তোমাতেই পর্ব_২

0
2603

তোমাতেই
পর্ব_২
Arobi_Akter_Poly

পুতুলের মাথায় হাত ভুলিয়ে রুজি খালা কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন,,,

১৪ বছর পর।। পুতুলের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মুগ্ধর পরিবারই তার হয়ে যায়,,, সালমা বেগমের কাছে মুগ্ধ যেমন পুতুল তেমনই,,, ১৪ টা বছর ধরে সে পুতুলকে কুলে-পিঠে করে মানুষ করেছে।।পুতুলকে কখনো বাবা-মায়ের অভাব অনুভব করতে দেয়নি তারা।। নিজের মেয়ের থেকেও বেশি কিছু পুতুল তাদের কাছে।। এত্ত ভালোবাসা।। এখন তো পুতুলের নিজের বাবা-মায়ের কথাও মনে পড়ে না ,,,,,, মুগ্ধর বাবা-মাকেই আপন করে নিয়েছে সে ।।

হাজারো মেয়ের হার্ট-থ্রব ছেলে মুগ্ধ। কারো বা ডাইরীর পাতায় তার ছবি কারো আবার ল্যাপটপে।। লম্বায় ৬ ফুট, সিক্স-প্যাক সুঠাম বডি গায়ের রং ফর্সা।। যেমন সুদর্শ দেখতে তেমনই স্মার্ট,,, ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট সে।। সেখানেও খুব পরিচিত মুখ মুগ্ধ।। গেংয়ের লিডার বলে কথা।। তবে তা খান পরিবারের কেউ জানে না।।

পুতুল খুব সাদামাটা স্বভাবের মেয়ে।। ছোট বেলার সেই রোগ সে আজও বহন করে আসছে।। যদিও খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট পুতুল।।চোখে চশমা,গায়ের রংটা উজ্জ্বল সুন্দর।। চুপচাপ স্বভাবের।। এবার এইচএসসি পাস করলো গোল্ডেন A+ নিয়ে। ।

মুগ্ধ আর পুতুল এখন দুজন দুজনাকে আর তুই-তোকারি করে না, “তুমি ” করে বলে।। এত বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে পরিবর্তন হয়নি শুধু একে অপরকে সহ্য করতে পারাটা ,, পারলে দুজন যেন দুজনকে চিঁবিয়ে খায় এমন অবস্থা।। একে অপরকে এতটাই অপছন্দ করে যে একঘরে থেকেও ঝগড়া ছাড়া তাদের মধ্যে কোনো কথাই হয়না,,।। দুজনের শুয়ার রুম দু-দিকে। মুগ্ধের রুমে পুতুল যাওয়া বারন পুতুলের রুমে মুগ্ধ, এটাই চুক্তিপত্র হয়েছে তাদের মধ্যে।।

দিন যায়, বছর যায় কিন্তু এখনো তাদের মধ্যে মিল কারো চোখে পড়েনি ,,,,,, মিসেস সালমা আর মিস্টার করিম খান খুবই হতাশ দুই টম এন্ড জেরিকে নিয়ে,,,

রাত ৯ টা।। খান পরিবার ডিনার করছে।। বড় চেয়ারে করিম খান তার বিপরীতে সালমা বেগম পুতুল দক্ষিণ পাশে আর মুগ্ধ উত্তর পাশে।।। পুতুল তেমন খেতে চায়না তাই সালমা বেগম জোর করে তাকে লোকমা দিয়ে খাওয়াচ্ছে,,,

-হয়েছে মা আর না প্লিজ,,
-তুই চুপ কর না খেতে খেতে শুকিয়ে যাচ্ছিস এবার থেকে আমিই তোকে ভাত খাইয়ে দিব,,
-না না প্লিজ মা আর না,,

সালমা বেগম রুবিকে বলে পুতুলের পাতে মুরগীর আরেকটা রান দিতে,, রুজি খালার পরিবর্তে এখন তার মেয়ে আসে কাজে।। পুতুল রুবির সাথে প্রায় এটা ওটা নিয়ে গল্প করে।। তাকে গিফট দেয়,, তাইতো সে পুতুলকে খুব পছন্দ করে আর ছোট ম্যামসাহেব বলে ডাকে,,,

পাশ থেকে মুগ্ধ খুব তাড়াতাড়ি করে ভাত খেতে খেতে বলে,,

-আদর দিতে দিতে বাদর করে ফেলেছ আরও করো,,

পুতুল মুখ ভর্তি ভাত নিয়ে নাক লাল করে রাগী লুক নিয়ে বলতে থাকে,,,

-তাতে তোমার কি,,

এক চামচ ভাত নিতে নিতে করিম খান বলে উঠলেন,,,
-পুতুল যে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে তুই জানিসনি মুগ্ধ?

মুগ্ধের প্লেটে ভাত প্রাই শেষ,,
-হুম জানি,,
-তো বউমা এতো ভালো রেজাল্ট করলো আর তোর কোনো আনন্দ নেই? কংগ্রেসও নাকি জানাসনি?

-আমার লাগবে না ওঁ’র কংগ্রেস (মুখ ভেকচিয়ে)
-আমি দিলে তো লাগবে নাকি,,,,,(মুচকি হেসে) টেবিল থেকে উঠে ভেসিনে হাত ধুঁচ্ছে মুগ্ধ ,,

-ভাবছি পুতুলকে তোর ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিব,,, ভার্সিটিতে পরিচিত কেউ থাকলে তো ভালোই ওখানে আবার অনেক বদ ছেলে-মেয়ে আছে,, ভার্সিটির লিডার,, বুঝিস তো পুতুল মা খুব,,

মুগ্ধ ভেসিনের আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল ঠিক করে,,,

-বাবা,,, আমি তোমার মেয়ের বডি-গার্ড না,, আর সে নাকি খুব ভালো স্টুডেন্ট তাহলে মেডিকেলে চলে যাক,,

-তুই ও’র বডি-গার্ড থেকেও বেশি কিছু,,,, তোর বউ ওঁ তুই ওঁ’র স্বামী,, আর স্ত্রীকে হেফাজতে রাখা একজন স্বামীর কর্তব্য,,,

মুগ্ধ কিছুটা বিরক্ত হয়ে,,

-বাবা, এসব স্বামী -স্ত্রী তোমাদের কাছে হবে,, আমার কাছে এই মেয়ে প্যারা ছাড়া কিছুই না,,,( রুমে চলে গিয়ে)

-মুগ্ধ,,,,,( ধমকের স্বরে)

-থাক বাবা আমারও কোনো ইচ্ছে নেই এই বাদরটার ভার্সিটিতে যাওয়ার।।। এটা বলে পুতুলও টেবিল থেকে উঠে গেলো,,

মিসেস সালমা আর মিস্টার করিম একে অপরের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে,,,,,

রাত ৩ টা বাজে পুতুলের খুব পিপাসা পেয়েছে।।পাশে রাখা পানির গ্লাসটা থেকে ঢাকনাটা সরিয়ে পুতুল ঘুম ঘুম চোখে পানি পান করতে লাগলো।।। হঠাৎ তার মুখে কিছু একটা চলে যায়,, পুতুল চোখ বড় বড় করে মুখ থেকে পানি ফেলতেই দেখে মিডিয়াম সাইজের একটা তেলাপোকা,,,একটু হলেই সে এটা গিলে খেতো ভাবতেই পুতুল বমি করে দিলো,, ছ্বি ছ্বি।। তেলাপোকা পানির মধ্যে কিভাবে গেলো গ্লাস তো ঢাকা ছিলো ।। আর তাদের বাসায় তো কোনো তেলাপোকা নেই তাহলে,,,, তারপর তার চোখ গেলো গ্লাসের নিচে রাখা চিরকুটে,,,,, সে হাতে নিয়ে তা পড়তে লাগলো,,,

“খুব কষ্ট করে আকবর চাচাকে দিয়ে তেলাপোকাটা আমদানি করেছি,,, শুনেছি বাদররা তেলাপোকা খুব পছন্দ করে,,, তেলাপোকা গিলে খেয়েছ নাকি চিঁবিয়ে তা সকালে জানাতে ভুলবে না কিন্তু,,,

চিরকুটটা পড়ে পুতুল রাগে গজগজ করতে লাগলো পারলে সে এখনই ছেলেটাকে বালিশ চাঁপা দিয়ে মেরে ফেলতো,,, কিন্তু না এর মজা সে মুগ্ধকে সকালে দেখাবে,,,,,

সকালে মুগ্ধ চোখে এসে সূর্যের নরম আলো পড়ছে।।মুগ্ধ আসতে আসতে চোখ খুলতে ট্রাই করে,, কাল রাতে বাজি ধরে এতো গুলো ওইস্কি না খেলেই যেনো ভালো ছিলো,, প্রিয়ম খুব জোর করলো বাজি ধরতে তাই,,, প্রিয়মের কথা আসতেই হঠাৎ তার মনে পড়ে আজ ভার্সিটিতে তার খুব জরুরি কাজ ছিলো,,,, একজনকে খুব ভালোভাবে শায়েস্তা করতে হবে ।। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো মুগ্ধ।। মোবাইলটা অন করতেই দেখে প্রিয়ম, মৃদ্ধা,নীর, জেন্নির মোটমাট ৯৮ টা কল,, ফোন সাইলেন্টে থাকায় রিংকল শুনতে পায়নি,,,

খুব জলদি সে রেডি হচ্ছে।। হাতে টাইম নেই তাই রুনিকে বলে তার নাস্তাটা রুমে দিয়ে যেতে।।রুবি এসে ভয়ে ভয়ে তাকে চিকেন নুডলসের বাটিটা দিয়ে যায়,,

মুগ্ধ প্রিয়মকে কল করে কাঁধ দিয়ে ফোনটা ধরে হাতে নুডলসের বাটিটা নেয়,,, কাঁটা চামচটা দিয়ে নুডলস গুলো নাড়তে থাকে,,,

-হ্যালো হুমম আমি আসছি
-কই তুই,, তাড়াতাড়ি আয় আমরা সবাই অপেক্ষা করছি

মৃদ্ধা ফোনটা নিয়ে,,

-অপেক্ষা করছি কিন্তু,,,
-হুম আসছি

ফোনটা রেখে মুগ্ধ সোফায় বসে পরলো।। সে লক্ষ্য করলো নুডলস ভর্তি শুধু ইয়া বড় বড় চুল এগুলো কোনো মতেই খাওয়া যাবে না।। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কাজটা কার? আর এখন তার এতো সময়ও নেই যে সে এটা নিয়ে কিছু বলবে তবে এর মজা সে পুতুলকে অবশ্যই দিবে।। রাগে মুগ্ধ বাটিটা ফ্লরে ছুড়ে ফেলে বেরিয়ে পড়ে ।।

করিম খান ড্রইংরুমে বসে পেপার পড়ছিলেন তার পাশেই পুতুল বসা।। মুগ্ধকে দেখে মুখ চেঁপে হাসতে লাগলো,,,

-কি রে কোথায় যাচ্ছিস আজ না পুতুলকে এডমিট করাবো তুই যাবি না আমাদের সাথে?

মুগ্ধ নাক মুখ লাল করে রক্তমাখা চোখে পুতুলের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,,,

– এই মেয়েকে তুমিই নিয়ে যাও,,,,

এটা বলেই সে বাইকের চাবি নিয়ে চলে গেলো,,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here