আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤ Part_9,10

0
2904

আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_9,10
Writer_মাহিয়া_মিতু
Part_9
?
?
আর এই একবছরে ফারহান বা মিতুর ওদের পরিবারের সঙ্গে কোনদিন দেখা ও হয় নি। তবে মিতুর সাথে ওর মার প্রায় কথা হয় কিন্তু বাবার সাথে হয় না।
এই এক বছরে মিতুর বাবা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কোন কথা বলেন না, সব সময় চুপচাপ থাকেন। আর বাড়িতে যেটুকু সময় থাকেন মিতুর ছবির দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন।
মিতুর মা অনেক দিন উনাকে মিতুর সাথে কথা বলার জন্য বলেছেন, কিন্তু উনি বলেন না, উনার মনে হয় উনি যেভাবে আছেন নিজেকে শক্ত করে এভাবে থাকতে পারবেন, কিন্তু মিতুর সাথে কথা বললে উনি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন না, কারণ উনার মেয়ে যে উনার প্রাণ।
কিন্তু উনি ও যে নিরুপায়, তার যে কিছু ই করার নেই এ ছাড়া তবে উনি মিতুর সাথে কথা না বললে ও ওর খোঁজ ঠিকই রাখেন, আর এটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দেন যে, তার মেয়ে নিজের ভালোবাসা কে আপন করে পেয়ে তো সুখি আছে। এটাই বা কম কিসে, উনি ও যে এটাই চায় যে মিতু খুশি থাকুক।
মিতু ও ফারহানের সাথে সত্যি ই খুব ভালো আছে। ফারহান ওর কথা রেখেছে, ও মিতুকে আজ অবধি কোনো কষ্টের আচ ও পেতে দেয় নি, ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে ওর জীবন।
কিন্তু কথায় বলে না বেশি সুখ বেশি দিন থাকে না। ওদের ও ঠিক তাই হয়েছে।
ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তে ফারহান খুব বড় না হলেও বেশ জমজমাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ও ওর সব বন্ধু সহ অফিসের স্টাফ দের ও ইনভাইট করে সাথে ও আরো একজন ইনভাইট করে যার সাথে ওদের কোম্পানির নতুন ডিল সাইন হয়েছে আর ফারহানের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ও তৈরি হয়েছে।
আর সেই বাক্তি হলো আর কে কোম্পানির মালিক রাজ খান। ফারহানেরই সমবয়সী, দেখতে ও সুন্দর, কিন্তু সভাব টা নোংরা টাইপ।
যাই হোক, সেইদিন অনুষ্ঠানে এসে মিতু কে দেখে ওর তো পাগল হয়ে যায় যায় অবস্থা। যদিও ফারহান কে ও এসব বুঝতে দেয় নি কিন্তু ও মনে মনে মিতু কে কিভাবে নিজের করা যায়, ওখান থেকে ফিরে আসার পর থেকে ও সেই ছক তৈরি করতে থাকে। ও সেদিন লুকিয়ে মিতুর কয়েকটা ছবি ও তুলে নেয়।
সেদিনের পর থেকে মিতু যেন ওর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, সারাক্ষণ শুধু মিতুর কথায় ভাবে।
সেদিন ও ওর অফিসে নিজের কেবিনে বসে মিতুর ছবি বের করে দেখছিলো আর ওর কথা ভাবছিলো, ঠিক সেই সময় ওর কেবিনে একটা মেয়ে আসে আর সেই মেয়েটি আর কেউ নয়, সে হলো টিনা, ( হুম টিনার সাথে রাজের খুব ভালো সম্পর্ক, যেহেতু দুজনই একই মানসিকতার মানুষ, আর কোন এক ক্ষেত্র বিশেষে রাজের সাথে টিনার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়, আর তারপর থেকেই ওরা খুব ইজিলি একে অপরের সাথে মেলামেশা করে।)
আর আজ টিনা রাজের অফিসে এসে ওর কেবিনে যেয় দেখে রাজ একধ্যানে ফোনের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে, টিনা যে ওর কেবিনে ঢুকেছে সেদিকে ওর কোনে খেয়াল ই নেই।
তাই টিনা ও রাজ কে না ডেকে কৌতুহল বসতো ও কি এতো দেখছে দেখার জন্য রাজের পিছনে যেয়ে ওর হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নেয়, এবার রাজের হুস হয়৷ ও টিনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে
——- আরে টিনা তুমি কখন এলে
——- এসেছি অনেক সময় কিন্তু তোমার তো অন্য দিকে কোনো খেয়ালই নেই ফোনের মধ্যে ঢুকে গেছো, তাই তোমার ফোন টা কেড়ে নিলাম। তা মশাই এবার আমি ও একটু দেখি যে তুমি ফোনে এতো কি দেখাতে বিভোর ছিলে দেখি।
বলে টিনা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে মিতুর ছবি দেখে বড় শড়ো একটা শক খায়।
——- আরে মিতু!!! তুমি মিতুর ছবি দেখছিলে, এর ছবি তুমি কোথায় পেলে রাজ।
——- মানে, তুমি ও মিতুকে চেনো।
——-ওকে চিনবো না আবার, ওর জন্য ই আমি আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ছি?
——- ওয়াট, তারমানে মিতুর স্বামী, মানে এই ফারহান ই তোমার সেই ফারহান।
——হ্যা?( আসলে টিনা যে ফারহান কে ভালোবাসতো এটা রাজ জানে)
টিনার কথা শুনে রাজের মাথায় একটা বড়সড় প্ল্যান আসলো।
——- আরেবাজ! তাহলে তো ভালোই হলো টিনা, আমরা তো এবার দারুণ একটা কাজ করতে পারি যাতে তুমি তোমার ভালোবাসা পেতে পারো আর আমি ও আমার ভালোবাসা নিজের করে পাবো।
——– মানে।
——– মানে টা হলো তুমি যেমন ফারহান কে ভালোবাসো, তুমি চাও যে ও যেন তোমার হয়, তেমনি আমিও মিতুকে ভালোবাসি, ওকে নিজের করে পেতে চায়।সো তার জন্য আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে যাতে করে আমাদের দুজনেরই লাভ।
——- মানে, কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না ?
——- পারবে পারবে,সব বুঝতে পারবে। তুমি শুধু আমি যা বলবো তাই করবে।
——- কি করতে চায়ছো তুমি বলোতো।
——– ফারহান মিতুকে অনেক ভালোবাসে তাই না, ওর মন থেকে মিতুর জন্য এই যে ভালোবাসা টা এটা ঘৃণায় পরিণত করতে হবে।ফারহানের চোখে মিতুকে খারাপ বানাতে হবে, ব্যাস এক বার আগুন টা লাগাতে পারলে না ওরা দুজন আলাদা হয়ে যাবে আর আমাদের উদ্দেশ্য ও সফল হবে। তার জন্য আমি যা বলবো তুমি শুধু তাই করবে।
—— তুমি শুধু কি করতে হবে তাই বলো, ফারহান কে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।
——- ওকে তাহলে শোনো………..
——— ওকে বেবি, ডোন্ট ওয়ারি কাজ হয়ে যাবে।
এবার দেখি ওদের এই ভালোবাসা কতোদিন থাকে।
.
.
.
?
চলবে….

#আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
#Writer_মাহিয়া_মিতু
#Part_10
?
?
রাজের কথা মতো কাজে লেগে পড়ে টিনা, ওর যে ফারহান কে চায় ই চায়। তারজন্য ও সব কিছু করতে রাজি।
পরেরদিন সকালে ফারহান অফিস চলে যাওয়ার পর মিতু মার্কেটে যায় ওর কিছু কেনাকাটা করার আছে তাই।
রাজ ও তখন ওই পথ দিয়েই আসছিলো ও মিতুকে এখানে দেখে খুব খুশি হলো এবং ওর দিকে এগিয়ে গেলো।
—— আরে মিতু, কেমন আছো।

পিছনে কারো কণ্ঠ শুনে ও পিছনে ফিরে দেখে সেদিনের সেই লোকটা যাকে ফারহান ইনভাইট করেছিলো। মিতু ও সৌজন্যতার জন্য বললো
—— জী, ভালো। আপনি কেমন আছেন।
——- এই তো ভালোই। তা সপিং করতে এসছিলে বুঝি।
—— হ্যা, আর হয়ে ও গেছে, এখন বাসায় যাবো।
—— ওওওও, আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা রিকুয়েস্ট করবো।
——– জী বলুন।
——- আসলে আমার একটা গিফট কেনার ছিলো মেয়েদের গিফট বাট আমি মেয়েদের ব্যপারে ভালো বুঝি না সো আপনি যদি একটু হেল্প করতেন। যদি একটা গিফট চয়েস করে দিতেন।
রাজের কথা শুনে মিতু খুব দো টানায় পড়ে গেলো, ওর যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও না ও বলতে পারছে না, কি করবে বুঝতে পারছে না।
তা দেখে রাজ আবার বললো
——- প্লিজ চলুন না।
বাধ্য হয়ে মিতু ওর সাথে গেল।
তারপর কেনা কাটা শেষে মিতু বাড়ি চলে গেলো, যদিও রাজ ওকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু মিতু জোর করে একা চলে আসলো কারণ একদিনের পরিচয়েই রাজের এতো আদিক্ষেতা মিতুর একদম পছন্দ হচ্ছিল না। তাছাড়া ফারহান ও যদি খারাপ মনে করে।
এদিকে ফারহান অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় গোলাপ বিক্রি করতে দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে যায় মিতুর জন্য গোলাপ কিনতে তখনই টিনা ওর সামনে আসে। এতোদিন পর আবার টিনা কে ফারহান খুব অবাক হয়।
টিনা ওর দিকে এগিয়ে বসে বলে
—- কেমন আছো ফারহান।
——- তুমি!! এখানে।
——– হ্যা এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, এতোদিন পর তোমাকে এখানে দেখে ভাবলাম কথা বলে আসি।তা বউয়ের জন্য ফুল কিনছো বুঝি। তা মিতু কে তো দেখলাম সপিং মলে একটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খুব ক্লোজ ভাবেই চলছিলো দুজনে, দেখে মনে হচ্ছিল হ্যাপি ক্যাপল।
—— টিনা, মুখ সামলে কথা বলো, সেদিনের চড়ের কথা ভুলে গেছো তাই না, মিতুর নামে আর একটা বাজে কথা বললে না আমি আবার নতুন করে মনে করিয়ে দেবো। এবার বুঝলাম এতোদিন পরে আবার কেন আমার সামনে আসলে, বাট তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন আমাদের কে আলাদা করতে পারবে না?, তাই ভালোই ভালোই চলে যাও এখান থেকে।
——– আমি জানতাম তুমি আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না, এই দেখ আমার কাছে পিক আছে, বলে পিক গুলো বের করে ফোনটা ফারহানের দিকে এগিয়ে দেয়।
দেখো, ছেলেটা কে আমি জানি না, কিন্তু মেয়েটা যে মিতু সেটা তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ফারহান খুব অবাক হয় পিক গুলো দেখে,সত্যি ই তো এটা মিতু, আজ সকালে ওর যে ড্রেস টা পরা ছিলো সেটাই পরা।আর তারচেয়ে অবাক হয় সাথে রাজ কে দেখে। রাজ ওর সাথে কি করছে! আর পিক গুলো ঠিক এমন ভাবেই তুলেছে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসলে মিতু যখন গিফট চুস করছিলো ওর শুধু সেদিকেই নজর ছিলো, তাই রাজ যে ওর পিছনে খুব কাছে এসে দাড়িয়ে ছিলো আর টিনা দূর থেকে ওদের ছবি তুলছিলো এসব কিছু ই ওর ধারনার বাইরে ছিলো। কারণ ও তো এসব ভাবেই নি ব্যাপারটা এমন হবে।
ফারহান পিক গুলো দেখে কি বলবে বুঝতে পারছে না, তারপর ও টিনাকে আর কোনো কিছু না বলে সোজা ওখান থেকে চলে আসে, ফারহান চলে আসার পর টিনার পিছন থেকে রাজ বেরিয়ে আসে তারপর রাজ টিনা দুজন ই ফারহানের যাওয়ার দিকে তাকে শয়তানি হাসি হাসতে থাকে।
এদিকে ফারহান বাড়ি এসে মিতুকে যে সে কোথায় গিয়েছিলো।
তা শুনে মিতু বলে যে সে ওর কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিলো, আর ও ফারহান কে ফোন ও দিয়েছিলো কিন্তু ফারহান ফোন রিসিভ করে নি, ফারহান ফোন বের করে দেখে সত্যি ই মিতু ফোন দিয়েছিলো, কিন্তু মিতুর যে রাজের সাথে দেখা হয়েছিল এটা বলে না দেখে ফারহানের কেমন সন্দেহ হয়, কিন্তু এই ভেবে বলে না যে ফারহান যদি রাগ করে। কিন্তু এই না বলা টা যে ওর জন্য কাল হয়ে দাড়াবে এটা ও নিজেও জানতো না।
তারপর আর ফারহান ও কিছু বলে না। এভাবে আরো একসপ্তাহ কেটে যায়। মিতুর শরীর টা ইদানীং খুব খারাপ লাগছে, কোন কিছু খেতে পারছে না, বমি হচ্ছে, মাথা ঘুরছে।
একদিন সকালে ফারহান অফিস চলে যাওয়ার পর দিনা আসে মিতুর সাথে দেখা করতে, ও আসার পর মিতুর শরীর খারাপ শুনে ওকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, আজও যাওয়ার আগে মিতু ফারহান কে ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফারহান মিটিং এ বিজি ছিলো এজন্য ফোন রিসিভ করে নি, বাধ্য হয়ে আজ ও ফারহান কে না বলে মিতু দিনার সাথে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
আর এদিকে সেদিন ছবি গুলো দেখার পর ও ফারহান মিতুর মধ্যে সবকিছু ঠিক আছে এটা দেখে রাজ আর টিনা আরো বড় প্ল্যান করে, এবার ওরা সবদিক থেকে ঠিক করেই মাঠে নামে, যাতে এবার আর ব্যর্থ না হয়।
অফিসে ফারহান মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসে ছিলো, তখনই ওর নামে একটা পার্সেল আসে, ফারহান পার্সেল টা হাতে নিয়ে ভাবছে যে এসময় ওর নামে পার্সেল কে পঠাবে।
ভাবতে ভাবতে ও পার্সেল টা খুললো ভিতরে কি আছে তা দেখার জন্য। কিন্তু ভিতরে যা আছে তা দেখে যেন ওর পার তলার থেকে মাটি সরে গেলো।ওর বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে। ও ওর নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না, না চায়তেও ওর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।
ও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে হাতে থাকা ছবি গুলো দেখে কারণ ছবিগুলো মিতুর আর রাজের অন্তরজ্ঞ মুহূর্তের ছবি।যগুলো রাজ আর টিনা মিলে এডিট করে বানিয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে ফারহানের মাথায় ওই কথা টা আসছে না যে ছবি গুলো এডিট করাও হতে পারে।ও এগুলো কে সত্যি ভেবে নিয়েছে।
বেশ কিছু ক্ষন এভাবে বসে থেকে রেগে ফারহান অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা রাজয়ের অফিসে যায় আর ওর কেবিনে ঢুকে রাজের মুখের উপর ছবি গুলো ছুড়ে মারে।
রাজ ছবিগুলো দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার নাটক করে বলে
——– আরে ফারহান সাহেব, আ আ আপনি এইগুলা ক কি করে পেলেন।
——– তুই কি ভেবেছিস তুই আমার স্ত্রীর সঙ্গে এসব করে বেড়াবি আর আমি জানতে পারবো না?
বলে ফারহান রাজের কলার ধরে টেনে ওকে মারতে শুরু করলো।
——- তোর সাহস হয় কি করে?
——– আারে ফারহান সাহেব, আমার কথা তো শুনুন। দেখুন এখানে সাহসের কিছু নেই। আমি মিতুকে ভালোবাসি। আর আপনার স্ত্রী কে আপনি খুশি করতে পারেন নি তাই আমি ওকে আমার ভালোবাসা র কথা জানালে ও আমার কথায় রাজি হয়ে যায়। আপনি ওকে সেই সুখ দিতে পারেন নি যেটা আমি ওকে দিয়েছি এটা আপনার ব্যর্থতা আমার নয়। মিতু আর আমি এখন আমরা একে অপর কে খুব ভালোবাসি।
ও আপনার সাথে থাকতে চায় না, শুধু মাত্র আপনার জন্য আমরা এক হতে পারছি না। দেখুন ও যখন আপনাকে চায়ই না তখন আপনি কেন শুধু শুধু আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে আছেন বলুন তো তারচেয়ে ভালো আপনি আমাদের মাঝ থেকে সরে দাড়ান, তাহলে আমরা ও সুখে থাকবো।
রাজের কথা শুনে ফারহান যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না, কি বললো রাজ এগুলো মিতু আমার সাথে সুখি নয়, ও আর আমাকে চায় না, ওকে আমি সেই সুখ দিতে পারিনি যেটা রাজ ওকে দিয়েছে। আমার জন্য ওরা এক হতে পারছে না।
এতো ভালোবাসলাম ওকে আর ও আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলো।
না ও আর কিছু ভাবতে পারছে না। ও রাজ কে আর কিছু না বলে ওখান থেকে বের হলে গেল।
এদিকে মিতু দিনার সাথে হসপিটালে এসে টেস্ট করে রির্পোটের জন্য বসে আছে। প্রায় আধাঘন্টা পর ওকে আবার ডাক্তারের কেবিনে ডাক পড়লো।
ও দিনাকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনে ঢুকতেই ডাক্তার ওকে বললো
——— কংগ্রাচুলেশনস মিসেস মিতু। আপনি মা হতে চলেছেন।
একথা শুনে মিতু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না, ও এতো খুশি হয়েছে যে বলে বোঝাতে পারবে না, খুশিতে ওর চোখে পানি এসে গেল।
তারপর ডাক্তার ওকে সাবধানে চলাফেরা করতে বললো এবং ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে বললো।
আরো কিছু পরামর্শ দিলো, তারপর হসপিটাল থেকে বের হয়ে দিনা কে বিদায় জানিয়ে ও বাসায় চলে আসে।
ও বাসায় এসে খুশি মনে ফারহানের জন্য ওয়েট করতে থাকে যে কখন ফারহান বাড়ি আসবে। ও নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে যখন শুনবে যে ও বাবা হতে চলেছে।
তারপর ও একটা লাল শাড়ি পড়ে আর একটু সাজুগুজু করে ফারহানের জন্য ওয়েট করতে থাকে। আজ ও একদম ফারহানের মনের মতো সেজেছে, ও ভাবছে যে ফারহান কতোটা খুশি হবে।
তারপর ফারহানের জন্য ওয়েট করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায় কিন্তু ওর আসার নাম নেই, মিতু বেশ কয়েকবার ফোন ও দেয় কিন্তু ফারহান ফোন রিসিভ করছে না। এবার মিতুর বেশ টেনশন হয়, ও কি করবে বুঝতে পারছে না, তারপর প্রায় বারোটারদিকে ফারহান বাসায় ফেরে। কলিং বেলের শব্দ শুনে মিতু তাড়াতাড়ি যেয়ে খুশি মনে দরজা খুলে, কিন্তু দরজা খুলে ফারহান কে দেখে ওর মুখের হাসি উড়ে যায়। কারণ ফারহান কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ও ড্রিয়িং করেছে।
মিতু খুব অবাক হয় ওকে এভাবে দেখে। তারপর মিতু এগিয়ে যেয়ে ওকে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই ফারহান মিতুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আর বলে
——- খবরদার, তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে টাস করবি না।
——-ফারহান! কি যা তা বলছো। আর তুমি ড্রিয়িং করেছো!!!
——- হ্যা, করেছি। তাতে তোর কি। আমি তো শুধু মদ খেয়েছি আর তুই কি করলি, এতো ভালোবাসতাম তোকে আমি আর তুই কিনা পর পুরুষের সাথে নষ্টামি করে বেড়াচ্ছিস। কি নেই আমার মধ্যে যে তোর অন্য পুরুষ লাগে, সব দিক দিয়েই তো তোকে সুখি রেখেছিলাম, এমনকি বেডেও তো তোকে আমি সব সময় খুশি
——— ছি! ফারহান। কিসব নোংরা কথা বলছো তুমি।
——— ও নোংরা কথা শুনতে খারাপ লাগছে, নোংরা কাজ করতে খারাপ লাগেনি।
——–আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না, কি করেছি আমি ?
——- কিছু ই করিস নি তুই তাই না, তাহলে এগুলো কি
বলে সেই ছবিগুলো মিতুর মুখে ছুড়ে মারে।
ছবিগুলো দেখে মিতু ও যেন আকাশ থেকে পড়ে, এসব কি
——- কি হলো এখন চুপ কেন, কথা পুরিয়ে গেলো।
——— ফারহান বিশ্বাস করো এ এগুলো মিথ্যা, আমি তো নিজেও বুঝতে পারছি না এসব কি করে
ঠাসসসসসস করে এক চড় মেরে দিলো এবার ফারহান মিতুর গালে যার ফলে মিতু ছিটকে নিচে পড়ে গেলো, আর ঠোঁটের কোনা কেটে রক্ত বের হতে লাগলো তারপর ফারহান আবার মিতুর চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললো
——- এখন কিছু ই বুঝতে পারছিস না তাই না,
——– আহ! ফারহান আমার লাগছে। চুল ছাড়ো প্লিজ।
——– লাগুক, লাগার জন্য ই তো ধরেছি, তুই আমাকে যে আঘাত দিয়েছিস তার কাছে তো এটা কিছুই না।
——- ফারহান তুমি বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি, তুমি আমাকে ভুল বুঝচ্ছ।
——– বিশ্বাস!!! হা হা হা তোর মুখ ও আমি আর দেখতে চায় না, বেরিয়ে যা এখান থেকে।
——— কি বলছো তুমি, এতো রাতে কোথায় যাবো আমি?
——— কেন তোর নাগরের কাছে, যেয়েই আবার নষ্টামী শুরু করবি। এবার যা এখান থেকে আর কোনো দিন ও তোর এই মুখ আমাকে দেখাবি না।
বলে মিতুকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাইরে ফেলে দিয়ে দরজা লাগাতে গেলে কিন্তু তার আগেই মিতু এসে দরজা ধরে ভিতরে যেতে লাগলো কিন্তু ফারহানের কথা য় আবার থেমে গেলো
———- তুই যদি এখন এখান থেকে না যাস তো আমার মরা মুখ দেখবি।
———– ফারহান!!!!?
——- যা, বের হো এখান থেকে
বলে ওকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো।
আর মিতু দরজার বাইরে থমকে দাড়িয়ে রইলো৷ ও ভাবছে যে ফারহান ওকে বিশ্বাস করলো না, আর কি বললো ও যদি না যায় তাহলে ফারহানের মরা মুখ দেখবে। কিন্তু সেটা তো মিতু পারবে না।কারণ ফারহান যে ওর জীবন।
ওকে বেশ ও যখন চায়ছে তখন চলে যাবো আমি ফারহানের জীবন থেকে অনেক দূরে। থাকবো না আর তোমার জীবনে বাঁধা হয়ে।
আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে একদিন তুমি ঠিক ই বুঝতে পারবে ফারহান যে আমি নির্দোষ।
শুধু একটাই আফসোস আমাদের অনাগত সন্তানের কথা তোমাকে জানাতে পারলাম না?
তারপর মিতু নিজের চোখ মুছে ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে থাকে। কোথায় যাবে সেটা ও নিজে ও যানে না, শুধু জানে ওকে ফারহানের থেকে অনেক দূরে যেতে হবে কারণ ফারহান যে তাই চায়।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে ওর সামনে কতকগুলো ছেলে এসে দাঁড়ালো, দেখেই বোঝা যাচ্ছে বকাটে ছেলে, মিতু এবার কি করবে বুঝতে পারছে না, তাই আর কোন উপায় না পেয়ে ও পিছাতে পিছাতে ছুট মারলো, ছেলেগুলো ও ওর পিছনে ছুটছে।
মিতু আরো জোরে ছুটতে শুরু করলো হঠাৎ করে ওর সামনে একটা গাড়ি চলে আসলো, আর ও যখন গাড়ি টা কে খেয়াল করলো ততক্ষণে গাড়ি টা ওর একদম কাছে চলে এসেছে তাই ও সরতে ও পারে নি, গাড়িটার সাথে জোরে এক ধাক্কা খেয়ে ছিটকে নিচে পড়ে যায়, ওর রক্তাক্ত দেহটা মাটিতে অসড় হয়ে পড়ে থাকে।
.
.
.
.
?
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here