লেডি_ডন
সিজন_২
পর্বঃ১৫,১৬
লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
পর্বঃ১৫
জয়ঃ লিজা তুমি কি জানো কার সামনে দাঁড়িয়ে কি বলছো?
লিজাঃ হুম ভাল করেই জানি,কিন্তু তুমি জানো না আগের সেই জয় আর আজকের এই জয়ের মধ্যে কত পার্থক্য।
২ বছর আগের জয়কে দেখে সবাই ভয় পেত,কেউ তার সামনে দাড়ানোর সাহস পেত না।
কিন্তু আজকের এই জয় একজন অসহায়,তার পাশে কোন গার্ডস নেই, হাতে বন্দুক নেই আর সবচেয়ে বড় কথা তার পাশে তার আত্মা রুহি নেই আর সে অনেক আগেই মারামারি ছেড়ে দিয়েছে। আজ তোমার কিছুই নেই জয়, তুমি আজ নিঃস্ব।
ঠিক তখনি পিছন থেকে একজন গার্ডস এসে
নিজের মুখোশ খুলতে খুলতে বলল,
হুম ম্যাডাম একদম ঠিক বলেছেন, আজ জয়ের কাছে গান নেই, গার্ডস নেই আর রুহিও নেই জয়ের হাতও বাঁধা।
কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন জয়ের নিজের হাতে তৈরি করা #লেডি_ডন এখনো জীবিত,
আর দেখুন তার হাতে গানও আছে, পাশে প্রচুর গার্ডসও আছে আর জয় মারামারি ভুলে গেলেও তার লেডি_ডন কিন্তু এখনো রোজ ২ বেলা করে প্রেকটিস করে।
মুখোশ টা খোলার সাথে সাথে লিজা, জয় ২ জনেই অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেল…
লিজাঃ রুহি…..??? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? তোমার তো কিছুই মনে নেই।তোমার ত স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেছে।
রুহিঃ কার স্মৃতি কিসের স্মৃতি বলতো? আমার স্মৃতি নষ্ট হয়েছে হা হা হা তাই নাকি লিজা…???এটাকে কি সিনেমা পেয়েছো নাকি যে স্মৃতি এই চলে যাবে আর এই চলে আসবে।
বোকা লিজা,আসলে এতদিন ধরে তুমি যে গেম টা সাজিয়ে এসেছো তার প্রতিটা চাল আমার ছিল।কিন্তু তুমি তা বোঝতেই পারলে না। আমার তো হাসি পাচ্ছে তোমার কান্ড দেখে।
জয়ঃ তারমানে কি রুহি?
রুহিঃ বোকা মেয়ে বিয়ে করে কি তুই ও বোকা হয়ে গেছিস নাকি? আচ্ছা দাঁড়া বোঝাচ্ছি।
দেখ তোদের কারোর কি একবারো মনে হল না?সারা দুনিয়া থাকতে আমাকে তোরা সেখানেই কেন পেলি যেখানে তুই আর লিজা বেড়াতে গেছিস।
আমি তো বাড়ি ফিরেছিলাম লিজার আসল রুপ টা সবাইকে দেখানোর জন্য।
স্মৃতি নষ্ট হওয়ার অভিনয়টা ছিল আমার খেলার প্রথম চাল। এই প্লেনটা তো আমি অনেক আগেই হিসেব করে রেখেছিলাম।আর রুহির হিসাব কখনো ভুল হয় না।
আচ্ছা লিজা আমার দেওয়া নেকলেসটা তো তুমি ফেলে দিয়েছিলে তাহলে আবার পড়লা কেন?
আমি জানি কেন পড়েছো কারন এটা একটা দামি সেট,আর এটাই ছিল আমার ২য় চাল।
জানো লিজা এই নেকলেসটাই না তোমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বলেই রুহি লিজার গলা থেকে নেকলেসটা খুলে নিল তারপর একটা স্পাই ক্যামেরা দেখিয়ে বলল দেখো এই ২ দিন তুমি যা যা করেছো আমি সব দেখেছি।
কি ভাবছো সব জেনেও আমি কেন বাজি ধরলাম তাই না….??? এটা ছিল খেলার ৩য় চাল কারন আমি জানতাম আমি বেরিয়ে আসার পড়েই তুমি তোমার নিজের রুপ দেখাবে।
ক্যামেরার কথা বলতেই লিজার বুক কেঁপে উঠল
তাই ভয় পেয়ে লিজা বলল এই দাঁড়িয়ে দেখছিস কি?এই ২ টাকে এক্ষুনি বিসর্জন দিয়ে দে।
রুহি জোরে জোরে হেসে বলল,তুমি কত বোকা, আচ্ছা লিজা কখনো শুনেছো কাঁচ মচকে গেছে?শোন কাচ ভেংগে যায় কিন্তু মচকায় না আর যদি ভাংগে তার একটা টুকরোই যেকোনো বস্তুকে ক্ষত বিক্ষত করতে যথেষ্ট।জয় মারা যেতে পাড়ে কিন্তু ভেজা বিড়াল হয়ে থাকবে এটা হতে পাড়ে না।জয় ভাংবে তবুও মচকাবে না বোঝেছো? আর তুমি তো এই শহর টাকে নিজের শহর ভেবে নিয়েছো।আরে তুমি তো ভুলে গেছো এই শহরে রাজত্ব করে জয়।ওর ক্ষতি করা তো দূর ওর সামনে দাঁড়ানোর সাহস কেউ রাখে না এমন কি রুহিও রাখে না।আর তুমি কিনা এই শহরেই টাকা দিয়ে জয়কে মারার লোক খোঁচ্ছিলে? কি হাস্যকর বিষয়?এই যে এদের দেখছো এরা এখানে দাঁড়িয়ে আছে জয় কে মারতে নয় বাঁচাতে। তুমি কাকে কাকে ফোন দিয়েছো কত টাকা অফার করেছো কি কি বলেছো সব আমি শুনেছি এরা কেউ আসতে চায় নি কিন্তু এরা না আসলে তুমি এখানে আসতে না।
তাই আমি সবাইকে নিয়ে এসেছি কারন জয়ের সামনে সত্যিটা প্রমান করা খুব দরকার ছিল।আসলে জয় রাগি হলেও নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে শিখে নি।হাজার হোক তুমি ওর স্ত্রী…..
কিন্তু এখন তোমাকে কে বাঁচাবে বলতো….???
লিজা বোঝে গেল তার বাঁচার কোন আশায় নেই তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে জয়ের পায়ে ধরে বলল আমাকে ক্ষমা করে দাও জয়, আমি শুধু টাকার জন্যই এসব করেছি।
আমি তো কখনো কিছুই পাইনি জয় আমাকে তুমি বাঁচাও প্লিজ।আমি এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাব।
রুহিঃ কোন লাভ নেই লিজা আজ তোমাকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পাড়বে না বলে লিজার দিকে বন্দুক তাক করল রুহি।
জয় এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল থাম রুহি।
ক্ষমা করে দে বাচারি কে ওকে আমি টাকা দিতে রাজি আছি।
রুহিঃ জানিস জয় তোর শিক্ষায় না একটু ফাঁক ছিল সব শিখিয়েছিলি শুধু ক্ষমা করাটাই শিখাস নি।তাই রুহি ক্ষমা করতে পাড়লেও তোর বানানো লেডি_ডন ক্ষমা করতে শিখে নি।
ওকে মরতে হবে।আজকেই মরতে হবে
জয়ঃ না রুহি মরার মত কোন অন্যায় লিজা করে নি তুই ওকে ছেড়ে দে।লোভি হওয়াটা অন্যায় ঠিকি কিন্তু তার শাস্তি মৃত্যু হতে পাড়ে না।
রুহি নিজের হাতে বন্দুকটা জয়ের দিকে দিয়ে নিজে অন্য একটা গান নিয়ে বলল এই নে জয় এবার নিজের বউ কে বাঁচাতে আমার সাথে লড় যদি তুই জিতিস আমি ওকে ছেড়ে দিব।
,
,
,
,
চলবে…!!!
#লেডি_ডন
#সিজন_২
#পার্টঃ১৬
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
জয়ঃ না, মরার মত কোন অন্যায় লিজা করে নি তুই ওকে ছেড়ে দে।লোভি হওয়াটা অন্যায় ঠিকি কিন্তু তার শাস্তি মৃত্যু হতে পাড়ে না।
রুহি নিজের হাতে বন্দুকটা জয়ের দিকে দিয়ে নিজে অন্য একটা গান নিয়ে বলল এই নে জয় এবার নিজের বউ কে বাঁচাতে আমার সাথে লড় যদি তুই জিতিস আমি ওকে ছেড়ে দিব।
জয়ঃ আরে লিজা না একটু আগে বলল জয় মারামারি ভুলে গেছে তাহলে রুহির সাথে কি করে লড়বে?আসলে আমি জানি শুট করার পর এখানে কি কি হবে তাই মানা করছি।
রুহিঃ কি হবে?
জয়ঃ তোর নাক মুখ লাল হয়ে যাবে আর তুই অস্থির হয়ে যাবি চোখ দিয়ে অঝোর ধারে বৃষ্টি পড়বে,তারপর তোর দম নিতে কষ্ট হবে। আর সেটা আমি সহ্য করতে পাড়ব না। এই একটা সময় যখন আমি তোকে কন্ট্রল করতে পাড়ি না তখন আমার তোকে মারতে মন চায় তাই সেসব জামেলায় যেতে চাই না বাবা।যা করবি কর কিন্তু কান্না করবি না বলে দিলাম।
রুহিঃ না কাঁদব না বলেই রুহি লিজাকে শুট করল।
,
,
,
,
নিঃশ্বব্দে রুহির চোখে পানি পড়তে শুরু করল জয় দৌড়ে এসে বলল জানতাম কাঁদবি চুপ কর কিচ্ছু হয় নি রুহি, কাঁদিস না প্লিজ কাঁদলে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি
রুহিঃ নারে,রুহি আর কান্না করে অসুস্থ হয় না।জানিস জয় ধাক্কা না খেয়ে কেউ শক্ত হয় না।তুই কত চেষ্টা করলি তাও রুহিকে #লেডি_ডন বানাতে পাড়িস নি।শুট করলে হাত কাঁপত,কান্ন করত কিন্তু আজ আমি পপরিপূর্ণ দেখ নিজের পরিচিত,কাছের,পছন্দের মানুষ কে শুট করলাম তাও আমার হাত কাঁপল না।
জয় বোঝল কাহিনি আছে তাই রুহিকে জড়িয়ে ধরল,কি হয়েছে রুহি?
রুহি জয়ের বুকে মুখ লুকাল আর বলতে লাগল,আমি তো ওকে পছন্দ করতাম ভালবাসতাম তাহলে ও আমার সাথে এমন কেন করল জয়?
জয়ঃ কি করেছে?
রুহি শান্ত গলায় বলল জানিস জয় আদি আমাকে খুব ভালবাসত।
জয়ঃ হুম জানি,জানি বলেই ওর হাতে তোকে তুলে দিয়েছিলাম।
আদি আমাকে খুব বোঝত,
আমার নাবলা সব কথায় বোঝত।খুব ভাল ছিলাম আমি ওর সাথে।
যেদিন প্রথম শুনলাম আমি মা হতে চলেছি আদির চোখে মুখে সে কি আনন্দ। খুশি যেন আর ধরে না।জানিস আমি সেদিনেই মনে মনে চাচ্ছিলাম সবার আগে তোকে খরটা জানাই কিন্তু আমি বলার আগেই আদি বলল রুহি,
তুমি অনেক রাগারাগি করেছো আর না, চলো এবার আমরা গিয়ে জয় কে খবরটা দিয়ে আসি। তোমাকে দেখলে জয় অনেক খুশি হবে।আমিও খুশি মনে রাজি হলাম কারন আমি তো তোর কাছে যেতেই চেয়েছিলাম
যেমন কথা তেমন কাজ তোর কাছে যাচ্ছিলাম হঠাৎ রাস্তায় কয়েকজন এসে আমাদের রাস্তা আটকায়।এই আক্রমনের জন্য আমি বা আদি কেউ এই প্রস্তুত ছিল না। কারন বেহানের সাথে ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর ভেবে নিয়েছিলাম আমার আর কোন শত্রু নেই আর আদির তো শত্রু কখনো ছিলই না।মারামারির স্টাইল থেকে বোঝলাম আদিকে মারা লোকগুলির উদ্দেশ্য ছিল না।
বারবার আমাকে মারতে চাচ্ছিল কাউকেই চিনতে পাড়ছিলাম না আমি সেদিন শাড়ি পড়েছিলাম তাই মারামারি তো দূর দৌড়ে পালাতেও পাড়ছিলাম না আদি খুব চেস্টা করছিল আমাকে আর আমাদের বেবি কে বাঁচানোর। আমিও প্রানপনে চেস্টা করছিলাম যেন বেবের কোন ক্ষতি না হয়।
অনেক লড়াইয়ের পর যখন সবাইকে হারিয়ে দিয়ে আমরা নিশ্চন্ত হয়ে চলে আসব আমি আদির জন্য গাড়ি থেকে পানি আনতে গেছিলাম কারন আদির ইঞ্জুরি হয়েছিল কিন্তু এতটাও ইঞ্জুরি না যে তা থেকে মৃত্যু হতে পাড়ে।
কিন্তু পানি নিয়ে এসে দেখি আদির সারাশরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে বোঝতে পাড়ছিলাম কি হয়েছে,আদিকে মোটামুটি সুস্থ রেখেই পানি নিতে গিয়েছিলাম কিন্তু এই অবস্থা কি করে হল মাথায় ঢুকল না। আমি তাড়াতাড়ি আদির কাছে গেলাম।তখন আদি আমায় কিছু কথা বলেছিল তার মধ্যে শেষ কথাটা ছিল তুমি লিজকে শাস্তি দিও রুহি।ও আমার বেবেকে এতিম করে দিয়েছে।
আমার মাথা কাজ করছিল না। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছিল। জানিস জয় সেদিন খুব কেঁদেছিলাম তোকে অনেক ডেকেছিলাম তুই কি শুনতে পাস নি জয়?
আমার আদিকে ও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল আমি কিছুই করতে পাড়ি নি জয়।
ও আমার বেবিটাকে মারতে চেয়েছিল আমি যখন আদির পাশে বসে কাঁদছিলাম পিছন থেকে কেউ আমায় ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দিয়েছিল আমি তাকে দেখতে পাইনি হয়ত লিজাই ছিল।প্রায় ২ মাস হাসপাতালে থাকার পর আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।আমি জানতাম আমি সুস্থ্যভাবে আসলে লিজা সব বোঝে যাবে আমাকে তোর বাড়িতে ঢুকতে দিবে না কিন্তু আমার প্রমানের দরকার ছিল কারন আদি বল্লেও আমি নিজের চোখে দেখি নি।
তাই স্মৃতি হারানোর অভিনয় করেছিলাম।
কথা গুলি বলতে বলতে রুহির হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
চোখ থেকেও পানি পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।রুহি যেন পাথর হয়ে গেছে।
জয়ঃ আমাকে আগে কেন বললি না রুহি?
রুহিঃ প্রমানের প্রয়োজন ছিল তাই…
জয় রুহিকে ছেড়ে দিয়ে উলটো ঘোরে নিজের হাতে থাকা গান দিয়ে ফাঁকা শুট করতে শুরু করল। রাগ কন্ট্রোলের বৃথা চেষ্টা যাকে বলে।
জয়ের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
রুহি এসে জয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল কাঁদিস না জয় দেখ তোর রুহি আজ প্রতিশোধ নিয়েছে। রুহির হাত এখন আর কাঁপে না। সে এখন আর কাঁদেও না।
তুই রুহিকে ঠিক যেমন দেখতে চেয়েছিলি আজ সে ঠিক তেমন।
#লেডি_ডন
চল জয় বাসায় যাই আমার খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমাব।
জয়ঃ সবাইকে ফাঁকি দিলেও আমাকে কি করে দিবি তোর বুক ফাঁটা কান্না জয়ের চোখ এড়াতে পাড়ছে না রুহি।(মনে মনে)
জয়ঃঠিক আছে চল।
২ জন মিলে বাসায় ফিরল,
কিন্তু বাসায় ফিরে জয়ের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল জয় যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পাড়ছে না
,
,
,
চলবে…!!!