমি আপনাকে সাদা বিলাই বলেই ডাকবো,,
শিশিরঃ তাহলে তোমাকেও আমি মুনতাসীর না ডেকে ডাকবো ইডিয়ট
রোদেলাঃ সাদা বিলাই একটা তার আবার কথা কি?
শিশিরঃ ইডিয়ট
রোদেলাঃ সাদাআআআআআআ বিলাই
শিশিরঃ মুখ টা বন্ধ করবা তুমি রোদ?
রোদেলাঃ সাদা বিলাই সাদা বিলাই সাদা বিলাই
শিশিরঃ রোদ?
রোদেলাঃ সাদাআআ বিলাআআআআইইই?
শিশিরঃ ইডিয়ট ইডিয়ট ইডিয়ট
___________________
সেদিনের পর থেকে আমি যতোটা পারছিলাম শিশির কে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে জানতে চেষ্টা করতে থাকলাম উনি কি আমাকে ভালোবাসেন উনি আমার সাথে সেদিন কেনোই বা জোর করে, কেনো উনি আর আগের মতো মেয়ে নিয়ে নোংরামো করেন না,,আসলে আহির ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে দিয়েছিলো যে উনি আমাকে সব বলেছেন এ বিষয়ে যেন তার স্যার কিছু না জানে,,তাই আমিও শিশির কে সোজাসুজি কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছিলাম না,,আমিও তাই চেষ্টা করতে থাকলাম নিজের মতো করে কিন্তু বাচ্চা টা মারা যাবার পর থেকেই শিশির ঔ যে Silent mood এ চলে গেলো তারপর থেকে এমনই সে নিশ্চুপ হয়ে গেলো যে উনি যে বাড়িতে থাকেন সেটাও হয়তো কাউকে না বললে সে বুঝবে না,,
_____________________
এই তো এভাবে চলতে থাকো,,এ পর্যন্ত যা হয়েছিল সব তো বললাম,,এখন দেখি সামনে কি হয়,,যাই নিচে কেমন,,আজ মা আসছে গ্রাম থেকে মা আর শিশিরের জন্য গরম গরম ভাত আর সর্ষে ইলিশ আজ নিজ হাতে রাধবো ঠিক করেছি যদিও আমি মাছ খেতে পারি না ঔ কাটা বাঁচতে পারি না দেখে ইচ্ছে ও হয় না তাও আজ,,দেখি চেষ্টা করি কেমন হয়,রান্না খুব একটা ভালো পারি কি না
_____________
রোদেলাঃ মা___মা হলো তোমার,,আমি সব বাড়ছি তুমি খাবে না এখন___মা
বাসবিঃ আসছি আসছি,,,,দেখি কি রান্না করেছিস,,,এ যা এ তো সর্ষে ইলিশের গন্ধ আসছে দেখছি____রোদ মা তুই নিজ হাতে রান্না করেছিস এসব
রোদেলাঃ হুমম মা তুমি কি ভাবো বলো তো আমায় যে তোমার এই মেয়ে কিচ্ছু পারে না,,শুধু কি করে তোমার ছেলের পেছনে লাগতে হয় সেটাই জানে
বাসবিঃ না না,,আমার রোদ মা তো কত্তো ভালো,,আমার মা তো সব পারে,,দেখি বস
রোদেলাঃ হুমম তুমি বসো আমি বসছি,,মা শিশির খাবে না এখন
বাসবিঃ তুই শিশিরের সাথে এক টেবিলে বসে খাবি
রোদেলাঃ কেনো মা কি সমস্যা তাতে আমরা তো মাঝে মাঝে এক টেবিলেই বসে খাই বিশ্বাস করো,,আর সকালে ঔ ঔষধ টা খাই নি বলে তোমার ছেলে আমার উপর খুব ক্ষেপে আছে তাই আমি ডাকলে হয়তো ও আসবে না তুমি যদি
বাসবিঃ আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি,,ডাকছি আমি___শিশির___শিশির খাবি না___শিশির___এই দেখ রোদ মা আজ নিজ হাতে সর্ষে দিয়ে ইলিশ করছে তোর না সর্ষে ইলিশ কতো প্রিয়,,,,এই শিশির,,,শিশির
মার ডাকে শিশির এসে চেয়ারে বসলেন,,As usual ডক্টর সাহেব আজকেও পুরো সাইলেন্ট,,দরকার ছাড়া তার মুখে নেই একটা কথা,,আমি মা কে আর ওনাকে খেতে দিয়ে নিজেও ওনাদের সাথে খেতে বসলাম,,
এ-র মধ্যে স্কুল থেকে মা-র একটা জরুরি ফোন আসাতে মা অর্ধেক ভাত থুইয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে ফোনের লোকটাকে কিসব বুঝিয়ে দিতে থাকলেন,,এখন এদিকে শিশির শিশিরের মতো করে খাচ্ছে আর আমি আমার মতো,,কিন্তু ঔ যে আমি মাছ বাঁছতে পারি না,,আর মা ও নেই যে মা কে বলবো আমার মাছ টা একটু মা বেছে দিক,,তাই নিরুপায় হয়ে শুধু সর্ষে আর পাশে থাকা শশা টা কুটুস কুটুস করে কামড়ে চেষ্টা করতে থাকলাম ভাত টুকু শেষ করার,,
রোদেলাঃ কি খারাপ,,আমি এদিকে খেতে পাচ্ছি না আর এনাকে দেখো পর পর তিনটে মাছ তুলে নিলো,,আজকে ডায়েট রুটিন কোথায় গেলো?খুব তো মা কে আর আমাকে আকারে ইঙ্গিতে কতো কথা শুনিয়ে দেয় আর আজকে নিজে দেখো,,হু?
এদিকে আমি তো রাগে পুরো বোম হয়ে আছি,,মাও ওদিকে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত,,আর শিশির এদিকে আমার দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না,,সব ফোকাস ওনার এখন মাছের মধ্যে,,মনে হচ্ছে আমি না ঔ মাছ গুলো ওনার বউ_______উনি ওনার খাওয়া টুকু শেষ করে আমার প্লেট টা এগিয়ে নিয়ে এক ঘাপলা বেছে রাখা মাছ তুলে দিলেন আমার পাতে,,আমি তো পুরো অবাক? তারমানে উনি ঔ এক্সটা মাছ দুটো আমার জন্য তুলেছিলেন?♀️?♀️,,উনি আমার পাতে মাছ গুলো তুলে দিয়ে হাত ধুয়ে এসে আবার ওনার রুমে চলে গেলেন,,আর আমি ফিঁক করে হাসতে হাসতে সব গুলো ভাত এখন গপ গপ করে খেয়ে নিলাম,,মুখ বন্ধ তো কি হয়েছে হাত দিয়ে তো কাজের কাজ করছে??
_________________
বিকেলের দিকে আমি শিশিরের রুমে ঢুকলাম,,আমি ঠিক করলাম আমি আজ থেকে মানে মা চলে যাবার পর থেকে শিশিরের ঘরেই থাকবো,,দেখি শিশির কি বলে আমাকে মানা করে,,তাই নিজের রুম থেকে জামা কাপড় গুলো এনে ওনার কাবাডে রাখছিলাম,,আর রাখতে গিয়েই আমার চোখ যায় ওনার কাবাডের ভেতর খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা পাঁচ পাঁচ টা দামি ব্রান্ডের মদের বোতলের উপর,,দেখেই মেজাজ টা গেলো আমার পুরো বিগড়ে,,একজন ডক্টর মানুষ হয়ে কি করে উনি এসব আনহেলথি হারাম জিনিস এখনো খায় ভাবতেই রাগে আমার মাথার সব চুল দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলো,,ঠিক করলাম ওনার সব বদ অভ্যাস যখন ছাড়িয়েছি এটাও আজকে থেকে একদম বন্ধ করে দেবো আমি?,,আর আমার কাছে তো এখন মা আছে মা কে একটু উস্কে দিলেই তো হুম হুম?
কাবাডের সামনে মাকে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি,,মার হাতে একটা বিশাল বালতি,,আমার সামনে রাগান্বিত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে শিশির,,
মা কাবাড থেকে খুব সুন্দর করে পাঁচ টা বোতল বের করলো তারপর এক এক করে সব গুলো বোতল থেকে সব পানি বের করে বালতি টায় ঢাললো,,আমার যে কি আনন্দ লাগছিলো মনে তো হচ্ছিলো ড্যান্স দেই,,শিশিরের মুখ টা বাংলার পাঁচ এর মতো দেখতে হয়েছিল পুরো,,উনি তো বুঝি পারলে আমার মিট মিটে হাসি দেখে আমার গলা চিপে ধরে!!!!
রোদেলাঃ মা ওদিকে দেখো,,ওখানেও একটা আছে,,ওটা ছোট্ট একদম খোলা যায় না??
শিশির আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন,,আমি ভয়ে মার পেছনে লুকিয়ে গেলাম
বাসবিঃ ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছিস কেনো,,মানে মেয়েদের নেশা কাটলেও এই সব জিনিসের নেশা টা এখনো ছাড়তে পারলি না না তুই,,রোদ না আটকালে না তোর পিঠের চামড়া আজ তুলে দিতাম আমি,,ছিঃ
বলেই মা বালতি টা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সব গুলো পানি ফ্লোরে ফেলে দিলেন,,সালেহা খালা কে বলে পুরো বাড়ি চেক করে আর কোথায় কি আছে সব খুঁজতে থাকলেন,,
এদিকে আমি মনে মনে খুশিতে হামাগুড়ি খেতে খেতে ওনার রুম থেকে বের হতে ধরবো ওমনি উনি আমার বাহু ধরে এক টানে আমাকে ওনার বুকে নিয়ে এসে ফেললেন,,ভয়ে লজ্জায় পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তখন আমি
শিশিরঃ তুমি কি ভেবেছ যে এসব আমি আর কিনতে পারবো না,,লিসেন রোদ আমি একটা খারাপ ছেলে তাই আমাকে ভালো বানানোর কোনো প্রয়োজন তোমার নেই,,আর তুমি চাইলেও সেটা কখনো পারবা না
ওনার কথার উওরে আমি টুক করে ওনার গালে একটা চুমু এঁকে দিলাম??,,আমার এ কাজে শিশির পুরো BoldOut হয়ে গেলো,,আমার হাত টা ছেড়ে দিলো
রোদেলাঃ ঠিক আছে দেখা যাবে আমি কি পারি আর কি পারি না হু??
বলেই এক ছুটে পালিয়ে এলাম মা-র কাছে।
_____________
আজ দুদিন পর,,উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাদা শার্ট আর নীল জিংকস পড়ে একটা হিরো হিরো গেট আপ নিয়ে নিজের মাথার চুল ঠিক করছে,,একটু পর চেম্বার আছে তাই টিউলিপ যাবে,,আমি টুকুর টুকুর চোখ দিয়ে ওনাকে দেখতে ব্যস্ত,,কিন্তু উনি আমাকে দেখেও দেখছে না কত্তো খারাপ,,না ওনাকে আমার দিকে দেখতেই হবে আজ যদি উনি আমার দিকে না তাকিয়েছে তো আমার নামো রোদেলা মুনতাসীর না?
রোদেলাঃ আপনি এতো সুন্দর কেনো??
শিশিরঃ ??
রোদেলাঃ না মানে ছেলে দের এতো সুন্দর হতে নেই আপনি জানেন না সেটা,,এই যে ধরুন আমি এখন আপনাকে দেখছি দেখে আছি তো আছি আজ যদি আমি আপনার থেকে বেশি সুন্দর হতাম তাহলে নিশ্চয়ই এটার উল্টো টা হতো,,আপনি উল্টে আমাকে দেখে থাকতেন,,কি ঠিক তো
শিশিরঃ______
রোদেলাঃ ইসস কেনো যে আমি আপনার থেকে সুন্দর হলাম না,,আচ্ছা আমি কি দেখতে এতোই বাজে যে আপনি আমার দিকে চোখ তুলেও অবধি দেখেন না এখন আর
শিশিরঃ______
রোদেলাঃ হুম আমি দেখতে খুব বাজে তাই না,,ইসস আপনি কি সাদা সাদা আর আমি,,আচ্ছা আমার ঠোঁট গুলো দেখুন তো একবার,,ঠোঁট গুলো কি আপনার মতো এতো পিংক পিংক
শিশিরঃ______
রোদেলাঃ আরে কি মুশকিল,,নিজে সাজতে ব্যস্ত একটু আমাকে দেখতে বলছি,,কি হ্যা কি আমাকে দেখলে বুঝি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে আপনার
শিশিরঃ______
রোদেলাঃ আপনি দেখবেন কি আমার দিকে?
শিশিরঃ______
রোদেলাঃ আরে,,,আমি আজ এতো সুন্দর একটা মিষ্টি রঙের জামা পড়েছি আর এনাকে দেখো,,,এই যে একটু দেখুন না আমাকে,,আরে কোথায় যাচ্ছে___আমি কিন্তু খুব রাগ হচ্ছি হ্যা
আমি রাগে পুরো বোম হয়ে আছি,,এই বুঝি ফেটে যাবো কিন্তু শিশির আমার এতো গুলো প্রশ্নের একটারো উওর দিচ্ছে না,,শুধু কি তাই চোখ তুলেও সে দেখছে না আমাকে এতো সে নিষ্ঠুর
শিশিরঃ বিকালে গাড়ি পাঠিয়ে দেব একবার টিউলিপে এসো,,তৃনা ম্যাম ডাকছে,,সেলাই টা ঠিক মতো শুকিয়েছে কি না সেটা একবার চেক করবে,,আসছি
বলেই শিশির হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,,আর আমি যে এতোক্ষণ ওনাকে আমায় দেখতে বললাম উনি তার কিছুই করলো না কি পাষাণ,,
_______________
বিকালের দিকে তৃনা ম্যাম কে দেখিয়ে মা সহ কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরলাম,,মা-র শরীর ক্লান্ত থাকায় মা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো,,শিশির আসলো,,এসে নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ ওন করে বসে গেলো,,আমিও এই ফাঁকে চুপ করে ওনার রুমে গিয়ে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম
উনি ভূল করে আমার দিকে তাকিয়ে গেলেন,, আমাকে দেখে উনি পুরো হতবাক,,আমি একটা ছোট হলুদ রঙের ফোড়ক পরে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,ফোড়ক টা খুব ছোট্ট ছিলো ওটাতে আমার হাটু থেকে শুরু করে নীচ অবধি দেখা যাচ্ছে,,হাতা পুরো সীলিভলেস,,
রোদেলাঃ দেখুন তো আমাকে কেমন লাগছে,,হট না?
শিশিরঃ এসব কি জামাকাপড় রোদ
রোদেলাঃ (যাক দেখেছে তাহলে?)___কেনো সুন্দর লাগছে না আমাকে?
শিশিরঃ এসব জামাকাপড় এখনি খুলে আসো যাও(চোখ নামিয়ে)
ওনার কথায় আমি আরো গিয়ে ওনার একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম,,
রোদেলাঃ কেনো খুলবো?আমি কতো দাম দিয়ে কিনেছি এই জামা টা আপনি জানেন
শিশিরঃ তোমাকে আমি যা বলছি তুমি তাই করো রোদ,,এসব কি ধরনের জামা কাপড়,,দেখি জামা কোথায় তোমার
রোদেলাঃ ঔ তো ঔ আপনার কাবাডে রেখে দিছি সেদিন
শিশির কাবাড থেকে আমার একটা কামিজ বের করে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন,,বললেন এক্ষুনি জামা টা চেঞ্জ করে আসতে,,আমারো জামা টা পড়ে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো আমিও তাই কামিজ টা পড়ে এসে শিশিরের পাশে গিয়ে বসলাম
শিশিরঃ আবার কি চাই রোদ তোমার
রোদেলাঃ আপনাকে
শিশিরঃ হোয়াট!!
রোদেলাঃ না মানে আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই আর কি
শিশিরঃ বলো
রোদেলাঃ আচ্ছা আজ আপনার ওটি কেমন হলো
শিশিরঃ ভালো
রোদেলাঃ ওহ,,আচ্ছা রোজ কতো পেশেন্ট আসে আপনার চেম্বারে
শিশিরঃ আসে__তুমি হঠাৎ আজ আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছ কেনো
রোদেলাঃ না মানে শুনছি,,আফটার ওল আমি আপনার ওয়াইফ আপনার চেম্বারে কতো পেশেন্ট আসে কতো টাকা আপনি ইনকাম করেন ওসব জানার রাইট আমার আছে নাকি
শিশিরঃ You Know রোদ তুমি মনে হয় এই পৃথিবীর প্রথম মেয়ে যে আমার মতো একটা নোংরা ছেলের সাথে যে তোমাকে দিয়ে জোর করে সেদিন__
শিশির বলতে গিয়ে দম ছাড়লেন
শিশিরঃ ঘুমোতে যাও রোদ
রোদেলাঃ আর একটু থাকি না আপনার পাশে,,আমার অন্য কথা ছিলো একটু
শিশিরঃ গো টু বেড এন্ড স্লিপ
রোদেলাঃ বলছি কি আমি
শিশিরঃ রোদ
রোদেলাঃ ?গুড নাইট
___________________
কিছুদিন পর
আজ আমি সকালে নিরুআপুর সাথে একটু নিরু আপুর বাড়িতে গিয়েছিলাম নিরু আপু আমাকে নিয়ে একটু কেনা কাটা করবে বলে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলো,,শুক্রবার ছিলো বলে আজ অনেক দোকান ই বন্ধ ছিলো তাই প্রয়োজন মতো সব কিনতে পারলাম না,,আসার সময় তাই অর্ধেক জিনিস কিনে আমি নিরু আপুকে আপুর বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আমার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম,,
রমজানু কাকু আজ গাড়ি কবরস্থানের রাস্তা টা দিয়ে নিচ্ছিলেন,,আমি গাড়ির জানালার কাচ দিয়ে বাহিরে দেখছিলাম,,হঠাৎ চোখ পড়লো কবরস্থানের মেইন ফটকের কাছে শিশিরের গাড়ি দাঁড়িয়ে,,আমি মুহুর্তে হাত বাড়িয়ে রমজান কাকুকে বললাম কাকু গাড়ি টা থামাও থামাও,,রমজান কাকু গাড়ি থামাতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে শিশিরের গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালাম,,দেখলাম গাড়ি পুরো ফাঁকা,,কেউ নেই,,আমি এ পাশ ও পাশ খুঁজে রমজান কাকু সহ শিশির বা আহির ভাইয়া কে খুঁজতে থাকলাম কিন্তু কেউ নেই,,একটু দূরে আমার চোখে পড়লো আহির ভাইয়া কবরস্থানের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এদিকে আসছেন,,আহির ভাইয়া আসলো আমার সামনে,,আমাকে দেখে আহির ভাইয়া একটু অবাক হলেন,,আমাকে উনি এখানে আশা করেন নি,,আশা না করাটাই স্বাভাবিক
আহিরঃ রোদ তুমি এখানে
রোদেলাঃ ভাইয়া আপনি এখানে,,কবরস্থানে,,কেউ কি মারা গেছে
আহিরঃ না
রোদেলাঃ না তাহলে,,শিশির কোথায়??শিশির কি আপনার সাথে
আহিরঃ হুম শিশির স্যার আমার সাথেই এসেছে,,তুমি দেখা করবা স্যারের সাথে
রোদেলাঃ হ্যা মানে শিশির কোনো এখানে!!
আহির ভাইয়া আমাকে নিয়ে কবরস্থানের ভেতরে ঢুকলেন,,আমাদের ধর্মে মেয়েদের কবরস্থানে যাওয়া মানা কিন্তু অনেকে এই রীতি টা মানে আবার অনেকে মানে না,,আমার মনে কৌতূহল ছিলো ব্যাপক,,শরীর আজ পবিত্র ছিলো তাই আহির ভাইয়ার সাথে আমি কবরস্থানের ভেতর ঢুকলাম,,আহির ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেলেন আমার আর শিশিরের বাচ্চা টার কবরের কাছে,,ও হ্যা আপনাদের তো একটা কথা বলা হয় নি আমার যেই বাচ্চা টা মারা গিয়েছিল সেটা ছেলে হয়েছিলো আর বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে আমি শুভ্র বলে ডাকতে শুরু করেছিলাম,,বলতাম আমার শুভ্র টা যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে আমি এটা কিনতাম ওটা কিনতাম৷ কতো কি,,
আহির ভাইয়া আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে শিশিরের দিকে তাকাতে বললেন,,আমি দেখলাম একটু দূরে শিশির শুভ্রর কবরের পাশে কি জানি করছে,,আহির ভাইয়া আমাকে রেখে কবরস্থান থেকে বেড়িয়ে এলেন,,আমি গিয়ে শিশিরের পেছনে দাঁড়ালাম
আর না চাইতেও আমার চোখ দিয়ে আজ জল বেড়িয়ে গেলো,,আমি দেখলাম শিশির নিজ হাতে কবর টাকে পরিষ্কার করছে,,আশেপাশে বেড়ে ওঠা আগাছা গুলো খুব যত্ন ভরে নিজ হাতে তুলে এক পাশে জড়ো করছে,,এক হাতে ভেজা চোখ মুছছে আরেক হাতে আলগা মাটি গুলো আবার নিজের জায়গায় জড়ো করে দিচ্ছে,,একটু ভালো করে লক্ষ্য করে আমি খেয়াল করলাম শুভ্রর কবরে দুটো সুন্দর গোলাপ গাছ বেঁড়ে উঠছে,,একটা তে একটা আরেকটা গাছে দুটো গোলাপ ধরেছে,,
শিশিরঃ তুমি আমাকে প্রথমদিন বলেছিলে না রোদ,,আমি আমার এসব নোংরা কাজের জন্য শাস্তি পাবো,,তুমি আমাকে শাস্তি দেও নি ঠিকই কিন্তু এই বাচ্চা টা,,আমাদের শুভ্র,,আমাকে শাস্তি দিয়েছে রোদ___সে আমাকে সব চাইতে বড় শাস্তি টা দিয়ে গেছে
রোদেলাঃ_______
শিশিরঃ যেই বাবা হবার ভয় টা আমি ছোট থেকে পেয়ে এসেছি সেই ভয় টাই আমার সত্য হয়েছে রোদেলা,,আমি বাবা হয়ে পারি নি নিজের বাচ্চা টাকে
আর কিছু বলার আগে শিশির কান্নায় ভেঙে পড়লেন,,আমি দৌড়ে ওনার কাছে গেলাম,,উনি আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলেন,,উনি প্রতি সপ্তাহের জুম্মার দিন করে যে এসে এসে শুভ্র কে দেখে যেতো শুভ্রর কবর নিজ হাতে পরিষ্কার করে দিতো,,শুভ্রর কাছে দু হাত পেতে ক্ষমা চাইতো সেটা আজ আমি প্রথম জানতে পারলাম____!!!!!!আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,,উনি ওনার কাজের জন্য খুব অনুতপ্ত,,উনি উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন,,আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি কেনো ওনার মতো ছেলেকে এতো সহজে মাফ করে দিলাম,,কেনো আমি ওনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলাম না আজ দিলে হয়তো উনি শুভ্রর দেওয়া শাস্তি টা থেকে বেঁচে যেতেন!!
রোদেলাঃ আপনি এখন একটু চুপ করুন,,এটা এভাবে কান্না কাটি করার জায়গা না একটু বুঝুন
শিশিরঃ শুভ্র কি তার বাবাকে ক্ষমা করবে রোদ??
রোদেলাঃ করবে,,এখন আসুন আপনি আমার সাথে___বাড়িতে যাবো আসুন
শিশিরঃ রোদ তোমার আমাকে দেখে ঘৃনা হয় না এখন
রোদেলাঃ জানি না হয়তো হয় হয়তো না,,অনেক প্রশ্ন জানার আছে আপনার থেকে
শিশিরঃ কি জানতে চাও তুমি,,আজ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো
রোদেলাঃ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কিন্তু
শিশিরঃ হুম দেবো
রোদেলাঃ আসুন তাহলে আমার সাথে একটা জায়গায়
শিশিরঃ কোথায়?
রোদেলাঃ একটা কোনো নির্জন রাস্তায় বা কোনো নদীর পাশে!!