চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৮

0
2090

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৮

– এই চুপ কর, ডায়ালগ কম করে দে। ছেলেটা সমপূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে আছে। মৌ এর বুকের উপর থেকে শাড়ির আচলটা সরাতেই মৌ, তার হাতে এক মুষ্ঠি বালু যে চাকু ধরছে তার চোখে ছুড়ে মারল। সাথে অন্য ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় মাঝখানে এসে পড়ে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মাইক্রো দ্রুত গতিতে তার দিকে ছুটে আসছে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ বুঝতে পারলো গাড়িটা এসে তাকে একটা ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিল। রক্তে পিচঢালা রাস্তা লাল হয়ে যাচ্ছে। মৌ তার পেটটা ধরে আছে। মিনমিন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে’হে আল্লাহ্ আমার সন্তানটাকে কিছু করো না। ‘

– এদিকে জনাব শফিক সাহেব, গাড়ির ব্রেক কঠিন ভাবে কষায় ব্রেক করার পরও গাড়ি পুরোটা কন্টোল নিতে পারেনি। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে আসলেন। মৌকে কোলে তুলে নিতেই চমকে ওঠলো! মৌ শফিক সাহেবকে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো’ আমার সন্তানটার যেন কিছু না হয়। কথাটা বলেই সেন্সলেন্স হয়ে গেল। শফিক সাহেব এখনো মৌ এর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

গাড়ি থেকে বাকিরা দৌড়ে নেমে এসে দেখে, শফিক সাহেব মৌকে ক
কোলে নিয়ে বসে আছে।

– কি হলো আঙ্কেল চলেন হসপিটালে। মেয়েটাতো মারা যাবে। প্রচুর রক্ত ঝরছে। শফিক সাহেব ‘চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলো, আমার কারিমা ফিরে এসেছে।
সবাই শফিক সাহেবের কথায় চমকে ওঠলো ‘কারিমা! এ কি করে সম্ভব কিছু ক্ষণ আগে যাকে নিজে হাতে দাফন করে আসলাম সে কিভাবে ফিরে আসে। শফিক সাহেবের হাতটা কাঁপছে। শফিক সাহেব মৌকে হসপিটালে তাড়াহুড়া করে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার ঘন্টা দু’য়েক পর অপারেশন কেবিন থেকে বের হয়ে বলে ‘ স্যার পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না। মাথায় ব্রেনে আঘাত পেয়েছে।

– কি বলছেন এসব? যেকোন মূল্যে আমার মেয়েকে বাঁচাতে হবে। আমার এক কারিমা মরে যাওয়াতে আরেক কারিমা আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছে। প্লিজ ডক্টর মেয়েটার যেন কিছু না হয়।

– স্যার আপনি টেনশন করবেন না। আমরা দেখছি কি হয়।

– ডাক্তার শ্রীকান্ত মৌ এর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করলো।

– এদিকে শফিক সাহেবের স্ত্রী শফিক সাহেবের হাতটা ধরে বলল’ওগো আল্লাহ্ হয়তো তোমার আর আমার প্রতি চোখ তুলে তাকিয়েছে।’আমাদের কারিমাকে আমাদের জন্য আবার পাঠিয়েছে এ মেয়ের মাঝে। দেখো মেয়েটার যেন কোন কিছু না হয়।

– তুমি চিন্তা করো না, দরকার হলে বিদেশ নিয়ে যাবো তবুও বাঁচাবো। বাঁচাতে যে হবেই।

– পরের দিন ডাক্তার শ্রীকান্ত শফিক সাহেবকে বললো ‘ শফিক সাহেব আপনি পেশেন্টকে নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যান। ‘ সেখানে কথা হয়েছে। আমাদের হাতে কিছু করার নেই। তাছাড়া মেয়েটা প্রেগনেন্ট! রোগির অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে রাখলে, হয়তো আর বাঁচানো যাবে না। ‘এখনো জ্ঞান আসছে না।

– প্লিজ আপনি যতো তাড়াতাড়ি পারেন ব্যবস্থা করের সিঙ্গাপুর নেওয়ার।রাতেই মৌকে নিয়ে জনাব শফিক সাহেব আর তার স্ত্রী সিঙ্গাপুর চলে যায়।

– এদিকে রাজ শহরের কোন অলিগলি বাদ রাখেনি। সব জায়গায় মৌকে খুঁজে যাচ্ছে। মৌ এর মায়াবী মুখটা বারবার রাজের চোখের সামনে ভাসছে। রাত একটা বাজে এমন সময় রাজের ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কে যেন বললো ‘ হ্যালো রাজ, বাবা তুই কই?
– বাসায় আই।
– মা আমি আসতেছি। তুমি চিন্তা করো না। রাজ বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই রাজের মা রাজকে কাছে ডেকে নিয়ে বললো’ বাবা তোর কি হয়েছে? তোর কষ্ট যে আমার আর সহ্য হয় না? আমি যে তোর মা। আজ সুমাইয়াদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের বাড়িতেও গেলি না?

– রাজ তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাও করে কেঁদে দিয়ে বললো’ মা আমি ভুল করেছি। ‘ আমার মৌকে আমি কষ্ট দিয়েছি। নিজের সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলে আখ্যা দিয়েছি। মৌ এর গর্ভে আমার সন্তান ছিল। মা আমি ওকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।

– কি বলছিস এসব রাজ?
– হ্যাঁ মা ঠিকই বলছি। মৌ ফুলের মতো পবিত্র। মৌকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা। আমি সুমাইয়ার মায়ায় ফেসে গিয়েছিলাম। সুমাইয়া আমাদের সম্পত্তির লোভে এসব করতে বলেছিল।

– কি! রাজ তুই মানুষ না অমানুষ? একটা এতিম মেয়েকে তুই কষ্ট দিতে পারলি? আরে আমিও না যেন মেয়েটাকে কত কষ্ট দিয়েছি। তুই অনেক ভুল করছিস। তুই আমার ছেলে হতে পারিস না ।
– মা, কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ ঠিকই বলছি। আমার ছেলে হলে মেয়েটাকে দিনের পর দিন এভাবে কষ্ট দিতে পারতি না। আমি কিছু জানি না, আমি আমার বউমাকে দেখতে চাই এ বাড়িতে।

– রাজ কিছু না বলে তার রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকলে রাজের আরো বেশি কষ্ট হয়। কারণ রুমে আসলেই মনে হয় মৌ রুমে বসে আছে। রাজের কেন যেন খুব কষ্ট হয়। মৌ এর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই। ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙতেই বুকটা হুহু করে কেঁদে ওঠে। কারণ প্রতিদিন ফজরের আযান হলে মৌ ডেকে দিত। আজ তো কেউ ডেকে দেয় না। রাজ আজ আর শুয়ে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে উঠে, পড়ে থাকা পাঞ্জাবিটা পড়ে মসজিদে চলে যায়। নামায শেষ করে বাসায় বসে আছে। এমন সময় ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। রাজ তার ফোনটা বের করে দেখে তার ফোনে রিং হচ্ছে না। বালিশের নিচ থেকে আওয়াজ-আসছে। রাজ ফোনটা বের করতেও বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে! মৌ এর ফোন। মৌ তার ফোনটাও রেখে গিয়েছে। তাহলে এতোগুলো টাকা নিয়ে কি করলো। এ দিকে ফোনটা বেজেই চলছে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কে যেন বললো’ মামনি তোমার বাবা এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত!

-মানে? আপনি কে? আর এসব কি বলছেন?

– ডাক্তার রাজকে সবকিছু খুলে বললো। রাজ হসপিটালেরর ঠিকানা নিয়ে মৌ এর বাবার সাথে দেখা করলো।
– ডাক্তার মৌ এর বাবাকে বললো’ এই যে মাহিস আহম্মেদ আপনার অপারেশনের টাকা কে দিয়েছে উনি জানেন।’কথাটা বলে ডাক্তার চলে গেল।

– মাহিস সাহেব রাজকে দেখে বললো’বাবা বলো কে আমার জন্য এতোগুলো টাকা দিলো?

– আপনার মেয়ে!
– মানে?কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ সত্যি বলছি। যাকে আপনি জাতক ঘরে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। সে মেয়ে আপনার অপারেশনের টাকা দিয়েছে। যে মেয়ের মুখ তিনবছর এর মাঝে একবারো দেখেননি সে মেয়ে। যে মেয়েকে দীর্ঘ বিশবছরে একটিবার বাবা ডাকতে দেননি। সে মেয়ে আপনাকে বাঁচিয়েছে। জানেন মাহিস সাহেব, হায়াত মউত আল্লাহর হাতে এতে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক না। আর আপনি তো আপনার রক্তকে অস্বীকার করেছেন। জানেন মৌ আপনার জন্য কি করেছে? যে লোকটাকে জীবনে একটিবার বাবা বলে ডাকতে পারেনি। তার জন্য চুক্তি করে বিয়ে করেছিল। নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটা অন্য কারো পায়ে ঠেলে দিয়ে আপনার জীবন বাঁচিয়েছে। আগে জানতাম বাবারা তাদের মেয়েকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু সেটা ভুল। একটা মেয়ে শুধু দিয়েই গেল। নিজের সমস্ত সুখটা বির্সজন দিলো। নিজেকে রক্ষিতা বানালো। কার জন্য জানেন আপনার জন্য।

– মৌ এর বাবা কাঁদছে। দীর্ঘ বিশবছর পর কাঁদছে। যেদিন মৌ এর মা মারা গিয়েছিল সেদিন কেঁদেছিল। আজ আবার উনার চোখের নদীতে বান এসেছে। মৌকে খুব করে দেখতে মন চাচ্ছে। মা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে। মৌ এর বাবা রাজের হাত দু’টি ধরে বলতে লাগল’ বাবা আমার মেয়ে কেথায়? আমার মৌ কোথায়? আমার মা কোথায়? আমার মাকে আমি দেখবো। নিয়ো চলো।
– আঙ্কেল কান্না করবেন না। মৌ হারিয়ে গেছে। অভিমান করে চলে গেছে। আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। মৌকে যেভাবে হোক খুঁজে বের করবো।

– এদিকে অনেকদিন হয়ে যায় মৌ এর কোন খোঁজ নেই। রাজ প্রতিদিন নিয়ম করে মৌকে খুঁজে। মৌ এর চিন্তায় একদম খাওয়া -দাওয়া ছেড়ে দেয়। রাজের মা একমাত্র ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। একদিকে ব্যবসাটাও ঠিকমতো পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

-দিনদিন রাজের অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। বিশেষ করে রাজকে নিয়ে মৌ এর স্বপ্নগুলো ডাইরির পাতায় দেখে। এখন সারাদিন এই ডাইয়িটা নিয়েই পড়ে থাকে। আস্তে আস্তে রাজ পাগল হয়ে যায়।

– এদিকে রিত্ত আর তার মা দু’জনেই রাজের জন্য কান্না করে। মৌকে অনেক খুঁজেও পায় না। রাজ সারাদিন মৌ এর ছবি আর ডাইরিটা বুকে নিয়েই রুমে বসে থাকে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, কিন্তু দিন দিন আরো রাজের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সব ডাক্তারই বলে মৌকে যদি নিয়ে আসা যায় তাহলে ভালো হয়ে যেতে পারে । কিন্তু মৌকে অনেক খুঁজা খুজির পরও যখন পাওয়া যায় না। রাজ তখন বড্ড উন্মাদ। এখন তাকে বাসায় না পাগলা গারদে থাকতে হয়। বাসায় থাকলে সবকিছু ভেঙে ফেলে। এসব দেখে রাজের মা আর সহ্য করতে পারে না।

– দেখতে দেখতে ছয় বছর চলে যায়। রিত্ত এখন অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে! প্রতিদিনের মতো সেদিনও যখন অফিসে যাবে এমন সময় শুনতে পায় তাদের কারখানায় আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। কথাটা রাজের মা শুনায় সাথে সাথে হার্ট এট্যাক করে। হসপিটালে নেওয়ার আগেই মারা যায়।

– রাজকে মানসিক হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়। তার মাকে এ অবস্থায় দেখে কেমন যেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মা মা বলে কান্না করতে থাকে। রিত্তকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে রাজ। এমন দিন তার দেখতে হবে সে কোনদিনই ভাবেনি। মা’কে হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। এদিকে রিত্ত তার মা’কে হারালেও তার ভাইয়ের সুস্থ হয়ে ওঠাই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।

– এদিকে, কিছুদিন যেতেই ঋণের বুঝা চেপে বসে। ব্যাংকের ঋণ দিতে না পারায় তাদের সম্পত্তি নিলামে ওঠে যায়। রাজ রিত্তকে নিয়ে একদম রাস্তায় নেমে যায়। কত জায়গায় কতো চাকরি খুঁজেছে কোন চাকরি পায়নি। সব জায়গায় অভিজ্ঞতা খুঁজে। সত্যিই আল্লাহর খেলা বুঝা বড় দায়। যে রাজ হাজার হাজার মানুষকে চাকরি দিতে পারতো আজ সেই সামান্য একটা চাকরির জন্য ঘুরছে কতো মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। রাজ সারাদিন চাকরি খুঁজে বাসায় এসে দেখে, রিত্ত খাবার নিয়ে বসে আছে। রাজকে দেখেই বললো ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। আচ্ছা আসতেছি। রাজ ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে দেখে প্লেটে অল্প ভাত সাথে আলু ভর্তা। হাত ধুয়ে বলল’ তুই খেয়েছিস?
– হ্যাঁ ভাইয়া অনেক ক্ষুধা লেগেছিল। তাই খেয়ে নিয়েছি। তুমি খেয়ে নাও।
– আচ্ছা! রাজ খাবার মাখিয়ে রিত্তকে বললো ‘ হ্যাঁ কর।
– ভাইয়া আমি তো খেয়েছি।
– হুম যে বোন আমাকে রেখে কোনদিন খেলো না। সে বোন আজ আমাকে রেখে খেয়ে ফেলবে এটা ভাববো কি করে? হা কর। রাজ রিত্তের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। রিত্ত রাজের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।
দু’জনের গাল বেয়ে টপটপ করে পানি খাবারে পড়ছে।খাবারটা শেষ হওয়ার আগেই রাজের ফোনে টুং করে একটা ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেজটা রিত্ত দেখে বললো’ ভাইয়া, কারিমা হাউজিং প্রজেক্টে পরিক্ষা দিয়েছিলে?
– হ্যাঁ কেন?
– ভাইবার জন্য যেতে বলেছে কাল।
– ও আচ্ছা।
– পরের দিন রাজ যখন ভাইবা দিতে যাবে তখন দেখলো রিত্ত নামায পড়ছে। রাজ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো। রিত্ত নামায শেষ করে আসলে, রাজ বললো’ এখন কিসের নামায পড়লি?
– কিসের আবার নফল নামায পড়লাম। চাকরিটা যেন তোমার হয়ে যায়।
– রাজের চোখে পানি এসে গেলে, রিত্তের দিকে তাকাতেই। এই একটা ভালো জামা আছে রিত্তের। অথচ যার প্রতিদিন নতুন নতুন ড্রেস পড়া অভ্যাস ছিল। রাজ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে চাকরিটা হলে, প্রথম টাকা দিয়ে রিত্তের জন্য কেনা কাটা করবে।

– রাজ অফিসে গিয়ে বসে আছে। হঠাৎ পিয়ন এসে বলল ‘ আপনাদের মাঝে রাজকে? তিনি ভেতরে যান।
– রাজ ফাইলটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করার আগে বললো’ মে আই কামিন স্যার?’

– ইয়েস কামিন।
– কতটা শুনে রাজ চমকে গেল। পরিচিত কন্ঠ! রাজ সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকাতেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠলো! মৌ তুমি! কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কেমন যেন ধরে এলো।

মৌকে এভাবে দেখতে পাবে কোনদিন কল্পনাও করেনি।

– কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসেন।

– তুমি এখানে কিভাবে মৌ?

– what? মৌ কাকে বলছেন?

– জানো মৌ আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি? আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি । তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

– প্লিজ স্টপ! আরেকটা কথাও না। আপনার মাথায় সমস্যা আছে? আপনি পাগলা গারদ রেখে এখানে কেন? আমি মৌ হতে যাবো কেন? আমি কারিমা! আর তুমি বলার সাহস কোথা থেকে পান আপনি? যত্তোসব!আপনি এখন আসতে পারেন।

– শফিক সাহেব এসব পাগল কিভাবে পরীক্ষায় টিকে যায়? নাকি কোন দালাল ধরেছে।
-মুহূর্তের মাঝে মৌ অগ্নি মূর্তি ধারণ করে।

– সরি, ম্যাম আমি না বুঝে মৌ ভেবে ভুল করে ফেলেছি। চাকরিটা আমার খুব দরকার। আমাকে বের করে দিবেন না। প্লিজ।

– সরি আমি কোন পাগল লোককে অফিসে চাকরি দিতে পারবো না।

– প্লিজ ম্যাডাম এমন করবেন না। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই কাজ করবো।

– ওহ্ আচ্ছা তাই বুঝি? শফিক সাহেব আপনি বাহিরে যানতো আমি উনার সাথে কিছু কথা বলি।

– আচ্ছা ম্যাডাম।

– আচ্ছা মিঃ রাজ এর আগে কোন কম্পানিতে ছিলেন?
– ম্যাডাম আমি কোন কম্পানিতে ছিলাম না।
– ওহ্ আচ্ছা। তো অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনাকে কিভাবে কাজ দেয় বলুনতো?

– ম্যাম আমার চাকরিটা খুব দরকার। তাই যদি চাকরিটা দিতেন ভালো হতো।

– ওহ্ আচ্ছা। তা চাকরিটা এতো দরকার কেন বলতে পারেন?
– ম্যাম পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার কাছে। বোনটাকে পড়াতে হয়। এছাড়া ঢাকা শহরে থাকা বুঝেনই তো।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনার বাসায় কে কে আছে?
– বোন ছাড়া আর কেউ নাই।

– কেন বিয়ে করেননি?
– হুম বিয়ে করেছিলাম। ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছি।
– তা ডির্ভোস কেন দিলেন?
– ম্যাডাম আমি একজনকে ভালোবাসতাম সেজন্য। আর আমি মোহে পড়ে গিয়েছিলাম। সত্যিকার ভালোবাসাকে চিনতে পারিনি।
-তা আর বিয়ে করেননি?
– না, মৌকে অবহেলা করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। বাকিটা জীবন তার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিবো।

– ওহ্ আচ্ছা। আপনার মা নেই?
– নাহ্ আপন বলতে পৃথিবীতে বোনটা আছে। মা কিছুদিন আগে মারা গেছে।

– ওহ্ আচ্ছা। মৌ এর মনটা কেমন যেন করে ওঠলো।মৌ চাচ্ছে না তার পরিচয়টা দিতে। সবাই কারিমা হিসেবে তাকে জানে। রাজও যেন তাই জানে।

মিঃ রাজ আপনার সাথে কথা বলে ভালোই লাগলো। তবে কম্পানির ভালোটাও তো আমার ভাবতে হবে। আপনি যে পোস্টের জন্য আবেদন করেছেন। সে পোস্টের জন্য আপনার চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন একজন পেয়েছি। কোম্পানি পরবর্তী সাকুলার পরলে একটু খোঁজ নিবেন। আমি চেষ্টা করবো আপনাকে রাখতে।

– ওহ্ আচ্ছা ধন্যবাদ ম্যাডাম। আমি এখন আসি।

– রাজ যখন রুম থেকে বের হয়ে যাবে। তখন মৌ রাজকে ডাক দিয়ে বললো’ তুমি চাইলে আমার P .A হতে পারবে?

– হুম ম্যাডাম পারবো।
– আচ্ছা তাহলে কাল থেকে জয়েন করবে।
.
হঠাৎ মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠলো ‘মৌ ফেনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বললো ‘ মামনি তুমি কোথায়? তুমি কখন আসবে?
– মামনি তুমি বাবাই এর সাথে এসে পড়ে বাসায়। আমার যেতে লেট হবে। কথাটা বলেই মৌ ফোন কেটে দিল।
– মৌ এর মুখে ‘তোমার বাবাই এর সাথে এসে পড়ো। ‘ কথাটা শুনে রাজের বুকটা কেমন করে ওঠলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার মৌ আর তার নেই। নামের সাথে সাথে সব পরিবর্তন করে নিয়েছে। রাজের যে চিনতে বাকি নেই এটাই তার মৌ। প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছে। কিন্তু নিয়তী কেমন করে খেলছে আজ মৌ তার কাছে নিজের পরিচয় লুকাচ্ছে।

রাজ বাসায় আসতেই দেখলো ‘ রিত্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। রাজ রিত্তের মাথায় হাত রাখতেই রাজকে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কেঁদে দিল।
– কি হলো আমার বোনটা কাঁদছে কেন?কি হয়েছে তোর?
– ভাইয়া আজ সুনয় নাকে পড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বাসায় ছিল না। আঙ্কেল আমাকে ওসব করতে চেয়েছিল। আমি ধাক্কা দিয়ে চলে আসি। ভাইয়ারে মানুষ এতো খারাপ কেন রে?

– রাজ রিত্তের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে’ আর তোর কোন টিউশনি করাতে হবে না। ‘তুই আর যাবি না। জানিস আমি সত্যিই হতভাগারে নিজের বোনটার টাকায় চলি। আমারে ক্ষমা করে দে।

– চুপ ভাইয়া। আমি অন্য একটা টিউশনি নিবো। তুমি ওমন করে বলো না। বাবা নেই মা নেই। তুমিও যদি ওমন করে কথা বলো তাহলে আমার কেমন লাগে বলো তো? আচ্ছা ভাইয়া তুমি চোখ বন্ধ করো তো।
– কেনরে? চোখ বন্ধ করবো কেন?
– এমনিই করো!
– আচ্ছা।
– রাজ চোখ বন্ধ করলে রিত্ত একটা প্যাকেট এনে রাজের হাতে দিয়ে বলে ‘ চোখ খুলো তো ভাইয়া। ‘

-রাজ চোখ খুলে দেখে তার হাতে প্যাকেট। প্যাকেটে কি রিত্ত?
– ওহ্ খুলে দেখ না। রাজ প্যাকেটে খুলে দেখে নীল রঙের একটা শার্ট!

– রিত্ত শার্ট কিনছিস কেন?
– বারে!
আমার ভাইয়াটা একটা শার্ট পরে থাকবে আমার খারাপ লাগবে না?
– চুপ করবি তুই? তুই খুব বড় হয়ে গেছিস? আমি কিছুই বুঝিনা। তোর গায়ে যে জামাটা আছে সে জামাটা ছাড়া দ্বিতীয় কোন জামা আছে? নিজেকে কি ভাবিস? আমার কষ্ট লাগে না। প্রতিদিন এক ড্রেস পড়ে কলেজে যাস।
– ভাইয়া তুমিও না। যাও ফ্রেশ হয়ে আস। খাবার দিচ্ছি।

-না খাবো না।
– কেন? এই ভাইয়া কি হলো কাঁদছো কেন? একদম না একদম কাঁদবে না।

– আচ্ছা কাঁদবো না। তুই চোখটা বন্ধ কর।

– আচ্ছা চোখ বন্ধ করলাম।
– রাজ চাকরি পেয়েই জমানো টাকা থেকে রিত্তের জন্য গোলাপী রঙের একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। শাড়িটা রিত্তের হাতে দিয়ে বলে’ চোখ খুল তো। ‘
– রিত্ত চোখ খুলেই দেখে শাড়ি।
– ভাইয়া তুমি টাকা কোথায় পেলে?
– জমিয়েছিলাম। আর শোন না তুই টিউশনিতে যাবি না।
– কেন?
– তোর ভাইটার চাকরি হয়ে গেছে!
– সত্যি?
– হ্যাঁ সত্যি। আচ্ছা শাড়ি পছন্দ হয়েছে?
– কি হলো? শাড়ি পছন্দ হয়নি? কাঁদছিস কেন?
– রিত্ত কাঁদতে কাঁদতে বললো ‘ হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে।

– এদিকে পরের দিন রাজ অফিসে গিয়ে দেখে, মৌ এর চেয়ারে ছোট্ট একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা দেখতে হবুহু মৌ এর মতো।
– মেয়েটা রাজকে দেখেই সালাম দিল ‘ আসসালামু আলাইকুম।’
– অলাইকুম আসসালাম।
– আপনি কিছু বলবেন?
– ম্যাডামের কাছে আসছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা মম তো ওয়াশরুমে।

– আচ্ছা আসি।

– কোথায় যাচ্ছো? আর তোমার নাম কি বললে না তো?
– আমার নাম রাজ।
– ওহ্ তাই বুঝি?
– হুম।
– তুমি আমার বন্ধু হবে?
– হ্যাঁ হবো।
– তাহলে আমাকে চকলেট কিনে দিবে কেমন?
– আচ্ছা।

– এদিকে মৌ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বললো’ কি হলো রিচি কার সাথে কথা বলছো?’
– এই যে মম বন্ধুর সাথে।
– ওহ্ আপনি?
– জ্বি ম্যাডাম।
– আচ্ছা রিচি তুমি বাহিরে যাও আমি আসছি।
– আর শোন রাজ, তুমি সবসময় আমার সাথেই থাকবে। আজ বিকেলে অফিসে বিদেশী ভায়ার আসবে।

– আচ্ছা।

– বিদেশি ভায়ারদের সাথে, মৌ কথা বলছিল। তখন রাজকে বললো’ রাজ তুমি চা দাও এদেরকে। ‘
– ম্যাডাম পিয়ন আছে তো?
– আমি যা বলছি তাই করেন।
– আচ্ছা। রাজ যখন চা দিতে যাই এমন সময় একজনের সাথে ধাক্কা লেগে চা একজন বিদেশী ভায়ারের পায়ে পড়ে যায়।

– লোকটা চেয়ার থেকে উঠে রাজকে কষে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।

– ম্যাডাম সরি, আমি বুঝতে পারিনি।
– মৌ রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– রাজ মাথা নিচু করে সরি বলে যাচ্ছে।
– চুপ এখন বের হয়ে যাবি। আর শোন তুই ৫০ কোটি টাকার প্রজেক্টের ডিলটা কেনসেল করলি। তোর সরিতেই সব শেষ হয়ে যাবে। আর মন কোথায় থাকে? সারাদিন মেয়েদের সাথে পটোর পটোর করলে তো এমনি হবে। মৌ এক জায়গার রাগ অন্য জায়গায় মিটিয়ে দিলো। এটা আর রাজের বুঝতে বাকি রইলো না। রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে তার ডেস্কে যেতেই দেখতে পেল ‘ লাল গোলাপ সাথে চিরকুট। চিরকুট দেখে মনে মনে ভাবলো চিরকুট কার লেখা হতে পারে…..
প্রিয় পাঠকবৃন্দগন আপনারা ই বলেন কার চিরকুট হইতে পারে? আর তাতে কি লিখা আছে বলে মনে হয়?
.
চলবে
.
.
লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here