তোমাতেই পর্ব_১৩,১৪

0
1946

তোমাতেই
পর্ব_১৩,১৪
Arobi_Akter_Poly
পর্ব_১৩

মৃদ্ধার হাত-পা কাঁপছে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।প্রিয়ম মৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে।

গাড়ি নিয়ে ডাইরেক্ট বাসায় চলে আসে মৃদ্ধা। দরজা আঁটকিয়ে রুমের সব জিনিসপত্র ভেঙে তছনছ করে ফেলে সে।চোখ যেন আজ কোনো বাধ মানছে না। পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। মুগ্ধ শুধুই মৃদ্ধার। পাগলের মত কাঁন্না-কাটি করতে লাগল মৃদ্ধা।নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে লাগল সে। খুব জোরেই চিৎকার করে বলল।

“মুগ্ধ তুই শুধুই মৃদ্ধার আর কারো নস”

মৃদ্ধার মাম্মি বারেবারে দরজা খোলার জন্য খুব আকুতি মিনতি করছে তাকে কিন্তু মৃদ্ধা তার কোনো কথাই শুনছে না। কর্মরত স্টার্ফ গুলো দরজা ভেঙে দেখলো মৃদ্ধা একটি কাঁচের টুকরো হাতে নিয়ে আত্নহত্যা করার চেষ্টা করছে।

মিসেস দিলারা দৌড়ে এসে মৃদ্ধাকে আঁটকায়। কষে একটা চর মারে। মৃদ্ধা বিছানায় পড়ে কাঁদতে থাকে।

-কি হয়েছে তোর? পাগলের মত কিছু না বলেই দরজা আঁটকিয়ে দিলি আর এখন এসব।

মৃদ্ধা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে,

-আমি বাঁচতে চাইনা মাম্মি। মুগ্ধকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।
-হ্যাঁ ঠিক আছে তো। আগে তোরা ফাইনাল এক্সামটা দে তারপর না হয়,,,,,,
-না মাম্মি আমাদের বিয়ে আর হবার নয়।
-কেনো রে কি হয়েছে?
-মুগ্ধ, মুগ্ধ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে মাম্মি।আমি এসবের কিছুই জানতাম না। সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে,,
-কি? এমনটা মুগ্ধ করতেই পারে না। আমার মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় করে অন্য কেউকে বিয়ে করেছে? মামা বাড়ির আবদার? এটা আমি কিছুতেই মানতে পারবো না।

আলতো করে মৃদ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে,

-তুই টেনশন করিস না। আমি তোর বাপ্পির সাথে কথা বলে দেখছি কি করা যায়।

মৃদ্ধা দিলারা সুলতানাকে জড়িয়ে ধরে,

-আমি মুগ্ধকে খুব ভালোবাসি মাম্মি খুব। ওকে না পেলে আমি আর পৃথিবীতে থাকতে চাই না।
-আহা! চুপ করত। বললাম তো একটা ব্যবস্থা হবে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

পুতুল চোখ খুলে নিজেকে তার রুমে আবিষ্কার করল। পাশেই বসে আছে সায়মা বেগম।ওই একটু দূরে মুগ্ধ দাড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে।

ডাক্তার সাহেব পুতুলের হাত থেকে স্ফিগমোম্যানোমিটার টা সরিয়ে নিচ্ছেন।

-এখন আর টেনশন করার কিছু নেই। মাথা থেকে স্ট্রেস সেরে গেলে পুতুল মা আবারও সুস্থ হয়ে যাবে তার জন্য দরকার প্রোপার রেস্ট।

সায়মা বেগম পুতুলের দিকে তাকিয়ে,

-এখন কেমন লাগছে?
-ভালো মা।
-বলেছিলাম হ্যালথী ফুডস খেতে। না, মেয়েটা আমার কোনো কথাই শুনে না। মুগ্ধ না থাকলে কি হতো আজ, বলতো?

ডাক্তার সাহেব সায়মা বেগমকে থামিয়ে দিলেন,

-এখন এসব কথা থাক না,,,, ওর রেস্ট দরকার। মুগ্ধ, তুমি আমার সাথে এসো।

ডিনার করছে খান পরিবার। পুতুলকে নিজের রুমে খাইয়ে দিবে বললেও পুতুল সবার সাথে বসে খেতে চায়, তাই সেও টেবিলে। সায়মা বেগম তাকে লোকমা দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন।

-কি করে হলো?

গম্ভীর হয়ে মুগ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেন করিম সাহেব।

মুগ্ধ বেখেয়ালি হয়ে উত্তর দেয়,

-আমি জানি না বাবা।

করিম সাহেব খুব রেগে যান। টেবিলে খুব জোরে আঘাত করেন। ধমকের স্বরে বলে উঠেন,

-তাহলে তুমি আছো কি করতে? আমার মেয়েটাকে কি তোমার ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছি তুমি কিছু না জানার জন্য।

মুগ্ধ কিছু বলছে না রাগ হচ্ছে তার। পুতুলের উপর আবার নিজের উপর। মৃদ্ধাকে কিছু বলছিলো না কেন, পুতুল? চুপচাপ ধারিয়ে থেকে সিম্প্যাথি নিতে চেয়েছিলো? ওভাবে যার ইচ্ছে সেই পুতুলকে টর্চার করবে আর সে চুপচাপ তা সহ্য করবে? কোনো? কনফিডেন্স নেই? ননসেন্স।

মুগ্ধে বিরক্ত হয়ে না খেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে যায়।

করিম সাহেব নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে মুগ্ধের চলে যাওয়া দিকে চেয়ে থাকেন।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

চৌধুরী পরিবারে এক হতাশার কালো ছায়া। মৃদ্ধা কিছুই খাচ্ছে না। ফ্লোরে বসে বসে শুধু কাঁদছে সে।
মিসেস দিলারা মৃদ্ধার বাপ্পিকে সব খুলে বলেন। আজিজুক হক রেগেমেগে অস্থির হয়ে পড়েন। তার মেয়ের সাথে মুগ্ধ এমনটা কখনোই করতে পারে না এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন তিনি।তার মেয়ের সামনে আবার কে ঠিকবে? কার এতো যোগ্যতা? ওই মেয়েকে সরিয়ে দিতে ব্যাস কিছুক্ষন সময় লাগবে আজিজুক হকের। উনি এখনই করিম সাহেবের সাথে কথা বলবেন।

হঠাৎ করেই করিম সাহেবের পার্সোনাল ফোনে রিং বেঁজে উঠে।করিম সাহেব কলটা রিসিভ করেন সাথে ফোনটা লাউড স্পিকারে রাখেন। পাশেই পুতুল আর সায়মা বেগম খাবার খাচ্ছেন।

-হ্যালো মিস্টার হক।
-করিম সাহেব আপনার সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কথা আছে।
-কি ব্যাপারে।
-মুগ্ধ আর মৃদ্ধা নাকি একই ভার্সিটি অ্যাটেন্ড করে একে অপরকে অনেক আগে থেকেই চিনে-জানে। পছন্দ করে।
-ওহ আচ্ছা।
-জ্বি। একে অপরকে উরা খুব পছন্দ করে। ভালোবাসে,,,,,,
-বন্ধুদের মধ্যে ভালোবাসা থাকাটা অনেক জরুরি। আপনার সাথে আমি কাল মিটিংয়ে কথা বলব।

আজিজুল হক এক গাল হাসলেন,,

-হা হা, এই ভালোবাসা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু।
-কি বলতে চাইছেন?
-আপনি কিছু মনে না করলে আমি চাচ্ছিলাম মুগ্ধের সাথে মৃদ্ধার বিয়েটা দিয়ে দিতে। আপনার ছেলে আমার মেয়েকে অনেক ভালোবাসে।

কথাটা শুনে পুতুলের গলায় খাবার আঁটকে যায়।খুব কাশছে সে । সায়মা বেগম পুতুলকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। পুতুল পানি খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হল। তারপর করিম সাহেবের দিকে তাকালো সে।

করিম সাহেব এবার রেগে উঠে দাড়ালেন।

-বিয়ে? কিসের বিয়ে মুগ্ধ অলরেডি ম্যারেড।
-আহা রাগ করছেন কেনো? আমি জানি মুগ্ধ ম্যারেড। আর ওদের বিয়েটা অবুঝ থাকতে হয়ে গেছে। মুগ্ধ পুতুলের সাথে সুখী নয় সে মৃদ্ধাকে ভালোবাসে। আচ্ছা ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না। ওই মেয়েকে ডিভোর্স,,,,,

কথা শেষ না হতেই করিম সাহেব ফোন কেটে দিলেন। রাগে গজগজ করছেন উনি।

– মেজাজটাই খারাপ করে দিল।

সায়মা বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,

-এসব বিষয়ে কিছু বলার দরকার নেই।কিছু না জেনে হুট করেই কিভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন।আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে এত নাক গলাতে কে বলেছে ওনাকে? আজব মানুষ!

মুগ্ধের বিয়ের কথা শুনে যেন পুতুলের গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না। সায়মা বেগম লোকমা এগিয়ে দিলে পুতুল মুখ বুঁজে খাবে না বলে তারপর উঠে রুমে চলে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আজিজুল হক রেগেমেগে একাকার হয়ে যান। তার মেয়েকে রিজেক্ট করা? এর প্রতিশোধ তিনি আদায় করবেনই।

মৃদ্ধা বিছানায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে ল্যাম্প একবার অন করছে তো আরেকবার অফ করছে। চুলগুলো এলোমেলো, নাক, মুখ লাল হয়ে আছে তার। চোখ বেয়ে অনবৃত পানি পরছে।

পুতুল যতদিন বেঁচে থাকবে মুগ্ধ কোনোদিনও মৃদ্ধার হবে না। সে ভালো করেই মুগ্ধকে চিনে দায়িত্ব, কর্তব্য থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছেলে মুগ্ধ না। আর হয়তো ওই মেয়েটিকে সে ভালোবাসে তাইতো আজও মৃদ্ধাকে এক্সেপ্ট করেনি।

পুতুলের একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবে সে। বিছানা থেকে ফোনটা বের করে নাম্বার ডায়েল করে নেয়,

-হ্যালো কে?
-আমি মৃদ্ধা, জনি। আগামীকাল একবার দেখা করবে আমার সাথে?
-ম ম মৃদ্ধা? মুগ্ধের গার্লফ্রেন্ড,,,,?
-হ্যাঁ আমিই সেই।
-আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে? মুগ্ধের গার্ল্ফ্রেন্ড আমাকে কল করছে যে।
-কাল দেখা হবে, বায়।

প্রিয়ম বারে বসে আছে। একটার পর একটা ড্রিংকস অর্ডের দিয়েই যাচ্ছে সে। পুতুল বিবাহিতা? তাও আবার মুগ্ধের স্ত্রী? উউফফ মন যেনো মানতেই চাচ্ছে না প্রিয়মের। পুতুল শুধুই প্রিয়মের আর কারো হতেই পারে না প্রয়োজনে মুগ্ধকে সরিয়ে দিবে তাদের জীবন থেকে তারপরেও পুতুলকে সে হারাতে পারবে না।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

মুগ্ধ মৃদ্ধাকে ভালোবাসে? তাহলে সে কে? এই ঘরে সে কি করছে? ভালোবাসার উপর তো কোনো জোর নেই। আর মুগ্ধ তো কখনো এমন ইঙ্গিত তাকে দেয়নি তবে মৃদ্ধার সাথে খুব হ্যাপি থাকতে দেখেছে সে। তাহলে কি পুতুল কাবাব মে হাড্ডি হয়ে আছে? এসব চিন্তায় একপ্রকার ব্যাকুল পুতুল। না! আর অপেক্ষা করা চলবে না মুগ্ধকে ডিরেক্ট জিজ্ঞাসা করতে হবে।

মুগ্ধের রুমে গিয়ে দরজাটা খোলাই পেল পুতুল।মুগ্ধ সোফায় বসে টি-টেবিলের উপর পা রেখে ল্যাপটপ ইউজ করছে।

পুতুল দরজায় ২ টা টোকা মারল।মুগ্ধের সেদিকে খেয়াল নেই। এক মনে ল্যাপটপ ইউজ করছে সে।
পুতুল নিজেই কথা বলা শুরু করল।

-আমি কে?

মুগ্ধ ল্যাপটপের স্কিনে চোখ রেখেই উত্তর দিল।

-ভুলে গেলে ন্যাশনাল আইডি কার্ডে দেখে আসেন আপনি কে? কি আপনার পরিচয়।

পুতুল এবার চোখ ভিজিয়ে বলল,

-কার্ডে তো লিখা আমি কারো স্ত্রী। আসলেই কি তাই?

মুগ্ধের চোখ পুতুলের দিকে আঁটকে গেল।মেয়েটা কাঁদছে। সে জানে না? সে কোনো অধিকারে এখানে আছে,সত্যি জানে না। নাকি না জানার ভান ধরেছে।রেগে যাচ্ছে মুগ্ধ। তাদের সম্পর্কে কেনো এত অনিহা কেনো পুতুল স্বীকার করতে নারাজ।

পুতুল চলে যাচ্ছে। মুগ্ধ ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে পুতুলের হাত আঁকড়ে ধরে। এক টানে তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে নেয়। দরজাটা বন্ধ করে দেয় মুগ্ধ।

-ছাড়ো আমাকে।

মুগ্ধ পুতুলের এক হাত উঠিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়। পুতুল ধস্তাধস্তি শুরু করে। মুগ্ধ পুতুলের আরেক হাত উঠিয়ে দেতালের সাথে মিশিয়ে তার এক হাত দিয়ে চাঁপা দিয়ে ধরে রাখে। পুতুল আর নড়াচড়া করতে পারছে না। তার বুক মুগ্ধের সাথে মিশে আছে। মুগ্ধ আস্তে আস্তে পুতুলের কাছে এগুতে থাকে।

-কি করছ? আল্লাহ কি করছ তুমি ছাড়ো আমাকে।

মুগ্ধ পুতুলের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। পুতুলের চোখ দুটো বড় বড় রসগোল্লার মত হয়ে যায়। এক মূহুর্তে সে বুঝতে পারছে না, মুগ্ধ!

পুতুলকে ৫ মিনিট এভাবেই ধরে রাখে মুগ্ধ। তারপর ছেড়ে দেয়। দুজনের ঠোঁট লাল টমেটোর মত হয়ে আছে।

পুতুল ডেবডেব করে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুগ্ধ মুচকি হাসে।পুতুলকে ছেড়ে দেয়।

পুতুল কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই পুতুল দেখতে পায় রুবি আড়ি পেতে আছে। পুতুলকে দেখে ভয়ে ভীতু হয়ে একটা হাসি দেয়। পুতুল রুবির দিকে রাগী লোক নিয়ে তাকিয়ে থাকলে রুবি বলে,

-না। আপনার কন্ঠ শুনলাম তো তাই ভাবলাম আপনাদের মধ্যে কিছু। মানে খারাপ কিছু না ভালো কিছু,,,,,,আচ্ছা আমি গিয়ে শুয়ে পড়ি।

কথাটি বলে সেখান থেকে দৌড়ে পালায় রুবি।

এই মেয়ের যে কি করবে। রাগে খিচুনি দিয়ে পুতুল নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে,

#তোমাতেই
#পর্ব_১৪
#Arobi_Akter_Poly

এই মেয়ের যে কি করবে। রাগে খিচুনি দিয়ে পুতুল নিজের রুমে চলে যায়।

সকালে পুতুল উপুড় হয়ে হাতে মেহেন্দি আঁকছে। তার পায়ের পাশেই রুবি বসে আছে। পুতুলের নূপুরের ঝুমকোটা এক আঙ্গুল দিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে বলছে,

-ম্যাম সাহেব, একটা কথা বলি?
-হুম বল।
-আপনি আবার রাগ করবেন না তো?

পুতুল মাথা ঝাকিয়ে “না” বলল।

-ম্যাম সাহেব আমার মনে হয় ছোট সাহেব আপনাকে ভালোবাসে। উনাকে আর কষ্ট না দিয়ে আপনারা একসাথে থাকা শুরু করলে হয় না?

পুতুল রুবির দিকে মোড়ে সন্দেহ কোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার কেন এমন মনে হল?

-যেইভাবে ছোট সাহেব আপনার দিকে তাকায়,রাতে যখন ছোট সাহেব দেরি করে বাড়ি ফিরে আমার সাথে উনি প্রথম কথা একটাই বলেন “পুতুল খেয়েছে?”,,,

পুতুল খুব মনোযোগ দিয়ে রুবির কথাগুলো শুনছে।

-আপনার মনে আছে? পাশের বাড়ির সাইফ যখন আপনাকে বিরক্ত করত, ছোট সাহেব জানার পর থেকে ওই ছেলেকে আপনার ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। কেন জানেন?

পুতুল অবুঝ হয়ে,

-কেন?
-ছোট সাহেব সেদিন ওই ছেলেকে এমন ধোলাই দিয়েছে । হা,হা,হা আপনাকে নাকি “মা” ডেকেছিল।
-এতকিছু তুমি কিভাবে জানো?
-আমার বান্ধবী মীনা ওঁ তো ওই বাড়িতে কাজ করত সেই আমাকে বলেছিল। আবার আকবর চাচা বলল আপনার জ্বর হওয়ার পর ছোট সাহেব নাকি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন। সারা রাত জেগে আপনার যত্ন নিয়েছেন,,, সব,সবকিছুই বিবেচনা করলে আমি একদম সত্যি বলছি মনে হয় ছোট সাহেব আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

-না রুবি, এসব তো ভালোবাসা না। হতে পারে মায়া। কেউ জ্বরে পড়ে থাকলে আমি কি তার যত্ন নিব না? নিব তো।।
-আপনি কি ছোট সাহেব কে ভালোবাসেন না?

পুতুল মন খারাপ করে,

-অনেক, অনেক বেশি।
-তাহলে বলছেন না কেন?
-সে মজা নিবে। সে আমাকে পছন্দই করে না। আমি কিভাবে বলব ভালোবাসি।

-ছোট মুখে বড় কথা ম্যাম সাহেব। আপনি অনেক বড় ভুল করছেন। এভাবে যদি আপনারা একে অপরকে কখনই না বুঝেন তাহলে আপনাদের ভবিষ্যৎ খুব অন্ধকার বিশেষ করে আপনার,,,,,,, এতটা বেখেয়ালি হবেন না। আপনি ওনার স্ত্রী এটা উনাকে বুঝাতে হবে। নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। না হয় দেখা যাবে অন্য কেউ এসে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে মুগ্ধ সাহেবকে নিজের করে নিয়েছে। তখন আফসোস করবেন, আফসোস!

খুব জোর দিয়েই রুবি কথাটা বলল।তারপর ধপধপ পায়ে হেঁটে চলে গেল।পুতুল চুপসে বসে আছে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

মৃদ্ধা আর জনি একটি কফিটেরিয়ায় বসে আছে। বেশ কিছুক্ষন যাবৎ চুপচাপ ওরা। জনি কথা শুরু করল,

-কেনো ডেকেছ আমাকে? পার্টি বদলাবে নাতো, তাহলে আমার দরজা সবসময় তোমার জন্য খোলা। (বাঁকা হাসি দিয়ে)

মৃদ্ধা হাত থেকে টেবিলে ফোনটা রেখে।

-বাজে কথা বন্ধ কর।আমার একটা জরুরি কাজ করে দিতে হবে।
-হা হা হা হা হা,,,,,
-হাসছো কেন?

জনি হাত দিয়ে ইশারা করে মৃদ্ধাকে কিছুক্ষন হোল্ড করতে বলল।মৃদ্ধা বিরক্তিকর লোক নিয়ে অন্যদিকে তাকালো। তারপর কিছুটা শক্ত গলায় বলল,

-হাসাহাসি শেষ হলে কাজের কথা বলি?
-আচ্ছা ঠিক আছে আগে আমাকে এটা বল, মুগ্ধ থাকতে আমার সাথে তোমার কি কাজ থাকতে পারে?
-মুগ্ধের জন্যই তো,,,,
-কি?
-কেউকে মার্ডার করতে হবে।

জনি যেন কফিটা গিলতে পারছে না। কাপটা টেবিলে রেখে বিরবির করে বলতে লাগল,

-পাগল হয়ে গেছো? মার্ডার? আমি এসব কাজ করিনা। আমি পারবো না।
-তুমি কি পারো আর কি পারো না, সব আমি জানি। আমার সামনে সাধু সাঁজার কোনো প্রয়োজন নেই বুঝতে পেরেছ?

জনি একটু স্বাভাবিক হয়ে।

-কাকে করতে হবে আর এতে আমার লাভ কি?
-মুগ্ধের ওয়াইফকে।

জনি আঁতকে উঠে আর মৃদ্ধার কাছে হাত জোড় করে বলতে থাকে,

-তুমি পাগল তো হয়ে যাওনি? আমাকে মাফ কর। মুগ্ধের বউ? না বাবা ওই সাইকো মুগ্ধ একবার জানতে পারলে আমাকে জিন্দা খবর দিয়ে দিবে । আমি এসবে নাই। সরি।

মৃদ্ধা জনিকে শান্ত করে,

-আরে কথা শোনো মুগ্ধে জানতে পারলে তো,,,,,
-না না এটা করা যাবে না আমি পারব না তুমি অন্য কেউকে দেখ প্লিজ ।আমি যাই তাহলে ।
-তুমি এর বিনিময় যা চাও তাই পাবে।
-কিন্তু ওঁ জানতে পারলে?
-কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না। তুমি নিশ্চিত থাকো।

জনি একটু নড়েচড়ে বসে।মৃদ্ধা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করে,

-তো কত লাগবে তোমার? ২০ লক্ষ? ৩০, ৪০? কত বল।

জনি কিচ্ছুক্ষন মৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরোক্ষনেই তার মনে পড়ে গেল মৃদ্ধার জন্য বহুবার মুগ্ধ তাকে মেরেছিল। আজই প্রতিশোধের সুযোগ! মৃদ্ধা ভ্রু ইশারা করে এমাউন্ট জানতে চাইলো।

-টাকা চাই না আমার।

মৃদ্ধা সন্দেহকোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে,

-তাহলে?
-আমার সাথে এক রাত কাটাতে হবে তোমার।

মৃদ্ধা রেগে টেবিলে আঘাত করে চিৎকার করে বলতে লাগে,

-এসব কি বলছ?বাস্টার্ড।
-ঠিক আছে আমিও তোমার কাজ করব না। আল্লাহ হাফেয।

মৃদ্ধা নিজেকে শান্ত করে। নরম কন্ঠে বলতে লাগে।

-ডান। কাজ শেষ করলে আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি (পুতুলকে রাস্তা থেকে সরাতে সে চাঁদের দেশেও যেতে পারবে)
-গোড গার্ল।

মৃদ্ধা কিছুক্ষণ চুপ থাকে।

-ঠিক আছে। তুমি আমাকে পুতুলের পিক মেসেজ করে দিও আর কাজ কবে করতে হবে তা জানিয়ে দিও।
-হুম।
-আজ তাহলে আমি আসি। দেখা হবে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

রুবি বাজার থেকে ফিরছে। দু-হাতে খরচের ব্যাগ। পেছন থেকে একটা গাড়ি অনাবৃত হর্ণ দিয়ে যাচ্ছে।

-কে এই অসভ্য?

রুবি পেছনে ফিরতেই প্রিয়ম তাকে থামতে বলে।

-একটু কথা বলব।
-কেডা আপনি?
-আম্মম,তুমি পুতুলের বাসায় কাজ কর?
-জ্বি কিন্তু আপনি কে? আপনাকে তো বাসায় কোনোদিন দেখি নাই।
-আমি পুতুলের বন্ধু।
-ওহ আচ্ছা কি বলবেন বলেন ব্যাগ অনেক ভাড়ি হাত ছিঁড়ে যাচ্ছে।
-আসো গাড়িতে বস রাস্তায় কথা হয়ে যাবে।

রুবি প্রিয়মের গাড়িতে উঠে বসে।

-কি বলবেন যেন?
-তোমার বাবা কি করেন?
-গ্রামে থাকে। আগে মা এখানে কাজ করত, এখন আমি করি। মা আব্বার দেখাশোনা করে ।
-কি হয়েছে তোমার বাবা?
-শ্বাসকষ্টের রোগী।
-তোমার ফ্যামিলি চলে কিভাবে?
-আমি এখানে থাকি। কাজ করি । বড় সাহেব যা খরচ লাগে দেন।
-ওহ আচ্ছা।
-হ্যাঁ তবে একদিন আমি অনেক বড়লোক হবো। আমার রুমে বিশাল বড় একটা টেলিভিশন থাকবে,,
-আমার একটা কাজ করে দিলে তোমাকে ৫ লক্ষ টাকা দিব।এতে মনে হয় তোমার টিভি কেনা হয়ে যাবে কি বল?
-কি? এত টাকা। কি করতে হবে আমাকে বলেন আমি করব।
-পুতুলের মোবাইল থেকে আমার নাম্বারে জাস্ট একটা মেসেজ করতে হবে তোমাকে। আর কিচ্ছু না।
-কি মেসেজ?

প্রিয়ম রুবিকে একটা চিরকুট এগিয়ে দেয়।

-এতে লিখা আছে।
-কখন করতে হবে?
-আজ রাতেই।
-আমার ৫ লক্ষ টাকা?

প্রিয়ম গাড়ি থামিয়ে রুবিকে একটা চ্যাক লিখে দেয়। রুবি তাড়াহুড়ো করে চ্যাকটা ব্যাগে পুরিয়ে নেয়। কাধের ব্যাগটা সাবধানে রেখে চলে যায় রুবি।

-আজই করতে হবে মনে থাকে যেনো।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ডিনার শেষে পুতুল রুবিকে ডিসেস করতে হেল্প করছে৷ রুবি কিছুটা অস্বাভাবিক বিহেভ করছে পুতুলের সাথে।

-কি হয়েছে রুবি? তুমি কি অসুস্থ? তুমি বিশ্রাম নাও আমি ধুঁয়ে ফেলব।
-নাহ ছোট ম্যম সাহেব, আসলে আমার বাবার শরীর খুব অসুস্থ আর আমার ফোনেও ব্যালেন্স নেই তাই ঠিক মত তার খবরাখবর নিতে পারছি না।আপনার ফোনটা একটু দিবেন আমাকে?
-সিউর, নাও।

রুবি পুতুলের ফোনটা নিয়ে তার রুমে চলে যায় এবং চিরকুট দেখে প্রিয়মের নাম্বারে মেসেজ সেন্ড করে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

পুতুল কিছু একটা লিখছে। দৌড়ে একজন এসে জানায় প্রফেসর নাকি তাকে আর্জেন্ট গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেতে বলেছেন। পুতুল ব্যাগ গুছিয়ে সেদিকে রওনা দেয়।

গ্রাউন্ড ফ্লোর তো একদম খালি! খুব ময়লাও জমে আছে চারদিকে। মনে হচ্ছে গত ১০০ শতাব্দী এখানে কেউ ক্লাস করে নি আর প্রফেসর কোথায়?

পেছন থেকে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পাচ্ছে পুতুল।পিছু মোড়তেই সে প্রিয়মকে দেখতে পায়।

-কেমন আছ? ডার্লিং।
-তুমি? প্রসেফর কোথায়।
-কিসের প্রসেফর কার প্রফেসর। প্রসেফরের সিরিয়াল পরে আগে আমাকে তৃপ্তি দাও জানেমান। হা হা হা,,,,

পুতুল ঘাবড়ে যায়। হাত পা কাঁপছে তার। এই নির্জন যায়গা প্রিয়ম কি করবে তার সাথে? পুতুল জলদি করে দরজা খুলতে যায়। প্রিয়ম তাকে আপ্রাণ বাঁধা দিয়ে যাচ্ছে।

-কি করছ? আমাকে যেতে দাও প্লিজ। বাঁচাও

রীতিমতো কাঁদছে পুতুল।

-আরে দাঁড়াও দাঁড়াও এত তাড়া কিসের আগে কিছু মিল-মহব্বতের কথা বলে নেই।

পুতুল কিছুই শুনছে না ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে প্রিয়ম কষে পুতুলকে থাপ্পড় মারে।

-বলছি না এখানে কেউ আসবে না। আমার হাত থেকে তোমাকে আজ কেউ রক্ষা করতে পারবে না পুতুল। তুমি শুধু আমারই, শুধু প্রিয়মের।

কথাটা বলেই প্রিয়ম পুতুলের ওড়নাটা কেড়ে নেয়।কামিজের হাতার পাশটা ছিঁড়ে ফেলে। পুতুল খুব আকুতি-মিনতি করছে,

-হাত জোড় করছি আমাকে ছেড়ে দাও।আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি বল।

প্রিয়ম পুতুলকে কষে আরেকটা থাপ্পড় মারে। পুতুলের গলা চেঁপে ধরে সে।

-তুমি শুধু আমার বুঝেছ? আর কারো নও
-আম আমি একজনের স্ত্রী। প্লিজ আমার এত বড় সর্বনাশ কর না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।

প্রিয়মের মাথায় রক্ত উঠে যায়।

-মুগ্ধকে ভালোবাসো না?

পুতুল কেঁদে উত্তর দেয়।

-হ্যাঁ। অনেক।

এবার প্রিয়ম নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। প্যান্টের বেল্টা দিয়ে পুতুলকে মারতে থাকে সে। পুতুল ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চিৎকার করছে কিন্তু কেউ গুনছেই না।

-মুগ্ধের নাম আর আসবে,মুখে?

প্রিয়মের পা ধরে মিনতি করে পুতুল। প্রান ভিক্ষা চায় সে।প্রিয়ম পুতুলের চুল আঁকড়ে ধরে। পুতুল চিৎকার করে উঠে।

-কেউ বাঁচাওওও

প্রিয়ম পুতুলের পেটে লাথি মারে।সাথে সাথে পুতুল অজ্ঞান হয়ে যায়।প্রিয়ম পুতুলকে ধাঁক্কা দিয়ে ফ্লোরে শুইয়ে দেয়। তারপর নিজের গায়ের শার্টটা খুলে পুতুলের দিকে এগুতে শুরু করে সে।

এক বিকট শব্দে থেমে যায় প্রিয়ম। পাশ ফিরে তাকাতেই মুগ্ধকে দেখতে পায়। মুগ্ধ এক সেকেন্ড প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে হিংস্র বাঘের মত থাবা নিয়ে আসে।এক ঘুষিতে ফ্লোরে মিলিয়ে যায় প্রিয়ম। নাক,মুখের রক্তে তার চেহারা বসকে গেছে প্রায়। মুগ্ধ তাকে উঠিয়ে আবার ঘুষি মারে।এবার আধমরা হয়ে যায় প্রিয়ম তার উপর মুগ্ধের লাথি।প্রিয়ম মাতালের মত দুলছে।

ইতিমধ্যে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। পুলিশ এসে মুগ্ধকে থামানোর চেষ্টা করছে।

-মুগ্ধ,ওঁ মরে যাবে। আইন নিজের হাতে তুলে নিবে না। এর ব্যাবস্থা আমরা করছি।

পুলিশ কোনোরকমে প্রিয়মকে উদ্ধার করে।

-মুগ্ধ,তুমি পুতুলের কাছে যাও। আমরা একে দেখছি।
-শেষবার দেখে নিন অন্যবার দেখার আর সুযোগ দিব না।
-নিজেকে শান্ত কর, মুগ্ধ।

পুলিশ প্রিয়মকে ধরে নিয়ে যায়। মুগ্ধকে যেতে হবে তবে পুতুলকে হসপিটালাইস করার পর।

মুগ্ধ পুতুলের কাছে গিয়ে কাঁদতে থাকে।পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার গায়ের ল্যাদার জ্যাকেট টা খুলে পুতুলের উপর দিয়ে তাকে কুলে করে হসপিটালে নিয়ে যায়।

পুতুলের অবস্থা তেমন ভালো না।ডক্টর সাহেব একজন গার্ডিয়ানের সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।করিম সাহেব যেতে চাইলেও ডক্টর বললেন মুগ্ধকেই আসতে হবে। ব্যাপারটা ক্রিটিকাল।

-মুগ্ধ,তোমাকে আমি ছোট থেকেই চিনি পুতুল মায়েকেও চিনি।খুব ভালো মানিয়েছে তোমাদের দুজনকে। সত্যি বলতে আমি এমনটা হবে কখনো কল্পনাও করিনি। কিন্তু রিপোর্ট আসার পর,,,,,সবকিছুই গডের ইচ্ছে।

মুগ্ধ চিন্তিত হয়ে,

-কি হয়েছে চাচ্চু? পুতুল ঠিক হয়ে যাবে তো।

ডক্টর সাহেব বলতে খুব ইতস্তত বোধ করছেন,

-কিভাবে যে বলি,,,,,,,।
-কি হয়েছে বলুন আমাকে।
-মুগ্ধ,
-বলুন।

ডক্টর সাহেব একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে,

-সরি মুগ্ধ তুমি কখনো বাবা হতে পারবে না।

এক মূহুর্তে জন্য যেন মুগ্ধের স্পন্দন থেমে গেল।ফ্রিজ হয়ে গেছে সে।কিছুই ভাবতে পারছে না সে। ডক্টর সাহেব তার কাঁধে হাত বুলিয়ে,

-গড ব্লেস ইউ মাই সান।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here