চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৭

0
2265

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৭
.
মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো’ আপনার কাছে চুক্তির যে তিনলাখটাকা পায় সেগুলো দেন। ‘

– সরি আর একটা টাকাও দিতে পারবো না। তবে দিতে পারি একটা শর্তে তুমি যদি তোমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলো। আরো বেশি যদি চাও তাও দিবো তবে সন্তানটা নষ্ট করতে হবে। যদি রাজি থাকো কালই ক্লিনিকে গিয়ে এবোরশন করিয়ে নিয়ে আসবো।

– মৌ এর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন কথা শুনে। মৌ ভাবতে লাগল কাকে বাঁচাবে? বাবাকে বাঁচালে গর্ভের সন্তানটাকে মেরে ফেলতে হবে।

– কি হলো? বাচ্চাটা কি নষ্ট করবি?

– মৌ এর সামনে তার বাবার চেহারাটা ভেসে ওঠছে বারবার। তার বাবা মারা যাক সে কখনই চাই না। আর মা হয়ে গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে সেটাও সে পারবে না।

– কি হলো টাকা তিনলাখের বেশি দিতে হবে?
– হুম আমি রাজি বাচ্চা নষ্ট করতে।
– সত্যি?
– হ্যাঁ সত্যি। তবে টাকা লাগবে ছয়লাখ।

– কি? ছয়লাখ!
– হুম ছয়লাখ।
– আচ্ছা দিবো, তোরমতো রক্ষিতাতো টাকার জন্য সব করতে পারে।
– হ্যাঁ এবার ঠিক ধরতে পারছেন।
– হুম, এতো কিছু না করে পতিতা পল্লীতেই তো থাকতে পারিস।

তবে কি, মিঃ রাজ, আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করলেই আপনি সুমাইয়াকে পাচ্ছেন না। আমাকে আপনি নিজ থেকে ডির্ভোস ও দিতে পারবেন না। কারণ আপনার মা আমাকে অনেক পছন্দ করে। অনেক! তবে কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো?
– তুমি সুমাইয়াকে পাবে সাথে আমাকেও তাড়িয়ে দিতে পারবে। এইজন্য তোমার মা’কে বলবে তুমি সুমাইয়াকে পাওয়ার জন্য আমার সাথে চুক্তি করে বিয়ে করেছ। সাথে বিয়ের দিনই আমি ডির্ভোস পেপারে সাইন করেছি এটাও বলবে।আর এ ও বলবে তুমি আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করোনি। আর আমার গর্ভের বাচ্চাটা অন্য কারো। তাহলে তোমার মা আমাকে এমনিতেই তাড়িয়ে দিবে।

– ওয়াও গুড আইডিয়া। তবে শর্ত আছে?
-কি শর্ত?
– তোকে লিখিত স্টেটমেন্ট দিতে হবে তোর গর্ভের সন্তান আমার না। আর সন্তানটা অন্য কারো সাথে নষ্টামি করে গর্ভে ধারণ করেছিস।

– মৌ এর কলিজাটা মনে হচ্ছে বের হয়ে আসবে। বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কি করার এতে করে গর্ভের সন্তান আর বাবা দু’জনকেই বাঁচানো যাবে।

– কি হলো? তুমি কি রাজি?
– হ্যাঁ রাজি। আর কাল সকালে আগে টাকা বুঝিয়ে দিবে।

– আচ্ছা।
– আরেকটা অনুরোধ করবো?
-হ্যাঁ করো।
– কালকের পর তো তোমার নামটা ধরেও ডাকতে পারবো না। রক্ষিতার তকমাটা গায়ে লেগে যাবে। অবৈধ সন্তানের জননী হয়ে যাবো। আজকের রাতটা তোমার কাছে চায় শুধু। জানো রাজ আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে প্রথমদিনই গ্রহণ করেছিলাম। আর আজকের রাতটা শেষ রাত। তোমার মাথাটা আজকের জন্য শুধু বুকে রাখতে চাই।

– আচ্ছা। তবে কাল সকালে কিন্তু, যা যা বলছো তা যেন করা হয়।

– হুম হবে।

– মৌ রাজের মাথাটা তার বুকে নিয়ে আছে। রাজের কাছে অসহ্য লাগছে। তবুও কিছু করার নেই। আজকের পর থেকে তবুও তো আপদটা বিদায় হবে।

– মৌ রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মৌ এই খারাপ মানুষটাকেই কেন যেন ভালোবেসে ফেলেছে। কালকের পর তো আর মানুষটাকে দেখা হবে না। এসব ভাবতেই কেন যেন বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হতে শুরু করে মৌর।এদিকে রাজ মৌ এর বুকেই ঘুমিয়ে যায়। মৌ এর মনে হচ্ছে আজকের রাতটা যদি শেষ না হতো তবে কতই না ভালো হতো। এদিকে চাঁদের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে রাজের মুখের উপর পড়ছে। চাঁদের আলোতে রাজের মুখটাকে একদম নিষ্পাপ মনে হচ্ছে। মৌ নিজের অজানেই রাজের কপালে চুমু একে দেয়। রাজকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মৌ এর মনে হচ্ছে এ ধরায় শেষ ধরা। রাজের সাথে কাটানো সহস্র হাসি-কান্নার স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠছে। মৌ রাজের মাথাটা বালিশে রেখে, রাজের পায়ের কাছে গিয়ে, পা দু’টো বুকে জড়িয়ে নিয়ে গুণগুণ করে বলতে লাগলো ‘জানো রাজ আমি তোমার পায়ের নিচে একটু স্থান চেয়েছিলাম। ‘যে স্থান একটি নারীকে সকল বাধা বিপত্তি থেকে রক্ষা করে। স্ত্রী নামক তকমাটা গায়ে জড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমি পারিনি। বলো রাজ কিভাবে আমি ভুলে যাবো তোমায়? তুমি আমার প্রথম স্পর্শ। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা। তুমি আমার স্বামী। যাকে নিয়ে বেহেশতে থাকতে চেয়েছিলাম। আল্লাহর পবিত্র কালামকে স্বাক্ষী রেখে আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আমি অভাগীই রয়ে গেলাম। চোখের পানি দিয়ে মৌ রাজের পা ভিজিয়ে ফেলেছে। রাজের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু রাজ কোন কথা বলছে না।

– মৌ রাজের পা ছেড়ে দিয়ে রাজের কপালে চুমু দিয়ে মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগল আল্লাহ আজকের রজনীটাকে বড় করে দিন।

– রাজ সবটা শুনেও চুপ করে থাকলো। রাজের চোখে বারবার সুমাইয়ার চেহারাটা ভাসছে।

এদিকে দেখতে দেখতে রাত কেটে যায়। সকালে রাজ ছয়লাখ টাকা এনে মৌ এর হাতে তুলে দেয়।
– মৌ টাকাটা তার ব্যাগে রেখে দেয়।

-রাজ মৌকে টাকা দিয়েই তার মাকে ডেকে নিয়ে বলে’ মা আমি আর পারছিনা , তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে সেটাই মাথা পেতে নিবো। ‘
– কি হলো বাবা কি হয়েছে বল?
– মা আমি অন্যায় করেছি!
– বল কি হয়েছে?
– মা মৌ এর গর্ভে যে সন্তান।
কি হইছে সেটা?

– যে সন্তানের জন্য নাম ঠিক করে রেখেছো। সারা বাড়ি ভর্তি খেলনা এনে রেখেছে। সে সন্তান আমার না। একটা অবৈধ সন্তান।

– রাজের মা রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,’কি হলো লজ্জা করে না?’ নিজের সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলতে। আমি মৌকে অনেক ভালো করেই চিনি। মৌকে নিয়ে আর একটা বাজে কথাও বলবি না।

– মা আমি সত্যি বলছি। কারণ মৌ এর সাথে আমার কোন শারীরীক সম্পর্ক হয়নি।
– ভাইয়া কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ রিত্ত সবঠিক বলছি। মৌকে বিয়ে করেছিলাম মায়ের মুখের হাসির জন্য। আমি ভালোবাসতাম সুমাইয়াকে। কিন্তু তোমার জন্য মৌকে বিয়ে করলেও আমি ওকে ছুঁয়েও দেখিনি। মৌ এর সাথে থাকতে থাকতে মৌকে ভালোবেসে ফেলি আমি। কিন্তু ততদিনে মৌ এর অবৈধ সন্তান গর্ভে ধারণ করে ফেলে। ভাবছিলাম এবারশন করবো। কিন্তু তুমি সে কাগজটা দেখে ফেলো। অনেক কান্না করি। মৌ প্রমিজ করেছিল সে আর পাপাচার করবে না। কিন্তু মা মৌ এখনো ওই ছেলের সাথে হোটেলে। এ কথা বলে রাজ কেঁদে দেয়।
– রাজের মা মৌকে ডেকে এনে বলে, মৌ রাজ যা বলছে তা মিথ্যা না?
– মৌ মাথাটা নিচু করে বলে না মা সব সত্য!
– মৌ এর মুখে কথাটা শুনে রাজের মায়ের পায়ের নিচে থেক মাটি সরে যেতে লাগল।
– রাজ এই নষ্টাকে বাড়ি থেকে বের করে দে। নিজের মেয়ে ভাবতাম। আর সেই কি না কলিজাতে আঘাত করলো।

– মা আমাকে ক্ষমা করে দেন।
– চুপ! তোর ওই মুখে আমাকে মা ডাকবি না। জানিস কত স্বপ্ন দেখছিলাম তোদের নিয়ে। আমার মন চাচ্ছে, আমার শরীর ব্লেড দিয়ে কেটে তোর দেওয়া রক্ত বের করে দিতে। আসলেই তোদের মতো মেয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতেই স্থান পায়। কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন।
– মৌ নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
– রাজ উকিল বাবাকে ফোন করে ডির্ভোস পেপার নিয়ে আসতে বলো। আর সামনে শুক্রবারেই সুমাইয়ার সাথে তোর বিয়ে দিবো। তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম বাবা।

– এদিকে ঘন্টা ক্ষানিক পর ডির্ভোস পেপার হাতে পেল, রাজের মা রাজকে বললো বাবা এখানে সাইন করে দিয়ে ঘরকে পবিত্র কর।
– রাজ ডির্ভোস পেপারে সাইন করে দিয়ে ডির্ভোস পেপারটা মৌ এর হাতে দিল। সাথে একটা হলফনামা করলো, ‘মৌ এর গর্ভে যে সন্তান সেটা রাজের নয়। কোনদিন উওরাধিকারী হতে পারবে না। মৌ রাজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাইন করে দিল।

– রাজের মা এসে বললো’ বাবা প্লিজ কলঙ্কিনীটাকে বের করে দে। আমার ওর মুখটা দেখতে মন চাচ্ছে না।

– মৌ ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে যখন বের হবে। বের হওয়ার আগে রিত্তকে বললো’ বোন অনেক কষ্ট দিয়েছি ক্ষমা করে দিয়ো অভাগীটাকে। বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরতে চেয়েছিলাম। রিত্ত কিছু না বলে তার রুমে চলে গেল।
– মৌ এবার রাজের মাকে বললো’ মা ছোটবেলায় তো মা হারিয়েছি। মায়ের আদর স্নেহ কি কখনো বুঝতে পারিনি। কিন্তু আপনার সংস্পর্শে এসে মায়ের আদরটা বুঝতে পেরেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আপনাদের বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য। আমি আসি।কথাটা বলে মৌ মায়ের পায়ে যখন সালাম করতে যাবে। তখন তিনি সরে যায়। মৌ ফ্লোরে সালাম করে যে জায়গায় রাজের মা দাঁড়িয়েছিল।

– রাজ বাবা প্লিজ কোন বিশ্বাস ঘাতকে বাড়িতে আর একমুহূর্ত থাকতে দিস না। বের করে দে। বলে তিনি রুমে চলে গেলেন চোখের জল মুছতে মুছতে। মৌ যে এতটা বাজে কল্পনাও করেননি তিনি।

– মৌ বাড়ি থেকে বের হয়ে, বাড়িটার দিকে একবার অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।
– মৌ যখন চলে যাচ্ছে, তখন রাজ পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো’ কোথায় যাচ্ছো? এগিয়ে দিয়ে আসবো?
– মৌ মাথাটা নিচু করে বললো’ ধন্যবাদ স্যার। এতিমতো যাওয়ার কোন জায়গা নাই। আপাতত যে দিকে চোখ যায় সে দিকে চলে যাবো। ভালো থাকবেন। আপনার উপকারের কথা আমি কোন দিন ভুলবো না। মৌ ডির্ভোস পেপারে তার সাইন করার জায়গাটিতে সাইন করতে চেয়েও কেন যেন পারেনি। রাজ অনেক চালাক আগের ডির্ভোস পেপারটা আর বের করলো না। হসপিটালে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে বসে এসব ভাবছে।

– এদিক রাজ আজ অনেক খুশি। রাজ বাসায় ঢুকতেই বললো’ বাবা জোর করে তোর উপর সিদ্ধান্ত চাপায় দেওয়ার জন্য ক্ষমা করে দিস মাকে। আর কাল বৃহস্পতিবার সুমাইয়ার বাবাকে বলবি কাল সুমাইয়াকে দেখতে যাবো। আর কালই আন্টি পরিয়ে দিয়ে আসবো।
– রাজ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো’ মা সত্যিই তুমি অনেক ভালো।

– রাজ ভাবছে খুশির খবরটা সে সুমাইয়াকে ফোনে দিবে? না সুমাইয়াকে একদম চমকে দিবে। সত্যিই আল্লাহ মহান, সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো তিনি মিলিয়ে দেন। রাজ নিউমার্কেট থেকে বকুলের মালা, সাথে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে সুমাইয়ার বাসায় চলে গেল। রাজ একদৌড়ে সুমাইয়ার রুমে গিয়ে যখন দরজা ধাক্কা দিবে ঠিক তখন ভেতর থেকে পুরুষালি কন্ঠ শুনতে পেল।
– রাজ জানালার পর্দা সরিয়ে যা শুনতে পেল। তা শোনার আর দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

– সুমাইয়া একটি ছেলের বুকে অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। ছেলেটি সুমাইয়াকে বলছে’ বেবী কাজটা কবে শেষ হবে? হাজার কোটি টাকা কবে যে পাবো?
– তুমি চিন্তা করো না। যে বুদ্ধি দিয়েছি রাজকে সে তো পটে গিয়েছে। আর আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর আগেই এ কাজটা শেষ হবে। বিয়েটা হলেই সব সম্পত্তি আমার নামে করিয়ে নিবো। আর রাজ তো আমার জন্য পাগল।

– উম্মাহ, আমার সুইট বউ।বলেই সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

-এসব দেখে রাজের চোখের পানি কোন বাধা মানছে না।

-ছেলেটা সুমাইয়ার বক্ষে তার উষ্ণ ওষ্ঠের স্পর্শে স্পর্শে বললো’ জানো জানেমন অভিনয়ে তোমাকে অস্কার দেওয়া হলেও কম হতো। এতো প্ল্যান তুমি করতে পারো।
– দেখতে হবে না বউটা কার?
– হুম আমার বউ। জানো এভাবে আর একা থাকতে পারছিনা। লুকিয়ে আর কত।
– ওহ্ তুমিও না। আমেরিকা থাকতে তো একসাথেই থাকতাম। সামনে ১৫ মার্চ তো আমাদের বিবাহের এক বছর হবে। তার আগেই আমার বাবারো প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

– বাবার আমার শত্রুতা কিসের?
– ছোটবেলা রাজের সাথে আমার বিয়ের কথা বলেছিল বাবা তার বাবাকে। বাবাকে রাজের বাবা অপমান করেছিল। বাবা তাই রাজের সাথে বিয়ে করিয়ে সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে তালাক দিতে বলছে। আর তোমার সাথে স্যাটেল হতে বলছে।

-লাভিউ বউ। এবার তোমার ভালোবাসার সাগরে ডুব দিতে দাও।
– ওহ্! সাগরটা তো তোমারি বলতে হয় আবার? আমার সবকিছুই তো তোমার। আমার জীবনটাও তোমার।
– ছেলেটা সুমাইয়ার সাথে নোংরা খেলায় মেতে উঠলো। সুমাইয়া সমান তালে রেসপন্স দিচ্ছে। হঠাৎ বলে ওঠলো’ রাফি, তুমি দিনদিন দুষ্ট হচ্ছো কিন্তু। হুমম হচ্ছি তা তো তোমার জন্যই তাই না?
– হুমমম, অনেকদিন পর তোমার স্পর্শে শিহরিত হচ্ছি। তোমার মাঝে আমাকে মিশিয়ে নাও আমি আর পারছি না। এদিকে রাফি সুমাইয়াকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলছে। সুমাইয়ার নাভিতে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিচ্ছে।

– রাজের মাথাটা ঘুরছে। কলিজাটা মনে হয় বের হয়ে আসবে বাহিরে। যে সুমাইয়াকে এতো ভালোবাসলো। যার জন্য এতোকিছু করলো। একটা মেয়ের সাথে, পশুর মতো ব্যবহার করলো । কিন্তু সেই সুমাইয়া তার সম্পত্তির জন্য নোংরা খেলা খেলছে। আর সুমাইয়া বিয়েও করেছে। রাজের বুক ফেটে কান্না আসছে। হাতের ফুলগুলো মাটিতে পরে গেল। বকুলফুলগুলো পা দিয়ে পিষে ফেলল রাজ। চোখের সামনে মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য দেখতে হবে রাজ ভাবতে পারেনি। সে আর এক মুহূর্ত সেখানে থাকতে পারলো না।

– সুমাইয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে।

– কিরে বাবা কোথায় গিয়েছিলি? মন খারাপ করে আছিস কেন? মন খারাপ করিসনা। আমি জানতাম না মৌ এতটা খারাপ। আমরা কাল সকালে সুমাইয়াদের বাসায় যাবো। তুই একটু বলে রাখিস।
– রাজ তার মাকে কিছু না বলে রুমে চলে গেল।

– রাজ বিছানায় শুয়ে আছে। হঠাৎ কে যেন বললো’ ভাত খাবে না শুয়ে পড়লে যে?
– রাজ চমকে ওঠে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। মৌ এর কথা কেন এতো মনে পড়ছে? মেয়েটাকে সত্যিই খুব বেশি কষ্ট দিয়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে খেয়াল নেই।

– এদিকে মৌ হসপিটালে টাকা পেড করে। ডাক্তারকে বললো ‘স্যার আমার বাবার অপারেশনটা খুব যত্ন করে করবেন। অনেক ভালোবাসিতো বাবাকে।

– মা’রে তোমার মতো আমারো একটা মেয়ে আছে। চিন্তা করো না তোমার বাবার অপারেশন ভালো ভাবেই হবে। আর আমাকে স্যার ডেকো না মা।

-আচ্ছা আঙ্কেল একটা অনুরোধ করবো?
– হ্যাঁ মা করো।

– অপারেশনের টাকাগুলো যে আমি দিলাম। সেটা বাবা যেন কখনো জানতে না পারে। বাবা যদি এখন জানে তাহলে অপারেশন করবে না।

– আচ্ছা জানবে না।
– আরেকটা কথা বাবার তো কাল অপারেশন। বাবাকে বলবেন, অপারেশনের আগে তার মেয়ে তার সাথে দেখা করতে চাই। সে যদি চায় তাহলে তার মেয়ে তার সাথে দু’টো কথা বলতে চায়। বাবা যদি রাজি হয়, তাহলে বাবার সামনে যাবো।
– আচ্ছা মা আমি এখনি যাচ্ছি!

– ডাক্তার মৌ এর বাবার কাছে গিয়ে বললো ‘ এখন কেমন আছেন?’
– হ্যাঁ ভালো।
– কাল আপনার অপারেশন। অপারেশনের আগে আপনার কি কোন ইচ্ছা আছে?
– ডাক্তার সাব শুনছি অপারেশনের জন্য নাকি অনেক টাকা লাগার কথা ছিল। এতো টাকা কে দিলো? সে মানুষটাকে দেখার অনেক ইচ্ছা।

– সরি,তিনি তো বিদেশে। বিদেশ থেকে অনেক রোগীকে সুস্থ করতে টাকা দেন। আর হ্যাঁ আপনার মেয়ে আছে নাকি শুনেছিলাম?তার সাথে দেখা করতেন চান কি? কালতো আপনার অপারেসন, তো বলা যায় না কখন কি হয়,তাই বলছিলাম।

– ডাক্তার সাব, আমার কোন মেয়ে নেই। আমি কোন রাক্ষসীটাকে জন্ম দেয়নি।
– কি বলছেন এসব?

– হ্যাঁ ঠিকই বলছি, জানেন ওই রাক্ষসীটার জন্য আমি মারিয়াকে হারিয়েছি। অনেক ভালোবাসতাম। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু পোড়াকপালীটা হওয়ার সময় আমার মারিয়াকে কেড়ে নিয়েছে। ওর মুখ দেখাও পাপ। ওর জন্য ওর মা মারা গেছে। ওর মতো মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাই না। ওর মুখ দেখার আগে যেন মরণ হয়। ডাক্তার সাব যদি পারেন আমার অপারেশনের টাকা যে দিল তার সাথে একটু দেখা করিয়ে দিবেন।

– আচ্ছা আসি তাহলে।

– মৌ জানালায় দাঁড়িয়ে তার বাবার কথা শুনছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। বাবা, নামক মানুষটাকে সে কখনো বাবা বলে ডাকতে পারেনি।

নিজের বাবা তাকে ছোটবেলাই জাতকঘরে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তবুও চায় তার বাবাটা যেন ভালো থাকে। মৌ চোখের পানি মুছে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল। কোথাই যাবে পৃথিবীটা তার কাছে বড্ড নির্মম মনে হচ্ছে। এ পৃথিবীতে তার যে কেউ নেই। রাস্তায় হাটতেছে আর ভাবছে কি করবে।

– এদিকে রাজ সারাদিন কিছুই খায়নি। বিকেলে তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলে ‘ জানন কেমন আছো তুমি?’আমাকে একটুও মিস করোনি?

– রাজ সুমাইয়ার কন্ঠ শুনেই বললো ‘ কোথায় তুমি?

– বাসায়।
– এক ঘন্টার মাঝে পার্কে আসতে পারবে?
– হ্যাঁ আসতেছি। আমার জান বলেছে আসতেই হবে।

– রাজ পার্কে গিয়ে বসে আছে। ক্ষানিক পর সুমাইয়া এসেই রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো’ জান কাল সারারাত অসুস্থ ছিলাম। ‘ তোমাকে ফোন দিতে পারিনি। জানো তোমার সাথে কথা না বলতে পারলে মনে হয় আমার দমঃ বন্ধ হয়ে যায়।
– রাজ সুমাইয়াকে সরাচ্ছে না বুক থেকে।
– সুসাইয়া রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো’ জান, রক্ষিতার সন্তান কি সে নষ্ট করেছে?
– না ও চলে গিয়েছে।
– ওহ্ তাই বুঝি? লাভিউ জান। সত্যিই রক্ষিতাটা –
কথা শেষ করার আগেই রাজ সুমাইয়াকে বুক থেকে সরিয়ে গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো।
– জান আমাকে মারলে তুমি?
– এবার আরেকটা কষে থাপ্পর দিয়ে বললো’ কাকে তুই রক্ষিতা বলছিস? যাকে আমি বিয়ে করেছিলাম তাকে? কাকে তুই রক্ষিতা বলছিস? যে নিজের স্বামীর পা ধরে সারারাত বসেছিল তাকে। রক্ষিতাটা তো তুই। তুই রক্ষিতা না শুধু তুই পতিতা।

– রাজ কি বলছো এসব?
– রাজ আবারো সুমাইয়ার গালে চড় বসিয়ে দিল। এবার সুমাইয়ার নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
– কি রক্ষিতা এখন কষ্ট লাগে? আমারো লেগেছিল, কাল যখন রাফির কাছে তোর শরীরের চাহিদা মেটাচ্ছিলি আমি সব দেখছি। আমেরিকাতে বিয়ে করে, আমার সম্পত্তির লোভে রক্ষিতাগিরি করতে চেয়েছিলি?
– আমি সত্যিই ভাগ্যবান মৌ এর মত কাউকে পেয়েছিলাম। হিরাকে কাঁচ ভেবে ভুল করেছি। আর সেটার সংশোধন করবো। আর তুই রক্ষিতা যদি কখনো আমার সামনে আসিস তাহলে তোর খবর আছে। কথাগুলো বলে, রাজ বাসায় এসে পড়ে।

– বাসায় আসতেই রাজের মা বলে বাবা বলছিস সুমাইয়াদের বাড়িতে?
– মা আমি সুমাইয়াকে বিয়ে করবো না।
– তো কাকে করবি?
– মা আমাকে একা থাকতে দাও।
– রাজ রুমে দরজা আঁকটে দেয়। মনে মনে ভাবতে লাগে, মৌ কি আমাকে ক্ষমা করবে? আমি যে অপরাধী নিজের সন্তানকে অবৈধ বানিয়েছি। যে ভাবেই হোক আমার মৌকে খুঁজে বের করতেই হবে। দরকার হলে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। রাজ আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।

– এদিকে মৌ কোথায় গিয়ে থাকবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দু’জায়গায় বাড়ি ভাড়া থাকার কথা বলেছিল। এক জায়গায় না করে দিছে। অন্য জায়গায় বাড়ির মালিক থাকতে দিতে চাইলেও তার বউ বের করে দেয়। আর বের করে দেওয়ার সময় বলে সতিন ঘরে আনতে পারবো না ।
– মৌ একা একা হাটছে, এতো রাতে কই যাবে। রাত প্রায় নয়টা এমন সময় কে যেন পিছন থেকে মুখটা চেপে ধরে ঝোপের নিচে নিয়ে ফেলে দিলো।
– দু’টা ছেলে, একজন মৌ এর গলায় ছুরি ধরে বলছে, যদি কোন কথা বলিস তাহলে একদম গলায় চালিয়ে দিবো। আর তুই কি করছিস? তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর। তোর পর আমি করবো।
– মৌ এর শরীর কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। অসহায়ের দৃষ্টিতে আরেকটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা তারা পেন্ট খুলছে। মৌ ছোট্ট গলায় বললো’ ভাইয়া জানো ছোটবেলায় মা মারা গেছে। বাবাও সন্তান বলে পরিচয় দেয় না। আমার কোন ভাই নেই। তোমরা আমার ভাই। আমার গর্ভে সন্তান। তোমরা দু’জন আমার ভাইয়ের মতো। আমার সর্বনাশ করো না। দেখ তোমার বোনটার গর্ভে বাচ্চা। প্লিজ, এসব করো না।

– এই চুপ কর, ডায়ালগ কম করে দে। ছেলেটা সমপূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বুকের উপর থেকে শাড়ির আচলটা সরাতেই মৌ, তার হাতে এক মুষ্ঠি বালু যে চাকু ধরছে তার চোখে ছুড়ে মারল। সাথে অন্য ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় মাঝখানে এসে পড়ে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মাইক্রো দ্রুত গতিতে তার দিকে ছুটে আসছে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ বুঝতে পারলো গাড়িটা এসে তাকে একটা ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিল। রক্তে পিচঢালা রাস্তা লাল হয়ে যাচ্ছে….

চলবে

লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here