প্রেম_পায়রা ?️?️
দ্বিতীয়_পর্ব_তৃতীয়_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
দ্বিতীয়_পর্ব
– ” বেশি কিছু না, শুধু এটুকুই বলেছি যে আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের বাচ্চার মা হতে চলেছি!
আমার গর্ভে তার সন্তান বেড়ে উঠছে!”
মিশরাতের বলা কথা কর্ণপাত হতেই বসা থেকে এক লাফে উঠে দাঁড়ায় মেহের। চোখে মুখে বিস্ময়তার ছাপ। চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
আয়নায় এভাবে মেহেরের রিয়্যাকশনের প্রতিফলন চোখে পড়তেই পেছন ফিরে তাকায় মিশরাত। তারপর কিছুটা সামনে এগিয়ে মেহেরের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠে,
– ” কি ব্যাপার, বউমনি!
তুমি এভাবে অবাক হচ্ছো কেন?
এটা কি আবার নতুন কোনো কিছু নাকি! তুমি তো জানোই!”
মিশরাতের এমন খামখেয়ালিপনা দেখে মেহের অবাক না হয়ে পারলো না। মিশরাত এমন বিহেভ করছে যেন সবকিছু নরমাল! আসলেই কি তাই?
– ” তুই এতো বড় কথাটাকে বেশি না বলছিস?
লাইক সিরিয়াসলি ফারাহ্!
আচ্ছা তুই আমাকে বল তো লাস্ট কবে তোর একটা বয়ফ্রেন্ড ছিলো! আর তুই কি না এ ছেলেকে বলে এসেছিস তুই প্রেগন্যান্ট!
আর এই মিথ্যা কথাটা মা বাবার কানে পৌঁছালে কি হবে ভাবতে পারিস! কি যে করিস না!!”
হতাশার সুরে বলে উঠলো মেহের। মিশরাত বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে,
– ” আহ্ বউমনি, তুমি থামবে!
এভাবে রিয়্যাক্ট করছো যেন এখনি সবাই জেনে গিয়েছে! কেউ কিছু জানবে না। কারণ ঐ স্নিগ্ধ চৌধুরীকে আমি এমন ভাবে বলেছি বেচারা নিজেই বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবে! আর মাঝখান থেকে বিয়েটাও হবে না।
আর আমি তো এটাই চাই যে বিয়েটা না হোক!!”
মিশরাতের মুখে এমন উদ্ভট কথাবার্তা শুনে মেহেরের মাথা ঝিমঝিম করছে। মেয়েটা কি থেকে কি করে বসে কে জানে!!
কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই নিচ থেকে ডাক পড়ে মিসেস ইবনাতের।
– ” মেহের, এই মেহের! জলদি নিচে এসো!”
– ” আসছি মা!”
বলেই হাঁটা শুরু করে নিচের দিকে মেহের।
আর এদিকে মিশরাত আলতো হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় সে।
রাতে ডিনারের সময় সবাই চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে। মিশরাত তো যেন পুরো চিল মুডে বসে রয়েছে। মনে যেন খুশির লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মিস্টার আজীজ সাহেব ওরফে মিশরাতের বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন,
– ” শুনো সবাই! একটা খুশির খবর রয়েছে।
আজ সকালে যে ছেলেটা ফারাহর সাথে দেখা করেছে নাম কি যেন, হ্যাঁ স্নিগ্ধ।
স্নিগ্ধর ফারাহকে পছন্দ হয়েছে। আর সে বিয়েতেও রাজী!
যাক এবার আমার চিন্তার পরিমাণ একটু কমলো! এবার ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়!”
সবে মাত্র পানির গ্লাসে চুমুক বসিয়েছিল মিশরাত। বাবার কথা কানে যেতেই বিষম উঠে যায় তার। চোখ দিয়ে পানিও বের হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। পাশ থেকেই ইরফান ( মিশরাতের বড় ভাই) দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে মিশরাতের কাছে গিয়ে পিঠে হাত বুলাতে থাকে।
– ” আরে কি করছিস! সাবধানে পানি খাবি তো! দেখ এখন বিষম খেয়ে চোখ মুখের অবস্থা কেমন হয়ে গিয়েছে! আস্তে আস্তে!”
মাথায় আর পিঠে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দেয়ার পর শান্ত হয় মিশরাত। চোখ আর নাগের ডগা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
মিশরাত আর কিছু না বলে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে আর দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে রুমের দিকে। বেসিনে মুখের মধ্যে কয়েকদফা পানির ঝাপটা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় মিশরাত।
– ” এ কি করে সম্ভব? নো নো এটা হতে পারে না!
আমার এত সুন্দর করে সাজানো প্ল্যান নিমিষেই পানিতে গেল? কিন্তু কিভাবে!
আমি তো ঐ লোকটাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যে আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে এফেয়ার চলছে আর আমি প্রেগন্যান্ট!
এত বড় কথা শোনার পরও লোকটা বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে গেল কি করে!
ধ্যাত! ভালো লাগেনা!”
বলেই খাটের উপর সটান হয়ে শুয়ে পড়লো মিশরাত।
– ” কিছু একটা ভাব মিশরাত!
এই বিয়েটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। কিছু তো করতেই হবে।”
ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই খেয়াল করে রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট। কিছু একটা ভেবে লাফ দিয়ে উঠে বসে সে। পাশের ড্রয়ার খুলে হাতরে হাতরে একটা মোড়ানো কাগজ বের করে মিশরাত।
– ” যাক অন্তত তো নাম্বার টা তো পেলাম। এটা দিয়ে কাজ চালাতে হবে!”
টেবিলের উপর থেকে ফোনটা তুলে নম্বর তুলে সেটাতে ডায়াল করে মিশরাত। প্রথম বার রিং হয়ে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
ল্যাপটপে প্রজেক্টের নিউ কাজ নিয়ে ব্যস্ত স্নিগ্ধ। পাশেই ফোন সাইলেন্ট করা থাকলেও ভাইব্রেশন শব্দে টেবিল কিছুটা কেঁপে উঠলো। ফোনের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ। এখন এ টাইমে কে কল দিতে পারে? আর নাম্বার টাও তো আননোন। ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে কোনো রুক্ষ মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসে।
– ” আপনার সমস্যা কি মিস্টার স্নিগ্ধ!
আজকে আপনাকে এতো কিছু বলার পরও আপনি বিয়েতে রাজি হলেন কিভাবে?
আমি তো আপনাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না!”
মিশরাতের কথা শুনে নড়েচড়ে বসল স্নিগ্ধ। চেয়ার থেকে উঠে ব্যালকনির সামনে দাঁড়ালো সে। ঠোঁটের মাঝে রহস্যময় হাসি লেগেই আছে।
অপর পাশ থেকে কারো রেসপন্স না পেয়ে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে মিশরাত। ফোন রিসিভ করেছে অথচ কোনো জবাব দিচ্ছে না! এ আবার কোন অদ্ভুত প্রাণী!!
– ” হ্যালো, মিস্টার স্নিগ্ধ! আমি কিছু বলেছি! আপনি কি শুনতে পারছেন!”
ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে মিশরাত। সেটা শুনে স্নিগ্ধ কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে শীতল গলায় বলে উঠে,
– ” কি মনে করেছিলে প্রেগন্যান্সির মিথ্যে বাহানা দিলেই আমি বিয়েতে না করে দিবো!
যেখানে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ই নেই সেখানে আবার তোমার বয়ফ্রেন্ডের বাচ্চা আসবে কোত্থেকে?
হোয়াট ডু ইউ থিংক? অ্যাম আই ফুল?”
স্নিগ্ধর বলা এমন শীতল কথা কানে যেতেই আতকে উঠে মিশরাত। এত ঠান্ডার মাঝেও কপাল থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে! গলাটা ও শুকিয়ে এসেছে।
– ” হায় আল্লাহ! এই লোকটা এতো কিছু জানলো কি করে!
এখন কি হবে?
এই বজ্জাত লোকটা যদি বাবাকে সবকিছু বলে দেয় তাহলে?
তাহলে তো বাদবাকি যাও প্ল্যান ছিল তাও সব ভেস্তে যাবে!
না, না এ হতে পারে না!”
মনে মনে কথাগুলো আওড়ালো মিশরাত।
– ” তোমাকে এত কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে বের করতে হবে না আমি কিভাবে কি জেনেছি!
তোমার ঐ ছোট্ট মাথাটায় অতো প্রেশার দিও না। পরে সমস্যা হয়ে যেতে পারে!
এখন রাখছি! কাল দেখা হবে হবু ওয়াইফি!
গুড নাইট!”
বলেই খট করে কল কেটে দিলো স্নিগ্ধ। আর এদিকে স্নিগ্ধের বলা প্রতিটা কথা শুনে রাগে শরীর রি রি করছে মিশরাতের। রাগে ক্ষোভে হাতে থাকা ফোনটা সজোরে বিছানার উপর ছুড়ে মারে।
– ” শিট!
নো মিশরাত নো! এভাবে হার মানলে চলবে না! তোকে যে করেই হোক বিয়েটা আটকানোর জন্য কোনো কিছু করতে হবে! নাহলে ঐ বজ্জাত লোকটার সাথে তোর বিয়ে হয়ে যাবে!
আর আমি এই বিয়ে টিয়ে ইন্টারেস্টেড না! কিন্তু লাস্টে উনি কি বললো? কালকে দেখা হবে!
কালকেই কিছু একটা করা লাগবে!”
হতাশার সুরে বলে বিছানায় গিয়ে সটান শুয়ে পড়ে মিশরাত। আর সাথে সাথে চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম।
দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ শুনে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মিশরাত। হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। ঘুম ঘুম চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলতেই অপর পাশে মেহের কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– ” কিরে এখনো এভাবে ঘুমে ঢুলছিস! ক’টা বাজে সে খেয়াল আছে?
তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও ননদিনী। ”
রেডি হওয়ার কথা শুনে চোখে থাকা বাদবাকি ঘুমটুকুও উবে যায় মিশরাতের। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
– ” রেডি হবো কেন? আজ কি কোথাও যাওয়ার কথা!”
মেহের মিটমিট করে হেসে বলে উঠে,
– ” হ্যাঁ, যাবে তো! তোমার হবু হাজবেন্ড আসবে তোমাকে নিতে! তার সাথেই যাবে!
আর কালকে কি যেন বলছিলি বিয়েটা হবে না? কিন্তু সেটার তো উল্টো হয়ে গেল!
ইশশ!”
মেহেরের মুখে এমন টিজ মেরে বলা কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে নেয় মিশরাত। দাঁত চেপে বলে উঠে,
– ” হুহ! যাচ্ছি!”
বলেই গটগট করে হাঁটা শুরু করলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। হালকা গোলাপি কুর্তি, গলায় হোয়াইট হিজাব পেঁচানো, চোখে গাঢ় করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক দিয়ে রেডি হয়ে নিলো মিশরাত। নিচে হলরুমে এ নামতেই ডাইনিং এ নজর যেতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় মিশরাতের। ডাইনিং টেবিলে আরামে বসে রুটি চিবুচ্ছে স্নিগ্ধ। মিসেস ইবনাতের মিশরাতকে চোখে পড়তেই তিনি বলে উঠেন,
– ” এতোক্ষণে তোর ঘুম ভাঙলো! ছেলেটা সেই কখন থেকে এসে বসে আছে জানিস!”
মুখটা কাচুমাচু করে কিছু বলবে তার আগে স্নিগ্ধ আলতো হেসে বলে উঠল,
– ” থাক না মা, সমস্যা নেই!
এখন তো এসে পড়েছে!”
অবাক চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মিশরাত। বিয়ে হওয়ার কোনো খবর নেই এখনি তার মাকে মা ডাকা শুরু করেছে! বাহ্ ভালোই তো। এমন করলে বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে! বজ্জাত লোক কোথাকার!
মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে চেয়ারে বসে পড়ে মিশরাত।
নাশতার পর্ব শেষ করে না চাইতেও জোরপূর্বক ভাবে স্নিগ্ধর সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে মিশরাত। বাসার সামনেই স্নিগ্ধর গাড়ি রাখায় গাড়ির কাছে ফ্রন্ট দরজা খুলে দেয় স্নিগ্ধ। মিশরাত মুখ বাঁকিয়ে সিটে বসে পড়ে।
ঘন্টা দুয়েক পর গাড়ি এসে থামে একটা শুনশান লেকের পাড়ে। এর মাঝে দুজনের মাঝে কেউ একটা টু শব্দও করেনি। মনের ভেতর ভয় ঢুকে যায় মিশরাতের। এভাবে শুনশান জায়গায় তাকে নিয়ে আসার মানে কি? মিশরাতের এসব ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে স্নিগ্ধর কথায়।
– ” কি ব্যাপার! এখনো মূর্তির মত বসে আছো কেন? গাড়ি থেকে বের হও!”
মিশরাতও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বের হয়ে পড়ে। চারপাশ কোলাহলহীন, লেকের স্রোতের হালকা শব্দ শুধু কানে এসে বাঁধছে। শুনশান নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎ মিশরাত কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠে,
– ” এই সাত সকালে আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি মিস্টার স্নিগ্ধ?
আর আপনাকে বলার পরেও আপনি বিয়েতে রাজী হলেন কি করে? আমি তো বলেছি আপনাকে আমি বিয়ে করবো না!!”
বাঁকা চোখে একপলক মিশরাতের দিকে তাকায় স্নিগ্ধ। তারপর লেকে থাকা স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে গভীর কন্ঠে বলে উঠল,
– ” বিয়েটা তোমার আমাকেই করতে হবে মিশরাত। তবে সেটা মাত্র ছয় মাসের জন্য!
ছ মাস পর তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়!
আর এটাই ফাইনাল!!”
স্নিগ্ধর বলা কথা গুলো ঠিক হজম হচ্ছে না মিশরাতের। চোখ দুটো ছানাবড়া করে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে। মুখ দিয়ে যেন কথারা আটকে গিয়েছে!!……….
#চলবে ?
( আসসালামুয়ালাইকুম। সবার একটাই প্রশ্ন। আমি অজান্তা অহি আপুর গল্পের নাম কেন আমার গল্পে দিয়েছি।
সেটার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমি জানতাম না অহি আপু এ নামে আগেই গল্প লিখেছেন। আমার ফেইসবুকে তেমন একটা গল্প পড়া হয় না তাই এমন ভুল হয়েছে। কিন্তু এখন আমি চাইলেই সেটা ঠিক করতে পারছি না। তবে নেক্সট এ খেয়াল রাখবো। আপনাদের এ নামটা দিয়েই চালাতে হবে! দুঃখিত আবারো।
সর্বোপরি কেমন লেগেছে জানাবেন!
ভালোবাসা অবিরাম ??)
#প্রেম_পায়রা ?️?️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#তৃতীয়_পর্ব
– ” আমাদের বিয়েটা শুধুমাত্র ছয় মাসের একটা ডিল!!”
কথাটা না চাইতেও বারংবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মিশরাতের। স্নিগ্ধর বলা কথাটা শুনে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে সে। সাথে কিঞ্চিৎ রাগ ও লাগছে।
মানে বিয়েটা কি কোনো ছেলেখেলা নাকি? চাইলেই বিয়ে করে নিবে আবার ছয় মাস পর ডিভোর্স দিয়ে দিবে!!
নিজের রাগটা কে ভেতরে সংবরণ করে শীতল গলায় মিশরাত বলে উঠল,
– ” এটা কি কোনো গেম মিস্টার স্নিগ্ধ যে আপনি যেভাবে চাইলেন সেভাবেই হবে!!
আপনি চাইলেই আমি হ্যাঁ বলে দেবো! নো, মিস্টার স্নিগ্ধ! এটা আপনার ভুল ধারণা! আমি এই ডিলটা মানি না আর না এই বিয়ে!!”
পেছন ফিরে তাকায় স্নিগ্ধ। চোখগুলো হালকা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে রেগে উঠছে। মিশরাতের কথা শুনে দ্রুত পায়ে হেঁটে মিশরাতের সামনে এসে দাঁড়ালো স্নিগ্ধ। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
– ” বিয়েটা তো তোমাকে করতেই হবে মিশরাত আর সেটাও আমাকেই। আর সেটাও আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে!”
পিলে চমকে উঠে মিশরাত। মানে কি ? আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তার বিয়ে অথচ সে নিজেই জানে না! হাতের পুতুল নাকি?
– ” হোয়াট ডু ইউ মিন মিস্টার স্নিগ্ধ!
আপনার কথা অনুযায়ী আপনি আমাকে বিয়েও করবেন আবার ছয় মাস পর ডিভোর্স ও দিয়ে দিবেন!
অ্যাম আই জোক টু ইউ!”
কপোট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে মিশরাত। তার লাইফটাকে সবাই মিলে জোক বানিয়ে দিয়েছে।
স্নিগ্ধ এবার একটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। যার অর্থ মিশরাতকে এভাবে বললে কোনো কাজ হবে না। তাই নিজের জেদ, ইগো এক সাইডে রেখে নরম কন্ঠে বলে উঠল,
– ” আচ্ছা ঠিক আছে! লিসেন মিশরাত। আমি যা যা বলবো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে!
বাবা কয়েকদিন আগেই স্ট্রোক করেছেন তৃতীয় বারের মতো। আর এবারের ট্রমাটা তিনি মানিয়ে নিতে পারেন নি, আর তার ভাষ্যমতে আমার বিয়েটা তার কাছে জরুরি ছিল।
সো এখন বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে। আমি ও তোমার মতো বাধ্য হয়েই বিয়েটা করছি। আর ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে!
বাবার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো ছ মাস টাইম লাগবে!
আর সে ছ মাস পর বাবা সুস্থ হয়ে গেলে তুমি তোমার মুক্তি পেয়ে যাবে! আর হ্যাঁ, ডোন্ট ওয়ারি!
কখনো তোমার কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে আসবো না আর না তুমি আসবে! কেননা আমি কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবো না!!
আর বাকিটা না হয় তুমিই চিন্তা করো! এখন যদি বিয়েটা না হয় তাহলে তোমার বাবা অন্য কোথাও তোমার বিয়ে দিয়ে দিবে! এজ ফার আই নো তুমি বিয়ে রিলেশনশিপ এ ট্রাস্ট করো না! এম আই রাইট মিস মিশরাত?”
সরু চোখে তাকায় মিশরাত। লোকটা তাকে এমন ভাবে ফাসাবে তা কল্পনাও করেনি সে। কিন্তু পরমুহূর্তেই তার মাথায় আরো একটা বিষয় ঘুরপাক খেতে থাকে।
– ” বজ্জাত হলেও লোকটা কথা মন্দ বলে নি! এখন যদি এই বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে যায় তাহলে তো বাবা জোর করে আবারো অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে!
আর সেখান থেকে পালানোর ও কোনো ওয়ে থাকবে না। আর এই লোকটা তো বলেছে যে বিয়েটা শুধুমাত্র ছয় মাসের জন্য। এরপর তো আবার ও আমি আমার পুরনো লাইফে ব্যাক করতে পারবো!
রাজী হয়ে যাবো লোকটার ডিলে!
উফফ মাথা কাজ করছে না। কি যে করি! ধ্যাত!”
মনে মনে বিড়বিড় করে বলে মিশরাত। মিশরাতকে এমন অন্যমনস্ক থাকতে দেখে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে স্নিগ্ধ। তাতেই মিশরাতের ধ্যান ভাঙে।
– ” তাহলে যাওয়া যাক!”
বলেই গট গট করে হাঁটা শুরু করে দেয় স্নিগ্ধ। আর মিশরাত কয়েক পলক তাকিয়ে মুখে একরাশ বিরক্তি এনে সেও চলা শুরু করে।
বাসায় ফিরতেই মেহের তার রোজকার অভ্যেসের মতো নানা কথার পসরা সাজিয়ে বসে মিশরাতের কাছে। কিন্তু মিশরাতের মন তো অন্য জায়গায় পড়ে আছে। তাই মেহেরের কথার প্রত্যুত্তরে শুধু হু হু করে চলছে আর সেটা চোখ এড়ায়নি মেহেরের। মিশরাতকে এমন অন্যমনস্ক থাকতে দেখে খটকা লাগে মেহেরের। কেননা মিশরাত যেমন চঞ্চল প্রকৃতির তাতে আজ মিশরাতকে অনেকটাই ভিন্ন লাগছে। কিছু হয়েছে কি!!
– ” কি হয়েছে মিশরাত? তোর চেহারা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে? আর তোর মনোযোগ ও তো এখানে নেই ? কিছু হয়েছে?”
মেহেরের কথা শুনে মিল্লাত আমতা আমতা করে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে,
– ” ক,কই বউমনি? কিছু হয়নি তো! এমনি আসলে মাথাটা ধরেছে তাই আর কি!”
– ” সেকি তুই আগে বলবি না! আমি সেই কখন থেকে বকবক করে চলেছি। আচ্ছা এক কাজ কর, বামটা নিয়ে আয়। আমি মাথায় বাম দিয়ে ম্যাসাজ করে দিচ্ছি। তাহলে ব্যাথা কমে যাবে!”
মিশরাত ও মেহেরের কথা শুনে চুপটি করে উঠে গিয়ে বাম এনে দিতেই মেহের মিশরাতের মাথা কতক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে ম্যাসাজ করা শুরু করে দিলো। সম্পর্কটা ভাবী আর ননদের হলেও সবসময় মিশরাত মেহেরকে নিজের বড় বোনের মতোই দেখেছে।
———————-
শয্যাশায়ী ইফতেখার চৌধুরীর পাশে চুপটি করে মাথা নিচু করে বসে আছে স্নিগ্ধ। ইফতেখার চৌধুরীর ডান হাত তার হাতের মুঠোয়।
– ” বাবা, প্লিজ তারাতাড়ি সুস্থ যাও। দেখো, আমি তোমার কথা রেখেছি।
আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি। এবার তো অন্তত সুস্থ হয়ে যাও প্লিজ!”
মুঠোভর্তি হাত নিয়ে বিড়বিড় করে স্নিগ্ধ। কিছুক্ষণ পর কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকায় সে। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন।
– ” আয় বাবা, কটা খেয়ে নিবি! সারাদিনে ছোটাছুটির মাঝে খাওয়া দাওয়ার কোনো খেয়াল নেই।”
মায়ের ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে নিলো স্নিগ্ধ। তারপর হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,
– ” হ্যাঁ মা তুমি যাও, আমি আসছি!”
ছেলের কথা শুনে মিসেস ইয়ামিন ওখান থেকে চলে আসলেন। আর স্নিগ্ধ কিছুক্ষণ বাবার দিকে নিষ্পলক চেয়ে উঠে চলে আসলো।
ডাইনিং টেবিলে,,
– ” একটু আগে মিশরাতের মায়ের ফোন এসেছিল! তারা জানতে চাইছে বিয়েটা কবে হবে! তুই কি বলিস এ ব্যাপারে?”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথা শুনে প্লেট থেকে চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধ। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
– ” আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো!
বিয়েটা যত তারাতাড়ি হবে ততই বাবার সুস্থ হওয়ার চান্স বেশি।
আমি চাই বিয়েটা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেই হোক!”
বলেই আবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিল স্নিগ্ধ। খাওয়া শেষ চেয়ার ছেড়ে উঠতেই পেছন থেকে মিসেস ইয়ামিন ডাক দিলেন।
– ” স্নিগ্ধ!”
ঘুরে তাকায় সে। হাসি মুখে বলে উঠে,
– ” হ্যাঁ মা, কিছু বলবে?”
মিসেস ইয়ামিন মুখটা শুকনো করে বলে উঠেন,
– ” স্নিগ্ধ, তুই বিয়েটা মন থেকে চাচ্ছিস তো! নাকি শুধু তোর বাবার জন্য করছিস বিয়েটা?
দেখ এমন হয়ে থাকলে একটা মেয়ের জীবন শুধু শুধু জেদের বশে নষ্ট করিস না!”
থমকে দাঁড়ায় স্নিগ্ধ। মনের ভিতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মা তো ঠিকই বলছে! সে জেদের বশে মিশরাতের জীবনটা নষ্ট করছে না তো! কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার নিজেকে সামলে নিলো সে। সে তো মিশরাতকে বলেই দিয়েছে যে তাদের বিয়েটা শুধুমাত্র একটা ডিল। আর মিশরাত ও বোধ হয় এতে রাজি!
– ” কি হয়েছে স্নিগ্ধ? কোথায় হারিয়ে গেলি তুই? আমি কিছু জিগ্গেস করেছি!”
মায়ের কথায় তার ভাবনার সুতো কাটে। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে,
– ” না মা, তেমনটা নয়। আমি নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করছি! আর তুমি চিন্তা করো না, আমার জন্য মিশরাতের জীবনটা নষ্ট হবে না!”
ছেলের আশ্বাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মিসেস ইয়ামিন। ভাবলেন যাক এবার হয়তো সব ঠিকঠাক করে হয়ে যাবে।
বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙে মিশরাতের। আড়মোড়া দিয়ে উঠতেই খেয়াল করে পাশেই মিশরাতের মা অর্থাৎ মিসেস ইবনাত বসে রয়েছে আর মিশরাতের ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে কি যেন বিড়বিড় করছেন।
– ” মা তুমি? ”
হঠাৎ মিশরাতের গলার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে তাকান মিসেস ইবনাত।
মিসেস ইবনাতের চোখে জল দেখে আঁতকে উঠে মিশরাত।
– ” আরে মা, কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন?”
মিশরাতের এমন উৎকন্ঠা দেখে মিসেস ইবনাত মিশরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। অতঃপর আদুরে গলায় বলে উঠেন,
– ” কিছু হয়নি মা! ভাবছি কদিন পর তুই চলে যাবি! ভাবতেই বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্যতা লাগছে।”
বলেই হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মিসেস ইবনাত। মিশরাতেরও মায়ের কথা শুনে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল। সেটা বুঝতে পেরে মিসেস ইবনাত কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠেন,
– ” শোন আরেকটা কথা! স্নিগ্ধর মায়ের ফোন এসেছিল। তোর বাবা আর স্নিগ্ধের ফ্যামিলির ডিশিসন অনুযায়ী তোর আর স্নিগ্ধের বিয়েটা আগামী পাঁচ দিনের ভিতর হবে। স্নিগ্ধ ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। তোর সাথে স্নিগ্ধের বিয়েটা হলে ভালোই হবে!
আর কালকে রেডি থাকিস! কালকে সবাই শপিং এ যাবো বিকেলের দিকে! স্নিগ্ধ ও আসবে!”
মায়ের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মিশরাত। মনে মনে বলে উঠল,
– ” বিয়ে! না মা ওটা বিয়ে না! ওটা তো শুধু একটা ডিল!”………….
চলবে ?