শেষ_থেকে_শুরু পর্ব_৫,৬

0
1093

শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_৫,৬
নন্দিনি_চৌধুরী

?
৯.
হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ,সালমা,মেহেরাব।অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে নেওয়া হয়েছে সায়মাকে।সুইসাইড করছে সায়মা।সকালে সায়মার মা ফোন করেছিলো ওকে।সে ফোন করে জানিয়েছে সায়মা সুইসাইড করেছে।তখোনি আরিশ হাসপাতালে এসেছে।আরিশ করিডোরের এককোনে দাঁড়িয়ে আছে।সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে তার।

মেহেরাব আরিশের দিকে এগিয়ে এসে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।আরিশ গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরাবের দিকে।মেহেরাব চিৎকার করে বলে উঠেন,

মেহেরাব:আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো তোমার হাতে নিজের এক মেয়েকে তুলে দেওয়া।আমার সেই মেয়েকে তো তুমি আগলে রাখতে পারলেনা।পরোকীয়ায় জরিয়ে গেলে আমার আরেক মেয়ের সাথে।তাকে তো আমি শ্বাসন করতে পারছিনা।কিন্তু তোমাকেও আমি ক্ষমা করবোনা।কি লাভ পেয়েছো এসব করে।মুগ্ধকে ছাড়লে সায়মার জন্য।আর এখন সায়মা তোমার জন্য সুইসাইড করলো কারন কি?

সালমা:আমার মেয়ের যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছাড়বোনা বলে দিলাম।

আরিশ:আংকেল আন্টি আমি জানিনা ও কেন সুইসাইড করলো।কালকেও তো আমার সাথে কথা বললো তাহলে কেন সুইসাইড করবে।

সালমা:ও তোমাকে বিয়ের কথা বলেছিলো। তুমি ওকে না করে দিয়েছো।কেন না করছো ওকে?

আরিশ:আন্টি আমি এই মূহূর্তে বিয়ের জন্য তৈরি না বলেই ওকে না করেছি।

সালমা:আমার মেয়ে এখন তোমাকে ভালোবেসে মরতে বসেছে।

ওদের কথার মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে আসে।সালমা মেহেরাব ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে।

মেহেরাব:আমার মেয়ে কেমন আছে এখন?
ডাক্তার:হুম অল্পের জন্য বেঁচে গেছে।এতো পরিমাণ ব্লিডিং হয়েছিলো আমরা ভেবেছিলাম যে হয়তো বাঁচানো যাবেনা।
সালমা:দেখা করতে পারবো এখন?
ডাক্তার:হ্যা কেবিনে দেওয়া হবে একটু পর।

একটু পর সায়মাকে কেবিনে দেওয়া হয়।মেহেরাব সালমা দেখা করতে যেতে চাইলে আরিশ আগে দেখা করবে জানায়।মেহেরাব রাজী হচ্ছিলেন না কিন্তু সালমা রাজী হোন।

আরিশ সায়মার কেবিনে এসে দেখে সায়মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।হাতে ব্যান্ডেজ করা।আরিশ আসতে করে সায়মার কাছে বসে ডাক দেয়,

আরিশ:সায়মা!
আরিশের ডাকে সায়মা চোখ খুলে তাকায়।আরিশ সায়মাকে তাকাতে দেখে বলে,

আরিশ:এসব পাগলামির কোনো মানে হয়।আজ যদি তোমার কিছু হয়েযেতো তাহলে কি হতো বলোতো।

সায়মা:ভালো হতো কিছু হয়ে গেলে।তুমিও বেঁচে যেতে আমরাও বেঁচে যেতাম।

আরিশ:দেখো আমি তোমাকে বলেছি এখন বিয়ের জন্য আমি রেডিনা। আমার টাইম লাগবে। এটাতো আর বলিনি আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।

সায়মা:আরিশ I am Pregnant!

আরিশ সায়মার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বলে,

আরিশ:What! কি পাগলের মতো কথা বলছো সায়মা।

সায়মা:আরিশ আমি সিরিয়াস।লাস্ট মান্থ থেকে পিরিয়ড অফ। ভেবেছিলাম হয়ত এমনি। কিন্তু শরীর যখন কয়েকদিন যাবত খারাপ লাগছিলো। মাথা ঘুরছিলো, বমি হচ্ছিলো তখন ভয় লাগছিলো। তাই টেস্ট করি দুইবার আর দুইবারই রিপোর্ট পজিটিভ। তাও আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আবার টেস্ট করি সেখানেও পজিটিভ।আমার গর্ভে তোমার বাচ্চা।আর এখন যদি তুমি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমার মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আরিশ:কিন্তু এটা…….

সায়মা:কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা যে এটা তোমার বাচ্চা।তোমার আর মধ্য কয়েকবার ফিজিকাল রিলেশন হয়েছে। তাহলে এখানে অস্বিকার করার তো কোনো ওয়ে নেই।

আরিশ:আমি অস্বিকার করছিনা সায়মা।তুমি রেস্ট নেও আমি এখন আসছি।সন্ধ্যা এসে তোমাকে।জানাচ্ছি কি করবো সেটা।

আরিশ মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো আর সায়মা ঠোঁটে ফুটে উঠলো শয়তানি হাসি।

আরিশের মাথা কাজ করছেন।সে নিজের অজান্তেই সায়মার মোহে পরে আর মুগ্ধের উপর রেগে এই কাজ করেফেলেছে।কিন্তু এখন সায়মাকে তার বিয়ে করতেই হবে।আর যাইহোক বাচ্চার জন্য হলেও করতে হবে।সে সময় চেয়েছিলো সব কেমন আজব লাগছিলো কিন্তু এখন তার সময় নিলে হবেনা।কেউ জানার আগেই বিয়ে করতে হবে।

মুগ্ধকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে রুহি।মুগ্ধ মাথা নিচু করে খাচ্ছে।রুহির নিজেকে কেমন অপরাধি লাগছে।রুহির মা আর রাজিব সকালেই চলে গেছে।যাওয়ার আগে মাফ চেয়েগেছে মেহের রুহির কাছে।মুগ্ধে সকাল ৮টার দিকে জ্ঞান ফিরে।মুগ্ধ একদম চুপ হয়েগেছে।মেহের অফিসে গেছে খুব দরকারি একটা মিটিং আছে।যাওয়ার আগে রুহিকে বলে গেছে আজকে মুগ্ধকে কলেজে না যেতে দিতে।রুহি মুগ্ধকে ফ্রেশ করিয়ে এখন স্যুপ খাওয়াচ্ছে।

রুহি:পাখি রাগ করে আছিস আমার উপর?
মুগ্ধ রুহির কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
মুগ্ধ:রাগ কেন করবো ভাবিপু তোমার উপর?
রুহি:ওইযে কাল রাজিব আর মা……
মুগ্ধ:না ভাবিপু এখানে তোমার কি দোষ বলো।তুমি তো আর জানতেনা এমন হবে।আমি তোমার উপর রেগে নেই।
রুহি:সত্যি!
মুগ্ধ:হুম সত্যি।
রুহি মুগ্ধকে জরিয়ে ধরলো।মুগ্ধ ও রুহিকে জরিয়ে ধরলো।

দুপুরে মুগ্ধ শুয়ে ছিলো তখন ওর ফোনে একটা কল আসে। মুগ্ধ ফোনে তাকিয়ে দেখে unknown নাম্নার। মুগ্ধ ফোন রিসিব করতে অপাশ থেকে বলে উঠে,

ওপাস:আসসালামু আলাইকুম।আমি সাদিয়া।

মুগ্ধ:ওলাইকুমুস সালাম।সাদিয়া তুই!

সাদিয়া:হুম আজকে কলেজে আসলিনা। তাই কল দিলাম কেন। কোনো প্রব্লেম আছে কল দিছি তাতে?

মুগ্ধ:আরে না কি প্রব্লেম থাকবে আমার তো খুশি লাগছে তোর কল দেওয়াতে।

সাদিয়া:আজকে কলেজে আসলিনা কেন?

মুগ্ধ:একটু অসুস্থ দুইদিন পর থেকে আসবো।

সাদিয়া:অহ আচ্ছা খেয়াল রাখিস নিজের আর তোর এফবি আছে?

মুগ্ধ:হ্যা আছে কেন?

সাদিয়া:সব ক্লাসের পড়া ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতাম। আইডি নাম কি?

মুগ্ধ:আমার নামই।
সাদিয়া:ওকে আমি রিকু দিচ্ছি তুই এক্সেপ্ট কর।
মুগ্ধ:আচ্ছা।

মুগ্ধ কল কেটে এফবিতে গেলো।অনেকদিন পর আসলো আবার সে এফবিতে।একটু পরেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো।সাদিয়া হাসান নামে।মুগ্ধ রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো।এরপর সাদিয়া তাকে ক্লাসের পড়াগুলো দিলো।সে সব গুলো নোট করে আইডি অফ করে বের হয়ে গেলো।

১০.
?
সন্ধ্যায় আরিশ আর সায়মার বিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বাসায়।সায়মাকে বিকালে বাসায় নিয়ে আসছে।আরিশ ফোন করে জানিয়েছে সে বিয়ে করতে রাজী।সায়মা আর সালমার খুশি দেখে কে। রাজ্যসহ রাজপুত্র পাচ্ছে।মেহেরাব এই বিয়েতে কোনোভাবেই মত দেয়নি।কিন্তু তার কথায় পাত্তা দেয় কে।সালমা সব আয়োজন করেন।ঘোরোয়া ভাবেই বিয়েটা হবে।

সালমা:আমি বলছিলাম না তোকে এই উপায় একদম কাজে দেবে দেখলিতো।
সায়মা মাকে জরিয়ে ধরে বলে,

সায়মা:উফ মা তুমি আসলেই জিনিয়াস।তোমার উপায় একদম ১০০ তে ১০০ কাজে লেগেছে কিন্তু মা এই বাচ্চা মানে এরপর কিভাবে কি করবো?
সালমা:আরে দুই এক মাস গেলে মিথ্যা মিস্কেরেজ এর গল্প বানিয়ে দেবো। যেমন আজনে বানিয়েছি মিথ্যা সুইসাইড আর বাচ্চার গল্প।
সায়মা:ওকে মা।

সায়মা আর মা মিলে একটা মিথ্যা সুইসাইডের নাটক বানায়।তারা হাসপাতালের ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে মিথ্যা সুইসাইডের নাটক সাজায়।সাথে মিথ্যা প্রেগ্নেন্সির কথা বানায়।তারা জানে আরিশ বাচ্চার কথা শুনলে না করতে পারবেনা।তাই তারা এই পরিকল্পনা করে।

হয়ে গেলো আরিশ সায়মার বিয়ে।ছলোনার জাল পেতে আরিশকে বিয়েতো করলো সায়মা।কিন্তু সেকি পারবে টিকিয়ে রাখতে তার এই ছলোনার সংসার।

রাত ১০টা,

মুগ্ধ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দুটো তার পানিতে ভোরা।হাতে তার মোবাইল ফোন যেখানে বড় বড় করে লেখা “Sayma Islam got married With Arish Islam”.

মুগ্ধ:ডিভোর্স এর এক সপ্তাহও হলোনা এর মাঝেই নতুন ঘর বেধে ফেললে আরিশ।আর আমাকে দেখোনা।আমাকে লোকে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে।নতুন কিছু শুরু করা তো দুরের কথা।এখন এভাবে থেকেই সয্য করা আমার কাছে বিষের মতো লাগছে।যাই হোক সুখি থাকো তুমি দোয়া করি।

“জীবনের অপূর্ণতাতেই ভালোবাসা সুন্দর”

“কিছু ব্যাথা সবাইকে জানাতে হয়না।কিছুটা দেয়াল জানুক কিছুটা আয়না দেখুক”

সাদাফ নিজের রুমে বসে আছে।মা তার বিয়ের জম্য উঠে পরে লেগেছে।কিন্তু সে কিভাবে মাকে বুজাবে।সে যে পারবেনা তার প্রেয়শীর জায়গা অন্য কাউকে দিতে।হ্যা তার প্রেয়শী তাকে ধোকা দিছে কিন্তু সেতো ভালোবেসেছে।এখনো ভালোবাসে।সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।কিন্তু সে পারবেনা “শেষ থেকে শুরু” করতে।সে যে তার প্রেয়শীকেই ভালোবাসে।

শরৎচন্দ্র বলেছিলেন,
“বড় প্রেম শুধু কাছেই ডাকেনা দুরেও ঠেলে দেয়”

সাদাফ:ভালো আছো জানি।কিন্তু কতটা ভালো সেটা জানতে চাই।কেন আমার সাথে এমন ছলোনা করলে।আচ্ছা টাকাই কি তোমার কাছে সব।আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম ছিলোনা।জানিনা এর উত্তর কোনোদিন আমি পাবোকিনা। জানো আমার কলেজে একটা মেয়ে আছে মুগ্ধ নামের।তোমার নাম আর তার নাম এক কিন্তু চরিত্র একদম ভিন্ন।তুমি ছোলনামই আর সে একদম নিষ্পাপ একটা মেয়ে।সেদিন মুগ্ধ নাম শুনে মনে হয়েছিলো ওটা তুমি কিন্তু পরে ভাবি তুমি এখানে আসবে কিভাবে তুমিতো বড়লোক স্বামী নিয়ে সুখে আছো।

#চলবে

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৬
#নন্দিনি_চৌধুরী

১১.
সায়মা আরিশের বিয়ের আজকে চারদিন পার হয়েগেছে।এই চারদিন আরিশ সায়মার কাছে তেমন যায়নি।শুধু সায়মার কখন কি দরকার না দরকার সেগুলার খেয়াল রেখেছে।আরিশ কেন জানি মানতে পারছেনা সায়মাকে।কিন্তু সেতো নিজেই সায়মার দিকে এগিয়েছিলো সায়মার দিকে এগিয়েইতো সে মুগ্ধকে ছেড়েদিয়েছে।তাহলে কেন পারছেনা সায়মার কাছে যেতে।আরিশ মাথায় হাত দিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলছে,

“কেন মুগ্ধ কেন।কেন শুধু সম্পত্তির লোভে তুমি আমাকে বিয়ে করলে।সম্পত্তির লোভে তুমি দুইজন মানুষকে ঠকালে।আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ ছিলোনা।তুমি বললে সম্পত্তির বাকি অংশ আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম।কিন্তু তুমি সম্পত্তির জন্য আমাকে মারতে চাইলে ছিহ মুগ্ধ ছিহ।আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা কোনোদিন না।তোমার জন্য আমি সায়মার দিকে এগিয়েও এগোতে পারছিনা।মেয়েটা আমাকে তোমার নোংড়া পরিকল্পনার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলো।আর সেই মেয়েটাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি।”

আরিশ অফিসে বসে এসব ভাবতে লাগলো আর ডুব দিলো অতিতে………।

মুগ্ধ আরিশের বিয়ের ২বছর পূর্ন হবার দুই মাস আগে মুগ্ধ আরিশের কাছ থেকে পাওয়ার অফ এটোনি আর মুগ্ধের ভাগের সম্পত্তির প্যাপার গুলো নিয়েছিলো।আরিশ কোনো আপত্তি করেনি সেগুলো দিতে।কিন্তু পেপার গুলো মুগ্ধকে দেওয়ার দুইদিন পরেই আরিশের একটা এক্সসিডেন্টে হয়।সিলেট থেকে ঢাকা আশার পথে এই এক্সসিডেন্টে হয়।তখন সায়মা তাকে সেফ করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।হাসপাতাল থেকে সায়মা আরিশকে নিয়ে ওদের বাসায় যায়।মুগ্ধ বোনকে পেয়ে কিছুদিন থেকে যেতে বলে।এরপর থেকে শুরু হয় মুগ্ধ আরিশের মাঝে ঝামেলা।একদিন সকালে আরিশ অফিসে বসে কাজ করছিলো তখন সায়মা ওকে কল দেয় আর বলে ৫মিনিটের ভিতর দারচিনি ক্যাফে আসতে।আরিশ ভেবেছে হয়তো কোনো জরুরি দরকার তাই যেতে বলছে তাই আরিশ সেখানে যায়।আরিশ কে দেখে সায়মা ওকে নিয়ে একটা আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো,

সায়মা:একটু পর এখানে মুগ্ধ আসবে দেখো ও কিসের জন্য এসেছে।

আরিশ সায়মার কথায় বেস অবাক হয়।সত্যি একটু পর মুগ্ধ আসে সাথে একটা লোক ও আসে।মুগ্ধ তার সাথে কিছু কথা বলছিলো আর সম্পত্তির কাগজ আর পাওয়ার ওফ এটোনির কাগজটা দিলো।আরিশ অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছিলো।একটু পর মুগ্ধ আর লোকটা চলে গেলো।সায়মা তখন বলতে লাগলো,

সায়মা:জানো আরিশ প্রায় দেখছি মুগ্ধ এই লোকটার সাথে দেখা করে প্রথমে বাসায় আসতো।এরপর বাসায় না এসে এভাবে দেখা করে।জানো সেদিন তোমার এক্সসিডেন্টে স্পোটে আমি এই লোকটাকে দেখেছিলাম।আমার কি মনে হয় জানো মুগ্ধ তোমাকে মেরে ফেলতে চায় সম্পত্তির জন্য।কারন তুমি মারা গেলে বাকি যা সম্পত্তি আছে তাও মুগ্ধের নামে হয়ে যাবে।আর একটা কথা তোমাকে বলতে চাই আরিশ সেটা হলো মুগ্ধ কিন্তু তোমাকে বিয়েই করেছে এই সম্পত্তির জন্য নাহলে কিন্তু ও তোমাকে বিয়ে করতোনা।একটু সাবধানে থেকো।

সেদিন মুগ্ধের ব্যাপারে আরিশের মনে সন্দেহ জেগে যায়।আর সেই সন্দেহকে বাস্তব করে ফেলে যেদিন আরিশের উপর আবার প্রানঘাতিক হামলা হয়।সেদিনও মুগ্ধ অই লোকটার সাথে দেখা করেছিলো আর সেদিন বিকালেই আরিশের উপর হামলা হয়।কিন্তু সেদিনও আরিশকে বাঁচিয়ে নেয় সায়মা।এরপর আরিশ বিশ্বাস করে নেয় মুগ্ধ তাকে মারতে চায় সম্পত্তির জন্য।আরিশ চেয়েছিলো মুগ্ধকে সরাসরি জিজ্ঞেশ করতে কিন্তু সায়মা তাকে বলে যে সে যদি মুগ্ধকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে তাহলে মুগ্ধ মিথ্যা বলবে স্বিকার করবেনা।তার থেকে সে জেনো মুগ্ধকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।বেস এরপর আরিশ সায়মার সাথে মিশে গেলো।সায়মা যা বলতো তাই করতে লাগলো।সায়মার সাথে আরিশের সম্পর্কের কথা সায়মা নিজেই মুগ্ধকে জানায়।সেদিন মুগ্ধ আরিশকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলে আরিশ স্বিকার করে আর বলে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।সেদিন মুগ্ধ শুধু এতোটুকু বলেছিলো আমাকে এভাবে কেন ঠকালে।আরিশ সেদিন আর কোনো উত্তর দেয়নি।এরপর দিয়ে দিলো মুগ্ধকে ডিভোর্স।

বর্তমানে,,,

সায়মা ওর মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছে,

সায়মা:মা আমিতো পেপারগুলো খুজে পাচ্ছিনা।

সালমা:ভালো করে খুজে দেখ সব তো আরিশের কাছেই থাকার কথা।মুগ্ধ তো আর পেপার গুলো নিয়ে যেতে পারবেনা।

সায়মা:তাহলে পেপারগুলো গেলো কই?

সালমা:ভালো করে খোজ।

সায়মা:আচ্ছা তুমি এটা বলো যে মুগ্ধের প্রোপার্টি পেপার গুলো পাইছো?

সালমা:আরে না তোর বাবার থেকে বের করতেই তো পারছিনা মেহেজাবিন সেই পেপার কই রেখেছে।

সায়মা:আচ্ছা তুমি অদিকটা দেখো আমি এদিক সামলাচ্ছি।

সালমা:আচ্ছা সাবধানে কাজ করিস।আরিশ জেনো সন্দেহ না করে।

সায়মা:আচ্ছা।

আজকে কলেজে এসেছে মুগ্ধ এই চারদিন বাসায় থেকেছে সে। মন শরীর কোনোটা ভালো যাচ্ছিলোনা তার।আজকে সে কিছুটা ভালো অনুভব করছে তাই কলেজে চলে আসলো।

কলেজের আজকে প্রথম ক্লাসটা সাদাফের।সাদাফ ক্লাসে আসতেই চোখ গেলো মুগ্ধের দিকে।এই চারদিন মেয়েটা আসেনি।সাদিয়ার থেকে শুনেছে মেয়েটা অসুস্থ।চেহারাও তাই বলছে।চেহারা কেমন মলিন হয়েরয়েছে।সাদাফ ক্লাসে এসে সবার থেকে পড়ানিলো।মুগ্ধে থেকে সে আশা করছিলো মুগ্ধ হয়তো পড়া পারবেনা।কিন্তু না মুগ্ধ পড়া পেরেছে।সাদাফ এতে খুশি হলো যাক মেয়েটা তাহলে পড়াশুনায় ফাঁকি দেয়না।হঠ্যাৎ পিয়ন এসে নোটিশ দিয়ে যায় তিনদিন পর কলেজে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে।যে যে অংশ নিতে চায় তারা যেনো নাম দিয়ে দেয়।মুগ্ধের এসবে এখন ইন্টারেস্ট নেই তাই সে কিছুতেই নাম দেবেনা বলে ঠিক করলো।

বাসায় এসে মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো।মেহের খাবার টেবিলে বসে ফোনে কথা বলছে। মুগ্ধকে দেঝে ইশারা করে বসতে বললো।মেহের ফোন রেখে মুগ্ধে দিকে তাকিয়ে বললো,

মেহের:শুনলাম আরিশের নাকি সায়মার সাথে বিয়ে হয়েগেছে?
মুগ্ধ:হুম আমিও শুনেছি।
মেহের:মানুষ কতটা খারাপ হলে এই বিয়ের সম্মতি দেয়।এক মেয়ের সংসার এক মেয়ে ভাংলো তাতে তার কিছু যায় আসলোনা।
মুগ্ধ:বাদ দেও ভাইয়া।এসব নিয়ে আর কিছু শুনতে চাইনা।
মেহের:হুম
মুগ্ধ:আরিশের সাথে আমার একটা শেষ কাজ রয়েগেছে ভাইয়া।আমি জানি সায়মা কিসের জন্য এসব করেছে।(মনে মনে)

মুগ্ধ খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে একজনকে কল দেয়।

মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।

………………………….

মুগ্ধ:জি আমার কাজ হয়েছে?

………………

মুগ্ধ:জি ওগুলা রেডি করে রেখে দেন। আমি যেদিন বলবো সেদিন পাঠিয়ে দিবেন মিস্টার ইসলামের কাছে।

মুগ্ধ ফোনটা রেখে আরিশের একটা ছবি বের করে সেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,

১২.
আমি জানিনা সায়মা তোমাকে কি বুজিয়েছে।তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে কোনোদিন ছাড়বেনা।কিন্তু না তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে।তুমি জীবনে সব খুশি আনন্দ দিয়েছিলে আবার তুমিই সব কেড়ে নিলে।যাই হোক ভালাও থাকো।এটাই দোয়া।

“জীবনে সব থেকে ভালো যেই মানুষটা রাখতে পারে। সেই মানুষটাই সব থেকে বেশি কষ্ট দিয়ে যেতে পারে।”

মেহেরাব মেহেজাবিনের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে।তার দুচোখে পানি সে ছবিটাতে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,

আমাকে ক্ষমা করে দিও মেহেজাবিন।মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি তোমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম।নিজের হাতে নিজের ছেলেমেয়েকে মা হারা করেছি।আমি যদি জানতাম যে জীবনের সব চেয়ে বড় ভুলটা আমি করছি তাহলে করতাম না এই ভুলটা।ছেলেটা আমার সেই যে পর হলো আজ ও আমার সাথে কথা বলেনা।মেয়েটা থেকেও নেই।নিজের ছেলেমেয়ের কাছে আমি চরম অপরাধি।কিন্তু আমি কি করবো বলো আমি যদি সায়মা আর সালমাকে কিছু বলি তাহলে আমি জানি এর শোধ ওরা মুগ্ধের উপর থেকে নেবে।তোমার মেহের অনেক বড় হয়েগেছে।বোনের দায়িত্ব সে নিয়েছে।বোনকে একদম আগলে রাখছে।

সাদাফ আজকে অনেকদিন পর গিটার হাতে নিয়ে বসেছে। শেষ সেদিন সে গিটার হাতে নিয়েছিলো, যেদিন তার প্রেয়শী অন্যের ঘরে চলে গিয়েছিলো।

সাদাফ গিটার টুংটাং সুর তুলছে।আজ বেশিই মনে পড়ছে তার প্রেয়শীকে।মুগ্ধকে দেখলেই তার প্রেয়শীর কথা মনে পরে।ছয় মাস সে তার প্রেয়শীকে না দেখে ভালোবেসেছে।শুধু তার চোখ দুটো সে দেখেছিলো।যেদিন সে ভেবেছিলো সে প্রেয়শীকে সামনাসামনি দেখবে,সেদিন প্রেয়শী তাকে ছেড়ে চলে যায় বড় লোক বাড়ির বউ হতে।

সাদাফ:”প্রথম প্রেম মানুষকে যেমন হাসতে শিখায় তেমন কাঁদতেও শিখায়।প্রথম প্রেম আমাদের ভালোবাসতে শিখায়।”

সকালে,,,,,

মুগ্ধ আজকে কলেজে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে।আজকে তার ইচ্ছা হয়েছে হেঁটে হেঁটে যাবে।মেহের না করেছিলো তবুও আজ সে হেঁটে যাবে।সাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে চার রাস্তার মাথায়।মুগ্ধ আপন মনে রাস্তার আশপাশ দেখতে দেখতে যাচ্ছে।আগে আরিশের সাথে ঘুরতে বেরোলে এভাবে হেঁটে হেঁটে দুজনে ঘুরতো।আরিশের কথা মনে পরেতেই বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।মুগ্ধ হেঁটে চার রাস্তায় মাথায় এলো।সাদিয়া আজকে ওর সাথে হেঁটে যাবে বলেছে।মুগ্ধ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো তখন চোখ গেলো একটা দোকানে দিকে।সেখানে চোখ যেতেই মুগ্ধের বুকটা ছেঁত করে উঠে।আরিশ আর সায়মা ঠিক তার অপর সাইডে এক সাথে দোকানের সামনে দাঁড়ানো।মুগ্ধে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,

“আরিশ সায়মা”।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here