তুমিময়_প্রেম?♥
PART_12
FABIYAH_MOMO?
আমি ফোনটা কান থেকে থেকে রাখতেই দেখি মুগ্ধ হা করে আমার দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে বেচারা জোরেসোরে একটা ধাক্কা খেয়েছে। আমি কপাল কুচকে ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠলাম,
–এই যে হ্যালো! কি হ্যাঁ? কি? আমার দিকে খাচ্চরের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেনো? চোখের কোটর একদম নিচে কর! নিচে করো বলছি! কাটাচামচ ঢুকিয়ে এমন ঘুরান্টি দিবো না, এক্কেবারে সানডে মানডে ফাদারস দে সব ভুলিয়ে গঙ্গার পানিয়ে ভাসিয়ে দিবো! ফালতু লোক কোথাকার! সাবধান আরেকবার যদি লুচ্চামির নজরে চোখ দিতে দেখছি!!!….চোখ নিচে!
মুগ্ধ বিষম খেয়ে হতভম্বের মতো চটপট মুখ বন্ধ করে চোখ নিচু করলো। ফাইজা এখনো আসছেনা। ঘড়িতে এখন বাসায় ফেরার সময় হয়েছে। আমি মুগ্ধকে বলে উঠলাম-
–তোমার ভাতিজি আর পড়বে? আমার তো মনেহয় নাহ্। র্সাপ্রাইজ দিতে পাঠিয়েছো, আর তো আসবে না। তাহলে আমি আজকের মতো উঠি?
মুগ্ধ কি যেন বিড়বিড় করে বললো। আমি শুনতে পাইনি।
–আমাকে সাথে নিয়ে উঠো!! একা একা এই অবুঝ ছেলেকে পাগল বানিয়ে চলে যাবে??প্লিজ একটা বার হাতটা ধরে বলো, ‘চলো’?
মম মুগ্ধের বিড়বিড়ানি শুনতে না পেয়ে রেগে গেলো।সে চেচিয়ে বলে উঠলো,
–এই হ্যালো! তুই জোরে জোরে কথা বলবি? নাকি হাতের উল্টোপিঠের থাপ্পর দিবো! কি করবো? বল!! বল!!জলদি বল!!
মুগ্ধ মমর ‘তুইতোকারি’ ভাষা শুনে মুখ কুচকালো। শক্ত গলায় কিছু খারাপ কথা বলতে যেয়েও নিজেকে পবর্তসমান কন্ট্রোল করে বুক ভরে নিশ্বাস ছাড়লো। চোখ খুলে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,
— তুইতোকারি করেনা মিস মম পাকনি, সিনিয়র ছেলেদের ‘তুই’ করে বলতে হয়না… আ’ম ইউর সিনিয়র ইউ নো, না? ফোর ইয়ার সিনিয়র??রাইট ??
মম রাগে গজগজ করলেও মুগ্ধকে টেনে দুটো থাপ্পর বসালো না। সে নাক দিয়ে রাগী শ্বাস ছেড়ে ব্যাগের ফিতা আকড়ে উঠে দাড়ালো। হনহন করে চলে যেতে নিলে মুগ্ধ মমর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো,
–মিস মম? একটা ইর্ম্পট্যান্ট কথা ছিলো?
পেছন থেকে মুগ্ধের গলা শুনে রুম থেকে বের হওয়া আটকে গেল মমর। সে কাধের ফিতাটা আরো শক্ত করে মুঠো চেপে মুগ্ধের দিকে ঘুরে তাকালো। তার চোখেমুখে ভীষন বিরক্তি। মুগ্ধ কাচুমাচু করে বলল,
— একচুয়েলি…কাল ক্যাম্পাসে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবে? না আসলে হয়েছে কি…কাল তো ‘নবীণ বরণ’ অনুষ্ঠান, আবার হেল্পার মানুষও কম।। বাজেট শর্ট, বুঝোও তো, কম বাজেটে কত কাজ!!আমার একটু হেল্প লাগবে বুঝছো? যদি তুমি কাল আস…
মুগ্ধ বলা শেষ না করতেই মম একপ্রকার তেড়ে এসে ঝাঝালো গলায় বললো,
–খবরদার! খবরদার তুই যদি আমায় হেল্পের জন্য ডাকিস! তোর হেল্পের জন্য আমি জীবনেও আসবো না ! তুই আমাকে যে টর্চার করেছিস আরো কি কি যে বলেছিস আমি কিচ্ছু ভুলিনি! আমায় একটা বার যদি কল করার হিম্মত করিস, তোর কলিজা বরাবর ছুড়ি বসিয়ে দিবো! খবরদার !
মম আগুনের মতো সব কথা ছুড়ে বাইরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পিছু থেকে একজোড়া নয়ন স্থির চাহনিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। মুখের উপর অতোগুলি কথা শুনে মনটা উদাস হয়ে দুই টুকরা হয়ে গেল তার। মম যেতেই মুগ্ধ টেবিলে ধাম করে থাপ্পর বসালো। রাগে ঠোট কামড়ে ফাইজা চেয়ার উপড়ে ফেললো! নিমিষেই চেয়ারের একপায়া খুলে পুরো চেয়ারটা লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। মুগ্ধ চুলে দুইহাত ঢুকিয়ে বেডে ধপ করে বসলো। ইচ্ছা করছে চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে! সব শেষ করে দিতে! সব খতম করে দিতে! কেন? কেন এমন হলো আমার সাথে? আমি কি ভুল করেছি ও আমাকে বুঝতে যেয়েও বুঝতে পারেনা! কেন ওর প্রতি ফিলিংস চলে আসলো? কেন? কেন? কেন আল্লাহ? কেন?
মুগ্ধ চিৎকার হট্টগোল করছে। খুব জোরে জোরে চিৎকার করে রুমের মধ্যে কথা বলছে। রুমের চার দেওয়ালে মুগ্ধের ধ্বনি ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছে। হঠাৎ মুগ্ধের চেচানো শোরগোল পেয়ে ফাইজা রুমে দৌড়ে আসে। এসে দেখে মুগ্ধ বেডে বসে দুইহাতে মুখ ঢেকে চেচামেচি করছে, নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে।
–চাচ্চু…
ফাইজার কৌতুহল গলায় ‘চাচ্চু’ ডাক শুনে হুশ ফিরে মুগ্ধের। মাথা তুলে ফাইজাকে দেখেই মুগ্ধ বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে ঠেলেঠুলে হাসি দেয়। ফাইজা ফ্যালফ্যাল করে মুগ্ধের দিকে তাকালে মুগ্ধ ফাইজাকে কোলে তুলে রুমের বাইরে নিয়ে যায়। লিফটের বোতাম ‘UP’ চেপে ফাইজার গাল টেনে বলে,
–আম্মাজান? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন হু? ফাইজার চাচ্চু কি এক্সট্রা কিউট লাগছে নাকি!! আচ্ছা…চাচ্চুর আইসক্রিম র্সাপ্রাইজ কেমন লেগেছে আম্মাজান??
ফাইজা এখনো অবাক চোখে হা করে আছে। মুগ্ধ ফাইজার কপালে চুমু দিয়ে দিলো, ফাইজার বেবিগুলো মাঝে সিথি করে বলে উঠলো,
–আম্মাজান? ছাদে চলুন। খেলাধুলা করে আসি কেমন?
মাঝে সিথি কেটে মুগ্ধ ফাইজার লাল টুকটুকে গালে চুমু বসিয়ে দিলো। লিফটের দরজা কুলতেই মুগ্ধ ফাইজাকে নিয়ে ছাদের বাম কোনাটায় গেল। সাদা টাইলস বসানো ছাদ। টাইলসের উপর সূর্যমুখী ফুলের ডিজাইন করা। ছাদের একপাশে ছাউনি দিয়ে বসার জায়গা, অপরপাশে নানা ফুল ও ফলের গাছ লাগানো বাগান। ছাদে এসময় রোদের তপ্তটা খুব বেশি থাকার কথা কিন্তু আজ রোদের প্রকোপ কম। চারিদিক থেকে বাতাস ছুটে আসছে। বাতাসে হেলছে মুগ্ধের কপালের চুল, উড়ছে মাথার তালুর চুলগুলোও। ফাইজা মুগ্ধের গলা জড়িয়ে আছে দু’হাতে। মুগ্ধের কাধে ফাইজা মাথা হেলে দিয়ে চুপটি করে আছে। মুগ্ধ ছাদের রেলিংয়ের কাছে তুলোয় ভরা মেঘের আকাশ দেখছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উড়ছে।। দিক দিগন্তে ছুটে চলছে মেঘগুলো।
–চাচ্চু…তুমি চিৎকার করছিলে কেন…
ফাইজা নরম গলায় প্রশ্ন করে মুগ্ধকে। মুগ্ধ ফাইজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,
–আম্মাজান আপনার চাচ্চু না একটা সুন্দর জিনিস পছন্দ করে। জিনিসটা আপনার চাচ্চুকে সহ্য করতে পারেনা। আপনার চাচ্চু যখন ওই জিনিসটা না পায় তখন পাগলের মতো চিৎকার করে আম্মাজান…
ফাইজা বাচ্চাসুলভ মায়ায় মুগ্ধকে বলে উঠে,
–তুমি ওটা কিনে ফেলো চাচ্চু, ফাইজার চাচ্চু যা চায় সব কিনতে পারে, তোমার সুন্দর জিনিসটাও কিনে ফেলো চাচ্চু…
মুগ্ধ ঠোট কামড়ে বুকভর্তি নিশ্বাস ছাড়ে। নিশ্বাসের পরীক্ষা করলে হয়তো রিপোর্টে ধরা পড়তো, “মুগ্ধ নামক পেশেন্টের নিশ্বাসে সাংঘাতিক রোগ ধরা পড়েছে! রোগের নাম ‘দুঃখপূর্ণ যন্ত্রনা’। এ যন্ত্রণায় সে দ্বিতীয় স্টেজে আছে!! যদি শিগগিরি এর চিকিৎসা করানো না হয় তাহলে রোগী কষ্টযন্ত্রনায় অকালে মারা যাবে, কষ্টদায়ক মৃত্যু হবে ডক্টর!!” কিন্তু আফসোস! “দেহের চিকিৎসা আছে, মনের চিকিৎসা নেই।”
.
.
বাসায় এসে কাপড়চোপড় পাল্টে বিছানায় গা এলিয়ে শুলাম। টিউশন টিউশন টিউশন!! উফ! টিউশনি করতে করতে শরীরের অবষাদ, রাত জেগে জেগে লেকচার নোট, সকাল সকাল ঘুম ভেঙে জেগে উঠা…..মধ্যবিত্ত মেয়েদের রোজকার রুটিন। রুটিনটাও অদ্ভুত! যত খাটনি তুমি করো না কেন, দিনশেষে রোজগারের টাকাগুলো দেখে এক নিমিষেই দুঃখ গুলো ছুটি পায়।। অপেক্ষায় কাটানো মাসের শেষের সপ্তাহটা ঈদের মতো অস্থিরতায় কাটে!! “কবে আসবে ঈদ কবে দেখবো ঈদের চাদঁ!!” ঠিক এরকমই আমার ক্ষেত্রে ঘটে টাকাগুলোর জন্যে , “কখন আসবে মাসের শেষ তারিখ?? কখন পাবো টিউশনির টাকাটা!!”
চোখে জগতের সব ঘুম এসে কড়া নেড়েছে। কাল ‘নবীন বরন’, সকাল সকাল না উঠলে কি মজা আছে? ইসরাত আসবে, ওর সাজগোজের কারখানা দেখতে হবেনা?? ভুতনি সেজে কাল হট হট ছেলেদের দেখবে বুঝিনা?? বুঝি বুঝি!! সব বুঝি। আমিও
হাই তুলে কাথা টেনে ঘুমের জন্যে ওকাত হবো ওমনেই ফোনটা পচা রিংটোনে বাজতে লাগলো। ঠোট উল্টিয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই এক জগ পানি ফোনের উপর ছুড়ে মারতে মন চাইলো।। ঘুমের রাজ্যে ঘুম তাড়ানো শত্রুগুলা একেকটা বদমাইশের দল! ভয়ংকর কটা গালি মনে মনে বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ইসুর কল! না চাইতেই মুখ ফসকে ‘বজ্জাতের ঢেকি’ গালিটা চলে আসলো!
–হ্যালো মম জান্টু! দোস্ত কালকে কি শাড়ি পড়বি??? দেখ্ আমরা কিন্তু ম্যাচিং ম্যাচিং পড়বো বলেছিলাম!! তুই কিন্তু কথা ঘুরাবি না মম!! সাবধান!
আমি ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে হাই তুলে বলে উঠলাম,
–ইসু…আআমার ঘুঘুমে ধরছে, কাল আয় পরে দেখতেছি…
–ওয়্যাক আপ মম! কাল আমাদের নবীন বরন দোস্ত!! নবীন বরন! তুই ভুলে গেলি?? কত প্ল্যানিং করছি এই নবীন বরন নিয়ে!! এটা করবো ওটা করবো, এই শাড়ি পড়বো! ওই কালার পড়বো! ওই ঝুমকা পড়বো! ভুলে গেলি? তুই মুখে পানি দে তো! চোখের ঘুম তাড়া!
–ওই শালী ! বজ্জাত অর্কমা! শালী রাত সাড়ে এগারোটা বাজে তুই আমাকে কল দিয়ে বলতেছিস নবীন বরনের শাড়ি কি কালার চুজ করছি! থাবড়ায়া চাপার দাত খুলে ভ্যাবলা বানায়া দিবো, শালী বদমাইশের ঢেকি! ফোন রাখ্!
–বইন তুই হাইপার হয়ে আছিস কেন? কে কি করলো আবার? কার রাগ কার উপর ঢালিস তুই?? কি হইছে সত্যি করে বলবি!!
মম গম্ভীরভাবে বললো,
–কালকে কিসের উৎসব?
–আবার জিগায়! কাল নবীন বরন! আমাদের নিউ কামারদের উৎসব!কত সাধনার পর নবীন বরন দিছে….ইশশশ!
–এইবার লাইনে আসছো তুমি! শুনো ইরানির মা! আমাদের এইটা ‘নবীণ বরণ’ না! এইটা হলো ‘প্রবীণ বরণ’ উৎসব! আজাইরা কাজে সেমিস্টারের এক সপ্তাহ আগে সিনিয়রের গাধাগুলা উৎসবটা দিছে!!
–তুই সোজা রাস্তা ধরে কথা বলবি? সিনিয়র কি আবার কিছু করছে? কিছু বলছে তোরে?কালকের উৎসব নিয়ে??
–হ্যাঁ বলছে! আমাকে আগে আসতে বলছে! তার মধ্যে বলছে হেল্পও করতে! আমি না করে দিছি।।
–তুই ‘না’ করে দিছিস? ওই মাইয়া কি করলি এইটা?? সিনিয়র ভাইরা তোরে কাজে রাখতে চায় তুই না করলি?তুই জানিস এইটা কতো বড় অপরচুনেটি ছিলো? ওরা একটা ইশারা দিলে তোর প্র্যাক্টিক্যাল মার্কস আর এসাইনমেন্ট নাম্বার ফুল আসবো আসতো !
–আহাহাহাহা…আমার কত ঠেকা! আমি কি ভোতা স্টুডেন্ট ইসু? ব্রেন নলেজ কি মাথায় নেই? ড্যামিশ আমি?? সিজিপিএ খারাপ আমার?? দেখিস দেখিস…ক্লাসে টপ গ্রেডে উঠাবো! তাও ওদের হেল্প চাবো না প্লাস হেল্প করবোও না! না মানে ন আকার না ! বায় !
ইসরাত মমর ধমকি খেয়ে ফোন রাখলো। ক্যাম্পাসের সিনিয়ররা আজ পযর্ন্ত নিজেদের কাজে নিউ স্টুডেন্টের কাছে হেল্প চায়নি মম এমন কি করলো ওর কাছে হেল্পের আবদার করলো? ও তো দেখতে সুন্দরও না, কালো। এমন মেয়ে দেখে মুগ্ধ ভাইয়ারা সিলেক্ট করলো? ওর মধ্যে ব্রেন ছাড়া কিছু নাই গোল্লা। হাহ্! কালকে আমি ওর থেকে অনেক সুন্দর সাজবো! দেখি মুগ্ধ ভাইয়া কিভাবে আমার দিকে না তাকায়!! ওর মতো ম্যাচিং শাড়ি পড়বো? কি শখ! ওর মতো ম্যাটম্যাটে কম দামী শাড়ি পড়বো না! সবচেয়ে দামী শাড়িটা আমি পড়বো! পুরো ক্যাম্পাস কাল আমার দিকে ঘুরঘুর করে দেখবে! আর ওর না রূপ! না আছে ফ্যাশন! ক
খ্যাত একটা…তাও কি ভাব ওর হুহ! যত্তসব বান্ডুলা ঢঙ! একবার ওর নোটগুলা পাই খালি !সেমিস্টারে যে খেলা দেখা দেখাবো না!! টপ গ্রেড না, একদম ফেল্টুস ইজ্জত লুটিয়ে ছাড়বো! যেমন র্যাগিংয়ে করেছিলো চুল কেটে তেরোটা বাজিয়ে হা হা হা হা !!! আমাকে চিনে না, আমি ইসরাত কি জিনিস!! চিনে না!!
–চলবে
_Fabiyah Momo?