শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_বোনাস
নন্দিনী_চৌধুরী
১৭.
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মেহের।চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের লাল বাতিটার দিকে।কখন লাল বাতিটা বন্ধ হবে আর ডাক্তার বের হয়ে তার চড়ুইপাখির খবর দেবে।রুহি সাদিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।চোখ মুখ ফুলে গেছে তিনজনেরই।সাদাফ বসে আছে চেয়ারে।না চাইতেও অচেতন মনে বার বার মুগ্ধের জন্য ভয় লাগছে।মেয়েটাকে সে ভালোমতো চেনেও না অথচ তাও কত কষ্ট লাগছে।একটু পর নার্স বেরিয়ে আসলো থিয়েটার থেকে।নার্সকে আসতে দেখে মেহের সাদাফ এগিয়ে গেলো নার্সের কাছে।
মেহের:নার্স আমার বোন।
নার্স:দেখুন আমাদের AB+ রক্ত লাগবে।কিন্তু এই রক্ত আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই।আপনাদের মধ্য যার AB+ সে রক্ত দিন।পেসেন্টের অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে।
মেহের:আমার তো AB+না এখন কই পাবো এই রক্ত।
সাদাফ:আমার রক্ত AB+।আমি দিবো রক্ত।
নার্স:ওকে আসুন আপনি আমার সাথে।
নার্স সাদাফকে নিয়ে গেলো।আর মেহের গিয়ে সোফায় বসে পরলো।AB+ শুধু ওদের মায়ের ছিলো সেই ব্লাড গ্রুপ পেয়েছে মুগ্ধ।মেহেরের A+.
সাদাফ রক্ত দিয়ে কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসলো।মেহের উঠে ওর কাছে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বলে,
মেহের:ধন্যবাদ ভাই।আমার বোনকে রক্ত দেওয়ার জন্য।
সাদাফ:এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই।একজন মানুষকে বাঁচানো মানুষ হিসাবে আমার কর্তব্য।আপনি মুগ্ধের ভাই?
মেহের:হ্যা আমি আরিয়ান ইসলাম মেহের।ও আমার বোন মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
সাদাফ:ওহ আচ্ছা আমি সাদমান হাসান সাদাফ।মুগ্ধের ক্লাসের প্রফেসোর।
মেহের:আই সি আচ্ছা তুমি কি মিস্টার সায়েদ হাসানের ছেলে নাকি?তোমদের নামের অনেক মিল চেহারার অনেক মিল।
সাদাফ:জি উনি আমার বাবা।কিন্তু আপনি ওনাকে চিনেন কিভাবে?
মেহের:আরে ওনার সাথে আমার প্রায় বিজনেস এর ডিল হয়।খুব ভালো মানুষ উনি।
সাদাফ:অহ আচ্ছা।আচ্ছা আমাকে বাসায় যেতে হবে।আমি বাসায় যাচ্ছি বিকালে আবার আসতেছি।সাদিয়া আয়।
সাদিয়া:আচ্ছা।
সাদাফ আর সাদিয়া বাসায় চলে আসলো।সাদাফের মাতো সাদাফের গায়ে রক্ত দেখে ভয় পেয়েযায়।সাদাফ পরে বলবে বলে রুমে এসে গোসল করে নেয়।গোসল করে নিচে এসে দেখে বাবা সোফায় বসা।সাদাফ গিয়ে সোফায় বসে।সাদাফের মা কফি নিয়ে আসে দুজনের জন্য।সাদাফ মাকে বলে,
সাদাফ:মা আমাকে দুটো লাঞ্চ বক্সে খাবার পেক করে দেওতো।
সাদাফের মা:কেন কার জন্য নিবি?আর তোর জামায় তখন রক্ত ছিলো কেন?
সাদাফ:অইজে আমার কলেজের একটা মেয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে।তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি।মেয়েটার বাবার পরিচিত একজনের বোন।
সাদাফের বাবা:কার বোন।
সাদাফ:তোমার কম্পানি যার সাথে প্রায় ডিল করে। আরিয়ান গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক আরিয়ান ইসলাম মেহেরের বোন মুগ্ধ।
সাদাফের বাবা:আচ্ছা মেহের।হ্যা ভিষন ভালো ছেলে।মেহেরাব খানের বড় ছেলে।খুব অল্প বয়সে নিজেকে এই জায়গায় এনেছে।অনেক কষ্ট করে আজ এখানে।
সাদাফ:মেহেরাব খান!
সাদাফের বাবা:হ্যা মেহেরাব খান মেহের বাবা মুগ্ধের বাবা।মেহেরাব আমার অনেক আগের বিজনেস কলিগ ছিলো।এখন আবার তার ছেলেও হয়েছে।মেহেরাব খানের প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়ে মেহের মুগ্ধ।তার দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে খালি একটা মেয়ে আছে।মেহেরের মা মারা যাওয়ায় তিনি আবার বিয়ে করেছিলেন।
তোমারতো মেহেরাবকে চেনার কথা।
সাদাফ:হ.হ্যা চিনি।মা তোমাকে যা বললাম সেটা করো।আমি একটু আসছি।
বলেই সাদাফ নিজের রুমে এসে ফোন হাতে নিলো।চলে গেলো তার বন্ধ ফেজবক আইডিতে যেটা দুইবছর ধরে বন্ধ।লাস্ট প্রেয়শীর সাথে কথা বলে আইডি অফ করে দিয়েছিলো।সাদাফ প্রেয়শীর আইডিতে গেলো।হ্যা এখানে দেওয়া ডোটার অফ মেহেরাব খান।তার মানে এই মুগ্ধই তার প্রেয়শী।কিন্তু তার প্রেয়শীর তো বিয়ে হয়ে গেছে তারতো স্বামীর বাড়ি থাকার কথা সে এখানে কেন?সাদাফ তড়িঘড়ি করে কলেজে ফোন লাগায়।কলেজের পিয়ন কল রিসিভ করতেই।
সাদাফ:শোনো এই বছর ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে একটা মেয়ে আছে নাম মুগ্ধ। আজকে এক্সসিডেন্টে করেছে। ওর ফরমটা আমাকে মেইল করে পাঠাও ৫মিনিটের মধ্য।
পিয়ন:জি আচ্ছা স্যার।
সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে বসে পরলো।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার মুগ্ধ এখানে তার সামনেই ছিলো কিন্তু সে চিনতে পারেনি কিভাবেই বা পারবে ছয় মাস তো শুধু চোখ দেখেই প্রেম করেছে।ফুল ফেস তো দেখেনি।চিন্তার মাঝেই মেইল আসলো সাদাফের ফোনে।সাদাফ মেইল চেক করে দেখে মুগ্ধের ছবি নাম বাবা মায়ের নাম সব মিলে গেছে।
সাদাফ:যদি এই মুগ্ধ আমার মুগ্ধ হয় তোবে সে এখানে কেন তার স্বামী কোথায়?না আমাকে জানতে হবে ব্যাপারটা।
সাদাফ জলদি করে মায়ের কাছ থেকে খাবার আর সাদিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেসে।
সাদাফ হাসপাতালে আসলো রিসিপশোন থেকে জানালো যে মুগ্ধের অপারেশন শেষ তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।সাদাফ রুম নাম্নার জেনে কেবিনে গেলো।কেবিনে গিয়ে দেখে রুহি মুগ্ধের পাশে বসা আর মেহের পাসের সিটের বেডে বসা।মেহের সাদাফকে আসতে দেখে উঠে গেলো ওর কাছে।
মেহের:আরে আসো।
সাদাফ:এখানে আপনাদের জন্য খাবার আছে খেয়ে নেন।
মেহের:এগুলা কি দরকার ছিলো।
সাদাফ:আমি জানি বোনের শোকে আপনারা দুজন সারাদিন না খাওয়া না খেয়ে থাকলে তো আর বোন ঠিক হবেনা।তাই আমি বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।আপনারা দুজন খেয়ে নিন আমি আর সাদিয়া বসছি এখানে।
মেহের:ধন্যবাদ।তুমি আসলে তোমার বাবা মতো ভালো একজন মানুষ।
মেহের আর রুহি খাবার খেতে লাগলো।আর সাদিয়া আর সাদাফ রুহির পাশে।সাদাফ দাঁড়ানো আর সাদিয়া রুহির পাশে চেয়ারে বসা।মাথায় ব্যান্ডেজ করা মুগ্ধের।হাতে পায়েএ আঘাত লেগেছে সেখানেও ব্যান্ডেজ করা।মেহের খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আসলো।সাদাফ মেহেরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফ:ডাক্তার কি বললো কোনো সমস্যা নেই তো?
মেহের:না সমস্যা নেই।কিন্তু মাথায় আঘাতটা কিছু গভির।সারতে সময় লাগবে।আল্লাহ রহমতে আল্লাহ আমার বোনটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
সাদাফ:আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
মেহের:হ্যা বলো।
সাদাফ:না আসলে আজকে বাবাকে যখন আপনার আর আপনার বোনের কথা বলি তখন বাবা বললেন আপনারা নাকি মেহরাব আংকেলের ছেলে মেয়ে।আমার জানা মতেতো মুগ্ধের বিয়ে হয়েগিয়েছিলো তো ও এখানে ওর হাজবেন্ড কোথায়?
মেহের:তুমি মিস্টার খানকে কিভাবে চেনো?
সাদাফ:আমার বাবার একসময়ের বিজনেস ফ্রেন্ড ছিলেন তারা।আংকেল প্রায় বিজনেসের কাজে আমাদের বাসায় আসতো বাবাও যেতো তাই চিনি।
মেহের:অহ আচ্ছা হ্যা আমরা মিস্টার খানের সন্তান।আর এটাও ঠিক আমার বোনের বিয়ে হয়েছে।ওকে জোর করে একটা জানোয়ারের কাছে বিয়ে দিয়েছিলো মিস্টার এন্ড মিসেস খান।ছেলেটা দুই বছরের মাথায় আমার বোনকে ছেরে পরোকিয়া করে সেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:জোর করে!
মেহের:হুম আমার বোন যখন এসেসি এক্সাম দেয় তখন ওকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।আমি তখন দেশের বাহিরে ছিলাম তাই বিয়েটা আটকাতে পারিনি।দেশে আসার পর শুনি অই ছেলে আমার বোনকে ছেড়ে পরোকিয়া করে।আমার বোনকে ডিভোর্স দিয়ে ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য একজনকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:অহ আচ্ছা আপনি বসেন আমি আসছি।
সাদাফ বাহিরে এসে কপালে আজ্ঞুল ঘষছে আর মনে মনে বলছে,
জোর করে বিয়ে দিয়েছে।যদি ওকে জোর করে বিয়ে দেয়। তাহলে মুগ্ধ সেদিন কেন আমাকে ম্যাসেজে বলছিলো ও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে আমাকে ও ভালোবাসেনা আমি ওর টাইমপাস।আমার সামার্থ নেই ওর মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়ার।তাহলে অগুলা কি ছিলো।তাহলে কি অইটা মুগ্ধ ছিলোনাহ।কিন্তু সেটা কিভাবে হতে পারে।নাহ মাথায় কিছু আসছেনা।জানতে হবে আমাকে সব যে আসলে ব্যাপারটা কি।এই অংকের হিসাবে কোনো একটা ভুল আছে।সেই ভুলটা কি সেটা আমাকে জানতে হবে।মুগ্ধ যদি অই মুগ্ধ না হয় তাহলে সে কে যে আমার সাথে ছয় মাস ছিলো আমাকে জানতে হবে।
সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের কেবিনে আসে মেহের বাহিরে গেছে কিছু মেডিসিন আনতে।রুহি আর সাদিয়া গেছে পাশের দিকটায়।সাদাফ আসতে করে এসে মুগ্ধের পাশে বসলো।মুগ্ধের ক্যানোলা করা হাতের উপর হাত রেখে বললো,
যদি তোমার ভাইয়ের কথা সত্যি হয়। আর যদি সত্যি তুমি সে না হউ। তাহলে তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে কোনো কষ্ট পেতেদেবোনা।আর যদি তুমিই সে হউ তাহলে তোমাকে আমি কষ্ট ফেরত দেবো যা আমি গত দুইবছর পেয়েছি।আমার কেন জানি মনে হয় তুমি সেনা একজন ভাই কোনোদিন বোনের ব্যাপারে মিথ্যা বলবেনা আর দ্বিতীয়ত তুমি যদি সে হতে তাহলে আমাকে দেখার পর তোমার চোখে একটা ভয় অনুশোচনা থাকতো কিন্তু আমি তা দেখিনি।কথা দিচ্ছি মুগ্ধ। তোমার আর আমার সাথে যারা এই কাজটা করেছে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করেছে তাদের আমি ছাড়বোনা।সবার আগে আমাকে জানতে হবে মুগ্ধ সেজে আমার সাথে নাটক কে করেছিলো।এরপর জানতে হবে এর পিছনের কারন।
সাদাফ কথা গুলো বলে উঠে দাঁড়ালো।আসতে করে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিলো।এর মাঝে রুহি সাদিয়া চলে আসছে।সাদাফ সাদিয়াকে নিয়ে মেহেরকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলো।
নিজের রুমে বসে পাইচারি করছে সায়মা।হাত পা বার বার ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে,,,
সাদাফ যদি জানতে পেরেযায় সত্যিটা তাহলেতো সব শেষ।যদি সাদাফ জেনে যায় তাহলে ও সবকিছু জেনে যাবে।আমার এতোদিনের করা প্লান সব নষ্ট হয়ে যাবে।এখন আমি কি করবো।যদি সাদাফ জানতে পারে আমি মুগ্ধ হয়ে ছয় মাস রিলেশন করে ওকে ধোঁকা দিয়েছি তাহলে তো সব খেলা শেষ।উফ গড এই মুগ্ধ আমার জন্য একটা কাঁটা না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে।এখন একটাই উপায় আছে মগ্ধকে সরিয়ে দিতে হবে।নাহলে আমি মা ধোরা পরে যাবো।না মুগ্ধকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা।কিছুতেই না।
চলবে