মনময়ূরী,৫,৬

0
1312

মনময়ূরী,৫,৬
Anamika

-আফসোস, আমি ভালো অভিনেত্রী হলেও তুমি ভালো গোয়েন্দা হয়ে উঠতে পারলে না।
-কিছু বললি?
এশা কথাগুলো বিড়বিড়য়ে বলায় মাহির শুনতে পায়নি। এশা কথা ঘোরানোর জন্য বলে,
-কী? কোথায়? না তো।
-ওহ।
-যাই হোক যা বলছিলাম, ইভানের ফোন নম্বর থাকলে দে।
-না, নেই।
-তোদের মাঝের সমস্যাটা কোথায় বলবি আমায়।
-কোনো সমস্যা নেই তো।
-দেখ আমি একদিনেই ইভানকে দেখে বুঝেছি হি কেয়ারস এবাউট ইউ। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
-আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো ছিল না।
-সিরিয়াসলি!
-এখন যাও তো, আর ভালো লাগছে না।
-এখন গেলে আর কখনোই কিছু করতে পারবো না যে আমি। তোকে যতবার দেখবো ওই লোকটার পাশে ততবার আমার ভেতর থেকে আওয়াজ আসবে, আমি পারতাম এই অন্যায়টা আটকাতে কিন্তু চেষ্টাই করিনি আমি।
-কালকের দিনটা, আর যদি কোনো চান্স থাকে তাহলে আর হাতে গুণে তিন থেকে চার দিন আমাদের একসাথে দেখবে তারপর আমি ওবাড়িতে আর তুমি….
কথাটা বলেই থামে এশা। একটু থেমে আবার বলে,
-তুমি তো আবার সেই অনেক দূরে, দেশ ছেড়েই চলে যাবে।
মাহির আর কথা বাড়ালো না। এখানে তার থাকা না থাকার প্রশ্ন আসছেই বা কেন? যাই হোক সে শেষ অবধি চেষ্টা করবে। এখন এখান থেকে চলে যাওয়াটা শ্রেয় হবে। নাহলে রাগের মাথায় কী করে বসবে সে নিজেও জানে না। মাহির পেছন ফিরে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় এশার রুম থেকে। এশা পেছন ফিরে সেই দৃশ্য দেখে আবার আকাশের দিকে তাকায়। এখন চাঁদটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেই চাঁদকে দেখে হাসে এশা। হাসির মাঝে মেশানো কষ্টটা তার চোখ দিয়ে অশ্রু রূপে বেরিয়ে আসে।

মাহির নিজের রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সব কী তবে শেষ হয়ে গেল! আর কী কিছুই করতে পারবে না সে! বর এসেছে ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। মাহির একবারের জন্যও নিচে যায়নি। দেখার ইচ্ছেও নেই তার। কাল রাত থেকে শত চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনি বলে নিজেকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে।

মাহিরের মা এসেছেন ছেলেকে দেখতে না পেয়ে। ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছে মাহির। তিনি বলেন,
-মাহির, আছিস বাবা?
-কিছু বলবে মা?
মাহিরের কণ্ঠস্বর দূর্বল শোনালো।
-তোর কী শরীর খারাপ হলো! এইভাবে অন্ধকার করে রেখেছিস কেন?
-না মা আমার কিছু হয়নি।
-এক মিনিট আগে আলো জ্বালাই তারপর কথা বলছি।
মাহির বুঝতে পারে মা আলো জ্বালানোর জন্য সুইচ বোর্ডের দিকে এগোচ্ছেন। সে বাধা দেয় বলে,
-মা, থাক আলো জ্বালিও না।
-কী হয়েছে বাবা, অমন শোনাচ্ছে কেন তোকে?
-তেমন কিছু না মা, একটু টায়ার্ড লাগছে।
-আচ্ছা তবে একটু রেস্ট নিয়ে নিচে আয়। বিয়ের কাজ শুরু হবে। কাজী সাহেব এসে পড়েছেন। আর কিছুক্ষণ বাদেই মেয়েটা পর হয়ে যাবে। আর তুই বাড়ির ছেলে হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবি না, সেটা তো হয় না বাবা।
মায়ের কথাগুলো এখন বিরক্তিকর মনে হচ্ছে তার কাছে। সে বলে,
-মা তুমি যাও এখন।
-আচ্ছা যাচ্ছি, তোর ইচ্ছে এলে আয় নইলে না আয়।
বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন। মাহির বুঝলো মা রেগে গিয়ে বেরিয়েছে। তাই সে বেশি সময় ধরে ঘরে বসে থাকতে পারলো না। সেও পেছন পেছন নিচে গেল। নিচের সবচেয়ে বড় ঘরটা ফাঁকা করানো হয়েছে। সেখানেই বরকে বসানো হয়েছে। সে সেই ঘরের পাশে গিয়ে শুনতে পেল কাজি নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অন্যমনস্ক হয়ে সে ভেতরে ঢুকে সামনে দেখে। সে চমকে তাকায়। এ কাকে দেখছে সে! এ তো তানভীর তারিক। সে কী একটা সমস্যা করলো, কালই পুরো নাম জেনে নিলেই পারতো। ভাবনার মাঝেই তার কানে ভেসে আসে কাজী সাহেব জানতে চাইছেন এই বিয়েছে বরের সম্মতি আছে কি নেই। তানভীর উত্তর দেওয়ার আগেই মাহির বলে,
-না।
কথাটা জোরে বলায় সবার দৃষ্টি মাহিরের দিকে যায়। মাহিরের বাবাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি রেগে ছেলের দিকে এগিয়ে আসেন।
-তোমার এতো সমস্যা ছিল তখন নিজের ঘরে থাকলেই পারতে এইখানে আসতে কে বলেছে তোমায়?
-বাবা, আমার কথাটা শোনো।
-আর একটা কথা বলবে না তুমি।
-বাবা, এ ছেলে ঠিক নয় আমাদের এশার জন্য।
-এখন তুমি বলে দেবে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক?
-বাবা, তুমি রেগে আছো বলেই এখন কিছু বুঝতে চাইছো না। একবার মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাটা তো শোনো।
মাহিরের বাবার সাথে এবার তানভীরের বাবা তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসে। তিনিও মাহিরের উপর রেগে আছেন। রাগটা তিনি মাহিরের বাবার উপর নিয়ে ফেলেন।
-আপনারা কী আমাদের অপমান করতে ডেকেছেন?
মাহির কিছু বলতে গেলে তাকে আটকান এশার বাবা। তিনি বলেন,
-মাহির, চাচ্চুর কথা শোন বাবা। এখানে কোনো ঝামেলা করিস না।
-চাচ্চু, আমি কোনো ঝামেলা করছি না। বুঝছো না কেন? এই ছেলেটার সাথে এশার বিয়ে হলে এশার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এ আগের থেকেই বিবাহিত। আবার বিয়ে বসে কোন সাহসে ও।
মাহির একটানা কথাগুলো বলে থামে। ঘরের মধ্যে উপস্থিত থাকা সকলে স্তব্ধ হয়ে যায়। এবার মাহিরের বাবাও কিছু বলেন না। তিনি যেন নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। এটা কী করে সম্ভব! তিনি নিজে সব খোঁজ খবর নিয়েছিলেন।

সবাই নিজেদের চিন্তা জগতে বিরচন করতে ব্যস্ত সেই সময় মাহির এগোয়। তানভীরের সেরওয়ানির গলার অংশটুকু ধরে তাকে মারতে যায় সে। তার বাবা এসে আটকে নেয়।
-বাবা ছাড়ো আমায়।
-মাহির থাম।
মাহিরকে থামিয়ে উনি তানভীরের বাবার দিকে দেখেন। তানভীরের বাবাও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। তার ছেলে বিবাহিত! মাহিরের বাবা কিছু বলতে যাবেন তখন তিনি বলেন,
-এই ছেলেটা এসব কী বলছে? আমার ছেলের সাথে যদি আপনাদের মেয়ে বিয়ে নাই দেওয়ার ছিল তবে আগেই বলতে পারতেন কিন্তু আমার ছেলের উপর এতো বড়ো দোষারোপ করছেন কোন ভিত্তিতে?
-দেখুন…
মাহির তার বাবার মাথা নিচু দেখে তাৎক্ষণিক বলে ওঠে,
-বাবা স্টপ। এনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কিছু হয়নি এখনো। ক্ষমা তো ইনি চাইবেন তাও তোমাদের কাছে।
মাহির আরেকটু এগিয়ে এসে বলে,
-আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার ছেলে বিবাহিত। কী তাই তো?
তিনি একবার মাহিরের কঠিন চেরার দিকে তাকান আরেকবার নিজের ছেলের ভীত চেহারার দিকে। যা বোঝার তার বোঝা হয়ে গিয়েছে। তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। মাহির বলে,
-ওকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন আমি প্রমাণ দেখাচ্ছি।
-কীসের প্রমাণ?
মাহিরের বাবার কণ্ঠ। মাহির বলে,
-একটু সময় দাও বাবা। বিশ্বাস রাখো তোমার ছেলের উপর। আমি এমনি এমনিই এলিগেশন্স আনছিনা এর উপর।
মাহির পকেট থেকে ফোনটা বের করতে করতে উপরের দিকে যেতে থাকে। ফোন হাতে নিয়ে কাউকে ফোন দেয়।
-কোথায় তুই?
-বাড়িতে।
-আর তানভীর?
-ও তো কোনো একটা কাজে বাইরে গেছে৷ বললো খুব দরকারি।
-তোদের বিয়ে সম্পর্কে তানভীরের পরিবার এখনও জানে না?
-নারে, তানভীর অনেকবার চেষ্টা করেছে বলার। কিন্তু বলে উঠতে পারেনি।
-ওহ। আচ্ছা ফোন রাখ। আর কিছু সময়ের জন্য ফোনের পাশ ছেড়ে কোথাও যাবি না কেমন?
-আচ্ছা। মাহির কিছু হয়েছে?
-পরে বলছি।

মাহির নিজের ঘর থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে আসে সবার সামনে রেখে ওপেন করে। তারপর নির্দিষ্ট একটা ফাইল ওপেন করে দেখায়। কিছু ছবি তারপর একটা ভিডিও। তানভীরের বিয়ের ভিডিও। সেখানে উপস্থিত ছিল মাহিরও। উপস্থিত সকলে ছবি ও ভিডিও দেখে যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে। সে ফোন করে সেই মেয়েটিকে। এরপর একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। মেয়েটি উত্তর দিতে থাকে। সবকিছু প্রমাণ করার পরে মাহিরের বাবা তানভীরের গায়ে হাত তুলতে এগিয়ে যান। মাহির আটকে নেয় তাকে। তানভীরের দিকে চোখ রেখে বলে,
-তুই যে এখানে বিয়ে করতে এসেছিস সেটা এখনো আভা জানে না। ভাবছি তোকে একটা সুযোগ দিই। এখনি এখান থেকে বেরিয়ে যাবি। আর আংকেল, আপনি।
তানভীরের বাবা দেখেন মাহিরের দিকে।
-আংকেল। আভা খুব ভালো মেয়ে। আমি জানি না আপনার ছেলে এখনো কেন তার কথা লুকিয়ে রেখেছে। বিয়ের চার বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও মেয়েটা অপেক্ষা করছে আপনার ছেলে কখন আপনাদের কাছে তার পরিচয় দেবে। আশা করবো মেয়েটার অপেক্ষার মূল্য দেবেন আপনারা। ব্যস আমার আর কিছু বলার নেই। এরপর মাহির বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। সে চলে যায় নিজের ঘরে।

সন্ধেবেলা মাহিরের মা এসে বলেন এশার বিয়ে আজই দেবেন বলে ঠিক করেছেন তার বাবা। মাহিরের মাথা গরম হয়ে যায়। সে আবারও নিচে নেমে আসে। বাবার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় সে।

continued…..

Anamika

#মনময়ূরী
৬.

-বাবা মা কী বলছে এসব?
মাহিরের বাবার দৃষ্টি স্ত্রীর দিকে যায়। তখন মাহিরের মা এগিয়ে এসে বলেন,
-ও আমার কথা পুরোপুরি না শুনেই নিচে নেমে এলো।
-কী পুরো কথা? কীসের কথা মা? তোমরা আবার সেই একই ভুল করছো। দেখেশুনে বাছাই করার পরেও তো ঠকলে আর আজ এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কাউকে পেয়ে গেলে যে আবার বিশ্বাস করে বসলে তোমরা। আই কান্ট বিলিভ বাবা।
পাশের বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়িতে থাকে এক পরিবার। সেই পরিবারের কর্তা সামনে এগিয়ে এসে বলেন,
-এখন সিদ্ধান্ত নেবে না তো কখন নেবে শুনি। একটা মেয়ের বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানে কী জানো তুমি?
-এমনভাবে বলছেন যেন সম্পূর্ণ দোষ মেয়েটার।
-নিশ্চয় কখনো এমন কাজ করেছে বলেই ভাগ্য এমন দিন দেখালো তাকে।
-ডিজগাস্টিং! আপনাদের চিন্তার ধারা দেখে অবাক হচ্ছি আমি। কোথায় আছেন বলুন তো!
এরপর মাহির তার বাবার সামনে হাত জোর করে বলে,
-বাবা আজকের মতো অনেক হয়েছে। আর এসব নিতে পারছি না। প্লিজ বন্ধ করো এসব। আর এরা কেউ থাকবে না আর না তোমরা থাকবে, এশা জীবন তাকেই কাটাতে হবে। এতোটা তাড়াহুড়ো করো না প্লিজ বাবা।
এবার বাড়িতে উপস্থিত প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনদের বলে,
-আপনারা এবার আসুন প্লিজ। আমাদের বাড়ির বিষয় আমাদের উপরেই ছেড়ে দিন। আপনাদের আর দ্বায়িত্ব নিয়ে কিছু করতে হবে না।
ভীড়ের মাঝে থেকে কেউ একজন বলে ওঠে,
-তবেই তুমিই নিয়ে নাও না দ্বায়িত্বটা।
কথা কে বলেছে সেটা কেউ বুঝতে পারলো না। মাহির উত্তরও দিতে পারলো না। তার আগেই সবাই কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
-দ্বায়িত্ব যখন তোমাদের বলছোই তবে আজই নাও সবার সামনে। একটা মেয়ের জীবন এইভাবে তো শেষ হতে দেখতে পারি না আমরা। তোমাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই এমন হয়েছে।

কিছুক্ষণ আগেই পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল আর এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি ৩৬০° ঘুরে গেল। যারা এশার খুঁত খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল তারাই এশার চিন্তায় মরে যাচ্ছে এখন। মাহিরের বিরক্তি ভাব কেটে এখন পাগলের মতো হাসতে ইচ্ছে করছে। সে এতোক্ষণ কী বুঝিয়েছে তবে! এবার সিদ্বান্ত তার বাবার হাতে। সে মনে মনে দু’য়া করে যেন তার বাবা এদের কথায় এসে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে। কিন্তু যখন তার বাবা মুখ খুললেন তখন তার অবাক হওয়া ছাড়া উপায়ই থাকলো না কোনো। এই ঘরভর্তি লোকজন যা এই মুহুর্তে বলছে তা উনি এক ঘণ্টা আগেই ভেবে বসে আছেন। মাহিরের মনটা বিষিয়ে আসে। সে বসার ঘর ত্যাগ করে নিজের ঘরে চলে যায়৷ এক ধাপে তিনটে করে সিঁড়ি পেরিয়ে গেল সে। এতটাই দ্রুত গেল সে। ওর মা ও পিছু নিতে চাইলে ওনাকে থামানো হয়। উনি নিজের হাতের দিকে দেখেন যে হাত দিয়ে বাধা প্রদান করা হয়েছে সেই হাতটা তারই স্বামী। উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়েই রয়ে গেলেন আর ওনার সামনে দিয়ে দ্রুত পা ফেলে উপরের দিকে উঠে গেলেন মাহিরের বাবা। মাহিরের ঘরের দরজাটা খোলায় আছে। কেন না মাহির জানতো খুলে না রাখলে দরজায় মেরে মেরে এমন শব্দ করা হবে যাতে তার মাথাটা আরো বিগড়ে যাবে। তাই খোলাই রাখে।

মাহিরের বাবা ঘরে প্রবেশ করে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ডান পাশে ব্যালকনির গেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। গেট খোলাই আছে। মানে মাহির ওখানেই আছে। উনি সেইদিকে এগিয়ে যান। বলেন,
-মাহির।
-যা বলবে জলদি বলো।
-কী করছিস তুই?
মাহির কিছু না বলে ল্যাপটপের মাঝেই ডুবে থাকে। রাগটা তার চেহারার লাল ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। উনি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলেন,
-মাহির এ কেমন বেয়াদবি!
মাহির তখনও কথা বলে না। এবার ওর বাবার রাগটাও বাড়ছে। এর পরের পাঁচ মিনিটের মাথায় মাহির ল্যাপটপ রেখে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে থেকেই ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকে সে এরপর চোখ তুলে তাকায় বাবার দিকে।
-এখন বলো কী বলবে?
-দেখ মাহির, অনেক ভেবেচিন্তেই আমি ডিসিশন নিয়েছি।
-কেন বাবা, আমিই কেন? আর একটু অপেক্ষা করতে পারতে খুঁজলেই ভালো কাউকে পেয়ে যেতে। এমন নয় যে এশার বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে। ওর তো পড়াশোনাও কমপ্লিট হয়নি বাবা।
-বললাম তো সবদিক বিবেচনা করেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-তানভীরের কথা বলেও তো এই একই কথা বলেছিলে তুমি। মনে আছে তোমার?
-তানভীরকে আমি বাইরে থেকে দেখেছি, বাইরের দিকটা দেখে তাই মনে হয়েছিল আমার। কিন্তু আমি তোর বাবা, তোর বাইরেটাও জানি ভেতরটাও জানি। আমি জানি তুই কখনো কোনো দ্বায়িত্ব নিলে সেটা পুরো মন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবি।
-বাবা আমার খুব ভালো লাগছে তুমি আমায় এতোটা ভরসা করো সেটা দেখে। কিন্তু বাবা এর মানে এই নয় যে যা কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে তুমি।
-মাহির আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।
-বাবা….
-বললাম তো আর একটা কথাও না। ১৫ মিনিটের মধ্যে নিচে নেমে আসবি তুই। আশা করি আমার মান তুই রাখবি।
মাহিরের বাবা বেরিয়ে গেলেন। মাহির অনেকবার ডাকলো তবুও কোনো কাজ হলো না। মাহিরের চোখ যায় টি টেবিলের উপর রাখা ল্যাপটপের স্ক্রিনে। সে তার ছুটি ক্যান্সেল করার জন্য এপ্লাই করেছিল। কিন্তু কে জানতো কয়েক মিনিটের মাঝেই সেটা এপ্রুভ হয়ে যাবে। তার টিকিটও এসে গেছে। মেইল বক্স খুলে দেখে পাঁচ দিন পরের তারিখটা সাথে সময়টাও স্পষ্ট রাত ১টা ৪৫মিনিট। এখন বিয়ে করা মানে একটা মেয়েকে অনিশ্চিত জীবন উপহার দেওয়া। আর সে মেয়েটা কী জানে সে কার সাথে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই জানে না সে৷ জানলে চাইতো না এমনটা। একবার অন্তত একবার এশার সাথে কথা বলতেই হবে তাকে। হ্যা, বলতেই হবে।

ল্যাপটপটা বন্ধ করে মাহির নিচে গেল। সবাইকে এক নজর দেখে নিলো সে। একটু আগেই যা এ বাড়ি সম্পর্কে নেগেটিভ বাক্য ব্যবহার করে যাচ্ছিলো এখন তারাই বসে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন বিয়ে সম্পন্ন হবে। হয়তো নতুন গসিপ টপিক পেয়ে যাবে আবার তারই অপেক্ষা করছে এরা৷ এরাই মানুষ, মেহমান হয়ে আসবে তীর হয়ে বেরিয়ে যাবে৷ আঘাতটা দেখা যায় না তবুও এই অদৃশ্য আঘাতের কারণে এমন কত এশা’র জীবন অনিশ্চয়তায় ঘীরে আছে কেউ বলে দিতে পারে না। মাহির এগিয়ে যায় চাচীর কাছে। একমাত্র এই একজনই পারেন এশা’র সাথে একবার কথা বলার সুযোগ করে দিতে। মা’কে বলে তো কোনো লাভ নেই। বাবা যা বলবেন সেটাই শুনবেন তার মা।
-চাচী।
মাহিরের ডাকে তার চাচী ফিরে তাকায় কথা বলতে যাবে তখন সেখানে মাহিরের মা এসে উপস্থিত হোন। তিনি বলেন,
-তুই এখানে কী করছিস? যা তোর মেয়ের কাছে যা এখন। আর মাহির।
-হ্যা, মা।
-তুই এইখানে কী করছিস?
-মা, পাঁচ মিনিট। আমি চাচীর সাথে একটুখানি কথা বলবো ব্যস।
-যা কথা আছে পরে বলবি। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তোর চাচীর এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় নেই।
তারপর তিনি জা’য়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-কী’রে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
-যাচ্ছি।
মাহির দেখতেই থাকলো চাচী সেখান থেকে চলে গেলেন৷ মাহির আর কিছু বলতে পারলো না।

কোনো পরিস্থিতিতেই মাহিরকে এশা’র সাথে দেখা করতে দেওয়া হলো না। হলো না বললে ভুল হবে, সে তো দেখা করার কথা বলারই সময় পেল না। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ টুপি পরে কাজী সাহেবের সামনে বসতেই হলো তাকে।

continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here