#অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প
writer : Lovely khanom
part : 12
পরের দিন সাইফ,,,, উনার বোন জেসিয়া,,,,,উনার ফুফু আর ফুফা আমাদের বাসায় আসেন,,,,,,,,,,,
আমরা কেউ জানতাম না যে উনারা হঠাৎ করেই আমাদের বাসায় চলে আসবেন,,,,
.
আমি বিকেলের দিকে বসে বসে টিভি দেখছিলাম,,,,,আর পপর্কণ খাচ্ছিলাম,,,,,
.
এমন সময় বেল বেজে উঠলে আমি ভাবলাম হয়তো দাড়োয়ান আংকেল বাজার নিয়ে এসেছেন,,,,
কারণ তিনিই প্রতিদিন এই সময় বাজার নিয়ে আসেন,,,,
আমাদের গ্রামের বাড়ির লোক,,,,
সম্পর্কে আমাদের চাচা হয়,,,,,
.
আমি দরজার ম্যজিক লুকিং মিররে না দেখেই হুট করে দরজা খুলে দিলাম,,,,,
দরজা খুলেই যাকে দেখলাম তাকে যে দেখবো কখনো আশা করিনি,,,,,
দরজার এপাশে আমি তাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছি,,,,
আর সাইফ মহাশয় উনিও আমাকে ওগনা বিহীন টপস আর জিন্সে দেখে আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যাবেক্ষণ করছেন,,,,,,
.
হয়তো উনিও বেশ অবাক হয়েছেন,,,,।আমাকে এভাবে দেখাটা বোধহয় উনি আশা করেননি,,,,,
উনি দরজার সামনে আর বাকিয়ে বোধহয় গাড়ি থেকে নামছে,,,,
.
উনার হাতে লাল গোলাপের বুকেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে
আমার এতোক্ষণে ঘোর কাটলো,,,,,,
.
একি আমার যে গায়ে ওড়না টাও নেই,,,,
ছি ছি উনি যে সব দেখে ফেলছেন,,,,
দুহাত শক্ত করে ঢাকার জন্যে বুকে চেপে ধরলাম,,,,,,
.
উনি এখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে,,,,
বোধহয় ভাবছেন,,,
এটা কোথাকার পাগলী,,,
চুল সব এলোমেলো,,,
কাপড় চোপড় ঠিক নেই,,,
হাতে পপকর্ণ,,,,
.
সাইফ ::::::::: হাই,,,,মুচকি হেসেঁ,,
এবার আমি দিলাম দৌড়,,,,,
এক দৌড়ে সোজা রুমে চলে এলাম,,,,
বুকটা ধুকপুক করছে,,,,,
.
উনার স্টাইলটা আমার হেব্বি পছন্দ,,,,,
নেবি ব্লু কালারের পান্জাবীতে উনাকে তো যা লাগছেনা বলার বাইরে,,,,
ডান হাতে ঘড়িও পড়েছেন,,,,,
চুল গুলো স্পাইক করা,,,
তবে এই স্টাইলটাও উনাকে বেশ মানিয়েছে,,,,,,
এই সাজে উনাকে খুব বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে,,,,,
.
আমিতো কতবার মিহাদকে বলেছিলাম
যে আমার নেবি ব্লু কালারের পান্জাবী পছন্দ,,,,,
তুমি এই কালারের পান্জাবী পড়বা,,,,
কিন্তু না সে এই কালার পড়বে না,,,,
তার তো গোল্ডেন কালার পছন্দ,,,,,
আমার কথাতো শুনেও না,,,,
উল্টো তার পছন্দের গোল্ডেন কালারের জামা পড়তে হয়েছে আমায়,,,,,
তবে গোল্ডেন কালারটা আমার মোটেও পছন্দ না,,,,,
.
উনাকে দেখে এমন কেনো ফিল হচ্ছে আমার,,,,,
বুকের ভেতরটা কেমন জানি করছে,,,,,
আমি একটা জিনিস বুঝতে পারি না,,,,
যেই মিহাদের সাথে আমার ছয়টা মাস রিলেশন,,,,,
মানে ভালোবাসার সম্পর্ক সেই মিহাদকে দেখলে বা তার সাথে কথা বললেও আমার এতোটা অস্হিরতা লাগে না,,,,
.
কিন্তু গতকাল সাইফের সাথে ইনগেইজমেন্ট হওয়ার পর থেকেই উনার সাথে কথা বললে বা উনাকে দেখলে আমার ভেতরটা তোলপাড় শুরু করে দেয়,,,,,,
কিন্তু কেনো???
এই কেনোর উত্তর বোধহয় আমি নিজেও জানি না,,,,,
.
আমি ফ্রেশ হয়ে ঈদের জামাটা পড়ে নিলাম,,,,,
কারণ জামাটা তো ওরা দেখেনি,,,,
একটুও সাজলাম না,,,,,
শুধু চোখে কাজল দিয়ে ঠোটেঁ হালকা করে লিপগ্লুজ দিলাম,,,,,
.
আমি রেড়ি হয়ে বের হবার জন্যে দরজার কাছে যেতেই দরজায় নক পড়লো,,,,
.
দরজা খুলে দিলাম,,,,,
জেসিয়া আপু,,, ফুফু আমার রুমে ঢুকলো,,,,
আমি ফুফু আর আপুকে সালাম করলাম,,,,,,
আপু আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,,,,
বুঝতেই পারছি অনেকটা ভালোবেসেই আদর করে ধরেছেন,,,,,
.
ফুফু :::::::::: বাহ আমাদের বউমার রুমটাতো বেশ গুছানো,,,,
আর বউমাকে তো আরো সুন্দর লাগছে,,,,,,,,
.
আপু তার চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে আমার কানের পাশে লাগিয়ে দিয়ে বললো,,,,,
দেখতে হবে না কার ভাইয়ের বউ,,,,
আমার একটা মাত্র ভাইয়ের বউ,,,
সুন্দর তো হতেই হবে,,,,
কারো কুনজর জেনো না লাগে,,,,
.
জেসিয়া :::::::::: ফুফু তুমি একটু দোয়া দুরূদ পড়ে ঝেড়ে দাওনা সানিয়াকে,,,,
.
ফুফু ::::::::: বিড়বিড় করে কতগুলো সুরা পড়ে আমার মাথায় আর পুরো শরীরে ফু দিলো,,,,
আর নজর লাগবে না,,,,
শরীর বন্ধক করে দিলাম,,,
.
ফুফু :::::::::: বউমা শুনো তোমাকে কিছু দোয়া দুরূদের ফজিলত বলি,,,,
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে,,,,,
তিনবার আয়াতুল কুরসি পড়ে হাতে ফু দিয়ে জোরে জোরে তালি দিবে,,,,
.
এই তালির আওয়াজ যতটুকু যাবে ততটুকু পর্যন্ত কোনো খারাপ কিছু প্রবেশ করতে পারবে না,,,,
আর ঘুমের দোয়া তো পড়বেই,,,,
সাথে ২১বার বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও পড়িও,,,,
.
তারপর যে কোনো সময় বা রাতে কোথাও বের হলে,,,,, আয়াতুল কুরসি ১বার,,,
সুরা ইখলাস ১বার,,,,সুরা কাফিরূন ১বাবার,,,সুরা ফালাক ১বার আর সুরা নাস ১বার পড়ে পুরো শরীরে ফু দিবে,,,,
.
এতো শরীর বন্ধক হবে,,,তারপর আর কোনো খারাপ জিনিস কুনজর দিতে পারবে না,,,,,
বুঝলা বউমা,,,,,
সবসময় এগুলা পড়বা,,,,
আর পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়বা,,,,
নামাজ হচ্ছে সব সমস্যার সমাধান,,,,
নামাজ পড়লে টেনশন,,, বা বিভিন্ন প্রকার বিপদাপদ থেকে মুক্তি মিলে,,,,
.
আমি ::::::::: মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম,,,,,
কিন্তু ফুফুটা আমাকে বারবার বউমা কেন বলছে,,,,
গতকাল তো ইনগেইজমেন্ট হবার পরেও সানিয়া বলে ডেকেছিলো,,,
এমন সময় আম্মু রুমে আসলো,,,,
.
আম্মু :::::::::: একি আপা আপনারা এখানে যে,,,,,
আর দাড়িয়ে আছেন কেনো,,,,
বসেন না,,,
কিরে সানিয়া ওদের বসতে বলবি না,,,,
তারপর আম্মু আমার রুমটা অবাক হয়ে একবার এদিকে একবার ওদিকে ঘুরঘুর করে দেখছেন,,,,,
.
আমি বুঝতে পেরে একটা শয়তানি হাসিঁ দিলাম,,,,,,
একটু আগের কথা,,,,,
রুমে ঢুকে দেখি সব উলোট পালোট,,,,অগুছালো,,,,
ওরা যদি রুমে আসে,,,
মেয়েরা তো এমনিই পুরো বাড়ি হাটে,,,
তাই বুদ্ধি করে পুরো রুমটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে দিলাম,,,,,,
.
আম্মু অবাক হচ্ছেন এই জন্যে,,,,
যে মেয়ে কখনো নিজের কাপড় ভাজ করেনা,,,,, সবসময় রুমটা অগুছালো করে রাখে আর সেই মেয়ের রুম এতো ফকফকা,,,,ঝকঝকে,,,,,,,
বাহ বাহ সানিয়া,,,,
তুইতো অনেক এডভান্স হয়ে গেছিস,,,,
.
আম্মু ::::::::: আপা চলেন,,, জেসিয়া চলো,,,
সানিয়ার বড় আপু আর দুলাভাই ও এসেছে,,,,,
আর নিচে নাস্তা দেওয়া হয়ছে,,,
সানিয়া তুই ও আয়,,,,
.
তারপর সবাই নিচে এলাম,,,,
আপুনি আমাকে দেখে একটা হাসিঁ দিলো,,,,,
বাট কেনো দিলো সেটা বুঝলাম না,,,
হাসিটার মধ্যে অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে,,,,,
.
সাইফ আব্বু আর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছে,,,,
আমার সাথে চোখাচোখি ও হলো,,,,
আমি আম্মু আর আপুনির সাথে টেবিল সাজাচ্ছি,,,,
এর ভেতরেও সাইফ বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে,,,,
আব্বুর সাথে কথা বলছে আর ফাকে ফাকে আমাকে দেখছে,,,,
.
মানুষটার চাহনিটাও ঘায়েল করার মতো,,,,,,,
জাস্ট কিলিং লুক,,,,,
.
টেবিল সাজানো শেষ হলে আপুনি সবাইকে ঢেকে আনলো,,,,
সবাই বসলো আমাকেও জেসিয়া আপু তার পাশে বসালো,,,,,,
আপুনি আর আম্মুকেও বসতে বললো কিন্তু তারা বসলো না,,,,,
তারা খাবার সার্ভ করছে,,,,
.
বাব্বাহ যা খাতিরদারি,,,,
এখনো জামাই হয়নি তারপরও তাকে জামাই আদর কম করা হচ্ছে না,,,,
না জানি জামাই হলে কি কি করে,,,,
.
আর এদিকে বেচারা আমার মিহাদ,,,,
আজতো তাকেই সাইফের জায়গায় থাকার কথা ছিলো,,,,,
কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো,,,
সবে তো মাত্র সন্ধ্যে নেমেছে,,,,
.
নাস্তা শেষে আপুনি বললো,,,,
জেসিয়া আপি,,,,
কাপড় চোপড় কই????
.
জেসিয়া আপি সোফার পাশে রাখা চার পাচঁটা শপিং ব্যাগ এনে আপুনির হাতে দিলো,,,,,
আপু এখানে সব আছে,,,,
.
আপুনি ::::::::: আপনি সহ চলেননা আমি,,,
দুজনে একসাথে রেড়ি করে দিবো,,,
.
জেসিয়া ::::::::: আমিতো সাজাতে পারি না আপু,,,আপনিই করে দিন,,,
.
আপুনি ::::::::: ওকে আপনাকে কিছু করতে হবে না,,,শুধু বসে বসে দেখবেন,,,,
.
জেসিয়া :::::::: ওকে আপি চলেন,,,ফুফু তুমিও কি যাবে???
.
ফুফু ::::::::: না না তোরা যা,,,আমি বরং আপার সাথেই কথা বলি,,,,,,
.
আমি কিছু বুঝতে পারছি না,,,,
কাকে রেড়ি করবে????
কেনো রেড়ি করবে???
.
জেসিয়া আপু আর আপুনি আমাকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে,,,,,
যাবার সময় দেখলাম গোলাপের
বাকেটটা সোফায় রাখা,,,,,
আমাকে দিলো না কেনো???
আমার তো খুব পছন্দ গোলাপ,,,
যে কোনো ফুল,,,,
ফুল দেখলেই পাগল আমি,,,,
নিজেকে সামলাতে পারি না,,,,
.
কোথাও বেড়াতে গেলে,,,,বেশির ভাগ খালামনির বাসায় যাওয়ার পথে কোন একটা জায়গায় বিরাট গোলাপের বাগান পড়ে রাস্তার পাশে,,,,
তার পাশে গাধা ফুলেরও বাগান দেখা যায়,,,,,
যখন বাগানের সামনে দিয়ে যায়,,,
গাড়ি থেকে দেখা যায় লাল টকটকে সদ্য ফোটা ফুল গুলো,,,,,
কি যে সুন্দর লাগে,,,,
আমি পাগল হয়ে যায় ফুল নেওয়ার জন্যে,,,,,,
জোর পূর্বক গাড়ি থামিয়ে চলে যায় বাগানে,,,,,,
অনেকগুলা সেলফি তুলে আশেপাশে কেউ আছে কিনা ভালোভাবে দেখে কয়েকটা ফুল ছিড়ে দৌড়ে গাড়িতে চলে আসি,,,,
.
আর আমাকে ফুল ছিড়তে দেখে একটু দূরে পাহারা দেওয়া কয়েকজন মানুষ চিল্লিয়ে দৌড়ে আসে আমায় তাড়া করে,,,,,,,,
আমি গাড়িতে উঠার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট,,,,,
এটা খুব মজা লাগে আমার,,,,,
এতোবড় বাগান দেখে লোভ সামলাতে পারিনা যে,,,,,
.
ফুল ছিড়তে গিয়ে কত যে কাটা বিধেছে হাতে,,,, রক্ত পড়েছে তাতেও আমার কোনো কষ্ট হয়না,,,,
যেই মজাটা পেয়েছি,,,,
তাইতো আমি শুধু খালামণির বাসায় যেতে চাই,,,,,
.
আপুনি আমাকে আবারো শাড়ি পড়াচ্ছে,,,,,,
কালারটা আমার খুব প্রিয়,,,,
নেভি ব্লু কালারের,,,,,
সাইফের পান্জাবীর সাথে মিলানো,,,,
কিন্তু আমায় শাড়ি পড়ানো হচ্ছে কেনো?????
আজও কি তারা আমায় দেখতে এসেছে????
একটা মানুষকে কয়বার দেখা লাগে বুঝিনা,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
