লেডি_ডন পার্টঃ ৯,১০

0
1042

লেডি_ডন
পার্টঃ ৯,১০
লেখিকাঃ গাজি স্নিগ্ধা হোসেন

২ মাস হয়ে গেছে রুহি আদির বাসায় এসেছে,২ মাসের মধ্যে সে বাড়ির কাজের লোক সহ লিজা সাওন মাহির সবার মন জয় করে নিয়েছে। সবার মাঝে রুহি মধ্যমণি হয়ে উঠেছে।রুহিকে দেখে বোঝায় যায় না সে বাড়ির বউ নাকি অন্য কিছু। আদির সাথে সে এমন ব্যবহার করে যেন সে আদির বউ।রুহি প্রতিদিন আদিকে খাইয়ে দেয় বউয়ের মতই যত্ন করে। রুহি নিয়ম করে সবাইকে কার্টুন দেখতে বাধ্য করে মাঝে মাঝে সবাইকে নিয়ে ঘুরতেও যায়। আদিও তাকে বেশ আদরে রেখেছে কখনো একটা ধমকও দেয় নি। মাহির সাওন লিজা ত রুহিকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পাড়ে না।
সবকিছুই ভাল ভাবে চলছিল।
কিন্তু আদি আর রুহির ডেসটিনিটাই এমন সবকিছু বেশিক্ষন ঠিক থাকে না এবারেও তাই হল।
,
,
,
,
হঠাৎ একদিন আদি একটি মেয়ে নিয়ে আসল,লিজা সাওন মাহির ওকে দেখে রীতিমত নাচানাচি শুরু করছে সবার সাথে মেয়েটি হেসে হেসে কথা বলছে।
কিন্তু রুহির এসব ভাল লাগছে না বিশেষ করে মেয়েটি রুহির হাত ধরে আছে সেটা রুহির সহ্য হচ্ছে না।কারন রুহি আদিকে ভালবেসে ফেলেছে।রুহি চাপা স্বভাবের হওয়ায় মুখফোটে বলতে পাড়েনি।রুহির খুব রাগ হচ্ছে কে এই মেয়ে? অনেক্ষন বিশ্লেষণ করে বোঝতে পাড়ল, মেয়েটির নাম মনি।
ও আদির বান্দবি বিদেশে একসাথে পড়াশোনা করত অনেকদিন পর দেশে ফিরেছে।লিজা সাওন মাহিরের সাথেও বেশ ভাল সম্পর্ক।
আদি রুহির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য রুহিকে ডাকল।
আদিঃ রুহি এই হচ্ছে মনি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলতে পারো আমার আত্মা।আর মনি এই হল রুহি………..
আদির বলা বাকি শব্দগুলি শুধু রুহিকে না সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
কারন আদি বলেছে এই হল রুহি আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।

রুহি কি বলবে বোঝতে পাড়ছে না শুধু আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আদি খুব সাভাবিক ভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয় নি।

আদিঃ রুহি যাও উপড়ে মনির ঘর গোছিয়ে দাও।

রুহি খুবি চাপা স্বভাবের তাই ধাক্কাটা সামলে নিয়ে সবার সামনে সাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।

রুহিঃস্যার উপড়ে তো কোন রুম খালি নেই।

আদিঃ আজব তো,তোমাকে এতদিন আমি মুল্যায়ন করেছি কিন্তু তোমারও তো উচিত নিজের জায়গাটা বোঝে নেওয়া তাইনা? এক্ষুনি নিজের সব জিনিস নিয়ে ছাদের চিলিকোঠায় চলে যাও আজ থেকে মনি তোমার রুমে থাকবে।

রুহিঃ জ্বি স্যার,ম্যাডাম চলুন বলে মনিকে নিয়ে উপড়ে গেল,
পাশ থেকে মাহির এগিয়ে এসে বলল এসব কি করছিস আদি?

লিজাঃআমিও কিছু বোঝলাম না…

আদিঃ সময় হলে ঠিক বোঝবি।

সাওনঃঝামেলা কিছু একটা হয়েছে সেসব নাহয় বোঝলাম কিন্তু চিলিকোঠা কেন? গেস্টরুমেও তো থাকতে পাড়ত।চিলিকোঠাটায় কোন মানুষের পক্ষে থাকা সম্ভব কি?না আছে লাইট না আছে বিছানাপত্র ওখানে থাকলে যেকেউ ধম আটকে মরে যাবে।
আদিঃ মরা এত সহজ না এই মেয়ের শাস্তি পাওয়া দরকার আদির সাথে ফাযলামি করার শাস্তি কি হতে পাড়ে সেটা আজ থেকে বোঝবে।

লিজাঃ কিন্তু ও করেছেটা কি?

আদিঃ সেটা অন্যদিন বলব।এখন ছাড় এসব আমি ওইসব মনে করে নিজের রাগ আর বাড়াতে চাচ্ছি না।আর একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নে,আমি ওর সাথে যাই করি না কেন তোরা বাধা দিবি না। ওর সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি আছে সব মিটাতে হবে আদি কারর ঋন রাখেনা। দেখি রুহি কত সহ্য করতে পাড়ে।

রুহি মনির ঘর গোছিয়ে দিয়ে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে চিলিকোঠায় গেল
কিন্তু একি এখানে থাকা তো দূর ডোকার জায়গায়ই তো নাই পুরোনো জিনিসপত্র দিয়ে সবটা ঘর ভর্তি হয়ে আছে।
কিন্তু কিছু ত করার নেই এখানেই থাকতে হবে তাই কিছু জিনিস বের করে ছাদে রেখে এক কোনায় একটু জায়গা খালি জায়গা খালি করে নিজের জিনিসপত্র রাখতে রাখতে আদির গলা শুনতে পাড়লো হুম আদি ওকেই ডাকছে।
তাড়াতাড়ি নিচে গেল
রুহিঃ স্যার আমাকে ডাকছেন?
আদিঃ না গান গাইছিলাম,ডাকতে ডাকতে গলা ফাটিয়ে ফেলছি এখন মহারানী বলছেন ডাকছি কিনা।রাতের রান্না কে করবে শুনি?ধমক দিয়ে

রুহিঃ রান্নাত উমা আন্টি…..বলে রান্নাঘরের দিকে তাকালো।কিন্তু রান্না ঘরে কেউ নেই দেখে সে খুব অবাক হল।

আদিঃ হুম এতদিন উমা আন্টিই করত এখন থেকে আর করবে না বাড়ির সব কাজের লোক কে আমি ছুটি দিয়ে দিয়েছি।কারন তোমাকে আমার যত টাকা দিতে হয় তার অধের্ক টাকায় এদের সবাইকে দিলেই হত তাহলে শুধু শুধু ইনভেস্ট করবো কেন?এরা সবাই মিলে যে কাজ করতো আজ থেকে তুমি একা সেসব কাজ করবে কারন তোমার বাবা এখনো হাসপাতালে।এখানকার বেস্ট হাসপাতালে উনার চিকিৎসা হচ্ছে সে খরচ ত আছেই তার পর নুরার পড়াশোনা সহ সংসারে সব খরচ….

রুহিঃ জ্বি স্যার আমি বোঝতে পেড়েছি,
আমি সব করতে রাজি আছি বলে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল ।রুহির চোখের পানি বাধ মানছিল না তাই সেখানে দাঁড়িয়ে থাক সম্ভব ছিল না তাই রান্না ঘরে চলে এসেছে।
রুহি তেমন কিছুই রান্না করতে পাড়েনা তবু অনেক কষ্টে ফোন দেখে দেখে রান্না শেষ করে টেবিলে রাখলো সবাই খেতে বসেছে যথারীতি প্রতিদিনের মত রুহিও খেতে বসেছে।
কিন্তু আদি এসেই রুহিকে একটা ধমক দিল রুহি ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল আদি লাথি দিয়ে রুহির চেয়ার টা ফেলে রুহি ভয়ে একদম চুপসে গেছে।আদিকে এর আগে এত রাগতে কখনো দেখে নি রুহি।

আদিঃ কখনো শুনেছো বাড়ির কাজের মেয়ে আর বাড়ির মালিক এক টেবিলে বসে খায়? (ধমক দিয়ে)

রুহিঃ স স স স সরি স্যার আমি বোঝতে পাড়ি নি (ভয়ে ভয়ে)

মনিঃ রুহি কি প্রবলেম?
তোমার আচারন কোনভাবেই কাজের মেয়ের মত লাগছে না সবাই তোমাকে ভালবাসে মানে এই না যে তুমি নিজের জায়গা ভুলে যাবে।

রুহির চোখের কোণে জল জমে গেছে, মাথা নিচু করে বলল ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম আর হবে না বলে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।

রুহির অবস্থা দেখে লিজা সাওন আর মাহিরের খুব খারাপ লাগছে আদির প্রতি রাগও হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পাড়ছে না কারন আদি আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।
আদিঃ আজ থেকে নিজের খাবার আলাদা রান্না করবে আমাদের খাবারের সাথে না। রাতে স্রেফ ২ টা রুটি আর সবজি এর বেশি কিছুনা। যদি বেশি কিছু করো সিসি টিভি ত আছেই।

রুহি কিছু বলল না মাথা নিচু করে শুনছে।

সবার খাওয়া শেষ,রুহি সবকিছু গুচাচ্ছিল এর মধ্যেই ৯ টা বাজল রুহি সব ফেলে টিভির রুমে যেতে চাইল কিন্তু সারাদিনের সব ঘটনা মনে পড়ে গেল তাই আর ওখানে যাওয়ার সাহস হল না।

সবাই মিলে টিভি দেখছিলো রুহি না আসায় আদির রাগ হল,রাগে গজ গজ করতে করতে বলল দেখেছিস মেয়ের জেদ কত? একদিন কার্টুন দেখতে না পাড়লে সারা বাড়ি মাথায় করত আর এখন আসার নামেই নাই। দেখিস আমি ওর ভালো লাগার কোন কিছু করতে দিব না আমার সাথে জেদ দেখানোর মজা বোঝাব।

লিজাঃ আদি তোর ব্যাপার স্যাপার কিছুই বোঝতে পাড়ছি না।কি চাচ্ছিস তুই?

আদিঃ আমি ওকে কস্ট দিতে চাই কিন্তু আমার সামনে রাখতে চাই।

মাহিরঃ এসবের মানে কি?

আদিঃ জানি না বলে উঠে চলে গেল।

মনিঃ কি ব্যাপার বলতো তোরা সবাই এই মেয়ের প্রতি এত conscious কেন বলতো
ফালতু একটা মেয়ে….!!!

সাওনঃ যা জানিস না সেই বিষয়ে কথা বলবি না মনি।

মাহির, লিজাঃহুম ঠিক বলেছিস সাওন।

মনির এদের কথায় রাগ হয়েছে,
এই মেয়েকে তো আমি দেখে নিব মনে মনে বলল মনি।
আদি এসে দেখে রুহি রান্না ঘরে খেতে বসেছে আদিত রেগে ছিল তাই এসেই রুহির খাবার ছুড়ে ফেলে দিল।
রুহি অবাক হয়ে বলল আমি কি কিছু ভুল করেছি স্যার…
আদিঃ অবশ্যই করেছিস। তোকে বলছি না আজ থেকে আলাদা রান্না করবি।আজ মানে আজ থেকেই।

রুহিঃ জ্বি স্যার…..

আদিঃ ঘর পরিষ্কার কর যা,
একটু খাবারো যেন কোথাও পড়ে না থাকে।

রুহিঃ হাত ধুয়ে ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করল।

আদিঃ সকালে উঠে সারা বাড়ি পরিষ্কার করবি সবার জন্য খাবার বানাবি মনির সব কাজ করবি।আমার অফিসে যাওয়ার জন্য সব ঠিকঠাক গুছিয়ে দিবি বোঝেছিস।আর শোন তর আর অফিস যাওয়ার দরকার নেই।

রুহি মাথা নাড়ল।
,
,
,
রুহি ঘর পরিষ্কার করে শুতে গেল।
রুহি ছাদে যাওয়ার সাথে সাথে বোঝতে পাড়ল কেউ দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।রুহি তাতে কিছু মনে করল না ঘরে লাইট নেই তাই রুহি ফোনের লাইট জ্বেলে ঘুমাতে গেল।
কিন্তু যেই সে শুতে যাবে, তখনি তার চোখ কপালে উঠে গেল চারদিকে তেলাপোকা কিলবিল করছে
রুহি উঠে দৌড় দিল কিন্তু দরজা ত বাইরে থেকে লাগানো। চিলিকোঠা থেকে বের হতে পাড়লেও নিচে যাওয়ার দরজা বন্ধ।
রুহিঃ কি করব এখন? চিলিকোঠায় থাকা অসম্ভব তাহলে কি করা যায়?আচ্ছা রাতটা না হয় ছাদেই কাটিয়ে দেই। বলে এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ল

কিন্তু কপালে দুঃখ থাকলে যা হয় কোন সংকেত ছাড়ায় হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। রুহির বৃষ্টির চেয়ে তেলাপোকাতেই বেশি ভয় তাই সে চিলেকোঠায় না গিয়ে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেছে।
সকালে আদি ছাদের দরজা খুলল রুহিকে দেখে আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এসে রুহিকে স্বজোরে একটা থাপ্পড় মারল, এতই জোরে থাপ্পড় মেড়েছে যে রুহির ঠোঁট ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়তে শুরু করেছে।
আদিঃকি করছো এখানে?এভাবে ভিজেজো কেন?
রুহিঃ ঘরে তেলাপোকা ছিল ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে।
আদিঃ তারমানে তুমি সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেজো?

রুহিঃ জানি না আমার কাজ আছে সরুন বলে চলে গেল।

আদিঃ এই মেয়েকে তো আমি আজ মেরেই ফেলব তেলাপোকার জন্য সারারাত ভিজেছে।নিজের প্রতি কোন খেয়াল নেই।

রুহি কাপড় বদলে সবার জন্য চা বানিয়ে সবার রুমে দিয়ে আসল,
সে মনিকেও চা দিতে গেল মনি চা টা হাতে নিয়ে রুহির উপড় ছুড়ে মারল।
জানো না আমি চা খাই না কফি কোথায়?
রুহির এমন জায়গায় চা টা পড়েছে যে কাউকে দেখানো সম্ভব না গলার নিচে গরম চা পড়ে ছ্যাকা লেগেছে।
রুহি এসে আদি বলল আপনার বন্ধবি এমন কেন? আমাকে পুড়িয়ে দিল।

আদিঃ পুড়িয়ে দিল মানে কোথায় পুড়েছে দেখি
রুহিঃ না কিছু না কিছু হয় নি,

আদিঃ অহ আচ্ছা শোন এক পাতিল গরম পানি নিয়ে এসো তো দরকার আছে।
রুহি না বোঝেই সত্যি সত্যি গরম পানি নিয়ে আসল।
আদি গরম পানি টা রুহির উপড় ছুড়ে মারল।
আদিঃ আর কখনো কারোর ব্যাপারে মিথ্যা বলবা?
রুহিঃ আহ…. কি করলেন এটা?কিসের মিথ্যা?

আদিঃ এই যে মনি তুমাকে পুড়িয়ে দিয়েছে বললা

রুহিঃহুম তাহলে ত এখন যা ঘটল এটাও মিথ্যা।কারন আমি এটাও দেখাতে পাড়ব না যে কই পুড়েছে।
কি বলুন তো স্যার আমি মেয়ে ছেলে নই তাই শরীরের সব জায়গা দেখাতে পাড়লাম না।

আদি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে কি বলবে বোঝতে পাড়ছে না।

আদিঃ আমি কি করলাম এটা….???

আদি রুহির পিছন পিছন গেল একটা এন্টসেপ্টিক ক্রিম রুহির হাতে দিয়ে বলল লাগিয়ে নাও প্লিজ, না হলে খুব কষ্ট হবে।

রুহিঃ আপনার ভাবতে হবে না।

আদিঃ লিজা এই লিজা এদিকে আয় তো….

লিজাঃ কি হল ডাকছিস কেন?
আদিঃরুহির দিকে ইশারা করে বলল এটা ওকে লাগিয়ে দে.
লিজাঃ কেন কি হয়েছে ওর?

আদিঃ এত পেঁচাস কেন? জামাটা খুলে দেখ
কি হইছে?ইচ্ছা ত করছে আমি নিজেই দেখে নেই

আদি এটা বলতেই রুহি জামাটা আঁকড়ে ধরল।

আদিঃ ভয় পেতে হবে না আদি এতও খারাপ না বলে চলে গেল।
,
,
চলবে।

#লেডি_ডন
#পার্টঃ১০
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

লিজাঃ রুহি কি হয়েছে বলোতো?
রুহি সব বলল,
লিজাঃ রুহি শোন, মনি তোমাকে পছন্দ করে না তুমি ওর কাছে বেশি যেও না, বলতে বলতে লিজা রুহিকে ক্রিম লাগিয়ে দিল ।বেশি পুড়ে নি একটু ছ্যাকা লেগেছে
কিন্তু,ক্রিম লাগাতে গিয়ে লিজা অনুভব করল রুহির জ্বর এসেছে তাই রুহিকে লিজা নিজের রুমে এনে শুয়িয়ে দিল।রুহি এত কাজ করে আর সারারাত না ঘুমিয়ে খুব ক্লান্ত তাই বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
লিজা গিয়ে আদিকে বলল রুহি অসুস্থ হয়ে পড়েছে,
আদি লিজার কথা শুনেই অস্থির হয়ে পড়ল, তাড়াতাড়ি রুহির কাছে গেল।
রুহিকে ঘুমন্ত অবস্থায় একদম পড়ীর মত লাগছে আদি আস্তে করে গিয়ে রুহির কপালে চুমু খেল।তারপর ওর পাশে বসে জলপট্রি দিতে শুরু করল।
রুহি যতক্ষন ঘুমিয়েছে আদি তার পাশেই বসে ছিল।
রুহির ঘুম ভাংগতে বিকাল হয়ে গেল,
রুহি ঘুম থেকে উঠে আদিকে পাশে দেখে চমকে উঠল,
রুহিঃ স্যার আমি ইচ্ছা করে এখানে আসি নি। লিজা আমাকে নিয়ে এসেছে মারবেন না প্লিজ….

রুহির কথা শুনে আদির আবারো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।সারাদিন যার সেবা করলাম সে কিনা বলছে আমি ওকে মারব?উফফ কি কপাল আমার এই মেয়ে কবে বোঝবে আমাকে ( মনে মনে)
আদি কিছু না বলে চলে গেল রুম থেকে
,
,
,
আদি সবাইকে রেডি হতে বলল কারন, কারোরেই আজ খাওয়া হয় নি বাড়িতে কোন কাজের লোক নেই রুহিও অসুস্থ তাই রান্নাও করা হয় নি সবাই এখন খেতে যাবে।
আদি রুহিকেও যেতে বলল,

আদি রুহিকে গাড়ির সামনে তার পাশে বসতে বলল কিন্তু রুহি বসল না আদির তাতে রাগ হল।

আদিঃরুহিকে একটা সাজা দিতে হবে।রাস্তার পাশে গাড়ি থামালো সবাইকে নামতে বলল।
সবাই মিলে একটা আইস্ক্রিম বারের কাছে গেল আদি সবাইকে আইস্ক্রিম কিনে দিল।
শুধু রুহি কে ছাড়া রুহির আইস্ক্রিম খুব প্রিয় তবুও আদি দিল না।
রুহির খুব লোভ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। খালি সবার মুখের দিকে দেখছে,
আদি রুহিকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে

রুহিঃআমার যদি টাকা থাকত আমিও কিনতাম? (মনে মনে)

সবাই খাওয়া শেষ করে আবার গাড়িতে গিয়ে বসলো।
একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসে গাড়ি থামলো
রেস্টুরেন্ট টা বেশ জাঁকজমকপূর্ন এখানে সব কিছুর এই অনেক দাম।
আদি অর্ডার দিল
ওয়েটার এসে খুব সুন্দর পাত্রে খাবার পরিবেশন করে দিল।সবাই খাওয়া শেষ করলো সব খাবার রুহির পছন্দের খাবার ছিল।আদি ইচ্ছা করেই রুহির জন্য অর্ডার দিয়েছিল। রুহির পাশেই মনি বসেছে।
খাওয়া শেষ করে আদি বিল দিতে চলে গেল লিজা সাওন মাহির গল্পে ব্যস্ত হঠাৎ করে কিছু একটা ভাংগার শব্দে তাদের গল্প থামল নিচে তাকিয়ে দেখে একটা সুন্দর পাত্র ভেংগে পড়ে আছে।
মনিঃ জীবনে দেখে নি তো তাই ভেংগে ফেলেছে ভিখারি কোথাকার।
রুহিঃ মনির দিকে তাকিয়ে আছে।

আদি বিল দিয়ে এসে বলল কি হয়েছে?

মনিঃ দেখোনা ডারলিং রুহি এটা ভেংগে ফেলেছে আসলে কখনো দেখে নি তো।

মনির কথায় আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।রাগ টা আসলে রুহির প্রতি না বরং মনির উপড় উঠেছে তাই বলল ভেংগেছে যখন এর দাম ওই দিবে চলো আমরা যাই।

রুহিঃ আমার কাছে তো কোন টাকা নাই স্যার…

আদিঃ ভাংগার সময় মনে ছিল না.?

ওয়েটার এসে বলল স্যার এটার বিল ৫০০০ টাকা

আদিঃ রুহিকে দেখিয়ে বলল ওই ম্যাডাম দিবে আর যদি না দেয় পুলিশে দিয়ে দিও।

মাহিরঃ কি বলছিস এসব তুই? বাইরের মানুষের সামনে তুই রুহিকে অপমান করতে পাড়িস না।

আদি মাহিরের কানে কানে কি জানি বলল তখন মাহিরো চুপ হয়ে গেল।

রুহি হতাশ দৃষ্টিতে ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

রুহিঃ গরীবের এত বিলাশিতা করা ঠিক না।কেন যে এসেছিলি খেতে মনে মনে নিজেকে নিজেই বলছে।
এখন কি করব আমার কাছে তো ফোন ও নাই যে বাড়িতে বলব।
ওয়েটারঃ ম্যাম, মেনেজার আপনাকে ডাকছে।
রুহিঃ জ্বি চলুন
ম্যানেজারঃটাকা দিন
রুহিঃ আমার কাছে কোন টাকা নেই
ম্যানেজারঃ তাহলে আপনাকে পুলিশে দিতে বাধ্য হব।
রুহিঃ দাঁড়ান আমার কাছে একটা জিনিস আছে রুহি তার কোমড় থেকে একটা চেইন খুলে ম্যানেজারকে হাতে দিয়ে বলল এটার দাম নিজেই চেক করে নিবেন আর যদি কম হয় এড্রেস দিয়ে গেলাম বাসায় গিয়ে নিয়ে আসবেন এবার আমাকে যেতে দিন বলেই রুহি বেড়িয়ে গেল

রুহি যাওয়ার সাথে সাথেই ম্যানেজার আদি কে ফোন দিল।
ম্যানেজারঃ স্যার আপনি তো বলে ছিলেন, টাকা না দিতে পাড়লে ম্যাডামকে যেন ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেই কিন্তু উনিত….

আদিঃ উনিত কি?

ম্যানেজারঃ উনি একটা বেলি চেইন দিয়েছেন। প্লাটনামের উপড় অসংখ্য ডায়মন্ড দিয়ে কারুকাজ করা এটার দাম আমার কল্পনার বাইরে স্যার।

আদিঃ কি বলছেন এসব ওর কাছে এত দামি কিছু কিভাবে থাকবে আদি কথা শেষ করার আগেই লিজার ডাক শুনতে পেল।

লিজাঃআদি তাড়াতাড়ি এদিকে আয় রুহি এসব কি করছে দেখে যা।
আদিঃ টিভিতে চোখ রেখে হতবাক হয়ে গেছে রুহি রাস্তায় পুলিশদের মাড়ছে আর সেটা সবগুলি টিভি চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে।

আদি সময় নস্ট না করে তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটে গেল।গিয়ে দেখে রুহি তখনো মারামারি করছে।
আদি দৌড়ে গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলল, কি করছো রুহি?পাগল হয়ে গেছো নাকি?

আদিকে এই এলাকায় সবাই চিনে তাই আদি রুহিকে জড়িয়ে ধরায় পুলিশ রুহিকে মারতে আসেনি।
একজন পুলিশের কাছে আদি জানতে চাইল কি হয়েছে? কারন রুহি রাগে ফুসঁছে কিছু বলার অবস্থায় সে নেই।রুহিকে বুকে জড়িয়ে রেখেই আদি প্রশ্ন করলো।
পুলিশটি বলল আসলে স্যার ম্যাডামের কোন দোষ নেই আজ এই রাস্তা দিয়ে ভিআইপি যাওয়ার কথা তাই রোড ব্লক করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে জ্যামে একটা এম্বুলেন্স আটকে ছিল তাই উনি পুলিশদের মেরে রাস্তার ব্লক খুলে দিয়েছেন আর ভি আ ই পি এসে এসব দেখে পুলিশকে বলেছিলেন ম্যাডামকে এরেস্ট করতে তাই তিনি রেগে গিয়ে সবাইকে মেরেছেন।
রুহিঃ কিসের ভি আই পি একজন মানুষের জীবনের চেয়ে ভি আ ই পির দাম বেশি আমরা গরিব বলে আমাদের জীবনের কোন দাম নেই? আজ তো এই ভি আই পি কে আমি দেখে নিব। চিৎকার করে বলছে রুহি।
আদির আর বোঝতে বাকি রইল না রুহিকে গরিব বলে মনি অপমান করেছে আর আদি নিজেও যা যা করেছে তার রাগ রুহি এখানে দেখিয়েছে….

আদিঃ আচ্ছা রুহি এদের ভুল হয়েছে তুমি শান্ত হও প্লিজ……

আদি কমিশনারকে উদেশ্য করে বলল আমি ওকে এখন নিয়ে যাচ্ছি কোন ফরমালিটি থাকলে বাসায় আসবেন তখন কথা হবে।
আদি রুহিকে নিয়ে চলে গেল

একজন এসে কমিশনারকে বললো স্যার উনাকে এরেস্ট করলেন না…???
কমিশনারঃ১ম কথা মিঃ আদিত্য চৌধুরী একজন ভি আই পি আর ২ য় কথা এই ম্যাডামকে এরেস্ট করলে পাবলিক আমাদের মেরে চাতু বানিয়ে দিবে কারন এখানে যা যা হয়েছে সব লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছে। এরপর এই ভি আই পির পদ থাকে কিনা সেটা আগে দেখো।
,
,
,
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here