মাধবীলতা,২য় পর্ব
-ঈপ্সিতা শিকদার
সকালবেলা কারো অনবরত বেল বাজানোর আওয়াজে ঘুম ভাঙল মাধবীর। ভোরের দিকে চোখ লেগে গিয়েছিল তার। বালিশ থেকে মাথা উঠাতে নিয়েও যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আবার বালিশেই মাথা রাখে সে। সারা রাত কাঁদায় ও না ঘুমানোতে মাথা যে ভার হয়ে আছে তার।
এর মধ্যেই আবারও বেল বেজে উঠে। মাধবী অবাক হয়। তার সাথে দেখা করার আবার কে আসলো? এত সকাল সকাল আসার মতো তো কেউ নেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাথায় কাপড় দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে।
আনমনেই বিড়বিড়ায়,
“সকাল সকাল কার এমন ট্রেন ছুটে যাচ্ছে? একটুও থামছে না।”
দরজা খুলতেই সব ভাবনা ও প্রশ্নের অবশান ঘটে। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে অবাক সে। এ যে তার শাশুড়ি রত্না রায়হান। যার জন্য তার তিলেতিলে গড়া সংসার ভেঙে গেল।
“আম্মা আপনি…?” আপন মনেই অস্ফুটভাবে বলে উঠে সে।
রত্না রায়হান মাধবীকে অপদস্থ করার ইচ্ছে নিয়েই এসেছিলেন এই দোয়ারে। এই কথাকে ঝগড়ার সূচনা হিসেবে ধরেন তিনি।
“ওমা, এহম আমি আইসি ক্যান সেই কথা কও! ক্যা আমারে দেইখা ভালা লাগে নাই তোমার?” চেঁচিয়ে উঠেন তিনি।
মাধবী ঘাবড়ে যায়। ধীর কণ্ঠে শুধায়,
“আম্মা আস্তে কথা বলেন নাহয় ঘরে এসে কথা বলেন।”
“তোর মতো পেত্নী, অপয়া, মা*র ঘরে আমি ঢুকমু? আমি? ঐ তোর আমার পোলাটার জীবন ধ্বংস কইরা শান্তি হয় নাই? এহন আবার সারাজীবনের কষ্ট কইরা কামাইন্না ট্যাহাও চাস?”
বিশালদেহী এই নারীর উচ্চস্বরে চেঁচানোতে ইতিমধ্যে সবাই নিজ নিজ ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে তামাশা দেখছে। একেই বলে স্বভাবে-আচারণে বাঙালি। নিজ বাড়িতে ঝগড়া লাগলে অশান্তি, পরের বাড়িতে লাগলে মনের শান্তি।
মাধবীর এমতাবস্থা দেখে লজ্জায় যেন মাথাকাটা যাচ্ছে। ক্রোধান্বিতও হচ্ছে বেশ। তবুও সে গলা নামিয়েই কথা বলে।
“দেখেন আমি আমার অধিকারের বাইরে কিচ্ছু চাইনি। আমার কাবিনের টাকাই চেয়েছি, অন্যকিছু না। আর ভদ্র মানুষদের বাড়িতে আসছেন, ভালোই ভালোই ভদ্রমহিলার মতোন বিদায় হন। নাহলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
মাধবীর কথাটা শেষ করার পরপরই শুরু হলো রত্না রায়হানের বিলাপ ও আজেবাজে ভাষায় গালাগালি। নিজের বংশধর নাতি-নাতনিকেও গালাগাল দেওয়া থেকে, অবৈধ সন্তান বলা থেকে বাধ রাখেন না। এবার যেন যুবতীর ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। রত্না রায়হানের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে বেডরুমে যায়।
বেডরুমে যেতেই দেখে তার দুই সন্তান ভয়ে কুঁকড়ে যেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মাধবী মিহিরিমা ও মাহিরকে জড়িয়ে ধরে আত্মস্থ করল।
“মাম্মা আছি না। কিচ্ছু হবে না।”
অতঃপর সন্তানদের কপালে মমতাসিক্ত চুমু খেয়ে ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। আবার দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ায় সে। ফোন হাতে নিয়ে রেকর্ডিং করছে।
এদিকে রত্না রায়হায় মাধবীর মুখের উপর দরজা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আরও যা তা ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেছেন। আশেপাশের মানুষকেও মাধবী সম্পর্কে ডেকে মিথ্যে অভিযোগ করছেন।
মাধবী খাণিকক্ষণ শাশুড়ির কথাবার্তা রেকর্ড করে তা সেভ করে রাখে। তারপর পুলিশে কল দেয়।
একটু পরেই সাইরেনের আওয়াজ তুলতে তুলতে পুলিশের গাড়ি আসে। জানালা দিয়ে দেখে কেউ কেউ পুলিশি গাড়ি। তারপর বিষয়টা এক কান দুই কান হতে হতে রত্না রায়হানের কান অবধি চলে যায়। মুহূর্তেই যেন শিয়াল বিড়াল বনে যায়। একদম শান্ত পরিবেশ।
কয়েকজন লেডি কন্সটেবল সহ অন্যান্য পুলিশরা বিল্ডিংয়ে ঢুকে। বলা বাহুল্য, মাধবীর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটটি মূলত গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিংয়ের সাথে ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাট। পুলিশরা আসতেই মাধবী ঘর থেকে বের হয়।
“এখানে মিস. মাধবী রওশন কে?”
“আমি। আমিই আপনাদের ফোন করেছিলাম। যার ব্যাপারে কমপ্লেইন করেছিলাম। তিনি হলেন আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যাওলা রণতে শাড়ি পরা মধ্যবয়স্ক মহিলাটি। উনি সকাল সকাল আমার বাড়িতে এসে আমাকে হেনেস্তা করছেন, বারবার আটকানোর পরও থামছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের ডেকেছি।”
“না, না, বাজান। ও মিথ্যা কথা কইতাসে। আমি তো আস্তে আস্তে বুঝাইতাসিলাম ও-ই চিল্লাচিল্লি লাগাইসে।”
মাধবী কিছু না বলেই ফোনে সেভ করে রাখা অডিও ক্লিপ চালু করে। সেখানে আর রত্না রায়হানের কিছু বলার থাকে না। পুলিশ অফিসার শুধু প্রশ্ন করে,
“উনাকে আপনি চিনেন?”
“জী, উনি আমার এক্স মাদার-ইন-ল। বর্তমানে উনার সাথে আমার কোনো কানেকশন নেই।”
“ঠিক আছে, উনাকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি। আপনিও আসুন সাথে।”
“আসলে আমার রিসেন্টলি তালাক হয়েছে। বাচ্চাদের দেখার মতোন কেউ নেই। আমি কীভাবে…?”
একজন লেডি কন্সটেবল বেশ সহানুভূতি বোধ করে মাধবীর জন্য। সে হাসি মুখে প্রস্তাব রাখে,
“আপনার সমস্যা নাহলে আমি পেপার্স নিয়ে আসছি রিপোর্ট করার। আপনি শুধু সাইন করে দিবেন।”
“ঠিক আছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। তবে যাওয়ার আগে আমি এই অভদ্র মহিলাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।”
“করতে পারেন।”
“আপনাকে আমার বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে কে?”
“ত-তোমার ভাবী।” কম্পিত কণ্ঠে শুধান রত্না রায়হান।
অতঃপর দুজন লেডি কন্সটেবল রত্না রায়হানকে ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠায়। মধ্যবয়স্ক হাজারো অনুরোধ, বিনতী, জোরাজুরি হার মানে তাদের কঠোরতার নিকট।
___
লতা বেগম এগারোটার দিকে বাজার করতে বের হন। এটা তাঁর রোজকার রুটিন।
বলতে গেলে তাঁর রিটায়ারমেন্ট শুধু উপাধি মাত্র, বসে বসে বার্ধক্য উপভোগ করা তাঁর ললাটলিখনে নেই। তাঁর উপার্জন বন্ধ হওয়ার পরপরই কাজের লোক বাদ দিয়ে দেয় কল্যাণী। সেই সাথে বাজার করা এবং ছোট্ট কল্পকে স্কুল-কোচিংয়ে আনা-নেওয়ার দায়িত্বও তাঁর কাঁধে তুলে দেওয়া হয়।
ঘরের মোটমোটি সকল কাজ এই বার্ধক্যে তাঁকে ধরিয়ে দিলেও কখনো মনঃক্ষুণ্ণ হননি তিনি। আশাহত হন তখন যখন প্রতি বার পুত্রবধূ কল্যাণী তাঁকে এসব কাজ করায় কাজের লোকের সাথে তুলনা করলেও চুপ থাকে ছেলে জয়।
বর্তমানে লতা বেগম বাসার সম্মুখে বসে থাকা শাক-সবজির ভ্যানের সামনে দাঁড়াতেই শুনতে ও দেখতে পান কাকে নিয়ে যেন আলোচনায় ব্যস্ত তার আড্ডা দেওয়া সঙ্গীগুলো।
“কাকে নিয়ে কথা বলছেন আপনারা?” কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে লতা বেগম।
“আরে ঐ যে গতকাল যেই মেয়ের কথা বলছিলাম না? সেই মেয়ে! কী যেন নাম বলল… মাধবী, মাধবী মেয়েটার নাম।”
“ও তো কী হয়েছে ঐ তালাকপ্রাপ্ত মেয়ের?” কিছুটা রাশভারী হয়ে উঠল তাঁর কণ্ঠ।
“আরে বলবেন না ভাবী। আজ সকাল সকাল, ছয়টা বা সাড়ে ছয়টা হবে। তখন মাধবী মেয়েটার শাশুড়ি মানে আগের জামাইয়ের মা এসে কী হুলস্থূল কাণ্ডটাই না করল! কী যে চেঁচামেচি আর যা তা ভাষায় গালাগালি! মেয়েটাও কী বিচ্ছু রে বাবা! সাথে সাথে পুলিশ এনে ধরিয়ে দিল। কেন আপনি শুনতে পাননি?” প্রতিবেশী জামিলা বেগম উত্তর দিলেন।
লতা বেগমের মনে মাধবী সম্পর্কে থাকে ভুল ভাবনা আরও মজবুল হলো যেন। ধনিয়াপাতা তাজা কি না পরখ করতে করতে বললেন,
“নাতিকে স্কুলে দিতে গিয়েছিলাম তখন। আর মেয়ের শাশুড়ি কী আর শুধু শুধুই এসে এমন করেছে! নির্ঘাত এই মেয়েই কোনো কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে।”
“হ্যাঁ, শাশুড়িটাও সবাইকে ডেকে ডেকে মেয়েটার কথাই বলছিল। বলছিল মেয়েটার না কি চরিত্র ভালো না, সংসার করার সময় সবাইকে জ্বালিয়েছে, এখন আবার সাত লাখ টাকা দাবী করছে।”
“দেখলেন তো আমার ধারণাই সত্য হলো।” লতা বেগমের মুখশ্রীতে দাম্ভিকতার হাসি।
তারপর বাজার নিয়ে বাড়ির দিকে চললেন। লতা বেগমদের ফ্ল্যাট তিনতলায়, এলিভেটর নেই। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে তার বার্ধক্যে নুয়ে পড়া দেহ যেন আরও নুয়ে পড়ে, হাঁটু ব্যথায় আর্তনাদ করার উপক্রম হয়। এপার্টমেন্টের নিচেই একটা ছোটখাটো ঔষধের দোকান। বাজার করতে যেয়ে আজ কিছু টাকাও বেঁচেছে। ভাবলেন,
-এই টাকা দিয়ে কমদামী একটা মলম কিনে নেই।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। বাড়িতে ঢুকে বাজারের ব্যাগটা ধপ করে ডাইনিং চেয়ারে বসে পড়েন তিনি। ক্লান্ত দেহে কল্যাণীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন,
“বউমা, এক গ্লাস পানি দাও তো। অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে।”
কল্যাণী ভেঙচি কাটে।
“আমি কেন পানি দিব? আপনার ব্যক্তিগত কাজের বুয়া লাগি না কি? ঢংয়ের জ্বালায় বাঁচি বাবা! নিজের পানি নিজে এনে খান, তবে আগে হিসেব দেন।”
অপমানে লতা বেগমের ফর্সা মুখমণ্ডল গোলাপী হয়ে উঠে। চোখজোড়া ছলছল করছে। কিন্তু এ ছলছল চাহনি ছুঁতে পারে না কল্যাণীর মন। অথচ, নিজের গর্ভধারিণী হলে গল্পটা ভিন্ন হত।
“কী হলো? বলছেন না কেন?” খেঁকিয়ে উঠে কল্যাণী।
নত চোখে লতা বেগম এক এক করে সব কেনাকাটার হিসেব দেয়। একদমে হিসেব বলায় আরও তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেন। পানি নিতে উঠতে যেতেই কল্যাণী সন্দেহযুক্ত চাহনিতে তাকিয়ে দাঁড়াতে বলে তাকে।
“আগে বলে যান, আর পঞ্চাশ টাকা কই?”
“আসলে ঐ টাকা দিয়ে একটা মলম এনেছি হাঁটু ব্যথার জন্য। আজকাল হাঁটু ব্যথাটা বেড়েছে বেশ।” একটু ইতস্তত হয়ে উত্তর দেন তিনি।
“কীহ্! আপনি পঞ্চাশ টাকা না বলে নিয়েছেন! হায় আল্লাহ! না জানি এমন করে কত টাকা মেরে খেয়েছে এই রাক্ষসী মহিলা!”
“না, বউমা। তুমি ভুল ভাবছো। আমি আজই প্রথম বাজারের টাকা ধরেছি।”
“হইসে! হইসে! চুরি করি সব চোরই বলে আমি চুরি করিনি।”
এবার রাগই উঠে যায় লতা বেগমের। তিনি শিক্ষিকা এমন কালিমা ললাটে লেপণ কী করে সহ্য করবেন?
“খবরদার মেয়ে! আমাকে ভুলেও চোর বলবে না।”
“একশো বার বলব। চোর, চোরের বাচ্চা চোর আপনি!”
আর সহ্য করতে পারেন না লতা বেগম। সজোরে এক চড় লাগান কল্যাণীর গালে। কোনোদিকে না তাকিয়েই নিজের ঘরে চলে যান তিনি।
আর কল্যাণী? সে তো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু বাদেই চেতনা ফিরে তার। দাম্ভিকতার ভঙ্গনে অশ্রু বেয়ে পড়ে তার চোখজোড়া থেকে। হনহন করে নিজ রুমে যেয়ে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে স্বামীকে কল করে। বড্ড অভিযোগ করা বাকি তার।
___
মাধবী এটিএম থেকে টাকা তুলে মিহিরিমা ও মাহিনকে নিয়েই স্কুলে পড়াতে যায়। তার জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো নেওয়া শেষ করে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে রওনা হয় ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে।
অফিস লাঞ্চ টাইম তার ভাই রায়িম ঘরেই ছিল। মাধবী বেল বাজাতেই রায়িম এসে দরজা খুলে দেয়। বোনকে দেখে বেজায় খুশি রায়িম।
“এসেছিস তুই? আমি জানতাম, আমার ছোট্ট রাজকন্যা ভাইয়ের সাথে রাগ করে থাকতে পারে না।”
“তোর বউ কই?” রায়িমের কথাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মাধবী।
একটু বাদেই অরোনি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মাধবী যেয়ে ঠাশ করে এক চড় লাগায় তাকে। রায়িম রাগান্বিত সুরে মাধবীকে বলে,
“মধু কিছু বলি না দেখে তোর সাহস কী বেশি বেড়ে গেছে? বড় বোন তুল্য ভাবীর গায়ে তুই আমারই সামনে হাত তুলছিস!”
“জাস্ট শাট আপ! কীসের ভাই? কীসের ভাবী? গতকাল রাতে যখন তুই কল দিয়ে চিন্তিত গলায় ঠিকানা চাইলে তোকে ঠিকাবা বলার সাথে বারবার করে বলেছিলাম সায়েম আর ওর পরিবার যাতে ঠিকানা না জানে। তোর বউ কী করল ওর মাকে বলে দিল? আর সায়েমের মা যেয়ে পুরো পাড়ার সবার সামনে আমাকে অপরাধী বানাল। একা মা আমি, ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকি।
একবারও ভাবলি না এমন বদনাম হলে আমি কীভাবে থাকব? তুই আর তোর বউ ইচ্ছে করে এসব করেছিস না আমাকে হেনেস্তা করতে? কী ক্ষতি করেছিলাম আমি তোদের? ও তো নাহলে পরের মেয়ে। তুই আমার ভাই হয়ে… ছিঃ! জন্ম থেকে বাপ-মা হারা ছিলাম, আজ আমার ভাইও মরে গেল আমার জন্য।”
___
মাধবী বাচ্চাদের নিয়ে এপার্টমেন্টের সামনের মাঠে এনেছে খেলতে। এই এলাকার ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রিয় খেলার স্থান এটি। লতা বেগমও সবে মাত্র নিজের নাতিকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরে এসেছেন।
মিহিরিমা ও মাহিন একটা এভেঞ্জার্সের ছবিতে সাজানো ফুটবল দিয়ে খেলছে। আয়াশ তা দেখে দৌড়ে আসে তাদের নিকট। আবেদন করে,
“আমার সাথে খেলবে?”
“আরে আয়াশ তুমি এখানে?” মৃদু হেসে বলে মাধবী।
“আসসালামু আলাইকুম ম্যাম। এখানেই তো আমাদের বাসা।”
এদিকে মাধবীকে দেখেই চিনে ফেলেন লতা বেগম। গতকাল রাতেই প্রতিবেশি জামিলা তালুকদার তাঁকে দেখিয়েছিলেন এই মেয়েকে। মুখটা বিদঘুটে করে ফেলেন তিনি। কটাক্ষ করে বলেন,
“যার নিজের সংসার জীবনের শিক্ষা নেই, সে আবার বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়! হুহ!”
মাধবী নিরস কণ্ঠে বলে,
“নিশ্চয়ই আয়াশের মার জীবন জ্বালিয়ে শেষ করছেন আপনি। যেমন আপনার কথাবার্তা মনে তো হচ্ছে না আমার শাশুড়ির চাইতে কোনো অংশে কম।”
স্নায়ুযুদ্ধ চলমান দুজন নারীর মাঝে। পরিশেষ এদের পরিণতি কী হবে কে জানে?
কী অদ্ভুৎ এক লিলাখেলা না পৃথিবীর!
দুজন নারীই নিপীড়িতা আপন কষ্টে, অথচ নিজ অভিজ্ঞতার দৃষ্টিকোণে তারা অপরাধী একে অপরের নিকট। অথচ, বাস্তবতা ভিন্ন।
চলবে…