চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৩

0
2305

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৩
.
– ঠাস! লজ্জা করে না? তুই যদি নগ্ন হয়েও থাকিস এই রাজ তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না। তোর শাড়ি খুলা তো দূরের কথা।

আমার সম্পক্তির লোভে তুই প্রেমের জালে আমাকে ফাঁসাতে চাস। এই জন্যই বাসর রাতে তোর সাইন নিয়ে নিছিলাম ডির্ভোস পেপারে।

– মৌ কিছু না বলে শুধু দু’চোখে অশ্রু ঝরাতে লাগল। এদিকে রাজ চলে গেলেই, মৌ দু’বার করে বমি করে দিল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। বিকেল বেলা, বাহিরে যাওয়ার নাম করে হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলল! ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নীরীক্ষা করে বলল’ খুশির খবর আপনি মা হতে চলছেন। ‘
– ডাক্তারের কথাটা আনন্দের হলেও মৌ এর চোখে অজান্তেই জল এসে ভর করলো ।

– কি হলো আপনি কাঁদছেন কেন?
– ম্যাডাম খুশিতে চোখে জল এসে গেছে।
– ওহ্ আচ্ছা। আর হ্যাঁ সব সময় সচেতন থাকবেন।
– ধন্যবাদ। আমি এখন আসি?
– আচ্ছা।
– মৌ হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে। মৌ বাসায় এসে ভাবতে থাকে কাজটা কি সে ঠিক করল। রাজের না করা সত্ত্বেও বেবীটা সে নিল।

– মৌ কিছু ভাবতে পারছে না। রাজ যদি শুনে সে প্রেগনেন্ট সে কি ভাববে? রাজকে কোন ভাবেই প্রেগনেন্টের কথা বলা যাবে না। বলা যাবে না সেদিন যখন রাজ পিল দেয় তখন সে পিল না খেয়ে মুখে রেখে দেয়। আর যখন রাজ চলে যায় তখন মুখ থেকে পিল ফেলে দিয়েছে। এ কথা শুনলে সে অনেক রাগ করবে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখে জল এসে যায়। রাজ যদি বাবার পরিচয় না দেয়। সবাই কি বলে ডাকবে। এসব ভাবতে ভাবতে বুক ফেটে কান্না আসে মৌ এর।

বিকেল বেলা আসরের নামায পড়ে মৌ যখন বসে আছে বিছানায়। এমন সময় রিত্ত আর রাজের মা আসলো।
– মৌ দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বললো’ মা কিছু বলবেন?
– হুম, রিত্তের কলেজ ছুটি, আর ওদিকে আমার ভাইটাও অসুস্থ। সকালে রাজকে বলেছিলাম সবাই মিলে যাবো। আর রাজ তো যেতে পারবে না। এদিকে বাড়ির কাজের মহিলাটাও ছুটি নিয়েছে। ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু নিতে পারছি না বৌ মা।

– আরে মা, আপনারা যান। রাজকে ছেড়ে আমি কিভাবে যাবো?
– সত্যি বৌ মা তোমাকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে। এদিকে ভাইটাও ছাড়ছে না। নাছোড়বান্দা যেতেই বলেছে।

– আচ্ছা মা আপনি চিন্তা করবেন না।
– ঠিক আছে মা, আমরা তাহলে যাই। আর হ্যাঁ মনখারাপ করো না মা। আর রাজকে দেখে রেখো।
– আচ্ছা।
– এদিকে রিত্ত আর রাজের মা চলে গেলে, মৌ রান্না করে রাজের জন্য অপেক্ষা করছে। রাজ রাতে এসে দেখে মৌ খাবার টেবিলেই ঘুমিয়ে গেছে।
– মৌকে ডাক দিতে গিয়েও ডাক দিলো না। রাতের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায় রাজের।

– তাই মৌকে ডাক না দিয়েই শুয়ে পড়ে। রাত বারোটার দিকে যখন মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙেই দেখে রাজ ঘুমাচ্ছে বিছানায়। পা থেকে জুতোটাও খুলে নাই। মৌ খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে খাবার যেমন রাখা আছে তেমনি আছে। রাজ খাবার খায়নি। মৌ খাবারটা ওভাবেই রেখে রাজের পা থেকে জুতো খুলে পায়ে একটা চুমু দিয়ে বললো ‘ আমি কতই না ভাগ্যবতী হতাম যদি তোমার পায়ের নিচে একটু স্থান পেতাম সারাজীবনের জন্য। এ বলে পা জোড়া বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে পায়ের কাছে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই।

ফজরের আযান হচ্ছে। আযান শুনে ঘুম ভেঙে যায় মৌ এর। ঘুম থেকে উঠে অযু করে নামাযে যাওয়ার আগেই ভাবল, রাজকে ডেকে দেয়। আমি চাই না আমার স্বামী জাহান্নামী হোক। মৌ রাজের মাথায় কাছে গিয়ে দু’বার ডাক দিতেই রাজ ঘুম থেকে উঠে’ চোখ কচলিয়ে কচলিয়ে বলতে লাগলো ‘ এই ডাকছিস কেন আমায়?’
– ফজরের আযান হয়ে গেছে। অযু করে নামাযটা পড়ে নেন।
– এই তোকে না বলছি নামাযের জন্য ডাকবি না?
– আমার ভালোর জন্য কি ডাক দেয়? আপনার জন্যই তো ডাকি।
– রাজ এবার রেগে গিয়ে মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো’ আমার ভালো তোর বুঝতে হবে না। রক্ষিতাদের আবার নামায। পারলে তুই গিয়ে পড়।
– রাজের মুখে রক্ষিতা কথা শুনে দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে জায়নামাযে গিয়ে বসলো। নামায শেষ করে প্রতিদিনের মতো আজও বললো’ হে আল্লাহ আমার স্বামীকে আপনি হেদায়েত দেন। ‘আমি আমার জন্য কিছু চাই না। আপনি আমার স্বামীকে কবুল করে নেন। তার ওপর কোন আযাব দিবেন না। যা দেওয়ার আমাকে দেন। তবে হে আল্লাহ্ সহ্য করার শক্তিটাও আপনি আমাকে দিবেন।

-নামায শেষ করে মৌ ব্রেকফাস্ট রেডি করতে চলে যায়। এদিকে রাজ ঘুম থেকে উঠে বেলকণীতে যখন যায়। এমন সময় রাজের ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখে মা ফোন করেছে। রাজ ফোনটা ধরেই বললো’ মা কোথায় তুমি?’
– আর বলিস না তোর মামা বাড়ি আসছি। তোকে না গতকাল সকালে বললাম? আর শোন আমাদের ফিরতে সপ্তাহ খানেক লেট হবে। আর ঠিকমতো থাকিস। একদম বৌ মার সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না।
– আচ্ছা মা। আর তুমি তাড়াতাড়ি এসো।

– আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।
– রাজ ফোনটা কেটে দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে যখন রেডি হচ্ছে। এমন সময় মৌ বললো ‘ আপনাকে নীল কোর্টে অনেক সুন্দর লাগে।
– রাজ গায়ে থেকে নীল কালারের কোর্ট খুলে কালো রঙেরটা পড়ে বের হয়ে গেল।

– রাজ অফিস গিয়ে দেখে তার চেয়ারে সুমাইয়া বসে আছে। রাজকে দেখেই সুমাইয়া জড়িয়ে ধরে।
– এই কি করছো? এটা তো অফিস কেউ দেখবে তো।
– আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। আর শোন মা, রিত্ত তারা কেমন আছে?
-হ্যাঁ ভালো আছে।
– চলো আজ তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো।
-কেন?
– শাশুড়ীকে দেখতে যাবো তাই।
– মা আর রিত্ত বাসায় নেই। মামা বাড়ি গেছে?
– সত্যি বলছো?
– হুম।
– তাহলে চলো, আজ তোমাদের বাসায় রোমাঞ্চ করবো।
– মৌ কি ভাববে?
-তুমিও না। ও কিছু ভাববে না। ও তো চুক্তি করেছে। কিছুই বলবে না। আর তুমি তো ডির্ভোস দিচ্ছোই।
– আচ্ছা চলো। রাজ সুমাইয়াকে নিয়ে বাসায় এসে পড়ে।
– বাসায় এসে দেখে মৌ রুমে বসে আছে।
– সুমাইয়া মৌকে দেখেই বলে,জান একে তুমি ভাড়া করেছো?
– হুম।
– আচ্ছা এই যে তুমি আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করো তো।
– মৌ কিছু বলছে না। ফ্যালফ্যাল করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো? এখনো যাচ্ছো না কেন? সুমাইয়া কি বললো শুনতে পারলে না?
– মৌ বুকে পাহাড়সম কষ্ট চাঁপা দিয়ে মুচকি হেসে বললো’ যাচ্ছি। ‘
-মৌ চলে গেলেই, সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে। এই সুমাইয়া কি হচ্ছে?
– কি হচ্ছে বুজো না? আমার জানকে আদর করছি। সুমাইয়া রাজকে বিছানায় ফেলে দিয়ে রাজকে আলিঙ্গণ করে নেয়।
– এদিকে মৌ নাস্তা রেডি করে নিয়ে এসে যখন দরজা ধাক্কা দেয়। এমন সময় দেখে সুমাইয়া আর রাজ অধঃ উলঙ্গ। মৌ আর সহ্য করতে পারে না।
– সুমাইয়া হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে মৌকে এভাবে দেখতে পেয়ে রাগে ফুসলে উঠে। মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে’ তুই রুমে আসবি দরজা নর্ক করে আসবি না?
– সরি ম্যাডাম ক্ষমা করে দিবেন। আমি বুঝতে পারিনি। এই নেন আপনাদের নাস্তা।

– আচ্ছা এখন তুই যা। আমরা না ডাকলে আর রুমে আসবি না।
– মৌ রুম থেকে বের হয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। মনে হচ্ছে তার কলিজাটা কেউ কুচিকুচি করে কাঁটতেছে। মৌ পারছে না তার ভাগটা সুমাইয়াকে দিতে। মনে প্রাণে রাজকে সে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছে।

– মৌ এর খুব কষ্ট হলে, সে নামায পড়ে। এতে কষ্ট কম হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হলো না।

– এদিকে রাজ আর সুমাইয়া বালিশ নিয়ে মারামারি করার সময় সুমাইয়ার হাতের বালিশটার কভার খুলে যায়। আর সাথে সাথে বালিশের কভার থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আসে।
– রাজ কাগজটা হাতে নিয়েই দেখে মৌ এর পেগন্যান্সি রির্পোট। রাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
– রাজ রির্পোট নিয়ে দৌড়ে বের হয়। রাজের মন চাচ্ছে কালনাগিনীটাকে এখনি মেরে ফেলি। রাজ রুম থেকে বের হয়েই দেখে, মৌ নামাযের মোনাজাতে। মোনাজাত শেষ করে যখন জায়নামায থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাজ তখনি মৌ এর গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। মৌ মাথা ঘুরে জায়নামাযে পড়ে যায়। নাক ফেটে রক্ত জায়নামাযে পড়তে থাকে ।

মৌ এক হাতে নাক চেপে ধরে রাজের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকায়। রক্তে হাত ভেসে যাচ্ছে।

– এই তুই কার সাথে পেট বাজিয়েছিস? আর কার সন্তান আমাকে গছিয়ে দিতে চাইছিস?

– মৌ কিছু বলতে পারছে না। ফ্যালফ্যাল করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
– এই এভাবে তাকাবি না। তোর নষ্ট মুখ আমার দেখতে মন চাচ্ছে না। আমারটা খাস আমারটা পড়িস,। আমার বাড়িতে থাকিস তার পর অন্য ছেলের কাছে নিজের দেহ বিলিয়ে দেস।

– আপনি প্লিজ চুপ করেন। আমার গর্ভে যে সন্তান এটা আপনার কয়েক মিনিটের ভালোবাসার ফসল।
-এই চুপ কর, নষ্টা মেয়ে। আমি তোকে নিজ হাতে পিল খাইয়েছি। আর তুই কি না বলিস তুই প্রেগনেন্ট! একটা পাগলেও বলবে তোর গর্ভে একটা জারজ সন্তান।
– প্লিজ চুপ করবেন আপনি? আল্লার শপথ করে বলছি আমার গর্ভে যে সন্তানটা সেটা আপনারই। আপনি সেদিন যখন আমাকে পিল খাওয়ানোর জন্য পিল মুখে তুলে দেন। আমি তখন পিলটাকে খায়নি মুখেই রেখেছিলাম। পারিনি সেদিন পিল নামক ছোট্ট বিষটা আমার ভেতর জন্ম নেওয়া একটা জীবনকে হত্যা করতে। আমি পারিনি, আপনার দেওয়া পিল খেতে। আর আমার গর্ভে যে সন্তান বড় হচ্ছে সেটা আপনারই সন্তান। ভয় পাবেন না চুক্তি শেষ হলে চলে যাবো। আপনাকে আমার গর্ভের সন্তানের পরিচয় দিতে হবে না। তবুও জারজ বলবেন না। জন্মের আগে ওর নামে মিথ্যা অপবাদ আল্লাহ্ সহ্য করবে না। আর বিশ্বাস করেন আপনি ছাড়া কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আপনি আমাকে রক্ষীতা বা পতিতা যা কিছুই ভাবেন না কেন। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবেই ভাবি। যতদিন চুক্তি আছে। ততদিন আপনি আমার স্বামী। মহান আল্লাহ্ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে আপনাকে বিয়ে করেছি।

– মৌ এর মুখে এমন কথা শুনে, সুমাইয়া অগ্নি মূর্তি ধারন করে। মৌ এর বামগালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
– মৌ সুমাইয়াকে কিছু না বলে রাজের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকায়। নিজের স্বামীর সামনে অন্য একটা মেয়ে তার গায়ে হাত তুলল। তাতে রাজের দৃষ্টিপাত হলো না। মৌ এর চোখের পানি আর বাধা মানলো না। চোখের পানি মুক্তোর দানার মতো টপটপ করে পড়ছে।

– বাহ! বাহ! দেখছো জান কেমন কান্নার অভিনয় করছে? আরে চুক্তি করছো ভালো কথা তাই বলে পেটে বাচ্চা নিতে হয়?আর শোনেন মিস মৌ রাজ জন্মগত ভাবেই আমার সম্পত্তি। আমার জান। আমরা পরিবার মেইনটেন করে খুব শ্রীঘই বিয়ে করছি। নেক্সটাইমে স্বামীর অধিকার নিয়ে রাজের দিকে হাত বাড়াবে না। রক্ষিতা, রক্ষিতার মতো থাকবে। চলো যান সময় নষ্ট হচ্ছে। জানি না কবে আমার জানকে সম্পূর্ণ আপন করে পাবো। আমার অনেক ভয় হয়। যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। তাহলে আমি বাঁচবোই না।

– রাজ সুমাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলল’ কি রকম অলক্ষণে কথা বলছো। তোমার কিছু হলে আমি কি করে বাঁচবো।

– আচ্ছা চলো রুমে যাবো। আবার বাসায় যেতে হবে।

– সুমাইয়া আর রাজ তাদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা বন্ধ করে দিয়েই সুমাইয়া রাজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল বিছানায়। রাজের বুকের উপর শুয়ে রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
– আচ্ছা সুমাইয়া তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
– কই না তো ভালোবাসি না। তবে কি জানো রাজ? আমি যতবার নিঃশ্বাস নেয় তার চেয়ে বেশীবার আমার জানপাখিটাকে মিস করি। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো। বিদেশের মাটিতে যখন ছিলাম তখন তোমার একটি ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাতাম। আমার মনে হতো তুমি আমার সাথেই আছো। প্রতিনিয়ত তোমাকে মিস করতাম। জানো, জান তুমি কখনো ছেড়ে যেতে চাইলে আমায় গলা টিপে মেরে ফেল। তার পর ছেড়ে যেয়ো। আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে হারাতে পারবো না। সুমাইয়া কথাটা বলেই কেঁদে দিল। রাজের বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা করতে লাগল। সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ পাগলী আমার। আমি মরে গেলেও আমার আত্মাটা তোমায় ভালোবাসবে। ‘

– মরতে হবে না, এই বলে সুমাইয়া তার ওষ্ঠ যোগল, রাজের ওষ্ঠযোগলকে সাদরে আলিঙ্গন করে নিল। দু’জনেই পান করল ভালোবাসার অমীয় সুধা।

– আচ্ছা রাজ তুমি কি যাদু দেখবা?
– যাদু সেটা আবার তুমি ক্যামনে?
– বলো দেখবে কি না?
– আচ্ছা তুমি কি আমেরিকা থেকে যাদু শিখে আসছো?
– রাগাবা না কিন্তু।
– রাগালে কি করবে?
– রাগালে কামড় দিবো।
– আচ্ছা কামড় দিতে হবে না। দেখাও যাদু।

– সুমাইয়া আস্তে আস্তে বুকের কাপড় সরাচ্ছে।
– এই এই কি করছো কাপড় খুলছো কেন?
– আহা যাদু দেখার সময় কথা বলতে হয় না। চুপ করে দেখো।
– সুমাইয়া বুকের কাপড়টা অনেকটা সরাতেই রাজ দেখতে পেলো, সুসাইয়ার বুকের উপর ট্যাটু করা। রাজ মাই হার্ট!
– রাজ দেখেই কেঁদে ফেলল। কান্নাজনিত কন্ঠে বলল’সুমাইয়া এতো ভালোবাসো আমায়?
-কই ভালোবাসি না তো। আমি আমাকে ভালোবাসি। তুমি যে আমার জান। তোমাকে ছাড়া বাঁচব ক্যামনে?

-হুম আমাকে নিয়েই বাঁচবে। আর শোনে তিন থেকে চারমাসের মাঝেই প্ল্যান সাকসেস হবে। মা বলছে তার শেয়ার আমার নামেই লিখে দিবে। তখন মা আর আমার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলতে পারবে না। মৌকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো। সত্যি বলতে মৌ এখন দাবার গুটি। ওকে দেখে শুনে চালতে হবে।

-হুম মাই জান। এখন আদর করো। পাপ্পি দাও।

– এদিকে মৌ নাকে মুখে পানি দিয়ে অন্য রুমে বসে আছে। মৌ পেটে হাত দিয়ে বলছে এই তুই শুনতে পাচ্ছিস? শুনতে পাচ্ছিস তুই? মা’র কথা শুনতে পাচ্ছিস? শোন না, তোর বাবাইয়ের কথায় রাগ করিস না কেমন? তোর বাবাইটা অনেক রাগি তাই না? আর হে শোন তুর বাবাই তোকে কোন কিছু বললে কান ধরে থাকবি। শুধু আমার কথা শুনবি মনে থাকবে? আর কাঁদবি না কেমন। তুই যদি কাঁদিস তাহলে আমিও কেঁদে দিবো। এই বলে মৌ ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। চোখের পানি আল্লাহ্ যে কত দিয়েছে, শুনেছি মা জন্ম দেওয়ার পরই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। মায়ের দুধটাও আল্লাহ্ আমার ভাগ্য রাখে নাই। জন্ম নেওয়ার পর পরই নাকি গগণ বিদায়ী কান্না করেছিলাম। আচ্ছা হে আসমান জমিনের প্রভু আমাকে কাঁদাতে কি তোমার ভালোলাগে? যদি ভালো লাগে সহ্য করবার ক্ষমতা দিয়ো। আমি তোমার খুশির জন্য আমৃত্যু কেঁদে যাবো। আর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় দাদির প্রতি ছোটবেলা বাবা যখন গলা চেপে ধরেছিল। তখন কেন বাঁচিয়েছে আমাকে। অপয়া মেয়েদের বাঁচতে হয় না। অপয়ার কারনেই মা’কে জন্মের পরপরই বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি। যে বাবা আমাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেছিল সে বাবাকেই কষ্ট দিয়েছি। বাবা আজও আমাকে মায়ের হত্যাকারী ভাবে। যদি আমি পৃথিবীতে না আসতাম তাহলে নাকি মা মরতো না।

– এদিকে মৌ এর পাশে রাখা তার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজছে। ফোনটা একবার রিং হতেই দ্বিতীয়বার, মৌ চোখের পানি মুছে ‘ ফোনটা রিসিভ করেই বলল’ মা আসসালামু আলাইকুম, আপনি কেমন আছেন?’
– হ্যাঁ মা তোর দো’আতে ভালই আছি। আমার মা টা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ্! মা আপনার শরীর কেমন?
– ভালো। আচ্ছা রাজ কোথায়? বাসায় না অফিসে?
– মা রাজ বাসায় আমার একা একা থাকতে কষ্ট হবে বলে রাজ অফিসে যায়নি।

– তাই বুঝি, সত্যিই মা আমি যা বাইশ বছরে পারিনি। তুই তা কয়েকদিনেই করে দেখিয়েছিলি। তোর প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। আচ্ছা হাদারামটা খেয়েছে? আর তুই খাইছিস মা?
– হ্যাঁ মা, জানো আজকে রাজ বিরিয়ানি এনেছিল। ওই নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। বলেই মৌ আর কান্না আকঁটাতে পারলো না ফোন ধরেই চাঁপা কান্না করে দিল।

– কি হলো? মা তুই কাঁদছিস?
– না মা আপনার আর রিত্তের জন্য মন খারাপ লাগছে। তাই একটু।
– ধূর পাগলী কাঁদে না! আমরা তিন -চারদিন পর এসে পড়বো।
– আচ্ছা মা। নামায পড়বো। এখন রাখি।

ফোনটা কেটে দিতেই চোখ যায় তাদের রুমের দিকে। দরজাটা এখনো আঁকটানো। মনে হচ্ছে কেউ মৃত্যুর যন্ত্রনা দিচ্ছে। বাঙালি মেয়ে সব পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না । হঠাৎ ঘড়ির কাটা জানান দিল, দু’টা বাজে। মৌ তাড়াহুড়া করে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামায শেষ করে রুম থেকে বের হতেই দেখে, রাজ আর সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবেন আপনি?
– রান্না করছো?
– নামায শেষ করলাম। আপনারা একটু বসেন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
– কি! তার মানে এখনো রান্না হয়নি?
– রাজ এই মেয়েকে তুমি বাড়ির রাণী করে নিয়ে আসছো?এই শোন আধা ঘন্টার মাঝে যেন রান্না করে নিয়ে আসা হয়। না হলে তোর কাপড় গা থেকে খুলে পেটাবো…….

চলবে

লিখা_রাইসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here