চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৪

0
2378

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৪

বাঙালি মেয়ে সব পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না । হঠাৎ ঘড়ির কাটা জানান দিল, দু’টা বাজে। মৌ তাড়াহুড়া করে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামায শেষ করে রুম থেকে বের হতেই দেখে, রাজ আর সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবেন আপনি?
– রান্না করছো?
– নামায শেষ করলাম। আপনারা একটু বসেন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
– কি! তার মানে এখনো রান্না হয়নি?

– রাজ এই মেয়েকে তুমি বাড়ির রাণী করে নিয়ে আসছো?এই শোন আধা ঘন্টার মাঝে যেন রান্না করে নিয়ে আসা হয়। না হলে তোর কাপড় গা থেকে খুলে পেটাবো। ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে। মৌ কিছু না বলে চলে গেল। শরীরটাও খারাপ লাগছে মাথাটা কেমন যেন জীম জীম করছে। তবুও তাড়াহুড়া করে রান্না করে যাচ্ছে আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। যেন রান্নাটা শেষ করতে পারে।

কিন্তু কেমন যেন সময় তারাতাড়ি যাচ্ছে, আর শরীরটা আরো অস্তির হয়ে আসছে। আজ শরীর থেকে অনেক ব্লাড গিয়েছে। শরীরটা যেন ক্রমশ অবস হয়ে আসছে। চোখ দু’টি বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও রান্নার কাজ করে যাচ্ছে মৌ। কিন্তু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মৌ রান্না ঘরের মেঝেতে বসে পড়ল। বসার পরে শরীরটা নিয়ে আর দাঁড়ানোর ক্ষমতা পেল না। চোখ দু’টি কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াল নেই।
– এদিকে সুমাইয়া রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে বলছে ‘ জান তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
– এতো সুন্দর বউ এর দিকে ফিরেও তাকাও না।
– কি বলো? সুইট হার্ট আমার চোখে তুমিই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তুমি আমার নিশ্বাস।
– হুম আমার জান। লাভিউ। জান আমার না ক্ষুধা লাগছে। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল রক্ষিতাটার এখনো খবর নেই।
– সুইর্ট হার্ট রাগ করো না। দেখছি বিষয়টা কি?
– তোমার যেতে হবে না। আমি দেখছি।
– সুমাইয়া রাজের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেল রান্না ঘরে। রান্না ঘরে তাকিয়ে দেখে কোথাও মৌ নেই।
– সুমাইয়া জোরে জোরে রাজকে ডাকতে লাগল। এই রাজ তুমি কোথায় দেখে যাও তোমার ভাড়া করা মেয়েটা পালিয়েছে। রাজ দৌড়ে রান্না ঘরে আসে। সত্যিই তো রান্না বসিয়ে রেখে কোথায় গেল। হঠাৎ সুমাইয়ার চোখ রান্না ঘরের মেঝের দিকে তাকাতেই দেখে মৌ অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে।
– রাজ দেখছো সামান্য কাজ দেখেই অসুস্থতার বান ধরেছে।
– সুমাইয়া চুপ করো। দেখি কি হয়েছে। রাজ মৌ এর কাছে বসতেই বুঝতে পারলো মৌ অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– রাজ মৌকে কোলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। সুমাইয়া এসব দেখে রাগে ফুলসে ওঠছে।

– হঠাত সুমাইয়ার ফোনটা বাজতে থাকে। সুমাইয়া ফোন ধরেই বললো বাবা?
– মারে তুই কোথায় আছিস?
– বাবা রাজের সাথে তাদের বাসায়।
– মা’ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
– সুমাইয়া ফোন কেটে দিয়েই বললো ‘ জান এখন আসি। কাল সারাদিন তোমার সাথে থাকবো। মনে হয় বাবার শরীরটা আবার খারাপ করেছে। আমি আসি কেমন?
– এই বলেই সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল’ আসি জান?
– আচ্ছা।

– সুমাইয়া যখন চলে যাবে এমন সময় রাজ সুমাইয়ার হাতটা ধরে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল এবার যাও।
– সুমাইয়া মুচকি হেসে চলে গেল।
– সুমাইয়া চলে গেলে রাজ এর দৃষ্টি পড়ল মৌ এর উপর। মৌ এর ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে। গালের ভেতর বুঝা যাচ্ছে পাঁচ আঙুলের ছাপ। রাজ কি করবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সত্যি মায়া লাগছে। মুখটা মায়াবী লাগছে। নাকে এখনো রক্ত জমাট বেঁধে আছে। না এভাবে থাকলে যদি মেয়েটা মারা যায়। জানি না মেয়েটা কেন যেন সন্তান কন্সিভ করলো। বাচ্চাটা নিয়ে কি আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। না আপাতত দেখি জ্ঞান ফিরাতে পারি কি না।
– রাজ পানি নিয়ে এসে মৌ এর মুখে ছিটিয়ে দিতেই মৌ মিটিমিটি করে তাকালো। মৌ চোখ খুলেই প্রথমে রাজের মুখটা দেখতে পেলো। মৌ বুঝতে পারলো তার মাথাটা রাজের উরুতে।

-খুব লজ্জা লাগছে মৌ এর! সারাদিনের নির্যাতন। রাজের থাপ্পর যেনো রাজের মুখের দিকে তাকাতেই সব ভুলে যায় মৌ। মৌ এর হাতটা রাজ ধরতেই চমকে যায়। হাত-একদম হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল ছোটবেলায় শুনেছে মানুষ মরে যাওয়ার আগে নাকি শরীর একদম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এদিকে মৌ এর হাত-পা তো বরফের মতো হয়ে যাচ্ছে। মৌ যদি সত্যিই মরে যায় তাহলে কেমন হবে? না এ হতে দেওয়া যাবে না। এদিকে মৌ এর শরীরে কাঁপনি দিয়ে জ্বর আসছে। রাজ রান্না ঘর থেকে সরিষার তেল এনে, মৌ এর হাতে পায়ে লাগাচ্ছে। তার পরও মৌ এর শরীর গরম হচ্ছে না। কাঁপুনি যেন বেড়েই চলছে। মৌ জ্বরে আর তাকাতে পারছে না। মনে হচ্ছে দিনে চর আর রক্ত যাওয়ার জন্য জ্বর এসে পড়ছে। রাজ মৌ এর উপর কম্বল জড়িয়ে দিয়ে হাত পায়ে তেল মালিশ করতে লাগল। কিন্তু শরীর গরম হওয়ার কোন নাম নেই। এদিকে হসপিটালে নিতে গেলেও তিন ঘন্টার মতো লাগবে। রাতো অনেক হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়ল পুরুষের স্পর্শে মেয়েদের শরীর গরম হয়। রাজ কোন কিছু চিন্তা না করেই কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল। মৌ এর শরীরটা কাপঁছে। রাজ মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপরও মৌ এর কাপনি কমছে না। রাজ এবার মৌ এর উর্বর ঠোঁটে তার ঠোঁট খানা মিলিয়ে হারিয়ে গেল অন্য ভূবনে। মৌ কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে। এদিকে এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর মৌ এর শরীরটা অনেকটা গরম হয়ে যায়। রাজ এবার মৌকে ছাড়তে চেয়েও ছাড়তে পারছে না। কোন এক অজানা মায়ায় যেন আকঁটে যাচ্ছে। মৌ ঘুমের ঘরেই রাজকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল। রাজও রেসপন্স করল। রাজের কাছে কেমন যেন লাগছে। নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে। চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।

-সকাল বেলা মৌ এর ঘুম ভাঙতেই দেখে কোন এক প্রাচীরে সে আবদ্ধ। যে প্রাচীরে সে সারাজীবন থাকতে চাই। প্রাচীরটা আর কোন কিছুই না রাজের বুক। মৌ তার সকল কষ্ট ভুলে গেছে। দিনে রাজ আর সুমাইয়া কি বললো তা আর মনে নেই। মনে হচ্ছে রাজের বুকটা তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মৌ এর চোখে জল এসে যায় কাঁদতে কাঁদতে রাজের শার্টটা ভিজে যায়। রাজ সজাগ পেয়েই দেখে মৌ তার বুকে। রাজ মৌকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে ‘ সরি আমি ইচ্ছা করে করিনি এসব। কাল রাতে আপনার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাই এসব করি। মৌ কিছু বলে না। লজ্জায় তার মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে যায়। রাজেরর হঠাত করেই মনে পড়ে সুমাইয়ার কথা। সে আজ রাতে কি করলো? এটাতো তার আমানত। সুমাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

-সকাল বেলা রাজ শাওয়ার নিতে চলে যায়।
– রাজ শাওয়ার নিয়ে বের হতেই মৌ শাওয়ার নিতে চলে যায়।
-মৌ শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখে, রাজ নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। রাজকে দেখে মৌ প্রেমে পড়ে যায়। হঠাত মৌ এর মনে পড়ে, সে মিথ্যা স্বপ্ন দেখছে। আকাশের চাদ যে আর ধরা যায় না। তাকে দূর থেকেই দেখা লাগে।
– হঠাৎ রাজ মৌ এর দিকে তাকিয়েই চিৎকার দেয়।
-মৌ তার দিকে চেয়েই দেখে গোসল নিয়ে যে টাওয়াল পরেছে তা ফ্লরে। মৌ এবার এক চিৎকারে চেঞ্জিং রুমে চলে গেল। কোন রকম গায়ে কাপড় জড়িয়ে বের হতেই, রাজ মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো’ রাত্রে যা করেছি তা সবকিছু তোকে বাঁচাতে। এ ভাবে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন হয়ে আমাকে তোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করালে কি আমি তোর প্রেমে পড়ে যাবো?রাজ কখনো রাস্তার রক্ষিতার দিকে ফিরেও তাকায় না। আর হ্যাঁ কোনদিন যদি আজকের মতো করতে দেখি, তাহলে তোর কি হবে আল্লাহ্ জানে। রক্ষিতা কোথাকার।

– রাজের মুখে রক্ষিতা কথাটা শুনে মৌ এর গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। মৌ কান্না থামাতে পারছে না। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল’ আপনি তো জানেন আমি শাড়ি পরতে পারি না । আর টাওয়াল তো আরো পরতে পারি না। এমন সময় পিছন থেকে কে যেন বললো’ কি হয়েছে জান? রক্ষিতাটা তোমায় কিছু বলেছে।

– মৌ পিছনে চেয়েই দেখে সুমাইয়া। মৌ কিছু না বলে চলে গেল।
-না কিছু বলেনি।

– আচ্ছা বলেছিলাম না রাজ তোমাকে, আমরা আজ সারা শহর ঘুরবো।
– হ্যাঁ ঘুরবো তো।
– তাহলে চলো!
– হুম। চলো।
– মৌ রাজকে চলে যেতে দেখে বললো’ খেয়ে যাবেন না?’
– না। আমার ক্ষুধা নেই। এই বলে সুমাইয়ার সাথে রাজ চলে গেল।
– মৌ রুমে বসে বসে কাঁদছে এমন সময় মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল’ আপনি একটু হসপিটাল আসবেন? রির্পোট গুলো রেডি। যদি আসতেন? আর হ্যাঁ পারলে টাকাটা নিয়ে আসবেন। মৌ ফোনটা কেটে দিয়েই ভাবতে লাগল এখন রাজের কাছে টাকা চাইলে কি ভাববে?

– এদিকে রাজ আর সুমাইয়া রেস্টুরেন্টে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে বসে একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠল। ফোনটা বের করেই দেখে ‘ মা ফোন দিয়েছে।’
– হ্যালো মা।
– হ্যাঁ বাবা কেমন আছিস?
হ্যাঁ মা ভালো আছি। আর তোমরা কেমন আছো?
– হ্যাঁ ভালো। তোর কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
– কি যে বলো মা! মৌ থাকতে আমার কোন সমস্যায় হবে না। তুমি মামা সুস্থ হলে এসো।
– আচ্ছা বাবা, মৌ এর দিকে খেয়াল রাখিস।
– কি যে বলো মা, মৌ তো আমার সাথেই। মৌকে খাইয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা ভালো থাকিস। আর আমরা পরশু এসে পড়ছি।
– আচ্ছা। ফোন কেটে দিতেই সুমাইয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল। জান আজকে পাস্তাটা অন্য রকম সাধ ছিল। তাই বুঝি। তা এতো সাধ হলো কিভাবে?
– আরে আমার জান আমাকে খাইয়ে দিয়েছে যে তাই।
-লাভিউ হার্ট।
-হঠাৎ রেস্টুরেন্টে সুমাইয়া আর রাজের ফেন্ডদের সাথে দেখা হয়ে যায়। কথায় কথায় সুমাইয়া বলে দেয় আজকে রাজের বাড়িতে মা-আর আপু নেই। তাই সে বাড়িতে পার্টি হবে। রাজও আর কিছু বলে না। বন্ধুদের বাসায় আসতে বলে সুমাইয়া আর রাজ বাসায় এসে পড়ে।

– রাজ বাসায় আসতেই দেখে মৌ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

– জান তোমার রক্ষিতাকে বলো না অন্য রুমে যেতে। তোমাকে খুব কাছে পেতে মন চাচ্ছে। এমন সুযোগ তো বারবার পাবো না। হুম হার্ট। আচ্ছা বিয়ের আগে এতোটা ঘনিষ্ট হওয়া কি ঠিক?
– জান তুমি আমায় ভালোবাস না। ভালোবাসলে এ কথা বলতে পারতে? আমার মন প্রাণ তো সে কবেই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। আর আমার বিশ্বাস আছে আমার জান আমাকে ঠকাবে না। আমায় অনেক ভালোবাসে।
– তাই বুঝি?
– হ্যা তাই।

– আচ্ছা মৌকে উঠিয়ে দিচ্ছি।
– এই মৌ, মৌ। দু’বার ডাক দিতেই মৌ ঘুম থেকে জেগে যায়। মৌ ঘুম ঘুম চোখে বলে কিছু বলবে?
– তুমি অন্য রুমে যাও।
– আমার না শরীর খারাপ লাগছে খুব। একটু পর ওঠি?
– জান দেখছো নবাব জাদি কি বলে?
– মৌ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানা থেকে কোন রকম ওঠে, পাশের রুমে চলে যায়। মৌ চলে যেতেই সুমাইয়া ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়।

– এই দরজা লাগাচ্ছো কেন?
– ন্যাকা তুমি কিছুই বুঝো না?
– না তো।
– কাছে আসো বুঝাচ্ছি।
– না আমার ভয় করে।
– ভয় করবে না। আসো।
– রাজ কাছে যেতেই সুমইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আচ্ছা জান চোখ বন্ধ করো ।
– কেন?
– সারপ্রাইজ আছে।

– রাজ চোখ বন্ধ করে বুঝতে পারছে সুমাইয়া গা থেকে কাপড় খুলছে। রাজ সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, এটা বাসর রাতের জন্য থাকুক।
– হুমম। বিয়ে যে কবে করবে তুমি?
– আমার অনেক ভয় হয়। রক্ষিতাটা যেমন করে, তোমাকে যদি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। আমি সত্যি মরো যাবো দেখো। তুমি আমার জীবন। তাই তোমাকে সব দিতে চাই। তবুও, তুমি যেয়ো না।
– ধূর পাগলী, তোমাকে ছাড়া যে আমিও বাঁচবো না। বড্ড বেশি ভালোবাসি পাগলীটাকে। সারাজীবন ভালোবাসবো।
– হুম খুব ভালোবাসো। একটা পাপ্পি ও দিচ্ছো না কিপ্টা কোথাকার।
– তুমি সত্যিই কিপ্টা।

– দাঁড়াও কিপ্টা না কি দেখাচ্ছি। এই বলে রাজ তার ওষ্ঠ দ্বয়, সুমাইয়া, ওষ্ঠ যোগলে স্পর্শ করে।

– এদিকে মৌ এখনো খায়নি রোযা রেখেছে । রোযা নিয়ে রাজ আর সুমাইয়ার এসব দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না তার। মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেয় । কিন্তু না। আর প্রতিদিন এসব দৃশ্য সহ্য হয় না। মানুষ কিভাবে পারে এসব করতে। দেখতে দেখতে মাগরিবের নামাযের আযান হয়ে যায়। মৌ হালকা কিছু খাবার দিয়ে ইফতার করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। নামায শেষ করতেই কলিং বেলটা বেজে ওঠে।মৌ দরজা খুলতেই দেখে, অনেকগুলো লোক কয়েকজন ছেলে আর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– আপনারা কে?
– আমরা রাজের ফেন্ড! রাজ বাসায় আছে।
– হ্যাঁ আছে। এদিকে কলিং বেলের শব্দ শুনে রাজ আর সুমাইয়া এসেই দেখে, রিফাত,
নিশাত, রকিবেরা আসছে। রাজ তাদের নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বলে’ তোরা কি ড্রিঙ্কস নিয়ে আসছিস?
– হ্যাঁ ওসবে তোর চিন্তা করতে হবে না। তোর রুমে সাউন্ড বক্স আছে? হ্যাঁ আছে।

– আর হ্যাঁ মৌ, তুমি আমাদের জন্য রান্না করবে। ফ্রিজে সবকিছু রাখা আছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই। মৌ এর সহ্য হচ্ছে না। এতোগুলো বাহিরের লোক তার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।

– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি রান্না করবে। আর তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল রুমে যায়।

– রুমে গিয়েই, একেকজন একেক কথা বলছে। সুমাইয়া ড্রিঙ্কস করছে সাথে রাজও। সবাই বক্সে বাজানো হিন্দি গানের তালে তালে নাচছে। সুমাইয়া রাকিবের সাথে তালে তালে নাচছে, রাজ নিশাতের সাথে। সবাই মনে হয় অন্য একজগতে আছে। আর কিছুক্ষণ পরপর, ড্রিংঙ্কস করছে।

– এদিকে মৌ এর রান্না করা শেষ। খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, এশার নামায কাযা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রুমে ফুল ভলিউমে, গান চলছে। এতো শব্দের ভেতরে নামায পড়বে কেমনে।

– মৌ রাজকে গিয়ে দেখে, মাতালামো করছে আর গানের তালে তালে নাচছে। মৌ রাজকে গিয়ে বলল’ আপনি একটু গানের সাউন্ডটা কমিয়ে দিবেন? আমি নামায পড়তাম।
– রান্না হইছে?
– হ্যা হয়েছে।
-তোর নামায পড়তে হবে না। চল আমার সাথে ডান্স করবে।
– না আপনার মন চাই আপনি করুন।
– এমন সময়, অন্য একটা ছেলে মৌ এর হাতটা ধরেই বলে, কামঅন বেবী ইউ আর সো হট। চলো ডান্স করি।
– প্লিজ ছাড়েন আমার হাত।
– কি হলে করবে না? এই বলে ছেলেটা যখন মৌ এর কাছে আসতে চায়।
মৌ তখনি এবার ছেলেটার গালে কষে চড় মারে।
– সবাই মৌ এর চড় মারা দেখে নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

– এই দোস্ত, তুই বাড়িতে পার্টির কথা বলে আমাদের এভাবে অপমান না করলেও পারতি। একটু ডান্সই তো করতে চেয়েছিলাম।

– এই রকিব তো তোমার হাতটাই ধরেছিল। নাঁচলে কি হতো?
– ছিঃ রাজ লজ্জা করছে না নিজের বউকে অন্যের সাথে রোমাঞ্চ করার কথা বলতে? আর যে ছেলে মেয়ে জাতিকে সম্মান করতে পারে না। তাকে একটা কেন আরো থাপ্পর দিলেও কম হবে।
– মৌ এর কথা শুনে, সবাই বললো’ রাজ দোস্ত আমরা আসি। ‘ তুই এমন করে আমাদেরকে অপমান না করলেও পারতি। এই চল সবাই।
– রাজ সবাইকে থাকতে বললেও সবাই চলে গেল। সবাই চলে গেলে, রাজ মৌকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লরে ফেলে দিয়ে বলে’ তোর ভাগ্য আমার বন্ধু তোর সাথে ডান্স করতে চেয়েছিল। আর এসব এখন কমন ব্যাপার।
– এই জান তুমি কাকে কি বলো, যে মেয়ে টাকার লোভে রক্ষিতা হতে পারে। তার আবার সম্মান।
– এই যে মিস, আমি রাজের বিয়ে করা বউ। কোন রক্ষিতা নয়।
– দেখছো জান? কি বলে?
– রাজ এবার রাগ সহ্য করতে না পেরে মৌ এর গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দিল। রাজের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। এই তুই সেচ্ছায় চুক্তিতে রাজি হয়েছিস না। ছয়মাসের জন্য ছয়লাখ টাকা! এটা দিয়ে তোর মতো ১০ টা মেয়েকে রক্ষিতা করে রাখা যেত। নির্ঘাত মা তোকে পছন্দ করেছিল বলে। আর তোকে তো বলেছিলাম, আমি সুমাইয়াকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচবো না। এখানে আমার কি করার আছে? আর তুই আমার চোখের সামনে থেকে বের হ।
– মৌ কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সত্যিই তো সে রক্ষিতা। টাকার জন্য সবকিছু করছি। এখানে রাজেরই বা দোষ কি? দোষ তো আমার কপালের।
– মৌ সোজা এসে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নামায শেষ করে, জায়নামাযেই ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে, যখন রাজকে ডাকতে যাবে, এমন সময় জানালা দিয়ে দেখে সুমাইয়া রাজের বুকের উপর শুয়ে শুয়ে বলছে’ জান তুমি রক্ষিতা রাখো আর যাই রাখো, মৌ এর গর্ভের সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে। তা না হলে পরে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে।
– তাই তো এটাতো ভাবিনি। আচ্ছা কিভাবে নষ্ট করা যায়?
– শোনো তুমি ওর একটু টেক কেয়ার করবে। কাল আমি ওষুধ এনে দিবো। সেটা দুধের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিবে। তারপর আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
– যদি না খায়? না খেলে, অন্য পন্থায় হাটতে হবে।
– কেমন?
– শোন মেয়েরা গর্ভবতী থাকলে, তার তলপেটে যদি লাথি দাও তাহলে মরে যাবে। এতে অনেকটা রিক্স। বাদ দাও কাল আমি মেডিসিন নিয়ে আসবো। তুমি যেভাবেই হোক বাচ্চাটা নষ্ট করো……..

চলবে

লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here