চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৬

0
2444

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৬

– এদিকে সুমাইয়া অনেকটাই সুস্থ। রাজকে ফোন দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা স্প্রে দিয়ে বললো ‘ রাজ এটা মৌ ঘুমানোর পর মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে মৌ। আর এমন সময় তলপেটে লাথি দিবে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। আর শোন খালি পায়ে দিবে।

-রাজ স্প্রে নিয়ে বাসায় এসে পড়ল। রাতে যখন মৌ ঘুমিয়ে গেছে। এমন সময় রাজ মৌ এর মুখে স্প্রে করে! স্প্রে করার পর মৌকে ঝাঁকি দিয়ে দেখে সেন্স আছে কি না। কিন্তু সত্যিই সেন্স নেই। রাজ মৌ এর পেটের কাপড়টা সরিয়ে পা টা তুলে জোরে করে লাথি মারবে যখন, এমন সময় রাজের মা রাজের রুমের পাশ দিয়ে বার্থরুমে যাচ্ছিল! রাজকে দাঁড়ানো দেখে বললো’ বাবা রাজ কি হয়েছে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন ওমন করে? বউ মার কিছু হয়েছে।
– রাজ পা টা সরিয়ে নিয়ে আসল। মনে মনে বলছে মা উঠার আর সময় পেলো না।
– এদিকে রাজের মা দরজা ধাক্কাচ্ছে! এই রাজ কি হয়েছে? সকাল থেকেই বুকটা কেন জানি ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে ওঠছে। দরজা খুল।

– রাজ দরজা খুলে দিতেই, রাজের মা মৌ এর পাশে এসে বসে। মৌ এর কপালে হাত রেখে বলে, মা তোর শরীর খারাপ লাগছে?
-মৌ কোন কথা বলছে না। রাজের খুব টেনশন হচ্ছে! মা যদি পরিকল্পনার কথা জেনে যায় তাহলে আমাকে তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে।

– এই রাজ কি ভাবছিস? বউমাকে হসপিটাল নিতে হবে কোন কথা বলছে না। কি হলো তুই এম্বুলেন্সকে ফোন কর।

– রাজ ফোনদিতেই গাড়ি এসে গেল। রাতেই মৌকে হসপিটালে এডমিট করা হলো। ডাক্তার মৌকে দেখে বললো’ অজ্ঞান হয়ে গেছে। আপনারা একটু আলাদা ভাবে কেয়ার নিবেন। কিছু হবে না।

– পরেরদিন মৌকে হসপিটাল থেকে বাসায় এনে, রাজের মা রাজকে বললো’ যে পর্যন্ত আমার বউমা মা হবে না ততদিন আমার সাথেই থাকবে। তুই কোন যত্ন নিতে পারিস না।

– কিন্তু মা ।

– কোন কিন্তু না। সেদিন যদি আমি ঘুম থেকে না উঠতাম। দেখা যেত খারাপ কিছু হয়ে যেত। তাই মৌ আমার সাথে থাকবে।

– আচ্ছা মা।
– এদিকে রাজের মা মৌকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয় না। সবসময় খেয়াল রাখে। রিত্তও মৌকে অনেক ভালোবাসে। সবসময় হাসিখুশি রাখে।

– কিন্তু এতো যত্নের মাঝেও মৌ দুশ্চিন্তায় ভোগে। একটা করে দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে বিপদ অগ্রসর হচ্ছে। পরিবারের মানুষগুলোর সাথে থাকতে থাকতে মৌ সবাইকে আপন কররে নিয়েছে।

-একদিন দুপুরে মৌ আর রিত্ত বসে আছে। রিত্ত মৌ এর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। রিত্ত তেল দিতে দিতে বললো’ ভাবি দেখ তোমার বেবীটা ঠিক আমার মতো হবে। দেখতে হবে না ফুপিটা কত ভালো। ভাইয়ার মতো হবে না।

– হুম হতেই হবে।

– এদিকে রাজ অফিসে গিয়ে সুমাইয়াকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বললো।

মৌ রিত্তের সাথে এটা ওঠা নিয়ে কথা বলছে এমন সময় রিত্তের পাশে থাকা ফোনটা বেজে ওঠল! ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে অবনী বললো’ রিত্ত আপু কাকা সকালে মারা গেছে। ফুফিকে নিয়ে তোমরা এখনি গ্রামে আসো।

– রিত্ত ফোনটা কেটে দিয়েই একটা চিৎকার মারল। রাজের মা এসে বললো’ কিরে রিত্ত কি হলো এভাবে কাঁদছিস কেন?’

– মা ছোট মামা মারা গেছে। রাজের মা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। রিত্তকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল’ চল মা তারাতারি রেডি হয়ে নে। আর মৌ মা তুমি বাসায় থেকো তোমার শরীরটাও ভালো না। আমরা চলে গেলাম। আর রাজকে তোমার কাছে রেখে গেলাম। আমাদের যেতেই ১০ ঘন্টা লাগবে নয়তো নিয়ে যেতাম।
– মৌ কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

– রাজের মা যাওয়ার আগে রাজকে ফোন দিয়ে সবকিছু বললো। সাথে মৌ এর যত্ন নিতেও বললো!

– রাজ, সুমাইয়াকে ঘটনাটা বলতেই সুমাইয়া বললো’ আজ আমি তোমার বাসায় থাকবো। ‘

-আচ্ছা! কিন্তু মামা যে মারা গেল খারাপ লাগছে!
– রাজ আমারো খারাপ লাগতেছে অনেক। কি করবো, দোআ ছাড়া তো কিছু করার নেই।

– আচ্ছা চলো একটু নদির পাড়ে যায় সেখান থেকে বের হয়ে সোজা তোমার বাসায় যাবো। তারপর সারারাত থেকে সকালে এসে পড়বো।
– কিন্তু আঙ্কেল?
– কি যে বলো বাবা তোমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছে।

– আচ্ছা তাহলে চলো।
– সুমাইয়া গাড়ি করে যাচ্ছে আর ভাবছে, আজ যে ভাবেই হোক মৌ এর বাচ্চা নষ্ট করতে হবে আজ রাতে। দরকার হলে আমি লাথি দিবো। যখন ঘুমিয়ে যাবে।

– মৌ এশার নামায পড়ে রাজের জন্য অপেক্ষা করছে। বারবার ঘড়ির কাটা দেখছে। হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠে। মৌ দরজা খুলেই দেখে রাজ আর সুমাইয়া। সুমাইয়াকে দেখেই মৌ এর বুকে কেমন করে ওঠে।
– মৌ কিছু না বলে রাজের রুম ছেড়ে দেয়।
– রাজ সুমাইয়াকে নিয়ে তার রুমে ঢুকার আগে মৌকে বলে খাবার নিয়ে আসতে তাদের জন্য।
মৌ খাবার টেবিলে রেডি করে রেখে যখন রাজকে ডাক দিবে এমন সময় মৌ বুঝতে পারলো সুমাইয়া আর রাজ ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে।
– মৌ জানালার পর্দাটা সরাতেই দেখতে পেল, সুমাইয়া রাজের বুকে অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে বলছে ‘জান আজ সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের ভালোবাসার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মৌ এর গর্ভের সন্তানটা। তাই আজ উপযুক্ত একটা সময়। মৌ যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন তার নামা পেটে লাথি দিবে। তাহলে তার মা হওয়ার স্বাদ সারাজীবনের জন্য মিটে যাবে ।
– সুমাইয়া কিন্তু মা যদি জানতে পারে?
– আরে মা আর রিত্ত তো নেই এখনি উপযুক্ত সময়। আর স্প্রে করার পর দিবে, বুঝার কোন সুযোগ নেই।

– এসব শুনার পর মৌ এর পা কাঁপছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাজকে কাঁপা কাঁপা গলায় ডেকে ভেতরে খাবার দিয়ে যখন বের হবে, এমন সময় সুমাইয়া বললো’ আপু তুমি ঘুমাবে না?’
– মৌ মুচকি হেসে বললো হে বোন ঘুমাবো। মনটা ভালো লাগছে না। একটু লেট হবে।
– আচ্ছা তাহলে যাও।

– মৌ বের হতেই সুমাইয়া দরজা লাগিয়ে দিলো।

– মৌ রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে এসে কুরআন পড়তে লাগল। মৌ বুঝে ফেলেছে খু্ব গভীর ষড়যত্ন চলছে তার গর্ভের সন্তান নিয়ে। এ সময় আল্লাহ্ ছাড়া কেউ হেফাযত করতে পারবে না তাকে। তাই কুরআন তেলাওয়াত করছে। সুমাইয়া কয়েকবার রুম থেকে বের হয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো মৌ কুরআন পড়ছে। কি করবে কিছু বুঝতেছে না।ঘুমায় না কেন। এসব ভাবতে ভাবতে সুমাইয়ার ফোন আসে, সুমাইয়া ফোনে কথা বলেই রাজকে বলে’ জান আমার যেতে হবে। বাবার অবস্থা ভালো না।
– আমি ও যাই?
– না জান তোমার যেতে হবে না। তুমি পারলে পথের কাঁটাটা দূর করো।

– সুমাইয়া চলে যাওয়ার পরপরই রাজের বুকে কেমন যেন ব্যাথা করতে লাগল। ক্রমশ ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে মৌকে ডাক দিয়ে বললো”মৌ আমাকে বাঁচাও।’ মৌ দৌড়ে এসে দেখে রাজের অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্সকে ফোন দিয়ে হসপিটালে নিয়ে এডমিট করে।
– ডাক্তাররা যখন রাজের চিকিৎসা করছে মৌ এদিকে সারারাত নফল নামায পড়ছে। সকালের দিকে নার্স এসে বললো’ আপু আপনার দোআ কবুল হয়েছে। আপনার স্বামী মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসল।
– মৌ দৌড়ে রাজের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মন চাচ্ছে রাজকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু না। নার্স রাজকে বললো’ স্যার আপনি অনেক লাকি এমন একটা বউ পেয়েছেন। যে সারারাত নামায পড়ে আপনার সুস্থতার জন্য কেঁদেছে। আর সঠিক টাইমে যদি হসপিটালে না নিয়ে আসতো তাহলে আপনাকে বাঁচানো যেতো না।

– রাজ কিছু বললো না। মৌ এর দিকে তাকালো। রাজ স্পষ্ট বুঝতে পারলো। মৌ এর চোখে পানি।
– কাঁদছো কেন মৌ?
– আপনার কিছু হলে আমি বাঁচবো না তাই।
– রাজের বুকটা কেমন করে ওঠলো!
– মায়াভরা দৃষ্টিতে রাজ মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় রাজের ফোনটা চেনা সুরে ভেজে ওঠল! ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বললো’ আমার জানটার ঘুম ভাঙছে?
– সুমাইয়া আমি হসপিটালে!
– কি বলো? আমার জানের কি হয়েছে? কোন হসপিটালে বলো। সুমাইয়া রাজের কাছে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে বিশ মিনিটেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়। হসপিটালে রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। জান তুমি অসুস্থ আমাকে জানাতে পারলে না?
– আর এই যে রক্ষিতা! আমাকে ফোন করে জানাতে পারলে না?
– আপনাকে কেন জানাবো?
– ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো রক্ষিতা তুই কি বললি? আমাকে কেন জানাবি? জানস রাজ আমার জান আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। রাজ যে আমার কলিজা

– সুমাইয়া কি করছো এসব? ছাড়ো না এটা হাসপাতাল।
– তুমি চুপ করবে জান। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমি কি নিয়ে বাঁচতাম? তুমি জানো না আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।
– হুম জানি তো পাগলী।

– তো, রক্ষিতাটা আমায় একটু ফোন দিয়ে বললোও না। তুমি অসুস্থ।
– আচ্ছা বাদ দাও। আমার তো কিছু হয়নি।

– কিছু হয়নি যদি হতো? এই কথাটা বলে সুমাইয়া রাজের বুকে গিয়ে লুকালো।

– মৌ কিছু বলতে পারছে না। মাথাটা নিচু করে কাঁদছে। রিত্ত আর মা’কে ফোন দিচ্ছে। এখন ফোন রিং হচ্ছে।

– রিত্ত ফোন ধরতেই মৌ বলল’ আপু তোমরা কখন আসবে?
– রিত্ত বললো আমরা রওয়ানা দিচ্ছি। আসতে আসতে সন্ধ্যা লাগবে।
– মৌ রাজের অসুস্থতার কথা বলতে চেয়েও পারলো না।

– বিকেলে রাজকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে এসে পড়ে। রাজের সাথে সুমাইয়াও বাসায় আসে। সুমাইয়া রাস্তায় একটা মুহূর্তের জন্যও রাজের হাতটা ছাড়েনি। রাজ বাসায় আসার পথে স্পর্ষ্ট বুঝতে পারলো সুমাইয়া কাঁদছে।

– আমার হার্ট কাঁদছে কেন?
-সুমাইয়া কোন কথা বলছে না। রাজ আবারো বলবো কি হলো? কথা বলছো না কেন? প্লিজ কেঁদো না।

– সুমাইয়া এবার রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাড়িতেই ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল।
– কি হলো কান্না করছো কেন? কি হয়েছে বলো?
– সুমাইয়া কান্না করতে করতে বললো’ রাজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না! আমি তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। তোমার জন্য জীবনটা পর্যন্ত দিতে পারি। আমাদের ভালোবাসা পবিত্র।

– রাজ সুমাইয়ার কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে বললো’ এ দেহে প্রাণ থাকতে তোমাকে ছেড়ে যাবো না। তুমি যে আমার কলিজা। তোমাকে ছাড়া কেমনে বাঁচি বলো? আর ছেড়ে যাওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।

– এদিকে গাড়ি বাসায় এসে গেছে। মৌ রাজকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামাতে যাবে যখন ঠিক তখনি, সুমাইয়া বললো’ এই রক্ষিতা তুমি রাজকে স্পর্শ করবে না। রাজের অমঙ্গল হবে।
– সুমাইয়ার কথাটা যেন মৌ এর কলিজায় এসে লাগল। মৌ রাজের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব। মৌ ভাবছে রাজ হয়তো কিছু বলবে। কিন্তু না, রাজ তো আর তার না। তিনবার কবুল বলেছে হয়তো। কিন্তু মনে তো আর জায়গা করে নিতে পারেনি।

– বাসায় ঢুকেই সুমাইয়া বললো’ এই যে দু’কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো।
– মৌ যখন কিচেনে চা বানাচ্ছে, তখন দেখে কিচেনে চিনি নেই। মৌ যখন চিনি খুজতে রাজের মায়ের রুমে আসে এ সুযোগে সুমাইয়া চায়ের কাপে লবণ দিয়ে আবারো রাজের কাছে বসে গল্প বলতে লাগে।

– ক্ষানিক পর মৌ চা নিয়ে এসে রাজকে আর সুমাইয়াকে দিল। রাজ চা মুখে দিয়েই অ্যাক থু! জঘন্য তিতো। এই চায়ে চিনি দিছিস না লবণ দিছিস?
– কেন চিনি দিয়েছি।
– এবার সুমাইয়া গরম চা মৌ এর পেটে ছুড়ে মেরে বলল। তোর চা তুই খা!

– মৌ অ্যা করে গগণ বিদায়ী চিৎকার দিয়ে ওঠল। মৌ এর মুহহূর্তের মাঝেই পেটের চামড়া ঝলসে গেল। খুব জালা করছে। রাজ আর সুমাইয়া একটার পর একটা খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে।

– এক পর্যায়ে সুমাইয়া বলেই ফেলল’ রাজ তোমাকে মারার জন্য মনে হয় চাতে বিষ মিশিয়েছে!

– মৌ এবার নিজেকে সামলাতে পারলো না। চিৎকার করে বলতে লাগল ‘ আমি কেন রাজকে মারতে যাবো?’ রাজ আমার স্বামী। যার খেদমত করে আমি আল্লাহর প্রিয় হবো। যার সন্তান আমার গর্ভে তাকে কেন মারতে যাবো?
– এবার সুমাইয়া আর সহ্য করতে পারলো না। মৌ এর গালে কষে থাপ্পর দিয়ে বললো’ এই রক্ষিতা তোর সাহস কি করে হয়? আমার জানকে স্বামী বলার? আরে পতিতালয়ে তো কতজনেই যায়, সেখানে যদি কেউ কারো সন্তান গর্ভে ধারণ করে সেটা জারজই হয়। তেমনি রক্ষিতারও।

– জান আমি সত্যি মরে যাবো তুমি যদি এটাকে ডির্ভোস না দিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে না করো। কথাটা বলেই ফল কাটা ছুরি দিয়ে হাতে পোঁচ দিল!

– ফেলকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রাজ তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে, সুমাইয়ার হাতটা বেধে ফেলল। টান দিয়ে সুমাইয়াকে বুকে জড়িয়ে বলতে লাগলো ‘ তুমি তোমার হাতে ছুরি চালাওনি। চালিয়েছ কলিজায়। তুমি জানো না তোমায় কতটা ভালোবাসি। তোমাকে পাবার জন্যিই রক্ষিতাকে বিয়ে করেছিলাম। জানতে পারিনী, কালনাগিনীটা এমন করবে। নিজে সন্তান জন্ম দিয়ে সম্পদের মালিক হতে চাইবে।
– মৌ রাজের মুখে এমন কথা শুনে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগল। মন চাচ্ছে তার জীবনটা এ মুহূর্তে বের করে দেয়। মৌ এর পেটে খুব জলছে। তাই পেটের উপর থেকে কাপড়টা সরাতেই দেখতে পেল, পেটের উপর গরম চা পড়ে ফোসকা পড়ে গেছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আল্লাহ কেন যে এতো কষ্ট দেয়। মৌ পেটের নিচে হাত রেখে দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে’
কিরে কান্না করছিস? কান্না করিস না? আল্লাহ তোকে হেফাযত করবে। আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোর কিছু হবে না। তুই যে আমার জীবন হয়ে গেছিস। সত্যিই তুই অভাগা, জন্মের আগেই তুই তোর জন্মদাতার মুখে জারজ হওয়ার তকমাটা পেয়ে গেলি। ভাবিস না আমি তোকে ছেড়ে যাবো? কখনোই না।
-মৌ পাগলীর মতো এসব বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

– এদিকে সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ জান তোমাকে বলেছিলাম না সব কিছু পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে। ‘ তুমি কিন্তু আমায় ছেড়ে যেয়ো না।
– রাজ এবার সুমাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলল! কি করা যায়?
– পথ থেকে সরিয়ে ফেলি? গাড়ি একসিডেন্ট করিয়ে!
– হুম তবে, চুক্তির মেয়াদ দু’মাস আছে চেষ্টা করে দেখি যদি বাচ্চাটা নষ্ট করতে পারি তবে ডির্ভোস কোন ব্যাপার না। তা তো অর্ধেক হয়েই আছে।

-আচ্ছা এবার তাহলে আসি?
– হুম যাও!
– সুমাইয়া যাওয়ার আগে রাজের কপালে চুমু দিয়ে গেল।
– রাজ সোফাতে বসে আছে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে ওঠল। রাজ দরজা খুলতেই দেখতে পেল রিত্ত আর তার মা বাহিরে দাঁড়িয়ে।
– রাজের মা রাজকে কিছু না বলেই ‘ মৌকে ডাকতে লাগল। কিরে মা কোথায় তুই?
– মৌ এর কাছে মনে হচ্ছে সে জীবন ফিরে পেয়েছে। তাড়াহুড়া করে চোখের জল মুছে শাড়িটা পাল্টিয়ে নিয়ে, রুম থেকে বের হয়েই বলে। মা আমি কাজ করছিলাম।
– কি তুমি এ শরীর নিয়ে কাজে? বাড়ির চাকর বাকররা কই?
– মা ছুটিতে গেছে।
– এখন ছুটিতে? বুঝতে পারি না কিছু।
– রাজের মা মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ‘ মা তোর মন খারাপ?’
– না মা।

– কয়েকদিন পর মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠল!
– মৌ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো’ ম্যাডাম আপনার বাবাকে বাঁচাতে হলে সামনের শুক্রবারে ছয়লাখ টাকা লাগবে। ‘ অপারেশন করতে হবে। নয়তো বাঁচানো যাবে না ।
-আচ্ছা, আপনি অপারেশন করার সব ব্যবস্থা করেন শুক্রবারের মাঝে সব টাকা প্যাড করবো । আর শুনেন বাবাকে কখনোই বলবেন না টাকাটা আমি দিচ্ছি। বাবা যদি এটা শুনে তাহলে মরে যাবে তবু আমার টাকায় অপারেশন করবে না। আমি যে তার ভালোবাসার মানুষটাকে জন্ম নেওয়ার সময় কেড়ে নিয়েছি।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– ফোনটা কেটে যেতেই মৌ মহাচিন্তায় পড়ে গেল। এতো টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে। রাজের কাছে চুক্তির তিনলাখ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু বাকি তিনলাখ। যে বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের সবকিছু বির্সজন দিলো, কারো কারো কাছে রক্ষিতা হলো। কিন্তু তারপরেও কি বাবাকে বাঁচানো যাবো না? হঠাৎ মৌ এর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
– মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো’ আপনার কাছে চুক্তির যে তিনলাখটাকা পায় সেগুলো দেন। ‘

– সরি আর একটা টাকাও দিতে পারবো না। তবে দিতে পারি এক শর্তে তুমি যদি তোমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলো। আরো বেশি যদি চাও তাও দিবো তবে সন্তানটা নষ্ট করতে হবে। যদি রাজি থাকো কালই ক্লিনিকে গিয়ে এবারশন করিয়ে নিয়ে আসবো।

– মৌ এর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন কথা শুনে। মৌ ভাবতে লাগল কাকে বাঁচাবে? বাবাকে বাঁচালে গর্ভের সন্তানটাকে মেরে ফেলতে হবে ”’

বিঃদ্রঃ গল্পের থিমটা মনে হয় আপনাদের ভালো লাগছে না তাই না? কেউ কমেন্ট করছেন না কেন তাহলে গল্পের চরিত্র নিয়ে?

চলবে

লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here