মনময়ূরী ৩৪ শেষ

0
2506

মনময়ূরী
৩৪ শেষ

পরেরদিন আমি এশার কলেজে যাই। জানতাম ও কলেজে আসবে। তুই বাড়িতে ছিলিস যে, ও নিশ্চয়ই সুযোগ খুঁজবে তোর থেকে দূরে থাকার আর এর সবথেকে ভালো পথ ছিল কলেজে যাওয়া। আমি গিয়ে দেখলাম ও আছে। ক্লাস চলছিল তবে ও ক্যামপাসে বসে ছিল। আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ও আমাকে দেখে সালাম দিয়ে জানতে চায় আমি কেমন আছি। আমি উত্তরে বলি, ‘খুব ভালো আছি।’ ও আমাকে প্রশ্ন করে, ‘আপু আপনি এইখানে কোনো প্রয়োজন ছিল!’ আমি ওকে বলেছিলাম, ‘শোনো এশা আমায় আর আপু ডাকবে না।’ ওর মুখভঙ্গি দেখে বুঝেছিলাম ও আমার কথা অর্থ বুঝতে পেরেছে তারপরেও আমি বলি, ‘গতকাল মাহির তোমায় ডেকেছিল না? বলেছিল সারপ্রাইজ আছে। আসলে ওর সারপ্রাইজটা ছিলাম আমি। তোমার উড বি ভাবি ননদিনী।’ বলেই ওর গাল টিপে দিয়েছিলাম। ওর মুখটা আগে থেকেই কালো করে রেখেছিল আমি ওই কথা বলাতে আরও কালো হয়ে যায়। তবুও ও নিজেকে সামলে হেসে আমার সাথে কথা বলতে থাকে। আমি ওইখাবে কেনো গিয়েছিলাম সেই কথা উঠতেই ওকে বলি তোর মা’কে ইমপ্রেস করার জন্য আমার ওর হেল্প প্রয়োজন। ও মন না চাইতেও রাজি হয়েছিল হেল্প করতে।

তার পরের দিনটা ভালোই গেল কিন্তু এর পরের দিন তোকে ফোন দিতেই তুই আমায় জানালি এশাকে আনতে যাচ্ছিস কলেজে। ওকে প্রপোজ করবি আজই তাতে ওর যা সিদ্ধান্ত হবে মেনে নিবি তুই। আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমার মাথায় তখন একটা কথাই ঘুরছিল যে আমার এতোকিছু করা সবটা বেকার হয়ে গেল। সেইদিন সারাটা দিন চিন্তায় কাটলো আমার। তুইও ফোন দেসনি তাই মনে হলো যে তুই সবটা জেনে গিয়েছিস। কিন্তু চিন্তা দূর হয় তোর ফোন কলে। তুই সেদিন নিজের কষ্ট শেয়ার করেছিলি আমার সাথে। এশা রিলেশনে আছে সেইটা জানাস। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। পরে ভেবে দেখলাম বয়সটা অল্প তার উপর যাকে ভালোবাসে সে অন্য কারো সাথে আছে। একটা জেদ তো থাকবেই মনে তাই হয়তো যাকে তাকে দেখিয়ে বলে দিয়েছে সে ওর বয়ফ্রেন্ড।

এতোকিছুর পরেও যখন আমার প্রতি তোর মনে কোনো অনুভূতি জাগলো না তখন খুব হতাশ হয়েছিলাম আমি। এরপর তুই চলে এলি কন্ট্যাক্ট বন্ধ হয়ে গেল। ডিপ্রেশড হয়ে গিয়েছিলাম পরে সময়ের সাথে ঠিকও হয়ে যাই কিন্তু আবারও তুই সামনে এলি। আবারও তোকে দেখলাম। মন আবারও নিজেকে আশার বাঁধনে বাঁধলো ঠিক তখন এশাকে তোরই ফ্ল্যাটে দেখে মাথাটা ঠিক রাখতে পারিনি। খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছিলাম ওর সাথে। পরে তুই যখন আমার সাথে কথা বললি কফি শপ থেকে বেরিয়ে তখন বুঝেছিলাম তুই এশাকে সবটা জানালেও ও তোকে জানায়নি। ইভেন এই মেয়েটা তোকে জুস আনার বাহানায় পাঠিয়ে আমাকে বোঝাচ্ছিল যেনো আমি কিছু না বলি। বন্ধুত্ব নষ্ট হবে এতে। কিন্তু আমি আর নিজেকে ভুল পথ ধরে এগিয়ে নিতে চাই না। আমার মনে হলো সবটা এবার বলতেই হবে তাই এসেছি। আমি জানি না তুই কী ভাবছিস আমাকে নিয়ে কিন্তু আমি এই মুহুর্তে এমন এক পরিস্থিতিতে আছি যে তোর দিকে চেয়ে দেখারও সাহসটুকু নেই। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস মাহির।

নিহা যেইভাবে ভেবেছিল সে সবটা বলে দিয়েছে মাহিরকে এবার যাওয়ার পালা। ওরা দুইজন তখনও স্তব্ধ বসে আছে সেই সুযোগে সেইখান থেকে বেরিয়ে যায় নিহা। আর মাহির-এশা ওরা স্তব্ধ চেয়ে রয়। অনেকটা সময় যায় পেরিয়ে মাহির উঠে দাঁড়ায়। একই জায়গায় একবার ঘোরাঘুরি করে এশার সামনে এসে বসে বলে,
-তোর কিছু বলার নেই?
এশা মাথা নিচু করে রেখেছে। মাহির রেগে গিয়ে একটা গ্লাস তুলে আছাড় মারে। তারপর বলে,
-কাঁচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে ঘরে আয়। আর হ্যা ভালো করে পরিষ্কার করবি প্রয়োজনে টর্চ নিয়ে খুঁজে খুঁজে টুকরোগুলো তুলবি। একটা ছোট্ট টুকরোও যদি থেকেছে তবে আরোও একটা গ্লাস ভাঙব।
মাহির ঘরে চলে যায়। এশা টুকরো টকরো কাঁচগুলোর দিকে দেখে। মাহিরের মনে এখন কী চলছে ওর জানা নেই। তবুও কাঁচের টুকরো গুলো না তুলেই ও ঘরে যায়। মাহির বিছানায় বসে। হাত দু’টো দুই সাইডে ভর দিয়ে রাখা মাথাটা নিচু করে রেখেছে সে। এশা এগিয়ে যায়, সামনে দাঁড়ায়। এশার পা দেখতে পায় মাহির আর দেখতে পেয়েই মাথা তুলে তাকায়। এশা দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন করে মাহির,
-কাঁচ পরিষ্কার করা শেষ?
এশা মাথা ডান পাশে একবার বাঁ পাশে একবার নিয়ে যায়। যার অর্থ দাঁড়ায় ও পরিষ্কার করেনি। মাহির বিরক্তি নিয়ে উঠে বাইরে আসে তারপর কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ফিরে যায় ঘরে। এশার মাথা নামানো। সে বলে,
-মাথা নিচু করে থাকলে হবে না। সোজা হয়ে দাঁড়া।
এশা তাই করলো। মাহির নিজের চুলগুলো টেনে তারপর এশার দুই বাহু ধরে তাকে ঝাঁকিয়ে বলে,
-এতো পন্ডিতি করতে কে বলেছিল তোকে। আগের কথা আমি বাদই দিলাম, বাদ দিলাম বলতে কিছু সময়ের জন্য বাদ দিলাম এখন আমায় এইটা বল তোকে যখন আমি সবটা বললাম তখন তুই চুপ রইলি কেনো?
এশা চুপ করেই থাকে মাহির ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
-স্পিক আপ এশা।
-তুমি সবকিছু বলার আগে তোমাদের বন্ধুত্বের গল্প শোনালে। এতোটা বিশ্বাস করো তুমি তোমার বন্ধুদের তাদের মধ্যেই কেউ তোমার কষ্টের কারণ সেটা তুমি জানো আমি চাইনি। আর তখন সবটা জানার পরে আমার এই বিশ্বাসটা ছিল যে তুমি আমায় ছাড়বে কারো জন্যই না। ইভেন আমি যেতে চাইলেও আমায় বেঁধে রাখবে তো সবকিছুই যখন ঠিক আছে তো আমি চেয়েছিলাম তোমরা বন্ধু হয়েই থাকো সবসময়।
-বাহ! মহান হতে আসছেন উনি। আর ইভানের কাহিনীটা কী?
-জেদের বশে বলেছিলাম যে ইভান আমার বয়ফ্রেন্ড। আসলে উনি আমাদের কলেজেরই আমার সিনিয়র ছিলেন। আমাকে অনেক হেল্পও করতেন।
-বাহ। আমার আশেপাশে কতো কতো অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন আর আমিই জানতাম না।
-আমি সরি।
-রাখ তোর সরি। তোকে শাস্তি তো পেতেই হবে। আজকে ডিনার তুই একা করবি আমি দেখবো শুধু তারপর দু’জনে এসে শুয়ে পড়বো। আমাকে না খাইয়ে তোর একা একা খেতে যে খুব কষ্ট হবে আমি জানি। এটাই তোর শাস্তি।

মাহির ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এশাকে সে নিজেই ইভানের কথা জিজ্ঞাসা করতো কারণটা ছিল ইভান নিজেই। দেশে ফেরার পরে বাবার জন্য ছুঁটোছুঁটি করতেই সময় পেরিয়ে যায় মাহিরের। এরই মাঝে একদিন ফার্মেসী থেকে মেডিসিন নিতে গেলে ইভানের সাথে দেখা হয়। সেও এসেছিল কিছু মেডিসিন নিতে। ইভান মাহিরকে দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও মাহির চিনে ফেলে। মাহির এগিয়ে যায়। এমনিতেই তার অবস্থা, ভালো মন্দ জানতে চায়। আর এইসব জানতে গিয়েই নিজের পরিচয় দিতে হয়। এরপরে আর মাহিরকে কিছু বলতে হয়নি। ইভান নিজে থেকেই এশার মিথ্যে সম্পর্কে বলে তবে কারণটা তার জানা ছিল না তাই মাহিরের মনে প্রশ্ন রয়েই যায়। এশা’কে প্রশ্ন করতে চায় সে তবে সেই সুযোগটা আসছিলোই না। আর আজ এইভাবে এইসব জানতে পারবে সে ভাবতে পারেনি।

কথা অনুযায়ী মাহির এশার সামনে খাবার রেখে নিজে একপাশে বসে তাকে খেতে বলে। এশা ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওর এসব সহ্য হচ্ছে না। এ কেমন শাস্তি। মাহির না খেয়ে থাকবে! কেনো? শাস্তি তো অন্যভাবেও দেওয়া যায় তবে নিজেকে ক্ষুধার্ত রেখে অন্যকে শাস্তি দেওয়া এ আবার কেমন নিয়ম। এশাও খাবে না। কিছুতেই না। সে উঠে দাঁড়ায় তারপর খাবার হাতে নিয়ে অপরপাশে মাহিরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখের সামনে তুলে ধরে। মাহির দেখেও না দেখান ভান করে রয়। সে খাবে না। এশা না পেরে বলে,
-খাও না। একটুখানি খাও।
-আমি বলেছি না খাবো না।
-তুমি না খেলে আমি কী করে খাই?
-এই ঢং করবি না তো।
-খেয়ে নাও না। প্লিজ।
এশা কাঁদে। মাহিরের সহ্য হয় না তারপরেও সে শক্ত হয়ে বসে রয়। এশা আর অপেক্ষা করে না ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে এশা। গভীর রাতে কারো স্পর্শ অনুভূতি হতেই ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখে। মাহির তার দিকে চেয়ে বসে আছে পাশে। সে চোখ বুজে নেয় আবার। মাহির বলে,
-এশা ওঠো। খেয়ে নাও।
-আমি খাবো না। ইচ্ছে নেই।
-তবে কী আমায় না খাইয়ে রাখার প্ল্যান করেছ?
সাথে সাথে উঠে বসে এশা। উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে। মাহির তাকে খাইয়ে দেয় আর সে মাহিরকে। দু’জনের মাঝে এই সময়টা খুবই সেনসিটিভ কিন্তু সবটা তাদের একসাথে মিলেই সামলাতে হবে।

সময়ের সাথে সাথে সব ঘা শুকিয়ে যায় তবে কিছু কিছু রয়ে যায়। যা ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে রাখাটা সম্ভব কিন্তু মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এশা মাহির একসাথে সুখেই আছে বেশ তবে অতীতের নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে হলেই খারাপ লাগা ছেয়ে যায় আর সেই খারাপ লাগার ছায়া সরাতে ভালোবাসার সূর্য হয়ে রোদ ছড়ায় একে অপরের মাঝে। মাঝে নিহার সাথে কন্ট্যাক্ট করার চেষ্টা করেছিল ওরা কিন্তু পায়নি তাকে। সে নিজেথেকে হারিয়ে গেছে। আর যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কী আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব? ওরাও পায়নি।

একে অপরকে ভালোবাসার রঙে প্রতিনিয়ত নতুন করে রাঙিয়ে দেয় ওরা আর এইভাবে ক্যালেন্ডারের পাতা পাল্টে যায় সেই সাথে পাল্টে যায় ক্যালেন্ডারও। এশা দেশে ফিরে আসে। ওকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে মাহিরের বাবা। মাহির ফিরতে পারেনি। তার কিছু অফিসিয়াল কাজ বাকি সেগুলো সম্পন্ন হলেই ফিরে যেতে পারবে তার পরিবারের কাছে, তার এশার কাছে। অপেক্ষায় আছে তারা। একের পর এক দিন গুনে যাচ্ছে মাহিরের আশায়। সকলে দিন গুনলেও এশা প্রতিটি মুহুর্ত গুনতে থাকে। তার মন বসে না কিছুতেই। যত বার কথা হয় সে ততবারই প্রশ্ন করে, ‘কবে ফিরবে?’ প্রশ্ন যেমন একই উত্তরটাও একই আসে, একটাই তারিখ বার বার পুনরাবৃত্তি করে যায় মাহির। এরপর একদিন সেই তারিখ আসে। মাহির ফিরে আসে। মাস পেরিয়েছে মাহির ফিরেছে তবে সে এখনও কাজের আশায় রয়েছে।

রাতে ডিনারের সময় মাহিরের বাবা প্রশ্ন করেন,
-কী করবি কিছু ভেবেছিস?
-না বাবা এখনও তেমন কিছু ভাবিনি।
-এইভাবে থাকলে আর কতদিন চলবে?
-ছেলেটা খাচ্চে ওকে খেতে না দিয়ে কীসব শুরু করলো এই লোক!
মাহিরের মায়ের কথা শুনে উনি চুপ করলেও এশার বাবা এবার কথা বলে,
-মাহির।
-জি চাচ্চু।
-তোর তো বিজনেস সেন্স ভালোই নিজেই কিছু শুরু করছিস না কেনো?
ভাইয়ের সাথে তাল মেলান মাহিরের বাবা,
-হ্যা, আর প্রয়োজনে তো এশাকেও সাথে নিতে পারিস। আমার মতামত চাইলে এইটা খুব ভালো একটা পথ।
-সে নাহয় বুঝলাম বাবা কিন্তু শুরু করলাম বললেই তো হয়ে যায় না শুরু করতে বড় অংকের টাকা প্রয়োজন হয়।
-আহা, উঁচুতে গিয়ে শুরু করতে হবে কে বলেছে ছোট থেকেই করনা শুরু। আমরা আছি কীসের জন্যে?
-আচ্ছা বাবা সময় দাও ভেবে জানাবো তোমাদের।

চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে মাহির। এশা বিছানা ঠিক করতে করতে খেয়াল করছিল সেটা। খাবার টেবিলে সবার মাঝে কিছু বলেনি সে তবে এখন বলে,
-তুমি কী বাবার বলা কথাটা নিয়ে চিন্তা করছো?
-হুম।
-এই যে বিছানা রেডি এসো শুয়ে পড়ো তারপর কথা বলি।
এই বলে এশা বিছানায় উঠে বসে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে শোবে বলে হাতে নিতেই দেখে মাহির এসে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত এমন করে মাহির। সে ফোনটা রেখে মাহিরের মাথায় হাত রেখে চুল টেনে দিতে শুরু করে। অভ্যেস করে ফেলেছে এটা। এশা প্রশ্ন করে,
-কী ভাবলে?
-চাচ্চুর যেটা বললো সেটা মন্দ নয় তবে আমার চিন্তা একটাই যদি সফল হতে না পারি।
-আগে শুরু তো করে। কাজে হাত না দিয়েই তার ফলাফল ভেবে বসে আছো তাও আবার বিফল হওয়া! আরে বাবা ভাবতে হলে সফলতার কথা ভাবো। আর একটা কথা পরিবার তো পাশে আছেই তাই না বলো।
-হুম।
-এখন চিন্তা ছেড়ে ঘুমোও।
মাহির শুয়ে পড়ে এশাও পাশে শোয়। কিছুটা সময় যেতে মাহির বলে,
-ঘুমিয়ে পড়েছ?
-উহু।
এশা জেগে আছে বুঝতে পেরে সে একটু কাছে যায়। এশার উপর ঝুকে তাকিয়েই তাকে সে। অল্প আলোতে বেশ দেখাচ্ছে ওকে। এশা মাহিরের চাহনি দেখে হাসে। হাসতেই গাল ফুলে ওঠে এর আর সেইখানে চুমু খেয়ে বসে মাহির। এশার হাসি মুহুর্তেই হারিয়ে যায় আর সেই জায়গাটা দখল করে নেয় এক রাশ লজ্জা। এশা চোখ বুঁজতেই মাহিরকে খুব কাছে আবিষ্কার করে। আর কিছু ভেবে উঠতে পারার আগেই মাহির ঠোঁটের স্পর্শ পায় নিজ ঠোঁটে। মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে উঠে বসে সে। ভেবেছিল আজ হয়তো মাহির কোনোরকম দুষ্টুমি করবে না কিন্তু ঘটলো ভাবনার উল্টোটা।

মাহির ধাক্কা খেয়ে একটুখানি দূরে সরে যায় তারপর উঠে এসে এশার কানের কাছে মুখ রেখে বলে,
-বউ তুই কী লজ্জা পাচ্ছিস?
এশার রাগ হয় খুব রাগ হয়। এই মানুষটা নিজেই তাকে লজ্জা দেবে আবার এসে প্রশ্ন করবে লজ্জা পেয়েছে কি-না।
এশার উত্তর না পেয়ে মাহির বলে,
-চিন্তা নেই আজ জ্বালানোর প্ল্যান নেই। ঘুমো।
-তোমার উপর এতোটুকুও বিশ্বাস নেই আমার। আমি যাচ্ছি আমার ঘরে।
-তবে এইটা কার ঘর?
-এটাও আমার।
-তবে আমার কোনটা?
-তোমার কোনো ঘর ছিল বুঝি?
চিন্তিত ভঙ্গি করে গালে আঙুল দিয়ে বলে এশা। মাহির আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে সাথে এশাকেও টেনে শুইয়ে দেয়।

আরো দু’টো বছর কেটে গেছে। মাহির পরিবারের সহায়তায় নিজের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। শুরুতে কষ্ট হয় তবে একবার সেটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করার পরে আর থামেনি। চলছেই উপরে ওঠা। এশাও অনেকটা সাথ দিয়েছে মাহিরের তবে এখন ওর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মাহিরের মা। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এশা। আর কয়েক মাস পরেই ছোট্ট একটি প্রাণের জন্ম দেবে সে। যাকে সে এখন অনুভব করতে পারে। এই একটাই কারণ যার ফলে এশার কাজ করা এখন বন্ধ বাড়িতেই থাকছে সে। সকলে মিলে তার দেখাশোনায় সময় ব্যয় করছে। আর মাহির সে অপেক্ষায় আছে তার অংশর মুখটা দেখার জন্য। প্রতিদিন প্রশ্ন করে এশার কাছে, ‘ও কবে আসবে আমাদের কাছে?’ এশাও উত্তর দিয়ে বলে, ‘খুব শীঘ্রই।’ এই প্রশ্নের একদিন সমাপ্তি ঘটবে। সে আসবে। এরপর হয়তো আরো প্রশ্নের জন্ম নেবে মাহিরের মনে,
-ও কথা বলবে কখন?
-ওর দাঁত গুলো আসবে কখন?
-ও হাঁটবে কখন?
-আচ্ছা ও আমায় বাবা ডাকবে নাকি আব্বু? সে যাই ডাকুক কিন্তু কখন ডাকবে?
আর এই সব প্রশ্নের উত্তরে এশা বলবে,
-খুব শীঘ্রই।

“সমাপ্ত”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here