চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ১০

0
2590

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ১০
.
রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললো’ কি ভেবেছেন? আমি আপনাকে এমনিতেই ছেড়ে যাবো? চরিত্রহীন কাকে বলে তা প্রমাণ করে যাবো।
– মৌ যখন চিৎকার দিতে যাবে তখন রাজ মৌ এর মুখটা চেপে ধরে! টেবিলের পাশেই কাটা চামিচটা রাজ হাতে নিয়ে বলে আর একটা কথা বললে এটা তোর বুকে গেথে দিব। মৌ ভয়ে চুপসে যায়। রাজ আস্তে আস্তে মৌ এর দিকে এগিয়ে যায়। মৌ এর শরীর কাঁপছে। রাজ হঠাৎ মৌ এর শাড়ির আচলটা ধরতেই মৌ রাজকে বলল’ রাজ প্লিজ আমার কিছু করো না। আমার স্বামী আছে। প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়।
– রাজ এবার শাড়িটা টান দিয়ে ফ্লরে থেকে তুলে মৌ এর মাথায় দিয়ে দিলো।
– মৌ ভ্রু কুচকে তাকালো রাজের দিকে।
– কি হলো অবাক হলেন? আপনার সাথে খারাপ কিছু করলাম না কেন? শুনুন সত্যিই যদি চরিত্রহীন হতাম তাহলে, আপনাকে বিয়ে করেছিলাম তখন প্রতিদিন নিজের দেহের চাহিদা মেটাতে পারতাম। আপনাকে নিজের সৎজ্ঞানে স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। যে দু’দিন আপনার সাথে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে করেছিলাম। আর তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলাম। আরে আপনি তো আমার বউ ছিলেন। আপনাকে যখন ইচ্ছা ভোগ করার অধিকার ছিল আমার তাই না? কিন্তু আপনাকে নিজের ইচ্ছায় কেন স্পর্শ করিনি জানেন? কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসতাম না। ভালোবাসতাম সুমাইয়াকে। আমার সবটা জুড়ে সুমাইয়া ছিল। আর সুমাইয়াকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওকে ঠকাবো না। ঠকায়নি ওকে কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসেনি, তার নোংরা শরীর আর রুপ দিয়ে আমার সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিল। সে আরেকটা বিয়েও করেছিল। আমি তখন কাচকে হিরা ভেবে ভুল করেছিলাম। আর আপনি নিজের জীবনটা ঠিকই সাজিয়ে নিলেন। গত ছয়টা বছরে একটা খোজ নিয়েছিলেন? হ্যাঁ আমি আপনার সাথে অন্যায় করেছি, চরম অন্যায়। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমার হৃদয়ে আপনি ছাড়া এখন আর কেউ নেই। বাকিটা জীবন আপনার স্মৃতিকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকবো। আর হ্যা বললেন না চরিত্রহীন? চরিত্রহীন হলে আপনাকে দিনের পর দিন ইউজ করতাম। এখন আপনাকে যদি বলি আপনি স্বার্থপর। আপনার বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে, আমার কাছ থেকে কতটাকা নিয়েছেন? যেটা চুক্তির চেয়েও বেশি ছিল।নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন একবার।আমি আপনাকে বিয়ে করেছিলাম ‘আমার ভালোবাসাটাকে বাঁচাতে। আপনাকে ভোগ করতে নয়। চরিত্রহীন হলে আপনাকে ভোগ করতাম।
– আর হ্যাঁ ভালো থাকবেন। আপনার চোখের ত্রিসিমানায় আসবো না কোনদিন। আপনার স্বামীকে নিয়ে ভালো থাকবেন। আরেকটা কথা বড্ড ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসার দাবি নিয়ে কখনো আপনার সামনে আসবো না ।

আসি ভালো থাকবেন। কথাটা বলে রাজ, শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিল।
– রাজ দাঁড়াও যেয়ো না।
– সরি ম্যাডাম আমি কুত্তা রাজ নয়। আমি চরিত্রহীন।
– রাজ প্লিজ স্টপ করো। কোথাই যাচ্ছো?
– কোথায় যাবো, যাওয়ার তো কোন জায়গা নেই। তবে আপনার চোখের সামনে থেকে দূরে চলে যাবো।
– রাজ প্লিজ যেয়ো না। আর সরি, আসলে আমার জন্যই আজ তুমি অপমানিত হলে।
– ম্যাডাম সরি কেন বলছেন? চরিত্রহীনদের জন্য এসব কোন কিছু না। আর হ্যাঁ আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ যে বিপদের দিনে চাকরিটা দিয়েছেলেন। সত্যিই আপনি অনেক ভালো, যতটা অন্যায় করেছিলাম আপনার প্রতি আপনি চাইলেই বিপদের দিনে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। আমার বিপদে আপনি সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আর আপনার স্বামীর জন্য দো’আ করি। সুখী হোন আপনারা। আমি তো আপনাকে হ্যাপি রাখতে পারিনি। স্বামীর অধিকারটাও দেয়নি। ক্ষমা করে দিয়েন আমায়। প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।

– রাজ ক্ষমা চেয়ে না এভাবে। আর প্লিজ তুমি যেয়ো না।

– না ম্যাডাম আমার জন্য অনেক ঘটনার জন্ম হয়েছে। আপনার হাসবেন্ড আপনাকে সন্দেহ করেছে। বিশেষ করে সেদিনের কথা যেদিন আপনার উপরে পড়ে গিয়েছিলাম। জানেন আপনার হাসবেন্ড আমার ঠিক কোমড়ে লাথি দিয়েছিল। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাহবা দিচ্ছিলেন। সত্যিই কি সেদিন দোষটা আমার ছিল?
– রাজ সরি! বাট তুমি কেন তিশার সাথে কথা বলো? তুমি জানো তিশার সাথে যখন তুমি কথা বলো তখন আমার খুব কষ্ট হয়। কেন সে ফাযিল মেয়ে লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে? কেন তুমি ওর সাথে শপিং এ যাও। কাল রিচি যখন তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছে তখন মনে হচ্ছিল আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাবে। তুমি কেন ওর সাথে শপিং এ যাও। এই জন্যই আমি তোমার সাথে ওমন করেছি। জেদ করে।

– বাহ! মৌ বাহ! জেদ?আচ্ছা আপনার কেন কষ্ট হবে? আমি আপনার কে?
– রাজ তুমি আমার –

– চুপ করেন আমি আপনার কর্মচারী। আর তিশা আমার ফ্রেন্ড, ও কাল জোর করে শপিং করতে নিয়ে গিয়েছিল। দেশের অবস্থা ভালো না এসবের জন্য একজন মানুষকে প্রয়োজন। মনে রাখবেন তিশা আর আমি ভালো বন্ধু এ ছাড়া আর কিছু না। আর হ্যাঁ আপনার কেন খারাপ লাগবে? আপনার না স্বামী আছে? যাই হোক ভালো থাকবেন। । আল্লাহ হাফেয।
– রাজ বেরিয়ে যাচ্ছে, মৌ পিছন থেকে বলছে রাজ প্লিজ যেয়ো না।

– এমন সময় তিশান এসে মৌকে বললো’ বউ অসভ্যটা তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছে?
– মৌ মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিল।

– বিকেলে মৌ অফিস থেকে এসে দেখে, রিচি তার বাবার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। মৌ রিচির কপালে চুমু দিয়ে দেয়। রিচি সজাগ পেয়ে বলে মামনি,আমার বাবা অনেক ভালো তাই না?
– মৌ রিচিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো হ্যাঁ মা অনেক ভালো। তোর বাবাটা আমাকে সকল পরিস্থিতিতেই ভালোবাসতে শিখেছে। আমি অনেক লাকি রে। কথাগুলো বলে মৌ কাঁদতে লাগল। বুকের ভেতরটা কেমন যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।

– এদিকে বিয়ের দিন মৌ রিচিকে নিয়ে রাজের বাসায় আসে। বাসাটা খুব সুন্দর কর সাজানো। মৌ বিয়ে বাড়িতে এসে দেখে, তার অফিসের প্রায় সকলেই আছে বিয়ে বাড়িতে। সবাই আনন্দ করছে। পিয়ন মৌকে দেখে বললো ‘ ম্যাডাম কখন আসলেন?’
– এই তো এখনি। মৌ এর চোখ কেন জানি শুধু রাজকে খুঁজছে। হঠাৎ মৌ খেয়াল করলো, নীল একটা পাঞ্জাবি পড়ে একজন দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মৌ এর বুঝতে বাকি রইল
লো না যে সেটা রাজ। মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো, রাজ রিত্ত কোথায়? রিত্তকে কি সাজানো হয়েছে?
– না উপরে আছে, তিশা আর তার বান্ধুবিরা সাজাচ্ছে তাকে! ওহ্ আচ্ছা।

– মৌ রিত্তের রুমে গিয়ে দেখে, রিত্তকে তিশা আরো কয়েকজন মিলে সাজাচ্ছে। মৌ রুমে প্রবেশ করতেই, রিত্ত মৌকে দেখে চমকে যায়!

– কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ভাবি! তুমি এতদিন পর। সবাই থমকে যায় রিত্তের কথায়।

– মৌ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো’ আপনি আমাকে চিনেন?আর ভাবি কাকে বলেন?
– ভাবি আমাকে তুমি চিনতে পারছো না? আমি রিত্ত। ও ভাবি তুমি আর ভাইয়াকে ছেড়ে যেয়ো না ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছে। জানো ভাবি ভাইয়া পাঁচ বছর পাগল ছিল। শুধু তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতো। এখনো এমন একটা রাত দেখি না ভাইয়া তোমার ছবি নিয়ে না কাঁদে। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি ভাইয়াকে ছেড়ে যেয়ো না। রুমের সবাই মৌ এর দিকে চেয়ে আছে। মৌ কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। মৌ এর ভেতরটা কেমন যেন করছে।

– কি হলো ভাবি? কথা বলছো না কেন?
– এমন সময় তিশা বললো’ রিত্ত এটা তো আমাদের বস। ‘ রাজ যে অফিসে চাকরি করতো যে মেয়ে রাজকে অপমান করেছে। এর স্বামীই তো রাজকে মেরেছিল।

– মৌ কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেল। পিছন থেকে রাজ বলে উঠল” রিত্ত কি সব বলছিস? ওটা আমাদের ম্যাডাম। আর মানুষের মতো মানুষ হয় না? আর হ্যাঁ ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না। রিত্ত আমাকে অনেক ভালোবাসে তো তাই। আর তার ভাবি দেখতে আপনার মতো ছিল তাই ভুল করে বলে ফেলেছে।
– না রাজ কিছু মনে করিনি। আর রিত্ত আজ সকালেই সবার সামনে বলছে আমিই তোমার– এমন সময় রাজ বলে উঠলো ‘ম্যাডাম আপনার হাসবেন্ড কোথায় তাকে তো দেখলাম না। ‘

– এদিকে বর এসে পড়ে। রাজ রুম থেকে বের হয়ে যায়। বিয়ের কাজ যখন শেষ হয়ে যায়।

বিয়ে শেষে, রাজের পাশে তিশা দাড়াতেই পাশ থেকেই রাফসান বলে উঠে ? রাজ আপনাকে আর তিশাকে খুব সুন্দর লাগছে। চলেন না আপনাদেরও বিয়েটা করিয়ে দেয়। তিশা রাজের হাতটা ধরে ফেলে। মৌ এর বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে!

– রিত্ত পাশ থেকে বলে’ আপনারা দো’আ করবেন, আগামী মাসে ভাইয়া আর তিশা আপুর বিয়ে হবে। কথাটা বলে হেসে দেয়।

– এমন সময় রিচি দৌড়ে এসে, তিশার হাতটা রাজের হাত থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে’ বাবাই তুমি মমকে রেখে বিয়ে করো না?’ মম তোমার জন্য কান্না করে। তোমার ছবি নিয়ে মম কাঁদে। বাবাই বলো না তুমি বিয়ে করবে না।

বিয়ে বাড়িতে পিনপিনে নীরবতা। অফিসের সকল কর্মচারী রিচির দিকে তাকিয়ে আছে।

– কি হলো বাবাই তুমি মমকে ছেড়ে যেয়ো না।
– কি বলছো এসব মামনি?এই যে ম্যাডাম অফিসে অপমান করে শান্তি পাননি? এখন আবার কেন এমন করছেন? আর রিচি এসব কি বলছে?
– সরি রাজ কিছু মনে করো না। আমরা চলে যাচ্ছি।

– যাচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু রিচি যা বলছে এসব কি সত্যি কথা?
-না সত্যি কথা না। রিচি মিথ্যা বলেছে। তবে রিচি একদিন, আমার ব্যাগে তোমার ছবি দেখে বলেছিল এটা কার ছবি? আমি সেদিন সব বলেছিলাম। আজ হয়তো, তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে চায়নি। আচ্ছা আমরা তাহলে আসি।

– হুমম তোমার স্বামীকে কে তো নিয়ে আসোনি। তিনি মনে হয় অপেক্ষা করছে।

– রাজের মুখে এমন কথা শুনে কেমন যেন কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। মৌ কোনমতে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি করে বাসায় এসে পড়ে। বাসায় আসার সাথে সাথেই রিচি মৌকে বলল’ মামনি তুমি মিথ্যা কেন বললে? বাবাইকে কেন বললে না।
– চুপ রিচি তুমি কোন কথা বলো না। উনি তোমার বাবা না। তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম।
– না না তুমি মিথ্যা বলোনি। জানো মম আমার বাবাটা অনেক ভালো। কিন্তু তুমি তো বাবা ডাকতে নিষেধ করেছো।
– আচ্ছা রিচি, উনিই তোমার কাছে ভালো হয়ে গেলো? আমি তোমার কাছে ভালো না?আচ্ছা উনি যদি তোমাকে নিতে চায় তাহলে আমাকে রেখে চলে যাবে?
– উহ্ মম তুমি কি বলো! আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। তুমি না আমার মম। তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি?
– এদিকে রিত্ত তার বরের সাথে চলে যায়। বাড়িতে কেউ নেই রাজ একাই। বুকের ভেতর নানান কষ্ট উঁকি দিচ্ছে। রিত্তকে খুব মিস করছে রাজ। বিপদে -আপদে মায়ের মতো স্নেহ দেওয়া বোনটাও আজ তার কাছে নেই। কানের কাছে বারবার রিচির কথাগুলো বারি খাচ্ছে। মনটা বারবার বলে উঠছে রিচি আমার মেয়ে। রিচি কেনই বা আমাকে বাবা বললো? তাহলে মৌ কি বাচ্চা নষ্ট করেনি। এছাড়া মৌ বিয়ে করলেও বিয়ের বয়স এতো হওয়ার কথা না। তাহলে কি মৌ আমার কাছ থেকে এসব লুকাচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাজ ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই। এদিকে সকালে কলিং বেলটা বেজে ওঠে। কলিং বেলের শব্দে, রাজ গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে মৌ আর রিচি দাঁড়িয়ে আছে। রিচি রাজকে দেখেই বাবাই বলে জড়িয়ে ধরলো।
– মৌ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রিচি একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। রাজ হু হা করে উওর দিচ্ছে। হঠাৎ, রাজ রিচির কথা শুনে চমকে গেল। বাবাই তুমি নাকি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে? ও বাবাই তুমি মেরে ফেললে আমি বাবাই কাকে ডাকতাম? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবাই। রাজ রিচিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল ‘ মা’রে আমাকে ক্ষমা করে দে।আর তোকে কষ্ট দিবো না। তুই যে আমার মা আমার জীবন।
– বাবাই আমাকে সরি না বলে মম কে বলো। মমকে তুমি অনেক কষ্টট দিছো।

– মৌ তোমাকে কিভাবে যে বলি, তোমার প্রতি যে অন্যায় করেছি। হয়তো মানুষ পশুর উপরও এমন অন্যায় করে না। ক্ষমা করা যায় না আমায়? প্রমিজ করছি আর কোনদিন তোমাকে কোন কষ্ট দিবো না।
– মৌ কিছু বলছে না, মৌ এর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
– কি হলো ক্ষমা করবে না আমায়?
– ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে।
– কি শর্ত বলো?
– শর্তটা হচ্ছে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিতে হবে সারাজীবনের জন্য। জানো যেদিন কবুল বলেছিলাম সেদিনই মনে প্রাণে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। তুমি আমার জীবন হয়ে আছো। তোমার বুকটাই আমার শেষ ঠিকানা। সত্যিই রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। বড্ডবেশি ভালোবাসি তোমাকে। কতোগুলো বছর তোমার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। রিচি, সত্যিই আমার পরম পাওয়া। কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? বুকে নিবে না আমায়? তোমার বুকে যাওয়ার জন্য কলিজাটাযে আমার ছটফট করছে।

-রাজ দু’টি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতে থাকে, আমি সত্যই আজ খুব খুশি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমার কলিজার টুকরাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমিও যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমার প্রতিটা স্পন্দন তোমার কথা বলে মৌ। বুকে আসো। আমার হৃদয়ের পিপাসা নিবারণ করি। তোমার ভালোবাসা দিয়ে। মৌ রাজের বুকে এসে সাগরের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পরে। রাজ মৌকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মৌ রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে।রাজ মৌ এর কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। মৌ তার গোলাপী ঠোঁট জোড়া দিয়ে রাজের কপাল স্পর্শ করে। মৌ এর কাছে মনে হচ্ছে সে পেয়েছে তার আশ্রয়স্থল। যেখানে মরণ হলেও শান্তি। রাজ মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এদিকে মৌ চোখের পানি দিয়ে রাজের বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে।

এমন সময় রিচি বলে ওঠে বাবাই, মম তোমরা আমাকে রেখে কি করছো?
– রাজ মৌকে ছেড়ে দেয়। রিচি হিহি করে হেসে ওঠে।
– হঠাৎ ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে যায় রাজের। রাজেরর ঘুম ভাঙতেই সে বুঝতে পারে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো সে। স্বপ্নটা এখনো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠছে।
রাজ অযু করে ফজরের নামায পড়তে চলে যায়। ফজরের নামায শেষ করে বাসায় এসে ভাবতে থাকে, সত্যিই রিচি আমার মেয়ে। যে করেই হোক সত্যিটা আমার জানতেই হবে। রাজ ঠিক করলো আজকেই সে মৌ এর বাসায় যাবে।

– সকাল এগারোটার দিকে রাজ মৌ এর বাসায় গিয়ে দেখে কাজের মেয়ে ঘর পরিষ্কার করছে। মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতেই, মেয়েটা বলে মৌ শাওয়ার নিচ্ছে, আর রিচি তার রুমে পড়ছে। রাজ সরাসরি দু’তলায় চলে যায়। রাজ রিচির রুমে গিয়ে দেখে রিচি উপুড় হয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। রাজ একটু কাছে গিয়েই দেখে, রিচি তার ছবিটাককে বাবাই বাবাই করে ডাকছে। আর বারবার ছবিটার কপালে চুমু দিচ্ছে। চুমটা যেন রাজের কপালে এসে লাগছে। আর বাবাই ডাকটা মনে হয় কলিজায় এসে বিঁধছে।
– হঠাৎ মৌ পিছন থেকে বলে ওঠলো’ রাজ তুমি এখানো? তুমি এখানে কি করছো?
– রিচি রাজকে দেখেই বললো ‘ বাবাই তুমি কখন আসলে?
– মৌকে রিচি ধমক দিয়ে বললো’ মা এটা তোমার বাবা না। তোমার বাবা বিদেশে।
– মম তুমিই না বলেছিলে ছবির লোকটাই আমার বাবা? ছবির লোকটার সাথে উনাকে তো একই দেখা যায়।
– রিচি চুপ করো। আর রাজ তুমি এখানে কেন আসছো? প্লিজ চলে যাও। কি চাও তুমি?
– কিছু চাই না, তবে আমার মেয়েকে চাই। সত্যি করে বলো তো রিচি কে? আমার মেয়ে না?
– রাজ তুমি কি বলতে চাও? তুমি প্লিজ চলে যাও। আমার স্বামী দেখলে খারাপ ভাববে।

– মৌ চলো না আবার নতুন করে শুরু করি! আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি। আর কখনো কষ্ট দিবো না।
– রাজ মনে করে দেখতে চাই না অতীত। তুমি চলে যাও। তুমি আমার সুখ দেখতে পাচ্ছো না।

– আচ্ছা তোমার সুখের পথের কাঁটা হবো না। আমার রিচিকে দিয়ে দাও। আমার মেয়েকে দিয়ে দাও।
– রাজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। রিচি আমার মেয়ে। তুমি প্লিজ চলে যাবে না দাড়োয়ান ডাকবো?

– মৌ চলো না, কেন মেয়েটাকে তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করবে? আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেওয়া যায় না? মৌ আমি তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করা যায় না?
বুকে টেনে নেওয়া যায় না?
– প্লিজ তুমি বের হয়ে যাও। তোমাকে দেখতে মন চাচ্ছে না। যখন গর্ভবতী থাকা অবস্থায় আমার পেটে চা ছুড়ে মারা হয়েছিল তখন কোথায় ছিলে? দেখবে সে পোড়া দাগ? এই দেখ। মৌ কাপড়টা সরাতেই রাজের বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠলো। কি হলো কিছু বলছো না কেন?চোখ কপালে ওঠে গেলো? আর মনে রেখো ভুলেও কখনো রিচিকে নিতে আসবে না। রিচি আমার আর তিশানের মেয়ে।
– মৌ প্লিজ অনেক হয়েছে আর না। চলো আমার সাথে এ বলে যখনি রাজ মৌ এর হাত ধরে ঠিক তখনি মৌ রাজের গালে চড় বসিয়ে দেয়। রাজ মৌ এর দিকে অসহায়রের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে’ তুমি আমাকে মারতে পারলে?
– হ্যাঁ পারলাম কারণ আমি অন্য জনের বিবাহিত স্ত্রী। আর তুমি পর পুরুষ! আমি চাই না আমার স্বামী ব্যতীত কেউ আমার গায়ে স্পর্শ করুক।
– রাজের কলিজাটা মনে হচ্ছে বের হয়ে যাবে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারচ্ছে না। টপটপ করে চোখের পানি মৌ এর সামনেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো।
– মৌ চিৎকার দিয়ে বললো ‘ এই যাচ্ছিস না কেন? এখন আমার সুখের ঘরে আগুন লাগাতে আসছিস? নাকি আমার মেয়েকে নিতে এতো প্ল্যান…

প্রিয় পাঠকবৃন্দগন মৌ কি রাজকে আর কখনো ভালোবাসবে বলে মনে হয়? কোনো রকম আইডিয়া থাকলে দিন।

চলবে

লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here