তুমিময়_প্রেম❤ পার্ট_৩০ LAST_PART শেষ অংশ

0
3000

তুমিময়_প্রেম❤
পার্ট_৩০ LAST_PART শেষ অংশ
FABIYAH_MOMO

১৯.
ঝড়ো হাওয়া বইছে সকাল থেকে। ভয়ংকর কালো মেঘের আড়ালে দিনের আলো ঢেকে গেছে। আকাশের দিকে তাকালেই বুক ভয়ে দপাদপ করে। একটু আগে এলাকায় মাইকিং করে ‘সর্তক সংকেত’ দিয়েছে। সমুদ্রসৈকতে উথালপাথাল প্রাণচাঞ্চল্য অবস্থা হচ্ছে সুউচ্চ ঢেউয়ের জোরে। সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়া ঘোর আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি রুমে জানালা আটকে, দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছি। হালকা বাতাসেই কারেন্ট ফুরুৎ! টিভিও দেখতে পারছিনা এই শোকে। আজ মনটা অদ্ভুত ভাবে তোলপাড় করছে, বুঝতে পারছিনা কিছু। বিচিত্র অস্থিরতায় এ পযর্ন্ত কতগ্লাস পানি খেলাম হিসাব নেই! মোবাইলে জরুরি কলটা করবো নেটওয়ার্ক নেই! বাইরে যাবো সেই পরিস্থিতিও নেই! দরজায় হুট করে কেউ নক করলো। আমি অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম! বাইরে যেই তুলকালাম ঝড় হচ্ছে এমন স্তব্ধ পরিস্থিতিতে কে আসবে বাইরে থেকে? আমি দরজা খুলে দিলাম। দেখি কাজের বুয়া।

— আপা আপনার সাথে কেউ দেখা করতে চায়। উনারে আসতে বলবো?
— এই খারাপ আবহাওয়ায় কে আসলো দেখা করতে?
— আপা পিচ্চি মেয়ে একটা। নাম বলছে সাফিয়া।
— আচ্ছা দেখি আসতে বলুন তো। নাম শুনে তো মনে হচ্ছেনা চিনি..
আমি দরজা খুলাই রাখলাম। জানালার কাছে গিয়ে থাইগ্লাসের বাইরে ঝড়ের তান্ডব দেখছি। সুপাড়ি গাছের হাল বড্ড বাজে।ঝড়ের প্রতিটা ঝাপটায় নুয়েশুয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। কি ভয়ংকর দৃশ্য! হঠাৎ কেউ মিষ্টি গলায় বললো,

— আমি আসতে পারি?

মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি অনেকটা চেনাচেনা মুখ। কোথাও যেনো দেখেছি! আচ্ছা কোথায় দেখেছি মেয়েটাকে? মনে করতে পারছিনা!! মেয়েটা একইসুরে আবার বললো,

— আমি আসতে পারি?

ভাবনার প্রহর ভাঙ্গলে আমি ভেতরে আসার জন্য অনুমতি সূচকে মাথা ঝাঁকাই। মেয়েটা ভেতরে না এসে দরজায় দাড়িয়ে কিছু একটা গভীরভাবে চিন্তা করছে। নজরটা পায়ের জুতোর উপর। কাদায় লেপ্টে খুবই নোংরা অবস্থা। আমি ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই বলে উঠি,

— জুতো খুলে আসতে হবেনা। ভেতরে আসো।
— থ্যাংকিউ।
— তোমার নাম কি? আমাকে কিভাবে চেনো?
— আপনি আমায় চিনতে পারেননি?
— না তো,
— সাফিয়া? নামটা মনে নেই?
— শোনা শোনা লাগছে তবে মনে করতে পারছিনা।
— আপনাকে খুব মনে পড়ে মিস। আপনি আমার জন্য চাচ্চুকে ছেড়ে দিয়েছেন। চাচ্চু ভালো নেই মিস।

কথাগুলো শোনার পর যেনো ঝড়ের বীভৎস ঝাপটাটা এবার আমার উপর পড়লো। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছিয়ে জানালার সাথে ধাক্কা খাই। এই মূহুর্তে আমার ফাইজাকে দেখে আবেগান্বিত হওয়া ঠিক? ফাইজাকে দেখে হুহু করে কাঁদা উচিত? নাকি মুগ্ধের ব্যাপারে আগেভাগে জিজ্ঞাসা করাটা বেঠিক?আমি জবাবশূন্য হয়ে তীব্র উৎকন্ঠায় ছটফট করছি। ফাইজা আমাকে দূরে যেতে দেখে দৌড়ে এসে আমাকে শক্ত হাতে জাপটে ধরলো। আমি আরেকদফা বিদ্যুপৃষ্ঠের মতো চমকে উঠি। হাত কাপছে, পা কাপছে, মুখ কাপছে, আমি যেনো আমাতে নেই। সমস্ত শরীর বিষাদের ঘোরে অবশ, বিপন্ন লাগছে।

— আপনাকে প্রচুর মিস করেছি মিস, আপনাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না, আমি সবসময় দেশে ফিরতে চাইতাম।কিন্তু চাচ্চু আসতে দিতো না। বারন করতো। বলতো, আপনি চাচ্চুকে দেখতে পারেননা, চাচ্চুকে দেখলে রাগ করবেন। আমার চাচ্চুকে আপনি আমার জন্য কেন ছাড়লেন মিস? বলুন না মিস!! আমি সব ছেড়ে আপনার কাছে জানতে এসেছি!!

আমি কঠিন অবস্থাগুলো হজম করার চেষ্টা করে মৃদ্যু কাপুঁনিতে কাঁপছি। দাতঁ শক্ত করে মাথা নুয়ে আমাকে জাপটে ধরা মেয়েটিকে দেখছি। ছোট্ট ফাইজা পাচঁবছরের দৃঢ়তায় বড় হয়ে গেছে, চিনতে পারিনি প্রথমে।। ফাইজা কাদঁছে, কান্নার সুরে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, আমি কি উত্তর দিবো? বলবো তোমার চাচ্চু নিজেই আমাকে ছেড়ে গিয়েছে? আমি চোখ মুছে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বিছানায় বসালাম। ওর চোখ মুছে দিতেই ফাইজা আমার হাত ধরে বললো,
— চাচ্চু আমাকে সব না বললেও আমি সব জানি মিস। আব্বুর নতুন বউ আমাকে সব বলেছে। জানেন মিস আব্বুর নতুন বউটা খুব খারাপ। আমার নামে মিথ্যা মিথ্যা কথা বানিয়ে আব্বুর কাছে মার খাওয়ায়। আজ আম্মু থাকলে ওই দুষ্টু মহিলা কখনো আমায় মারধর করতে পারতো না। জানেন মিস, চাচ্চুর উপরও একদিন মহিলাটা হাত তুলেছিলো। চাচ্চু সেদিনের পর থেকে ওই মহিলাকে আর সহ্য করতে পারেনা। আমি যে পাচঁ বছর ধরে আমেরিকায় আছি মনের ভুলেও খোঁজ নেয়নি। পচাঁ পরিবারের নোংরা মানুষ ওরা। মিস? আপনি আমার সাথে চলুন, আমি আপনাকে চাচ্চুর সাথে বিয়ে দিয়ে সুন্দর পরিবার বানাবো। চাচ্চুও কাদঁবেনা। আপনিও দূরে থাকবেন না। আপনাকে আমি নিতে এসেছি মিস। চলুন।

গুণে গুণে ‘বারো’ বছর বয়স হবে ফাইজার।অথচ মা হারা মেয়েটা এতো সুন্দর কথা কিভাবে শিখলো সেটাই বুঝতে পারিনা। পাচঁ বছরের ব্যবধানে মুগ্ধ ওকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে, দেখলে মনে হবেনা কেবল বারো বছরের মেয়ে। মুগ্ধের বড়ভাই কিভাবে পারলো ফুটফুটে নিষ্পাপ মেয়েকে ভুলে যেতে? নিজেরই তো মেয়ে তবুও কেন দূরে রাখে? লোকটার প্রতি ঘৃণা লাগছে আমার। এইসব পুরুষের বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই।। আমি ফাইজার মাথায় হাত বুলিয়ে গালে চুমু একে দিলাম। ফাইজা আচমকা আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে উঠলো,

— আপনি খুব বড় হয়ে গেছেন মিস। মেয়েদের মতো শাড়ি পড়েন। চাচ্চু আপনাকে শাড়িতে দেখলে পাগল হয়ে যাবে, সিরিয়াসলি!!

হঠাৎ মনের মধ্যে ঝংকার দিয়ে উঠলো ফাইজার কথা শুনে। অজানা উত্তেজনায় তৎক্ষণাৎ উৎকন্ঠা বোধ করছি আমি। শরীরে অদ্ভুত শিহরন বয়ে যাচ্ছে, নিজের মধ্যে অপ্রকৃতিস্থ ভাব রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করছি। মুগ্ধের কথা শুনে কি এমন ঝিমঝিম করে উঠলো? মুগ্ধ আমায় দেখে কেমন করবেন, জানার বহু আগ্রহ!!

২১.
ঝড়ের ভারি বর্ষনে রাস্তা সব গোলমেলে লাগছে। বৃষ্টির প্রবণতা, ঝড়ের ঝাপটা — সব মিলিয়ে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছে। গাড়ি চালিয়ে সামনে এগুতেই প্রচুর রিস্ক নিতে হচ্ছে। এই কর্দমাক্ত রাস্তায়, বৃষ্টির ঝাপটায়, গাড়ি যদি উল্টে পড়ে তাহলে উদ্ধার করার জন্য কেউ আসবেনা এখানে। খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে চট্টগ্রামের উন্নত শহরে। হঠাৎ দ্রুত স্পিডে মূল সড়কে একটি কালো গাড়ি চলতে নিলে এলার্ট সাউন্ড বাজিয়ে গাড়ি আটকায় ট্রাফিক কর্মী। ঠোঁটে বাঁশি ফুকতে ফুকতে বন্ধ জানালায় আলতো লাঠি মারে। জানালার কাচঁ নেমে গেলে রেইনকোর্ট গায়ে ট্রাফিক পুলিশটি চেচিয়ে বলে উঠে,

— এ্যাই মিয়া! ঝড়বৃষ্টি হইতাছে চোখে দেখেন না? এইভাবে কেউ স্পিড দিয়ে গাড়ি চালায়?দেখি লাইসেন্স!
ট্রাফিক পুলিশটা দেখল, ড্রাইভিং সিটে বসা ছেলেটি ঝড়ের চেয়েও তিনগুণ বেশি স্পিডে লাইসেন্স হাতে গুজলো।

— নাম কি? কোনদিকে যাচ্ছেন?
— স্ট্রেন্জ! আপনি আমার লাইসেন্স হাতে নিয়ে আবার নাম জিজ্ঞাসা করছেন? ওখানে নাম নেই?
— ওই মিয়া! মস্কারা করো!
— আপনার কি মনেহয় আমি ঝড়ের মধ্যে বিনোদন দিতে বের হয়েছি? চেহারা দেখতে কি আমার জোকার মনেহচ্ছে ? লাইসেন্সে ফটো নেই?
— বেশি বাড়াবাড়ি করছেন মিয়া! গাড়ি জব্দ করলে কিন্তু পার পাবেননা!
— দেখুন আমার তাড়া আছে! আপনার সাথে তর্ক করার টাইম নেই! সরি!

২০.

— সবাই কেমন আছে?
— সবাই আবার কে? আপনি ক্লিয়ারলি চাচ্চুর কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছেন মিস? চাচ্চু জানেন বিয়েও করেনি। বলেছে আমার চাচী আছে। তাই সে বিয়ে করবেনা। কিন্তু আমি না সব জানি মিস!! আপনি যে আমার চাচী সেটাও জানি!! কিভাবে জানি ওটা টপ সিক্রেট!! বলবো না।

ফাইজা হো হো করে হাসতে শুরু করলো। মেয়েটা বকবক করতে পারে খুব। কথাবার্তাও বেশ চটাং চটাং। ফাইজা আমার ছোটবেলার ডুপ্লিকেট ! ব্যাপারটা ভেবে আড়ালে হাসলাম! হঠাৎ দরজার দিকে কোন্ মনে তাকালাম জানিনা না, চোখ পড়তেই শক্ত হয়ে গেছি মূহুর্তের মধ্যে ! পায়ের নিচ থেকে ধীরেধীরে বুঝি মাটি সরে যাচ্ছে! সমস্ত শরীর দারুন দাপুটে শিরশিরিয়ে উঠছে। তীব্র উৎকন্ঠায় আমি বিবেকহীন হয়ে ঝটকায় দাড়িয়ে পড়ি। বিছানায় বসা ফাইজা আমার হাত ঝাকিয়ে অগণিত প্রশ্ন করছে। মিস কি হলো, আপনি দাড়ালেন কেন, কে ওখানে।। একটা জবাবও দিতে পারছিনা একদৃষ্টিতে স্থির হয়ে গেছি। অস্বাভাবিক হারে ধুকপুকের কারনে শিরা উপশিরায় রক্তের স্রোত উচ্চাঙ্গে টগবগ করছে। আমি পিছাচ্ছি, শুধু পিছাচ্ছি…
সুন্দর দেহের উপর কালো কুচকুচে শার্ট। শার্টের উপর নেভিব্লু হুডির অর্ধচেইন লাগানো জ্যাকেট, পায়ে পালিশ করা নতুনত্বের চকচকে সুজ। সেই সুপরিচিত চিরচেনা মনোমুগ্ধকর সিক্ত মুখ। একহাতে ভেজা চুল ঝেড়ে জ্যাকেট ঝাট দিচ্ছে সমান তালে। পায়ের জুতো না খুলে ভেতরে প্রবেশ করলে ধক করে ওঠে বুকে। উনার দৃষ্টিতে শুধু আমি আবদ্ধ। আশেপাশে কি আছে, কে আছে, ধ্যান দেয়নি একবারো। শরীর থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। টপটপ করে ফ্লোর ভাসাচ্ছে মুগ্ধ। বর্ষনের এমন ভয়ঙ্কর কালোমেঘের দিনে উনি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেপ বিশ্বাস করতেও কলিজা চুপসে যাচ্ছে আমার। চোখের পলক ফেলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছি আমি।। উনি আগের চেয়ে আরো বেহিসেবী লেভেলে মারাত্মক সুন্দরের তকমায় লেপ্টে গেছেন। এতো সুন্দর হয়ে গেছেন যেটা আগে কখনো অভিভূত হয়ে নজরে পড়েনি আমার। উনার সামনে দাড়ালেও আমাকে রাস্তার ফালতু ভিখিরির মতো দেখাবে। নিন্দা, টিটকারি, তামাশা করবে। মুগ্ধ চুল ঝাড়তেই বলে উঠলো,

— আম্মাজান প্রাইভেট টক আছে! প্লিজ বাইরে যান!
ফাইজা চট করে দুহাত মেলে মুগ্ধের রাস্তা আটকে বললো,

— নো চিটিং! বেরিয়ে যাও চাচ্চু! গেম মোতাবেক আমি জিতেছি! আমি সর্বপ্রথম মিসকে খুজে পেয়েছি! তুমি লেট! নাও লিভ মি এলোন!
— আম্মাজান প্লিজ না? আপনার মিসের সাথে কাজটা খুবই জরুরী। আপনি তো কাজটা জানেন?
— চাচ্চু তুমি হেরে গেছো! আমি কোনো সাফাই চাইনা! সো গেট আউট! কালকে তোমার টাইম!
— আম্মাজান প্লিজ! ও আম্মাজান?? হাম্বেল রিকুয়েস্ট প্লিজ শুনুন না !
— নো!
— লক্ষী পক্ষী সোনা আম্মাজান!
— নো মিন্স নো!
— ও আম্মাজান, আমার কলিজার টুকরা প্লিজ। কাল থেকে পাক্কা আপনার সব কথা শুনবো! স্ট্রং প্রমিস!
মুগ্ধের আকুতি মিনতি দেখে ফাইজা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে যায়। উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টি ছুড়ে হঠাৎ বলে উঠেন,
— দাড়ান আম্মাজান! দরজাটা লাগিয়ে দিয়েন একটু।
মুগ্ধ বাঁকা হেসে কাছে আসছেন। ফাইজা দরজা লাগিয়ে চলে গেল। কথায়, কাজে, আচরনে বেশ আজ মুগ্ধ বেশ অন্যরকম।। উনি নেশাগ্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসলে আমি ভয়ে চাপতে চাপতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে চমকে উঠি। সর্বনাশ! পেছনে দেয়াল এখন পালাবো কোথায়? হঠাৎ আমাকে ভয়ের উচ্চশিখরে পৌছে দিয়ে উনি জ্যাকেটের চেইনটা একটানে খুলে ফেললেন। কি করবেন উনি? জ্যাকেটটা খুলে ছুড়ে ফেললেন বিছানায়। মোহনীয় দৃষ্টিতে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছেন উনি। শার্টের হাতার দুটো বোতাম খুলে পেচিয়ে মুড়িয়ে কনুইতে ভাঁজ করলেন। আমি ঢোকের পর ঢোক গিলে গা চুবিয়ে ঘামছি। মাথা শূন্য ফাকা বাসা হয়ে গেছে হঠাৎ এরকম করতে দেখে! কোমর থেকে একটানে বেল্ট খুলে ফ্লোরে ফেললেন মুগ্ধ। ধপ করে দেয়ালে দুই হাত লাগিয়ে আমায় মাঝখানে বন্দী করলেন। আমার মুখের উপর গরম নিশ্বাস পড়ছে উনার। নিশ্বাসের উষ্ণতায় চোখ খিচে আমি দাঁত কিড়মিড় করছি। তাকানোর জো পাচ্ছিনা একদমই। হঠাৎ আমার কানে তপ্ত ভারী নিশ্বাসের সাথে উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করলাম। ফিসফিসানি আওয়াজে কানে এলো,
— আই লাভ ইউ।
আমি চোখ খুলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— ককি..

উনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোমরে একহাত চেপে একটানে বুকে মেশালেন। আমি হকচকিয়ে কেঁপে উঠি। ভয়ার্ত গলায় বলি,
— আআপনি এএসব কি করছেন? ছাড়ুন আমায়!
উনি নেশাভরা কন্ঠে বলে উঠলেন,
— ছাড়ার জন্য আমেরিকা থেকে এসেছি? মাথা নষ্ট ভাবছো?
— কিকি ববলতে চাইছেন আপপনি?
— বলতে না করতে এসেছি।
উনি গালে নাক ঘষতেই বলে উঠলেন,
— শাড়ি পড়ছো কবে থেকে? উফ! দিনদিন কি হটনেস বাড়ছে তোমার?
— অসভ্যের মতো কথা বলবেন না! ছাড়ুন!

উনি আমার মুখ থেকে ‘অসভ্য’ ওয়ার্ড শুনে আরো কঠিন করে চেপে ধরলেন। আমি ছাড়ানোর জন্য বৃথা চেষ্টায় ছুটাছুটি করছি। সহ্য হচ্ছেনা উনাকে! কেন এসেছেন উনি? আসার কি দরকার ছিলো? আমাকে নিজের জীবন থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে আবার কেনো এসেছেন? উনি চুলের খোপায় হাত ডুবিয়ে চোখবন্ধ করে ঠোঁট কপালে ছোঁয়ালেন। নরম কন্ঠে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন,

— প্লিজ আমার সাথে এমন করো না। আমি খুব খারাপ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। পাচঁটা বছরে কি কি করে নিজেকে সামলিয়েছি আমি তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না। আমি মুগ্ধ কখনো ভেঙ্গে সন্দিহান হয়ে যাবো কখনো ভাবতে পারিনি। তোমার বাবার ওয়াদা ভাঙ্গতে খুব কষ্ট লাগতো, তোমার কাছে ফিরতেই পারতাম না। আমাকে প্লিজ তাড়িয়ে দিওনা। আমি তোমার কাছে নত হয়ে ফিরেছি, ভিখারির মতো নিঃশেষ হয়ে ফিরেছি। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তুমি ফিরিয়ে দিলে কার কাছে যাবো?কে আছে আমার তুমি ছাড়া?একটু কাছে নাও?

আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বুকে মিশিয়ে ধরলেন উনি। কাধের কাছে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছেন। আমি ধরিনি। অশ্রুফোঁটা থুতনি গড়িয়ে উনার শার্টের উপর কাধে পড়ছে। উনি হাতের বাধন ঢিলে করে হাত আনলেন আমার গালের উপর। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে উনি অঝোরে কাঁদছেন। চোখের পানি আমার মুখের উপর পড়ছে। কিছুক্ষণ পর উনি ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ লুকান। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখে ডলছেন। আমি দাঁতে ঠোঁট চেপে আচঁলে চোখের কোণা মুছে চলছি। হঠাৎ আমার মনেহলো কেউ আমার পায়ের কাছে বসেছে। পায়ের কাছটায় ভারী ভারী ঠেকছে। চোখ মুছার হাত থামিয়েগে আমি ভ্রু কুচকে নিচে তাকাই। দেখি মুগ্ধ আমার পায়ের কাছে হাটুগুজে বসে আছেন। আমার মাথায় বাজ পড়লো দৃশ্যটা দেখে!দুমড়ে মুচড়ে আসছে ভেতরের পাজরে। আমি তড়িঘড়ি করে ফ্লোরে নুয়ে বসি।

— উঠুন মুগ্ধ! কি করছেন! ছিঃ আমার পাপ হবে মুগ্ধ প্লিজ!! আমার পা ধরবেন না উঠুন!! আমি আপনাকে..
উনি কান্না সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
— আমাকে..আমাকে মাফ.. মাফ করে দাও..
হুহু করে বাধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি আমি। আমার সামনে উনিও মাথা নুইয়ে কাঁদছেন। পা ধরে মাফ পাওয়াটা আমার জন্য কষ্টদায়ক! আমার পা ধরে মাফ চাবে, সেই দৃশ্য দেখে দেখে উপভোগ করে আমি শান্তি পেতে চাইনা। আমি যতোই বলি উনাকে চাইনা, সহ্য করিনা, ভালোবাসিনা। কিন্তু দিনশেষে উনাকে ছাড়া আমি একমূহূর্তও চিন্তা করতে পারিনা। আমার অস্তিত্বের সাথে মিলেমিশে যাওয়া ব্যক্তিটির অসহনীয় কান্না, যন্ত্রনা, দুর্দশা আমি নিতে পারিনা।

মুগ্ধ আমায় বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। থেমে থেমে উনিও কাঁদছেন। কিছুক্ষণ পর পর শক্ত করে চেপে ধরেন বুকে, কখনো ঠোঁট ছোঁয়াতে থাকেন আলতো করে। আমি ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারছিনা উনার চেপে ধরাতে। কিন্তু অনুভব করছি উনার অস্থিতি হৃৎযন্ত্র হুল্কোর মতো লাফাচ্ছে। বামপাশটায় হাত রাখলাম। উনি আরেকদফায় মাথায় ঠোঁট বুলালেন। নিরবতার প্রহর কাটিয়ে বদ্ধ চোখে বললেন,
আমার প্রাপ্তিতে, সমাপ্তিতে, প্রতিটি অনুভূতিতে শুধু তুমি। ভালোবাসি তোমাকে পাকনি। মনের উজান জুড়ে অজস্র প্রহরে আমি ভালোবাসি ❤

২১.
দরজার ওপাশে পিঠ লাগিয়ে ফ্লোরে বসে কাদঁছে ফাইজা। চোখে বিশাল বিশাল নোনাজলের সমুদ্র। ফাইজা নিজেকে দোষী ভাবে মুগ্ধের কান্নার জন্য।। ওর চাচ্চুর মতো ভালো মানুষটার সাথে খারাপ হয়েছে জীবনে।। নিজের বাবা যেখানে দ্বিতীয় বৈবাহিক জীবন পেয়ে অবুঝ ফাইজাকে ভুলে গিয়েছে, তখন চাচ্চু এসে নরম হাতদুটো ধরে কোলেপিঠে মানুষ করে। ফাইজার ছোট্ট মনটা মনেমনে বললো, ভালো মানুষরা খারাপ! আর খারাপ মানুষরা শান্তিতে থাকে কেন? ভালো মানুষ কত দুঃখ পায়, কষ্ট করে। তার এককোনা কেন খারাপ মানুষগুলা পায়না? আমার চাচ্চু খুব কষ্ট পেয়েছে আল্লাহ্। আমার চাচ্চুকে তুমি কষ্ট দিও না। আমার আব্বু তো আমায় স্মরন করলো না। তবুও আব্বুকে কষ্ট দিও না। আমি কারোর জন্য খারাপ দোয়া করিনা। শুধু চাই, ফাইজার জন্য কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোকে সুখী করে দিও আল্লাহ্। আব্বু ভালো থাকুক। আব্বুর জন্য খারাপ দোয়া করতে পারিনা। আমি আব্বুকে মিস করি। না চাইলেও আব্বুকে মিস করি। আব্বু আমাকে চায় না। প্লিজ আল্লাহ্ আমার কারনে আব্বুকে কষ্ট দিওনা। আমার জন্য আব্বুকে দুঃখ দিও না। আমার মতো অনাথের কথা তুমি পূরন করে দিও। আমার জীবন থেকে সব সুখশান্তি, হাসিখুশি নিয়ে উনাদের সবাইকে দিয়ে দিও…

-‘সমাপ্ত’

ফাবিয়াহ্_মম❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here