মনময়ূরী,২

0
1528

মনময়ূরী,২
Anamika

এশা মাহিরের কথা জবাব না দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। রান্নাঘরে এসে ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে এক বোতল পানির সবটা খেয়ে ফেলে। কাল তার বিয়ে আর আজ মাহিরের আগমন। যেভাবে কথা বলছিল তাতে এটুকু বোঝা যায় যে মাহির তার বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানে না৷ এখন জানে না কিন্তু সকালে তো সবাইর ব্যস্ততা দেখে প্রশ্ন করবেই। এশা ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ ইভানের বিষয়টা সে কাউকেই জানায়নি। এখন কী হবে! এশা ঢোক গেলে। এক বোতল পানি শেষ করেও কেমন গলাটা শুকনো শুকনো লাগছে। পরেই আবার ভাবে, মাহির এখন ঘুমোতে যাবে মানে দুপুরের আগে উঠবে না। যাক এই সময়টুকু অন্তত বাঁচা যাবে কিন্তু তার পরে; তারপরে কী করে সামাল দেবে এশা। তখনই মাহিরের আগমন ঘটে,
-এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস?
-কিছু না। পানি খেতে এসেছিলাম। তোমার কিছু লাগবে?
-আমিও একই কাজে এসেছি। তবে খেতে নয় নিতে।
-ওহ।
-যা, এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
এশা কথা না বাড়িয়ে চলে গেল তার সাথে সাথে তার ভয়ও পিছু নিলো। যদিও মাহির কিছু বলেনি এতোদিন আবার আজও কিছু বলার চান্স ছিল না কিন্তু সমস্যা তো বাধালো বিয়েটা। বিয়ে হচ্ছে শুনলেই জানতে চাইবে কার সাথে হচ্ছে। আর নাম জানতে পারলে তো খবর আছে। না না, কিছুতেই নাম জানতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পাহাড়া দেবে সে। কিন্তু ঘুম পাচ্ছে যে। এতক্ষণ ঘুম ধরলো না আর এখন যখন জেগে থাকাটা প্রয়োজন তখনই ঘুম এসে ভীড় জমালো চোখের পাতায়।

রুমের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে এশা। ওকে জেগে থাকতে হবে। একদিন না ঘুমোলে কিছু হয় না। একটু উইকনেস ফিল হবে, সেটাও গ্রহণ করে নেবে এশা। কিন্তু মাহির যদি ইভানের কথাটা বলে দেয় তাহলে তো হয়েই গেল। আর আস্ত রাখবে না বাবা তাকে। এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। কোন দুঃখে ইভানের সাথে মাহিরের পরিচয় করিয়েছিল কে জানে! তার উপর এই ঘুম। বিছানার দিকে চোখ যেতেই শুয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। অনেকক্ষণ যাবত মনের সাথে লড়াই করার পরে না পেরে এশা শুয়ে পড়ে। নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বলে, ‘যা হবে ভালোই হবে। মাহির তো আর উঠছে না জলদি তাই তেমন চিন্তা নেই। খুব বেশি না হলেও অন্তত চার ঘণ্টা ঘুমালেই হবে তার।’ এই ভেবে এলার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়ে।

এতো লম্বা একটা জার্নির পরে বাড়িতে এসেছে মাহির। কিন্তু মনে কোনো শান্তি নেই। কোথাও না কোথাও কিছু একটা অনুপস্থিত বলে মনে হচ্ছে। আবার তার মাথায় কিছু প্রশ্নও খেলা করছে যার মধ্যে একটা হলো এশার ওড বিহেভিয়ার। তাকে ইভানের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে এইভাবে এড়িয়ে গেল কেন? এশা’ই তো ইভানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তবে কী এখন ওদের সম্পর্কটা আর নেই? না ইভানকে দেখে তো তেমন মনে হয়নি।

মাহিরের দাদুরা দুই ভাই। তাদের সন্তানদের মাঝে কখনো মিল ছিল না। তবে কীভাবে যেন বড় ভাইয়ের মেজ ছেলে আর ছোট ভাইয়ের বড় ছেলের মাঝে অন্যরকম একটা বন্ধন লক্ষ্য করা যেতো। তারা একে অপরের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছিল বললে ভুল হবে আজও আছে। তার ফলস্বরূপই তো দুই ভাই আজ একই সাথে আছে। বাকিদের কারো সাথে তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই তাদের। তারা আসে আবার চলে যায় তবে এই দুই ভাইয়ের মাঝে কখনো কোনো মনমালিন্য দেখা যায়নি। মাহির ছোট বেলা থেকেই দেখছে তার বাবা আর চাচ্চুকে। এরপর চাচ্চুর ঘরে একটা ফুটফুটে মেয়ের জন্ম হয়। যে মেয়েটি এশা। এশা তার বাবার কাছে যতটা আদরের তার থেকেও বেশি আদরের মাহিরের বাবার কাছে।

এশা তখন উচ্চমাধ্যমিকের স্টুডেন্ট। একদিন বাড়িতে একটা ফোনকল আসে। এশার কলেজ থেকে এসেছিলো ফোন। এশার বাবা, বড় বাবা কেউ বাড়িতে উপস্থিত ছিল না সেই সময় তাই এশার মা নিজেই কথা বলেন। ওপাশ থেকে কে কী বললো তা কেউ বুঝলো না তবে ফোন কানে ধরেই এশার মা পড়ে যেতে নিলেন। মাহির সেখানেই উপস্থিত ছিল। সে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে আগে চাচিকে বসিয়ে দেয় পাশের একটা চেয়ারে। এরপর কথা বলে। মাহিরের চেহারার ভঙ্গি পালটে গিয়ে রাগের ছাপ ফুটে ওঠে।
-আপনারা আগে ভালোভাবে না জানিয়ে ভয় পাইয়ে দিলে হবে!
এশার মা যখন কথা বলেন তখন কেউ বলেছিল এশার এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। যা শুনেই এশার মায়ের এই অবস্থা৷ পরে মাহির কথা বলে জানতে পারে তেমন কিছুই হয়নি। পা একটুখানি মচকে গেছে। মাহির ফোন রেখে চাচির পাশে বসে বলে,
-চাচি ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। একটুখানি পা মচকে গেছে। তুমি চিন্তা করো না আমি গিয়ে নিয়ে আসছি ওকে।
মাহির সাথে সাথে বেরিয়ে যায়।

এশা একা একা বেশ বোর হচ্ছিলো সেই সময় ইভান আসে। ওকে একা বসে থাকতে দেখে নিজে ওর পাশে বসে যায়।
-খুব বেশি ব্যথা পেয়েছ?
-না।
-তাহলে চলো বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
-না, মাহির ভাইয়া আসবে বললো।
-আচ্ছা।
-তুমি চলে যেতে পারো।
-যতদূর মনে পরে আমার ইম্পর্টেন্ট কোনো কাজ নেই। আর মেসে আই থিংক রাত নয়টার পরে গেলে প্রবলেম হয় তার আগে কোনো প্রবলেম নেই।
-হয়েছে বসে থাকো।

মাহির আসে দেখে এশা কারো সাথে কথা বলছে। সে এগিয়ে আসে।
-এশা।
মাহিরের কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকায়। মাহিরের চোখদুটো ইভানের দিকে। এশা বুঝতে পেরে বলে,
-ভাইয়া ও ইভান। আমার বয়ফ্রেন্ড।
মাহির কখনো এশার ব্যবহারে এমন কিছু পায়নি যাতে সন্দেহ করা যায় আজ হঠাৎ এইভাবে ওর বয়ফ্রেন্ড উদয় হলো দেখে কিছুটা শক হলেও নিজেকে সামলে নিলো। ইভানকে কিছু বলতে যাবে তখনই এশা বলে,
-ভাইয়া, চলো যাই। আমার পায়ে ব্যথাও করছে। ওর সাথে অন্য কোনোদিন আলাপ করে নিও।
ইভান এশাকে ধরে সিএনজি অবধি নিয়ে গেল। মাহির আগে বসে ওকে ধরে বসায়। ইভান বলে,
-যাও তবে। সাবধানে থেকো।
-তুমিও।
-ভাইয়া।
-হুহ।
মাহির কিছু একটা ভাবছিলো, ইভানের কথায় ভাবনা গুলো হারিয়ে যায়। বলে,
-ডোন্ট ওয়ারী। তুমি যেতে পারো।
মাহির এশাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পরে ইভান একটা রিক্সা নেয়। এরপরে যদিও ইভানের সাথে মাহিরের দেখা হয়নি তবুও মাঝেমাঝেই এশা ইভানের নামটা নিতো। কিন্তু আজ হঠাৎ এমন এড়িয়ে গেল কেন? বুঝে উঠতে পারছে না মাহির।

Continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here