শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_৯
নন্দিনী_চৌধুরী
১৮.
সকালের দিকে জ্ঞান ফিরেছে মুগ্ধের।হাতের সেলাইনটা খুলে দেওয়া হয়েছে।মেহের আর রুহি কালকে থেকে এখানেই আছে।সকালে নার্স এসে খাওয়ার আগের মেডিসিন গুলো খাইয়েদিয়ে গেছে।মেহের এখন নাস্তা কিনতে যাবে বাহিরে।মেহের বের হবে এমন সময় সাদিয়া এসে হাজির।হাতে খাবার ফল নিয়ে আসছে।পিছনে সাদাফ ও আসছে।
সাদাফ:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
মেহের:ওলাইকুমুস সালাম।আসো সাদাফ।
সাদাফ:ভাইয়া কালকে থেকে আপনি ভাবি এখানে। আপনারা এখন বাসায় যান।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসেন।আমি আর সাদিয়া এখানে আছি।
মেহের:না থাক তোমরা কেন কষ্ট করতে যাবে তাছাড়া তোমার তো কলেজে আজকে ক্লাস আছেনা।
সাদাফ:আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে নিয়েছি।আজকে জন্য ছুটি নিয়েছি।আপনারা যান ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসুন।আমরা এখানে আছি।
মেহের:আচ্ছা আমরা তাড়াতাড়ি এসে পরবো।
এরপর মেহের রুহিকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।আর সাদিয়া সাদাফ মুগ্ধের কাছে থাকে।মুগ্ধ ঘুমিয়ে আছে।সাদিয়া আসতে করে ওর পাশে বসে মুগ্ধকে ডাক দিলো,
সাদিয়া:মুলা এই মুলা।
মুগ্ধ আসতে করে চোখ খুললো।সাদিয়াকে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।সাদিয়া আসতে করে মুগ্ধকে উঠিয়ে বসালো।মুগ্ধ আসে পাশে তাকিয়ে দেখে ভাইয়া ভাবি নেই।মুগ্ধ আসতে করে বলে উঠে,
মুগ্ধ:ভাইয়া আর ভাবিপু কই সাদু?
সাদিয়া:ভাইয়া আর ভাবিকে কিছুক্ষন হলো বাসায় পাঠাইছে ভাইয়া।কাল থেকে তারা এখানে। তাই এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে পাঠিয়েছে ভাইয়া।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা।
সাদিয়া:আচ্ছা নে এখন এই স্যুপ্টা খেয়ে নে।
সাদিয়া একটু একটু করে স্যুপটা খাইয়ে দিচ্ছে মুগ্ধকে। তখন সাদাফ রুমে আসলো।মুগ্ধ সাদাফের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে স্যুপ্টা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে দিলো।সাদিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে সাদাফকে বলে,
সাদিয়া:ভাইয়া আমি ক্লাসে গেলাম।তুমি থাকো।আমি দুইটা ক্লাস করেই চলে আসবো।
সাদাফ:আচ্ছা গাড়ি নিয়ে যা।
সাদিয়া:আচ্ছা।
সাদিয়া চলে আসলো।মুগ্ধ তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে সাদাফ তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সে।সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের পাশের চেয়ারে বসলো।
সাদাফ:সরি মিস মেহুরানী।
মুগ্ধ সাদাফের মুখ থেকে মেহুরানী ডাকটা শুনে থমকে গেলো।এক আলাদা শিহরণবয়ে গেলো তার শরীরে।
মুগ্ধ:সরি কিসের জন্য স্যার?
সাদাফ:কালকের ব্যাবহারের জন্য।আমার ব্যাবহারে আপনি কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলেন।
মুগ্ধের কালকের ঘটনা গুলো মনে পরে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো,
না স্যার আপনার কথায় আমি কাঁদিনি।আপনি তো কাল আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।আমিতো কেঁদেছি ওই মানুষগুলোর জন্য যাদের কাছে আমি মুল্যহীন।
মুগ্ধ আসতে করে বলে,
মুগ্ধ:না স্যার আপনার কথায় আমি কষ্ট পাইনি।বরং আপনাকে ধন্যবাদ কাল আমাকে বাঁচানোর জন্য।
সাদাফ:আচ্ছা।এখন তুমি রেস্ট নেও।আমি এখানেই আছি।কিছু লাগলে বলো।
সাদাফ উঠে যায়।আর মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে ফেলে।মেডিসিনের ডোজ কড়া থাকায় ঘুমিয়ে যায় একটু পড়েই।সাদাফ ঘুমন্ত মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে,ভাবছে এক কৈশরি মেয়ের হিজাবের মধ্য ফুটে থাকা দুটি আঁখির প্রেমে পড়েছিলো সে।সেই আঁখির মালিক তার দিকে তাকালেই এক আলাদা প্রশান্তি লাগতো তার।কিন্তু কেউ এই পবিত্র আঁখি অন্যায় কাজে লাগিয়েছে ভাবতেই সাদাফের রাগ লাগে।এতো বড় বোকামি সে কি করে করলো।আজ তার বোকামিতেই সে তার প্রেয়শীকে হারিয়েছিলো।
সালমা বেগমের রুমে মাথায় দুই দিয়ে বসে আছে সায়মা।সালমা বেগম সোফায় বসে আছে।
সায়মা:মা তুমি কেন মুগ্ধকে মারতে গেলে।এখন তো যদি কেউ জেনে যায়। তাহলে বুজতে পারছো কতবড় ঝামেলায় তুমি আমি পরবো।
সালমা:আমি কি জানতাম যে সাদাফ ওখানে।সাদাফ ওই কলেজেই আছে যেই কলেজে মুগ্ধ পড়ে।আর তুই কিভাবে গাধা মতো কাজ করস এটা আমি সেটা বুজলাম না।
সায়মা:মা আমার খুব চিন্তা হচ্চে।সাদাফ তো সিওর মুগ্ধের সাথে হাসপাতালে যদি ও সব জেনে যায় তাহলে আমাকে তো ধরে ফেলবে।
সালমা:কিছু হবেনা তুই ভয় পাস না।দরকার হলে আমি আরো একটা খুন করবো।তবুও আমার মেয়ের কিছু হতে দেবোনা।মেহেজাবীনকে যেভাবে সরিয়েছি ওর মেয়েকেও মারবো।(মনে মনে)
সায়মা:মা এখন আমি কি করবো?
সালমা:শোন তুই অই কলেজে ডুকে পর।তারপর নজর রাখবি সাদাফ আর মুগ্ধের উপর।
সায়মা:ওই কলেজে কিন্তু আরিশ কি দেবে যেতে।এই বেবির কথা বলে আমি পুরা ফেঁসে গেছি।
সালমা:কালকেই এই বেবির গল্প শেষ।তুই কোনো চিন্তা করিস না।
সায়মা:সত্যি!
সালমা:হুম সত্যি।
সায়মা:আচ্ছা মা একটা কথা বলি?
সালমা:বল।
সায়মা:আচ্ছা মা মেহেজাবীন আন্টির সাথে তোমার কিসের শত্রুতাছিলো।নাহলে তুমিতো শুধু সম্পত্তির জন্য এমন করছো বলে আমার মনে হয়না।
সালমা:শত্রুতা অনেক কিছুর।কিন্তু ওর সাথে আমার সব থেকে বড় শত্রুতা ও আমার সব সুখ কেড়ে নিয়েছিলো তাই আমি ওর জীবন্টাই ওর থেকে কেড়ে নিয়েছি।
সায়মা:মানে?
সালমা:এতো মানে তোর জানতে হবেনা।তুই এটা বল ফাইল গুলো পেয়েছিস?
সায়মা:না মা পাইনি বুজতে পারছিনা ফাইল গুলো কই।কিন্তু মা তুমি বললানা কেন মারতে চাইলে তুমি মুগ্ধকে?
সালমা:কারণ মুগ্ধকে না মারলে সম্পত্তি কোনোদিন তোর হবেনা।
সায়মা:মানে?
সালমা:আমি মেহেজাবীনের উকিলের সাথে কথা বলেছিলাম। সে আমাকে জানিয়েছে মেহেজাবীন মুগ্ধের নামের যেই সম্পত্তি রেখে গেছে। সেটা মুগ্ধ ১৮ বছর হলেই ওর নামে হয়ে যাবে।কিন্তু কোনো ভাবে মুগ্ধের যদি মৃত্যু হয় তাহলে সেই সম্পত্তি মুগ্ধের বাবা মা বা ভাই পাবে।এখন মুগ্ধের মা তো নেই।মেহের তো এই সম্পত্তি কোনোদিন নেবেনা।বাকি তোর বাপ। তার কাছে সম্পত্তি চলে আসলে সেটা হাতিয়ে নেওয়া আমার জন্য আমার কোনো সমস্যা হবেনা।কিন্তু তার জন্য আগে মুগ্ধকে মরতে হবে।
সায়মা:আমার আর এইসব ভালো লাগছেনা।ভয় লাগছে এখন।
সালমা:ভয় পাস না যা তুই এখন রুমে যা।
সায়মা:আচ্ছা।
সায়মা রুমে চলে গেলো।আর সালমা মনে মনে বলতে লাগলো,
মেহেজাবীন আমার শত্রু। ওর পুরা পরিবার আমার শত্রু।ওর জন্য আমি কোনো সুখ পাইনি আমার মা ওর মায়ের জন্য সুখ পায়নি।আর এখন ওর মেয়ের জন্য আমার মেয়ে সুখ পাচ্ছেনা।
১২টার দিকে মেহের রুহি আসলো হাসপাতালে।সাদাফ তখন বসে ছিলো।মেহের কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।মুগ্ধ তখোনো ঘুম।
মেহের:খেয়েছে নাস্তা?
সাদাফ:হ্যা সাদিয়া খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে কলেজে গেছে।
মেহের:অহ তোমাদের খুব ধন্যবাদ।আমাদের পাশে এভাবে থাকার জন্য।
সাদাফ:ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না।
মেহের:ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার বললো চাইলে আমরা ওকে নিয়ে যেতে পারি। তবে বাসায় নার্স রাখতে হবে ফুল দেখাশুনা করতে হবে।আমি ভাবছি ওকে নিয়ে যাবো দুটো নার্স রাখবো আর রুহিতো আছেই।
সাদাফ:আচ্ছা আমারো মনে হয় বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।
মেহের:হ্যা আমি সব ফোরামালিটি করে নিয়ে যাবো এখন।
সাদাফ:তাহলে আমি আসি আজকে।
মেহের:আচ্ছা তবে বাসায় কিন্তু আসবে।সাদিয়াকে নিয়ে কেমন।
সাদাফ:জি আচ্ছা।
সাদাফ চলে যাওয়ার পর মেহের সব গুছগাছ করিয়ে মুগ্ধকে বাসায় নিয়ে আসে।সাথে দুইজন নার্স নেয়।
মুগ্ধ বাসায় আসছে আজকে দুইদিন।এই দুইদিন মুগ্ধের প্রপার সেবা করেছে রুহি আর নার্স মিলে।মেহের এখনো বোনের সাথে কথা বলেনি।মুগ্ধ বুজতে পারছে ভাইয়ের অভিমান।বিকালে মুগ্ধ খাটে পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।তখন মেহের ওর রুমে আসে।ভাইয়কে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।মেহের মুগ্ধের সামনে বসে বোনের হাত দুটো ধরে বলতে থাকে,
মেহের:সত্যি করে বলতো চড়ুইপাখি।সেদিন তুই মাঝ রাস্তায় গেলি কিভাবে।তুইতো কলেজে ছিলি।
মুগ্ধ:…………
মেহের:কি হলো বল।বলবিনা তাইতো।আচ্ছা বলিস না আমি বলছি আরিশ সায়মা তোকে অপমান করে। আর তুই কেঁদে বের হোস রাস্তায়। আর একটা গাড়ি এসে তোকে ধাক্কা মারে।তাই তো।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথা শুনে অবাক।
মুগ্ধ:ভাইয়া তুমি!
মেহের:হ্যা আমি জানি তোর কি মনে হয় তোর গায়ে কেউ একটা আচড় দিলে আমি তা টের পাবোনা।তোকে খোদার কসম করে বলছি অই মিসেস সালমার মেয়ের জীবন আমি বিশিয়ে দেবো আর আরিশ ওকে তো আমি রাস্তার ভিক্ষারি করে দেবো।এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
মুগ্ধ:না ভাইয়া কোনো ঝামেলা করতে যেওনা।
মেহের:তুই চুপ কর।এতোদিন অনেক সয্য করেছি কিন্তু আর না এভার ওদের পাপেএ সাজার পালা।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথায় খুব চিন্তায় পরে যায়।সে চায়না ভাইয়ের কোনো ক্ষতি হোক।
১৯.
সাদিয়া আর সাদাফ এসেছে মুগ্ধকে সন্ধ্যায় দেখতে।সাদাফ সাদিয়া মেহের মুগ্ধের রুমে বসা।সাদিয়া মুগ্ধের পাশে।আর সাফাফ সামনের সোফায়।মেহের দরজার পাশের চেয়ারে বসা।
মেহের:সাদাফ তোমার বাবাকেও নিয়ে আসতে।
সাদাফ:বাবা আসবে ভাইয়া আজকেই আসতো কিন্তু একটু কাজের চাপে আসতে পারেনি।
মেহের:আচ্ছা হ্যা উনি আসলে আমার খুব ভালো লাগবে।
এমন সময় সার্ভেন্ট এলো,
সার্ভেন্ট:স্যার ম্যাম অনাদের নিয়ে নিচে আসতে বলেছে নাস্তা করার জন্য।
মেহের:আচ্ছা তুমি যাও আসছি আমরা।সাদাফ সাদিয়া আসো।
সাদাফ:জি আপনি এগোন আসছি আমরা।
মেহের চলে গেলো।সাদাফ সাদিয়াকে ইশারা করতেই সাদিয়া মুচকি হেসে চলে গেলো।
মুগ্ধ আর সাদাফ এখন একা রুমে।মুগ্ধের কেমন জানি লাগছে।সাদাফ আসতে করে উঠে মুগ্ধের সামনে এলো।তারপর একটা বক্স দিলো এগিয়ে।মুগ্ধ বক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ বুজতে পেরে বলে,
সাদাফ:ধরো এটা।
মুগ্ধ আসতে করে ধরে বক্সটা।
সাদাফ:আমরা যাওয়ার পর বক্সটা খুলবা।
মুগ্ধ:জি আচ্ছা।
সাদাফ:হুম আসি টেক কেয়ার।
সাদাফ চলে গেলো।মুগ্ধ সাদাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
সাদাফ সাদিয়া নাস্তা করে আরো কিছুক্ষন মেহেরের সাথে কথা বলে চলে গেলো।
মুগ্ধকে রাতের খাবার মেডিসিন খাইয়ে নার্স চলে গেছে।মুগ্ধ পাশে থাকা বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবছে খুলবে কিনা।ভাবতে ভাবতে বক্সটা খুলে ফেললো।
বক্সটা খুলে দেখে তার ভিতর অনেক গুলা চোকলেট,আর তিনটা চিরকুট।
মুগ্ধ চিরকুট তিনটা হাতে নিয়ে একটা করে খুল্লো।
প্রথম চিরকুট,
“তুমি কি জানো যে তোমাকে কাঁদলে পুরা পেত্নির মতো লাগে মেহুরানী।”শুনো আর কোনোদিন কারো কথায় কাঁদবেনা।উচিত জবাবতাকে দেবে।”
দ্বিতীয় চিরকুট,
“পৃথীবিতে কেউ যখন তোমাকে বোঝার চেষ্টা করেনা, তখন এই টুকু মনে রাখবে আল্লাহ তোমাকে বুঝেন আর ভালোবাসেন”।
তৃতীয় চিরকুট,
“চাইবে শুধু আল্লাহর কাছে,পাইলেও চাইবে না পাইলেও চাইবে।আল্লাহ চাইলে অনেক খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ”।
মুগ্ধ চিরকুট গুলা পরে মুগ্ধ হয়ে গেছে।আসলেই আল্লাহ চাইলে কত খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু কত ভালো আছে সে।একটা এতো ভালো ভাই ভাবি পেয়েছে।সত্যি কেন সে সেদিন মৃত্যু চেয়েছিলো।
“মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে তাই বলে মৃত্যু কামনা করা একদম ঠিকনা।দুনিয়াতে শুধু আমি একা কি ডিভোর্সি নাকি।অনেকে আছে তারা তাদের জীবনের শেষ থেকে শুরু করতে পারলে আমিও পারবো।আমকে আমার জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।হ্যা আমি পারবোই।”
চলবে