আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤ Part_16 Last

0
4282

আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_16 Last
Writer_মাহিয়া_মিতু
?
?
মিতু বাড়ি এসে কোন কাজেই মন বসাতে পারছে না, ওর শুধু ফারহানের বলা কঘা গুলোই মনে উঠছে, ওর এবার সত্যি ই ভয় হচ্ছে ফারহান সত্যি সত্যি আবার ওর থেকে দূরে চলে যাবে না তো।
ভয় হওয়ার ই কথা, কারণ মুখে যতই বলুক না কেন ও ফারহানের কাছে যেতে চায় না, ওর মুখ দেখতে চায় না কিন্তু সত্যি তো এটাই যে মিতু এখনো ফারহান কে ঠিক ততোটাই ভালোবাসে যতোটা আগে বাসতো। শুধু মাত্র ফারহানের সেদিনের ব্যবহারের জন্য ও ওকে মেনে নিতে পারছে না, যতো বারই ও ভাবছে, ফারহান কে মেনে ততোবারই ওর সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু মিতু এবার ঠিক করে নেই ও আর ফারহান কে কষ্ট দেবে না, এই এক মাসে অনেক কষ্ট দিয়েছে ওকে, অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে ওর সাথে, আর না এবার ফারহান আসলে মিতু ওর সাথে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতে ই ওর ফোন বেজে ওঠে, মিতু ওর ভাবনাতে এতো মগ্ন ছিলে যে ফোন দুই বার বেজে কেটে গেল কিন্তু ও বুঝতে ই পারলো না।
তিন বার বেজে উঠলে ওর হুশ আসে, ও তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে নয়ন ফোন দিয়েছে।
ও ফোন রিসিভ করে কথা বলতে ই ওপাশ থেকে নয়নের ভিত কন্ঠ ভেসে আসলো
—- ভা ভাবি
—— নয়ন ভাইয়া, কি হয়েছে? আপনার কন্ঠ এরকম লাগছে কেন।
—— ভাবি ফা ফারহান
—– ফারহান! কি হয়েছে ফারহানের
—– ফারহানের আসলে
—– ভাইয়া বলুন না প্লিজ, ফারহানের কি হয়েছে?
—–ফারহান এক্সিডেন্ট করেছে
—– ওয়াট!!!! ক কি বলছেন এসব?
—– হ্যা, ভাবি আপনি এখুনি সিটি হসপিটালে চলে আসুন।
—— আমি এক্ষুনি আসছি?
তারপর মিতু কোনরকম ওর মাকে বলে ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে, ওর পিছনে ওর বাবা মা, আবির মালাও মিমি কে সাথে নিয়ে চলে আসে।
মিতু হসপিটালে পৌঁছে দেখে ফারহানের বাবা মা, বোন সবাই বাইরে বসে আছে, নয়ন ও আছে, ও ছুটে ওদের কাছে যায়।
মিতুকে দেখে ফারহানা ছুটে ওর কাছে আসে
— মিতু, তুমি এসেছো, আমি যানতাম তুমি আসবে?
—– আপু ফারহান এখন কেমন আছে, ওর কিছু হবে না তো, ওর কিছু হলে যে আমি ও বাঁচবো না?
তখন নয়ন এসে ওদের পাশে দাড়ায়
—— চিন্তা করো না, ফারহান একদম ঠিক হয়ে যাবে।
ওদের কথার মাঝেই ওটির আলো নিভে যায়, আর ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
ডাক্তার কে দেখে সবাই এগিয়ে যায়, ওর বাবা জিজ্ঞেস করে
—– ডক্টর, আমার ছেলে
—– ডোন্ট ওয়ারি মিঃ চৌধুরী, ফারহান এখন একদম বিপদ মুক্ত, আঘাতটা খুব বেশি জোরালো নয়, এজন্য সমস্যা হয়নি। একটু পরেই ওকে কেবিনে সিফট করা হবে, আর কালকের মধ্যে বাড়ি ও নিয়ে যেতে পারবেন। সপ্তাহ খানিক বেড রেস্টে থাকলেই ও একদম ঠিক হয়ে যাবে।
এরই মধ্যে মিতুর বাবা মা, আবির মালাও মিমি কে নিয়ে চলে এসেছে।
ডক্টরের কথা শুনে সবাই নিশ্চিন্ত হয়, কিছু ক্ষন পরের ওকে কেবিনে সিফট করা হয়, সবাই একে একে ওর সাথে দেখা করে, সবার শেষে মিতু ভিতরে যায়, মিতু যেয়ে দেখে ফারহান শুয়ে আছে আর মিমি ওর পাশে বসে ফারহানের সাথে কথা বলছে আর ওর মুখে চুমু খাচ্ছে, মিতুর খুব ভালো লাগছে বাবা মেয়ের এই ভালোবাসা দেখে।
মিতুকে দেখে ওরা সবাই বেরিয়ে যায় মিমি কে নিয়ে, তারপর মিতু যেয়ে ফারহানের পাশে বসে, ফারহান একবার মিতুর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেই তা দেখে মিতু বলে
—– কি হলো কথা বলবেন না আমার সাথে, আমি খুব খারাপ তাই না, শুধু আপনাকে কষ্ট দিই, আজ আমার জন্য ই আপনার এই অবস্থা ?
বলে কাঁদতে শুরু করে, মিতুর কান্না দেখে ফারহান আর চুপ করে থাকতে পারে না, হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
—— এই পাগলী, কাঁদছো কেন, দেখো আমি একদম ঠিক আছি। আর এখানে তোমার দোষ কোথায়, আমি তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি, তার জন্য তুমি যা যা বলেছো তা কিছু ই না।
—– কিন্তু আমার কথায় কষ্ট পেয়েই তো আপনি হয়তো জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তার জন্য এরকম হলে না হলে তো তা নাহলে হতো না?
——- ধুর পাগলি, এসব নিয়ে কেন মন খারাপ করছো বলো তো এখন তো আমি ঠিক আছি।
—— হুম ?
—— মিতু, আমায় ক্ষমা করেছো তো, এবার প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে, আমি আর পারছি না তোমাকে আর মিমি কে ছেড়ে থাকতে, প্লিজ। এবার আামাকে ফিরিয়ে দিলে আমি সত্যি সত্যি ই মরে
—— হুস, আর একবার এমন কথা বলবেন না?, আপনার কিছু হলে আমি করে থাকবো। আমি ও যে পারবো না আপনাকে ছেড়ে থাকতে কারণ আমি যে #আজও_ভালোবাসি আপনাকে ঠিক আগের মতো, আপনি তো শুধু আমার মুখের কথাটাই শুনলে?, কিন্তু আপনাকে কষ্ট দিয়ে যে আমি ও ভালো নেই এটা বোঝার চেষ্টা করলেন না, আপনি খুব খারাপ?
—- আই নো, বাট কিছু করার নেই, এই খারপ লোকটার সাথে ই যে তোমাকে সারাজীবন থাকতে হবে।কি থাকবে না।
—— থাকতে যে আমাকে হবেই, কারণ আমিও যে এই খারাপ মানুষ টাকে খুব ভালোবাসি, তাই এই মানুষ টাকে ছাড়া যে আমি থাকতেই পারবো না।
—— আই লাভ ইউ জান
—-লাভ ইউ টু?
বলে মিতু ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো ঠিক তখনই মিমি ভিতরে ঢুকলো আর ওদের কে এই অবস্থায় দেখে কোমরে দুই হাত দিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়ালো আর বললো
——- মাম্মা পাপা, আমরা ওখানে বাইরে দাড়িয়ে চিন্তা করছি আর তোমরা এখানে রোমাঞ্চ করছো?
মিমির কথা শুনে ওরা দুজন ই দূরে সরে গেলো একে অপরের থেকে। তারপর ফারহান হেসে মিমি কে কাছে টেনে নিয়ে বললো
——- ওলে বাবা লে, আমার মামনি টা দেখছি রোমাঞ্চ ও বোঝে।
—— হুম বুঝি তো, টিভি তে দেখছি আবার বাবাই আর মামনি কে ও দেখেছি আর আজ তোমাদের দেখলাম☺
মিমি একথা বলার সময় আবির আর মালাও ভিতরে আসছিলো আর মিমির কথা শুনে আবিরের কাশি শুরু হয়ে গেলো, এই মেয়েটা যে ওর ইজ্জতের ফালুদা করে দিলো সবার সামনে।
তারপর সবকিছু ঠিক করে ফারহান কে বাড়ি তে নিয়ে আসে মিতু ও ওর সাথেই আসে।
ওর শশুর শাশুড়ী খুব খুশি হয়,,ছেলে বৌমা নাতনি কে নিয়ে আজ তাদের সংসার টা পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যায়, ফারহান এখন পুরোপুরি সুস্থ।
ফারহান সুস্থ হয়ে উঠলে ওর বাবা ফারহান আর মিতুর ওনারে একটা বড় পার্টির আয়োজন করে ওদের বাড়িতে। কারণ এক মাত্র ছেলের বিয়েতে ও কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি তাই সেটা এখন করছে, মিতুর বাবা মা ও খুব খুশি মেয়ে কে খুশি দেখে।
পার্টিতে ফারহান টিনা আর রাজ কে ও দাওয়াত করেছে, কারণ এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই।
টিনা রাজ ওদের পরিবারের সবার কাছ থেকে ও মাফ চেয়ে নিয়েছে।
আজকে সবাই খুব খুশি সাথে আবির আর মালার জন্য আজ আরো খুব বড় একটা খুশির খবর ও পেয়েছে সেটা হলো মালা মা হতে চলেছে, হ্যা অনেক চিকিৎসা করার পর আল্লাহর রহমতে শেষমেষ ওদের ঘরে ও সন্তান আসতে চলেছে, এই নিয়ে ও সবাই খুব খুশি।
এভাবে খুব আনন্দের সাথে অনুষ্ঠান শেষ হয়, রাতে ফারহান আর মিতু মাত্র ঘরে এসেছে, ওরা তো ঘরে ঢুকেই অবাক কারণ ঘর টা একদম ফুলসজ্জার ঘরের মতো সাজানো, এসব নয়ন, রোহান সহ ফারহানের সব বন্ধু রা মিলে করেছে।
মিতু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিমি ঘরে আসলো। ফারহান মিমি কে দেখে ওর কাছে যেয়ে ওকে কোলে নিলো
—— মাম্মা, অনেক রাত হয়ে গেছে তো, ঘুম পাচ্ছে না তোমার?
——- হ্যা পাপা, তাই তো তোমাদের বলতে এলাম আমি আজ দাদুর কাছে থাকবো, আজ তোমরা দুজনে থাকো, আবাট ভয় পেও না যেন, কাল থেকে আমি আাবার তোমাদের সাথে থাকবো।
ওর কথা শুনে ওরা দুজন ই হেসে দেয়
—— ওলে আমার পাকে বুড়ি রে, ঠিক আছে মা তুমি যাও, আমরা ভয় পাবো না।
—— ওকে পাপা
বলে মিমি চলে যায়।
তারপর ফারহান দরজা বন্ধ করে মুচকি হেসে মিতুর দিকে এগিয়ে যায়, আর ফারহান কে এভাবে আসতে দেখে মিতুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কারণ ওর হাসি ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ফারহানের মতলব ভালো না।
তারপর ফারহান এগিয়ে যেয় ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর মিতু ছাড়ানোর চেষ্টা করে
——- এই ক কি করছেন, ছ ছাড়ুন বলছি, খুব ঘুম পাচ্ছে আমার, অনেক রাত হয়ে গেছে।
—— তা বললে তো হবে না বেবি, আজ নো ঘুম, শুধু ই রোমাঞ্চ, দেখ না মেয়ে ও কেমন তার বাবার দঃখ বোঝে, সে থাকলে তার বাবা রোমাঞ্চ করতে পারবে না বলে সে মার কাছে চলে গেলো, আর তুমি কিনা আনরোমান্টিকের মতো কথা বলছো, ছি! এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি।
—– হুহহ, ঢং। এসব বলে আমাকল পটাতে পারবেন না, অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে, এবার আমি তার শোধ তুলবো, আমি যতো দিন না বলবো আমাকে টাচ ও করতে পারবো না।
—– ক কি সব বলছো, এতো বড় শাস্তি তুমি আমায় দিতে পারো না, আর আমি ভুল করেছি তার জন্য ক্ষমা ও চেয়েছি সো আর কোনো ওয়েট করতে পারবো না, আর তাছাড়া একটা কথা ভাবো জান, দেখ আমাদের মেয়েটা আমাদের কততো ভালোবাসে, সো আমাদের ও উচিৎ না বলো, আমাদের মেয়েটার কষ্ট বোঝা।
—— মেয়ের কষ্ট মানে!!!! কিসের মধ্যে কি আনছেন।
—— আরে ঠিক ই তো বলছি, মেয়েটা আর কতোদিন একা থাকবে বলো তো, ওর তো একটা খেলার সাথি দরকার বলো, তাই আমাদের উচিৎ না ওর জন্য একটা ভাই বা বোন আনার ব্যবস্তা করা, আর সেটা করার জন্য তো তাহলে?
—— এ্যাএএএ, যতোসব খালি রোমাঞ্চ করার ধান্দা, এতো রোমাঞ্চ কোথা থেকে আসে।
—— সেটা মুখে না বরং প্রাকটিকালি দেখিয়েই দিই কি বলো?
——- ধ্যাৎ?
তারপর ওরা দুজনেই ভালোবাসা র সাগরে ডুব দেয়।
আটমাস পরে
—— পাপা, মাম্মা র পেট টা আস্তে আস্তে এরকম ফুলে যাচ্ছে কেন?
——- কারণ ওখানে তোমার ভাই বা বোন আছে মা, যে কিছু দিন পর আমাদের মাঝে চলে আসবে আর তোমার সাথে খেলা করবে।
——- ইয়ে কি মজা আমার আরো একটা ভাইয়া হবে ফাইম ভাইয়া আর মাহিন ভাইয়ার মতো( মাহিন আবির আর মালার ছেলে)
——-হ্যা মা?
——- আচ্ছা পাপা, তোমরা থাকো আমি দাদুর কাছে বলে আসি আমার ভাইয়া আসবে সেটা☺
——- ঠিক আছে মা যাও।
তারপর মিমি চলে যায় আর ফারহান যেয়ে মিতুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে
——- এই কি করছো, ছাড়ো৷ এখন কিন্তু একদম দুষ্টুমি করবে না।
——– ডোন্ট ওয়ারি জান, এখন আমি কিচ্ছু করবো না, শুধু আমার ছেলে মেয়েদের মাম্মা কে অনেক ভালোবাসবো?
——- ধ্যাৎ, দুই বাচ্চার বাবা হতে চললে, এখনো শুধরালে না।
——- আর শুধরাতে চায় ও না, সারাজীবন এরকম ই থাকতে চায়, আর তোমাকল ভালবাসতে চায়, আই লাভ ইউ সোনা।
——– আই লাভ ইউ টু জান, আমি এভাবেই সারাজীবন তোমার বুকে ই থাকতে চায়?
বলে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
এইভাবেই দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসার মধ্য দিয়েই চলতে থাকে ওদের সংসার। খুব ভালো থাকুক ওরা দুজনে ওদের মেয়ে আর যে অনাগত সন্তান আসছে তাকে নিয়ে, ভালোবাসার রঙে ভরে উঠুক ওদের জীবন ❤❤❤❤❤।
?
সমাপ্ত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here