প্রেমপিপাসা❤ পর্ব – ৭,৮

0
1531

প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ৭,৮
writer_শিফা_আফরিন_মিম
পর্ব – ৭
?
কুহু ক্লাসে যাওয়ার সময় হটাৎ কেউ তার হাত ধরে টান দেয়। কুহু ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিলেই কুহুর মুখটা চেঁপে ধরে।
কুহু সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়! রেহান দাড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝড়ছে!
কুহু – আ… আপনি?
রেহান – কেনো? এখানে কাকে একসেপ্ট করছিলে? তিশান কে? (প্রচন্ড রেগে)
কুহু – মানে? তিশান কে?
রেহান – ওহহ না চেনার ভান করছো তাই না? দেখো কুহু আমাকে রাগিও না। ভালোই ভালোই বলো তোমার তিশান টা কে?
কুহু – কোন তিশান কোথাকার তিশান আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। (অবাক হয়ে)
রেহান কুহুর কথা শুনে আরও প্রচন্ড রকমের রেগে যায়।
রেহান – একদম ন্যাকামি করবা না কুহু। সোজাসাপ্টা উত্তর দাও। তিশান কে? ভালোই ভালোই সব বলো নয়তো কোনো দিন তিশান কে তোমার আশেপাশেও যদি দেখি তো আস্ত রাখবো না।
কুহু রেহানের ধমক শুনে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সবকিছু যেনো কুহুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কে এই তিশান? কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রেহান – কি হলো? এখন মুখটা অফ কেনো? কথা বের হয়না কেনো এখন? ওহহ বুঝেছি তোমার তিশান কে নিয়ে আমার কাছে কিছু বলার ইচ্ছে নেই তাই তো?
না বলতে চাইলে বলো না তবে একটা কথা বলে দিই আমি তোমাকে চাই মানে চাই। তোমার তিশান কে বলো ভালোই ভালোই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে নয়তো ওর কপালে খারাপ আছে বলে দিলাম।
রেহান রেগে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে কুহু এখনো বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
কুহু – এই লোকটা কি পাগল? কি সব বলে গেলো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কে তিশান। আমি তো কোনো দিন তিশান নামের কাউকে দেখবো দূরে থাক নামও শুনি নি।
এদিকে সানিয়া আর রিহা কিছুদূর যাওয়ার পরই পেছন ফিরে তাকায়…
সানিয়া – কুহু…. কুহু কোথায় গেলো?
রিহা – আমাদের সাথেই তো আসছিলো। পেছনে ছিলো কই গেলো ও?
সানিয়া – ওফফফ এই মেয়ে টা না! কিছু না বলেই চলে গেলো। এখন কোথায় খুঁজবো বল তো?
কুহু ক্লাসথেকে বের হয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।
দৌড় দিয়েই সানিয়া আর রিহার সামনে পড়ে…
সানিয়া – এই তুই কোথায় ছিলি? হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি নাকি?
রিহা – হ্যা সেই তো। আমিও ভাবলাম আমাদের মাঝ খান থেকে তোকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলো নাকি?
কুহু – হ্যা সেটাই তো করেছে (অন্যমনস্ক হয়ে)
রিহা – কিহহহ? (অবাক হয়ে)
সানিয়া – তোকে কেউ কিডন্যাপ করেছে আবার এনে দিয়েও গেছে? বলি তুই তো পাগল হয়েছিস এবার আমাদেরও পাগল করে ছাড়বি!
কুহু – আরে রাখ না। আচ্ছা তিশান কে চিনিস?
কুহুর এমন প্রশ্নে সানিয়া রিহা দু’জনই অবাক হয়ে যায়।
সানিয়া – তিশান? (অবাক হয়ে)
রিহা – তিশান আবার কে?
কুহু – জানিস না তাইনা? হ্যা আমিও তো জানিনা তিশান কে?
রিহা – কুহু তুই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস?
কুহু – আরে না! সত্যিই বলছি আমিও তো চিনি না তিশান কে?
সানিয়া – হয়েছে? এবার তোর এইসব কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল। ক্লাস বোধহয় শুরু হয়ে গেছে।
কুহু – হ্যা চল।
সানিয়া আর রিহা কুহুকে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাসে সবাই যার যার মতো মন দিলেও কুহুর মন পড়ে আছে রেহানের বলা কথা গুলো ভাবতে!
কুহু – ( কে এই তিশান? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওফফফ! আমি তো পাগল হয়ে যাবো এতো টেনশনে।)
ক্লাস শেষে কুহু একা একাই বের হয়ে আসে।
সানিয়া আর রিহা পেছন পেছন দৌড়ে বের হয়।
রিহা – কুহু…. ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছিস কেনো? ওহহ ভার্সিটি তে উঠতে না উঠতেই পালটে ফেললি?
কুহু – কি পালটে ফেললাম? (অবাক হয়ে)
সানিয়া – বুঝতে পারছিস না কি? আমাদের।
কুহু – তোদের পালটাবো? পাগল হলি নাকি?
সানিয়া – তাহলে এভাবে ফেলে রেখে নিজে নিজেই চলে যাচ্ছিলি কেনো?
কুহু – সরি রে। আসলে মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে তাই ভুল হয়ে গেছে।
রিহা – ওকে। এখন কি বাসায় চলে যাবি?
কুহু – হ্যা তো?
সানিয়া – না মানে কিছুক্ষণ থাকবি না?
কুহু – নাহ।
রিহা – কুহু… তুই কি কোনো কারনে আপসেট?
কুহু – আরেহ না। আমি একদম ঠিক আছি।
রিহা – দেখ আমাদের বলতে পারিস। আমরা তো তোর ফ্রেন্ড তাইনা। হেল্প ওত করতে পারি। বলেই দেখ না।
সানিয়া আর রিহা জোর করায় কুহু রেহানের বলা সব কথা বলে দেয়। রিহা সানিয়া দুজনই অবাক হয়ে যায়….
সানিয়া – তিশান মানে? রেহান ভাইয়া কি ভাবছে তোর বফ আছে? যার নাম তিশান?
কুহু – হ্যা।
রিহা – কি বলিস? আমরা তো জানি তোর কোনো বফ নেই ইভেন তুই কোনো রিলেশনও করিস নি। তাহলে তিশান আসলো কোথ থেকে। তুই কোনো দিনও আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাস নি। আমরা নিশ্চয় জানতাম।
সানিয়া – আমার কি মনে হই জানিস? রেহান ভাইয়াকে কেউ তোর নামে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। এই জন্যই রেহান ভাইয়া তোকে ভুল বুঝছে।
কুহু – হোয়াট? ঐ ছেলে আমাকে ভুল বুঝলো বা ঠিক বুঝলো তাতে আমার কি যায় আসে। আমার একটাই কথা তিশান কে? আমি কোনো দিন রিলেশন করি নি তাহলে উনি কেনো এই সব বলছে?
আমি এতো বড় মিথ্যে মেনে নিবো কেনো?
সানিয়া – তার জন্য তো ভাইয়া কে সবটা বলতে হবে তাইনা। না বললে তো ভাইয়া ঐ মিথ্যাটা কেই সত্যি মনে করবে।
রিহা – কুহু তুই মন খারাপ করিস না। দেখ আমার কি মনে হই জানিস কেউ হয়তো তোকে আর ভাইয়াকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে। এতো স্মার্ট একটা ছেলে তোর পিছন পরে আছে অথচ তুই পাত্তাও দিচ্ছিস না তাই কেউ তোর নামে বাজে কথা বলেছে ভাইয়াকে।
তুই কিছু চিন্তা করিস না আমি নিজে ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। আমি ভাইয়াকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।
কুহু – আজিব ওকে কি বলবি তুই। ওকে কেনো বুঝাতে যাবি। কে ও? আমি শুধু জিগ্যেস করবো আমার সম্পর্কে এতো খারাপ কথা বলার সাহস হলো কি করে।
সানিয়া – আচ্ছা বাবা এবার বাড়ি চল।
রিহা – হ্যা তুই বরং বাড়ি যা। গিয়ে রেস্ট কর। তোর এমনি তেই মাথা গরম। বাড়ি যা।
কুহু সানিয়া আর রিহা বেরিয়ে যায়। কুহুকে এক রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে সানিয়া আর রিহা অন্য রিকশায় উঠে যায়।
এদিকে কিছুক্ষন পরই রেহান পুরো ক্যাম্পাস খুজতে শুরু করে। কিন্তু কুহুকে কোথাও দেখতে পায় না। রেহান কালকের মতো গেইটের বাইরে এসে ফুচকাওয়ালার কাছে যায় কিন্তু সেখানেও কুহুকে দেখতে পায় না। রেহানের প্রচন্ড রাগ হয় কুহুর উপর।
রেহান – এই মেয়েটার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। এতো সাহস হয় কি করে ওর!
কালকে এতো বলার পরও আজ চলে গেলো! বার বার বলেছিলাম আমি পৌঁছে দিবো। আমার জন্য ওয়েট না করেই চলে গেছে! নিশ্চয় ওর তিশান ওকে পৌঁছে দিবে তাই চলে গেছে।
আজ যদি ওকে রাস্তায় পাই না জ্যান্ত পুঁতে দিবো বেয়াদব মেয়ে!
রেহান রেগে হনহন করে বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।
কুহু – এই লোকটা আসলেই বাজে। না জেনেই আমাকে এতো গুলো কথা শুনিয়েছে! আর কোনো দিনও উনার সামনেও যাবো না ফালতু লোক কোথাকার।
বাসার সামনে এসে কুহু রিকশা থেকে নেমে অবাক হয়ে যায়….
রেহান কুহুর বাসার সামনে দু’হাত বুকে গুঁজে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রেহান কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক টা রেগে আছে সে।
রেহানের কথা গুলো মনে পড়তেই কুহুর রাগ উঠে। কুহু রেহান কে উপেক্ষা করে বাসায় ঢুকে পরে৷ রেহান কে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি এমনকি নিজেও কিছু বলেনি।
রেহান কুহুর কাজে আরও রেগে যায়।
রেহান – এখন তো আমাকে এড়িয়ে যাবেই। তোমার তিশান কে পেয়েছো না! ইচ্ছে করছে তোমাকে আর তোমার ভালোবাসার তিশান দু’জনকেই উপরে পাঠিয়ে দিই।
কুহু বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে যায়। জেরিন বিষয় টা খেয়াল করেই বুঝতে পারে কুহুর কিছু একটা হয়েছে।
জেরিন – নিশ্চয় আমার হিরো কিছু একটা বলেছে আপি কে। না হলে তো আপি এতটা চুপচাপ কোনো দিন থাকেনি। ওফ! আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!

চলবে……..

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৮
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহান কুহুর আচরণ দেখে রেগে সেখান থেকে চলে আসে।
বাসায় এসে ফোন হাতে নিতেই দেখে জেরিনের ম্যাসেজ। যেহেতু কাল জেরিন নাম্বার টা দিয়েছিলো আর রেহানের সাথে কথাও হয়েছে তাই জেরিনের নাম্বার টা চিনতে রেহানের বেশি একটা সমস্যা হয় নি।
অনিচ্ছা স্বত্তেও রেহান ম্যাসেজটা ওপেন করে।
জেরিন রেহান কে দেখা করতে বলে সাথে একটা কফিশপের নামও পাঠায়।
রেহান খনিকটা বিরক্ত বোধ করে তাও রেহান ভাবে হয়তো দেখা করলে তিশানের বিষয়ে কিছু জানা যাবে।
রেহান রাজি হয়ে যায় সাথে জেরিন কে একটা ম্যাসেজ পাঠায়।
” ওকে আসবো ”
ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে রেহান ফোন অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
কিছুক্ষন পরই রেহানের মা আসে…
রেহানের মা – তুই ফ্রেশ ও হলি না খেতেও আসছিস না। কি হলো তোর?
রেহান – কিছুনা মা আমি খাবো না তোমরা খেয়ে নাও।
রেহানের মা – দেখ তুই না আসলে যে তোর বাবা কতোটা রেগে যাবে তুই ভালো করেই জানিস। তাই বলছি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
রেহানের ইচ্ছে নেই খেতে যাওয়ার তাও ওর বাবার রাগ না দেখতে ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়।
খাবার টেবিলে রুপসা আর রেহানের বাবা বসে একসাথে গল্প করছে।
রুপসা – ভাইয়া এনেছো?
রেহান – কী? (অবাক হয়ে)
রুপসা – তার মানে আনে নি তাই তো? তোমার আজ দুপুরের খাওয়া বন্ধ। (রেগে)
হটাৎ রেহানের মনে পড়ে রুপসা তো আইসক্রিম চেয়েছিলো।
রেহান কোনো রকমে রুপসাকে শান্ত করাতে চাইছে।
রেহান – দেখ রুপ আমার না একটুও খেয়াল ছিলো না। তবে বিকেলে পেয়ে যাবি।
রুপসা – প্রমিস?
রেহান – পাক্কা প্রমিস। (মুচকি হেসে)
রেহানের মা – দুই ভাই বোনের গল্প করা শেষ হলে এবার তাহলে খাওয়া শুরু করো।
রেহান – হ্যা মা।
খাওয়া শেষ হলে রেহান নিজের রুমে চলে যায়।
রুমে এসে বিছানায় শুয়ে রেহান ফোন টা হাতে নিতেই দেখে প্রণয়ের ফোন।
রেহান – হ্যা বল..
প্রণয় – কিরে তুই কোন গ্রহে আছিস?
রেহান – মঙ্গলগ্রহে কেনো?
প্রণয় – আজ তো ভার্সিটিতেও গেলাম না একবার দেখাও করলি না। বাহ ভাবিকে পাওয়া মাত্রই আমরা আউট তাই তো।
রেহান – ফাজলামি করিস না তো? কিছু বললে বল।
প্রণয় – কিছু হয়েছে দোস্ত? তুই এমন ভাবে কথা বলছিস হটাৎ?
রেহান – না কিছুই হয়নি।
প্রণয় – দেখ আমাকে না বললে যে তোর রাতে ঘুম হয়না সেটা আমি ভালো করেই জানি সো ন্যাকামি না করে বল কি হয়েছে?
রেহান – আরে বললাম না কিছু হয়নি।
প্রণয় – ওকে না বলতে চাইলে বলিস না। এজ ইউর উইশ।
রেহান – হুম। কাল ভার্সিটিতে যাবি?
প্রণয় – হ্যা যাবো।
রেহান – ওকে কাল কথা হবে নাউ বাই।
রেহান ফোন টা কেটে দেয়।
এদিকে জেরিন অনেক সাজুগুজু করছে নিজের রুমে।
কুহু জেরিনের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জেরিন কে সাজতে দেখে দাড়িয়ে যায়।
কুহু – কিরে! কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
জেরিন – হ্যা আপি আসলে একটা কাজ আছে তাই যেতে হবে।
কুহু – আমাকে তো বললি না! তুই একা যাবি?
জেরিন – হ্যা। তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি যেতে পারবো। তাছাড়া আমি এখন রাস্তা অনেক টাই চিনে নিয়েছি। অনেকদিন তো থাকছি এখানে। এখানকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে অনেক টা ধারনা জন্মেছে।
কুহু – (জেরিনের হটাৎ এতো পরিবর্তন? ও তো কোনো দিন আমাকে ছাড়া কোথাও যায়নি। আজ একা একা চলে যাচ্ছে। আমাকে তো একবার জানাতে পারতো।…. মনে মনে)
জেরিন – কি হলো আপি? কিছু ভাবছো?
কুহু – হ্যা….কই না কিছু ভাবছি না তো। আচ্ছা সাবধানে যাস। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমায় বল আমি দিয়ে যাই।
জেরিন – না আপি কিছু লাগবে না আমার। তুমি চিন্তা করো না আমি তারাতারি বাসায় ফিরবো।
কুহু – ঠিক আছে। সমস্যা হলে ফোন করিস কেমন।
জেরিন – ওকে আপি। — বলেই বেরিয়ে যায়।
জেরিন রিকশা নিয়ে চলে আসে। কুহু জানালা দিয়ে দেখে কিছুটা অবাক হয়।
কুহু – কি ব্যাপার? জেরিন রিকশা করে গেলো? একা একা বেরিয়েছে ড্রাইভার কে বললেই তো পারতো ওকে পৌঁছে দিতো। মেয়েটা যে কি করে না মাঝে মাঝে!
জেরিন কফিশপে এসে প্রায় ৩০ মিনিট বসে আছে। এই ৩০ মিনিটপ জেরিনের ৩০ বার রেহানকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছিলো বেচারির যেনো তর সইছে না। কিন্তু রেহান যে কতোটা রাগি তা জেরিন ও আন্দাজ করতে পেরেছে। রেহানকে ফোন দিলে ও নিশ্চয় রেগে যাবে তাই আর ফোন দেয়ার সাহস হয়নি।
কিন্তু অনেক খন পরও রেহান কে আসতে না দেখে জেরিন ফোন করে…
ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙে রেহানের।
মোবাইলের স্কিনে জেরিনের নাম্বার টা দেখতে পায়। পাশে ঘড়িতে তাকাতেই দেখে ৫ টা বাজে। প্রণয়ের সাথে কথা বলে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো কখন যে ঘুমিয়ে গেছে!
জেরিনের সাথে বিকেল ৪ টায় দেখা করার কথা ছিলো। এখন বাজে ৫ টা নিশ্চয় মেয়েটা এতোখন ওয়েট করেছিলো।
কিন্তু তাতে রেহানের বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই!
রেহান ধীরেসুস্থে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
পথে জেরিন আরও অনেক বারই ফোন দেয় রেহান কে কিন্তু রেহান কল রিসিভ করে নি।
২০ মিনিট পর রেহান কফিশপে পৌঁছে। তখন প্রায় ৬ টা বাজতে চললো। জেরিন প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হয়ে যায়। তাও মুখে প্রকাশ করে নি।
রেহানের সাথে হাসি মুখেই কথা বলা শুরু করে।
রেহান – বলো কি বলবে? (চেয়ার টেনে বসতে বসতে)
জেরিন – হ্যা অবশ্যই। কফি অর্ডার করি আগে।
রেহান – তুমি চাইলে তোমার জন্য করো। আমাকে কি বলবে সেটা বলে ফেলো আমার তাড়া আছে।
জেরিন রেহানের কথায় রেগে যায়। অনেক কষ্টে নিজের রাগ টা কনট্রোল করে…
জেরিন – দেখুন এটা কেমন দেখায় না। আপনি বসুন না দু’জনের জন্যই অর্ডার করি। কফি শেষ হতে হতেই সব বলবো। ওকে?
রেহান কিছুটা বিরক্ত ফিল করলেও রাজি হয়ে যায়।
জেরিন দু’জনের জন্য দুইটা কফি অর্ডার করে।
জেরিন – আচ্ছা আপনার নাম টা নিশ্চয়
জানতে পারি? আসলে এখনো তো আপনার নাম টাই জানা হলো না তাই আরকি!
রেহান – আমার নাম জিগ্যেস করার জন্য ডেকেছো? (রাগি কন্ঠে)
জেরিন – না তা কেনো হতে যাবে। আপনি বলতে না চাইলে থাক। (এই ছেলেটা এতো বদমেজাজি কেনো? ওফফ জাস্ট অসহ্য!)
রেহান – রেহান ওয়াহিদ।
জেরিন – বাহ সুন্দর নাম তো! আমার নাম জিগ্যেস করলেন না যে?
রেহান – আমি তোমার সাথে এখানে প্রেমআলাপ করতে আসিনি ডেম এট!
জেরিন রেহানের ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায়৷ এর মধ্যেই অর্ডার করা কফি নিয়ে আসে। জেরিন একটা কফি রেহানের দিকে এগিয়ে দেয় আরেকটা নিজে নেয়।
জেরিন – আসলে আপনাকে যে কারনে ডেকেছিলাম… আপনাকে তো কাল তিশান ভাইয়ার ব্যাপারে সব বললাম। তো কি ডিসিশন নিলেন?
রেহান – কিসের ডিসিশন? (অবাক হয়ে)
জেরিন – আই মিন… আপির তো বফ আছে। তো আপির পিছু পড়ে থাকাটা কেমন দেখায় না। তাই আরকি।
রেহান – আচ্ছা কুহুর যে বফ আছে সেটা তুমি জানো কিভাবে?
জেরিন – আমি জানবো না তো কে জানবে? আপি আমার কাছে সব কিছুই শেয়ার করে। আর তিশান ভাইয়া যখন আপিকে প্রপোজ করেছিলো ফাস্ট আপি আমাকে দেখিয়েছিলো আমি বলেছিলাম ছেলেটা দেখতে মন্দ না ব্যাস আপিও হ্যা বলে দিলো।
রেহান – তোমার আপু তোমার কথায় উঠে বসে নাকি? এতো বড় একটা ডিসিশন তোমাকে জিগ্যেস করেই নিয়ে নিলো! হতেও তো পারে ছেলেটা ভালো না। বা কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কুহুকে প্রপোজ করেছে।
জেরিন – না না। তা হবে না কারন তিশান ভাইয়াকে আমি অনেক ভালো করেই চিনি। তাছাড়া ভাইয়ার সাথে অনেক কথা বলতাম ইভেন এখনো বলি।
জানেন আপি আর ভাইয়া ঝগড়া করলে তো আমিই সমাধান করে দিই।
রেহান – ওহ রিয়েলি?
জেরিন – হ্যা। আপি ভাইয়াকে এতোটাই ভালোবাসে আপি অন্য কারো সাথে বিয়ের কথাটাও সহ্য করতে পারে না। আপি তো বলেই দিয়েছে বিয়ে করলে তিশান ভাইয়া কেই করবে!
রেহান – আচ্ছা তিশানের বাড়ির এডড্রেস টা দাও তো।
জেরিন – ইয়ে মানে… ভাইয়ার বাসা কোথায় তা তো আমি জানিনা।
রেহান – বাসা কোথায় জানো না? অথচ তোমার বোন কে রিলেশন এ রাজি হতে বলে দিয়েছো? আচ্ছা কোনো ব্যাপার না। ওর ফোন নাম্বার টা নিশ্চয় আছে তোমার কাছে?
ফোন নাম্বার টা দাও।
রেহানের কথা শুনে জেরিন বিষম খেয়ে যায়।
জেরিন – আ..আসলে.. ফোন নাম্বার ছিলো… ক…কিন্তু ডিলিট হয়ে গিয়েছে।
রেহান – ওহহ আচ্ছা। কুহুর নাম্বার আছে নিশ্চয়?
জেরিন – হ্যা আছে৷ (এইরে আপির ফোন নাম্বার দিয়ে আবার কি করবে? যতোই চাইছি ভুলাতে তাও পেরে উঠছি না অসহ্য!….মনে মনে)
রেহান – ওকে ফাইন। কুহুকে কল দাও এন্ড ফোন টা লাউড দিয়ে কথা বলবে ওকে?
জেরিন – ক…কি বলবো?
রেহান – বলবে যে তোমার কাছ থেকে তিশানের নাম্বার টা ভুলবশত ডিলিট হয়ে গেছে। এখনি যেনো তিশানের নাম্বার টা তোমাকে সেন্ট করে।
জেরিন এবার জোরে জোরে কাশতে থাকে। রেহানের কথা শুনে ভয়ে জেরিনের হাত পা কাঁপছে। রেহান কি সত্যি টা জেনে গেলো!!
রেহান – আর ইউ ওকে? (বাঁকা হেসে)
জেরিন – হ..হ্যা আমি ঠিক আছি।
রেহান – ওকে গুড। দেন আমার কাজ করো জলদি ফোন নাম্বার টা নাও।
জেরিন – আসলে হয়েছে কি আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ তাই…
রেহান – ওহহ ওকে। তাহলে অন্য একদিন নিয়ে নিবো। আজ তাহলে উঠি।
জেরিন – হ্যা হ্যা শিওর। (জেরিন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে)
রেহান কফির বিল মিটিয়ে দিয়ে জেরিন কে বাই বলে চলে যায়৷ জেরিন রিকশা করে বাড়ি চলে যায়। আর রেহান বাইকে করে।
বাসায় এসে রেহান নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে আর ভাবতে থাকে…
রেহান – আমার সন্দেহ টাই যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি পাড় পাবে না। এর মাশুল দিতে হবে তোমাকে!

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here