গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৮
লেখাঃ #Mst_Liza
,
হাদিচ পার্কে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে অসংখ্য কস্ট বুকে নিয়ে বসে আছে আবির।মায়া এসে আবিরকে ডাকে,
মায়াঃ আবির!
মায়ার ডাক শুনে আবির কেঁপে ওঠে।আবার মনে মনে খুশীও হয়। মায়া যেন আবিরের প্রাণ।এতোদিন পর মায়ার মুখে নিজের নামটি শুনে আবিরের হারানো সেই মুহূর্তগুলো আবার চোখের সামনে ভেসে আসে।একটা সময় কতো চেস্টা করত আবির মায়ার মুখে একটাবার ভালোবাসি শব্দটা শুনার।কিন্তু মায়ার সেই এক কথা! বিয়ের আগে নো-প্রেম, নো-ভালোবাসা।মায়া শুধু আবিরকে এড়িয়ে চলতো।যার কারণ আবিরের যানা ছিল না।তারপর একদিন আবির মায়াকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।বাবা মাকে নিয়ে চলে যায় মায়ার বাড়িতে।বিয়ে ঠিক হয়, তবুও মায়া আবিরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।তবে কেন আবিরের থেকে দূরে থাকত মায়া সেই উত্তরটা আবিরের সামনে বিয়ের দিন আসে।কিন্তু সেদিন বাবা-মাকে খুশী করতে গিয়ে আবির বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়।আর যখন ফিরে আসে তখন খুব দেরি করে ফেলে। মায়াকে বিয়ে করে নিয়ে যায় মাহির, আবিরের থেকে অনেক দূরে।বিয়েটা কিভাবে হলো! মায়া কেমন আছে! কিছুই আবির জানতো না।তবে যেদিন জানতে পারলো সেদিন থেকে আবিরের মনে এক রাশ আশার কিরণ জেগে উঠলো।
আবির উঠে দাড়িয়ে ধীর পায়ের গতিতে মায়ার সামনে আসে।ছলছল চোখ দিয়ে মায়ার মুখপানে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ভাবে এই সেই মায়া যা ভেতর থেকে টানে অনবরত।
মায়াঃ কেন ডেকেছিলেন আমাকে?
আবিরঃ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই!
মায়াঃ আমাকে দেখার অধিকার আপনি অনেক আগেই হারিয়েছেন।
আবিরঃ বিশ্বাস করও মায়া আমি তোমাকে এখনও খুব ভালোবাসি!
মায়াঃ আর আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি!
আবিরঃ কিন্তু সে তো তোমাকে ভালোবাসে না!
মায়াঃ একদিন বাসবে।
আবিরঃ কখনো বাসবে না।কারণ সে স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে।
মায়াঃ সব খোঁজ-খবর নিয়েই এসেছেন দেখছি।
আবিরঃ না মানে।
মায়াঃ থাক আর বলতে হবে না।আমি যানি আমার স্বামী কাকে কতটা ভালোবাসে।সেটা নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।
আবিরঃ কিন্তু মায়া!
মায়াঃ আমারটা আমি বুঝে নেব।আশা করছি ২য় বার আমার সাথে আর কোনও যোগাযোগ রাখার চেস্টা করবেন না।
বলে মায়া উল্টো ঘুরে চলে যায়।আর মায়ার যাবার পানে আবির তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।আবিরের যে আজ কোনো অধিকার নেই মায়ার উপরে।তাহলে কিভাবে আটকাবে?
।
মায়া বাড়ি ফেরার আগেই মাহির এসে বসে আছে।সোফায় বসে বসে পা নাচাচ্ছে আর ভাবছে, মায়াকে কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায়।এতো বড় সাহস আমার সামনে ডা.নাহিদের কোলে উঠতে চাওয়া! ওকে তো আমি..
-কিরিং কিরিং (কলিং বেলের আওয়াজ)
-এসেছে নবাব নন্দিনী। ওকে আজ কিছু একটা করতেই হবে।
মাহির দরজাটা খুলেই মায়াকে কোলে তুলে নেয়।আচমকা মাহিরের এমন আচারণে মায়া বিস্মিত হয়ে মাহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মাহিরের বাবা-মাও ব্যাপারটা দেখে মুচকি মুচকি হাসে।
মায়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপরে ফেলে দেয় মাহির।তারপর বলে,
মাহিরঃ তোমাকে মেরে মেরে সোজা বানানো উচিৎ।মানুষের কোলে উঠার এতো সক?
মায়াঃ আপনি তো নিজেই উঠালেন
মাহিরঃ আর একটাও কথা বলবে না।বেয়াদব মেয়ে…
মায়া কিছু বুঝে উঠতে পারে না।শুধু মুখ কালো করে মাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মাহিরঃ আমি কখনও কোনও মেয়ের গায়ে হাত তুলি নি কিন্তু আজ ইচ্ছা করছে তোমাকে পিটিয়ে সায়েস্তা করতে।
মায়াঃ দেখুন আপনি সব সময় আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারেন না।
মাহিরঃ আমি কার সাথে কিভাবে কথা বলবো সেটা কি তুমি আমাকে শিখিয়ে দেবে?
মায়াঃ আমি সেটা বলি নি
মাহিরঃ তা কি বলেছো?
মায়াঃ কিছু না।
মাহিরঃ তোমাকে সত্যিই আমার মারতে ইচ্ছে করছে।লাজ-লজ্জা কিচ্ছু তোমার মাঝে নেয়।আমার সামনে বলো ডাক্তার নাহিদের কোলে ওঠবা!
মায়াঃ ওহহ এইজন্য? আসলে ওটা তো
মাহিরঃ ওটা কি?
তখনই মাহির ফোনটা বেজে ওঠে। মায়া কিছু বলতে যাবে মাহির মায়াকে থামিয়ে দিয়ে ফোন রিসিভ করে।
মাহিরঃ হ্যাঁ স্নিগ্ধা বলো?
ওপাশ থেকেঃ…..
মাহিরঃ আরে বাবাহ তুমি যেই ড্রেসটা পরবে তাতেই তোমাকে সুন্দর লাগবে।
ওপাশ থেকেঃ……..
মাহিরঃ হ্যাঁ, আমি আসছি দশ মিনিটের মতো সময় লাগবে।
ওপাশ থেকেঃ….
মাহিরঃ ওকে রাখছি।বাই।
মাহির ফোনটা রেখে মায়ার দিকে তাকায়।
মাহিরঃ তোমাকে আমি পরে দেখে নেব।বলে মাহির চলে যেতে লাগে।মায়া পিছনের থেকে বলে ওঠে,
মায়াঃ কোথাও যাচ্ছেন?
মাহির পিছনে ফিরলে মায়া মাহিরের রাগি চোখদুটি দেখে ভয়ে ভয়ে বলে, না মানে আপনি তো স্নিগ্ধা ম্যামের সাথে বের হবেন।বাবা-মা যদি জিজ্ঞাসা করে কি বলব?
মায়া মাহিরকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
মায়াঃ ঠিক আছে! আমি বলে দেব ইমারজেন্সি পেশেন্ট দেখতে হসপিটালে গেছেন।
মাহির এগিয়ে এসে মায়ার হাতটা ঘুরিয়ে পেছনের দিকে শক্ত করে চেপে ধরে।
মাহিরঃ তোমার সমস্যাটা কি বল তো? শুধু কি মিথ্যা বলতেই শিখেছো?
মায়াঃ না আমি আসলে..
মাহিরঃ থাক তোমার মুখ থেকে আর কোনও কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না।আমি স্নিগ্ধার সাথে রাইসূল স্যারের বাসায় যাচ্ছি মির্জা প্যালেসে।তার সালার জন্মদিনের পার্টিতে।বাবা-মাকে সেটাই বলো।
মায়া মাথা কাত করে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলে মাহির হাতটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
চলবে……