হাতে রাখো হাত পর্ব -২

0
2199

হাতে রাখো হাত
পর্ব -২
ফায়জা করিম

শোওয়ার পরপরই হালকা একটা ঝিমুনি চলে এসেছিলো রেহানের চোখ জুড়ে। ইচ্ছায়- অনিচ্ছায় কাল রাতে ওর ঘুম হয়নি একদম।তাই চোখে জুড়ে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিচ্ছে থেকে। কিন্তু খুট খুট শব্দে ঝিমুনিটা কেটে গেল রেহানের।

কোন সমস্যা হলো? শব্দ বাথরুমের ভিতর থেকে আসছে।

“রিদি, ” জোরে ডেকে উঠলো রেহান। আল্লাহ জানে বাথরুমে কি করছে মেয়েটা।

” একটা হেল্প৷ লাগবে ভা…. ” বড় কষ্টে বাকি শব্দটা গিলে ফেললো রিদি। তবে শেষের অনুচ্চারিত শব্দটা বোধহয় রেহানের কান অব্দি পৌছায়নি কারন বাথরুমের দরজাটা মাত্র ইঞ্চিখানেক খুলে কথা বলছে রিদি আর সেটাও খুব আস্তে।

“হেল্প! ” রেহান বিছানা ছেড়ে উঠে এলো বাথরুমের দরজার কাছে।

“হ্যাঁ, ” মাথা নেড়ে বিষয়টা পরিস্কার করে জানাল রিদি।

” কি হেল্প লাগবে? ”

” ইয়ে মানে আমাকে হয় আর একটা পায়জামা দাও নাহলে একটা সেইফটিপিন।”

“সেইফটিপিন! ”

“পায়জামার ফিতা ভিতরে ঢুকে গেছে পরতে গিয়ে,” মিনমিন করে বললো রিদি। অসম্ভব রাগ লাগছে ওর এই মুহুর্তে, মনে হচ্ছে হাতের পায়জামাটা ছিড়ে কুটি কুটি করে।

“ওহ.. আচ্ছা আমি দেখছি। পায়জামা কোথায়?”

“তোমার আলমারিতে রেখেছে ফুপি।”

পায়জামা খুঁজতে যেয়ে রেহানের মনে হলো ও যুদ্ধ শুরু করেছে রীতিমতো কাপড়ের স্তুপের সাথে। একবেলার মধ্যে এতোগুলো কাপড় এসে জুটেছে ওর আলমারিতে,এতো কাপড় লাগে একটা মানুষের! ওর কাপড়ের একপাশে গাদা ধরে রিদির কাপড় রাখা হয়েছে… তার কোনটা কামিজ, কোনটা পেটিকোট আবার কোনটা শাড়ি।

“ধুর…. পায়জামা কই? আমি তো খালি শাড়ি, ওড়না এসব দেখছি।”

“মনে হয় নিচের দিকে আছে,” দরজার ফাঁক দিয়ে বাইরে দেখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলো রিদি কিন্তু কিছুই আসলে ওর নজরে আসলো না।

বিরক্ত হয়ে কাপড়ের গাদার নিচ থেকে আন্দাজে কাপড় ধরে টান দিতেই ঝপ করে কিছু দলা হয়ে রেহানের পায়ের উপর পড়লো। হাত দিয়ে তুলতে গিয়ে রেহানের কান গরম হয়ে গেল, এগুলোতো আন্ডারগার্মেন্টস … শিট ! এতোটা বিব্রত ও আগে কখনো হয়নি। ভাগ্যিস রিদিটা দেখে ফেলেনি। যতটা সম্ভব না ছুঁয়ে ওগুলো রাখতে গিয়ে মুহূর্তে ঘাম ছুটে গেল রেহানের। এই ভুল ও আর জীবনে করবেনা। কালই এই তাক খালি করে পাশের তাকে কাপড় রাখবে ও। খুঁজতে খুৃজতে শেষে নিচের দিক থেকে একটা পায়জামা নিয়ে দ্রুত বাথরুমের দরজার হ্যান্ডেলে ঢুকিয়ে দিলো রেহান।

ওদিকে রিদি দাড়িয়ে থাকতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিল, অতিরিক্ত একটা পায়জামা না পেলে কি শেষে পর্যন্ত আজ সারারাত ওকে বাথরুমেই দাড়িয়ে থাকতে হয় কিনা… কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত সুসংবাদ এলো।

“কাপড় দরজার হ্যান্ডেলে দিয়েছি,” রেহান দরজায় ধাক্কা দিতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রিদি। কাপড় পরে ঘরে আসতেই দেখে সব আলো বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়েছে রেহান। কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো করে তবুও অন্ধকারে কেমন একটা স্বস্তি পেল রিদি, আনমনে হাসলো।

রিদির এ ঘরে অন্ধকারে চলাও অভ্যাস আছে। ছোট থাকতে আরমানের সাথে কতো লুকোচুরি খেলতো ও সারাবাসা জুড়ে।

“রেহান ভাইয়াকে বিয়ে করে তুই যে আমার উপর পাল্টি নিচ্ছিস সেটা বেশ বুঝতে পারছি রিদি। শোন যতোই বড় ভাইয়ের বউ হোস না কেন তুই.. ভাবী তোকে আমি জন্মেও ডাকব না বুঝলি। তুই আমার তিন বছরের ছোট এটা কখনো যেনো ভুলবিনা,” আরমানের কথা মনে হতেই মনের অজান্তে এক টুকরো হাসি ফুটলো রিদির মুখে। বিয়ের ঘন্টা খানেক আগে ফোন করেছিলো দুষ্টুটা। বলেছে তোর কোন কষ্ট হলে আমাকে বলবি, কোন কিছু লাগলে আমাকে জানাবি। রেহান ভাইয়ার আগে যেনো আমার বোন আমাকে তার সমস্যা জানায়। আচ্ছা বলে ফোন রেখেছিলো রিদি।

অন্ধকারে দাড়িয়ে চোখটা ভিজে এলো রিদির , কে বলে ও একা? এইতো এক ভাই ওর জন্য নিজের ইচ্ছার কুরবানি দিলো আর একজন সুদূর প্রবাস থেকে ওর জন্য ভালোবাসা পাঠিয়ে দিলো। আব্বু- আম্মু এখন নিশ্চই একটু শান্তি পাবে যে তাদের রিদি এখন একটু হলেও ভালো আছে, নিরাপদে আছে।

চোখ বন্ধ অবস্থাতেও ফুলের হালকা একটা সুগন্ধ নাকে এসে লাগলো রেহানের। মানুষের জন্মজাত অভ্যাস হলো নাকে কোন গন্ধ পেলে সেটার উৎস খুঁজে বের করা। মাথার উপর থেকে বালিশটা সরাতেই যেন এক গুচ্ছ নীল অপরাজিতা দেখতে পেল রেহান। আসলে রিদির গায়ে ভীষন উজ্জ্বল নীল একটা কামিজ আর রিদিটাও সেই রকম ফর্সা, দুটোমিলে এর চেয়ে ভালো কোন উপমা আর মনে এলো না রেহানের।

রেহান লক্ষ্য করলো রিদির একপায়ে একটা নুপুরের মতো কি যেন। শোয়ার ফলে পায়ের কাছে পায়জামাটা টানের কারনে একটু উপরে উঠে এসেছে, ফলে স্বচ্ছ জলের মতো ছোট ছোট পাথরগুলো পায়ের পাতায় এক অদ্ভুত দ্যুতি ছড়াচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো কতোটা সময় সেদিকে তাকিয়ে ছিলো রেহান নিজেও সেটা জানেনা।

“তোকে দেখলেই হয় ভয়
বুকের ভিতরে মোড়ানো কি যেন
নিয়ে যতো সংশয় ”

আশ্চর্য একটা মেয়ে… অমন টকটকে লাল কাপড় পরে কোন ছেলের সামনে লম্বা চুল এলিয়ে দেয় কেউ? মনে হচ্ছিল আস্ত একটা টুকটুকে লাল আপেল। কচ্ করে কামড়ে দেবার বড্ড শখ হচ্ছিল। বহুকষ্টে নিজের ভিতরের ধুকপুকানি সামাল দিয়েছে রেহান। কিন্তু সাথে সাথে মন খারাপও হয়েছে। শুধু শারীরিক আকর্ষনে রিদির কাছে যাওয়াটা অমানবিক,নীতি বিরুদ্ধ।

” আজ নির্ভীক নয় রাত
চোরা কাঁটা বন পার হয়ে আজ
ধরেছি যে তোর হাত।”

এভাবে জোর করে একটা সম্পর্ক কি হয়? রেহানের নিজের চাইতেও রিদির জন্য বেশি খারাপ লাগছিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা ছাড়লো রেহান। মেয়েটার নিশ্চই অনেক স্বপ্ন ছিলো, হয়তো কাউকে পছন্দও করতো কিন্তু সব বাড়ির বড়দের কারনে শেষ হয়ে গেল। এখন সারাজীবন আপোষ কর।

“আমি দেখিনি কখনো রাত্রি বাসরে
অপরূপা কোন মুখ
সদা বিহ্বলিত সদা চঞ্চল
মুক্তিতে যার সুখ।”

রিদি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জিভ কাটলো। ইশশ… সন্ধ্যা সাতটা বাজে। হুড়মুড় করে কাপড় পাল্টাতে ছুটলো ও।

আজ ওদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হলো অথচ এখনও রেহান আর ওর সম্পর্কের গতি সেই প্রথম দিনের মতোই শীতল। আজ তাই আম্মা রেহানকে বলেছে যেভাবে পারে সময় বের করে, রিদিকে নিয়ে ঘুরতে যেতে।

রেহান এসে কল করতেই ফোনটা কেটে দিলো রিদি। ইচ্ছে করেই আজ ফ্লোরটাচ একটা জামা পরেছে ও। একা একা বাইক নিয়ে ঘোরার শখটা ও আজ ঘুচাবে রেহানের।

রিদিকে নিচে নামতে দেখেই কপাল কুঁচকালো রেহান। এই রকম কাপড় পরার শখ থাকলে বাসায় বসে সাজলেই হয়। এতো যখন তখন মোটরসাইকেলের চাকায় গিয়ে ঢুকবে। শেষে অ্যাক্সিডেন্ট হলে সব দোষ হবে রেহানের। মুখটা আগের চেয়ে আরও গম্ভীর হলো রেহানের।

“কোল্ড স্টোরেজের আলু একটা,” ভেঙচি কাটলো রিদি মনে মনে। মুখটা দেখো মনে হচ্ছে হুতুমপেঁচার ছা…

“কি বললে? ”

“কিছু নাতো, “রাগে রেহানের কানের মধ্যে একটা কামড় দিতে ইচ্ছে হলো রিদির। বাইকে বসার সময় রেহান, রিদিকে বলেছে পেছনের ক্যারিয়ারটা শক্ত করে ধরে বসতে। এই নিয়ম অবশ্য নতুন না, রেহানের মোটরসাইকেলে উঠার ক্ষেত্রে আগে থেকেই এই নিয়ম চালু। যার জন্য বড় দায়ে না পড়লে রিদি, রেহানের মোটরসাইকেলে কখনো উঠতো না। কিন্তু এখন কেন ও ক্যারিয়ার ধরে বসবে? ওদিকে পায়ের নতুন হাইহিল জোড়া রিদির খুলি খুলি করছে, না পেরে পিছন থেকে রেহানের শার্টটা খামচে ধরলো ও।

শার্ট খামচে ধরতেই জোরে ব্রেক কষলো রেহান।
“কি হচ্ছে?”

“আরে আমার হিল খুলে পড়ে যাচ্ছিলো তা না হলে।”

“তো এরকম হিল পরার কি দরকার ছিলো, কেডস পরে আসলেই তো হতো।”

এই রকম সেজে গুজে রিদি কেডস পরবে! রাগে রিদির ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি লাফিয়ে পড়ে রাস্তার উপর।

রিদির মুখটা বোধহয় সামনের লুকিং গ্লাসে দেখা যাচ্ছিল। স্বরটা তাই একটু নরম হলো রেহানের।

“একদম পড়ে যেতে থাকলে ধরা আলাদা কথা কিন্তু অপ্রয়োজনে যেন সেটা না হয়। ওভাবে পিছন থেকে শার্ট খামচে ধরলে সামনে টান লেগে বুকে শ্বাসকষ্ট হয়। ”

রেহানের কথার কোন উত্তর দিলো না রিদি।
ভারী এক ঢঙ চলছে গত একমাস ধরে… রিদিকে আগে তুই করে ডাকতো রেহান। কিন্তু এখন তুই ও বলেনা, তুমিও বলেনা। মনে হয় সিনেমার পর্দার ওপাশ থেকে গল্পের ধারা বিবরনি দিচ্ছে কেউ। রিদির মাঝামাঝে শখ করে রেহানের গলা ধরে ঝুলে হ্যাগো শুনছো বলে ঝুলে পড়ে। কি এক আজব বরফের সাথে বিয়ে হলো ওর। রিদির বান্ধবী নিশাত উল্টো ওকে নিয়ে মশকরা করেছে যে, “তুই তাহলে এতোদিন রেহান ভাইয়ের সাথে প্রেম করতি? এইজন্য বেচারা বিয়ে না করে বসেছিলো… অথচ আমার আপু উনার জন্য কি পাগলটাই না ছিলো।”

প্রেম না হাতি…. প্রেমের ‘প’ টাও যদি ওই বুড়োখোকাটা জানতো। দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে রিদি,” তোর বোন অনেক লাকি যে অমন হার্টলেস লোকের পাল্লায় পড়েনি।”

“কেন রে… এমন কথা কেন বলছিস? রেহান ভাই কত ভালো একটা মানুষ।”

“হমমম… কিছু না… এমনি।” রিদি হেসে পাশ কাটিয়েছে নিশাতের প্রশ্নের।

“আমরা কোথায় খাবো? মা রাতের খাবার খেতে বলেছে। ” হুট করে রাস্তার একপাশে মোটরসাইকেলটা দাড় করাল রেহান। মা ওদের রাতের খাবার বাইরে করতে বলেছে, কিন্তু রিদি বাইরে আসলে বেশি বার্গার খায় আর বার্গার আজকাল ফুটপাথেও বিক্রি হয় কিন্তু রিদিকে নিয়ে এখন যেখানে সেখানে বসাও যাবেনা। অনেক পরিচিত কলিগ চলা ফেরা করে এদিক দিয়ে।

“তোমার মাথায়,” মনে মনে রেহানের পিন্ডি চটকালো রিদি। এতোদিন পর বাইরে নিয়ে এসে নতুন বৌকে কেউ এগুলো জিজ্ঞেস করে! আর এমন ভাবে কথা বলছে যেন দুনিয়ার কোন রেস্টুরেন্ট তিনি চেনেন না।

শেষ পর্যন্ত একটা মাঝারি গোছের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঢুকলো ওরা। নানা রঙের আবছা আলোর সাথে, চামচের টুংটং শব্দ কিছুটা হলেও ওদের মাঝে রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরী করেছিল। তার রেশ ধরেই বাড়ি ফিরবার পথে একটু আধটু গুনগুন করছিলো রিদি।

হঠাৎ করেই বাইকটা থামালো রোহান। দ্রুতহাতে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলো।

“হ্যাঁ, মুনিয়া বলো। আচ্ছা দিয়ে দিব, তুমি নাম্বারটা কাইন্ডলি আমাকে মেসেজ কর। কি নাম? আচ্ছা.. আচ্ছা.. তাহলে তুমি বলো আমি লিখে নিচ্ছি।”

নিজের বুকপকেট হাতড়ে একটা কলম বের করলো রেহান কিন্তু লেখার মতো জুৎসই কিছু খুঁজে পেলোনা। কাগজের খোঁজে আবারো পকেটে খুঁজতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই রিদি হাতটা বেশ আয়েশ করে বাড়িয়ে দিল,” আপাতত এতেই লিখ।”

উপায় না পেয়ে রিদির হাতেই নাম্বার লিখতে লাগলো রেহান। কিন্তু কলমের নিপের ছোঁয়া লাগতেই রিদির ভীষন সুরসুরি লাগতে লাগলো।

“এতো নড়লে লিখবো কি করে?”

“আরে আমি কি ইচ্ছে করে করছি নাকি.. কি ভীষন সুরসুরি লাগছে.. মাগো।”

“রিদি প্লিজ।”

“আচ্ছা আচ্ছা, ” রিদি উড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। হাত সামনে এগিয়ে দেয়ায় ওর থুতনি এখন রেহানের বাম কাঁধের উপর। রিদির খুব ইচ্ছে হচ্ছিল রেহানকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পিছন থেকে কিন্তু তাতে হয়তো দেখা যাবে ওকে এড়াতে রাতে ড্রইংরুমের সোফায় গিয়ে ঘুমাল রেহান। একদিন এই কাজ হয়েছে অলরেডি, রিদি ঘুমের মধ্যে গড়িয়ে রেহানের হাতের উপর ঘুমিয়েছিলো… ব্যাস, সাধুবাবা ইজ্জত নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর এখন তো রেহান নিজে হাত চেপে ধরে লিখছে, রিদি অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামালো।

হেলমেটটা না থাকলে রিদি এখন কি সুন্দর রেহানের চুলের ঘ্রানটা পেত। কিপটুস লোক সেটাও প্যাকেট করে রেখে দিয়েছে।

“লেখাটা যেন না মোছে একটু কেয়ারফুল হয়ে বসতে হবে।”

“আচ্ছা, আমি তাহলে তোমার বাম কাঁধটা ধরে বসি তাহলে ডান হাতটা কোথাও ঘষা খাবেনা, লেখাটাও মুছে যাবার সম্ভাবনা নেই।”

“না না তার প্রয়োজন নেই।” রেহান দ্রুত মোটরসাইকেল স্টার্ট করলো।

রেহানের কথায় রিদি পিছনে বসে অভিমানে মুখ ফুলালো। সব দোষ ওর, ওই বেহায়া একটা মেয়ে। সেই জন্য শরম লজ্জার মাথা খেয়ে ওই বারবার রেহানের কাছে যায় একটু মনযোগ পাবার আশায় আর রেহান ওর দিকে ভালো করে তাকিয়েও দেখেনা।

“আমি কি করা উচিত?” খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে তারাদের প্রশ্ন করে রেহান।

আজকাল কেন যেন আবার তারা দেখতে ভালো লাগে ওর আগের মতো , বৃষ্টির রিমঝিম কান পেতে শুনতে ইচ্ছে হয়, আনমনা হাতটা অজান্তেই নিষিদ্ধ নামটা বইয়ের পাতায় বার বার লিখে ফেলে। উহহ… এই রিদিটা এসে সব গোলমাল করে দিয়েছে ওর। বড্ড অসহায় লাগে রেহানের। বাবা একদমই ঠিক করেনি ওর সাথে রিদির বিয়ে দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন যেন কোন সিদ্ধান্তেই আসতে পারেনা ও।

“তবে আজ কেন এতো ভয়?
কিছুদূর পথ চলতে গিয়ে
আবরো ফিরতে হয়। ”

“রিদি কাছাকাছি আসলেই আমার আজকাল এমন হয় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। আমি যখন ওর হাত ধরে লিখছিলাম তখন আমার হাত এমন কাঁপছিলো যে একই সংখ্যা ভুলে দুবার লিখেছি। মুনিয়াকে ফোন করে সেটা আবার আমার ঠিক করতে হয়েছে।আচ্ছা আমার কি একবার রিদিকে জিজ্ঞেস করা উচিত রিদি আমাকে স্বামী হিসেবে ভালোবাসতে পারবে কিনা?” নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে রেহান। কিন্তু পরক্ষনেই সেটা আবার নাকচ করে দেয় সে। ভালোবাসা কি আর জোর করে আদায় করার জিনিস। পরিস্থিতির চাপে পড়ে রিদিও ওর মতো বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। তা না হলে ওর মতো এতো বয়স্ক মানুষকে বিয়ে করে বাইশের কোন মেয়ে?

মাথার উপরের চাঁদটা তখন পুরো গোল হয়ে এসেছে.. সোনালী জোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে কালচে নীল আকাশটা।

“আকাশ আমার সীমাহীন নয়
পিছুটান আছে ঘরে,
মেঘের মিনারে মনটা আমার
শুধু তোকেই কামনা করে।”

চুরি করে রেহানের চুল রঙ করাটা জানালায় দাড়িয়ে দেখে ফেললো রিদি। ছত্রিশ চলছে রেহানের, জুলফিতে কিছু কিছু চুল ভালই পাকা ধরেছে।

শুক্রবার সকালের চা টা নাস্তা খাওয়ার একটু পরে খায় রেহান। সেটা দিতে এসে দেখে রেহান এক হাত দিয়ে চুলে রঙ দিচ্ছে আর আরেক হাতে মোবাইল। মুনিয়া নামের মেয়েটার সাথে কি যেন কথা বলছে….. ইহ মুখে দেখো কি মধু মাখানো হাসি, ভিতরটা জ্বলে গেলো রিদির।

“ও তাহলে মনে মনে ওই মুনিয়া নামের মেয়েটার জন্য এতো সাজগোজ, এদিকে আমার দিকে চোখ তুলেও তাকায় না,”চোখের কোন বেয়ে টুপটাপ বৃষ্টির ঢল নামে রিদির।

দুম করে শব্দ শুনে মেঝেতে তাকাতেই চোখ কপালে উঠলো রেহানের। ওর চুলে দেয়ার রঙটা মেঝেতে ছড়িয়ে একাকার হয়ে আছে। থমথমে মুখে রিদির দিকে মুখ তুলে তাকাতেই বড়সর একটা ধাক্কা খেল রেহান, কপালটা কুঁচকে গেলো। একই মুখে মানুষের এতো রকম অনুভূতি হয় কি করে? রিদির মুখে তখন অভিমান, অবিশ্বাস, দুঃখ, রাগ আর কান্না, কিন্তু পানির কান্না নয়…রিদির চোখ দিয়ে তখন আগুন ঝরছে। রেহান ঠিক বুঝে উঠতে পারলনা রিদির এরকম আচরনের কারনটা কি? রিদিকে যে কেউ এককথায় ভদ্র মেয়ে বলবে কিন্তু এখন তো একদম জাত কেউটের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।

রঙের বাটিটা একটানে মাটিতে ফেলে দিয়েছে রিদি, আরেক হাতে গরম চা… সেটা থেকে অল্প অল্প ধোঁয়া উঠছে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here