প্রেম_পায়রা ?️?️ পর্ব-১২,১৩

0
1331

প্রেম_পায়রা ?️?️
পর্ব-১২,১৩
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান
দ্বাদশ_পর্ব

পরদিন সকালে যথারীতি এলার্মের শব্দ কানে পৌঁছাতেই চোখ পিটপিট করে তাকায় স্নিগ্ধ। সকালের সোনালী রোদ্দুরের বেশ খানিকটা অংশ মেঝেতে এসে পড়েছে। পাশ ফিরে তাকাতেই খেয়াল করে মিশরাত বিছানায় নেই।
আড়মোড়া দিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে পড়ে স্নিগ্ধ। পরনে টিশার্ট টা ঠিক করতে করতে হ্যাংগার থেকে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ। রুমের কোথাও মিশরাতকে না দেখতে পেয়ে বেশ খটকা লাগে তার। এই মেয়ে এত সকালে কোথায় যাবে আবার? অফিসের জন্য রেডি হয়ে একবারে নিচে নেমে আসে সে।
ডাইনিং টেবিলে নজর যেতেই চোখ আটকে যায় তার। মিশরাত কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে একদম বাড়ির বউদের মতো কাজে লেগে পড়েছে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামের কারণে ছোট ছোট চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আর সেটাই একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে স্নিগ্ধ। এই মেয়েটার মাঝে অদ্ভুত কোনো আকর্ষণ আছে নাকি? নাহলে এভাবে তাকে হুটহাট ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় কেন!
স্নিগ্ধর ভাবনার সুতো কাটে মিসেস ইয়ামিনের কথায়।
– ” যাক ভালোই করেছিস এসে! আমি তো ভেবেছিলাম আজকে তুই রেস্ট নিবি! কিন্তু আজকেই অফিসে যাচ্ছিস!”

স্নিগ্ধ রুটি চিবোনো শেষ করে বলে উঠে,
– ” হ্যাঁ মা আজকেই যেতে হবে! অনেকদিন গ্যাপ পড়ে গিয়েছে!
আর আগামী সপ্তাহে আমার চট্টগ্রামে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে!
আর সেগুলোর জন্য কয়েকটা ফাইল রেডি করতে হবে!”
মিশরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবার সার্ভ করায় ব্যস্ত।
– ” আরে মিশরাত তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?
তুমিও আমাদের সাথে বসে পড়ো!”
মিসেস ইয়ামিনের কথায় মিশরাত হালকা মাথা নাড়িয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে স্নিগ্ধ মিসেস ইয়ামিন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– ” মা আমি ভাবছিলাম মিশরাত আগামী সপ্তাহ থেকে আবার ভার্সিটিতে জয়েন করুক।
আর সামনেই তো থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম!”

– ” হ্যাঁ এটা তো খুব ভালো কথা।
সারাদিন এভাবে বাসায় বসে থাকলে তো মিশরাতেরও বোর লাগবে। এর চেয়ে ভালো ও আবার ভার্সিটিতে জয়েন করুক!”

মিসেস ইয়ামিন এর কথা শুনে মিশরাতের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
স্নিগ্ধ ও এর মধ্যে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় অফিসের উদ্দেশ্যে।
মিশরাত ও টেবিল ছেড়ে উঠে উপরের দিকে চলে যায়। বিকেলের আকাশের রক্তিম আভা চারপাশ লাল বর্ণে রূপান্তরিত করেছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে অনেকটাই ঢলে পড়েছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের ‌রেশ ও কমে এসেছে। ছাদের চিলেকোঠার ঘরের পাশে ঝুলন্ত দোলনায় বসে আনমনে পা নাড়িয়ে চলেছে মিশরাত‌। সন্ধ্যার লালচে আকাশটা বেশ ভালোই লাগছে তার কাছে। আশেপাশে বেশ সুন্দর কয়েকটা গাছ লাগানো রয়েছে। অপরাজিতা, রক্ত জবা, কাঠ গোলাপ ফুলগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে তার। রেলিংয়ের ওপর হঠাৎ কোনো পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় মিশরাত‌।
সাদা ধবধবে রঙের ছড়ানো পাখা যুক্ত কবুতর যাকে অনেকেই পায়রা বলে থাকে গুটি গুটি পায়ে রেলিং এর উপর দিয়ে হাঁটছে।

ছোটবেলা থেকেই পায়রা জিনিসটা বেশ ভালো লাগে তার। তার ভাবনার মাঝেই আরেকটা পায়রা উড়ে এসে ঠিক আগেরটার পাশে বসলো। দুজন একসাথে হতেই মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের ভাব বিনিময় করতে থাকে। আর এদিকে মিশরাত মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে পায়রা দুটোর দিকে। দুটোকে একসাথে দেখে তার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠে। আনমনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, #প্রেম_পায়রা ।

গ্লাসের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। দিনের আলো পেরিয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। বাইরের জনজীবনের ব্যস্ততা তার চোখ এড়াচ্ছে না। সাজেক থেকে আসার পরই অফিসের কাজে তেমন একটা মন বসাতে পারছে না স্নিগ্ধ। কোনো একটা কাজে খুব কষ্ট করে মন বসালেও বারবার ঐ চোখ দুটো ভেসে আসছে তার মস্তিষ্কে।

— ” কুল ডাউন স্নিগ্ধ, কুল ডাউন!
ঐ মেয়েটা শুভ্রতা হতে পারে না। শুভ্রতা আর ঐ মেয়েটার চেহারায় কোনো মিল নেই। তুই শুধু শুধুই মেয়েটাকে নিয়ে এত ডেস্পারেট হচ্ছিস!”

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকায় স্নিগ্ধ।
– ” মে আই কাম ইন স্যার?”
ম্যানেজার জাকিরের কথা শুনে স্নিগ্ধ বলে উঠে,
– ” ইয়েস কাম ইন!”
জাকির সাহেব ভেতরে প্রবেশ করে একগাদা ফাইল নিয়ে।
– ” স্যার সামনে মাসের এক তারিখ থেকে আপনার এসিস্ট্যান্ট নিয়োগের জন্য আগামী পরশু দিন থেকে ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করা হবে!
আর স্যার এইযে চট্টগ্রামের প্রজেক্টের ফাইল।”

স্নিগ্ধ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই টেবিলের উপর ফাইল গুলো রেখে চলে যায় জাকির সাহেব। এদিকে স্নিগ্ধ ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল করতেই দেখে রাত আটটা বেজে গিয়েছে প্রায়।
চেয়ার থেকে কোট টা হাতে ঝুলিয়ে হাঁটা শুরু করলো বাইরের দিকে।

রাতে ডিনার শেষ করে রুমে প্রবেশ করতেই খেয়াল করে মিশরাত‌ একপ্রকার খুশিতে লাফাচ্ছে। হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ। মেয়েটা হুটহাট এমন অদ্ভুত আচরণ করে কেন?
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেতেই পেছন ফিরে তাকায় মিশরাত‌। স্নিগ্ধ কে চোখে পড়তেই হাতে থাকা মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে আসে সে।
স্নিগ্ধ কে কোনো‌ কিছু না বলেই ‌হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে মিশরাত‌। হঠাৎ করে মিশরাতের এমন জড়িয়ে ধরাতে ভড়কে যায় স্নিগ্ধ। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে। হার্টবিট ও আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
মিনিট পাঁচেক পর মিশরাতের ধ্যান ভাঙতেই তার চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। এতক্ষণে তার টনক নড়ে।
নিঃশব্দে মাথা নিচু করে স্নিগ্ধ কে ছেড়ে দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে আসে সে। লজ্জায় মাথা তুলে তাকানো যাচ্ছে না। ধীর কন্ঠে বলে উঠে,
– আসলে আমি বুঝতে পারি নি, সরি!
অতি এক্সাইটেড হয়ে ভুলে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি।”

মিশরাতের ওমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে খুব কষ্ট করে হাসি দমিয়ে রাখে স্নিগ্ধ। চেহারায় যথেষ্ট গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে উঠে,
– ” কি এমন নিয়ে এতো এক্সাইটেড ছিলে যে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরা লাগলো!
টেল মি!”
এমন‌ গম্ভীর কন্ঠ শুনে গলা শুকিয়ে আসে মিশরাতের‌। আসলেই তো! স্নিগ্ধ কে এভাবে হঠাৎ জড়িয়ে ধরা বোধ হয় ঠিক হয় নি।
জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
– ” আসলে আমি একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তো, তাই!”

স্নিগ্ধ চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে উঠল,
– ” আমি মেইন পয়েন্টে আসতে বলেছি।
কি এমন শুনে এত লাফালাফি করছিলে?”
মাথা তুলে তাকায় মিশরাত‌। দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠে,

– ” বউমনি প্রেগন্যান্ট!!”

– ” বাহ্, কংগ্রেচুলেশন!”
রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে স্নিগ্ধ।

– ” ইশ্ আর কয়েক মাস পর ছোট ছোট হাত পা গুলো আমাকে ছুঁবে! আধো আধো কন্ঠে বউমনি কে মা বলে ডাকবে! আমাকে ফুপি বলে ডাকবে!”
বিড়বিড় করে বলে মিশরাত।
স্নিগ্ধ সোফার উপর বসে বলে উঠে,
– ” এতো এক্সাইটেড হচ্ছো, মনে হচ্ছে বেবি তোমার বউমনির না তোমার হবে!”
আড়চোখে তাকায় মিশরাত‌।
– ” হুহ‌!
আপনি কি বুঝবেন এসবের! বেবি নিয়ে সবাই অনেক এক্সাইটেড থাকে। কেউ আবার আপনার মতো এতো নিরামিষ না!”

ফোন থেকে চোখ তুলে তাকায় স্নিগ্ধ। কথাটা ঠিক তার হজম হলো না। নিরামিষ? লাইক সিরিয়াসলি!
– ” কোন দিক দিয়ে আমাকে নিরামিষ মনে হয় তোমার?
আর এতো বোঝানোর দরকার নেই। আমি জানি সবাই এক্সাইটেড থাকে। তাই বলে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার অলরেডি দশ বারোটা বাচ্চা হয়ে গিয়েছে!”

চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায় মিশরাতের‌। লোকটা কি কোনোদিন কোনো কথার সোজা উত্তর দিতে পারবে না? সবসময় কথার ডাবল মিনিং খুঁজে বেড়ায়। বিরক্তিকর!!
মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে বিছানায় চলে যায় সে। আর স্নিগ্ধ মিটমিট করে হাসতে থাকে!
– ” যাক মেয়েটা ভালোই ক্ষেপেছে!”

টানা দু ঘন্টা ধরে একের পর এক ইন্টারভিউ নিয়ে চলেছে স্নিগ্ধ আর কয়েকজন মেম্বার। লাস্ট আর একটা ফাইল বাকি!

– ” মে আই কাম ইন স্যার?”

-” ইয়েস কাম ইন!”

অনুমতি পেয়ে কেবিনে প্রবেশ করে মেয়েটি। চেয়ার টেনে বসতেই চোখ তুলে তাকায় স্নিগ্ধ। আবারও একই চেহারা দেখে অনেকটা অবাক হয়ে বলে উঠে,

– ” আপনি?”…………

চলবে ?

#প্রেম_পায়রা ?️?️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#ত্রয়োদশ_পর্ব

– “মিস অরিন, আপনি!!”
অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো স্নিগ্ধ। অরিনকে এখানে সে মোটেও আশা করে নি সে! সাজেক থেকে ডিরেক্ট আবার এখানে দেখা হবে ব্যাপারটা মোটেও বোধগম্য হয় নি তার। ব্যাপারটা কি আসলেই কাকতালীয় নাকি অন্যকিছু!
অরিন চোখে থাকা চশমাটা ঠিক করে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে উঠলো,
– ” আরে মিস্টার স্নিগ্ধ না? হোয়াট এ কোয়িনসিডেন্স!
যাক ভালোই হলো!
এখানে এসেছিলাম টুকটাক একটা জব করতে! ইন্টারভিউ দিতে এসে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি।
এনি ওয়ে এইযে আমার ফাইলপত্র গুলো!”

হাত বাড়িয়ে স্নিগ্ধর দিকে পেপার গুলো এগিয়ে দিল অরিন। স্নিগ্ধ একবার আড়চোখে অরিনের দিকে তাকিয়ে ফাইল গুলো চেক করে। ইন্টারভিউ শেষ হতেই স্নিগ্ধ অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– ” অল গুড মিস অরিন!
আপনি গিয়ে ওয়েটিং রুমে ওয়েট করুন। আমি একটু পর রেজাল্ট জানিয়ে দিবো!
হ্যাভ এ গুড লাক!!”

অরিন ও হালকা হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। এদিকে স্নিগ্ধর কপালে চিন্তার ভাঁজ। হুটহাট পরিস্থিতি এমন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় কেন তার!!

মিনিট বিশেক পর ওয়েটিং রুমে বসে থাকা সকল ইন্টারভিউ পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাকির সাহেব বলে উঠলেন,

– ” এখানে অরিন সারাহ্ কে?”
অরিন নামটা শুনে মাথা তুলে তাকালো অরিন।

– ” ইয়েস! আ’ম অরিন সারাহ্!”

– ” কংগ্রেচুলেশন, মিস অরিন!
ইউ আর সিলেক্টেড। আগামীকাল থেকে আপনি অফিস জয়েন করতে পারবেন!”
জাকির সাহেবের কথা শুনে অরিনের‌ ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল যেন এটাই হওয়ার কথা ছিল!

দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। মিশরাত রোজ নিয়মমাফিক ভার্সিটিতে যায়। ইফতেখার চৌধুরীর শরীরের কন্ডিশন আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো হয়েছে। এতে অবশ্য মিশরাতেরও অবদান রয়েছে। স্নিগ্ধ ও রোজ অফিসে যায়। তবে স্নিগ্ধ আর মিশরাতের সম্পর্কে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। কথায় কথায় ঝগড়া লেগে যাওয়ার বিষয়টা ভুলে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে। এখন আর হুটহাট ঝগড়া লেগে যায় না।

ঘড়িতে কাটায় রাত নয়টা বাজে। জ্যোৎস্নার আলো এসে ব্যালকনির জানালা ভেদ করে রুমের মেঝেতে এসে পড়েছে। জানালার গ্রিলের উপর এক হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। দৃষ্টি তার বাহিরের দিকে।

“ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে,,
তোমার দেখা আমার সঙ্গে!
মুখোমুখি আমরা দুজন
মাঝখানে অনেক বারণ..!

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে,,
তোমার দেখা আমার সঙ্গে..!
মুখোমুখি আমরা দুজন,
মাঝখানে অনেক বারণ…!
ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে
তোমার দেখা আমার সঙ্গে…!

বাইরে তখন হাওয়া ঝড়ো
তুমি হয়তো অন্য কারোও….!
বাইরে তখন হাওয়া ঝড়ো
তুমি হয়তো অন্য কারোও…!

আরো একবার বলবো সেদিন (২)
আজ জানে কি জিদ না কারো,,,,”

– ” বাহ্! থামলেন কেন?
আপনার গানের গলা তো বেশ সুন্দর!
কই আগে তো কখনো শোনান নি!”
পিলে চমকে উঠে স্নিগ্ধ। মিশরাত ধোঁয়া ওঠা গরম দু কাপ কফি মগ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে প্রবেশ করে। স্নিগ্ধর দিকে এক কাপ এগিয়ে দিতেই সেও হাসিমুখে সেটা নিয়ে নিল। মিশরাত পুনরায় জিজ্ঞেস করে উঠলো,

– ” কি হলো বললেন না তো!
আপনি তো বেশ গান গাইতে পারেন। এর আগে তো কখনো দেখিনি!”
কফির মগে চুমুক বসিয়ে পাশ ফিরে তাকাল স্নিগ্ধ। মুখে এক টুকরো হাসির রেশ লেগে রয়েছে। মগটা পাশে টেবিলের উপর রেখে বলে উঠলো,

” তুমি আমার সাথে ঠিক কতদিন থাকো?
বেশি হলে এক দু মাস! কতটা জানো আমার ব্যাপারে?
আমার বিষয়ে অনেক কিছুই তোমার অজানা! ”
স্নিগ্ধর কথা শুনে ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মিশরাত‌। স্নিগ্ধর বলা কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মিশরাতকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধ হালকা সামনে ঝুঁকে গেল মিশরাতের‌।

– ” এই ছোট্ট মাথায় এতো প্রেশার দিও না!
পরে সমস্যা হয়ে যেতে পারে!”
স্নিগ্ধর ফিসফিস করে বলা কথাগুলো শুনে মিশরাতের পুরো শরীর বেয়ে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল। এটা কেমন ধরনের অনুভূতি!!

আলমারির দরজা খুলে কাপড় গুলো গোছাতে লাগলো মিশরাত‌। স্নিগ্ধ অনেকক্ষণ আগেই অফিসের জন্য বেরিয়ে গিয়েছে। আজকে ভার্সিটি না যাওয়ায় বেশ বোরিং লাগছে তার‌। নিজের কাপড়গুলো আর স্নিগ্ধের কাপড় পাশাপাশি রাখায় মিশরাতের ভাঁজ করা কাপড় রাখতে গিয়ে স্নিগ্ধের একটা শার্ট নিচে পড়ে যায়।
– ” একটা কাজ করতে গেলে আরো দুটো বিগড়ে যায়! কি যে করি!!”
বিড়বিড় করতে করতে শার্ট টা পূর্বের জায়গায় রাখতে যাবে তখনই হাতে কিছু একটা বাজে মিশরাতের‌। ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। হাতরে হাতরে সেটা বের করতেই খেয়াল করে একটা পেন্ডেন্ট! যদিও অনেক দিন আগের! তবুও কৌতুহলবশত সেটা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করে সে। লকেটের সিস্টেম দেখে আরেকটু অবাক হয় সে! পেন্ডেন্টের মাঝে কারো ছবি দেয়া! পেন্ডেনটা খুলতেই বিস্ময়ে তার চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে গেল! একপাশে স্নিগ্ধর ছবি আর অন্যপাশে একটা মেয়ের ছবি। মেয়েটাকে মোটেও তার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে না। লাভ শেপের পেনডেন্ট‌ এর মাঝে স্নিগ্ধর আর অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় মিশরাত‌।
এই ছবির মেয়েটি কে?

কিছু একটা চিন্তা করে আরো চমকে উঠে সে? ছবির এই মেয়েটা আর স্নিগ্ধর বলা শুভ্রতা একই মেয়ে নয় তো?

অফিসের মিটিং শেষ করে কেবিন থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো স্নিগ্ধ আর অরিন‌। স্নিগ্ধ যথেষ্ট মেইনটেইন বজায় রেখে চলে এ মেয়েটার কাছ থেকে! কেননা অরিনের‌ চালচলন আর কথাবার্তা অনেকটাই রহস্যে ঘেরা!
– ” স্যার এইযে আপনার নেক্সট মিটিংয়ের শিডিউল!”
স্নিগ্ধ ও হালকা হেসে সেগুলো হাতে নিল।
– ” থ্যাংকস মিস অরিন! আগামীকাল মিটিং এ দেখা হচ্ছে তাহলে!
হ্যাভ এ গুড ডে!”
বলেই অরিনকে পাশ কাটিয়ে চলে আসলো স্নিগ্ধ। অরিন পেছন ফিরে একবার স্নিগ্ধর যাওয়ার পানে তাকালো!
– ” অবশ্যই মিস্টার আশফিন‌ চৌধুরী স্নিগ্ধ! দেখা তো আমাদের হতেই হবে!
সেটা আপনি চাইলেও হবে আর না চাইলেও হবে! বিকজ ইটস্ মিস্ট্রিয়াস‌!”
বলেই আলতো হাসলো অরিন‌। যে হাসিতে লুকানো রয়েছে অনেকখানি রহস্যের ছোঁয়া!

রাতে ডিনার শেষে রুমে আসতেই খেয়াল করে মিশরাত অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইস্ত্রি করছে কাপড়। যার কারণে গরম ইস্ত্রির ছোঁয়া হাতে লাগতেই লাফিয়ে উঠে মিশরাত‌। বাম হাতের তালুতে লাগায় সেখানে অনেকটা অংশ জ্বালা করছে!
– ” আরে দেখেশুনে একটু কাজ করবে তো! দেখো এখন কতখানি পুড়ে গিয়েছে।!”
বলেই স্নিগ্ধ একপ্রকার দৌড়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে ‌মিশরাতের হাতে সযত্নে মলম লাগানো শুরু করে।
আর এদিকে মিশরাতের মাঝে যেন কোনো প্রতিক্রিয়া ই নেই। সে একদৃষ্টে স্নিগ্ধর তাকিয়ে রয়েছে। ব্যান্ডেজ করা শেষে মিশরাতের ওমন চাহনি দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ।
– ” কি হয়েছে? এমনভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
স্নিগ্ধর কথায় হুঁশ ফিরে আসে মিশরাতের‌। তারপর ছোট্ট একটা দম নিয়ে বলে উঠল,

– ” শুভ্রতা কে স্নিগ্ধ?”
চোখ তুলে তাকায় স্নিগ্ধ। চোখে মুখে বিরক্তির আভা স্পষ্ট।

– ” মিশরাত আমি তোমাকে একবার বারণ করেছি যে এই নামটা আমার সামনে উচ্চারণ করবে না!
তবুও তুমি ফের শুভ্রতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছো!!
আর আমি তো বলেছিই যদি কোনোদিন সঠিক সময় আসে তাহলে সেদিন তোমাকে সবটা বলবো! ”
চাপা স্বরে বলে উঠল স্নিগ্ধ। এদিকে মিশরাত মোটেও এমন প্রত্যুত্তর আশা করেনি স্নিগ্ধর কাছ থেকে। তবে সেও ছাড়বার পাত্রী নয়।

সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে পেন্ডেনটা স্নিগ্ধর সামনে ধরতেই স্নিগ্ধ চরম অবাক হলো।
– ” এটা কি তাহলে? এই মেয়েটা কে? আর শুভ্রতাই বা কে?
আমি জানতে চাই স্নিগ্ধ!”

এবার আর রাগ সামলে উঠতে পারলো না স্নিগ্ধ। হুট করে তার ব্যক্তিগত জিনিস নিয়ে তাকে জেরা করাটা মোটেও পছন্দ হয় নি তার!
– ” শুভ্রতা, শুভ্রতা, শুভ্রতা!!!
কে এই শুভ্রতা সেটাই জানতে চাও তো তুমি? তাহলে শোনো আমি শুভ্রতা কে ভালোবাসি!!
আই লাভ হার!!”

অনেকটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো স্নিগ্ধ। আর মিশরাত এখনো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মানে তাদের মধ্যকার ডিলটা শুধু মাত্র এই মেয়ের জন্য! স্নিগ্ধ কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? আর যদি ভালো বেসেই থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিলো??…………

চলবে ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here