মনময়ূরী,২১,২২

0
959

মনময়ূরী,২১,২২
Anamika

এশা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। খুশির মাত্রাটা এতোটাই যে আপনে আপ হাত ঠোঁটের কাছে গিয়ে ঠেকে। বিষ্ময়ে হা করে তাকিয়ে আছে সে। চোখদুটো জল ছল ছল। মাহির যদিও এশার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তবুও সে বুঝতে পারছে এশার এক্সপ্রেশন এখন কেমন। সে যেমনটা কল্পনা করেছিল তার চেয়েও বেশিই খুশি হয়েছে মেয়েটা। এশা খুশি, খুব খুশি আর কী চায়, হুম?

ড্রইংরুমের আলো বন্ধ করে দিয়ে পুরো রুমে মোমবাতি দিয়ে আলোকিত করা হয়েছে। ফ্লোর জুড়ে গোলাপের পাপড়ি। সামনে শ্যাম্পেন এর বোতল পাশে দু’টো গ্লাস। গ্লাস দুটো একে অপরের সাথে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা রয়েছে। গ্লাস দু’টো দেখে এশার মনে হলো যেন সে আর মাহির এক বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছে ওইখানটায়। পাশে একটা ছোট্ট কেক। চকলেট কেক। এশার সবচেয়ে পছন্দের কেক। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারছে না এইটুকু সময়ের মধ্যে মাহির এতোকিছু করেছে কী করে! মাহিরের কথা মনে হতেই সে পেছনে ফিরতে নেয় আর তখনই কানের একদম কাছে থেকে একটা কথা শুনতে পায় সে৷ কানের কাছে ঘেষে মাহির বলেছে,
-শুভ বিবাহবার্ষিকী।
শব্দের সাথে মাহিরের নিঃশ্বাসের বাতাসটাও তার কানে এসে লাগে আর সাথে সাথে এশা কেঁপে ওঠে। কবে যে মাহির এতোটা কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে টেরই পায়নি। ইশ! চোখ দু’টো খিঁচে বন্ধ করে নেয় সে। মাহির পেছন থেকে সবটা পর্যবেক্ষণ করে মুচকি হেসে আরেকটুখানি এগিয়ে যায়। এশার পিঠের সাথে মাহিরের বুকের স্পর্শ ঘটে। এশা সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে চাইলে মাহির তার পেটে একটা হাত রেখে আরেকটু কাছে টেনে নেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,
-আমি যে উইশ করলাম তুমি করবে না?
এশার কাছে কথাটা অন্যরকম ঠেকলো। পরক্ষণেই খেয়াল করলো মাহির ওকে তুমি করে বলছে। অন্যরকম এক অনুভূতি খেলে যায় এশার মনে। এশা’কে চুপ থাকতে দেখে মাহির আবার বলে,
-ভালো লাগেনি?
এশা সাথে সাথে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাহিরের দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছু সময় যেতেই এশা মাহিরের বুক থেকে মাথা তুলে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
-অন্য কারো বউ তোমায় জড়িয়ে ধরেনি, যে আছে সে তোমার নিজের বউ।
মাহির প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় তারপর বুঝতে পারে এশা তাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরায় সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল যে তারও যে এশাকে জড়িয়ে ধরতে হবে সেই খেয়াল টুকু ছিল না। মাহির হেসে এশার নাক টেনে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। এশা মাহিরের বুকে মাথা রেখেই প্রশ্ন করে,
-এতোকিছু কখন করলে?
-এসব লুকিয়ে করতে হয় কিনা তাই বউ ঘুমোচ্ছে দেখে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।
এশা চোখ ছোট করে রেগে তাকায় মাহিরের দিকে। মাথাটা বুকের সাথে লেগে থাকার কারণে মাহিরের থুতনি ছাড়া আর কিছুই দেখতে সক্ষম হয় না সে৷ মাহির বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,
-মাথাটা উঠিয়ে নিলেই দেখতে পারবি।
-ইচ্ছে করছে না।
-কীসের? আমায় দেখতে ইচ্ছে করে না তোর!
এশা সাথে সাথে মাথা তুলে বলে,
-না না। তা কেনো হবে! তোমায় দেখার ইচ্ছা না থাকলে কী প্রতিদিন এমনি এমনি পথ চেয়ে বসে থাকি!
কথাটা বলেই জিহ্বা দাঁতে চাপে। মাহির দুষ্টুমি করে বলে,
-আমার জন্য অপেক্ষা করা হয় তবে। বুঝলাম।
-মোটেও না। তোমার জন্য অপেক্ষা করতে আমার বয়েই গেছে।
বলেই এশা মাহিরকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। মাহির আফসোসের সুরে বলে,
-আমাকে বউ রূপে গিরগিটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার মানে।
এশা রেগে তাকায়। মাহির এশার কাছে গিয়ে ওকে টেনে নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। মাহির বসে আছে তার কোলে বসে আছে এশা।
-গিরগিটি বলবো না তো কী বলবো বলুন ম্যাম। এই বললেন অপেক্ষা করে কাটান আবার এই বলেন আমার জন্য অপেক্ষা করতে আপনার বয়েই গেছে। এতো দ্রুত রঙ তো গিরগিটিও বদলায় না।
-আমি রঙ বদলাই না হু।
-তাহলে সত্যিটা কী?
-অপেক্ষা করি তো।
বলে মাথা নিচু করে লজ্জা মাখা হাসি দেয় এশা৷ মাহির তাকে আরেকটু লজ্জা দিতে বলে,
-আমার জন্য?
-হু, তোমার জন্যই তো।
মাহির আরেকটু দুষ্টুমি করে বলে,
-শুধু দেখার জন্য অপেক্ষা নাকি মনের মাঝে সুপ্ত কোনো চাওয়া পূর্ণতা পাওয়ার আশা নিয়ে অপেক্ষা করে হুম?
এশা মাহিরের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে চট করে উঠে সামনে এগোয় কিন্তু বেশি এগোতে পারে না। আগেই তার হাতে ধরে টান দেয় মাহির। এশা মাহিরের উপর গিয়ে পড়ে। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে বসে যায় সে। মাহিরের উদ্দেশ্যে বলে,
-তোমার না খিদে পেয়েছিল।
-পেয়েছিল নয় এখনও পেটে ইঁদুর দৌঁড়ঝাপ করছে।
এশা তাকায়। মাহির বলে,
-বিশ্বাস না হলে পেটে কান পেতে শুনতে পারিস।
-ধ্যাত।
-তুই তো দেখি আমার পেটের উপর বেজায় বিরক্ত!
-খাবে এসো।
-পরে।
এশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। মাহির বলে,
-আগে কেকটা কাটতে হবে তো। সে আলাদা কথা যে আমার বউ এখনও আমায় বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানালো না।
কাঁদোকাঁদো ফেস করে নাটকের ভঙ্গিতে কথাটা বলে মাহিরের। এশা সেটা শুনে এগিয়ে এসে মাহিরের গাল ধরে টেনে দিয়ে বলে,
-হাউউ কিউট! হা হা হা।
মাহির এশার গালে হাত রেখে বলে,
-এইভাবেই হাসতে থাকিস সারাক্ষণ আর কিছু চাই না আমার।
কথাটার মাঝে কী যে মেশানো ছিল কে জানে এশার মনে ভালোলাগা ছেয়ে গেল। সে আবেগে মাহির কে জড়িয়ে ধরে রইলো। মাহির এশার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলো তাকে।

অনেকটা সময় পেরিয়েছে এশা চুপটি করে লুকিয়ে আছে মাহিরের বুকে। মাহির এশার পিঠে হালকা চাপড় মেরে তাকে ডাকে,
-এশা, এই এশা।
-উমম…
এশা যে একটা ঘোরের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি মাহিরের। তারও মন চায় এইভাবেই কাটিয়ে দিতে রাতটা কিন্তু চাওয়া আর বাস্তবতার মাঝে অনেক পার্থক্য আছে সেটা বুঝতে হবে। প্রচুর খিদে পেয়েছে। সে আবারও এশা’কে ডাক দেয়,
-এশা লক্ষ্মীটি ওঠ।
-না।
-কেকটা কেটে নিই একসাথে তারপর খাবি তো।
-আমার খিদে নেই।
-আমার তো আছে।
-তবে তুমি খেয়ে নাও গিয়ে আমি উঠছি না।
মাহির হাসে। হেসে বলে,
-ওরে পাগলী তুমি না উঠলে আমি যাই কী করে?
-তোমাকে যেতে দেবো না বলেই তো উঠছি না।
-এশা, প্লিজ।
এশা বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায় এরপর রেগে বেডরুমের দিকে পা বাড়ায় সে। মাহির হাতটা ধরে কাছে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-এতো রাগ। বাব্বাহ…
এশা মাহিরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। মাহির এবার নরম স্বরে বলে,
-আহা! রাগ করছিস কেনো? না খেয়ে তো জেগে থাকা যাবে না বল।
এশা ওইভাবেই ঘাড় ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা করে মাহিরকে,
-তোকে দেখে মনে হচ্ছে না আজ ঘুমোবি। আর সত্যি বলতে আমারও আজ জেগে রাত পার করার ইচ্ছে আছে তাই তো বলছি চল আগে কেকটা কাটি, ডিনার কমপ্লিট করি তারপর বসবো।
-ভুলে যেও না আমি ঘুমিয়েই ছিলাম তুমি… তুমি আমায় জাগিয়ে নিয়ে এসেছ।
-আমি তোকে না জাগালে খুশি হতিস?
তখন আর এশা কিছু বলে না। মাহিরের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। একটু আগেই সব ঠিক ছিল আবার বিগড়ে যাওয়ার দিকে। কী হতো না উঠালে। মাহির একটু অন্যমনস্ক হওয়ায় তার হাত দু’টো আলগা হয়ে আসে আর সেই সুযোগে এশা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। মাহিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে চলে যায় সে। মাহির দাঁড়িয়ে থাকে। দুই হাত দিয়ে চুলগুলো মুঠো করে সামনের দিক থেকে টেনে নিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দেয়। একে একে মোমবাতি গুলো নিভিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে অন্ধকারে ছেয়ে যায় ঘরময়।

continued……

Anamika

#মনময়ূরী
২২.

মাহির সোফার এক সাইডে নিজের পিঠের পুরো ভার ছেড়ে দিয়ে আধা শোয়া হয়ে বসে আছে৷ চোখদুটো বন্ধ রয়েছে একটা হাত দিয়ে কপালের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছেড়ে দিয়েছে এতে করে চোখদুটো ঢাকা পড়েছে তার। কিছু একটা অনুভব হতেই হকচকিয়ে উঠে বসে সে। সামনে খেয়াল করে একটা মোমবাতি জ্বলে উঠলো। হালকা আলো সেই আলোর পাশে আরেকটা আলো জ্বলতে দেখা গেল। ম্যাচ বক্সের সাথে কাঠির ঘর্ষণের সেই শব্দও কানে এসে ঠেকলো তার। এক এক করে পরপর তিনটে মোমবাতি জ্বালিয়ে কাঠিন ক্ষমতা ফুরিয়ে গেল। কাঠির নিভে যাওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে আগুন এশার একটা আঙুল স্পর্শ করে দিয়ে গেল। এশার মুখ থেকে ছোট্ট আর্তনাদ ‘আহ!’ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ পেল। মাহির সেটা শুনেই উঠে গেল এশার কাছে। গিয়েই খপ করে এশার হাত নিজের হাতে নিয়ে ফু দিতে শুরু করলো। এশার নজর মাহিরের চেহারায়। সে বললো,
-আমি ঠিক আছি ছাড়ো বাকি মোমগুলোও তো জ্বালাতে হবে।
-প্রয়োজন নেই।
মাহিরের গম্ভীর কণ্ঠস্বর। এশা বুঝতে পেরে বলে,
-রেগে আছো?
মাহির এশার দিকে তাকায়, হালকা আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে চোখে সেই অপরাধী ভাব৷ এশা আবারও বলে,
-রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক অবশ্য।
এশা মাথা নিচু করে নেয়। মাহির তার থুতনি ধরে মাথাটা আবারও সোজা করে দেয়, এশা দেখে। মাহির বলে,
-আমি রেগে নেই।
-সত্যি?
ছোট বাচ্চারা যেমন মন খারাপ হলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে ঠিক তেমন ভাবেই এশা গাল ফুলিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে। একেবারে বাচ্চাদের মতো লাগছে এই মুহুর্তে তাকে। মাহির যদি রেগেও থাকতো এশার এই চেহারা দেখে রাগ সাথে সাথে পড়ে যেত। মাহির এশার একপাশে দাঁড়িয়ে তাকে দুই বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,
-সত্যিইই।
-তবে মোমবাতি গুলো জ্বালাতে হেল্প করো।
এশা দাঁত বের করে হেসে ম্যাচবক্স এগিয়ে দেয় মাহিরের দিকে। মাহির ম্যাচ বক্স হাতে নেয় তারপর বলে,
-প্রয়োজন নেই। আবারও এতো ক্যান্ডেলস জ্বালাতে গেলে অনেক সময় চলে যাবে আমি বরং আলো জ্বালায় ওয়েট কর।
এশা মাহিরকে আটকে নিয়ে বলে,
-উহু আমার এই আলোই লাগবে। প্লিইইজ!
মিষ্টি এক মুখভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকে এশা৷ মাহির ওর সেই মিষ্টি মিষ্টি মুখটার দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারে না। সে জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে একটা উঠিয়ে নিয়ে এশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এশার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দেয়। এশা সেই স্পর্শ অনুভব করতেই হাত কেঁপে ওঠে মাহির সামলে নেয় সেই হাতে থাকা মোমবাতি। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে একটা হাত দিয়ে এশার যেই হাতে মোমবাতি আছে সেই হাতটা ধরে তারপর একে একে পুরো রুমে আবারও আলো ছড়িয়ে দেয় দু’জনে।

একসাথে কেক কাটে এক টুকরো কেক একে অপরকে খাইয়ে দেয় তারা। এশা বলে,
-চলো ডিনার সেরে নেই তারপর বসে বসে কেক খাওয়া যাবে।
মাহির অবাক চোখে দেখে এশা’কে। এশা খেয়াল করে ভ্রু নাচিয়ে ইঙ্গিতে প্রশ্ন করে যার মানে হলো ‘এমন করে তাকিয়ে থাকার মানে কী?’ মাহির হেসে এশার গাল টেনে দিয়ে বলে,
-ভাবছিলাম ডিনার শেষে তো পেটে জায়গা থাকবে না তুই কেক খাওয়ার কথা ভাবছিস কী করে?
-ওই…..
-আরে ওয়েট না। উত্তর পেয়েছি তো।
-কেমন উত্তর?
-তুই তো পেটুক, এক বেলায় সারাদিনের খাবার শেষ করতে পারবি। সরি, মাথার থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল।
-তোমাকে আমি….
দাঁত দাঁত পিষে কথাটা বলে তেড়ে আসে এশা। সেই সুযোগটা মাহির কাজে লাগায়। এশার হাত ধরে কাছে নিয়ে এসে একবার ঘুরিয়ে পেছন থেকে এশার হাত সোজা করে তার অনামিকা আঙ্গুলে খুব সুন্দর দেখতে একটা আংটি পরিয়ে দেয়। তারপর এশা’কে ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। সেখান থেকে খাবার আনতে হবে তো না হয় খাবে কী? মাহির জানে এশা এখন ওই আংটি দেখতেই অনেকটা সময় পার করবে। মন চাইছে ওর সেই ভালোলাগার অনুভূতি মিশ্রিত মুখটা দেখতে কিন্তু মনটাই আবার বাধা দিয়ে বলছে থাক না কিছু অনুভূতি একান্ত এশার নিজের।

মাহির খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে এসে দেখে এশা তখনও দাঁড়িয়ে আংটিতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সে কাছে যায় এশার সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু এশা’র কোনো হেলদোল নেই। সে হারিয়ে আছে ভালোলাগার আকাশে। ডানা মেলে উড়ছে ভালোবাসার রংধনুর মাঝে। মাহিরের ইচ্ছে হলো এশার সাথে হাত হাত রেখে সেই জগতে প্রবেশ করতে। একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে এশার কোমরে আলতো করে রাখে সে তারপর এশাকে কাছে টেনে নেয়। এশা বুঝতে পারার আগেই এমনটা ঘটে যার ফলে অপ্রস্তুত ভাবেই মাহিরের বুকের উপর গিয়ে পড়ে সে। আংটি পরা হাতটা এই মুহুর্তে মাহিরের কাঁধের উপর রয়েছে। মাহির নিজের অন্য হাত দিয়ে এশার সেই হাতটা ধরে মুঠোয় বন্দি করে নিয়ে কাধ থেকে সরিয়ে সামনে এনে একবার দেখে নেয় তারপর এশার চোখে চোখে রেখে হাতটা একটু একটু করে ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে চুমু এঁকে দেয়। এশা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেই। তখনই মাহির প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
-পছন্দ হয়নি বুঝি! এইভাবে চোখ সরিয়ে রেখেছ যে!
এশা সাথে সাথে চোখ তুলে তাকায় বলতে চায় ‘না না, খুব পছন্দ হয়েছে তো।’ কিন্তু কথাটা বলার আগেই মাহিরের চোখে চোখ যায়। দুষ্টুমি ভরা সেই চোখদুটো দেখেই এশা বুঝে যায় মাহির ওর লজ্জা আরও বাড়িয়ে দিতেই এমন প্রশ্ন করছে। সে আলতো করে মাহিরের বুকে গুঁতো মারে। মাহির কিছুটা পেছনে সরে যায় কিন্তু এশা’কে ছাড়ে না। এশা বলে,
-ছাড়ো না।
-ইচ্ছে নেই।
-প্লিইইজ!
-উহু।
-শুনবে তো!
-আমি উত্তর পাইনি এখনো।
প্রশ্নের উত্তর এশা দেবে না পরিবর্তে আরেকটি প্রশ্ন করে বসলো।
-এটা কী সেটাই?
-প্রশ্নের বিপরীতে উত্তর হয়, উল্টো প্রশ্ন নয়।
-জানি।
-তবে?
-বলোই না।
-হুম।
-আমি সত্যিই সারপ্রাইজড।
এশার নজর আংটিতেই আবদ্ধ রয়েছে। মাহির বলে,
-এট নিয়ম বুঝলি বউ কে কিছু না কিছু উপহার দেওয়া। সব দিক বিবেচনা করে দেখলাম আজকের গিফট তো তোর পাওনা আছেই তবে আরও একটা গিফট পাওয়া রয়ে গিয়েছিল সেটাও দিতে হতো। অনেক ভাবার পরে এইটা ঠিক করেছি।
-আরেকটা?
-হু।
মাহির এশার কানের কাছাকাছি গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-ইংরেজীতে ফার্স্ট নাইট, বাংলায় বাসর রাত বা ফুলসজ্জা যাই বলিস একটা বললেই হলো সেই রাতে যে বউকে গিফট দিতে হয় সেইটা। আমি তো সেইদিন তোকে কিছু দেইনি। বলতে পারিস সিচুয়েশন তেমন ছিল না তাই দেওয়া হয়নি।
এশা চোখ গরম করে তাকায় মাহির তাকে ছেড়ে হেসে এগিয়ে গিয়ে খাবার বাড়ে। ইশারায় ডাকলে এশাও এগিয়ে যায়। এশাকে বসিয়ে দিয়ে মাহির তার পাশে বসে। এশা প্রশ্ন করে,
-আমার প্লেট কোথায়?
-এই তো।
-ওটা তো তোমার।
মাহির মুচকি হেসে উত্তরে বলে,
-একই প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে বুঝলি?
-হু।
এশা চুপটি করে বসে থাকে৷ মাহির তাকে খাইয়ে দেয়। খাওয়ার সময় মাহির প্রশ্ন করে,
-বলছিলাম কী ভালোবাসা বাড়ার প্রসেস তো শুরু করেছি তবে এটা তো জানাই হলো না যে ভালোবাসা আছে কি-না?
এশা মুখটা ভার করে প্রশ্ন করে,
-নেই?
-সে তো তুই জানবি। আচ্ছা বল না আছে?
মাহিরের এমন কথায় এশা খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকে। খাবার নামছে না তার গলা দিয়ে। মাহির এইভাবে কেনো বলছে? সরাসরি কেনো বলছে না তার মনে কী আছে! মাহির এশার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে তার মনের অবস্থা। এশার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
-আমি শুধু জানতে চেয়েছি তোর মনে কী আছে? যদিও আমি বুঝি, কী করে জানিস?
এশা দেখে মাহিরকে। মাহির এশার দৃষ্টির অর্থ বোঝে। সে জানতে চাইছে কী করে? মাহির উত্তর দিতে প্রস্তুতি নেয়।

continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here