সম্পর্কের_বাঁধন পর্ব০৪ এবং শেষ পর্ব

0
3775

সম্পর্কের_বাঁধন
পর্ব০৪ এবং শেষ পর্ব
লেখা: নীল কাব্য

আদিবা কেঁদে যাচ্ছে আদিল আদিবার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে আদিবার হিচকি উঠে গেল। আদিল দু’পা সামনে এগিয়ে আদিবার একটু কাছে এসে আদিবার সামনে দাঁড়ালো। এই প্রথম আদিল আদিবার এতো টা কাছে এসেছে। আদিবা কে এই প্রথম এতো কাছ থেকে দেখছে । আদিবা অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার কারনে একটু কান্না করাতেই নাকের ডগা ও গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। বড্ড বেশি মায়াবী লাগছে আজ আদিবা কে। কান্না করলেও যে মেয়েদেরকে এতো টা মায়াবী লাগে তা আদিলের জানা ছিল না। আদিল আদিবার মুখ একটু উঁচু করে, আদিবার চোখ থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে দিল। আদিলের স্পর্শ পেয়ে আদিবা ভেতর থেকে কেঁপে উঠলো। আদিবা অন্য রকম এক অনুভূতির ছোঁয়া পেল। আট মাসে আজ প্রথম বারের জন্য আদিল আদিবা কে স্পর্শ করলো।
“– কি হয়েছে এভাবে কাঁদছো কেন?
দেখো তো কান্না করে নাক মুখ ফুলিয়ে ফেলছো।
আদিলের কথা শুনে আদিবার কান্নার বেগ আগে থেকে একটু বেড়ে গেল।
“– আমি তোমার কষ্ট টা একটু হলেও বুঝতে পারছি। প্লিজ তুমি কান্না করো না। তুমি এই জন্য কষ্ট পাচ্ছো, কারণ তোমার মা কোনো দিনও তোমাকে নিজের মেয়ে মনে করে বুকে টেনে নেয়নি। এর জন্য তুমি কষ্ট পেও না। সবাই সব কিছুর মূল্য দিতে জানে না। তোমার মা একদিন না একদিন ঠিকই উনার ভুল টা বুঝতে পারবেন। আর সেদিন তিনি নিজে তোমার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট পাবেন। যেদিন তোমার মা উনার ভুলের জন্যে অনুতপ্ত হবেন ঐ দিন ঠিকই তোমার কাছে এসে তোমার কাছে হ্মমা চেয়ে নিজে থেকে তোমাকে বুকে টেনে নিবেন। আদিবা কিছু না বলে চুপ করে আদিলের সব গুলো কথা শুনলো। এখন আদিবার কান্না অনেকটা থেমে গেছে। আদিল কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভেবে, ওর আনা শিউলি ফুলের মালা টা ড্রেসিনটেবিলের উপর থেকে এনে আদিবার সামনে এগিয়ে দিয়ে..
“– এই মালা টা তোমার জন্য আনছিলাম।
আদিবা চোখ বড় বড় করে আদিলের দিকে তাকালো। আদিবা আদিল কে এমন ভাবে দেখছে, যেন আজ প্রথম সে কোনো অদ্ভুত রকমের কিছু একটা দেখছে। আদিল মালা টা আদিবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল। আদিবা মালা টা হাতে নিয়ে এখনও ঠিক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে আদিবা কে এমন ভাবে দেখে একটু জোরেই বললো।
“– খুব খিদে পেয়েছে। খাবার দিবে না নাকি?
এটা বলে আদিল রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আদিবার যেন এসব কিছু ই বিশ্বাস হচ্ছে না। আদিল নিজের হাতে আদিবা কে শিউলির মালা টা দিল এটা আদিবা ভাবতেই পারছে না।
আদিল এখন অফিস থেকে ফেরার সময় মাঝে মাঝেই শিউলি ফুলের মালা নিয়ে আসে।এতো দিনে আদিল এটা জানতে পারছে শিউলি ফুল আদিবার পছন্দের ফুল। আদিল মালা নিয়ে আসে ঠিকই কিন্তু কোনো দিন আদিবার হাতে দেয়নি। মালাটা এনে টেবিলের উপরে নয়তো এখানে সেখানে রেখে দেয়। আদিবা কে এটা ও বলে না যে “” তোমার জন্য এনেছি “” থাক এ নিয়ে আদিবার কোনো অভিযোগ নেই। আদিল যে মালা গুলো আদিবার জন্য আনে এটা আদিবা জানে। আদিল আদিবার পছন্দের ফুল আদিবার জন্যে আনে এটাই আদিবার কাছে অনেক।
আদিলের আদিবার জন্যে মালা আনার পিছনে ও একটা কারণ আছে
একদিন……….
“– আচ্ছা আমি কি সারা জীবন অন্তীলার মা হয়েই থেকে যাবো। কখনও আপনার স্ত্রী হয়ে উঠতে পারবো না।
“– তুমি তো আমার স্ত্রী ই।
“– হুম সেটা তো শুধু মুখে মুখে। আর সামাজের মানুষ গুলোর সামনে। আপনি তো মন থেকে কখনও আমাকে আপনার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেন নি।
“– হঠাৎ করে এসব বলছো কেন?
“– আমি তো মন থেকে অন্তীলা কে আমার মেয়ে আর আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। তাহলে আপনি কেন পারছেন না। আমাদের এই সম্পর্ক টা কে মন থেকে স্বীকার করতে?
আমি তো আপনার কাছে বেশি কিছু চাই না। শুধু একটু ভালোবাসা চাই। যে ভালোবাসা প্রত্যেক টা স্ত্রী তার স্বামীর থেকে চেয়ে থাকে। আমি কি আপনাকে কখনও বলছি, আপনি নিরা আপুকে ভুলে যান। বা আমাকে নিরা আপুর জায়গায় বসান। আমি নিজেও চাই না আপনি নিরা আপুকে ভুলে যান বা আমাকে আপুর জায়গায় বসান।আমি শুধু চাই আপনি আমাকে একটু ভালোবাসুন। আপনার মনে ঘরে আমাকে একটু জায়গা দিন। প্রথম ভালোবাসা কখনও ভুলা যায় না এটা আমি আমার বাবার থেকে জেনেছি। বাবা এখনও মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে করে আড়ালে চোখের পানি ফেলে। আপনি নিরা আপুকে যতটা ভালোবাসেন আমাকে ততটা ভালোবাসতে হবে না। সব সময়ই আমার চাওয়া খুব কম তাই আপনি আমাকে খুব কম ভালোবাসা ই দিয়েন। আমি অন্তীলর মা হবার পাশাপাশি আপনার স্ত্রী হয়েও উঠতে চাই।
এর পর থেকেই আদিল একটু একটু করে আদিবার সব কিছুতেই খেয়াল রাখতে শুরু করে।
প্রায় অনেক মাস পর,,,,,,
স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে আদিবার দিন গুলো খুব সুখেই কাটছে। অন্তীলা আদিবা কে মা বলে ডাকতে পারে। আদিবা কে অনেক বার মা বলে ডেকেছে কিন্তু আদিল কে এখনও বাবা বলে ডাকে নি।এর জন্য আদিলের মা মেয়ে দুজনের উপর ই অভিমান। অন্তীলা নাকি বাবার থেকে মা’কে বেশি ভালোবাসে।
আজ সকাল থেকেই অন্তীলার জ্বর। বিকেল হয়ে এখন সন্ধ্যা হবে হবে এখনও অন্তীলার জ্বর করছে না। আদিবা খুব ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ করে এমন জ্বর হলো কেন। আদিল অফিসে আদিবা আদিল কে ফোন দিলো।
“– হ্যালো কোথায় তুমি?
“– এই তো বাসায় আসার জন্য অফিস থেকে বের হচ্ছি।
“– একটু তাড়াতাড়ি আসো। অন্তীলার খুব জ্বর। আমার অনেক ভয় করছে।
“– আচ্ছা আমি আসছি।
আদিল বাসায় এসে দেখে আদিবা অন্তীলার মাথায় জলপট্টি করে দিচ্ছে।
“– কখন থেকে জ্বর আসছে?
“– তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার একটু পর থেকেই। কি হলো আমার মেয়ে টার একটু দেখো না প্লিজ। ওর কিছু হলে আমি বাঁচব না।
“– পাগলামি করো না। কিছু হবে না ওর। একটু জ্বর আসছে ডক্টর দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে।
“– একটু জ্বর আসছে? জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না আর তুমি বলছো কিছু হবে না।
“– আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। তুমি এখন একটু শান্ত হও।আমি ডক্টর কে কল করছি।
আদিল ডক্টর কে ফোন দিলে ডক্টর এসে অন্তীলা কে দেখে কিছু মেডিসিন দিয়ে যায়। আর রাতে মধ্যেই অন্তীলার জ্বর সেরে যায়।

পাঁচ বছর পর..
আজ অন্তীলার জন্ম দিন। চার বছর পার করে আজ পাঁচ বছরে পা দিলো অন্তীলা। বাসায় ছোট করে একটা পার্টি রাখা হয়েছিল। অন্তীলার সব ফ্রেন্ডরা আসছে। এখন পার্টি শেষ। অন্তীলা ওর ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে আদিবা আর আদিলের কাছে আসলো..

আদিল অন্তীলা কে কোলে নিয়ে
“– আমার ছোট মাম্মাম টার আজ পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেল।
“– আমি বড় হয়ে গেছি, তাই না পাপা?
অন্তীলার কথা শুনে আদিল হেসে দিয়ে
“– হুম আমার মাম্মাম টা বুড়ি হয়ে গেছে।
এই বলে আদিল অন্তীলার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিল।
“– পাপা আমাকে আদর দিছো। এবার আম্মু কে ও আদর দেও।
কি আর করার মেয়ের কথা তো শুনতেই হবে।আদিল আলতো করে আদিবার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।
“– পাপা, আম্মু কে আদর দিছো।এবার ভাইয়াকেও আদর দেও।তোমাকে সব বলে দিতে হয়। কিছু বুঝো না তুমি।
মেয়ের কথা শুনে আদিল মুখ গোমড়া করে
“– তোমার পাপা তো ছোট তাই কিছু বুঝে না।
আদিল আদিবার কাছে বসে। আদিবার পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
“– এই তো এবার হয়েছে।
আদিবা ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট। অন্তীলার মনে হয় ওর একটা ভাই হবে। আর তাই সব সময় ভাইয়া ভাইয়া করে।

?সমাপ্ত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here