তুমিময়_প্রেম❤ PART_25

0
1414

তুমিময়_প্রেম❤
PART_25
FABIYAH_MOMO

১.
মুগ্ধের বাসায় যাবো! ওর পেয়ারা বন্ধু তন্ময়ের ইতিহাস বলতে! আব্বুকে বিদায় করে কোনোরকমে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে! উদ্দেশ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুগ্ধের বাসায় পৌছানো এবং সবটা খুলে ওকে জানানো। মুগ্ধের বাসায় যেতেই দারোয়ান আমার হাতে একগুচ্ছ চাবি ধরিয়ে দিল এবং বলল, এগুলো বাসার এক্সট্রা চাবি, যা মুগ্ধ কেবল আমার জন্য বরাদ্দ রেখেছে। আমি চাবি হাতে দ্রুতপায়ে একেবারে থামলাম মুগ্ধের রুমের কাঠালি দরজার কাছে। দরজা ভেতর থেকে লাগানো। মুগ্ধ এখনো ঘুমাচ্ছে। চাবি গুচ্ছা থেকে বেছে বেছে একটা চাবি নিয়ে নবে ঢুকিয়ে দিলাম মোচড়! ব্যস! দরজা খুলেছে! আমি টুপ করে ঢুকে পড়ি। দরজাটাও চাপিয়ে দেই। চোখের সামনে বিশাল মাঠের মতো মস্ত এক বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে মুগ্ধ। পা থেকে মাথা পযর্ন্ত কম্বল দিয়ে ঢাকা। আমি আস্তে করে কাধের ব্যাগটা রেখে ওর মাথার কাছে বসি। সাদা নরম তুলতুলে কম্বলটা ধীরগতিতে সরিয়ে দেই। মুগ্ধের চোখে সকালের মিষ্টি আমেজের রোদটা যেয়ে পড়লো। এতে মুগ্ধ নড়েচড়ে ঘুমে ঢুলু চোখে উঠে বসলো। শরীর টানা দেওয়ার জন্য কম্বলটা গা থেকে সরতেই আমি এক চিৎকার দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলি! মুগ্ধ চোখ কচলে আমার উদ্দেশ্যে বললো,

— ভূত দেখছো? চিৎকার দিলে কেনো?
আমি থতমত গলায় তোতলাতে তোতলাতে বলি,
— তু তুমি উ উদাম!
— উদাম কি শব্দ?
আমি দুইহাতে মুখ ঢেকেই বেড থেকে দাড়িয়ে পড়ি! বিচলিত গলায় বলে উঠি,
— আরে তোমার গায়ে কিছুই নেই! তুমি খালি গায়ে!

আমার কথা শুনে মুগ্ধ নিজের দিকে তাকালো। রাতে ওর খালি গায়ে ঘুমানোর স্বভাব। শুধু একটা ট্রাওজার পড়ে ঘুমায়। মুগ্ধ কম্বল দিয়ে গা ঢেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
— লজ্জার কি আছে পাগল? তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে এতোক্ষনে কতোওও আদর করতো। ডিপলি একটা মনিং কিস দিতো মাস্ট!
— ছি! বাসি মুখে কিস! বমি করে দিবো!
— তাহলে ব্রাশ করি! একটা কিস দাও!
— আগে তুমি গা ঢাকো! নাহলে আমি এক্ষুনি চলে যাবো!
মুগ্ধ বিরক্ত গলায় বললো,
— চোখ খুলুন ম্যাডাম! আমি আপনাকে নিজের গা দেখিয়ে পাগল বানাতে চাইনা। এসব বাজে স্বভাব থাকলে অলেরেডি মুগ্ধের ক্যারেক্টারলেসের সার্টিফিকেট থাকতো।

আমি অতি আস্তে আস্তে মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলি। ওর চোখ এখনো বন্ধ করা। পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে ওকে! এলোমেলো চুলগুলো কপাল ঢেকে দিয়েছে। আমি পাশে যেয়ে বসতেই মুগ্ধ বাচ্চার মতো ঠোট উল্টে বললো,
— আমি কিন্তু উদাম টুদাম না। ট্রাউজার পড়ে আছি। বাট তুমি আমাকে নিয়ে কি কি অশ্লীল চিন্তাভাবনা করেছো হু নৌস? একটা কাজ করো প্লিজ। আলমারি থেকে টিশার্ট এনে দাও। আর হুট করে এতো সকালে তুমি এখানে? কোনো প্রবলেম?

আমি আলমারি থেকে টিশার্ট নিতেই বলে উঠলাম,
— আমি কালরাতে আসতে চেয়েছিলাম। তোমার ফোন ট্রায় করেছি বন্ধ ছিলো। না পারতে সকালের বাস ধরে চলে এসেছি। এই নাও টিশার্ট..
মুগ্ধ টিশার্টটা হাতে নিয়ে বললো,
— সিট! ফোনটা চার্জে ঢুকাতে ভুলে গেছি। আমি টিশার্ট পড়বো তুমি অন্যদিকে তাকাবে? চাইলে আমাকে দেখতে পারো। আই হেভ নো প্রবলেম।

কথা শেষ করে মুগ্ধ মিচকে একটা হাসি দিলো। আমি সাথেসাথে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলা শুরু করলাম,
— তোমার কল কাটার পর জেনিকে কল করেছিলাম। রামিমের খোঁজখবর নিতে। রামিমের সাথে কথাও হয়েছে..

মুগ্ধ টিশার্টের গলা দিয়ে মাথা ঢুকাতেই বিষ্মিত কন্ঠে বললো,
— কি বললে? রামিমের সাথে কথা বলেছো! হাও ইজ দিস পসিবল!
— প্লিজ আমি কথা শেষ করি। তারপর বলো।
— সরি! ডান পাকনি এখন তাকাতে পারো।
আমি মুখ ঘুরিয়ে মুগ্ধের দিকে ফিরলাম।
— একটা প্রমিস করবে?
— ইয়েস প্রমিস। বলো।
— রামিমের এক্সিডেন্টটা তন্ময় করেছে মুগ্ধ! তন্ময় একটা শয়তান! তলে তল তোমাকেও মারার জন্য প্ল্যান করেছে! আরেকটা কথা! আমাদের বিয়ের ব্যাপারে ও সবটা জানে! তুমিই বলো যেখানে তোমার বাসার চাকররা এই বিয়ে সম্বন্ধে কিছু জানেনা সেখানে তন্ময় জানলো কি করে? আমার মাথা আওলা হয়ে আছে মুগ্ধ! আমি কোনোকিচ্ছু ভাবতে পারছিনা!
মুগ্ধ কপালের চিন্তার ভাঁজ পড়লো। এই মূহুর্তে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে মুগ্ধকে। কিছুক্ষণ চুপটি থেকে কৌতুহল গলায় বললো,
— কথাগুলো রামিম বলেছে? বিয়ের ম্যাটার ও জানে?
আমি মাথা উপর-নিচ নাড়লাম! যার অর্থ ”হ্যাঁ”!
— মামলা সিরিয়াস! ওয়েট! মুখটা ধুয়ে আসি!

মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
— পাকনি আই ডোন্ট নো! বাট আমার হেভি ডাউট হচ্ছে তন্ময়ের উপর! তন্ময়ের মতো মিথ্যুক আমি সেকেন্ড একটা দেখিনি! ওর মাথায় কত খারাপ কনসাইন্স থাকতে পারে জাস্ট আই নো!
মুগ্ধ আলমারি থেকে শার্ট, প্যান্ট, ঘড়ি বের করে রেডি হচ্ছে! আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি! ওর টিশার্ট ছাড়া গা আরেকবার দেখলে সিরিয়াসলি আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো! এমনেই চোখের সামনে একটু আগের দৃশ্য ভাসছে! চোখবন্ধ করলেও একই অবস্থা দেখছি! ওমন ইয়াং একটা ছেলের শরীর দেখতে মেয়েদের চমৎকার লাগলেও আমার জাস্ট একপলক দেখতেই শ্বাস ভারী হয়ে আসছে! নো নেভার তাকানো যাবেনা!

২.
ভার্সিটির প্রাঙ্গণে পা রাখতেই আমার চোখ ছানাবড়া! সবাই দৌড়াচ্ছে কেনো? কিছু হয়েছে? সবাই দেখি একদিকে পালাচ্ছে! আমার হৃৎ গতি হঠাৎ বেড়ে যেতে লাগলো! সবার চোখমুখে আলাদা রকমের ভয় দেখছি! রহস্যজনক ভয়! মুগ্ধ কোথায়? ওকে যে দেখছিনা! আমাকে এখানেই থাকতে বলে মুগ্ধ গাড়ি করে ঢুকেছিলো।আমি কাউকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করবো, কেউই আমার ডাকে শুনছেনা! পায়ের দৌড়াদৌড়িতে বাতাসের ধূলো উড়ছে! অনুভব করলাম কলিজাটা ধুকপুক করছে! দূর থেকে একটা ডাক শুনতে পেলাম! কেউ আমার ধরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে! আমি উৎসটার খোঁজে এদিক ওদিক দেখতেই মাঠের শেষপ্রান্তটার হলরুমের ওখানে অর্পিতা দাড়িয়ে! দুহাত দিয়ে ঠোটের চারপাশ ঘিরে বেগতিক হারে চিল্লাচ্ছে! আমি দৌড়ে হাফাতে হাফাতে অর্পিতার কাধ ধরে থামলাম। অর্পিতা কান্নার সুরে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,

— গন্ডগোল হয়ে গেছে দোস্ত! গন্ডগোল হয়ে গেছে! তন্ময়, নাসিফ, আহাদ মিলে মুগ্ধ ভাইকে পিটাচ্ছে! অনেক ফোন করেছি তুই ধরিসনি!! একনাগাড়ে দশমিনিট ধরে মারছে!! ভাইকে বাঁচা প্লিজ! কুত্তাগুলা মেরে ফেলবে ওকে!!

আমার আত্মাটা যেনো সাথে নেই কথাটা শুনার পর! আপনাআপনি অর্পিতার কাধ থেকে পড়ে গেলো হাতটা। বুকের মধ্যে ধুপধুপ করে হাতুড়ি চালাচ্ছে কেউ! কানেও যেনো শব্দটা বিধছে খুব! বহু কষ্টে ঢোক গিলে অর্পিকে প্রশ্ন করলাম,
— উউনি ককোথায়?
অর্পি কান্না করে বলে উঠলো,
— হহলরুমে

শরীরের শেষটুকু শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছি! এই দৌড়টা জীবনের শেষ দৌড় এমন নীতিনিষ্ঠে দৌড়াচ্ছি! বুকটা ফেটে ছিন্নভিন্ন লাগছে প্রচুর! এই বুঝি ওরা উনাকে মেরে ফেললো! হলরুমের দরজায় কি ভীড়! ভেতরে যাওয়া মুশকিল! নাহ!! এভাবে হাতে হাত রেখে তামাশা দেখার সময় নেই!ওরা মুগ্ধকে মেরেই ফেলবে! জামার হাতায় চোখ ডলে হলরুমের উল্টোদিকে যাচ্ছি! ওখানে একটা জানালা সর্বদা খোলা থাকে! জানালার নিকটস্থ হতেই নাসিফের হো হো হাসির গলা শোনা যাচ্ছে। আমি জানালা টপকে ভেতরে ঢুকতেই গায়ের সবগুলো পশম কাটাঁ দিয়ে উঠলো! হিরহির করে আলোর গতিতে রক্ত সন্ঞ্চালন বৃদ্ধি পাচ্ছে! আমার পুরো শরীর কাবু হারিয়ে ফেলেছে! মুগ্ধের মাখন রঙের শার্টটা রক্তে লালটম্বুর!হলরুমের ময়লা ফ্লোরে কালো প্যান্টটা ধূসরবর্ণে মাখামাখি। দুইহাত মাথার দুইদিকে মেলে উপুড় হয়ে কাশছে মুগ্ধ! কাশির সাথে মুখ থেকে লালরক্ত বেরুচ্ছে! তন্ময় লাগামহীন পিটিয়ে হাফিয়ে উঠেছে বিধায় একটু জিরিয়ে নিচ্ছে!

সকালেই না মানুষটাকে হাসিখুশি সুস্থ দেখলাম? লজ্জামিশ্রিত ভাবনায় উনাকে মনের কোণে আনলাম। কি করে দিলো ওরা মুগ্ধকে? কি করে দিলো? জানালা ধরেই কেঁদে দেই আমি। চোখ কুচকে ফুপিয়ে কেদেঁ দেই! মম কাদলে চলবেনা! কাদিস না! থামা নিজেকে! জানোয়ারগুলাকে আগে টাইট কর! তোর মুগ্ধকে পিটিয়েছে না? তুইও কুত্তার মতো পিটাবি! একটাকেও ছাড় দিবিনা! জোরে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে হাতের তালু চোখের পানি মুছে ওড়নাটা হাতে নিলাম! কাধ থেকে কোমর বরাবর বাকা করে বেধেঁ ব্যাগের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় সরন্জামাদি নিয়ে হাতে পুড়লাম! আমি ওদের পেছনদিকে বিধায় এখনো ওরা দেখেনি আমায়! চুপিচুপি বিনা শব্দে ওদের পেছনে দাড়াতেই ওরা বলছে,
— মাম্মা? এই শালাকে মেরে কোথায় ফালাবি? মরা লাশ তো সাথে রাখা যাবেনা।
তন্ময় বললো,
— হুর বেক্কল! এইটা মরছে নাকি! এখনো মরেনাই! শালার নিশ্বাস পড়তেছে! মাথায় দুইটা জোরে দেওয়া লাগবো!
আহাদ বলে উঠলো,
— দেখ মামা! যেমনেই হোক লাশ ড্রেনে ফালাইস না! নদীতে ফালাইতে গেলেও কেউ না কেউ মাস্ট বি দেখবো! তার চেয়ে ভালো ! কবরস্থানে কবর দেওয়া!
নাসিফ ধমকে বলে উঠলো,
— গাধার বাচ্চা! ঘিলু নাই? কবরস্থানের মানুষ মনেহয় তোর চাচা লাগে বললেই একেবারে কবর দিয়ে দিবো!

ওরা নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটিতে ব্যস্ত থাকলে পেছন থেকে সামনে এসে আমি শুরু করি হামলা! টিনের বোতলটা জোরে ঝাকিয়ে ডিরেক্ট হামলা চোখে, পেপার স্প্রে দিয়ে! ওরা চোখ ধরে চিল্লাচিল্লি করছে! কেউ চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা! এইসুযোগে আমি মুগ্ধকে ডাকছি! ও চোখটা পযর্ন্ত খুলতে পারছেনা! ওড়নাটা দিয়ে তাড়াতাড়ি ওর মুখ ঢেকে দেই! বাতাসে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পেপার গ্যাস যেভাবে ছড়াচ্ছে বেশিক্ষন থাকা যাবেনা এখানে! মুগ্ধকে উঠিয়ে যতদ্রুত সম্ভব ধরে ধরে হলরুমের পিছন গেটে দিয়ে বের হলাম! মাথায় শুধু একটাই কথা পাক খাচ্ছে, মুগ্ধ বাচঁবে তো? তুই ওকে বাচাঁতে পারবি??? পেছন থেকে চেচামেচি করছে ওরা,

‘তোকে আমরা ছাড়বোনা! মুগ্ধকে মেরেই ফেলবো! তুই ওকে যেখানেই নিস যাস কেনো! আকাশ পাতাল ভেদ করতে হলেও মারবো! মার্ক মাই ওয়ার্ডস!’

৩.
রাদিফ মুগ্ধ চিকিৎসাধীন! প্রচুর রক্ত গেছে ওর! আমার নিজের জামাটাই ওর রক্তে চটচটে আকার ধারন করেছে! ওড়নাটা চিপলে বেসিন ভর্তি রক্ত ঝড়বে! অর্পির সাহায্য নিয়ে মুগ্ধকে বাসায় এনে ব্যবস্থা করেছি! ভেতরে একটা ডাক্তার, দুটো নার্স মিলে ওর ট্রিটমেন্ট করছে ! আমি রুমের বাইরে পায়চারি করছি। সার্ভেন্টরা সবাই এটা ওটা এনে হেল্প করছে। সবচেয়ে বড় সাহায্য করেছে মুগ্ধকে রক্ত দিয়ে! ডাক্তার এসে ব্লাড চাইলেই তিনজন এগিয়ে আসে!
— ‘স্যারের ব্লাড আমি দিবো ডাক্তারসাহেব!আমার থেকে রক্ত নিন!’
আরেকজন বলে উঠলো,
— ‘ডাক্তার বাবু! আমার শরীরে যত্টুক রক্ত আছে নিয়ে নেন! তারপরও আপনে মুগ্ধ বাবারে বাচায়া দেন ডাক্তার বাবু!

আমি হতবিহ্বল হয়ে কাদছিলাম শুধু! সার্ভেন্টদের এমন রক্তদান হৈহৈ দৃশ্য আমার কাছে একটা রঙিন দৃশ্যপট! আচ্ছা মুগ্ধ এমন কি জাদু করেছে উনাদের মনে এতো দাগ চিড়ে গিয়েছে?বেশিরভাগ সার্ভেন্ট দরজার বাইরে ফ্লোরে বসে দুহাত তোলে দোয়া পড়ছে। হয়তো প্রতিটি মোনাজাতে কাদঁতে কাদঁতে মুগ্ধের জন্য অকুল কন্ঠে সুস্থতা কামনা করছে। একটু দূরে গিয়ে দাড়ালাম। অনবরত চোখের স্থল ভরে ভরে পানি গড়াচ্ছে। বারবার মুছলেও যেনো অশ্রুর সোডিয়াম ক্লোরাইডের কমতি হচ্ছেনা। আমার পাশে এসে সেদিনের বৃদ্ধাটা দাড়ালো। আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলেন,

— মিস্টি মা টা? নাক ফুলিয়ে ফেলছো… কান্না করেনা মা। ও দেখো সুস্থ হয়ে যাবে।
আমি হেঁচকির সুরে আটকা গলায় বললাম,
— সসুস্থ হহবে তো?
বৃদ্ধা আঙ্গুল উচিয়ে সার্ভেন্টদের দিকে দেখালেন এবং নম্র গলায় বললেন,
— এদের মোনাজাত বিফলে যাবে না মিস্টি মা। পরিস্কার মন থেকে নিজেকে ভিখারি করে আল্লাহর দরবারে চাচ্ছে। আল্লাহ কি শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেয়? দেয় না। মানুষ শূন্যহাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ্ নাহ্! ভরসা রাখো। সব ঠিক হবে। আমার দাদুভাইয়ের কিচ্ছু হবেনা।
আমি অস্পষ্ট সুরে থেমে বলি,
— উউনি আআপনার নানাতি?
বৃদ্ধা আমার চোখের পানি মুছে বললেন,
— হুম মিস্টি মা। দাদুভাই আমার। যাও দাদুকে দেখে আসো। ডাক্তার ভেতরে যেতে অনুমতি দিয়েছে।

আমি হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়িয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। চোখের সামনে সটান হয়ে শুয়ে আছে মুগ্ধ! সকালের পরিস্কার চাদরটা এখন রক্তে মত্ত! সুস্থ ফাজলামি করা মানুষটা এখন বিছানায় আহত! মুগ্ধ চুপ করে আমাকে দেখছে। কপাল কুচকে ঠোট নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঠোটের কোনাটা একদম চিড়ে আছে! একটা সেবিকা পাশ থেকে বললেন,
— আপনি পেশেন্টকে কথা বলতে দিবেননা প্লিজ! উনি এখনো দূর্বল! চুপচাপ পাশে বসে কথা বলুন। উনাকে মনের ভুলেও টু শব্দ করতে দিবেন না। চলি।

নার্সটা চলে যেতেই আমি বিছানায় বসলাম। মুগ্ধ ঠোটটা নাড়াচ্ছে এখনো! যন্ত্রণায় কথা বলছেনা একটুও!

আমি শাষন গলায় বললাম,
— ভালো হইছেনা একা একা মার খেতে! ভালো হইছে? মনের স্বাদ মিটছে আপনার? না করছিলাম না? কথা কানে নিছেন?

মুগ্ধ জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
— সরি! আ’ম সরি।

ঠোঁট কাপিয়ে শক্ত করে থাকলেও আমি ওইটুকু শব্দ শুনেই ডুকরে কেদেঁ দেই। যদি আজ আমার ক্যাম্পাসে যেতে দেরি হতো? যদি আজ অর্পিতা সঠিক সময়ে ওকে গাড়িতে না তুলতো? তাহলে কি এই দুটি শব্দ শোনার মতো অবস্থাটুকু বাচঁতো? নাকি লাশে পরিণত হওয়ার মতো মুরদা হয়ে যেতো? কে জানে?

-চলবে

ফাবিয়াহ্_মম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here