সম্পর্কের_বাঁধন
পর্ব০২
লেখাঃনীল কাব্য
“– আমি নিরা কে ভালোবাসতাম আর এখনও ভালোবাসি। আমি এটা বলবো না, আমি তোমাকে কোনো দিন স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমাকে স্ত্রীর
মর্যাদা+অধিকার দেওয়া আমার কর্তব্য। কিন্তু এটা বলে রাখি আমি কোনো দিন তোমাকে নিরার জায়গা দিতে পারবো না। নিরার মত করে ভালোবাসতে ও পারবো না।
।
“– উনার একথা শুনে বুকের মাঝে মুচড় দিয়ে উঠলো। কিন্তু কেন তা জানি না। আমি তো এ বিয়েতে রাজি ছিলাম না। তাহলে উনি আমাকে ভালোবাসেন না এটা শুনে আমার এমন লাগছে কেন?
আমি উনাকে ভালো করে চিনি না জানি না আজকের আগে কখনও উনাকে দেখিনি তাহলে উনি আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক তাতে আমার কি?
আচ্ছা সত্যি ই কি আমার কিছু না। উনি আমার স্বামী যেভাবেই হোক। এখন আমি উনার স্ত্রী। পৃথিবীর প্রতি টা মেয়েই চায় তার স্বামী যেন তাঁকেই সব থেকে বেশি ভালোবাসে। সব মেয়েরা তার স্বামীর থেকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা আশা করে।
আমি ও তা ই চাইতাম। ভাবতাম আল্লাহ আমাকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে, তাই মনে হয় স্বামীর ভালোবাসা দ্বিগুণ করে দিয়ে আমার সব না পাওয়া গুলো মিটিয়ে দিবে।
সবাই যেমন টা চায় সব সময় তেমনটা না ও পেতে পারে। সব চাওয়া পাওয়া যদি পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে মানুষের আর কিছু চাওয়ার থাকবে না। থাকবে না না পাওয়ার কষ্ট। আর তাই হয়ত কিছু কিছু মানুষের বেঁচে থাকতে সব আশা পূরণ হয়না। খুব কম মানুষের ই জীবিত অবস্থায় সব আশা পূরণ হয়।
বিয়ের প্রথম রাতেই উনি বলে দিলেন, উনি আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না। এটা শুনে আমার সত্যি ই খারাপ লাগলো। কিন্তু এই খারাপ লাগাটা আমি প্রকাশ করতে পারলাম না।
আদিবার একটা বদঅভ্যাস হলো সে মাঝে মাঝেই নিজের সাথে কথা বলতে বলতে বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যায়। ডুবে যায় ভাবনার গভীর অতলে। মেয়েদের সবচেয়ে কাছে মানুষ টা হলো তার মা। মায়ের থেকে ভালো বন্ধু এ পৃথিবীতে আর একজন হয়না। সব ধরনের সুখ দুঃখ হাসি কান্না মাখা মুহূর্ত গুলো মায়ের সাথে ভাগ করা যায় যা আর অন্য কারো সাথে ভাগ করা যায় না। আদিবা তো ছোট থেকে তার মা’কে কাছে পায়নি। তাই ও নিজের সাথেই নিজের সুখ দুঃখ গুলো কে ভাগ করে নিয়েছে।
আদিলের কথায় আদিবা তার নিজের জগৎ থেকে বের হয়ে বাস্তব জগতে ফিরে আসে।
আদিল আবার ও বলতে লাগলো।
।
“– আমার মেয়েটা এখনও অনেক ছোট। জন্মের পর থেকেই অন্তীলা ওর মায়ের ভালোবাসা, আদর,স্নেহ মমতা কিছুই পায়নি। আমি ওর কথা ভেবেই আবার দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছি। তুমি যদি ওকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতে পারো তাহলে আমি সারা জীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। তুমি ওকে কোনো দিন ও সৎ বলে মনে করবে না। এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ। আমি জানি তুমি নিজেও এখন অনেক ছোট। বয়স খুবই কম বাস্তবতার সাথে এখনও মানিয়ে নিতে শিখে ওঠো নি। এখন একটা বাচ্চার দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে না।
আদিল যেন কি বলতে যেয়ে ও বললো না। কিছু একটা বলতে বলতে থেমে গেল। আদিবা আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে আদিল কি বলবে তা শুনার জন্য। আদিল কিছুক্ষন চুপ থেকে
।
“– আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে, আমার বাচ্চার মা হয়ে তোমার সারাটা জীবন কাটাতে চাও?
দেখো আমি কেমন মানুষ! তোমাকে কতো কথা বলে ফেললাম। কিন্তু তোমার থেকে তোমার মতামত টা ই জানতে চাইলাম না। অবশ্য তোমার মতামত টা বিয়ের আগেই জানা উচিত ছিল। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে। পরেও তুমি যদি এই বিয়েতে খুশি না হও,মন থেকে এই সম্পর্ক মেনে নিতে না পারো। তাহলে আমি তোমাকে এ বিয়ে থেকে মুক্ত করে দিব। তুমি চাইলে আমি তোমাকে ডিভোর্স
অন্তীলা ঘুমের মাঝে একটু নড়ে উঠলো। আদিবা আদিল কে কথা টা বলে শেষ করার সুযোগ না দিয়ে।তার আগেই তারাতারি করে বলে উঠলো
।
“– আপনি একটু চুপ করবেন? দেখলেন তো আপনার কথায় আমার মেয়েটা জেগে উঠছে।
আদিল আদিবার থেকে এমন কথা শুনার জন্য একটু ও প্রস্তুত ছিল না। আদিলের মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আদিবার এমন কথা শুনে আদিল বড় সরো একটা ধাক্কা খেয়েছে।
।
“– তোমার মেয়ে?
।
“– হুম।
।
আদিবা আদিলের দিকে না তাকিয়ে নিচু হয়ে অন্তীলার দিকে ঝুকে। অন্তীলা কে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আদিল আর কিছু বললো না। আদিলের মুখে একটা হাসির অস্পষ্ট রেখা ফুটে উঠেছে। এই হাসি টা বড় একটা প্রপ্তি পাওয়ার হাসি বলে মনে হচ্ছে। আদিল বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেল। আদিবা অন্তীলার পাশে শুয়ে পড়লো।
দুজনেই ঘুমোবার চেষ্টা করছে কিন্তু কারো চোখেই চোখ আসছে না। আজ মনে হয় আদিবা আর আদিলের সাথে ঘুম লোকচুরি খেলছে। কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। আদিবা বেড থেকে উঠে আদিলের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আদিল আদিবা কে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসলো।
।
“– কিছু লাগবে, নাকি কিছু বলবে?
।
“– আপনার কাছে একটা জিনিস চাইলে দিবেন কি?
।
“– আমার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু থাকলে। আমি আপনাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিব না।
।
“– অন্তীলা কে চিরদিনের জন্য আমাকে দিয়ে দিবেন?
।
“– ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।
।
“– আমি চিরদিনের জন্য অন্তীলা কে আমার মেয়ে হিসেবে চাই। ওর সৎ মা হয়ে না ওর নিজের আপন মা হয়ে ওকে ভালোবাসা, আদর,যত্ন দিয়ে লালন পালন করে বড় করে তুলতে চাই।
আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ, আপনি কোনো দিন ও অন্তীলা কে এটা জানতে দিবেন না। আমি যে ওর নিজের মা না।
রাখবেন আমার এই কথা টা??
কথা টা শেষ করার সাথে সাথেই আদিবার দুচোখ বেয়ে নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আদিব অবাক দৃষ্টি নিয়ে আদিবা কে চেয়ে দেখছে। আদিল কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এতো কম বয়সী একটা মেয়ে আদিলের পরিস্থিতি টা এতো সহজে এতো কম সময়ের মধ্যে ই বুঝে গেল?
।
“– যখন তুমি তিন বার কবুল বলে আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিছো, তখন থেকেই অন্তীলা তোমার মেয়ে হয়ে গেছে। যখন তুমি প্রথম বার তোমার দু’হাত মেলে অন্তীলা কে তোমার কোলে তুলে নিছো তখন থেকেই তুমি ওর মা হয়ে গেছো। যে মুহূর্তে অন্তীলা কে দেখে তোমার মনে ওর জন্য মায়া জন্মেছে সেই মুহূর্তে ই তুমি ওর মা হয়ে গেছো। অন্তীলা ঘুমের ঘোরে নড়ে উঠলে যখন তুমি ওকে তোমার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছো, তখনই তুমি ওর মা হয়ে গেছো। অন্তীলা যখন ভয় পেয়ে ওর আঙুল দিয়ে তোমার আঙুল ধরেছে তখনই ও তোমাকে মা বলে মেনে নিয়েছে।
দুজনেই নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। আদিবা কাঁদছে, আজ সে তার আসল ঠিকানা পেয়ে গেছে। আর আদিল কাঁদছে সে তার মেয়ের জন্য এমন একজন কে খুঁজে পেয়েছে, যে কোনো দিন তার মেয়েকে মায়ের অভাব বুঝতে দিবে না।
.
চলবে..