ভালোবাসা_বিনিময়,part_18,19

0
1411

ভালোবাসা_বিনিময়,part_18,19
Nishi_khatun
part_18

আল্লাহ বাবা এ কি কথা বলছে?
আমার জন্য না কি বাহিরের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারছে না। আমি তো এমন কোনো কাজ করি নাই যার জন্য তাদের মানসম্মান নষ্ট হবে।

বাবার ভাষ্যমতে আমার দোষ হচ্ছে আমি মেয়ে মানুষ হয়ে কি করে একজন পরপুরুষের সাথে এতো বেমি ঘোরাঘুরি করতে পারি? তারা আমাকে চলাচল করার অনুমিত দিয়েছিল তার মানে এই নয় যে আমি রাত বিরাতেও তার সাথে ঘুরাঘুরি করবো। আমার এসব মেলামেশার জন্য পাড়াপড়শিরা নানারকম কথা বলছে আমাকে নিয়ে।

বাবা আমার বিয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান করছে। একটা ভাল ছেলের খোঁজ মিললে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।
আমি ভাবছিলাম আবরাজ তো প্রপোজ করছে তাহলে তাকে বিয়ে করে নিলে বা সমস্যা কোথায়। কিন্তু এই যে সমস্যা এটাই তখন লোকেরা বলবে খারাপ কাজ করছিল যার সাথে তার গলায় ঝুলে গেছে। তাদের ঐ তৃক্ষণ দৃষ্টিতে তাকানো আমি সহ্য করতে পারবো না। তার থেকে ভাল বাবা মা যা মন চাই করুক আমার কি?

এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।
একদিন সন্ধ্যার বেলা হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতো সাইয়ান আছে। তাকে আমাদের ড্রয়িংরুমে দেখে আমি তো ভুত দেখার মতে চমকে উঠি।

আবার বাবা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ঐ হচ্ছে আমার মেয়ে ঐশানী।”

সাইয়ান বলে,”আমি কি তার সাথে একটু পারসোনাল ভাবে কথা বলতে পারি?”

বাবা বলে,”হ্যাঁ, যদি সে রাজী হয় তাহলে আমার আপত্তি নেই। তবে আমার মেয়ে নিষেধ করলে কিন্তু বিয়েটা হবে না।”

ঐশানী বিয়ের কথা শুনে হ্যাঁ হয়ে যায়। আল্লাহ আমার সুপারস্টার সাইয়ানের সাথে বিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি তো তাকে বিয়ে করতে এক পায়ে রাজি। তবে সে হঠাৎ সানাই আপুকে রেখে আমাকে বিয়ে কেনো করতে চাইছে?

এর মাঝে বাবা আবারো বলে ওঠে,”তোমার প্রেমের গল্প তো সারা দুনিয়া জানে। সেই মেয়ে আবার কোনো ঝামেলা করতে আসবে না তো?”

সাইয়ান বলে,”ঐ মেয়েকে নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমার বিয়ে হলে সে ফিরেও আসবে না।তাকে নিয়ে কোনে টেনশন করবেন না।”

বাবা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ঐশানী সাইয়ান কে তোমার ঘরে নিয়ে যাও সে একটু কথা বলবে।”

ঐশানী মনে মনে খুশি হলেও তা মুখে প্রকাশ করে না।
চুপচাপ সাইয়ান কে নিজের রুমে নিয়ে আসে।

সাইয়ান রুমে এসে বলতে শুরু করে দেখুন মিস আপনাকে এই বিয়ের জন্য রাজী হতে হবে। চিন্তা করবেন না সারাজীবন সংসার করতে হবে না। এই কয়েকমাস পর আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো। আমার কিছু পারসোনাল সমস্যা আছে আর কিছু দায়িত্ব। সেগুলো পালনের জন্য আপনাকে আমার বউয়ের ভূমিকা পালন করতে হবে। দরকার হলে যখন আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো তখন প্রচুর পরিমাণে টাকা দিবে।নয়তো আপনি যেখানে ইচ্ছা সেটেল হতে চাইলে তাই করে দিবে। তবে হ্যাঁ বিয়ে করছি বলেই যে আপনি স্ত্রীর সকল অধিকার পাবেন এমন কিছু আশা করবেন না। আমার কাছ থেকে ভালোবাসার আশা তো কোনোদিন ও করবেন না। আপনিও ভুল করে আমাকে ভালোবাসতে যাবেন না। আর হ্যাঁ আমাকে নিজের মায়াতে জড়ানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না। তাহলে অযথা নিজেই কষ্ট পাবেন।
একভাবে কথা গুলো বলে থেমে যায় সাইয়ান।

সাইয়ানের কাছ থেকে এমন কথা শুনে ঐশানী রেগে যায়।আরে যাকে আমি এতো পছন্দ করি সে আসছে আমার কাছে বিয়ের চুক্তি নিয়ে।আরে আমার কাছে ভালবাসার থেকেও মূল্যবান আমার সম্মত। বিয়ে করে এই দুদিনের খেলাঘর সাজানোর কোনো ইচ্ছা আমার নেই।যার কাছে আমার ভালবাসা বিনিময় করতে গিয়ে সম্মান হারাতে হবে তার সাথে নাই বা গড়লাম সম্পর্ক। এমন হাজার ভালবাসা আমি নিজের সম্মানের জন্য ত্যাগ করতে পারি আর এতো সাইয়ান।

ঐশানী রেগে বলে,”করবো না আপনাকে বিয়ে। আপনি চলে যান এ বাড়ি থেকে। আমার আত্মসম্মান বোধ আছে। তা নষ্ট করে অন্য কারো সাথে এমন বিনিময়ের সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা নেই।”

সাইয়ান বলে,”দেখুন আমি চাইলে হাজার মেয়েরা রাজি হবে আমার প্রস্তাবে। তবে আমার স্ত্রী রুপে আমার বাড়ির মানুষেরা আপনাকে দেখতে চাইছে। প্লীজ আমার অনুরোধ টা রাখুন আমি ওয়াদা করছি কখনো আপনাকে অসম্মান করবো না। আর না কখনো কারো দ্বারা অপমানিত হতে দিবো। আপনার সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার।”

ঐশানী রেগে বলে,”রাখেন আপনার সম্মান অসম্মানের কাহিনী। যে বিয়েটা কে ছেলে খেলা বানিয়ে দিচ্ছে তার মুখে এমন কথা মানাই না।”

এবার সাইয়ান একটু শক্ত গলায় বলে,”দেখুন মিস আমি অনুরোধ করে বলছি বিয়েতে রাজি হয়ে যান। নয়তো আপনাকে blackmail করে বিয়ে করতে হবে। আর আমি চাইছি না আপনাকে কোনোরকম ভাবে অপদস্থ করতে।”

ঐশানীর এবার টনকনড়া শুরু করে! আরে এতো সুপারস্টার মানুষ। এর দ্বারা সব কিছু সম্ভব। যদি এ আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করে তখন আমার তো কিছুই করার থাকবে না।

সাইয়ান এবার চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,”আপনি যা ভাবছেন আমি তাই করবো। আপনার ভাইয়ের ডাক্তারি পরা নষ্ট করে দিতে একটু সময় লাগবে না। এমনকি আপনার বাবার কারখানাটা বন্ধ করতে দু মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। তবে আমি এসব কিছুই করবো না। যদি আপনি বাহিরে এসে হ্যাঁ বলেন বিয়ের জন্য।”

তাই বলে সাইয়ান রুমের বাহিরে চলে যায়।

ঐশানী জানে এরা অনেক বড়লোক এদের দ্বারা যে কোনো কাজ সম্ভব। জলে থেকে কুমিরের সাথে বিবাদ করার কোনো মানে হয় না। তুমি বিয়ে তো করতে চাইছো করে না। দেখো তোমার ঘাড় থেকে যদি কোনোদিন নামাতে পারো তাহলে আমাকেও বলতে এসো। আমাকে বিয়ে করে তুমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারবে। আমার কি তোমার বউ হয়ে আরো advantage নিতে পারবো।

একটুপর ড্রয়িংরুমের সামনে এসে ঐশানী সবার উদ্দেশ্যে বলে সে সাইয়ান কে বিয়ে করতে রাজী আছে।

এরপর সাইয়ান বাড়িতে গিয়ে একটা press conference রাখে। সেখানে সে ঐশানীর সাথে নিজের বিয়ের কথা published করে। আর সাথে জানিয়ে দেয় যে তার আর সানাইয়ের সম্পর্কটার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তাই কেউ যেনো কখনো আর সে বিষয়ে কথা না বলে।

এর দুদিনের মধ্যে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাইয়ানের সাথে ঐশানীর বিয়ে টা হয়ে যায়।

বিয়ের আয়োজনের সময় সাইয়ানের বাড়ির কেউ সেখানে ছিলো না। তবে বিয়ের দিন রাতে ঐশানী সাইয়ান কে অনেক কথা শোনাতে থাকে। কেনো শোনাবে না। সে যদি সেদিন একটু চুপ থাকতো তাহলে ঐশানীর মুখ থেকে ওর জন্য জমে থাকা অনুভূতির কথা জানতে পারতো। তবে সাইয়ানের ঐ সব ফালতু কথার জন্য ঐশানী নিজের অনুভূতি গুলোকে মাটি চাপা দিয়ে দেয়।
তবে সময়ের সাথে সে অনুভূতি গুলো আবারো মাথা উঁচু করে সামনে চলে আসে ভালবাসার রুপ নিয়ে।

তবে সাইয়ানের এমন হঠাৎ সুইসাইড করার কারণটা ঐশানী মেনে নিতে পারছে না। সাইয়ান কে ঐশানীর অনেক কথা বলার আছে। তাকে নিয়ে সারাজীবন বাঁচতে চাই। তবে সে কি ভাবে নিজের দায়িত্ব মাঝপথে রেখে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে চাইছে?

একবার সাইয়ান সুস্থ হয়ে উঠুক এমন অবস্থা করবো যে জীবনেও এমন কাজ করার কথা চিন্তা করবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে ঐশানী জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।

কে জানে জ্ঞান ফেরার পর সাইয়ান কে জীবিত পাবে কি না ভালোবেসে মনের কথা বলার জন্য।

চলবে……

#ভালোবাসা_বিনিময়
#Nishi_khatun
#part_19

হসপিটালে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। ঐশানী একদিন ও বাড়িতে যায়নি। যতোদিন না সাইয়ানের জ্ঞান ফিরে।
সাইয়ানের যেদিন জ্ঞান ফিরে আসে তখন সবাই তাকে দেখতে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করে। শুধু মাএ ঐশানী ছাড়া।
সবার সাথে কথা বলার পর মনে মনে ঐশানী কে খুঁজতে থাকে। আরোভি বলে,”ভাবী বাহিরে বসে আছে। তুমি যেদিন থেকে হসপিটালে আসছো সেদিন থেকে সে এখানে। একদিন ও তোমাকে ছেড়ে বাড়িতে যায়নি। ভাবী তোমাকে প্রচুর পরিমাণে ভালো বাসে।”

সাইয়ান আরোভির কথা শুনে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে। আসলে সে যে কাজ করেছে তা করা একদম উচিৎ হয়নি। ঐশানী কে মুক্তি দিতে গিয়ে সে যে সবার সাথে অন্যায় করছিল তা বুঝতে পারছে। ঐশানী তো তাকে একবারের জন্য দোষী বলে নাই। তবে নিজের বিবেকবোধ তাকে বার বার অপমান করছিল। ঐশানীর সাথে অন্যায় ভাবে বিয়ে নিয়ে করা চুক্তির জন্য। সেদিনের বিয়ের বেপারে কথা গুলো সুন্দর ভাবে বলতে পারতো। এসব ভেবে সাইয়ানের খুব বেশি খারাপ লাগছিল।

এবার সবাই কে চমকে দিয়ে ঐশানী সাইয়ানের কেবিনের প্রবেশ করে। সবার দৃষ্টি ঐশানীর উপর স্থীর।এই তিন চার দিনে মেয়েটা নিজের কি বেহালদশা বানিয়েছে ভাবা যায় না।

সাইয়ান একবার ঐশানীর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
কেবিনের মাঝে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।

সেই নিরবতা ভাঙ্গতে ঐশানী সাইয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর সবাই কে অবাক করে দিয়ে সাইয়ানের দুই গালে মনের সুখে থাপ্পড় দিতে থাকে। বুকের মাঝে কিল ঘুশি সব দেয় তবুও সাইয়ান নিরব।
হঠাৎ ঐশানীর এমন ব্যবহারে সবাই অবাক।
একটা সময় ঐশানী সাইয়ান কে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

সবাই একে একে সাইয়ানের কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। হুম সাইয়ান আর ঐশানীর এখন একটু একা থাকার দরকার।

ঐশানী সাইয়ান কে ছেদে দিয়ে মেঝেতে দাঁড়িয়ে কোমরে দু হাত রেখে বলতে শুরু করে,”আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে বিধবা বানানোর চেষ্টা করার। এই বেয়াদব জামাই আমি কোনোদিন ও আপনাকে বলছি আমার সমস্যা আপনাকে নিয়ে? আমি আপনার সাথে সংসার করতে পারবো না? আমি কখনো চেয়েছি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার? তাহলে হুদায় কামে সুইসাইড কেন করতে গেলেন? এখন লজ্জা করছে না? বেঁচে গেছেন তো! সবার সামনে কি করে এই মুখ নিয়ে যাবেন? লোকে আপনাকে দেখলে হাসবে তো। সেই তো সবার হাসির পাত্তা হবার কারবার করেছেন। আরে আমি যেখানে নিজে আপনার দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছি সেখানে কিসের গ্লানিবোধ আপনার? আমাকে মুক্তি দেওয়ার এতো শখ কেন আপনার? আমি কখনো বিয়ের পর মুক্তি চেয়েছি? আমি কখনো বলেছি আপনার সাথে সুখে নেই?”

সাইয়ান নিরব দৃষ্টিতে ঐশানীর অভিযোগ গুলো শুনছে। আসলে অনেক সময় আমরা যার ভার করতে চাই তার কষ্টের কারণ নিজেরাই হয়ে যায়।

ঐশানী বলে,”আপনি সত্যি একজন স্বার্থপর মানুষ।নিজের স্বার্থ যেই পূরন হয়ে গেছে সেই জাহান্নামের পথে হাটা দিতে গেছেন। নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদী,ভাই-বোন তাদের কারো প্রতি কোনো দায়িত্বের কথা মনে পড়লো না? আমার কথা তো বাদি দিলাম।”

সাইয়ান এবার বলে,”আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করে ভুল করেছিলাম। আপনাকে যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয় তাহলে সমাজের মানুষেরা নানারকম কথা শোনাবে। আর আমি যদি মনে যায় তাহলে সবাই সহানুভূতি দেখাবে। তখন হয়তো একটা সুন্দর জীবন পাবেন।”

ঐশানী বলে,”শালার বেয়াদব দুলাভাই! আমি বিধবা হয় আর ডিভোর্সি হয়। সমাজের মানুষেরা আমাকে সারাজীবন ঐ কটু কথা শোনাবে। তখন তো বলবে এই মেয়ের জন্য স্বামী সুইসাইড করে মরছিল। ”

সাইয়ান ফেলফেল করে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশানীর কথা গুলো ফেলে দেবার মতো না।

সাইয়ান বলে,”আসলে এতোদিন আপনার সাথে থাকতে গিয়ে কোথাও একটু দুর্বলতা কাজ করছিল। তাই ভাবলাম আমার জন্য কেনো আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষ কে sacrifice করবেন। আমার আপনাকে ভাল লাগছে বলে কি আপনার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার সাথে সংসার করবেন?”

ঐশানী এবার রেগে গিয়ে সাইয়ানের গলায় জোড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। সাইয়ান আউচচ বলে চিৎকার করে ওঠে।

ঐশানী বলে,”সেদিন যদি একটু নিজের মুখটা বন্ধ রাখতেন তাহলে আজ এতো কাহিনীর প্রয়োজন হতো না। আপনি তো সুপারস্টার! আমি সেই প্রথম থেকে আপনাকে পছন্দ করি। যদিও জানতাম না আপনি আমার স্বামী হবেন। তবে ভাগ্যের কি নির্মমতা দেখেন।আপনাকে স্বামী রুপে পেয়েছি তবে নিজের মনের কথা প্রকাশ করার সুযোগ কখনো দেয়নি আপনি। প্রতিবার আপনি আপনার কথা গুলো বলে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে গেছেন আর আমি নিরবে শয়ে গেছি। আপনি একটিবার যদি আমাকে বুঝতে চেষ্টা করতেন তাহলে হয়তো দুজনের জীবনে এতোটা হতাশা আসতো না।”

সাইয়ান এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আপনার মনের মধ্যে আমার জন্য অনুভূতি ছিলো তা জানতাম না। দুঃখীত কখনো আপনাকে বুঝতে চেষ্টা করি নাই। তবে কেউ কি একটি বারের জন্য আমার স্থানে নিজেকে রেখে ভেবেছে? আমার মনের মাঝে কতোটা কষ্টের বিচরণ? কেউ একবারের জন্য আমার কথা চিন্তা করেন নাই। যে ছেলে নিয়মিত নামাজ আদায় করে। সে কি করে হুট করে একটা মেয়ের মন ভেঙে আরেকজনের সাথে সুখে সংসার করবে? সব কিছু এতোটা সহজ নয়। আমি তাকে নিয়ে আজ পাঁচ বছর স্বপ্ন দেখেছি। পাঁচটা বছর কম নয়! যেখান একটা সম্পর্ক সুন্দর ভাবে গড়তে অনেকটা সময় আর যত্নের প্রয়োজন হয় সেখানে পাঁচদিনের একটা সম্পর্ক হঠাৎ করে আপন করে নেওয়া সম্ভব?এই সম্পর্কটাকে সুন্দর ভাবে গড়ার জন্য দুজনের সমান আগ্রহ আর যত্নের প্রয়োজন। তবে আমি মানুষিক ভাবে রেডি ছিলাম না। আমার জীবনে সবটা এতো দ্রুতগতিতে হচ্ছিল যে আমি কোনো কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। তবে এসবের মাঝে আপনার প্রতি যত্ন অথাবা সম্মানের কোনো কমতি রাখি নাই। এই সম্পর্কটা কে যথেষ্ট সম্মান দিতে চেষ্টা করেছি। এখন বাকি সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি সারাজীবন আমার সাথে থাকতে চাইছেন কি না এটা পুরোই আপনার উপর নির্ভর করবে। যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি মাথা পেতে নিবো। আমাকে শাস্তি দিতে চাইলেও তা মেনে নিবো।”

সাইয়ানের মুখ থেকে এতো কথা শুনে ঐশানী অবাক। সত্যি কি সবটা সত্য না কি স্বপ্ন। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি এখনো কোনো ঘুমের মাঝে আছে।

হঠাৎ করে ঐশানী মেঝেতে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।
জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে একটা কেবিন আবিষ্কার করে। সত্যি সাইয়ান সুস্থ হয়ে গেছে? না কি সবটা আমার কল্পনা? সত্যি আমি সাইয়ানের রুমে ছিলাম? ওগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে আমি এখানে কেনো? আমার কি হয়েছে হাতে সেলাইন দেওয়ার কেনো।
হঠাৎ করে ঐশানী অনেকটা বিচলিত হয়ে যায়। এসব যদি স্বপ্ন হয় আর সাইয়ান কে যদি হারিয়ে ফেলে তাহলে কি নিয়ে থাকবো আমি। এসব ভেবে ওর বুকের ভেতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। আর সহ্য করতে না পেরে সাইয়ান বলে জোড়ে চিৎকার করে ওঠে। ওর চিৎকারের পুরো রুমটা কেঁপে ওঠে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here