মনময়ূরী,৩১,৩২

0
1826

মনময়ূরী,৩১,৩২
Anamika

সেদিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরি আমি। দিন থেকে রাত হয়েছিল সাথে তারিখটাও পাল্টে গিয়েছিল। ঘুম হয়নি আমার, অনেক অনেক অনেক চেষ্টা করেও ঘুমোতে পারিনি। আমার মনে হয় জীবনে প্রথমবার সেইদিন আমি সূর্যোদয় দেখেছিলাম। আমার জীবনের সূর্যাস্তের পরে পৃথিবীর প্রথম সূর্যোদয় দেখার মানেটা বুঝিনি আমি। ধরে নিয়েছিলাম এই বুঝি নতুন করে আবারও ভাবার সময় হলো। আমার ভাবনা সত্যি হলো তার ঠিক দু’দিন পরেই যখন তোকে নিতে গেলাম। তোর মায়ে মোচ এসেছিল সেইদিন। আমি আবারও ভাবলাম না একটা দিন নাহয় নেগেটিভ রেজাল্ট বেরোলো হতে পারে আরেকটা চেষ্টা পজিটিভ কিছু দেবে আমায়। ভেবে নিলাম সেদিন আসার সময় সবকিছু বলবো আমি তোমায়। কিন্তু গিয়ে দেখলাম তোমার জীবনে তো আগে থেকেই কারো অস্তিত্ব রয়েছে আমার আর জায়গা হবে কী করে? অবাক হয়েছিলাম কখনো ভাবতে পারিনি ইভেন তোমায় দেখে মনে হয়নি তুমি কারো সাথে রিলেশনে আছো বা থাকতে পারো। কষ্টও পেয়েছিলাম। এই ভয়েই তো আমি তোমার সামনে যেতে চাইতাম না। তবে সেইদিন একটা বিষয় আমি সিওর ছিলাম আমার আর মিথ্যে আশা নিয়ে বাঁচতে হবে না। আমি আর ভাববো না। কিন্তু মনের উপর আর কারো জোর কী চলে! পালাতে চাইলাম অনেক দূরে। এসেও গেলাম। আর ফিরতে চাইনি আমি। কখনোই ফেরার ইচ্ছে ছিল না। একবার গিয়েছিলাম তারপর তিন বছর আর যাইনি। যেতামও না যদি না চাচ্চু এতোটা ইনসিস্ট করতো। গিয়ে যে এমন কিছু হবে তাও ভাবিনি আমি। আমাদের বিয়ে হলো। ভেতর থেকে খুশির অনুভূতি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু আমি কোথাও না কোথাও তোমার মনে কী চলছে, ইভান কোথায়, তুমি ইভান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যাও কেনো; এসব ভেবে যাচ্ছিলাম।

আমি তোমায় তখনও ভালোবেসেছি এখনও ভালোবাসি। আর আমি বিশ্বাস করি এতোগুলো বছরে যখন চেষ্টা করেও তোমায় মন থেকে সরাতে পারিনি তখন সামনে গিয়েও পারবো না, কেনো না তখন তো চেষ্টাও থাকবে না সরানোর। যদি কোনো চেষ্টা থাকে তবে সেটা থাকবে আকড়ে ধরে রাখার। আর কিছুই আমি চাই না, কিছুই না। আমি এসব কথা বলতাম না। কখনোই বলতাম না। পাস্ট অনেকটা সময় জড়তার সৃষ্টি করে থাকে তাই যতটা সম্ভব হয়েছে আমি এই বিষয়ে না বলার চেষ্টা করে এসেছি। তবে আজ বলতে হলো। কেনো জানো? তোমার জন্য। তোমার মনে যেই একটা সন্দেহের বীজ তৈরি হয়েছে সেটা যেনো জড় ছড়িয়ে দিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে না পারে। সেই বীজ এখনই নষ্ট করার প্রয়োজন ছিল। এশা আমি তোমায় ভালোবাসি এটা যেমন সত্য, আমার কাছে নিহার জায়গাটা ওই বন্ধুত্ব অবধিই সীমিত সেটাও তেমনই সত্য। এখন তুমি যেমন বললে আমায় তেমন হতেই পারে, হয়তো তার মনে কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু থাকতে পারে কিন্তু আমি সেসবের কিছুই জানি না। হয়তো আমি সেইভাবে খেয়াল করিনি বলেই জানতে পারিনি। আমি আসলেই জানি না কার মনে কী আছে, জানার ইচ্ছেও নেই। কারো মনে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি হলেও আমার কী আর তোমারই বা কী? তুমি অন্যের অনুভূতি নিয়ে আমায় জাজ করবে কেনো? তোমার যদি আমাকে জাজ করারই হয় তবে আমার অনুভূতির প্রেক্ষিতে করো। আর আমার অনুভূতি কী সেটা তোমার থেকে ভালো করে কেউই জানতে পারে না বলে আমার বিশ্বাস। এশা মাত্র একটা বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের এখনই এমন হলে বাকি জীবনটা কেমন হবে বলতে পারো আমায়? সম্পর্কে ভালোবাসা থাকলেই হয় না এশা। তুমি একজনকে শত ভালো বাসো কিন্তু বিশ্বাসের বিন্দুও যদি তোমার মনে তার প্রতি না থেকে থাকে তবে সেই ভালোবাসার কোনো মূল্যই আর থাকে না। যেমন টাটকা সবজি সকলে টাকা দিয়ে কিনে নেয় আর পঁচা সবজি ফেলে দেয়। ওটা মাগনা দিলেও কেউ নিতে চায় না। তেমনই বিশ্বাস না থাকলে ভালোবাসাটাও কোনো কাজে আসে না। আশা করি বুঝতে পেরেছ তুমি!

এশার চোখে জল তবে সে শান্ত। কান্নার কোনো আওয়াজ নেই আর না আছে ফোপাঁনোর আওয়াজ। সে একেবারেই শান্ত ভঙ্গিতে মাহিরের বুকে মাথা রাখে। মাহির তার মাথায় একটা হাত এশার মাথায় রাখে এবং অপর হাতটা ভাঁজ করে নিজের মাথার নিচে রেখে এশার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি বলছি না যে আমাদের মাঝে আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই। আমাদের মাঝে কোনো বিশ্বাস নেই। আছে তবে সেটা একেবারেই পাহলা সুতোর থেকেও নরম। একটু বাতাসেই ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই বলছি কখনো সেই বিশ্বাসটুকু নড়বড়ে হতে দিও না। দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে আর যদি সেইটুকু টিকিয়ে রাখতে পারা যায় তবে ধীরে ধীরে সুতোটা আরেকটা বিশ্বাসের সুতোর সাথে পেঁচিয়ে যাবে। এইভাবে একের পর এক সুতো একে অপরের সাথে জুড়তেই থাকবে। একসময় সেটা এতোটা শক্ত হবে যে সম্পর্কটা আর ভাঙতে পারবে না। কেউ চাইলেও পারবে না। মাঝে রাগ অভিমান থাকবে তবে সেটা নিজের মাঝে না রেখে দু’জনে একসাথে বসে একে অপরের পক্ষ রাখতে হবে। একে অপরকে বুঝতে হবে। তবেই না সম্পর্কটা বেস্টের থেকেও বেস্ট সম্পর্কে রূপান্তরিত হবে।
মাহির থেমে যায়। মাথার নিচে থেকে হাতটা বের করে এনে এশার গাল টেনে দিয়ে বলে,
-আমার বউটা বুঝেছে?
এশা যেভাবে ছিল ঠিক সেইভাবে থেকেই বলে,
-হু।
ওকে দেখে বোঝা যায় ও কিছু একটা ভাবছে। ওকে সেই ভাবনা থেকে বের করতে মাহির বলে,
-বিশ্বাস করতে হবে বলেছি মানে এই নয় যে অন্ধবিশ্বাস করে বসবে। পুরুষ মানুষ বড্ড বেসামাল কেউ কেউ সেটা ওভারকাম করতে পারে কেউ কেউ সেটা পারে না। আমার মাঝে মাঝে তোর জন্য চিন্তা হয় জানিস তো!
-কেনো?
-তোর বরটাও বড্ড বেসামাল টাইপের।
এশা রেগে তাকায় তারপর আবারও মাহিরের বুকে মাথা রেখে বলে,
-নারী পুরুষ বলতে আলাদা আলাদা করে কিছুই বলতে হবে না। সকলেই সমান তবে তুই যে বললে কেউ পারে নিজেকে সামলে নিতে কেউ পারে না। এখানেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার মনে তার পার্টনারের প্রতি ভালোবাসা থাকবে সে কখনো বিশ্বাস ভাঙবে না। কখনো না। দু’দিনের মোহ কখনোই ভালোবাসাকে হার মানাতে পারবে না যদি সেই মুহুর্তে মানুষ একবার তার সাথে জড়িত মানুষটা কথা ভাবে।
-যাক এইটুকু বুঝলেই চলবে। এবার ঘুমোও।
-হুম।

এশার ঘুম ভেঙে যায় সকাল সকাল সকাল। দেরিতে ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠলে শরীরটা একটু খারাপ লাগে। লাগাটাই স্বাভাবিক। তবুও আজ যেনো কোনো কিছুই মনে হচ্ছে না, একেবারে ফুরফুরে লাগছে। হয়তো ঘুমটা শান্তির ঘুম তাই। মাহিরের দিকে দেখে সে। মুখটা দেখতেই মিষ্টি একটা হাসি এমনিতেই ঠোঁটে ভেসে ওঠে। কাল রাতের কথাগুলো মনে হতেই মন খারাপ হয় এই ভেবে যে কতগুলো বছর মাহির ভালোবেসে যন্ত্রণা পেয়েছে তবে আবার ভালোও লাগে মাহিরের পরের কথাগুলো মনে হলে। ওর কথাগুলোর মাঝে অন্যরকম এক ভালোলাগা মিশে ছিল। কত সুন্দর করে বোঝালো ওকে। যে মানুষটা সম্পর্ককে এতোটা ভালোভাবে বোঝে তার সাথে থেকে সারাজীবনে কোনো কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই মানুষটা তার এবং তারই। ইশ এতোটা বোকামি কী করে করলো সে! রাতে ওইভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। একেবারেই ঠিক হয়নি। মাহির নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে। সে যা গেছে তা গেছে এরপর থেকে শুধু ভালোবাসা থাকবে আর সেই ভালোবাসায় থাকবে বিশ্বাস, থাকবে না কোনো প্রকার সন্দেহ। আবার নিহার কথা মনে হতেই এশার খারাপ লাগে। ওর ওইভাবে কথা বলাটা স্বাভাবিক ছিল। ওর কথা শুনলে স্পষ্ট বোঝা যায় ও ভালোবাসে মাহিরকে। আর কাউকে ভালোবেসে তাকে অন্য একজনের পাশে দেখতে সে কেনো কেউই চাইবে না। এমনকি এশাও না। তবে এশা চেষ্টা করবে মাহিরের সেই বন্ধু যার জন্য মাহির একসাথে আরও কয়েকজন বন্ধু পেয়েছিল, সেই সময়ে যখন মাহিরের পাশে কারো থাকাটা খুব প্রয়োজন ছিল; সেই বন্ধু যেনো বন্ধু হয়ে সবসময় রয়ে যায়।

তিন দিন পরে একদিন নিহা এসে হাজির হয় মাহিরের ফ্ল্যাটে। এশা তখনও বাইরে। নিহা’কে দেখে মাহির কিছু বলে না। নিহাই বলে….

continued….

Anamika
#মনময়ূরী
৩২.

মাহির নিহার সামনে বসে আছে। সে বলেনি এশার বলা কথাগুলো তবে নিহাকে দেখছে আর মেলানোর চেষ্টা করছে। কিছু প্রশ্ন আছে মনের মাঝে তবুও সেগুলোর উত্তর চাইতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে প্রশ্ন করলেই এতো দিনের বন্ধুত্বের উপর প্রভাব পড়বে। সে চুপ করেই থাকে। নিহাও চুপ। নিরবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝেই। মাহির কফির কাপটা আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। নিহাও বুঝে উঠতে পারছে না আসলে কী হচ্ছে! তার কী বলা উচিত, কী করা উচিত। কিছুই বুঝে আসে না তার। কিন্তু কথা তো বলতে হবে। এইভাবে বসে থাকলে তো শুধু সময়ই যাবে বাকি সবকিছু থমকে রবে। সে বলে,
-কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মাহির।
মাহির ওর কথা শুনে কাপটা তুলে একবারেই পুরোটা শেষ করে দেয় তারপর নিহার দিকে তাকায়। ওর কফির কাপটাও এখনও ভরা। মাহির বলে,
-এই যে শেষ। কিন্তু তুইও তো খাচ্ছিস না।
-আমার ঠান্ডা কফি ভালো লাগে।
-তবে কোল্ড কফি অর্ডার দিলেই পারতি।
-আমার কথার অর্থ এই গরমটাই ঠান্ডা করে খেতে ভালো লাগে।
-ঠান্ডা হয়ে গেছে তো, মানে এই মাত্র আমি খেলাম তাই বুঝতে পারছি।
নিহাও কফি শেষ করলো তবে মাহিরের মতো একবারে নয়। সে ধীরে ধীরে খেলো। তারপর মাহিরকে বললো,
-আজ তবে যাওয়া যাক।
-হুম।
মাহির বিল পে করে উঠে দাঁড়ায় তারপর দু’জনে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করে। মাহির প্রশ্ন করে,
-তোর বোনের মেয়ে এখন কেমন আছে?
-ভালো। কালই অপারেট করা হবে। এইদিকে আপু চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আসলে দুলাভাইয়ের পরে ওই মেয়ে দুটোই তো সম্বল এখন।
-ডোন্ট ওয়ারি কোনো প্রয়োজন হলে সাথে সাথে একটা ফোন কল দিবি বান্দা হাজির হয়ে যাবে।
-সে আর বলতে।
-আচ্ছা আজ আসি, বাসায় ফিরতে হবে। আমি অফিসের পরে বাইরে থাকি না খুব একটা। আজ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল।
ঘড়ি দেখে বললো মাহির। নিহা সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এলো। বললো,
-মাহির।
-কিছু বলবি?
-আসলে এশা’কে সরি বলার ছিল। ও আমার সাথে রুড ছিল ঠিকই তবে শুরুতে আমিই রুডলি বিহেভ করেছিলাম।
-সরি ফিল করছিস ব্যস আর কিছু করার প্রয়োজন নেই। ওর তোর উপর কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই। আসলে দোষটা আমারই ছিল। প্রথমবার দেখা হওয়ার সময় আমার তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে হলো তারপর প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথাও হয়নি তোর সাথে। ওদিকে বাবার ওইরকম কন্ডিশন থাকায় দেশে ফিরতে হলো। আসলে আমি ভাবিওনি যে তুই আমায় না পেয়ে বাসায় যাবি এন্ড এশাকে দেখে…
-এশা তোর সাথে থাকে কতদিন?
-একচুয়ালি নিহা, এশা ইজ মাই ওয়াইফ। বিয়েটা আনফরচুনেট ছিল বাট নাও উই আর টুগেদার ফর এভার।
-ওহ।
নিহার ছোট্ট উত্তর। মাহির তার দিকে দেখলো না। কে জানে হয়তো ওর চেহারা দেখলে বোঝা যেতো ও কষ্ট পাচ্ছে তাই দেখতে ইচ্ছে করলো না। যতদিন জানা ছিল না নিহার মনে বন্ধুত্ব ব্যতীত অন্য কোনো অনুভূতি আছে ততদিন অবধি ঠিক ছিল কিন্তু এখন কেমন যেনো একটা জড়তা এসে গেছে মাঝখানে।

নিহা হেসে মাহিরকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে সেকেন্ডের মাঝে আবার ছেড়ে দিয়ে বললো,
-কংগ্রাচুলেশনস মাহির। তুই আগে জানাবি না আমায়। ইশ তোর বিয়েটা মিস করে দিলাম তবে।
-আসলে তেমন কিছুই নয়, বিয়ের কিছু সময় আগে অবধি আমিও জানতাম না যে আমার বিয়ে হবে। এশা’কে আমার স্ত্রী রূপে পাবো।
-তবে তোর ভাগ্যটা মানতেই হবে বস। যাকে চেয়ে এসেছিস তাকেই পেয়েছিস।
-তা আর বলতে।
-ওকে জানিয়েছিস?
-কী?
-এবাউট ইউর ফিলিংস যা বছরের পর বছর মনে লুকিয়ে নিয়ে ঘুরছিস।
-হুম।
-সাব্বাশ। আচ্ছা বাসায় যা এখন, আগে বললে তোর এতোটা সময় নিতাম না। মেয়েরা গার্লফ্রেন্ড বা বউ হয়ে গেলে জেলাস ম্যাটেরিয়াল হয়ে যায় বুঝলি সাথে সন্দেহ ফ্রী।
-মজা করিস না।
-আচ্ছা করছি না। এখন তবে আসি।
-আচ্ছা।
-আরেকটা কথা।
-কী?
-এশা’কে আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিস। আমি নিজে থেকেই জানাতাম কন্তু বললাম যে কালই অপারেশন।
-ইট’স ওকে। এসব তো যে কোনো সময় বলা সম্ভব কিন্তু মানুষের জীবন সে তো একটাই। তাই যেখানে তোর থাকা প্রয়োজন সেইখানেই যাবি। তারপর কিছুদিন পরে না-হয় দেখা করা যাবে।
দু’জনে বিদায় নিয়ে চলে গেল যে যার পথে। শেষের দিকে কথা বলার সময় নিহা যদি স্বাভাবিক কথা বলেছে তবে তার চেহারায় অস্বাভাবিক একটা ভাব ছিল স্পষ্ট।

তিন দিন পরে নিহা এসে হাজির হয় মাহিরের ফ্ল্যাটে। এশা তখনও বাইরে। নিহা’কে দেখে মাহির কিছু বলে না। নিহাই বলে,
-না বলে এসেছি এইজন্য আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি।
-পাগল হয়েছিস আয় বোস।
নিহা বসে প্রশ্ন করে,
-এশা বাড়ি নেই?
-না, চলেই আসবে। আসলে আজ একটু শরীর খারাপ লাগছে তাই অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছি। তবে ফিরেও শান্তি নেই অফিসে বসে কাজ করতে না পারি কিন্তু বাসায় শুয়ে কাজ করতেই হবে। বসের অর্ডার। সেটাই করছিলাম এতক্ষণ।
-ওহ। তবে আমি তোর রেস্ট কম কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফেললাম
-বলা যায়।
-তবে তো এই অপরাধের শাস্তি পেতেই হয়।
-প্রথমবার শুনছি অপরাধী নিজেই শাস্তি চাইছে।
নিহা হাসে তবে আজকের হাসির মাঝে জড়তা আছে। মন থেকে আসছে না সেই হাসি। মাহির বুঝতে পেরে বলে,
-কিছু হয়েছে নিহা? তোর বোনের মেয়ের অপারেশন ছিল তাই না! তুই আমায় ফোনও দেসনি। কী হয়েছে? কোনো নেগেটিভ বিষয়!
-না, তেমন কিছুই হয়নি। সে এখন ভালো আছে। আর কোনো ভয় নেই।
-তোর চেরাহা তো অন্য কথা বলছে।
-সেটা অন্য কারণে।
-কী কারণে!
-এশা কতক্ষণে আসবে মাহির?
-এইতো খুব বেশি হলে ১৫মিনিটের মাঝেই চলে আসবে।
আর ১৫মিনিট। কাউন্ট ডাউন শুরু। এক ১৫ মিনিটের কাউন্ট ডাউন সেইদিন হয়েছিলো। অপেক্ষা মাহির করেছিল। আজ আবারও সেই ১৫ মিনিট। অপেক্ষা নিহা করছে এইবার। সাথে ভয়ও বাড়ছে। ঘামছে সে রীতিমতো। গলাটা তার শুকিয়ে আসছে। সে শুকনো গলায় বলে,
-এক গ্লাস পানি দিতে পারবি?
এইভাবে কথা বলা দেখে মাহিরের কাছে ঠিক মনে হলো না। নিহা আসলে কেনো এইভাবে কথা বলছে, কেনো এতো ঘামছে? মাহিরের মনে প্রশ্ন জাগে। কিন্তু এখন চিন্তা করলে চলবে না আগে পানিটা এনে দিতে হবে।
মাহির পানি এনে দিলো। নিহা পানিটা হাতে নিলো। হাতটা তার কাঁপছে। সেই কাঁপা হাতেই পানির গ্লাসে চুমুক দিলো সে। কাঁপা-কাঁপির কারণে কিছুটা পানি বাইরে পড়লো। থুতনি বেয়ে গলা বেয়ে নেমে এসে জামাটা ভিজিয়ে দিলো। সে হাত দিয়ে মুছে নিলো সেটা।

অপেক্ষার অবসান ঘটে এশা আসার পরে। নিহা’কে দেখতে পেয়ে আগে সে এগিয়ে যায় কিন্তু মাহিরের ধমক শুনে থেমে যায়। তারপর ঘরে গিয়ে পোশাক ছেড়ে পাল্টে ফেলে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। মাহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দুই হাত দুই দিকে ছাড়িয়ে প্রশ্ন করে,
-এবার ঠিক আছে?
মাহির থুতনিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঠোঁট ভাজ করে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-চুলগুলো অমন এলোমেলো কেনো?
-ধ্যাত, ঠিকই তো আছে।
-নিজেকে গোছাতে শেখ নইলে পরে পস্তাবি।
-কী করবে শুনি?
-পরে বলবো।
বলে মাহির নিহার দিকে ইশারা করে এশা সেইদিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে,
-কেমন আছেন আপু?
-ভালো। তুমি?
-আমিও।
-কখন এলেন?
-আমার আসা সম্ভবত পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট হয়েছে।
-এত্ত আগে!
অবাক হয় এশা তারপর মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমায় আগে বলোনি কেনো, একটু আগে আসার চেষ্টা করতাম।
এশার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,
-আমি ওকে না জানিয়েই এসেছি। আসার তো ইচ্ছে ছিল পরশুই। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে হয়ে ওঠেনি। আমি ভাবলাম চলো আরও কিছু সময় পাওয়া গেল নিজেকে তৈরি করার।
এশা আঁচ করতে পেরে মাহিরকে বললো,
-তুমি এইভাবে খালি বসিয়ে রেখেছ আপুকে তোমার না ফ্রেন্ড তো চা কফি কিছু বানিয়ে দিতে পারোনি।
-আমি ভাবলাম তুই থাকতে আমি কেনো করবো?
-আমি তখন ছিলাম না আর এখন টায়ার্ড লাগছে। প্লিজ আমায় জুস এনে দেবে?
-আনছি।
-ওকে, থ্যাংক ইউ।
মাহির চলে যেতেই নিহা বলে,
-তুমি ওকে ইচ্ছে করে পাঠিয়েছ বুঝি আমি। মাহির যখন জানালো পাস্ট সম্পর্কে ও তোমাকে বলেছে তখন আন্দাজ করতে পেরেছিলাম সবটা বলে দেওয়ার পরেও মাহির কেনো আমার সামনে স্বাভাবিক আছে। বুঝতে পেরেছি আমি, মাহির সবটা খুলে বললেও তুমি কিছু বলোনি। কেনো না বললে মাহির আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দূরে থাক আমার সাথে ফোনে কথা বলাটাও এলাও করতো না।
-যা গেছে তা আবার নতুন করে তুলে আনার প্রয়োজন কী আপু? এতে শুধু আপনাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। আর আমি সেটা চাই না।
-এটা তুমি চাও না কিন্তু মাহির তোমার বিষয়ে ভুল জেনে রাখুক সেইটা চাও? কী যেনো নাম ছেলেটার যাকে মাহির তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড বলে জানে?
-ইভান।
-ছেলেটার কী আদৌ তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল?
এশা নিহার দিকে তাকায়। নিহা আজ একেবারে তৈরি হয়েই এসেছে।

continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here