ভালোবাসা বিনিময়,Part_02,03

0
1515

ভালোবাসা বিনিময়,Part_02,03
Nishi_khatun
Part_02

ঐশানী পাখি দুটির কাছে এগিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় সাইয়ান এসে ঐশানীর হাত ধরে সোজা রুমে এনে বারান্দার দরজা বন্ধ করে দেয়।

সাইয়ান রেগে জোড়ে ঐশানী কে ধমক দিয়ে বলে,”এই মেয়ে তোমাকে এতোটা সাহস কে দিয়েছে যে তুমি আমার কলিজার টুকরোদের কাছে গেছো।নেক্সট টাইম ভুল করেও ওদের সামনে যাবে না।”

এবার ঐশানী গলাটা একটু উঁচু করে বলে,”কেনো যাবো না?সারাদিন বাড়িতে আমি থাকবো!ওদের যত্ন নিবো গল্প করবো।তাতে আপনি বাধা দিতে পারবে না।”

সাইয়ান বলে,”একদম তর্ক করবা না।ওরা সব সময় আমার সাথে থাকে তুমি কখনো ওদের পাবে না।ওদের যত্ন নেওয়ার অধিকার শুধু মাত্র আমার কলিজার। ”

ঐশানী তাচ্ছিল্য দিয়ে বলে,”হ্যাঁ, একজন কে কলিজায় রেখে আর একজন কে বেডে স্থান দিয়েছেন। এটাই আপনার ভালোবাসা।”

সাইয়ান রেগে ঐশানীর খুব কাছে গিয়ে ওর মুখটা খুব শক্ত করে ধরে বলে,”তোমাকে বিয়ে করেছি সম্মান দিয়েছি।বিয়ে না করে কোনো বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াই নি।বিছানাতে রেখেছি নিজের কন্ট্রোল কখনো হারায় নি।আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক তোমার কোনোদিন ও হবে না।আমার শরীর মন দুটোই শুধু ওর।”

ঐশানী ব্যাথা কুঁকড়ে ওঠে,দুচোখ বেয়ে কষ্টের নোনাজল ঝড়তে থাকে।

সাইয়ান ঐশানী কে ছেড়ে দিয়ে সোজা ধাক্কা দিয়ে রুমের বাহিরে চলে যায়।

আচমকা এমন ধাক্কাতে তাল সামলাতে না পেরে ঐশানী মেঝেতে ধপাস করে পড়ে যায়।বেচারি হাত ও পায়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা পায়।

সাইয়ান রুম থেকে যাবার সময় দরজা খোঁলা রেখে যাবার কারণ সাইয়ানের বোন আরোভি এসে দেখে তার ভাবী মেঝেতে বসে আসে।

আরোভি তাড়াতাড়ি করে ওর ভাবীর কাছে এসে বলে,”আরে ভাবী আপনি মেঝেতে বসে কি করছেন? ”

ঐশানী সাইয়ানের রাগটা আরোভির উপর ঝাড়ে!বলে,”দেখছো না মেঝের সাথে রোমান্স করছি।তোমার ভাইয়ের তো রোমান্স করার মানুষের অভাব নেই।ঘরে বউ বাহিরে প্রেমিকা।”

আরোভি বলে,”ভাবী বিয়ের আগের কথা বাদ দাও।ওটা ভাইয়ার অতীত ছিলো।আজ ভাইয়ার বর্তমান তুমি।তাই ওসব প্রেম পিরিতির কথা বাদ দিয়ে নিজের স্বামী কে আঁচলে বাঁধতে শেখো।”

ঐশানী আরোভির কথা শুনে একদম চুপচাপ বসে আছে।ঐশানী মনে মনে বলে,”কি মেয়েরে ভাইয়ের গুণগান শুরু করছে।কেন রে ভাই আমার কষ্টটা বুঝতে বুঝি কষ্ট লাগে?”

আরোভি ভাবে ভাবী হয়তো তাকে চিনতে পারে নাই।
তাই সে ঐশানীর পাশে মেঝেতে বসে বলে,”ভাবী আমি তোমার ননদ।সাইয়ান ভাইয়ের একমাত্র বোন।আমরা দুই ভাই এক বোন।আমি যতোটা মিষ্টি তোমার দেবর কিন্তু ততোটাই তেঁতো বলে হেসে উঠলো।”

ঐশানী অবাক চোখে আরোভির হাসি মুখটা দেখছে।মেয়েটা খুব সুন্দরি।হাসলে গালে টোল পড়ে।চোখ দুটো অনেকটা বড় বড় যে কেউ এই চোখের মায়াতে পড়তে বাধ্য।মেয়েটা অনেকটা স্মার্ট। পুরো পরীর রাজ্যের রাজকন্যা।

আরোভি ঐশানীর হাত ধরতেই ঐশানী নিজের খেয়ালের দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে এসে বলে,”আরোভি তুমি অনেক সুন্দর। যে কোনো পুরুষমানুষ তোমার প্রেমে পরতে বাধ্য।”

আরোভি একটা তাচ্ছিল্যময় হাসি দিয়ে বলে,”আমি যার জন্য পাগল সে তো কোনো কিছুই বোঝে না।তাতে অন্য পুরুষেরা পাগল হলেও আমার কিছু আসে যায় না।”

ঐশানী ভ্রু কুঁচকে বলে,”এই তোমার মতো এতো সুন্দরি মেয়ের কোনো প্রেমিক নেই?এ কথা আমি বিশ্বাস করবো না।”

আরোভি বলে,”ভাবী এসব কথা বাদ দাও।এসব নিয়ে না হয় পরে কথা বলা যাবে।এখন তাড়াতাড়ি নিচে চলো নাস্তা করবে।তারপর তোমাকে সাজাতে পার্লার থেকে মানুষেরা আসবে।”

ঐশানী আরোভির সাথে চুপচাপ মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচে চলে আসে।
ড্রাইনিং টেবিলে বসে ঐশানী তো অবাক কেউ নেই খাবার টেবিলে এটা কেমন কথা?

আরোভি ঐশানী কে বলে,”ভাবী তুমি নতুন মানুষ সবার সামনে খেতে যদি লজ্জা পাও তাই সবার খাওয়া শেষে তোমাাকে এনেছি এবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”

ঐশানী আর কোনো কিছু না ভেবে খাবার খেতে শুরু করে।খাবার গুলো গলা দিয়ে কেনো জানি নামতে চাইছিল না তারপর ও জোর করে গলার নিচে নামিয়েছে।

এরপর আরোভি ঐশানী কে নিয়ে উপরে সাইয়ানের রুমে চলে আসে।আরোভি চলে যাবার সময় ঐশানী আরোভি কে ডাক দিয়ে বলে,”তুমি কী ফ্রী আছো?”

আরোভি পেছন ফিরে বলে,”ভাবী কিছু বলবেন? ”

ঐশানী বলে,”এতোবড় বাড়িতে শুধু কি আমরা তিন জন?”

আরোভি ঐশানীর প্রশ্নটা বুঝতে পেরে বলে,”ভাবী আবার আব্বু অসুস্থ সে হসপিটালের।আজকে সে তোমাদের রিসিপশনের অনুষ্ঠানের আগেই তাকে বাসায় আনা হবে।আর যারা বাড়িতে আছে তারা ব্যস্ত। সময় হলে সবার সাথে পরিচিত হবে।এখন তোমাকে এনারা সাজাবে তুমি সেজেগুজে রেডি হও বলে চলে যায়।”

ঐশানী কে পার্লারের মেয়েরা সাজাতে শুরু করে দেয়।ঐশানী অবাক হয়ে ভাবতে থাকে আল্লাহ এখানে হচ্ছেটা কি?যে ছেলের বাবা অসুস্থ সে ছেলে এতো ধুমধাম করে বিয়ে করে কি করে?আর বাড়িতে নতুন বউয়ের সাথে বাকীরা দেখা করার প্রয়োজন মনে করে না?আর সাইয়ান বা কোথায়? সেই সকালের পর থেকে তাকে তো দেখছি না।হয়তো চলেগেছে সে তার প্রিয়তমার কাছে।হ্যাঁ যাবেই তো।এতোবছরের প্রেমিকা তাকে কী ভোলা যায়।বেয়াদব জামাই ঘরে বউ রেখে বাহিরে প্রেম করে।আমি তো সাইয়ানের পার্মানেন্ট বউ না।দুজনি স্বার্থপর।

পার্লারের মেয়েরা ঐশানী কে সাজিয়ে রেখে চলে যায়।
ঐশানী সাত পাঁচ ভাবতে এতোটা ব্যস্ত ছিলো যে সে কোন ড্রেস পড়ছে কেমন মেকআপ করছো কোনো কিছুই দেখে নাই।

রুমে থাকা বড় আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ঐশানী থমকে যায়।নিজেকে নিজে চিনতে পারছে না।এটা কি আমি না অন্য কেউ?

আয়নার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে ঐশানী এমন সময় সাইয়ান রুমের ভেতর প্রবেশ করে আলমারির ভেতর থেকে নিজের ড্রস নিয়ে ঐশানীকে সে একটি বার না দেখে সোজা বাথরুমে চলে যায়।

সাইয়ান রেডি হয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে ঐশানী আয়নার দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে।
সাইয়ান এবার আয়নাতে দেখে ঐশানী কে একটা রয়েল ব্লু কালারের শাড়ি পড়ানো হয়েছে সাথে মাথায় গোল্ডেন হিজাব তার উপর ক্রীম কালারের ওড়না। গলায় সাদা স্টোনের বড় বড় মালা।দু হাত ভর্তি সেই স্টোনের চিকন চিকন অনেক গুলো চুড়ি।হাতে মেহেদী নেই তবে রং দিয়ে সুন্দর করে আলপনা করে দেওয়া আছে।মেকআপ খুব বেশি করে নাই তবে যা সাজ দিয়েছে তাতে পারফেক্ট লাগছে।

সাইয়ান নিজেকে নিজেই বলে,”আমার হৃদয়ের মাঝে যদি অন্য কারো বসবাস না হতো তাহলে হয়তো ঐশানীর এই সাজে আমি ফিদা হয়ে যেতাম।এর মতো মিষ্টি মেয়ের থেকে এক মূর্হত্ব দূরে থাকতাম না।তবে ঐ যে ভাগ্যের জন্য আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে দুটি অজানা মানুষ।

এবার ঐশানী একটু খেয়াল করে দেখে তার পাশে সাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে।ঐশানীর সাথে মেচিং করে সেও রয়েল ব্লু কালারে কোর্ট ভেতরে সাদা শার্ট, ব্লু প্যান্ট। চুল গুলো সুন্দর করে রাখা হাতে হাত ঘড়ি।একদম মিস্টার পারফেক্ট। তবে আফসোস সে পারফেক্ট হলেও লাভ নেই।এসব ভাবতেই ঐশানীর চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

সাইয়ানের চোখ এড়ায় নি বেপারটা। তাই সে ঐশানী কে ধমক দিয়ে বলে,”একগাদা টাকা খরচ করে মেকআপ করিয়েছি কি চোখের পানিতে নষ্ট করানোর জন্য।একটুপর আরোভি তোমাকে নিচে নিতে আসবে ওর সাথে চলে আসবা।নিচে এসে সব সময় হাসি মুখে থাকবে যদি কেউ কিছু বুঝতে পারে তাহলে তোমার কপালে কষ্ট আছে বলে চলে যায়।”

ঐশানী মুখ ভেঙ্গচি কেটে বলে,”সালা খচ্চর, বেয়াদব, উগান্ডার জামাই,হাড় কিপটে। সস্তার আটা ময়দা মাখিয়ে আমাকে কথা শোনানো হচ্ছে।আরে এর থেকে তো বিনা মেকআপে আমাকে দেখতে ভালো লাগে।এরা এতো মেকআপ করছে যে আমি নিজেকে চিনতে পারছি না।আরে বেডা দুই মিনিট পর যখন মুখ পানিতে ধৌত করবো তখন তোর সব টাকা তো সেই জলে যাবে। তখন আমিও দেখবো হুহু।আর কি বলে গেছো হাসি মুখে থাকবো?আরে আমার ঠোঁটের হাসিটা কে তো তুই বেডা খুন করছিস, এখন আবার মিথ্যা হাসি কেমন করে হাসবো আমি?”

একটু পর আরোভি ঐশানী কে নিয়ে যেতে আসে।আরোভি বলে,”ভাবী মাশাআল্লাহ তোমাকে সেই সুন্দর লাগছে। ভাইয়া তো আজ তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারবে না।”

ঐশানী মনে মনে বলে,”ঐ খচ্চরের চোখে অন্য কেউ আছে।আর আমিও চাইছি না সে আমার দিকে তাতাক। সে আমাক দিকে তাকালে আমার পুরো শরীর রাগে জ্বলতে শুরু করে দেয়।”

আরোভি বলে,”আরে ভাবী কোথায় হারিয়ে গেছো তুমি?”

ঐশানী -তোমার ভাইয়ার খেয়ালে।

আরোভি -বাব্বাহ্ কী ভালোবাসা তোমাদের।

ঐশানী আরোভির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আরোভি তাড়াতাড়ি ঐশানী কে বলে চলো ভাবী নিচে যাই আমরা।

ওদের বাড়ির বাহিরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।বাড়ির ভেতরে বর-বউ এর জন্য আলাদাভাবে রাজকীয় করে বসার ব্যবস্থা করা আছে।

চলবে………..

#ভালোবাসা_বিনিময়
#Nishi_khatun
#part_03

ঐশানীর সিঁড়ির দিকে তাকাতেই ওর শরীরের শিরা উপশিরা দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গরম রক্ত গুলো আস্তে আস্তে চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ বুঝি ওর নিশ্বাস আটকে রাখছে।ঐশানীর মনের ভেতরে সব কিছুতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।

সাইয়ান ঐশানীর দিকে তাকিয়ে বলে,”কি বেপার কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার?”

ঐশানী মাথা ঝাঁকিয়ে বলে না কোনো সমস্যা নেই।ঐশানী মাথা নিচু করে বসে থাকে।এখন ওর সাথে খুব খারাপ কিছু হবে যা সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই।

সাইয়ান আর ঐশানীর পাশেই আরোভি এসে বসে।আরোভি সামনে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আরে আবরাজ ভাইয়া!”

আরোভির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে ঐশানী আরো চমকে ওঠে।

আবরাজ সাইয়ান আর ঐশানীর সামনে এসে ওদের দুজনে সামনে একটা ফুলেরতোড়া দিয়ে বলে,”অভিনন্দন ভাইয়া ভাবী!”

আবরাজ এর মুখে ভাইয়া ভাবী ডাক শুনে ঐশানীর আর সাহস হচ্ছে না আবরাজ এর সামনে থাকার।

সাইয়ান ঐশানীকে নিজের অনেকটা কাছে এনে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,”ঐশানী এ হচ্ছে আবরাজ আমার খালাতো ভাই।আমার থেকে এক বছরের ছোট। আমাদের বিয়ের সময় থাকতে পারে নাই।ব্যবসার কাজে প্রচুর ব্যস্ত ছিলো।তাই বউভাতের অনুষ্ঠান মিছ করে নাই।”

আবরাজ ঐশানী কে উদ্দেশ্যে করে বলে,”ভাবী ভালো আছেন তো?আরে আমিও কেমন বোকার মতো প্রশ্ন করছি আমার এমন ফেমাচ ভাইকে বিয়ে করে আপনি ভালো থাকবেন না তা কি কখনো হতে পারে?”

ঐশানী অশ্রুসিক্ত নয়নে আবরাজের দিকে তাকিয়ে দেখে আবরাজের চোখটা লাল হয়ে আছে।ফর্শা মুখটা কেমন জানি বিষণ্ণ হয়ে গেছে।

আবরাজ ঐশানীর দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আরোভি কে বলে,”মাশাআল্লাহ আরোভি তোমাকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে।”

আরোভি আবরাজের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে জীবনে আরোভি দিকে ঠিক মতো তাকাইনি আজ সে তার প্রশংসা করছে তাও সবার সামনে ভাবা যায়।

আজ আরোভি ক্রীম কালারের শাড়ি পড়েছে।শাড়িতে ছোট ছোট স্টোনের ডিজাইন করা।দু হাত ভরা গোল্ডেন কালারের চুড়ি।সাথে সিম্পল মেকআপের সাথে হিজাব পড়া।

আরোভি দেখে আবরাজ একটা সাদা রঙ্গের পাঞ্জাবি পড়েছে।পাঞ্জাবির দুই হাতা ভাজ করে রাখা।চুল গুলো সুন্দর করে স্পাইক করে রাখা।আরোভি ছোট মোটো একটা ক্রাশ খায়।

আবরাজ আরোভি কে বলে,”এই আরোভি মনি মা কোথায়? আামাকে তার কাছে নিয়ে চলো!”

আরোভি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে আবরাজ কে সাথে করে ওর বাবা মার কাছে নিয়ে যায়।

আবরাজ ওর মনিমার রুমে আসতেই মনিমা কে জড়িয়ে ধরে।

আয়েশা বেগম আবরাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”আরে আবরাজ সোনা!তোমার কি হয়েছে?মন খারাপ? কেউ কিছু বলছে?”

আরোভি মনে মনে বলে,”আরে বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য আমি।আর আবরাজ ভাইয়াকে নিয়ে এমন ভাব করে সবাই মনে হয় সেই ছোট বাচ্চা হুহ।”

আবরাজ বলে,”না মনি মা আমার কিছু হয়নি।আসলে খালুজানের কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিল।বলে আয়েশা বেগম কে ছেড়ে দিয়ে বিছানাতে ঘুমন্ত সাইফুল খানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
আবরাজ মন খারাপ করে বলে,”এতো ভালো মানুসটা কে এমন অসুস্থ অবস্থায় কখনো দেখবো বলে ভাবতেই পারি নাই।খালুজানের এমন অবস্থা হলো কি করে মনি মা?”

আয়েশা বেগম বলে,”ঐ যে তুমি শেষবার আমাদের বাড়ি থেকে ব্যবসার কাজের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলে।তার কিছুদিন পর সে অফিসের সব কাজ শেষ করে অনেক রাতে বাড়িতে ফেরে।বাড়িতে এসেই সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।দ্রুত তাকে হসপিটালে নেওয়া হলে ডাক্তারা বলে উনি না কি অতিরিক্ত টেনশনের কারণে হার্ট এর্টাক করেছেন।তার অবস্থা এতো খারাপ ছিলো কি আর বলবো।তার বাঁচার কোনো আশায় ছিলো না বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে থাকে।”

আরোভি এসে তার মা কে জড়িয়ে ধরে বসে পড়ে।

আবরাজ বলে,”খালুজানের এতো খারাপ অবস্থার খবরটা আপনার কেউ আমাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না?”

আরোভি বলে,”বাবা জানাতে নিষেধ করছিল।সে বলেছিল আপনি যে কাজে গেছেন সে কাজ সম্পন্ন না করে আসলে না কি ব্যবসায় বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
তাই তার মতের উপর দিয়ে আর আমরা কেউ যায় নি।”

আবরাজ বলে,”এতো টেনশনের মধ্যে সাইয়ান ভাইয়ার বিয়ে করার কি দরকার ছিলো?”

আয়েশা বেগম বলে,”তোমার খালুজানের ইচ্ছাতে সাইয়ান বিয়ে করেছে।হাসপাতালে যখন অবস্থা খুব খারাপ ছিলো তখন সে সাইয়ান কে নিজের কাছে ডেকে এনে বলে বাবা তুই বিয়ে করে বাড়িতে একটা বউ নিয়ে আয়।মরার আগে না হয় তোর বউটা দেখে যায়।আর তোর বিয়ের পর না হয় আরোভির জন্য একটা ভালো দেখে ছেলে খুঁজি বিয়ে দিয়ে দিবি।বাবাকে খুশি করার জন্য এমন অবস্থার মধ্যে ছোটখাটো আয়োজন করে সাইয়ান বিয়েটা করে নেয়।”

আবরাজ বলে,”ওহ আপনাদের সবার নতুন বউয়ের সাথে কি আগে থেকে পরিচয় ছিলো?”

আরোভি বলে,”কী যে বলেন না ভাইয়া!ভাবীর সাথে এখনো বাড়ির কারো দেখা হয় নি।ভাইয়া কাল বিয়ের করে বউ নিয়ে আসছে।আজ তার বউভাতের অনুষ্ঠান। এতোবড় ফেমাচ সেলিব্রেটির বউভাতের অনুষ্ঠানের কতো প্রেস মিডিয়া বড় বড় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ আসবে বলে আজকে সকালে বাবাকে নিয়ে সবাই হসপিটাল থেকে আসছে।অনুষ্ঠান শেষে ভাবীর সাথে সবার পরিচয় করানো হবে।এখন তো এসব কিছু বাহিরের মানুষের সামনে করা সম্ভব নয়।”

আবরাজ বলে,”তা খালুজানের কী অবস্থা এখন?”

আয়েশা বেগম বলে,”এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো।তারপর ও ঘুমের মেডিসিন খেয়ে সে ঘুমিয়ে আছে।”

আবরাজ বলে,”আচ্ছা বাবা মা আসছেন। আমি তাদের কে আনতে যাচ্ছি!”

আবরাজ চলে যায়।আরোভি আবারো সাইয়ান আর ঐশানীর কাছে চলে আসে।এখানে এসে দেখে কী এক অবস্থা। প্রেসেন্ট লোকজন নবদম্পতি কে এতো এতো প্রশ্ন করছে তাদের ছবি তুলছে।কোনো কোনো চ্যালন তো এসব কিছু লাইভ ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করছে।

সাইয়ান এসব কিছুতে অভ্যস্ত। তবে ঐশানী তো সাধারণ একটা মেয়ে।এতো মানুষের সামনে কখনো আসে নাই।তারউপর এতো প্রেস- মিডিয়া এসব কিছু face করতে ওর কেমন জানি uncomfortable feel করছে।সাইয়ান ঐশানীর অবস্থা বুঝতে পারছে।তবে তার কিছু করার নেই।কারণ সাইয়ান চাইছে সারাদেশের মানুষের জানা উচিৎ সৈয়দ সাইয়ান খানের বউ কে!

প্রেসের মানুষেরা তো এদের বিয়ের নিউজ তেল মসলা দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলছে।

এক সাংবাদিক তো ঐশানীর সামনে সাইয়ান কে প্রশ্ন করে,”আপনার তো রিলেশন ছিলো।তাহলে হঠাৎ অন্য কাউকে বিয়ে করছেন কেনো?”

সাইয়ান বলে,”রিলেশন তো আপনার ও আছে?তাই বলে যার সাথে রিলেশন আছে তাকেই বিয়ে করবো এমন চুক্তিনামাতে সাইন করে রিলেশন করেছিলাম না কিন্তু! আমাদের মতো সেলেব্রিটি মানুষদের সাথে রিলেশন করার সৌভাগ্য যে ওর হয়েছিল তাই তো অনেক।&হ্যাঁ এরপর No more question please!এখন আমাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর দরকার।আপনাদের সবাই কে ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।বাহিরে খাবার ব্যবস্থা করা আছে প্লিজ সবাই সেখানে গিয়ে খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করুন।”

ঐশানী সাইয়ানের এমন কথা শুনে একদম তাল গাছের মাথা থেকে পড়ছে।আল্লাহ গো যে ছেলে এতোদিনের প্রেমের সম্পর্কের মূল্য দেয় না।সে আমাদের এই সম্পর্কের মূল্য দিবে এটা ভাবাটা উচিৎ নয়।

একটুপর সদর দরজার সামনে চোখ পড়তেই ঐশানী কান্না করে দেয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here