ভালোবাসা বিনিময়,part_04,05

0
1195

ভালোবাসা বিনিময়,part_04,05
Nishi_khatun
part_04

ঐশানী পারলে এখুনি ছুটে চলে যায় সাইয়ানের পাশ থেকে।তবে সে কাজ ইচ্ছা থাকলেও সে করতে পারছে না।সাইয়ান ঐশানীর হাত খুব শক্ত করে ধরে হাসি মুখে বসে আছে।

সাইয়ান আস্তে করে ঐশানী কে বলে,”একদম নেকামি করে কান্নাকাটি করবা না।সামনে প্রেসের লোকজন আছে।তুমি যদি নিজেকে সবার সামনে হাসির পাত্রী বানাতে চাও তাতে আমার সমস্যা নেই।এখন থেকে নিজের অনুভূতি গুলো সবার থেকে আড়ালে রাখতে শেখো ঐশানী। ”

ঐশানী সাইয়ানের এমন কথা শুনে প্রচুর পরিমাণে রেগে যায়।কেমন মানুষ! তার অনুভূতি বলে কিছু নেই।তবে সত্যি ঐশানী চাইছে না তার কোনো ভুল কাজের জন্য এখানে কোনো তামাশার সৃষ্টি হোক।

ঐশানী চুপচাপ ফোঁসফোঁস করতে থাকে।তাদের আশেপাশে থেকে প্রেস-মিডিয়ান লোকজন চলে যাওয়ার সাথে সাথে সাইয়ান ঐশানীর হাত ছেড়ে দেয়।

ঐশানী এক দৌড়ে তার বাবা আর ভাইয়ের কাছে চলে যায়।তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।ঐশানীর বাবা চিন্তিত হয়ে বলে,”আম্মাজান তোমার কোনে সমস্যা হচ্ছে এভাবে কান্নাকাটি করছো যে?”

ঐশানী বাবাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছতে থাকে তখন সাইয়ান এসে ঐশানীর বাবাকে সালাম দিয়ে বলে,”বাবা আপনাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?আসতে এতো দেড়ি করলেন কেনো?সকালে তো চলে আসার কথা ছিলো!”
একভাবে সব কথা বলে সাইয়ান থেকে যায় উওরের অপেক্ষায়।

ঐশানী তো পুরো শকড হয়ে আছে।সাইয়ানের মুখে বাবা ডাকা শুনে।আর কি খচ্চর আমার পরিবারের সাথে তাহলে যোগাযোগ আছে এই শুটকি মাছের।

এমন সময় ঐশানীর ছোট ভাই ঈশান বলে,”আসলে দুলাভাই আপনি তো জানেন আমি ডাক্তারি পরছি।আমার আজ ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছিলো।সেই ক্লাস শেষ করে বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বাবাকে সাথে করে এখানে আসছি।আমার দেড়ি হবে দেখে বাবাকে আগেই বলছিলাম এখানে আসতে তবে সে আমার সাথে আসবে বললে দেড়ি করে আসছে।”

সাইয়ান বলে, “আচ্ছা সমস্যা নেই।এখন আপনারা আসেন আমার পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।”

ঐশানী এবার হতবম্ভ হয়ে সাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আল্লাহ এই লোকটা তো দেখছি পুরোই মাকাল ফল।আমি বাড়ির বউ আমার সাথে তো কারো পরিচয় করিয়ে দিলো না?পরিচয় করিয়েছে প্রেসের লোকদের সাথে।বলছি যে তারা কী শ্বশুরবাড়ির মানুষ ছিলো।এই শয়তান লোকটা এখনো বলছে না আসো ঐশানী তোমার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আচ্ছা আমি এতো হাইপার কেনো হচ্ছি তার পরিবারের সবার সাথে দেখা করার জন্য।এই ঐশানী তুই ঠিক আছিস তো না কি পাবনাতে যাবার জন্য সিট বুকিং দিতে হবে।এসব কথা ঐশানী মনে মনে নিজের সাথে বলতে থাকে।

সাইয়ান আরোভি কে বলে ঐশানীর সাথে বউ আসনে বসে থাকতে।সে কিছু কাজ সম্পন্ন করে আসছে।

আরোভি হাসি মুখে ভাবীর পাসে বসে বলে,”ভাবী আমার বিয়াইটা কিন্তু সেই জোশ। অনেক কিউট আর মিষ্টি দেখতে।”

ঐশানী মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”হ্যাঁ, আমার ভাই অনেক সুন্দর। ভবিষ্যৎ ডাক্তার বলে কথা।”

আরোভি বলে,”তোমার ভাইয়ের জিএফ টিএফ আছে না কি ভাবী? ”

ঐশান এবার ভ্রু কুঁচকে বলে,”আরোভি তোমার বেপারটা কি গো?তুমি আমার ভাইয়ের এতো খোঁজ খবর নিচ্ছ কেনো?”

আরোভি একগাল হেসে বলে,”আরে ভাবী তুমি তো দেখছি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ।আমার একটা মাএ এতো সুন্দর বিয়াই।আমি যদি তার খোঁজখবর না রাখি কে রাখবে বলো।”

বলতেই আরোভি আর ঐশানী একসাথে হেসে ওঠে!

সাইয়ান শ্বশুর আর শালা কে সাথে করে তার বাবা মা’র রুমে নিয়ে আসে।

আয়েশা বেগম তার বিয়াই কে সালাম দিয়ে রুমে এসে বসার জন্য বলেন।এখন সাইয়ানের বাবার ঘুম ভেঙ্গে যাবার জন্য সে ঐশানীর বাবাকে তার কাছে এসে বসার জন্য বলে।

সাইফুল খান ঐশানীর বাবা আলীম রহমানের হাত ধরে বলে,”বিয়াই কিছু মনে করবেন না।আমি অসুস্থ হওয়ার জন্য আপনাদের খাতির যত্ন করতে পারছি না।এখনো আমার বউমার সাথে দেখাও করতে পারি নাই।”

আলীম রহমত বলে,”বিয়াই আপনি আগে সুস্থ হয়ে ওঠেন তারপর না হয়।সবাই মিলে একসাথে গল্প করা যাবে।”

সাইফুল খানের শরীর খারাপ করতে শুরু করে দেয়।তা দেখে সাইয়ান তাড়াতাড়ি তাদের নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে।
হসপিটাল থেকে একজন নার্স কে সাথে করে
আনছে।সেই নার্স এখন ওর বাবার মেডিসিন দিচ্ছে।

সাইয়ান বলে,”বাবা আমার দাদাভাই তো বাবার অসুস্থতার খবর শুনে মসজিদে আছে।উনি বলছেন যতোদিন না বাবা সুস্থ হয় ততোদিন সেখানে থাকবে বাড়িতে আসবেন না।দাদীমা ও সেই একি কাজ করছে।নিজেকে রুমে আড়াল করে নিয়েছে।সে ইবাদত করছে।বেশি দোয়া করছে বাবার জন্য।তাই দুঃখীত তাদের সাথে আপনাদের দেখা করাতে পারছি না।

আলীম রহমান বলে,”আরে বাবাজী কি যে বলেন!বাড়ির এমন পরিবেশ আমরা না বুঝলে কে বুঝবে বলোতো।”

সাইয়ান বলে,”বাড়ির এমন অবস্থায় আপনাদের বাড়িতে আজ আমার আর ঐশানীর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।আমি কিছুদিন পর সত্যি নিজে ওকে সাথে করে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে।”

আলীম রহমান বলে,”আরে বাবাজী সমস্যা নেই।ঐশানী এখন তোমার বউ।আর আমাদের বাড়িটা এখন থেকে তোমার আরেকটা বাড়ি।তাই তোমাদের সুযোগ সুবিধা মতো তোমরা আসবে তাতে আমাদের সমস্যা নেই।”

সাইয়ানের বুকের উপর থেকে বড় একটা পাথরের বোঝা নেমে গেছে।

এদিকে আরোভির মাধ্যমে ঐশানী জানতে পারে আজ তার বাবার বাড়িতে যাওয়া হবে না।আরোভির বাবার শরীরটা আবারো খারাপ হয়ে গেছে।সাইয়ান এমন অবস্থায় নিজের বাবাকে এভাবে রেখে শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারবে না।এখানে ঐশানীর বাবার ও সম্মতি আছে।ঐশানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,”ঐশানী বিয়ের পর সব কিছু বদলে যায়।সব পরিস্থিতি তোমার অনুকূলে থাকবে এমনটা ভাবা উচিৎ নয়।তাই নিজেকে নতুন পরিবেশের জন্য তৈরি করে নাও।হোক না কেনো সংসার টা দু দিনের। ”

একটুপর তাদের সাইয়ান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ানোর কাজ সম্পন্ন করে।তারা ঐশানীর কাছে এসে বিদায় নিয়ে যাবার সময় ঐশানী বাবা আর ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে তাদের বিদায় দেয়।

আলীম রহমান বাড়িতে যাবার পথে তার ছেলেকে বলে,”সাইয়ান ছেলেটা কে বিয়ের আগে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম ছেলেটা একদম তেমন নয়।ছেলেটার ব্যবহার কতো ভালো।যে কোনো মানুষ তাকে ভালো বাসতে বাধ্য।এই জন্য বলে কাউকে ভালো ভাবে না জেনে বুঝে কমেন্ট করা উচিৎ নয়।”

ঈশান বলে,”হ্যাঁ বাবা তা ঠিক বলছো।দুলাভাই আপুর কতোটা খেয়াল রাখে তা দেখে বোঝা যাচ্ছে। সে নিজে এতো ব্যস্ত তারপর ও আমাদের আদরযত্ন নিজে দায়িত্ব নিয়ে করেছে।”

বাবা ছেলে মনের সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়িতে ফিরে যায়।

এদিকে সাইয়ান ঐশানীর জন্য খাবার এনে নিজের হাতে খাওয়াই দেয়।ঐশানী কে খাওয়ানোর সময় বলে একদম সিনক্রিয়েট করবা না।তোমাকে খাবার খাওয়াই দিচ্ছি শুধু মাএ প্রেস-মিডিয়ার লোকদের দেখানোর জন্য যে আমাদের সম্পর্কটা কতোটা সুন্দর।

ঐশানী মনে মনে বলে “শালার জামাইয়ের নিকুচি করি।সারাদিন না খেয়ে সঙ সেজে বসে আছি। এদিকে খুদায় পেটের মধ্যে ইদুর বিড়াল দৌড়াদৌড়ি শুরু করছে আর উনি আসছে খাবার নিয়ে নাটক করতে।”

তারপর বধ্য মেয়ের মতো ঐশানী সাইয়ানের হাতে খাবার খেতে থাকে।হঠাৎ সামনের মানুষদের দিকে তাকাতেই ঐশানী বিষম খেয়ে ওঠে।

চলবে….

#ভালোবাসা_বিনিময়
#Nishi_khatun
#part_05

ঐশানীর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে স্বামী-স্ত্রী এমন নাটকীয় রোমান্টিক মোমেন্ট দেখছে আবরাজ। আবরাজের চোখ দুটো অনেক লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা হয়তো অনেকটা কান্না করেছে।এমন সময় আবরাজের বাবা মা ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

সাইয়ান ঐশানীকে খাওয়ানো কমপ্লিট করে বলে,”ঐশানী এনারা হচ্ছে আবরাজের বাবা মা।মানে আমার ছোট খালামনি আর খালুজান।”

ঐশানী দাঁড়িয়ে তাদের মুখেই সালাম দেয়।আবরাজের মায়ের মুখে কোনো কথা নেই।হয়তো সে সাইয়ানের বউকে দেখে এতোটা খুশি হতে পারে নাই।তবে আবরাজের বাবা বলে,”মাশাআল্লাহ সাইয়ান! বউমা কিন্তু অনেক সুন্দর আর মিষ্টি দেখতে হয়েছে।”

সাইয়ান একটু লজ্জার ভাব নিয়ে হাসি দিয়ে মাথা চুলকাইতে থাকে।

আবরাজের মা তার স্বামীর হাত ধরে বলে,”চলো নতুন বউ সারাক্ষণ দেখতে পারবে।আগে দুলাভাই কে দেখে আসি।”

আবরাজের বাবা মা আয়েশা বেগমের রুমে আসতে ছোট বোন আমেনা বড় বোন কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।বলে,”আপারে এসব কি করে হলো?আর দুলাভাই এতো অসুস্থ তার মাঝে সাইয়ান কি করে এমস কাজ করতে পারলো?”

আয়েশা বেগম বলে,”আরে আমেনা তুই সব সময় বেশি প্রশ্ন করিশ। একটু অপেক্ষা কর আস্তে আস্তে সবটা জানতে পারবি।”

আমেনা বলে,”আচ্ছা সবটা জানতে পারবো বুঝলাম তবে তোমার ছেলে এ কাকে বিয়ে করছে?এ তো সেই মেয়ে নয়।”

তখন সাইয়ানের বাবা সাইফুল খান জেগে যান।আয়েশা বেগম আমেনা কে বলে,”প্লিজ তুই আর এসব বেপারে কোনো কথা বলবি না।এমনি তোর দুলাভাইয়ের শরীরটা খুব খারাপ। যা তার সাথে এমনি অন্যান্য বিষয়ে কথা বল।”

এদিকে আমেনা ও তার স্বামী সাইফুল খানের সাথে এমনি নানারকম বিষয়ে কথা বলতে থাকে।

এদিকে সব অতিথিরা চলে যাবার পর সাইয়ান ঐশানীর হাত ধরে তার দাদীমার রুমে নিয়ে যায়।দাদীমা প্রথমে রুমের দরজা খুলতে চাইছিল না।কিন্তু সাইয়ান বলে,”দাদীমা তোমার জন্য এতো সুন্দর সতীন খুঁজে আনছি আর তুমি তার সাথে দেখা করবা না?বাবা ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।সে সুস্থ হয়ে যখন জানতে পারবে তার ছেলের বউয়ের সাথে এমন ব্যবহার করছো তখন কি সে খুশি হবে?এবার তুমি ভেবে দেখে কি করবা। দরজা না খুললে সমস্যা নেই আমি আমার বউকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।”

ঐশানী চুপচাপ দর্শকের মতো সব কাহিনী দেখছে।

একটু পর একজন বয়স্ক মহিলা এসে ঘরের দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলার সাথে সাথে সাইয়ান তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আহারে আমার সুন্দরি কমলা কয়দিনে শুখিয়ে চুপসে গেছে।”

মহিলা হেসে সাইয়ানের কপালে চুমো দিয়ে আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে দুটি চিকন সুন্দর চুড়ি পড়িয়ে দেয়।
দাদীমা বলে,”শোনো নাত বউ!এতো মোটা মোটা বালা দিলাম না।চিকণ চুড়ি দিলাম যাতে সব সময় তোমার এই সুন্দর হাতে পড়ে থাকতে পারো।”

ঐশানী সৌজনমূলক হাসি দিয়ে দাদী শ্বাশুড়িকে সালাম করে।

দাদীমা বলে,”কয়েকটা দিন যাক এবাড়ি যেমন চুপচাপ দেখছো এমনটা থাকবে না।নিজেদের সম্পর্কটা কেও কিছুটা সময় দাও।”

দাদীমা’র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাইয়ান তার বাবা মার রুমে আসে।সাইয়ানের মা ঐশানী কে দেখে তাড়াতাড়ি আলমারি থেকে একটা বড় সোনার গহনা বাহির করে ওর গলায় পড়িয়ে দেয়।

ঐশানীর বুঝতে বাকি থাকে না উনি সাইয়ানের মা।আর বিছানাতে যে শুয়ে আছে সে তার শ্বশুর।
ঐশানী তাড়াতাড়ি করে তাদের দু জন কে সালাম করে।

সাইফুল খান রুমের সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”দেখছো আমার নতুন মা টা কতোটা মিষ্টি আর ভালো।”

ঐশানী শ্বশুরের পাশে বসে তার হাত ধরে বলে,”বাবা আমি যখন আপনার নতুন মা।তখন প্লিজ কোনো কিছু নিয়ে অযথা চিন্তাভাবনা করে শরীরটা খারাপ করবেন না।আামাকে প্রমিচ করেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আমার সাথে গল্প করবেন। ”

সাইফুল খান বলে,”ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ শেফা দান করলেই তোমার আশা পূরণ করবো।”

রুমের সবাই শ্বশুর আর বউমার কথা শুনে অনেক খুশি।

একটু পর আয়েশা বেগম ঐশানী কে সাইয়ানের সাথে পাঠিয়ে দেয় তাদর রুমে।ঐশানীর উপর দিয়ে সারাদিন অনেক ধকল গেছে।এখন অদের বিশ্রামের প্রয়োজন।

ঐশানী রুমে এসে সোফার উপর বসে একে একে সব গহনা খুঁলতে থাকে।তারপর হিজাব খুলে লাগেজ থেকে একটা থ্রিপিস নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যায়।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বিছানাতে শরীরটা এলিয়ে দেয়।রুমে যে সাইয়ান উপস্থিত আছে সে দিকে তার কোনো হুস-জ্ঞান নেই।

সাইয়ান বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বারান্দাতে চলে যায় তার পাখিদের সাথে গল্প করতে।

সাইয়ান বারান্দাতে যেতেই পাখি দুটো একসাথে বলে,” ওঠে স্বাগতম স্বাগতম! নতুন বর কে স্বাগতম।”

ঐশানীর কানে কথা আসতেই সে বিছানা ছেড়ে সোজা বারান্দাতে দৌড় দেয়।বারান্দাতে যেতেই পাখি দুটো চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”বিনা অনুমতিতে সুখের সাগরে প্রবেশ নিষেধ। ”

ঐশানী ভ্রু কুঁচকে সাইয়ানের দিকে তাকাতেই সাইয়ান পাখিদের উদ্দেশ্যে বলে,”আহ সুখ সাগর তোমরা মেহমানের সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো?”

সুখ সাগর বলে,”এখানে আসার অনুমিত শুধু তোমার বউয়ের আছে।”

সাইয়ান বলে,”সুখ সাগর! ওর নাম ঐশানী! আমার স্ত্রী। ”

সুখ সাগর দ্রুত ঐশানী কে সালাম দেয়।

ঐশানী সালামের উওর নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগছে সাইয়ান বলে,”প্লিজ ঐশানী এখান থেকে যাও।এটা আমার পারসোনাল স্থান।”

ঐশানী এই বারান্দাতে থাকতে বেশ ভালো লাগছে কারণ পাখি দুটোর এতো সুন্দর মিষ্টি কথা শুনতে পারছে সাথে বাতাসের হালকা স্পর্শে বারান্দাতে থাকা ডোরবেল গুলো রিনিক-ঝিনিক বাজনাতে মুখোরিত করছে পরিবেশটা।তবে সাইয়ান যখন চাইছে না তখন সেখানে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই ঐশানীর।

সে বারান্দা থেকে বেড়িয়ে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দেখে আবরাজ তার রুমের ভেতর প্রবেশ করছে।ঐশানী কিছু বলবে তার আগেই আবরাজ ঐশানীর হাত ধরে রুমে বাহিরের নিয়ে চলে আসে।ঐশানী কে নিয়ে আবরাজ সোজা ছাদে চলে আসে।

ছাদে এসে ঐশানীর হাতটা ছেড়ে দেয়।

ঐশানী আবরাজের এমন ব্যবহারে একটু রেগে বলে,”আপনার সাহস তো কম নয়!আমাকে আমার স্বামীর রুম থেকে এভাবে টেনে ছাদে আনার মানে কী?আমি এবাড়ির নতুন বউ!যদি কেউ এসব দেখে ফেলতো তাহলে আমার মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে বুঝতে পারেন আপনি?”

আবরাজ রেগেমেগে ঐশানীর দিকে তেড়ে আসতে থাকে ঐশানী আবরাজের রাগ দেখে ভয়ে পিছনে যেতে থাকে একটা সময় ঐশানীর পিঠটা সিঁড়িঘরের দেওয়ালের সাথে ঠেকে যায়।

আবরাজ ঐশানীর দু কাঁধে শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে বলতে বলে,”তোমাকে কে অনুমিত দিয়েছে আমার অনুভূতি নিয়ে খেলার?তুমি জানতে না আমি তোমার পছন্দ করি?তোমাকে ভালোবাসি!এসব জানার পরও তুমি আমার ভাইকে বিয়ে করে ভাবী হয়ে চলে আসলে?আরে বিয়ে করার যখন এতো শখ ছিলো তখন আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমাকে বিয়ে করে স্বামীর আদর সোহাগে ভরিয়ে রাখতাম। ”

ঐশানী নিরবে চোখের জল ফেলছে।সত্যি ঐশানীর কাছে এসব প্রশ্নের কোনো উওর নেই এখন।উওর থাকলেও সে দিতে ইচ্ছুক না।

ঐশানী নিজের কান্না আটকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,”আমি আপনার ভাইয়ের বউ।আমাকে এভাবে স্পর্শ করার কোনো অধিকার আপনার নেই।”

আবরাজ এ কথা শোনার সাথে সাথে ঐশানী কে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।ছাদে ফুলের টব থাকার কারণে ঐশানী মেঝেতে পড়ার সময় একটা টপের সাথে ওর কপালে বাড়ি লেগে একটু কেটে যায়। আর হাতের কনুইয়ের চারপাশে ছিঁলে যায়।

ঐশানী তবুও কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওভাবে বসে থাকে।

আবরাজ চিৎকার করে বলে,”কেনো নেই তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার? এই অধিকারটা তো শুধু আমার হবার কথা ছিলো।তাহলে সেই অধিকার অন্য কাউকে কি ভাবে দিতে পারলে তুমি?এই জন্য বুঝি আমার সাথে এতো নাটক করতে।ওহ আচ্ছা এখন বুঝতে পারছি।তবে শুনে রাখো ঐশানী তুমি আমার অনুভূতি আর ভালোবাসার বিনিময় যে ধোঁকা উপহার দিলে তার ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে।শাস্তি আমি তোমাকে দিবো মনে রেখো বলে সে ছাদ থেকে নেমে চলে যায়।”

ঐশানী ওখানে বসে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
(কী মনে হয় শাস্তি পাবে? না কি অন্য কিছু হতে পারে?)


চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here