লেডি_ডন পার্টঃ১৫,১৬

0
1038

লেডি_ডন
পার্টঃ১৫,১৬
লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
পার্টঃ১৫

আদি,শাওন,মাহির,মনি,লিজা কেউ কিছু বোঝতে পাড়ছে না।
জয় কি চাইছে?
সবাইকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে?
রুহি নিজেও জানে না।
হঠাৎ করে জয় এসে রুহির চোখ বেধেঁ দিল তারপর রুহির হাতে একটা রিভালবার দিয়ে বলল
রুহি গুলি কর।
রুহিঃ জয় এসব তুই কি বলছিস? কাকে গুলি করব?কেন করব?চোখ বেঁধেছিস কেন? তুই আমার হাত ছাড়।
আমাকে দেখতে দে।
জয় রুহির হাতে রিভালবার টা আরো চেঁপে ধরে বলল এত কথা ভাল লাগছে না রুহি,

শুধু ৫ টা গুলি এতেই তর হাত কাঁপছে এতদিন তোকে আমি শিখাইছি নিজেই তো বুঝতে পারতাছিনা।
জয়,চিৎকার করে বলল, ফিগার টান রুহি নিজের সাথে হওয়া সব অন্যায়ের প্রতিশোধ নে।
রুহির হাত কাঁপছে,

রুহিঃনা জয় আমি পাড়ব না কিছুতেই পাড়ব না ফিগার টানতে।
তুই আমাকে এটা করতে বলিস না।
রুহি নার্ভাস হয়ে পড়েছে।
জয় রুহির আর কোন কথা না শুনে রিভেলবারে রাখা রুহির হাতের উপড় নিজের হাত রেখে নিজেই পর পর ৫ টা গুলি চালিয়ে দিল

রুহিঃ চিৎকার করে বলল না………..
রুহি এত জোরেই চিৎকার করেছে যে অন্যদের চিৎকার রুহির কানে পৌছায় নি।
চিৎকার করেই রুহি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে
,
,
,
আরে নিচে এসে লাভ নাই বাকিটা পড়ের পর্বে।

এখানে কি ঘটেছে কার কি মনে হচ্ছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।দেখি আমার ভাবনার সাথে কার কার মিলে।
চলবে…..!!!

#লেডি_ডন
#পার্টঃ১৬
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

শুট করার সাথে সাথেই রুহি জ্ঞান হারায়।
,
,
,
,
রুহির এখনো জ্ঞান ফিরে নি,জয় রুহির কাছে না গিয়ে সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বোঝায় যাচ্ছে জয়ের মন খারাপ।
জয়ের পিছন থেকে তার কাধেঁ কেউ রাত রাখল,

জয়ঃ তার দিকে মুখ না ফিড়িয়েই বলল আদি…..
,
,
,
তখন রুহি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে আমি তখন থেকেই বাবা মার বরখে যাওয়া ছেলে,সারাক্ষন মারামারি করতাম কারন ছাড়াই লোকজনকে মারতাম ভদ্রভাষায় যাকে বলে মাফিয়া।বাবা মার একমাত্র ছেলে হওয়ায় তারাও কখনো বাধাঁ দিত না।
কিন্তু রুহি তেমন ছিল না।রুহি আমার মামার একমাত্র মেয়ে সবাই ওকে আদর করত।আমিও করতাম কিন্তু ততটাও করতাম না যতটা এখন করি।
খুবি নরম মনের,ইমোশনাল আর ভিতু ছিল রুহি। এতই ভিতু ছিল যে একটা তেলাপোকা দেখলেই অজ্ঞান হয়ে যেত।
কিন্তু একদিন আমার ভিতুরানি একটা অসম্ভব কাজ করে বসলো।
ও এসে আমার কাছে বায়না করল ওকে নিয়ে ঘুড়তে যেতে হবে।
আমি বেশ বিরক্ত হলাম। কারন একটা মাফিয়ার পক্ষে আর যাইহোক কোনো মেয়ের হাত ধরে ঘুরে বাড়ানোটা ঠিক সম্মানজনক না বলেই মনে করতাম।
বল্লাম পাড়ব না, রুহি কেঁদে দিল বাধ্য হয়েই বল্লাম আচ্ছা চল কিন্তু আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবি লোকে দেখে যেন না বলে যে ওই দেখ জয় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে।
রুহি মাথা নাড়ল তারপর বেশ সেজেগুজে বের হল আমার সাথে।
কিন্তু আমার যেমন কথা তেমন কাজ,ওকে রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেলাম, আইস্ক্রিম খাওয়াইলাম কিন্তু সবকিছুই দূর থেকে ওর কাছে না গিয়ে।তারপর ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গেলাম রুহি কে বল্লাম দূরে দাঁড়াতে,ও তাই করল।
আমি সবার সাথে কথা বলছিলাম হঠাৎ রুহি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেলাম।ভাবছি আমার মানসম্মানের ১২ টা বেজিয়ে দিয়েছে রুহি।
কিন্তু আমার ভাবনাকে সম্পুর্ন উল্টে দিয়ে ১ টা গুলি এসে লাগল রুহির পিঠে তারপর পর পর আরো ২ টা গুলি।
তারমানে আমার কোনো শত্রু আমাকে মারার জন্য গুলি ছুড়েছিল আর রুহি আমাকে বাঁচাতেই নিজেকে উৎসর্গ করলো।
রুহির সাদা জামাটা মুহুর্তেই রক্তে লাল হয়ে গেল রুহির ফুটফুটে চেহারাটা মলিন হয়ে গেল চোখের পলকেই।
আমার মনে হল পৃথীবিটা যেন অন্ধকার হয়ে গেল।
জীবনের প্রথম নিজের অজান্তেই চোখের পানি চলে আসলো।
তখন মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিল যে করেই রুহিকে বাঁচাতে হবে।
ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।
ডাক্তার বল্লেন অবস্থা ক্রিটিকেল, বাঁচার সম্ভবনা প্রায় নেই বল্লেই চলে।সার্জারী করে লাভ নেই।

ডাক্তারের কপালে বন্ধুক রেখে বল্লাম আজ রুহি না বাঁচলে, আপনিও বাঁচবেন না।
ডাক্তার ভয়ে বলল তারা সার্জারী করবে।যদিও কোনো আশা নেই।
সার্জারী করা হল কিন্তু রুহির জ্ঞান ফিরল না।ডাক্তার এসে বলল she is…. .
কথাটা শেষ করার আগের মুহূর্তে অনুভব করলাম আমি হাওয়ায় ভাসছি।আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে হাসপাতেলের বেডে দেখলাম। জ্ঞান ফিরার পড়ে আমার মুখের প্রথম কথা ছিল রুহি কোথায়? ও ঠিক আছে তো….
মামা এসে কাঁদতে কাঁদতে বলল না বাবা রুহির জ্ঞান এখনো ফিরে নি। রুহি কোমায় চলে গেছে।

৩ মাস রুহি কোমায় ছিল।কোনো নাড়াচাড়া করা ত দূর রুহি চোখ তুলে থাকাতো না পর্যন্ত ।
সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল।
কিন্তু আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম খোদা তুমি রুহিকে ফিরিয়ে দাও আমি আমার জীবন দিয়ে ওকে আগলে রাখব।আমি দিনের পর দিন রাতের পর রাত ওর পাশে বসে থাকতাম।
একদিন খোদা আমার কথা শুনল আমি রুহির পাশে বসে আছি হঠাৎ রুহি নড়ে উঠল। তাড়াতাড়ি গিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনলাম তিনি বল্লেন she is out of Danger Now….কথাটা শুনে আমার মনে হল পৃথিবীর সব সুখ যেনো আমার মনে ঠাঁয় পেয়েছে।
তার কিছুদিন পর ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম, বাসায় আনার পর আমি রুহিকে কখনো নিজের চোখের আড়াল হতে দিতাম না। নিজের হাতে খেতে পর্যন্ত দিতাম না। সবসময় আমি ওর খেয়াল রাখতাম। সবাই বলতো ও নাকি আমার বউ সত্যি বলতে কে কি ভাবছে এসবকে আর পাত্তা দিতাম না।
কিন্তু খেয়াল করলাম রুহি যেন আরও ভিতু হয়ে গেছে, গুটয়ে গেছে। বাড়ির বাইরে একদম বের হতে চাইত না।আমাকে ছাড়া একা একা থাকতেই পাড়ত না কলেজে পর্যন্ত যেত না।
তখন প্রতিজ্ঞা করলাম রুহিকে আমি স্ট্রং করে তুলব যেকরেই হোক।শুরু হল রুহির ট্রেনিং। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করলাম ওকে শক্ত করে তুলার।
রুহিও আস্তে আস্তে ভিতু রুহি থেকে শহরের লেডি ডনে পরিণত হল।
ইমোশনাল রুহি হয়ে উঠল বদমেজাজি রুহি… যেখানে অন্যায় দেখতো সেখানে মারামারি শুরু করত। রাগ উঠলে ওকে আমি ছাড়া কেউ শান্ত করতে পাড়ত না ও আমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করত।
একদিন তো একটা ছেলেকে সবার সামনে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল।ছেলেটা অবশ্য গুন্ডা ছিল।একটা মেয়েকে অত্যাচার করেছিল তাই রুহি ওকে মেরিছিল,তাই মামা ওকে বকা দিয়েছিল তখন সেই রাগে রুহি বাসা থেকে চলে যায়।

আদিঃ লাশটাকে উদ্দেশ্য করে বলল এটা কে?

জয়ঃ এই সেদিন আমাকে গুলি করেছিল যেই গুলিগুলো রুহির লেগেছিল।
জয় কথা শেষ করে বলল চলো রুহির কাছে যাই।
আদি এতক্ষন সব শুনছিল আর কোনো কথা না আদিও জয়ের পিছন পিছন গেল।

এদিকে রুহির জ্ঞান ফিরল রুহি মিট মিট চোখ খুলে নিজেকে কারোর কোলে আবিষ্কার করলো
তার সামনের মাটিটা রক্তে ভিজে আছে।তার পাশেই একটা লাশ পড়ে আছে। রুহি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে উঠে চোখ খোলে তাকাল,
সে এতক্ষন লিজার কুলে শুয়ে ছিল পাশে আদিও আছে তারমানে,
আমি আদি বা লিজাদের শুট করি নি,তবে কাকে মারলাম আর জয়ই বা কই?(রুহি)
রুহে ভাল করে লাশটাকে দেখল।
তার পর সে দেখল, জয় পাশেই মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রুহি জয়ের কাছে গিয়ে বলল,তারমানে তুই একে আনতেই তখন বাইরে গেছিলি?
জয় গম্ভির গলায় উত্তর দিল হুম।
ওকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলাম শুধু তর হাতে মারাব বলে।
কিন্তু কি যানিস রুহি,আমি আজ হেরে গেছি। আমার এতদিনের পরিশ্রম আজ তুই বৃথা করে দিলি।
আমার এতদিনের কষ্টের কোনো মুল্যই তুই দিলি না ।আমি কখনই ভাবি নি তুই এভাবে বদলে যাবি?
তুই এখন আর তর জয়কে বিশ্বাস করতে পাড়িস না।
আমি তোকে এতবার বল্লাম তাও তুই শুট করলি না সত্যিই আমার আজ আর কিছু বলার মত মুখ নেই, আমি হেরে গেছি রুহি, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় হার হল আজ।

আদি পিছন থেকে এসে জয়ের কাঁদে হাত রাখল।

জয়ঃ যানো আদি, আমি আমার লাইফের সবচেয়ে বেশি সময় একটা মেয়েকে দিয়েছিলাম।
আমি আমার সবটা দিয়ে তার মুখে হাসি ফুটাইতে চেয়েছিলাম।একটা মেয়ে যে কিনা ঘর থেকে বের হতে পাড়ত না ভয়ে,আমি তাকে বাইরের দুনিয়া দেখতে শিখিয়েছিলাম,একটু আবেগি হাসি দিয়ে আবার বলল ঘরেও তার ভয় ছিল,তেলাপোকার ভয়….!!! যদিও সেই ভয় আমি দূর করতে পাড়িনি তবুও রাতের পর রাত জেগে তার পাশে বসে থাকতাম যদি রাতে তার ঘুম ভেংগে যায় সে যেন ভয় না পায়। সেও আমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করত কিন্তু আজ সব উল্টে গেছে….

জয়ের চোখে পানি জমে গেছে আদি তা স্পষ্টই দেখতে পেল আদি জয়কে জড়িয়ে ধরলো জয়ও আদিকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর হয়ত জয়ের সবার সামনে অস্বস্তি হচ্ছে তাই বলল আমি যাই তোমরা এসো।
বলেই জয় হাঁটতে শুরু করলো ড্রাইভারকে চাবি দিতে বলল আর লাশটাকে দেখিয়ে বলল এই জঞ্জাল টা লেকে ফেলে দিও কোনো প্রমান যেন না থাকে বলে গাড়ি নিয়ে জয় বেরিয়ে গেল।

রুহি বাকরুদ্ধ সাথে অন্যরাও
কারোরেই মুখ থেকে কথা বেরুচ্ছেনা।
রুহি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে….
আদির আজ জয়ের প্রতি অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করছে।
আদি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে,আমি রুহিকে ভালবাসি কিন্তু আমি কি জয়ের মত করে ওকে ভালবাসতে পেড়েছি?
রুহিও তো জয়কে ভালবাসে…. ভাল না বাসলে কারোর জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঝাপিঁয়ে পড়া যায়?
আচ্ছা তবুও ধরে নিলাম রুহি ভালবাসে না কিন্তু জয় তো বাসে….
আমি সব জেনেশুনে কি করে জয়কে বলব,
তুমি এতদিন যাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে আজ তাকে আমায় দিয়ে দাও।

কিন্তু আমিও তো রুহিকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি ওকে ছাড়া আমিই বা বাঁচব কি করে?
,
,
,
,
চলবে….!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here