চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০২

0
2811

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০২
লিখা রাইসা

হুম আমরা স্বামী-স্ত্রী তবে সেটা বাহিরের লোকেদের কাছে। কিন্তু ঘরের ভেতরে না। তুমি হয়তো চুক্তির কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি বিয়েটা করেছি শুধু মায়ের খুশির জন্য। আর সুমাইয়ার বিদেশ থেকে আসতে দেরী হবে বলে। মা’কে এ অবস্থায় সুমাইয়ার কথা বললে কখনোই মেনে নিতো না।

আর তুমি তো টাকা নিয়েছ! তুমি এটাও বলতে পারবে না, আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। কারণ তুমি নিজের ইচ্ছায় রাজি হয়েছো সব শর্ত মানতে।

– মৌ আর কিছু বলতে পারে না। ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বাবা নিজের মেয়েকে সন্তান বলে পরিচয় দেয় না। আর স্বামি পেয়েছে তাও কন্টাকে। এসব ভেবে ঘুমিয়ে যায়। ফজরের নামাযের আযান শুনে মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়। মৌ রাজের কাছে গিয়ে দেখে রাজ ঘুমাচ্ছে। রাজের ঘুমন্ত চেহারাটা মৌ এর কাছে খুব মায়াবী লাগছে। ছেলেদের চেহারা যে মায়াবী হয় তার জানা ছিল না।

মৌ রাজের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রাজের কপালের ঠিক মাঝখানটায় একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। রাজ জেগে ওঠে।
– তুমি এখানে?
– আযান দিয়েছে নামায পড়বে না?
-রাজ মৌ এর গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে’ তোকে কতদিন বলছি আমাকে রাতে নামাযের জন্য ডাকবি না। অযথা আমার ঘুমটা নষ্ট করতে আসিস। সকালে আমার অফিস আছে। যা তোর মন চাইলে তুই গিয়ে পড়।

– মৌ কোন শব্দ না করে ওযু করতে চলে যায়।
– মৌ যখন নামায পড়ে মোনাজাতে বসে আছে, তখন হঠাৎ রাজের মনে হলো কাজটা কি সে ঠিক করল? নামায তো আমার ভালোর জন্য। ধূর মেয়েটাকে আরো মারলাম।
– রাজের কেন জানি ভীষণ খারাপ লাগছে। তাই সে ঘুম থেকে উঠে যখনি বেলকুণীতে গিয়ে দাঁড়াবে এমন সময় পাশের রুম থেকে কারো চাঁপা কান্নার আওয়াজ পেল। রাজ রুমে উঁকি দিতেই দেখে মৌ নামাযের মোনাজাতে কাঁদছে। আর কি যেন বলছে।

রাজ একটু খেয়াল করে শুনতে পেল, যে মৌ বলছে ‘ হে পরওয়ারদেগার আমার স্বামীকে তুমি হেদায়াত দান করো। আমি যে ওর সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। তুমি হেদায়াত না দিলে, কে হেদায়েত দিবে? এ পৃখিবীতে তো একটি গাছের পাতাও নড়ে না। তোমার হুকুম ছাড়া। তুমি আমার স্বামীকে কবুল করে নাও, ও আল্লাহ নামাযের কথা বলেছি বলে আমাকে চড় মেরেছে। তুমি কিছু মনে করো না। আমাকেই তো মারছে। স্বামী স্ত্রীকে মারতেই পারে। এতে করে তুমি মন খারাপ করো না। আমার স্বামীকে তুমি কবুল ও মঞ্জুর করে নাও।

আমি তাকে নিয়ে জান্নাতে থাকতে চাই। ও আল্লাহ জন্মের সাথে সাথেই মা’কে নিয়ে নিয়োছে। তোমার কাছে কোন অভিযোগ করিনি। বাবার ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত করেছ, তবুও তোমার কাছে কোন অভিযোগ করিনি। তুমি আমার স্বামীকে হেদায়েত দান করো। তার সাথে যেন জীবনের বাকি দিনগুলো কাঁটাতে পারি। তার পায়ের নিচেই যেন থাকতে পারি।

– মোনাজাত শেষ করার আগেই রাজ রুমে এসে শুয়ে পড়ল। মৌ যখন নামায শেষ করে, রুমে ঢুকলো এমন সময় রাজ স্পর্ষ্ট খেয়াল করল,ভোর রাতে তার থাপ্পরের দাগ গালে ভেসে আছে। পাঁচটা আঙুল স্পর্ষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মৌ আজ শাড়ি পরেছে। শারি পরতে পারে না তাও। আজ লম্বা ঘোমটা টেনে চড়ের দাগটা আড়াল করে রেখেছে।

– রাজ সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে যায়। অফিসের কাজ করছে, এমন সময় মৌ এর ফোন।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কিছু বলবে?
– খেয়েছো তুমি?
– না খাবো।
– আচ্ছা খেয়ে নাও। আর আমার আজ টাকা লাগবে এক লাখ।
– এতোটাকা দিয়ে কি করবে?
– আমি তো চুক্তির টাকাটাই চাচ্ছি।

– ও আচ্ছা লর্কারের চাবি বিছানায় নিচে ওখান থেকে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে একলাখ টাকা নিবে।
– আচ্ছা।
– মৌ ফোন কেটে দিলে রাজ ভাবতে থাকে টাকার জন্য মেয়েরা কি না করতে পারে। রাতে যতটুকু ভালো মনে করেছিলাম দুপুরে তার পরিচয় দিল কতটা ভালো। সত্যি মেয়েরা ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। ধূর কি সব ভাবছি।

– লাঞ্চের সময় রাজ ক্যান্টিনে যখন সকল কর্মচারীদের সাথে খেতে যায় ঠিক তখনি পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। রাজ ফোনটা বের করে দেখে আননোন নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে জান তুমি কোথায়?
– রাজ ফোনের নাম্বারটা আবার দেখেই বললো’ ও মাই সুইর্ট হার্ট তুমি দেশে এসেছো? আমাকে একটা ফোনতো দিতে পারতে?
– সারপ্রাইজ!
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ। তাই। তুমি বাহিরে বের হও।
-আচ্ছা।

– রাজ বাহিরে বের হতেই। সুমাইয়া রাজকে এসে জড়িয়ে ধরে। রাজ সুমাইয়াকে দেখে চমকে যায়। এই সুমাইয়া রাস্তা তো। এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো। সবাই তো ফ্রিতে সিনেমা দেখছে।
– ধ্যাত তোমাকে ধরবো নাতো কাকে ধরব বলো তো?
– হ্যাঁ আমাকেই ধরবে তবে এখানে না। আর এটা আমেরিকা না বুঝলে সুইর্ট হার্ট।
– হুম বুঝলাম। চলে আজ সারাদিন শহর চষে বেড়াবো। রাজ আর সুমাইয়া সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ডিস্কোতে চলে যায়। এদিকে রাজ ডিস্কোতে গিয়ে ড্রিংকস করে। সুমাইয়া রাজের সাথে ডেট করার জন্য, গোপনে ড্রিংকসে যৌন উত্তেজনার ওষধ মিশিয়ে দেয়।

রাজ আর সুমাইয়া দু’জন যখন একটা রুমের ভেতর। সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ সুসাইয়ার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজতে থাকে ।
– ফোনটা ধরতেও ওপাশ থেকে কে যেন বললো’ ম্যাডাম আঙ্কেল স্টোক করেছে।
আপনি হসপিটালে আসেন। সুমাইয়া ফোনটা পিক করেই। রাজকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে পড়ে। রাজকে বাসায় যেতে বলে সুমাইয়া গাড়ি করে হসপিটাল চলে যায়। এদিকে বাসায় আসতে আসতেই রাজের মাথাটা কেমন জানি ঘুরতে লাগলো।

বাসায় এসেই দরজা নর্ক করতেই মৌ দরজা খুলে দেয়। মৌ দরজা খুলে দিয়েই বলে কি ব্যাপার তুমি তো এতো রাত করো না? আজ এতো দেরী করলে কেন?
– রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল” পার্টিতে গিয়েছিলাম। অফিসের বায়াররা এসেছিল। ও আচ্ছা খাবে আসো।

– না আমি খেয়ে এসেছি। আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে শুয়ে পড়ো।
– রাজ যখন শুয়ে পড়বে এমন সময় মৌ গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল। মৌ এমনিতেই শাড়ি ঠিক রাখতে পারে না। আর কেন জানি শাড়িটা শরীরের স্পর্শ কাঁতর জায়গা থেকে সরে যায়। এদিকে রাজের শরীরটা কেমন যেন লাগছে। মৌকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। রাজ এবার আর সহ্য করতে পারলো না। মৌকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।

– এই কি হচ্ছে রাজ?
– রাজ কিছু না বলে মৌকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
– মৌ অনেকটা ঘাবড়ে যায়। কি হচ্ছে রাজ? কি করছো তুমি?
– তুমি পাগল হলে?
– আমি তো তোমাকে দেখেই পাগল হয়েছি প্রিয়তমা। আর তুমি আমার স্ত্রী।
– তো তুমি তো বলেছিলে, মৌ এর কথা শেষ করার আগে রাজ মৌ এর ঠোঁট দু’টি বন্ধ করে দেয়। তারপর দু’জন ভালোবাসার সাগরে হারিয়ে যায়।
– পরের দিন সকালে মৌ ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে।

– কিছু বলবে?
– মৌ কাল রাতের জন্য সরি। আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে এ কাজটা করিনি। ড্রিংকস করেছিলাম তাই মাথা ঠিক ছিলনা ভুলে করেছি। ক্ষমা করে দাও আমায়। আর এই নাও পিল, পিল খেলে কন্সসিভ হওয়ার চান্স থাকবে না। এই নাও পানি।
– মৌ কিছু বলতে পারছে না। দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
– কি হলো তুমি কাঁদছো কেন? সরি বলেছিতো। হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

মৌ অনিচ্ছা সত্ত্বেও হা করল। রাজ মৌ এর মুখে একটু পানি দিয়ে কয়েকটা পিল মৌ এর মুখে তুলে দিল। মৌ এর কাছে মনে হচ্ছে যত্নকরে তার মুখে কেউ বিষ তুলে দিচ্ছে। এতটা কষ্ট লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ বিষ খাইয়ে দিলেও এতটা কষ্ট লাগবে না। রাজ মৌ’কে পিল খাইয়ে দিয়েই, হাফ ছেড়ে বাঁচে। যাক বাঁচা গেলো। নিজের ভুলের জন্য কি বোকামিটাই না করছিলাম। মৌ বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। এ কান্না দেখার মানুষও তার নেই।

এদিকে কাজের মেয়েটা এসে মৌকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডেকে গেলো। মৌ কোনরকম বিছানা থেকে নেমে, সকলের সাথে ব্রেকফাস্টে অংশগ্রহণ করল। মৌ এর পেটে কিছুই যাচ্ছে না। এটা রাজের মা মিসেস, হাফসা খেয়াল করলো।

-কিরে মা তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না?
-কই না তো। খাচ্ছি তো মা।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি। আর এই যে বাবা রাজ আমি আর কতদিন বাঁচি। আমি কি নাতি-নাতনীর মুখ দেখতে পারবো না?

– মৌ এর শাশুড়ির কথাগুলো শুনে মৌ এর আরো বেশি কষ্ট হতে লাগল। এ সংসারটা যে তার বড্ড পরিচিত। মানুষগুলো আপন হয়ে গেছে। কোনদিন তো এভাবে কারো আদর পায়নি। কিন্তু তাদের কোন আশাই সে পূর্ণ করতে পারবে না।
– রাজ তার মাকে কিছু না বলে খাবার ছেড়ে ওঠে পড়ল।
– কিরে বাবা খেলি না?
– ওহ্ মা! অফিসের কাজ আছে।
– তো খেয়ে তো যা।
– না মা যতটুকু খেয়েছি এতেই হবে।
– আচ্ছা সাবধানে যাস।
– আচ্ছা মা আসি।

.
রাজ বাসা থেকে বের হয়েই সুমাইয়াকে ফোন দিল। দু’বার রিং হতেই সুমাইয়া ফোনটা ধরে বললো’ হ্যালো জান তুমি কোথায়?’
– এইতো অফিস যাচ্ছি।

– ওহ্ আচ্ছা। শোন বাবা অসুস্থ তুমি কি বাসায় আসবে?
– ওহ্ নো তুমি আগে বলবে না? কি হয়েছে বাবার বলো।
– আরে স্টোক করেছিল। এখন অনেকটা সুস্থ।
– আচ্ছা। তুমি থাকো আমি আসছি। রাজ তাড়াহুড়ো করে সুমাইয়াদের বাসায় চলে যায়। সুমাইয়ার বাবা রাজকে দেখেই কাছে টেনে নেয়।
– বাবা তুমি যেন কি করছো?
– এইতো আঙ্কেল বাবার কোম্পানি দেখাশুনা করছি।
– ওহ্ আচ্ছা।

সুমাইয়া মামনি রাজ বাবাজীকে নিয়ে উপরে যাও।
– সুমাইয়া রাজকে নিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। সুমাইয়াকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। সুমাইয়া রাজের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। এভাবে কিছুক্ষণ নিরব থেকে সুমাইয়া রাজকে বলে’ কি হলো এমন করে তাকিয়ে কি দেখো?
আমার রাজকুমারীকে দেখি!

আমার কাছে দেখার কি আছে? আগে দেখনি?
দেখেছি, তবে তোমাকে যতই দেখি ততই মুগ্ধ হয়। জানি না তুমি কোন মায়ায় ফেলেছো আমায়। পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও তুমি আমার হৃদয়ের আকাশে দিপ্তীমান।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ তাই।
আচ্ছা লাভিউ। একটু জড়াইয়া ধরি।
এ্যা আমার বুঝি লজ্জা করে না?
তাই বুঝি আপনার এতো লজ্জা তাহলে রাস্তায় জড়িয়ে ধরেছিলে কেন?

কি হয়েছে তাতে। এবারো ধরছি, এই বলে সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে। রাজও সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে। সুমাইয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। সুমাইয়া সারা শরীর দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সুসাইয়া রাজের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরে। সুমাইয়া রাজকে নিয়ে অন্য দুনিয়ার হারিয়ে যেতে চাচ্ছে। যে কাজটা রাজের করার কথা সেটা করছে সুমাইয়া। কিন্তু কি হচ্ছে রাজ কিছু বুঝতে পারছে না। বিয়ের আগে এসব ঠিক না। এটা রাজ খুব করে বুঝতে পারছে। তাই সুমাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
– সুমাইয়া ক্ষানিকটা অভিমানী সুরে বলল’ কি হয়েছে জান তুমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে কেন?

-সুইর্ট হার্ট আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো। আর বিয়ের আগে এসব করা শরীয়ত সম্মত না। আমি চাই না তোমাকে অপবিত্র করতে। তোমাকে বউ করে আমার বাড়িতে নিয়ে আমার ভালোবাসার সমস্তটা বিলিয়ে দিবো।

– সুমাইয়া কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। এদিকে সুমাইয়ার কাছে মনে হচ্ছে সমস্ত শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। রাজ ব্যাকডেড ছেলে।

কি হলো তুমি চোখ বন্ধ করে কি ভাবছো?
– কিছু না জান। তবে তোমাকে পেয়ে সত্যিই আমি ভাগ্যবতী।
– আচ্ছা সুইর্ট হার্ট আমার যে যেতে হবে।
– রাজ বিকেলে বাসায় এসে দরজা নর্ক করতেই মৌ দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে রাজকে দেখে অনেকটা চমকে যায়। রাজ এ সময়ে?
– রুমে আসতে আসতে মৌ রাজকে বললো’ আজ কি আপনার শরীর খারাপ লাগছে? এতো তাড়াতাড়ি বাসায় এসে পড়লেন যে?
– না ভালো লাগছিল না তাই এসে পড়লাম। ও আচ্ছা! তুমি বসো আমি তোমার জন্য লেবুর শরবত করে আনছি।

– মৌ রাজের জন্য লেবুর শরবত এনে যখন রাজের দিকে তাকায়।
তখনি তার গ্লাসটা ফ্লরে পড়ে ভেঙে যায়। রাজের শার্টে মৌ স্পর্ষ্ট দেখতে পাচ্ছে লিপিস্টেকের দাগ। মৌ এর বুঝতে বাকি রইল না রাজ কোথায় থেকে আসলো। মৌ এর বুকের ভেতরটা কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। সে জানে রাজ তার নয়। তবুও কেন এতো কষ্ট লাগছে? মানুষটাকে সে কি ভালোবেসে ফেললো?

এদিকে দিন যতই যাচ্ছে রাজের মেজাজ ততই খারাপ হচ্ছে। ঠিকমতো বাসায় ফিরে না। রাত করে ফিরে। রাজের মা মিমেস হাফসা কিছু জিজ্ঞেস করলে ‘ মৌ বলে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

রাত প্রায় একটা এখনো রাজ আসছে না। বারবার ফোন করছে মৌ কিন্তু বারবার পরিচিত কন্ঠে কেউ একজন জানান দিচ্ছে ‘ আপনি যে নাম্বারে ফোন দিচ্ছেন সেটা এ মুহূর্তে বন্ধ আছে, পরে আবার চেষ্টা করেন। ধন্যবাদ।’ মৌ এর খুব ভয় হচ্ছে। রাজের কিছু হলো নাতো। মৌ দু’রাকাত নফল নামায পড়ে নিল। মৌ এর যখনি কোন বিপদ হয় তখনি সে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ সে আল্লাহর উপর সকল অবস্থায় ভরসা রাখে। মৌ নামায শেষ করে খাটে এসে বসতেই কে যেন দরজায় নর্ক করে। মৌ দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে।

– কি হলো জান তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– আসো কাছে আসো।
– মৌ দরজা লাগিয়ে দিয়েই, রাজকে নিয়ে তাদের রুমে এসে পড়ে। এ অবস্থায় রাজের মা রাজকে দেখলে খুব কষ্ট পাবেন।
– রাজ মৌকে জড়িয়ে ধরে খাটে শুইয়ে দেয়। রাজের মুখ থেকে ড্রিংকসের গন্ধ আসছে। মৌ এর বুঝতে বাকি রইলো না রাজ আজো নেশা করে এসেছে। রাজ মৌকে বুকের সাথে ঝাপটে ধরে বলে’ বউ আমি তোমাকে আর কোনদিন কষ্ট দিবো না। ভালোবাসি তোমায়। মৌ রাজকে ছাড়াতে গিয়েই পারে না। রাজ মৌ এর গা থেকে শাড়িটা আসতে আসতে খুলতে থাকে।

মৌ কেমন যেন কেঁপে ওঠে। তার মনে হচ্ছে শরীরে কেউ কারেন্ট লাগিয়ে দিয়েছে। রাজের প্রতিটা স্পর্শ মৌকে পাগল করে দিচ্ছে। মৌ সহ্য করতে না পেরে রাজকে জড়িয়ে ধরে। রাজ মৌ এর বুকেই ঘুমিয়ে যায়। সকাল বেলা রাজের ঘুম ভাঙতেই রাজ দেখে মৌ তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মৌ এর আধখোলা শাড়ি ফ্লরে পড়ে আছে। মৌকে রাজ তার বুক থেকে সরাতে পারছে না। রাজ মৌকে এভাবে দেখে অনেকটা রেগে যায়। মৌকে দু’বার জোরে জোরে ডাক দিতেই, মৌ ঘুম থেকে উঠেই ভয় পেয়ে যায়।
– কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে কি হয়েছে আপনার?

– কিছু হয়নি। আর হ্যাঁ তুই কি ভেবেছিস তোর বুকের কাপড় মাটিতে ফেলে রাখলেই আমি তোর প্রেমে পড়ে যাবো? কখনোই না।
– মৌ শাড়িটা গা তে পেচাতে পেচাতে বললো’ কাল রাতে আপনিই তো জোর করে আমার শাড়ি খুলেছেন।
– ঠাস! লজ্জা করে না? তুই যদি নগ্ন হয়েও থাকিস এই রাজ তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না। তোর শাড়ি খুলা তো দূরের কথা। আমার সম্পত্তির লোভে তুই প্রেমের জালে ফাঁসাতে চাস আমায়। এই জন্যই বাসর রাতে তোর সাইন নিয়ে নিছিলাম ডির্ভোস পেপারে।

– মৌ কিছু না বলে শুধু দু’চোখে অশ্রু ঝরাতে লাগল। এদিকে রাজ চলে গেলেই, মৌ দু’বার করে বমি করে দিল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। বিকেল বেলা, বাহিরে যাওয়ার নাম করে হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলল! ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নীরীক্ষা করে বলল’ খুশির খবর আপনি মা হতে চলছেন। ‘
– ডাক্তারের কথাটা আনন্দের হলেও মৌ এর চোখে অজান্তেই জল এসে ভর করলো……..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here