আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_13
Writer_মাহিয়া_মিতু
?
?
গভীর রাত, চারিদিকে সব নিস্তব্ধ, সারাদিনের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এখন সবাই। কিন্তু, একজনের চোখে ঘুম নেই, এই অন্ধকার রাতে ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে মনে খুব গভীর ভাবে কিছু একটা ভেবে চলেছে সে।
সেই বাক্তি টা আর কেউ নয়, ফারহান।একা একা দাড়িয়ে শুধু ভেবেই চলেছে কিন্তু কোনো উত্তর মিলছে না, তার মাথায় একসাথে যেন সবার বলা কথা গুলো ঘুরছে।
সেদিন নয়ন ও বলেছিলো যে মিমি হয়তো তার মেয়ে, আজ কে মা বাবা ও বলছে, মিমি দেখতে আমার মতো৷ আমার কাছে ও তাই মনে হচ্ছে।
কিছু ই বুঝতে পারছে না ও। আর এটাও ভাবছে যে মিতু কে ও এখনো সহ্য করতে পারে না যদিও উপর উপর বললে ও মন থেকে ওকে কখনো ঘৃণা করতে পারেনি হয়তো #আজও_ভালোবাসি তাই। এজন্য চাইলেই মন থেকে ওকে সারাতে পারেনি।
কিন্তু তবুও মিতুর উপর ওর খুব রাগ আর সেকারণে তো মিমি ওর মেয়ে, এটা জানার পর তো ওর মিমি কে ও এড়িয়ে চলা উচিৎ। কিন্তু ফারহান চাইলেও সেটা পারে না, বরং মিমি কে একদিন না দেখলে ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, মিমি ওর কাছে থাকলে ও ওর সব কষ্ট ভুলে যায়। মনে হয় খুব আপন কেউ।
তাহলে কি সত্যি ই মিমি আমার..
নাহ আর ভাবতে পারছে না ও, এবার মিতুর সাথে কথা বলতে হবে।সত্যি টা জানতেই হবে ওকে।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ফারহান আর মিতু। সাথে মিমি। মিতু ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেছে।
কারণ আজ ফারহান সত্যি টা জেনে গেছে তাই ও মিমি কে নিতে এসেছে, কিন্তু মিতু তো মিমি কে দেবে না, ও মিমি কে ছাড়া থাকবে কি করে। ও যে ওর জন্য ই বেঁচে আছে।
কিন্তু ফারহান তো ওর কথা শুনছে না, ও যেভাবে হোক মিমি কে নিয়ে যাবে।
ফারহান ধীরে ধীরে মিতুর দিকে এগিয়ে গেলো, আর হাত বাড়িয়ে দিলো মিমি কে নেওয়ার জন্য। মিমি ও হাত বাড়িয়ে ফারহানের কোলে চলে গেলো, কারণ ওহো ওর বাবার সাথে ই যেতে চায়।
তারপর ফারহান মিমি কে নিয়ে চলে যায়, মিতু পিছন থেকে ডাক দেয় কিন্তু ফিরে তাকায় না।
নাহহহহহ, হঠাৎ করে মিতু ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে, মাথার উপর ফ্যান চলছে তবুও মিতু ঘেমে যাচ্ছে।
এটা কি সপ্ন দেখলো সে ফারহান ওর কাছ থেকে ওর মেয়ে কে নিয়ে যাচ্ছে।
পাশে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো ও, তারপর তাকালো পাশে ওর মেয়ের দিকে, কোল বালিশ টা জড়িয়ে কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে কি মিষ্টি লাগছে দেখতে। একে ছেড়ে থাকবে কি করে মিতু যদি সত্যি ই ফারহান ওকে নিয়ে যায়, না না এটা মিতু হতে দেবে না, কেউ ওর কাছ থেকে ওর মেয়ে কে আলাদা করতে পারবে না।
তারপর মিতু মিমি কে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
এদিকে ফারহান ভেবেই চলেছে যে কি করবে ও।
একদিন ও মার্কেটে গেল নয়নের সাথে, সেখানে আবিরের সাথে দেখা হলো, আবির ওকে দেখে নিজেই এগিয়ে আসলো, কারণ সেদিনের পর থেকে আবিরের ও ইচ্ছে ছিলো ফারহানের সাথে আলাদা করে কথা বলার কারণ সেদিন ওদের দুজন কে একসাথে দেখে ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ওরা এখনো একে অপরকে ভালোবাসে। তাই আবির চায় ওদের মধ্যে সকল ভুল ভেঙে ওদের আবার এক করে দিতে। এজন্য ফারহানের সাথে আগে কথা বলতে হবে, কারণ ভুলটা তো ও বুঝছে।
তারপর আবির ফারহানের সামনে যায় আর বলে
——– আরে মিঃ ফারহান যে, তা কেমন আছেন।
ফারহানের কথা বলার ইচ্ছে না থাকলেও ভদ্রতার খাতিরে বলে
——– এইতো ভালোই, তো আপনি কেমন আছেন।
—– আছি ভালোই।
ওদের কথার মাঝেই মালা মিমি কে কোলে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসলো।
মিমি তো ফারহান কে দেখেই ওর কাছে ছুটে চলে আসলো
——– আরে প্রিন্স আংকেল তুমি এখানে, ভালোই হয়েছে, আমি না তোমাকে খুব মিস করছিলাম,☺
——– তাই ?, আমি ও তোমাকে খুব মিস করছিলাম মামনি।
——-প্রিন্স আংকেল, তুমি এদের কে চেনো তো, এরা হলো আমার বাবাই আর এ হলো আমার মামনি।
——- বাবাই! মামনি!
——– হ্যা, এ হলো আমার স্ত্রী মালা, আসলে মিমি ছোট্ট বেলা থেকে আমাদের বাবাই আর মামনি বলে ডাকে।
—— ওওওওও
তখনই পাশ থেকে নয়ন বলে ওঠে
——- আচ্ছা বুঝলাম যে মিমি আপনাদের এই নামে ডাকে, কিন্তু আপনারা আসলে সম্পর্কে ওর কি হন।
——- মামা মামী।
——— কিন্তু আমি তো জানতাম মিতু একা বোন, তাহলে?
——– আপনি মিতুর ব্যাপারে আগে থেকে জানেন, মানে এদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন আপনি
——- আপনি ফারহান আর মিতুর ব্যাপারে বলছেন
——– জি
——- হ্যা জানি। আপনি ও তাহলে জানেন যে ফারহান ই
——– হ্যা, জানি যে ফারহান মিতুর স্বামী, আর ইনি মিতুর সাথে যা যা করেছে সব।
ফারহান অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর ও বললো
——– হুহ, আমি নয় আপনার বোন আমার সাথে কি কি করছে তাই বলুন। নাকি সেটা ও বলেনি।
আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই মালা বলে উঠলো
——- আমি বলছি, মিতু আমাদের কে সবটাই বলেছে।
আর এএই যে আপনি বলছিলেন না যে আপনি জানেন যে মিতু একা বোন তাহলে ভাই আসলো কি করে, তাহলে শুনন।
হ্যা, মিতু ওর আপন বোন নয়, ওর সাথে তো আমাদের পরিচয় হয় সেদিন যেদিন ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো সেই দিন।
——– সেইদিন!
——– সেদিন ফারহান মিতুকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ও যখন রাস্তা দিয়ে হাটছিলো তখন, কয়েকটা বখাটে ছেলে ওর পথ আটকায়, ও তখন ওদের কাছ থেকে বাচার জন্য ছুটছিলো আর তখনই আমাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়, তারপর আমরা ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়, আল্লাহর রহমতে সেদিন বড়কোনো ক্ষতি হয়নি, মিতু আর ওর সন্তান দুজনেই সুস্থ ছিলো
উনার কথা শুনে ফারহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
——-সন্তান!!!!!!
——– হ্যা, সন্তান। আপনি যেদিন ওকে বের করে দিয়েছিলেন সেদিনই ও যেনেছিলো যে ও মা হতে চলছে আর আপনি বাবা, ও সেদিন খুব খুশি ছিলো, আর আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আপসোস ও নিজেই সেদিন সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলো যখন আপনি ওকে অবিশ্বাস করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
তারপর থেকে মিতু আমাদের সাথে ই ছিলো,৷ মিমি হওয়ার পর ওর বাবা মা ওকে ওদের বাসায় নিয়ে আসে।
——- সেদিন যদি আপনি ওকে ভুল বুঝে বাড়ি থেকে বের করে না দিতেন তাহলে আজ মিমি কে নিয়ে আপনাদের দুজনের সুখের সংসার হতো কিন্তু দেখুন আজ আপনার মেয়ে আপনারই সামনে কিন্তু আপনি নিজেও জানেন না যে ও আপনার মেয়ে হয়তো মানতেই পারছেন না কিন্তু এটাই সত্য, মিমি আপনার মেয়ে।
——– হয়েছে আপনাদের বলা শেষ। এবার আমি বলও, আমি মিতু কে অকারণে বের করে দেয়নি, ও আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করছে, কি করিনি আমি ওর জন্য, নিজের বাবা মার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে বিয়ে করেছিলাম, কিন্তু ও কি করলো অন্য একজনের সঙ্গে, ছি!
——– এটাই তো বলছি মিঃ ফারহান। আপনি মিতু কে ভুল বুঝচ্ছেন, ও
——– ভুল! নিজের চোখের দেখা কি করে অবিশ্বাস করবো বলুন তো আবির সাহেব।
——- অনেক সময় চোখের সামনে যেটা ঘটে সেটা সত্যি হয় না , আর আপনি তো ছবি দেখে বিশ্বাস করে নিলেন, অথচ এটা ভাবলেন না যে বর্তমানে এরকম কতো ছবি তো এডিট করে ও তৈরি করা যায়।
আবিরের কথা শুনে ফারহানের মনে খুব বড় একটা ধাক্কা লাগে। কারণ সত্যি ই তো এই কথাটা তো কখনো ফারহানের মাথায় আসেই নি।
ওকে চুপ থাকতে দেখে আবির আবার বললো
———আপনি বুদ্ধিমান মানুষ, আমি যানি আপনি চাইলেই সত্যি টা বের করতে পারবেন। সো চেষ্টা করে দেখুন না। আর আমি জানি মিতু যাই বলুক না কেন ও আজ ও আপনার পথ চেয়ে বসে আছে। তাই এভাবে নিজেদের জীবন টা শেষ করে না দিয়ে সত্যি টা খোঁজার চেষ্টা করুন না, হয়তো আবার সব কিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যেতে পারে। এনিওয়ে, আজ আমরা আসি, পারলে ভেবে দেখবেন।
আর ফারহান ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে নয়ন ওর তাকিয়ে ওর মনে কি চলছে তা বোঝার চেষ্টা করছে।
.
..
.
চলবে…..